একটি ধারাভাষ্য!

স্বপ্নহারা এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নহারা (তারিখ: বুধ, ২৪/০২/২০১০ - ১০:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেকুবুল্লা
সুধীমন্ডলী, আজকের এই সূর্যালোকিত প্রখর রাতে ক্যালগেরীর নর্থ ইস্ট স্টেডিয়াম থুক্কু কুদ্দুছের বাসা থেকে আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি--আমি চৌধুরী বেকুবুল্লা মারফত। আমার সাথে আছেন অনেক গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাংলার শ্রেষ্ঠ গৃহপালিত খেলোয়াড় জনাব ফকিউল পাষান| আজকের খেলা হবে যে দুই দলের তারা হলেন, করিমনা বিবি ও কুদ্দুছ| খেলায় যাওয়ার আগে আজকে আমরা ফকিউল ভাইয়ের কাছে দুই টিম সম্পর্কে জানতে চাইব |

ফকিউল
ধন্যবাদ বেকুবুল্লা মারফত ভাই| আসলে সত্য কথা বলতে গেলে, আজকের দুটি টিমই ভীষণ
শক্তিশালী| কুদ্দুছ ও করিমনা বিবি জাহাজের খোলে লুকিয়ে ক্যাল্গেরিতে এসেছেন বেশ কিছুদিন হলো| দুজনেই বেশ পোক্ত দেহের অধিকারী -পুরো স্ত্রেইট ব্যাটে খেলেন| তবে রেগুলার ইন্ডোর প্র্যাক্টিসের কারণে করিমনা বিবির বোলিং বেশ স্ট্রং!

বেকুবুল্লা
হা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ড্রইং রুমে করিমনা বিবি প্রস্তুতু হচ্ছেন আজকের ম্যাচের জন্য-
ইতিমধ্যেই রাত বারোটা বেজে গেছে, কিন্তু কুদ্দুছ মিয়া ঘরে ফেরেন নাই| আসুন দেখি মোকছেদ মিয়ার প্রস্তুতি, না উনি বেশি দূরে নন| উনি বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে সাহস সঞ্চয় করছেন; ও না থুক্কু, প্র্যাক্টিস করছেন| উনি আজকের ম্যাচে নিজেকে আন্ডার ডগ ভাবলেও জয় ছিনিয়ে নেবার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন| এই ফাঁকে আমরা একটু মাঠের কন্ডিশন দেখে আসি, ফকিউল ভাই বলেন...

ফকিউল
হ্যা -আজকের মাঠ বেশ সাজানো গোছানো, তবে এখানে আমরা ফুলদানি দেখতে পাচ্ছি -হা একটা গ্লাসও আছে| আমার গত ৩০বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এগুলো কাজে লাগিয়ে করিমনা বিবি কিন্তু বেশ ফায়দা লুটে নিতে পারবেন| ওই যে ঐখানে একটা লাঠি দেখা যাচ্ছে,
আজকে মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনায় করিমনা বিবিই ফেভারিট| তবে এইখেলা সবসময়ই অনিশ্চয়তায় ভরা; এইযে পিলো গুলো আর এই টেলিভিশন ঠিক ভাবে এস্তেমাল করে ডিফেন্সিভ ভাবে খেললে কুদ্দুছ মিয়াও জিতে যেতে পারেন|

বেকুবুল্লা
হ্যা, সেজন্যই কবি বলেছেন-দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিত হবে যাত্রী নিশীথে
রাত্রিরা হুশিয়ার...

ফকিউল
মনে হয় রাত্রি নিশীথে যাত্রিরা হুশিয়ার হবে...

বেকুবুল্লা
আরে ধুর, যা বাহান্ন তাই অষ্টয়াশি...আসেন খেলায় যাই! এখনি টস হবে| কুদ্দুছ মিয়া চাবি বের করেছেন...ঢুকাবেন কি ঢুকাবেন না...৫০-৫০ চান্স! ঢুকিয়েছেন... কিন্তু না ....তিনি
তড়িতগতিতে বেল টিপলেন; এবং করিমনা বিবিকে কল করার আহবান জানালেন|

ফকিউল
এটাই আসলে স্পোর্টস্ম্যানশিপ...-১৯৮০ সালে আমি আমার ঘরের মাঠে আমার প্রতিপক্ষকে
এমন ভদ্রতা দেখিয়েছিলাম; এবং পরে জিতে গিয়েছিলাম!

বেকুবুল্লা
হ্যা হ্যা ধন্যবাদ| আপ্নে বেশি কথা বলেন। করিমনা বিবি দরজা খুললেন এবং সরাসরি ড্রইং রুমের মাঠের সেন্টারে চলে গেলেন| তবে কুদ্ধুছ মিয়া মাথা নিচু করে ড্রইং রুমে ঢুকে পড়লেন এবং সটান সোফায় বসে পড়লেন| তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে তিনি আজ ডিফেন্সিভ ভাবে ব্যাকফুটে খেলবেন। তার মানে করিমনা বিবি প্রথম আক্রমণ...

ফকিউল
করিমন বিবি ছুটে আসছেন -হাতে তার বাসার ঝাড়ু| দেখা যাক কি হয় - খেলা শুরু এবং এখন তুমুল উত্তেজনা - এবং.......

বেকুবুল্লা
অসাধারণ শট! করিমনা বিবি আসার আগেই কুদ্দুছ মিয়া চমত্কার ভঙ্গিতে দেখে শুনে
আক্রমণাত্মকভাবে ব্যাকফুটে গিয়ে একটি ব্যান্ডেজ করা পা বের করলেন- তার পায়ে ব্যান্ডেজ
এবং তিনি বলছেন তার কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছে!- করিমনা বিবি কে তবদা লাগিয়ে গোল হয়ে গেল অঃ সরি চার!

ফকিউল
আসলে আসল হল টাইমিং। শটটা ডিফেন্সিভ হলেও স্মার্ট প্লে...

বেকুবুল্লা
আরে থামেন। কিন্তু করিমনার মত পাকা খেলোয়াড় কে ফাঁকি দেয়া কিন্তু সহজ নয়| করিমনা
গিয়ে ব্যান্ডেজ টিপে দেখছেন-এবং কুদ্দুছের সপাটে ব্যাটে বলে সনযোগ...কিন্তু এবার পরাস্ত|
কুদ্দুছের শক্ত ডিফেন্স সত্তেও করিমনা ব্যান্ডেজ খুলে এনেছেন| কুদ্দুছের পা ঠিক আছে - চমত্কার ভাবে একটি উইকেটের পতন! করিমনা এবার নতুন শক্তি সঞ্চয় করে ঝাড়ু পে্টা
করতে যাচ্ছেন| কুদ্দুছ পিলো দিয়ে গার্ড নিয়ে প্রস্তুত - এবং প্রথম আক্রমণ তিনি ডিফেন্সিভ ভাবে ব্লক করলেন|

ফকিউল
কি চমত্কার টাইমিং| ১৯২০ সালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান এমন টাইমিং দেখিয়ে ছিলেন, যাই হোক..

বেকুবুল্লা
আপনি দেখেছিলেন তখন ফকিউল ভাই?

ফকিউল
আরেনা...বইতে দেখছি...আচ্ছা যাকগে, কুদ্দুছ মিয়া উঠে দাড়িয়েছেন -উনি তার দ্বিতীয় অস্ত্র
বের করলেন এবং রিমোট খুঁজে নিয়ে টিভি চালু করলেন| কিন্তু দুর্ভাগ্য ব্যাটে-বলে হলনা... টিভি অন হলনা ...

বেকুবুল্লা
হ্যা আসলে দুর্ভাগ্য হলে এমন হয়| কিন্তু কুদ্দুছ খুব শিঘ্রই সামলে নিয়ে আক্রমনে চলে গেলেন
-প্লাগ খুঁজে টিভি অন করে দিলেন| চমতকার স্ট্রেটেজি! আমার ক্ষেত্রে প্রায়ই কাজে দেয়...

ফকিউল
আমরা দেখতে পাচ্ছি -করিমনা প্রবল বেগে স্লেজিং করে চলে ছেনচ| এটা ঠিক স্পোর্টস ম্যান
শিপের সাথে যায়না, আমিও ঘরে স্লেজিং পছন্দ করিনা| কিন্তু খেলায় জিতার জন্য করিমন বিবি
অস্ট্রেলিয়ার মত স্লেজিং করে যাচ্ছেন|

বেকুবুল্লা
আসলে এই খেলায় অন্যায় বলে কিছু নাই| করিমনা বিবির স্লেজিং এ কাজ হচ্ছেনা| এটাই হল
নার্ভের পরীক্ষা! এইবার করিমনা নতুন ভাবে আক্রমনে যাচ্ছেন -

ফকিউল
কিন্তু আবার চমক, কুদ্দুছের কাউন্টার এটাক! তিনি ধুম করে বিড়ি ধরালেন ... পাল্টা আক্রমন,
করিমনা বিবিকে রাগে দিশেহারা করে দেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে তিনি জেতার চেষ্টা করছেন|

বেকুবুল্লা
বিড়ি দেখে করিমনা তেলে-বেগুনে, আলু-পটলে, পেট্রল-ডিজেলে জ্বলে উঠলে| হ্যাঁ, তিনি এইবার ১৬০ মাইল গতিতে গ্লাস ছুড়ে ভাঙ্গলেন...আমার দেখামতে ফাস্টেস্ট ডেলিভারি! কিন্তু কুদ্দুছ মিয়া চোখের কোনা দিয়ে দেখে শুনে সাবধানে ছেড়ে দিলেন - পাওয়ার প্লে শুরু হলো|

ফকিউল
এবার করিমনা প্লাস্টিকের ফুল ছুড়ে মারলেন, কুদ্দুছের গা লক্ষ্য করে বাউন্সার -এবং কুদ্দুছ চমত্কার ভঙ্গিতে লেগের দিকে সরে গিয়ে বাউন্সার এড়ালেন |

বেকুবুল্লা
পরের বল - আসছেন করিমনা! হাতের কাছে করিমনা ফুলদানি ছাড়া এবার কিছুই পেলেন না| এবং অসাধারণ ফিল্ডিং... ক্যাচ| অসাধারণ দক্ষতা দেখালেন কুদ্দুছ, আচ্ছা - ফকিউল ভাই এই ফুল ছোঁড়া থেকে আমরা কি পজিটিভ কিছু পেতে পারি?

ফকিউল
হ্যাঁ অবশ্যই! কুদ্দুছ এখনো শিখছেন...আন্ডার থার্টি টীমের প্লেয়ার- এই ফুল ছোড়া আসলে খুবই পজিটিভভাবে নিতে হবে-তার মানে কুদ্দুছের এখনো আশা আছে - স্কুলে থাকার সময় একবার আমার দিকে এক মেয়ে ফুল ছুঁড়ে মেরেছিল| তবে মনে রাখতে হবে এটা অজন্তা মেন্ডিসের গুগলীও হতে পারে| ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর আমার ভায়ের শালীর এমনি এক গুগলিতে বোল্ড হয়েছিলাম -তবে এটাও ঠিক উৎসাহ নিয়ে ভুল থেকেই আমাদের শিখতে হবে|

বেকুবুল্লা
আবার খেলায় ফেরত আসি...আমরা স্লোমোশনে ক্যাচটি দেখতে পাচ্ছি| এবার করিমনা তার সবার সেরা অস্ত্র ছাড়লেন - তার চোখে পানি আর মুখে কান্না- আহা কি অসাধারণ পরিকলপনা!

ফকিউল
হ্যা, ১৯৮৭ সালে আমিও এমন এক আবেগী পরিকল্পনায় আমার শালী কে ধরাশায়ী করেছিলাম, অব্যর্থ অস্ত্র...এবার কিন্তু কুদ্দুছের ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে বোল্ড|

বোকামিয়া
হ্যা কুদ্দুছ মিয়া এখন একটু সাবধানে খেলছেন! করিমনা বিবির মাথা হাত বুলাচ্ছেন -করিমনা
বিবির পরের বল -১০০০ মাইল গতিতে তীব্র আক্রমন -তিনি গোছানো সুটকেস নিয়ে দরজার
উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন| কুদ্দুছ কি পারবে এই বিপর্যয় রুখতে? তার পক্ষে কি সম্ভব হবে
এই খেলা জেতা?

ফকিউল
তবে কুদ্দুছ কিন্তু আজ চমত্কার খেলছেন| এই যে দেখুন তিনি দেখে শুনে ডিফেন্সিভ ভাবে
ব্লক করলেন- এবং মুন্সিয়ানার সাথে ছয় মেরে দিলেন ...কি চমত্কার ফুট ওয়ার্ক, একদম দৌড়ে গিয়ে পায়ে ধরে পড়ে গেলেন| আমিও অবশ্য প্রায়ই এমন করি...অভিজ্ঞতা না থাকলে
এই শট খেলা যায়না...

বেকুবুল্লা
(খুক খুক) হ্যা ফকিউল ভাই.. ....এবার করিমনা পরাস্ত| এবং দুজনে এখন সমানে সমান| শেষ ওভারে দুজনে হাত ধরা ধরি করে বেড রুমে যাচ্ছে - তুমুল উত্তেজনাকর খেলায় কি মুগ্ধকর সমাপ্তি -খেলাটি মনে হয় টাই হয়ে গেল|

ফকিউল
কুদ্দুছ মিয়ার চমত্কার পারফরমেন্স তাকে আজকের ম্যান অব দি ম্যাচের পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে| আমি ১৯৯২ সালে আমার সম্বন্ধিকে এমন খেলতে দেখেছিলাম|

বেকুবুল্লা
হ্যা ..ধন্যবাদ সবাইকে!
....আমরা বেড রুমের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রচন্ড সিকিউরিটির কারণে ক্যামেরা নিতে পারছিনা| তবে বিটিভির রাত একটার সংবাদ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষন ও প্রামাণ্যচিত্রের পর আমরা ফিরিয়ে নিয়ে আসব...এবং আপডেট জানাব। ধন্যবাদ!
***

[i] এই ধারাভাষ্যটি এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার্স আলবার্টা কানাডা-এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছে। ক্যামেরা ও সম্পাদনাঃ নিক্কন, বেকুবুল্লাঃ মুস্তাফিজ, ফকিউলঃ শাকিল, করিমনাঃ কানন, কুদ্দুছঃ শাহাদাত, রচনা ও নির্দেশনাঃ স্বপ্নহারা।
নিচে ভিডিওর লিংকটাও দিয়ে দিলাম [\i]

লিঙ্কঃ http://www.youtube.com/watch?v=K-mTEZy4-zM


মন্তব্য

সাদা-মডু এর ছবি

লেখাটি লেখকের নিজের ব্লগে প্রকাশিত হলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।