হারিকেন আইকঃ শরণার্থী জীবন

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: বুধ, ১৭/০৯/২০০৮ - ১:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি যে শহরে থাকি সেখানে গত ১২ই সেপ্টেম্বর হারিকেন আইক প্রায় পুরোটাই লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। শহরে এখনো ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই উদ্বাস্তু জীবন-যাপন করছি। আমার বাসা এবং পুরনো গাড়ীটার খোঁজ এখনো নিতে পারি নি। ভেতরে কী অবস্থা জানি না, তবে স্যাটেলাইট ছবিতে ওপর থেকে ও’দুটোকে মোটামুটি আস্ত দেখেছি!

আইকের প্রতি শুরু থেকেই নজর রাখছিলাম। এর আগে গুস্তাভ ঠিক ঘাড়ের পাশ দিয়েই গিয়েছিল। আইক যখন কিউবাতে আঘাত হানল, তখন ভেবেছিলাম আইক এবার টেক্সাসের লোয়ার কোস্ট বা মেক্সিকো সীমান্তের কাছ দিয়ে যাবে। আমার হিসাব ছিলো আরেকটু মাঝামাঝি ম্যাটাগোর্ডা বে-র আশেপাশে। কিন্তু সব হিসাব উল্টে-পাল্টে আইক উত্তর-পশ্চিমে গ্যালভেস্টন বরাবর আসতে থাকল। গ্যালভেস্টন একটা ব্যারিয়ার আইল্যান্ড বা প্রাচীর দ্বীপ। এর কাজ মূলত মেইনল্যান্ডে আমেরিকার বিশাল বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিউস্টনকে রক্ষা করা। এর আগে ১৯০০ সালের ক্যাটাগরি চার মাত্রার এক ঘূর্ণিঝড়ে এ আইল্যান্ড পুরোই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমি ঘূর্ণিঝড় দেখে অভ্যস্ত। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যাটাগরি পাঁচ শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়েও দিব্যি টিকে ছিলাম। কিন্তু গ্যালভেস্টনের মত একটা দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের সময় থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

সেপ্টেম্বর ১০ তারিখ কাজ থেকে ফেরার সময় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা (আসলে শাপে বরই বলতে হবে) হিসেবে আমার পুরনো গাড়ীটা গেল রাস্তায় নষ্ট হয়ে। একদিকে হারিকেন আসছে, ইভাকুয়েট করা লাগবে- এ অবস্থায় মেকানিকের কাছে দৌড়াদৌড়ি। তাছাড়া নতুন গাড়ী কেনাও অনেকদিন ডিউ হয়ে আছে, পুরনো এই সুবারুর আয়ু প্রায় শেষ! একটা রাস্তার পাশে গাড়ীটাকে কোনমতে পার্ক করে রেন্টাল কার নিয়ে ছুটলাম গাড়ী কিনতে। ঘন্টা দু’য়েকের মাঝেই কিনে ফেললাম ২০০৯ টয়োটা করোলা XLE. বুকের মধ্যে খচখচ- মাসে মাসে এবার বিশাল খরচের ধাক্কা।

গাড়ী তো হলো, এখন ঠিক করা লাগবে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব। এখানেও খুব মজা হল। কয়েকদিন আগেই আমাদের এখানে ট্রপিক্যাল স্টর্ম এডওয়ার্ড হিট করেছিল। ছোটখাট ঝড়, হারিকেন নয়। তাই কোথাও মুভ করি নি। তখন বাসায় অনেক ফোন এসেছিল। সবাই ডাকে- হ্যাঁ, তোমরা আমাদের এখানে চলে এস। এখন হারিকেন আইক যখন ধেয়ে আসছে, কেউ আর ফোন করে না! মনে হয় সবাই আন্দাজ করতে পেরেছে- এখন ডাকলেই চলে আসব। অগত্যা আমরা লোকজনকে ফোন করা শুরু করলাম- ভাই, একটু আশ্রয় চাই। দেখি সবারই উপকূলীয় এলাকায় কেউ না কেউ থাকে, যাকেই ফোন করি সেই বলে- আমার তো অমুক আসছে, আচ্ছা তোমরা আসতে চাইলে আসতে পার!

সেপ্টেম্বর ১১ তারিখ সকালে মেয়র আপা ম্যান্ডেটরি ইভাকুয়েশন ঘোষণা দিলেন। অর্থাৎ সবাইকেই দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে হবে। যারা থাকবে তাদের কোন দায়-দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ নেবে না। আমি অবশেষে হিউস্টনে আমার এক দোস্তকে পাইলাম যার বাসায় আশ্রয় মিলবে। হিউস্টনও আসলে এসময় নিরাপদ না। কারণ গ্যালভেস্টনে হিট করে ঝড় হিউস্টনের ওপর দিয়েই যাবে। কিন্তু কিছু করার নাই। ইভাকুয়েশন বড় খতরনাক জিনিষ। রাস্তায় বাম্পার টু বাম্পার জ্যাম। এ অবস্থায় বেশিদূর যাওয়ারও উপায় নেই। বুদ্ধি করে ইন্টারস্টেট হাইওয়ে ৪৫ না নিয়ে, টেক্সাস হাইওয়ে ৬ নিলাম। দেখি এ রাস্তায় জ্যাম কম। তিন ঘন্টার মধ্যেই হিউস্টন ডাউনটাউনের একটু বাইরে কেটিতে পৌঁছে গেলাম। গিয়ে শুনলাম দোস্ত তার মাকে নিয়ে স্যান এন্টোনিও যাচ্ছে- আগেই নাকি তাদের যাবার কথা। আমাদের বাসার চাবি আর ফ্রিজের খাবার-দাবার বুঝিয়ে দিয়ে ওরা চলে গেল। যাক বাবা, একটু আশ্রয় তো মিলল। এখন ঝড় আসার অপেক্ষা।

আইক বাবাজি এল বার তারিখ শুক্রবার রাতে। হিউস্টনের আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে তেমন ফিল করি নি। খুব বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া মাঝে মাঝে। তখনো আসলে বুঝিনি হিউস্টনের অবস্থাও এত খারাপ। পরদিন সকালে বাসার পানির সাপ্লাই গেল বন্ধ হয়ে। আশে পাশে যেখানেই ফোন করি- সবারই পানি নাই, বিদ্যুত নাই, ফোনের নেটওয়ার্কও অনেকের কাজ করে না। বাসায় আছে অল্প খাবার পানি, কিন্তু শৌচকর্মের জন্যও তো পানি দরকার। রাস্তায় একটু বের হলাম। দেখি ভয়ংকর অবস্থা। সব দোকান-পাট বন্ধ, রাস্তায় পানি, গাছ উপড়ে পড়ে আছে, ট্রাফিক সিগনাল একটাও কাজ করে না। একদিন পরেই আমার বন্ধুর স্যান এন্টোনিও থেকে চলে আসার কথা। পানি নাই এ অবস্থায় তো আর মানুষের বাসায় বেশিদিন থাকা যায় না। আর গ্যালভেস্টন তো টিভিতে দেখছি সবকিছু বিপর্যস্ত অবস্থা- কমপক্ষে একসপ্তাহ শহরেই কাউকে ঢুকতে দেবে না।

ঠিক করলাম ডালাস চলে যাব। কিন্তু এ অবস্থায় গাড়ি চালানোও রিস্কি। রাস্তায় বন্যা, গাছ পড়ে আছে, কোন সিগনাল নাই, তার ওপর জায়গায় জায়গায় পুলিশ রোড ব্লক করে আছে যে রাস্তাগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ। গাড়ীর তেলও প্রায় অর্ধেক। গ্যাস স্টেশন সব বন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা গ্যাস স্টেশন পেলাম তেল দিচ্ছে। তিন ঘন্টা লাইনে থেকে গাড়ীতে তেল নিলাম। যেতে হলে সাথে কিছু খাবার দাবার অন্তত পানি তো নিতে হবে। ওয়ালমার্ট, ক্রোগার কোনকিছুই খোলা না। উপকূল থেকে ৫০-৬০ মাইল দূরেই এই অবস্থা, আর উপকূলের অবস্থা তো মনে হয় কেরোসিন। চিন্তা করলাম, চট্টগ্রামে ১৯৯১ সালের ক্যাটাগরি পাঁচ ঘূর্ণিঝড়েও এত অসহায় অবস্থায় পড়ি নি। বাংলাদেশে মাথা নাই, তাই মাথাব্যথাও নাই- গাড়ী নাই, তেলের চিন্তা নাই; পানি সাপ্লাই বন্ধ হলে টিউবওয়েল আছে, ওয়ালমার্ট বিদ্যুত না থাকলে চালু হতে পারে না, আর আমাদের পাড়ার মোড়ের রহিম মিয়া ঝড়ের পরদিনই তার মুদি দোকান খুলে বসে থাকে। বালের আমেরিকা আমার!

যাই হোক এরপর কত কসরত করে ডালাস গেলাম, সেটা লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। আমার হিউস্টন ডাউনটাউন থেকে ইন্টারস্টেট হাইওয়ে ৪৫ ধরে যাওয়ার কথা। কিন্তু পুরো ডাউনটাউন কারফিউ দিয়ে ঢোকা বন্ধ করে রেখেছে। ঝড়ে ডাউনটাউনের শানদার বিল্ডিং-এর কাঁচ সব গুড়াগুড়া হয়ে গেছে। তাই গলি ঘুপচি দিয়ে, ডাউনটাউন পার হয়ে ইন্টারস্টেট ধরলাম। পথে প্রায় ৭০ মাইল দূরে একটা ক্রোগার খোলা পেলাম, যেটা ব্যাক আপ জেনারেটর দিয়ে চালু হয়েছে। শরনার্থিদের মত সেখানে লাইন ধরে দোকানে ঢুকাচ্ছে। ভিতরে পুরো অন্ধকার। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে পানি আর শুকনা খাবার কিনলাম। আমি আসলে খুব অবাক হয়েছি, ক্যাটাগরি দুই মাত্রার একটা হারিকেনে বিশাল এলাকা জুড়ে এ অবস্থা, আর ক্যাটাগরি চার-পাঁচ হলে কী অবস্থা হতো! শুনেছি প্রায় ৪০ লাখ লোক নাকি এখনো পানি, বিদ্যুতহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। আমি কবে আমার বাসস্থানে ফিরতে পারব জানি না, আপাতত ডালাসে শরনার্থী দিন কাটাচ্ছি। আমার মাকে ফোন করলেই জোরাজুরি- ‘তোমার আর আমেরিকা থাকার দরকার নাই, ঘরের ছেলে এখন ঘরে ফিরে আসো’; আর আমি ভাবছি- হায় রে বেকুব, কবে যে আমার হুঁশ হবে এটা আমার জায়গা না!

আমার জায়গা কি আসলে আদৌ কোথাও আছে?


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
আমার জায়গা কি আসলে আদৌ কোথাও আছে?

তার চেয়ে বড় কথা সেই জাগার খোঁজ দিতে পারে এমন কাউরে আগে খুঁজতে হবে মনে হয়। চিন্তিত
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার অবস্থা পড়ে খারাপ লাগল। তার পরেও ভালো লাগছে এই ভেবে যে আপনি এখন ভালই আছে, ব্লগে লিখতে পারছেন। আমার বোন-দুলাভাই থাকে হিউস্টনে। সেদিন সারারাত ইন্টারনেটে www.khou.com এর সাইটে ঝড়ের লাইভ ভিডিও দেখে আর ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে আপডেট নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছি।

২ মাত্রার ঝড়েই এই অবস্থা, বড় হলে যে কী হতো সেটাই ভাবছিলাম। ভালো থাকবেন আর আপডেট দিয়েন। জুবায়ের ভাইয়ের কোন খবর আছে কি?

তানভীর এর ছবি

জুবায়ের ভাইয়ের হাসপাতালে এ সপ্তাহেই যাব আশা করছি। আইসিইউতে তো কাউকে ঢুকতে দেয় না। কাজেই এখন গিয়ে লাভ নাই। ওনাকে কেবিনে আনলেই দেখতে যাব।
আপনার বোন-দুলাভাই ভালো আছেন আশা করি।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

হিমু এর ছবি

ক্যান, সচলায়তন আছে না? লুঙ্গি মালকোঁচা মাইরা বহেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

টিকেট কেটে চলে আসেন আমার এখানে। বেড়িয়ে যান। এখানে কারো কোন আত্মীয় নেই।

হারিকেন-পরবর্তী সময় নিয়ে একটা লেখায় হাত দিয়েছিলাম ক্যাটরিনার পর। শেষ করা হয়ে ওঠেনি। ক'দিন আগে খেলাপির খাতায় নাম তুলে দিয়ে এখন জুবায়ের ভাই নিয়েই অসুস্থ হয়ে গেলেন। লেখা তবু শেষ হল না।

সময়-সুযোগ হলে গুছিয়ে, বড় করে অভিজ্ঞতাগুলো লেখার অনুরোধ রইলো। এই ভূ-স্বর্গেও নরক দেখা যায়, সাউথে থেকে জেনেছি। জানা দরকার বাকিদেরও।

তানভীর এর ছবি

হুম ধন্যবাদ। বেড়ানোর মত মানসিক অবস্থা নেই আসলে। কবে সব ঠিক হবে সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

রেনেট এর ছবি

বালের আমেরিকা আমার!

-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার অবস্থা জেনে খারাপ লাগল। আমি তখন ইন্ডিয়ানাতে। বেশ খানিকটা ঝড়ো বাতাস হয়েছে টের পেলাম। তবে পিটসবার্গে ফিরে দেখলাম এদিক দিয়ে বেশ শক্ত ঝড়ই বয়ে গেছে। টর্নেডোটা এতখানি কমে যাবার পরও যে শক্তি দেখলাম তাতে কিঞ্চিত হলেও বুঝলাম কতখানি খারাপ হতে পারে আসলটা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তানভীর এর ছবি

আসলে এখানে সবকিছুই ঠুনকো। সহজেই ভেঙে পড়ে। কাঠের বাড়িঘর একটু বাতাস বইলেই নড়ে, ঝড়ে কতক্ষণ টিকবে! বাংলাদেশের কংক্রীটের বাড়ি ক্যাটাগরি পাঁচ হারিকেনেও কিছু হয় না, আর এখানে ক্যাট ২ তেই সব খেল খতম। ওহাইও উপকূল থেকে সেই কতদূরে- সেখানেও দেখলাম ২ লাখ লোক আইকের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ! খুবই হাস্যকর ব্যাপার-স্যাপার।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

পথে হারানো মেয়ে এর ছবি

আমিও অনেকটা এদিকেই থাকি। যদিও অল্প ঝড়-বৃষ্টির উপর দিয়েই পার পেয়ে গিয়েছি।

বাংলাদেশ ৫ মাত্রার হারিকেনও মনে হয় সামলে নেয়, আমাদের সহনশীলতা আর ক্ষতিগ্রস্তের সংজ্ঞাটাই ভিন্ন বলে!
কংক্রিটের বাড়ি আর কতজনের! বাঁশ-বেড়ার ঘরে যে থাকে তার বাড়ি তো হারিকেনেও উড়ে যায়, কালবৈশাখীতেও ভাংগে!

আশা করছি, দ্রুত সামলে নেবেন। শুভ কামনা।

তানভীর এর ছবি

আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। কিন্তু বাঁশ-বেড়ার ঘরে তো আর শখ করে কেউ থাকে না। আমাদের দেশে একটা নিম্ন আয়ের লোকও কংক্রিটের দালানে থাকে, গ্রামে একটু অবস্থাপন্ন হলেই দালান তোলে। যারা বিত্তহীন ও দিন-আনে-দিন-খায় তাদেরকেই শুধু বাধ্য হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে এমন লোকের সংখ্যাই দেশে বেশি। দুর্যোগের আঘাতও তাই এদেরকেই বেশি পোহাতে হয়। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে প্রায় এক মাস বিদ্যুত, পানি ছিল না। কিন্তু আমরা মোটেও অসহায় অবস্থায় পড়ি নি। দেশের ঘরবাড়িতে প্রচুর আলো-বাতাস ঢোকে, এসির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বিদেশের কাঠের বাড়ি এমনভাবে বানানো যে এসি না থাকলে টেক্সাসের গরমে আপনি বারবিকিউ হয়ে যাবেন। দেশে পানি না থাকলে টিউবওয়েল আছে, পুকুর-দীঘি আছে। বিদেশে পানি না থাকলে কমোড ফ্লাশ হয় না, আকুয়াফিনা খাবেন, নাকি কমোডে দিবেন? বিদেশে বিদ্যুত না থাকলে গ্রোসারি স্টোর চালু হয় না, দেশে এগুলো কোন সমস্যা না। তবে অন্য দিকও আছে। আমি ঝড়ের পরে হিউস্টনে লাইনে দাঁড়িয়ে যখন গ্যাস, খাবার কিনেছি কোন বাড়তি মূল্য আমাকে দিতে হয় নি। দেশে দুর্যোগের পরে অনেক ব্যবসায়ী জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। ১৯৯১-এ কোন ইভাকুয়েশন হয় নি। যদি এখানকার মত ইভাকুয়েশন করানো হত, অনেক প্রাণ বেঁচে যেত। তবে আমেরিকায় ছাগলের মত যেমন বিশাল এলাকা জুড়ে ইভাকুয়েশন করানো হয়, এদেশের বাড়ীঘরগুলো একটু শক্তপোক্ত হলে এত ব্যাপকভাবে এর কোন প্রয়োজন ছিল না। সাধারণত জলোচ্ছ্বাসের পানি যে পর্যন্ত আসে, সে পর্যন্ত ইভাকুয়েশনই যথেষ্ট। আমার ১৯৯১-এর অভিজ্ঞতাই তাই বলে।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

জিফরান খালেদ এর ছবি

আপনে ঠিক আসেন, এইটাই বড় ব্যাপার... তবে, একানব্বইয়ে অনেক ছোট ছিলাম... আমার সামনের জানালার গ্লাসটা হঠাত ভেঙ্গে গেলো... পানি নাই... হই হুল্লোড় কইরা সবাই নিচে থেকে পানি আনতে যাইতাম... এদ্দূর মনে আসে শুধু... তবে, কাতালগঞ্জে ভাল পানি উঠতো... নৌকা আনা হইসিলো...

তানভীর এর ছবি

ভাইসাব, আমিও তো কাতালগঞ্জে থাকতাম। আপ্নে দেখি আমার পাড়ার লোক!

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

জিফরান খালেদ এর ছবি

হেহে... কাতালগঞ্জ, মির্জারপুল, পাঁচলাইশেই তো কাঁটাইলাম জীবনটা... পুরাটাই বলতে গেলে... শেষের দিকে দুই নাম্বার গেইট... কাতালগঞ্জের মীর মঞ্জিলে থাকতাম... মুন্সী পুকুরের সাথে যে বড় মসজিদ তার সামনা সামনি চারতলা বাড়িটাত।

তানভীর এর ছবি

হুম বুঝছি...আমরা থাকতাম আরেকটু এদিকে সকিনায়। তারও আগে কেনোপিতে।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

রাগিব এর ছবি

যাক, আপনি ভালো আছেন জেনে স্বস্তি পেলাম। ঝড়ের গন্তব্য শুনেই মনে হয়েছিলো, আপনার ঐ দ্বীপের উপরেই তো যাচ্ছে!!

হালকা পাতলা ঝড়েই এদের কান্নাকাটি দেখে চট্টগ্রামের ১৯৯১এর ঘূর্ণীঝড় পার করে আসা আমার মাঝে মাঝে হাসি পায়। বিদ্যুৎ প্রায় সপ্তাহ খানেক/দিন দশেক ছিলোনা আমাদের, কিছুই যায় আসে নি। এদের কাঠের ঘরবাড়িগুলো আসলেই ঠুনকো। আর বন্যা-টন্যা টাইপের কিছু জিন্দেগীতেও দেখেনি বলে এরা সামান্য পানি জমাতেই মূর্ছা যায়।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

শামীম এর ছবি

দুই বার পোস্টিং হয়ে গেছে মন খারাপ । সুযোগ পেলে মুছে দিবেন।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

শামীম এর ছবি

আপনাদের দুরবস্থা জেনে খুব খারাপ লাগলো। প্রার্থনা করি ভাল থাকুন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্টের কোন কিছুতেই নাই এই সরকার। তারপরেও বেকুবচোদারা (এমনকি টেক্সাসেও) এইবারও ম্যাককেইনরে ভোট দিয়া প্রেসিডেন্ট বানাইবো। বুশ না কইছিলো - "You're doin' a helluva job, Brownie!"

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

তানভীর এর ছবি

হ। তারপরেই তো মাইকেল ব্রাউনকে পদত্যাগ করতে হইছিল। ম্যাককেইন আসতেছে কোন সন্দেহ নাই সারাহ প্যালিন সিনড্রোমে
ভর কইরা।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

ধূসর মানব  [অতিথি] এর ছবি

বাংলাদেশের উপকুলীয় কিছু লোকজন Import করা যায় কিনা ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্টের জন্য USA তে, ভেবে দেখতে পারে বুশ ভাইজান।

তানভীর এর ছবি

বাংলাদেশে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কিছু আছে নাকি? থাকলে এক একটা দুর্যোগে এত লোক মারা যায় ক্যামনে? বাংলাদেশের মানুষই ঐতিহ্যগতভাবে দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অভ্যস্ত, যেটা আর কোন দেশে সাধারণত দেখা যায় না। বাহবা যদি কেউ পায়, সেটা সাধারণ মানুষই পাবে। দেশের সরকার বুশ ভাইজানের চাইতেও আরো বেশি ভোদাই।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।