শিয়রে নিরুত্তর এপিটাফ

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান (তারিখ: রবি, ৩০/০৮/২০০৯ - ১১:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ আর বলবার মতো কিছু নেই
বলার যেটুকু ছিলো সেই অস্তমান আকাশের নিচে
গোধূলির ধূলিকণা সাক্ষী রেখে তাকে বলেছিলাম
তাকে বলেছিলাম - বাতাসের বর্ণে লেখা পুকুরের জলের ভাষায়
তখন উত্তরা বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে কালো তরবারির মতো
ঝুলছিলো ফলগুলো
তখন আলোর আভাস পেয়ে মাটির ভেতর কেঁপে উঠেছিলো
সর্ষের নরম শেকড়
তখন সন্ধ্যা ঘুমিয়ে পড়েছিলো
নির্জন মাঠের উপর থমকে থাকা গেওয়া গাছটার নিচে -
যার পাশ দিয়ে দুর্গার ভুরুর মতো বাঁক খেয়ে
চলে গেছে ধূলোময় পথ
আর আমার মনে হচ্ছিলো এযেন পথ নয়
আমাজানের গভীর জলের ওপর
একটি স্তম্ভিত এ্যানাকোন্ডার ছায়া

প্রকান্ড পর্বতের স্থিতি নিয়ে সে দাঁড়িয়েছিলো আমার সামনে
আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছিলো - আমি যেন মানুষ নই
তথাগত অনুভূতি বলে কিছু নেই-
পদ্মার উদ্বেল বুকের উপর আমি যেন নিথর বৈঠার মতো কালোকাঠ
যেন অনন্তকাল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি এই মানবীর ছায়ার সামনে-
যার চুলগুলো নিয়ে ফাল্গুনের উদভ্রান্ত বাতাস খেলা করছিলো
আর আমি দেখছিলাম-নীলিমার পটভূমি ছুঁয়ে
ঝলসে উঠছে বজ্রের তাণ্ডব
স্থির সেই অবয়ব যেন বিরাট পামিরের শীর্ষে বরফের হিমবাহ
আর ভাস্কর্যের মতো নিস্পলক

অন্তহীন অপেক্ষার দাম দিয়ে সেদিন কিনেছিলাম অস্তগামী সূর্যের হাহাকার
আর জোনাকির উৎসবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম স্বপ্নের পোড়া ছাই

তারপর অন্ধকার নেমে এলো দশ দিগন্ত ঘিরে
পরিবর্তন আর কিছু হলো কিনা বোঝার আগেই
পৌঁছে গেলাম আজকের উপসংহারে
উপসংহার বলে আজ আর কিছু নেই
একখণ্ড পাথর ছাড়া;
পাথরের উপর কালো কালো অক্ষর যেন
পাল তোলা ইলিশের নৌকা
ফুলে ওঠা মাটির শিয়রে আজ তারা
নিরুত্তর এফিটাফ ছাড়া আর কিছু নয়।


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দেঁতো হাসি

নিবিড় এর ছবি

কবিতাটা ভাল লাগল চলুক
অটঃ অনেকদিন পর দেখা গেল আপনাকে সচলে, পুরান লোকজনেরা সব দেখি আজকাল অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

নিয়মিত হতে গিয়ে যখন ব্যবসা লাটে ওঠে আর চাকরির আয়ুস্কাল পাতলা হয়ে আসে তখন আবার একটু অনিয়মিত হতেই হয়। এই টানাপোড়েন থেইক্যা বাইর হওয়ার মারাত্মক চেষ্টায় আছি। দোয়া কইরেন।

কবিতা ভালো লাগছে বলে ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অন্তহীন অপেক্ষার দাম দিয়ে সেদিন কিনেছিলাম অস্তগামী সূর্যের হাহাকার
আর জোনাকির উৎসবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম স্বপ্নের পোড়া ছাই

দূর্দান্ত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ভালো লাগছে! এইবারের মতো বাঁচলাম তাইলে!

কীর্তিনাশা এর ছবি

নতুন করে যাত্রা হলো শুরু। চলুক

আবার যেন থেমে না যায়।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

মাঝে মাঝে নিজের লেখার উপর খুব বিতৃষ্ণা আসে, যা বলে বোঝানো যাবে না। মনেহয় ছাইপাশ যথেষ্ট লেখা হয়েছে, আর না। সে জন্যেই মাঝে মাঝে থেমে যাই। বস্তা পঁচা লেখা লিখে পাঠককে আর কত শাস্তি দেয়া যায়!

একটা মারাত্মক লেখা লিখবো কবে, কে জানে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কবিতা খুব ভালো লাগলো।

'আকাশনীলা'

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

সামনেরগুলো পাঠের আমন্ত্রন রইলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

পদ্মার উদ্বেল বুকের উপর আমি যেন নিথর বৈঠার মতো কালোকাঠ
..........................

অন্তহীন অপেক্ষার দাম দিয়ে সেদিন কিনেছিলাম অস্তগামী সূর্যের হাহাকার
আর জোনাকির উৎসবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম স্বপ্নের পোড়া ছাই

ভাল লাগলো।

নৈশী।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দেরিতে কমেন্ট করলাম। তোমার কবিতা আমার কাছে সবসময়ই কমবেশি অসাধারণ লাগে। এই কবিতাটাও অসাধারণ হয়েছে।
তোমার কবিতা পড়লেই আমার আবার নতুন করে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে।
তুমি আমার সময়ের জীবনানন্দ দাশ।
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আহা, আপনার সার্টিফিকেট পাইলে আর কী চাই!
তবে আমি জীবনানন্দ হতে চাই না। তার কবিতার প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য আমি কতদিন যে জীবনানন্দ পড়ি না তা মনেও নেই। আমি আমার একটা পথ খুঁজছি। দেখি পাই কিনা।

শালার কাজকামের যন্ত্রনার মধ্যে আর পারি না!

আকতার আহমেদ এর ছবি

মৃদুল লিখছেন:

তুমি আমার সময়ের জীবনানন্দ দাশ।

তোর জীবনানন্দ দাশ-রে জিগাই - "এতোদিন কোথায় ছিলেন?" চোখ টিপি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

এতদিন গুহায় ধ্যাণে ছিলাম। ওহী পাইছি। এইবার নাজিল করুম। দুইচারজন উম্মত পাইলে ভালো হইতো।

মামুন হক এর ছবি

কবি সাহেব মৃদুলের কথায় কান দিয়েন না, সে ইদানীং যারে তারে জীবন বাবু বলে প্রশংসা করে। আপনে আমার মতো আবুল পাঠকের কথা শোনেন...এইটা একটা মার কাটারি কবিতা হইছে।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আরে মামুন ভাই যে, কীর্তিনাশা কালকে ইফতারি খাইতে খাইতে আপনার কথা কী যেন কইতেছিলো! তার আগে কন মার কাটারি কইয়া কী গাইল্ল্যাইলেন নাকি আরো লিখবারলাই ভিসা দিলেন!

মামুন হক এর ছবি

আরে বস আমি ভিসা দেওয়ার কে? গরীব পাঠক হিসাবে বড়জোর আরও এমন চৈতন্যোদায়ী কবিতার আবদার জানাতে পারি।
তাই জানিয়ে গেলাম হাসি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

বুঝছি। এইবার জলবৎতরলং!

ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগলো।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেকদিন পর ফিরলেন। আশা করি দুম করে আর হারাবেন না এভাবে।

দুর্দান্ত কবিতা। খুব ভাল্লাগল। হাসি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

হারিয়ে আর যাবো কই! ঠিকানা একটাই!

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি

চ্রম!
____________________
যদিওবা মানুষ আমি কেন পাখির মত বাঁচি...

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

হাছাই?

তানবীরা এর ছবি

ভালো লেগেছে
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

জেনে ভালো লাগলো। আগামী লেখাগুলো পড়ার আমন্ত্রন রইলো। আনকোরা!

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভালু লাগলো!

---------------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দুষ্ট বালিকা বলে কি? পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ধারেকাছে আপনার লেখা কই? খুঁইজা পাই না ক্যান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।