ঘুরে এলাম সিঙ্গাপুর (শেষ পর্ব)

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/০৯/২০০৮ - ১২:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রাক-কথণঃ নানা ঝামেলায় আটকা পড়ায় সিঙ্গাপুর ভ্রমণের শেষ পর্ব ছাড়তে অনেক দেরি হয়ে গেলো। সচলের সুহৃদ পাঠকবর্গের কাছে এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। যারা লেখাটা শেষ করতে অশেষ উতসাহিত করেছেন তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞতা।


সান্তোসা আয়ল্যান্ড - স্বপ্নপুরী

দুপুরের লাঞ্চ সেরে সোজা 'সান্তোসা আয়ল্যান্ড' চলে গেলাম। আমার কাছে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় আকর্ষন। 'সান্তোসা আয়ল্যান্ড' নাম হলেও এটা একেবারে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয়। মূল ভূখন্ডের সাথে ব্রীজ দিয়ে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে। শুধু যে ব্রীজ তা নয়, তিন পথে এই কেন্দ্রে যাওয়া যায় - সড়ক পথে, ফেরি পথে আর কেবল কার দিয়ে। আমরা কেবল কার যোগে সান্তোসায় ঢুকলাম। জীবনে এই প্রথম কেবল কারে চড়া। সে এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। যাদের উচ্চতা ভীতি আছে তাদের কেবল কার এড়িয়ে চলাই ভালো। গ্যাস বেলুনের মতো কেবল কার থেকেও পুরো শহর দেখা যায়। অপূর্ব সে দৃশ্য! বোঝা যায় কতটা অত্যাধুনিক এই ছোট্ট দ্বীপশহর সিঙ্গাপুর।

কেবল কার, ভয়ঙ্কর

অনেক মজা হলো সান্তোসায়। আমরা 'আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড' -এর ৮০ মিটার দীর্ঘ এ্যাক্রিলিক টানেলের ভেতর দিয়ে ২৫০ প্রজাতির প্রায় ৩০০০ সামুদ্রিক প্রানীর সাতাঁর কেটে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য উপভোগ করলাম। মাথার ওপর দিয়ে সাঁতরে গেলো কমপক্ষে ছয় হাত লম্বা হাঙড়। আঁতকে উঠলাম দেখে। পানি নিচের দুনিয়া আসলেই এক অদ্ভূত ব্যাপার! আমরা কতটুকুইবা জানি তার!

ক্যামেরাম্যান স্মাইল বললেই সব সময় হাসি অর্থবহ হয়ে ওঠে না বলেই মনে হয়

এর পরে গেলাম ফিস রিফ্লোক্সোলজীতে। দরজার গায়ে এই কঠিন নাম দেখে প্রথম কিছুই বুঝি নাই। ড্যানি ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা বলল তাতে রহস্য আরো ঘনীভূতই হলো বইকি। আমার অবশ্য আগেই সব কিছু জেনে নেয়ার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। একটু অজানা, একটু টেনশান, একটু রোমাঞ্চ না থাকলে আর কেমনে কী! ভেতরে ঢুকতে গিয়ে নানা নখড়া, নিয়ম কানুনের শেষ নেই। তবে এসব বেদনা ভুলে যেতে হয় আসল সময় এলে।
এক কথায় বলতে গেলে হচ্ছে 'মাছ চিকিতসা'। দারুণ মজার! প্রথমে আমাদের সাবান দিয়ে ভালো করে পা ধুয়ে ফেলতে বলা হলো। আমরা তো অবাক! পা ধুতে হবে কেন! একটা পরিষ্কার তোয়ালে আর এক জোড়া রুপসা টাইপের স্যান্ডেল দেয়া হলো। বলল, ভালো করে পা ধুয়ে মুছে স্যান্ডেল পরে আসুন। আলাদা একটা জায়গা আছে সেখানে দলে দলে লোকজন সাবান দিয়ে পা কচলে, ধুয়ে, তোয়ালে দিয়ে যার পর নাই মুছে, একদম শুকিয়ে নিচ্ছে। তারপর আমাদেরকে একটা বেশ বড় সড় একটা রুমে ঢোকানো হলো। ঢুকেই দেখি এলাহী ব্যাপার! একটা বড় পানির চৌবাচ্চা (চৌবাচ্চার সহজ বাংলা কী জানিনা, ছবি দেখলে বুঝবেন)। তার মধ্যে ফুরুত ফুরুত সাঁতরে বেড়াচ্ছে পুঁটি মাছের মতো প্রায় অর্ধ শহস্রাধিক মাছ।

ফিস রিফ্লোক্সোলজী, মাছের কাতুকুতু চিকিতসা

আমাদের বলা হলো পাশে বসে আস্তে করে পা ডুবিয়ে দিতে। আমরা জীবনে প্রথম চাইনিজ রেস্তোরায় ঢুকে হাতের বায়ে এবং ডানে ডজন খানেক নানা সাইজের চামচ দেখে যেমন বিভ্রান্ত হয়ে চোখে একটা সাহায্যের আকুতি ফুটিয়ে তুলে ডানে-বামে দিকে তাকাই ঠিক তেমনি আমরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম ঘটনাটা কী ঘটতে যাচ্ছে। স্লো মোশনে চৌবাচ্চার পাশে প্যান্ট গুটিয়ে বসে যেই না পানিতে পা ডুবিয়ে দিলাম অমনি ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট মাছ এসে ছেঁকে ধরলো পা দুটো আর কুটুস কুটুস ঠুকরে দিতে লাগলো। বজ্রনাদ চিৎকার করে কারো করো অজ্ঞান হওয়ার দশা হলো। এক ঝটকায় পা তুলে ফেলল উপরে। মনে হলো হাঙড়ে কামড়েছে। আমার অবশ্য মারাত্মক কাতুকাতু লাগলো! আসলেই ব্যাপারটা মজার, আতঙ্কের নয়। এক সময় সবাই একটু ধাতস্ত হয়ে উঠতেই পুরো রুম জুড়ে হো হো হে হে হি হি শব্দের হল্লা উঠলো। আসল ঘটনা না জানা থাকলে যদি কেউ হঠাৎ এ দৃশ্য দেখে ফেলে তাহলে সবাইকে বদ্ধ উন্মাদ কিংবা লাফিং গ্যাসাক্্রান্ত ভেবে বসলে দোষের কিছু হবে না। মজার অংশটুকু ছাড়া মাছের এই ঠুকরে দেয়ার ফলে পায়ের মরে যাওয়া চামড়া যেমন দূর হয়ে যায় তেমনি পায়ের চর্মরোগের জন্যও উপকারী। বিশ মিনিট থেকে তিরিশ মিনিট এ রকম মাছের কামড় খেয়ে ওঠার পরে আরেকটা মজার ব্যাপার বাকি ছিলো, সেটা হলো ফুট ম্যাসেজ। আহ্ যা আরাম! পুরো ব্যাপারটা খাঁটি পাওয়ার ন্যাপের মতো কাজ করলো।

ডলফিন লেগুন

ঘুরে দেখলাম 'ইমেজেস অব সিঙ্গাপুর'। একটা কলোনী কিভাবে স্বাধীন জাতিতে পরিণত হলো আমরা তার ধারাবাহিক প্রতিচিত্র ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বিরাট এলাকা জুড়ে সান্তোসা আয়ল্যান্ড। দেখার যে কতো কিছু আছে বলে শেষ করা যাবে না। এশিয়ান ভিলেজ, বাটারফ্লাই পার্ক এন্ড ইনসেক্ট কিংডম, ভলক্যানোল্যান্ড, মেরিটাইম মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল বীচ, সিনেম্যানিলা, ডলফিন লেগুন, ফ্যান্টাসি আয়ল্যান্ড, মারলায়ন টাওয়ার ইত্যাদি। সবশেষে আমরা উপভোগ করতে গেলাম লেজার শো আর মিউজিক্যাল ফাউন্টেন। এত অসাধারণ এই শো যা কোনদিন ভোলার নয়।

লেজার শো আর মিউজিক্যাল ফাউন্টেন ভোলার নয়, এখনো চোখে ভাসে

ডিনার শেষে সবার বেশ মন খারাপ। আজকেই আমাদের শেষ ডিনার হলো। আগামীকালই আমাদের ভ্রমণের শেষ দিন। দুপুর ১২টায় হোটেল ছেড়ে দিতে হবে। তারপর যে যার দেশে ফিরে যাবো। আবার ডুবে যাবো দৈনন্দিন কাজের ভীড়ে। আমি অবশ্য আমার ভ্রমণসময়সীমা আরো একদিন বাড়িয়ে নিলাম। খায়রুল ভাই আমার থাকার ব্যাবস্থা আগেই ঠিক করে রেখেছেন। চায়না টাউনের একটা সাধারণ হোটেলে থাকবো বলে ঠিক করেছি। আসলে থাকা বলতে কেবল ব্যাগ আর টুকিটাকি মালামাল রাখা। সারাদিনতো ঘোরার ওপরেই থাকবো। ঘুমানোরও তেমন কোনো ইচ্ছে নেই। একবারে ঢাকা গিয়ে ঘুমাবো ভেবেছি। আমি না ঘুমিয়ে এতটা সময় আমার জীবনে আর কখনো কাটাইনি কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সে জন্য শারীরিক ক্লান্তি তেমন অনুভব করি নি। অদ্ভূত কোন কারণে আমার শরীর খারাপ করে নি। ভ্রমণের উত্তেজনা আমাকে সারা জীবন হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। আর আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এর শতভাগ সময় কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
ডিনার শেষে হোটেলে এসে দেখলাম খায়রুল ভাই আগেই এসে হাজির কিন্তু তার শরীরটা বিশেষ ভালো ঠেকলো না। আসলেও তাই। থেকে থেকে কাশছেন। সিদ্ধান্ত নিলাম আজ রাতে বেশি ঘুরবো না আর নতুন কোনো জায়গাতেও যাবো না। তাই সবচেয়ে আরামের জায়গা সেরাঙ্গুনেই চলে গেলাম। দু জনে বসে বসে বিয়ার খেলাম প্রাণ ভরে। সিঙ্গাপুরে বাঙালীদের দিনযাপনের নানা ঘটনা শুনলাম তার কাছ থেকে। তারপর মোস্তফা থেকে টুকিটাকি কিছু কেনা কাটা করে রাত ২টার দিকে হোটেলে ফিরে ঘুম দিলাম। সিঙ্গাপুরে এই প্রথম একটানা ৫ ঘণ্টা ঘুমালাম। আহা কী যে আরামের সেই ঘুম!


বিদায়ের ক্ষণ

সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে আমি আর খায়রুল ভাই

খায়রুল ভাইর সহযোগিতা কোনদিন ভুলবো না। সারারাত ঘুরে বেড়ানোর পাগলামিতে উনি যার পর নাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এক রাত দু'রাত নয় পর পর পাঁচ রাত। শেষ রাতে ওনার শরীর বেশ খারাপ করলো। আমি সাংঘাতিক অপরাধবোধে ভুগছিলাম। অনেক নিষেধ সত্ত্বেও আমার সঙ্গ ত্যাগ করেন নি এক মুর্হূতের জন্যও। শুধু তাই নয় যখন যেখানে যেতে চেয়েছি এবং যা যা চেয়েছি সব করেছেন অক্লান্তভাবে।
পরদিন সকালে দ্য ওয়েষ্ট ক্লিনিকে আমাদের ক্যান্সার বিষয়ক গবেষনাধর্মী সেমিনার শেষে সবাই হোটেলে এসে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলল। লাঞ্চ শেষে বিদায়ের পালা। এ সময় এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা ঘটলো। কেউ কেউ চেষ্টা করেও অশ্রু লুকাতে পারলো না। খায়রুল ভাই আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে আসলেন। সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকা থেকে কিছু স্যুভিনির গিফট নিয়ে গিয়েছিলাম সেগুলো হস্তান্তর করে তাদেও কাছতেকে বিদায় নিলাম। গাইড ড্যানি আর অন্যান্য সফরসঙ্গীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি চলে এলাম আমার দ্বিতীয় হোটেলে।
সারাটা বিকাল এমআরটিতে ঘুরে বেড়ালাম সিঙ্গাপুরের নানা এলাকা। সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে গিয়ে আমার টিকেট বুকিং কনফারম করে এলাম। আগামীকাল সন্ধ্যায় আমার ফ্লাইট। কাজ শেষ করে ফিরে এলাম চায়না টাউন এলাকায়। পরে মোস্তফা সেন্টারে গিয়ে আমার শেষ সময়ের কিছু কেনাকাটা সেরে নিলাম। আমার অনেক দিনের শখ একটা ক্যামেরা কিনলাম, দেশে ভ্রমণকে আরো রোমাঞ্চাকর করার জন্য তাবু, বাইনোকুলারসহ আরো কিছু টুকিটাকি শখের জিনিস কেনা শেষ করে রাতের ডিনার সেরে ফেললাম। সারারাত চায়না টাউনের উৎসবমুখর পরিবেশে ঘুরে কাটালাম।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম একটু দেরি করে। সরকারি ছুটির দিন থাকায় খায়রুল ভাইও সারাদিন আমার সাথে থাকবেন বলে সকাল সকাল চলে এসেছেন। তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা শেষ করে আমার বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন যাওয়া। এত বড় পার্ক এত সুন্দও করে কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব ভেবে কূল পেলাম না। এরপর গেলাম ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেন আর ক্যাকটাস গার্ডেন দেখতে।

বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেটে

হাতে সময় কম তাই ন্যাশনাশ মিউজিয়ামের কিছু অংশ দেখে ফিরে আসতে হলো। সাড়ে তিনটার মধ্যে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে। কোনমতেই আবার প্লেন মিস করা যাবে তাই অতিরিক্ত সতর্কতা। দেখতে দেখতে সময় হয়ে গেলো এয়ারপোর্টে রওয়ানা হবার। দ্রুত লাঞ্চ সেওে নিলাম। খায়রুল ভাই আমাকে ব্যাগ এবং অন্যান্য লাগেজ প্যাকিং করতে সাহায্য করলেন। এয়ারপোর্টে পোঁছে আমি ইমিগ্রেশান চ্যানেল পার না হওয়া পর্যন্ত তিনি গ্লাসের ওপাশ থেকে তাকিয়েই থাকলেন। তারপর একান্ত কিছু আর করার নেই বলেই হয়ত উনি বিদায় নিলেন। আমি প্লেনে উঠে জানালার পাশে সিট পেয়ে খুব খুশি হলাম। আকাশ কাঁপিয়ে তখন ঝম ঝম বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। সিঙ্গাপুর সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে বিমান রানওয়ে ধরে ছুটতে শুরু করলো। একটু পরেই একটা ছোট্ট ধাক্কা দিয়ে প্লেন শুন্যে ভেসে উঠলো। আর আমার মানস চোখে ফুটে উঠলো স্ত্রী টুনি আর ছেলে আরবিনের মুখ যারা ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমার জন্যে অপেক্ষা করবে। প্লেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মেঘের উপরে উঠে আসলো। মাথা ঘুরিয়ে ছুটতে শুরু করলো থাইল্যান্ড আর মিয়ানমারের উপর দিয়ে বাংলাদেশের দিকে। পেছনে পরে থাকলো - অল্প কয়েকদিনের কিন্তু - অসংখ্য স্মৃতিবিজরিত ছোট্ট স্বপ্নময় দ্বীপশহর সিঙ্গাপুর।

(বিঃদ্রঃ বিদগ্ধ পাঠকবর্গের আগ্রহ আর অনুমতি পেলে আরো ভ্রমণ কাহিনী লিখতে চাই।)


মন্তব্য

পুতুল এর ছবি

আপনার সাথে সিঙ্গাপুর ঘুরে এলাম! দারুন!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই লিখবেন কারন এতো চমৎকার ভ্রমন কাহিনী কয়জন লিখতে পারে ?

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অতিথির কথায় বহুত মজাক পাইলাম! আসলেই কইলেন তো!

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই কইসি ... ঈমানে কইলাম .... ইমোটিকন (ঝাঝা) দিতে পারিনা কইরা বুঝাইতারি নাই । (মিষ্টিহাসি)

মুশফিকা মুমু এর ছবি

wow মাছ চিকিতসার কথাটা জানতাম না তো, ইসস খুব ইচ্ছে করছে করতে হাসি
আপনার আর সার্কের ছবিটা দেখে হাসতে হাসতে পরে গেলাম। গড়াগড়ি দিয়া হাসি
দারুন লাগল! চলুক আরো লিখেন হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ছবিটা আসলেই মজার। যতবার দেখি তীব্র কৌতুক অনুভব করি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কথা দিছিলাম আপনার সঙ্গে সঙ্গে আমার সিঙ্গাপুর ভ্রমণো বর্ণিবো। এবার তাইলে আমারো শেষ কিস্তি। ফেরনের ঘটনা। তবে তার আগে বলি একটা কথা-
আমি সিঙ্গাপুরে গেছিলাম মূলত অফিসের জন্য ভিডিও এডিটিং-এর যন্ত্রপাতি কিনতে। আর তখনই বাজারে আসলো এইচডিভিক্যাম। দেখেই তো পছন্দ। সিদ্ধান্ত নিলাম এটাও সাথে নিবো। আট লাখ টাকা দরকার। দেশে খবর পাঠালাম। কয়েকদিন সেই টাকার জন্য অপেক্ষার পর এক সন্ধ্যায় হুন্ডিযোগে টাকা গেলো সিঙ্গাপুরে। সেই টাকা হুন্ডিওয়ালাদের কাছ থেকে নেওয়ার অভিজ্ঞতাটা দারুণ। মোস্তফা সেন্টারের এত চিপাচাপা দিয়া কই কই যে যাইতে হইছে অচেনা কয়েক তরুণের সঙ্গে। একপর্যায়ে আমার ধারণা হইছিলো এরা যদি এখন আমারে মাইরা ফেলে কেউ খুজেঁ পাইবো না।

যাহোক... ফেরার দিন দুপুর পর্যন্ত সব কেনাকাটা করলাম... কিন্তু তখনও প্রফেশনাল মনিটর পাচ্ছিলাম না ক্যামেরার জন্য। নতুন মডেল বাজারে ছাড়বে বলে পুরনো মডেল বাজার থেকে তুলে দিছে সনি। এখন কি করি? অনেক যোগাযোগের পরে গোলাপ ভাই নামক এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর দোকান থেকে মনিটর কিনলাম একটা... ততক্ষনে বিকাল। দৌড়ে হোটেলে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। আমি আর জাহাঙ্গীর ভাই। সঙ্গে মাল সামান পাহাড়ের সমান।
আর তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ট্যাক্সি কল দিতে ভুলে গেলাম। মালপত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালাম... বৃষ্টি ঝিরিঝিরি। ট্যাক্সি পাইনা। একটা পেয়ে তাতে জাহাঙ্গীর ভাইকে তুলে দিলাম অর্ধেক মাল দিয়ে। আরেক ট্যাক্সিতে আমি বাকিটুক নিয়ে ছুটলাম। বৃষ্টিতে রাস্তায় কিছুটা জ্যাম। আমি ড্রাইভাররে বললাম ভাই আমার প্লেইন এতক্ষনে ছাড়ার সময় হইছে তুমি জলদি চালাও... সে বলে এখানে জলদি চালানের নিয়ম নাই... সিস্টেমের মধ্যেই সব চলবে। বলে সে ওভারটেক করলো একটা গাড়ি এবং বললো তার জীবনে এই প্রথম আইন ভাঙলো কেবল আমার জন্য। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর ভাই একের পর এক ফোন করে যাচ্ছেন। তিনি ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন শেষও করে ফেলছেন। আমার মনে হইলো আজ বুঝি আমার আর ফেরত আসা হইতেছে না। এয়ারপোর্ট এত দূরে ক্যান?
অবশেষে পৌছিঁলাম। ড্রাইভার অনেক হেল্প করলো। কিন্তু জোর কইরাও একটা পয়সা বখসিস দিতে পারলাম না। তারপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলাম... (আমিই শেষ ব্যক্তি) হাফপ্যান্ট পইরা কাকভেজা আমি আর জাহাঙ্গীর ভাই ছুটতাছি... সঙ্গে বিরাট লটবহর। উফ... এয়ারপোর্টটা এত্ত বড়... শেষই হয় না। (এরই মাঝখানেও আমি বোতল কিনতে ভুলি নাই... ওগো ডিউটি ফ্রি শপটাতে এত্ত সুন্দর কইরা সাজানো, না কিনে উপায় কি?) কিনলাম তো অনেকগুলা... হ্যান্ডব্যাগেও রাখলাম। অবশেষে সর্বশেষ ব্যক্তি হিসাবে উঠলাম উড়োযানে। তারপর বিনে পয়সায় সোনালী শিশির গিলতে গিলতে আরাম।

দেশে ফেরার পরে অবশ্য আরেকটা বাজে অভিজ্ঞতা হইছিলো। এত মালপত্র দেইখা কাষ্টমস ঝামেলা করলো... আমি বুঝাই কিন্তু এরা এইচডিক্যামের মর্মই বোঝে না। (তাগো কি দোষ... একেবারে লেটেস্ট এই প্রযুক্তি দেশের ক্যামেরাম্যানগোরে বোঝাইতেই পরে আমার জান খয়ড়ান হইছিলো)।

যাউগ্গা... অনেক লেখছি। আমারে ধন্যবাদ দেন।

আর আরো লেখেন। আমি যত্দুর জানি আপনের ভ্রমণের বিশাল অভিজ্ঞতা আছে। সাইকেলে দেশভ্রমণ নিয়া লেখবেন না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

জীবন বাজি রাইখা দেশে নতুন প্রযুক্তি আমদানী করায় আপনার নাম স্মরনীয় হয়ে থাকুক কিন্তু আরেকটু হলেই তো গেছিলেন আর কি! আমারটা ভ্রমণ কাহিনী হলে আপনারটা এক্কেরে এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী হয়ে গেছে।
আর হ্যাঁ অবশ্যই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। এবার আপনার লেখা উস্কিয়ে দেয়ার জন্য আমারে ধন্যবাদ দেন।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আচ্ছা, আখতার ভাইয়ের ভ্রমণকথার সাথে নজরুল ভাইয়ের ভ্রমণখানা কী ফ্রি। না এটি নজরুল ভাইয়ের বিজ্ঞাপনী ট্রিজার, কে জানে? তয় ভালো লাগলো।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ভ্রমন কাহিনীর নতুন সিরিজ কবে থেকে শুরু হবে?

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

চলুক
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এবার দেশের মধ্যে নানা সময়ের নানা ভ্রমণ ও আমার ম্যারাথন সাইকেল ভ্রমণকাহিনী নিয়ে দ্রুত আসছি।

s-s এর ছবি

আগ্রহ ও অনুমতি দু'টোই দেয়া গেলো ।
আপনার সবক'টি পর্বই পড়লাম, তবে এটি ই সবচেয়ে সুন্দর।
শুভশীষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুধের সাধ ঘোলে মিটল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।