জুলি পাওয়েল একজন সরকারী কল-সেন্টার কর্মী। ফোনে নাইন-ইলেভেন-দুর্গতদের অভাব-অভিযোগ শোনা এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার পুনঃনির্মাণে জনগণের মতামত নেয়া তার কাজ। আর দশজন কল-সেন্টার কর্মীর মতোই তার দিনগুলো একঘেঁয়ে এবং বাড়তি উপহার হিসেবে প্রায়শই তাকে কাস্টমারদের গালিগালাজ খেতে হয়। বাড়ি ফিরে স্বামীর সাথে বসে বসে সে তার দুর্ভাগ্যের কথা ভাবে আর টুকটাক এটা ওটা রান্না করে। আসলে তার বড় লেখিকা হবার শখ ছিল। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে কিছুই হওয়া হলো না।
নিরানন্দময় জীবনে একটু বৈচিত্র্য আনার জন্য জুলি একদিন এক মজার প্রজেক্ট হাতে নেয়। বিখ্যাত রাঁধুনী জুলিয়া চাইল্ডের রান্নার বই থেকে সে এক বছরে সবগুলো রেসিপি রান্না করে ফেলবে ঠিক করে- ৩৬৫ দিন, ৫২৪ টা রেসিপি! ঢোলে বাড়ি দিলো পল, তার স্বামী- ‘দারুণ আইডিয়া! তুমি তোমার প্রতিদিনের রান্নার অভিজ্ঞতাগুলো ব্লগে লিখে ফেলতে পারো, তুমি তো আসলে একজন লেখিকাই’। ‘ব্লগ! সেটা আবার কী?’ পল জুলিকে salon.com-এ একটা ব্লগ একাউন্ট খুলে দেয়। শুরু হলো ব্লগে জুলি/জুলিয়া প্রজেক্ট।
যারা জুলি এন্ড জুলিয়া ছবিটি এখনো দেখেন নি, তারা এটাকে সিনেমার প্লট ভাবতে পারেন। কিন্তু আসলে এটা সত্যি ঘটনাই! ইন্টারনেট চালু হবার পর ব্লগ নিয়ে এটাই প্রথম বড় ধরনের হলিউডি সিনেমা। ব্লগে জুলি পাওয়েলের জুলি/জুলিয়া প্রজেক্টই তাকে এনে দিয়েছে তারকা খ্যাতি এবং বড় লেখক হবার সুযোগ। ব্লগে খ্যাতি লাভের পর ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় জুলি পাওয়েলের প্রথম বই ‘Julie and Julia: 365 Days, 524 Recipes, 1 Tiny Apartment Kitchen’ যার ভিত্তিতে আলোচ্য ছবিটি নির্মাণ করা হয়।
জুলি পাওয়েল এখনো ব্লগ লেখেন। ব্লগস্পটে পেলাম তাঁকে। ছবিতে জুলি পাওয়েলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এমি এডামস আর জুলিয়া চাইল্ডের ভূমিকায় মেরিল স্ট্রিপ। যদিও এখন ছবির সব পুরস্কার মেরিল স্ট্রিপ পাচ্ছেন আমার কাছে এমি এডামসের অভিনয়ই বেশি ভালো লেগেছে। এ ধরনের ছবিকে কী বলে জানি না, তবে এতে দু’টো ভিন্ন সময় সমান্তরালে দেখানো হয়েছে- দর্শক কখনো বর্তমানে জুলি পাওয়েলকে দেখছে, জানছে তার প্রজেক্টের অভিজ্ঞতাসমূহ- আবার পরক্ষণে অতীতের জুলিয়া চাইল্ডের অভিজ্ঞতার সাথে সেটা মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এই দৃশ্যান্তরটা মসৃণভাবে বেশ দক্ষতার সাথেই করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে; কারণ বর্তমান দৃশ্যের মাঝে অতীতের জুলিয়া চাইল্ডের বার বার ফিরে আসা আমার কাছে তেমন খাপছাড়া লাগে নি। যেটা ভালো লাগে নি তা হলো রন্ধন প্রজেক্ট শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোন পরিণতি ছাড়াই ছবি শেষ হয়ে যাওয়া। আরেকটু ক্লাইমেক্স বোধহয় আনা যেতো। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো, সবমিলিয়ে সময় কাটানোর জন্য মোটামুটি ভালো ছবি।
যা’ হোক, সিনেমা দেখে আর জুলি পাওয়েলের কাহিনী পড়ে যেটা মনে হলো ব্লগের রন্ধনপটু/পটিয়সীরাও আমাদের সিদ্দিকা কবীরের রান্নার বই দেখে এরকম ব্লগ প্রজেক্ট হাতে নিতে পারেন। বলা যায় না, মোসাফারুকী বা নজরুল ভাই আপনাকে নিয়ে এরকম একটা সিনেমা বা নাটক বানিয়ে ফেলতে পারেন। তখন আমাকে কমিশন দিতে ভুলবেন না যেন
নতুন বছর আমাদের সবার জীবনে বেশি বেশি সুখাদ্য নিয়ে আসুক।
বন আপ্যেটিইট!
মন্তব্য
শুভক্ষুধা
কিন্তু পিচ্চির ছবি কই?
শুভক্ষুধা
আমাদের মার্কেট খুব ছোট, ব্লগ লিখে এতদূর যাওয়া একটু কঠিন হতে পারে।
বিষয়টা মনে হয় মার্কেটের না, স্পটলাইটের। Salon.com-এরও এমন কোন বড় মার্কেট ছিলো বলে মনে হয় না। কিন্তু এখানে একটা ব্লগ যেমন নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকার দৃষ্টি সহজে আকৃষ্ট করতে পারে, বাংলা ভাষায় হাজারটা গুরুত্বপূর্ণ ব্লগের পক্ষেও সেটা সম্ভব না। কিন্তু ছোট পরিসরে নিজেদের মধ্যে এমন উদ্যোগ নেয়াই যায়। ব্লগে এই উইকিযুদ্ধ, বরাহশিকার নিয়েই একটা ছোট নাটক নামিয়ে ফেলা যায়। কী বলেন?
আইডিয়াটা মন্দ না। তবে এখানে 'পাছে লোকে কিছু বলে'র ভয় আছে। সেটা কেয়ার না করলেই হলো।
হ... খাড়ান, চ্যানেলের লগে আলাপ করুমনে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ...খাড়াইসি
ছবি দেখিনাই। নাম শুঞ্ছি। বউ দেখছে, ভালোও কইসে। নজু নাটক বানাইলে নায়কের পার্ট আমার
ঠিকাসে...আমার কমিশনের চেকটা মেইলে পাঠায়ে দিলেই চলবে
ছবিটা দেখবো দেখবো করে দেখা হয়নি...
প্লট সম্পর্কে টুকটাক একজনের কাছে শুনেছিলাম তবে আপনার লেখা পড়ে আরো জানলাম। ভালো লাগলো।
দেখে ফেলেন...
খাইসে... অন্তর্জালের সুবাদে যে আরো কতকিছু জানবো...
_________________________________________
সেরিওজা
হ
এই ছবিটা হেভি মজা লেগেছিল।
মেরিল স্ট্রিপকে আমার এতো দুর্দান্ত লাগে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হুম। মেরিল স্ট্রিপ ভালু
এইটা আমি দেখেছি৷ মন্দ লাগে নি৷ আমার এক বন্ধু রেসিপী নিয়ে অসাধারণ লেখে৷ এখন বিভিন্ন ডেজার্ট নিয়ে লিখছে৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ব্লগের জুলি/জুলিয়া প্রজেক্ট ঠিক রেসিপি নিয়ে লেখা না। সেটা হলে এতো জনপ্রিয়তা পেতো না। জুলিয়া চাইল্ডের কুক বুক থেকে এক বছরে সব রেসিপি রাঁধতে গিয়ে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। ব্লগটা পড়ে দেখতে পারেন। ইন্টারেস্টিং।
নতুন মন্তব্য করুন