অদৃশ্য শিল্পকর্ম: মুল স্টেফান সোয়াইগ, জার্মান থেকে অনুবাদ: তীরন্দাজ

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বুধ, ২১/১১/২০০৭ - ২:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এ অবধি যতগুলো গল্প পড়া হয়েছে আমার, তার মাঝে এ গল্পটিকে অতি উঁচুতে জায়গা দিতে পারি নির্দ্বিধায়। যারা গল্প পড়েন ও ভালোবাসেন, মনে হয়না তাদের খুব একটা দ্বিমত থাকবে। যদি রসের কোন কমতি ঘটে, সেটা অনুবাদকেরই অপারগতা হিসেবে ধরে নেবেন।)

ড্রেসডেন পেরোনোর পর একজন মাঝবয়েসী ভদ্রলোক উঠলেন আমাদের কামরায়। খুব ভদ্রতার সাথে সম্ভাষন জানিয়ে তারপর এমনভাবে মাথা নাড়লেন, যেন অনেক দিনেরই পরিচিত। প্রথমে তাকে চিনে উঠতে না পারলেও যখন তিনি মৃদু হেসে নিজের নামটি বললেন, তক্ষুনি সাথে সাথে চিনে ফেললাম। বার্লিনের একজন স্বনামধন্য প্রাচীন শিল্পকর্মের সংগ্রাহক। তার কাছ থেকে যুদ্ধের আগে অনেকবারই পুরোনো বই ও আত্মজীবনী ঘাটাঘাটি করেছি ও কিনেছি। শুরুতে আমাদের কথাবার্তা হালকা বিষয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকলো। তারপরই হঠাৎ প্রসঙ্গ পাল্টালেন তিনি।

আপনাকে না বলে পারছিনা, কোত্থেকে এমুহুর্তে ফিরছি আমি। সাতাশ বছরের শিল্পকর্ম ব্যাবসায়ী জীবনে এ ধরণের অদ্ভুত ঘটনাচক্রের মুখোমুখি কখনোই হতে হয়নি। আপনি হয়তো নিজেও জানেন, টাকার মুল্য যেখানে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন, সেখানে আমার এই ব্যবসার কি অবস্থা হতে পারে। নব্য ধনীরা সেসময় হঠাৎ নিজেদের ‘গথিক ম্যডোনা ও ইনকুনাবেল’ ও পুরোনো স্কেচ এর প্রতি তাদের প্রগাঢ় ভালোবাসার টান আবিস্কার করে নিজেরাই মুগ্ধ। মনে হয়, সম্ভব হলে তারা কারো সার্টের হাতা ছিড়েই বোতাম ও টেবিল থেকে টেবিলল্যম্পটি কিনে নিতে দ্বিধা করতেন না। স্বভাবত:ই আরো বেশী মালামাল জোগাড় করা দিনের পর দিন আরো বেশী জরুরী হয়ে পড়লো। ক্ষমা করবেন, আমরা যে শিল্পকে এতোটা সমীহের দৃষ্টিতে দেখি, হঠাৎই তাকে মালামাল আখ্যা দিচ্ছি বলে। কিন্তু কি করবো? এই কিম্ভুত জাতের নব্য ধনীদের এটাই যে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একটা অতুলনীয় প্রাচীন ভেনিসিয় ছাপকে কে তারা একতোড়া ডলারের ওজনে মাপে ও গুয়ারেচিনোর হাতের একটি স্কেচকে মনে করে কয়েকটি একশো ফ্রাঙ্ক নোটের পূনর্জন্ম। তাদের এই হঠাৎ ক্রয়োন্মাদনার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা কেউ ভাবতেই পারে না। একদিন সারারাত খেটে খেটে অস্বাভাবিক ক্লান্ত। মনে হলো যেন ব্যবসা বন্ধ করে দেয়াই ভাল। প্রচন্ড আত্মগ্লানিতে ভুগছিলাম এই ভেবে যে, যে ব্যাবসা আমার বাবা আমার পিতামহের কাছ থেকে নিয়ছেন, এখন মুল্যহীন জঞ্জালে পরিপূর্ণ। উত্তর জার্মানীর কোন রাস্তার ফেরিওয়ালাও হয়তো এসব জঞ্জাল তার ঠেলাগাড়ীতে সাজাতো না।

এই সমস্যার মুখেমুখি হয়ে আমাদের ব্যবসার পুরোনো খাতাগুলো খুটিয়ে দেখব বলে স্থির করলাম একদিন। আশা, হয়তো এমন কোন পুরোনো ক্রেতা খুঁজে বের করতে পারবো, যার কাছ থেকে একটা দু’টো মুল্যবান কিছু হাতিয়ে নেয়া যায়। সত্যি কথা বলতে কি, এরকম সময়ে ক্রেতাদের এসব তালিকাকে কবরস্থানের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। স্বভাবতই তা আমার জন্যে নতুন কোন পথের সন্ধান দিল না। তালিকার বেশীরভাগ ক্রেতাই তাদের সংগ্রহ নিলামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে বেঁচেও নেই আর। বাকী যারা আছেন, তাদের কাছে প্রত্যাশানুযায়ী কিছুই নেই। কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎই একজন সবচেয়ে পুরানো ক্রেতার একগুচ্ছ চিঠি পড়ল হাতে। তার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম একারণে যে, ১৯১৪ সাল থেকে তিনি কোন কিছুই আমাদের কাছ থেকে কেনা বা খোঁজখবর, কিছুই করেন নি। বাড়িয়ে বলছি না একেবারেই, চিঠিগুলো প্রায় ষাট বছরের পুরোনো। আমার পিতা ও পিতামহের কাছ থেকে তিনি কেনাকাটা করেছেন, কিন্তু তারপর, আমার সাতাশ বছরের নিজস্ব ব্যাবসায়িক জীবনে কখনো আমাদের দোকানে ঢুকেছেন কি না, তা বলতে পারবো না। সব দেখে মনে হলো, তিনি নিশ্চয়ই একজন অদ্ভুত, প্রাচীনপন্থি ও বিচিত্র ধরণের মানুষ হবেন। প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া মানসেল অথবা স্পিট্সভেগ বর্নণার কাছু জার্মান, যারা ছোট মফস্বল শহরগুলোতেই অতীত কাহিনীর মতো টিকে আছেন। তার লেখা চিঠিগুলোকে অংকনশিল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে। অক্ষরগুলো পরিস্কার সাজানো, সংখ্যাগুলোর নীচে রুলারে লাল রং এর লাইন টানা। যাতে কোন ভুল বোঝার অবকাশ না থাকে, সেজন্য প্রতিটি সংখ্যাই ওনি দু’বার করে লিখেছেন। প্রায় ক্ষয়ে যাওয়া পুরোনো ব্যবহৃত কাগজ, সস্তা খামের ব্যাবহার এই মফস্বলবাসী ক্রেতার অতিরিক্ত সাবধানতা ও অসুস্থ কিপটামোকেই প্রমান করে। চিঠির শেষে সাক্ষরে নামের সাথে রয়েছে উপাধি, যার অর্থ বোঝা দুস্কর। প্রাক্তন জঙ্গল ও অর্থবিদ্যা উপদেষ্টা, প্রক্তন লেফ্টেনেন্ট, প্রথম শ্রেনীর লৌহমানব পদক প্রাপ্ত। আঠারোশ’ সত্তুর-একাত্তুরের সালের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন, সেভাবে হিসেব করলে যদি বেঁচে থাকেন, তাঁর বয়েস আশির কাছাকাছি হবার কথা। কিন্তু পুরোনো নকশার সংগ্রাহক হিসেবে এই অস্বাভাবিক, হাস্যকরভাবে কিপটে, বিচিত্র মানুষটির অতুলনীয় চাতুর্য ও নিখুত মেধার প্রমাণ পাওয়া গেল, যখন তার ষাট বছর আগের অর্ডারগুলো ধীরে ধীরে পড়া হলো আমার। প্রথম দিককার কেনা জিনিসগুলোর দাম পরিশোধ করেছিলেন রৌপ্য মুদ্রায় ও তাতেই সজাগ হয়ে উঠলাম। যেখানে এক পয়সার বিনিময়ে সে সময়ে গোটা ছয়েক অতি সুন্দর কাঠের উপর খোদাই করা নকশা কেনা যেত, সেখানে এই ভদ্রলোক কিনেছেন তামার উপর খোদাইএর কাজ। এই তামার উপর খোদাই কাজগুলোই এখনকার তথাকথিত নব্য ধনীদের চাহিদা সসন্মানে পুরন করতে সক্ষম। সামান্য মার্ক ও পেনির বিনিময়ে গত অর্ধশতাব্দীতে যা কেনা হয়েছে, এখন সেগুলোর মুল্য এখন আকাশচুম্বী। তাছাড়া নীলাম ও অন্যান্য বিক্রেতাদের প্রভাবেও দাম আরো বেশী উঁচুতে তুলে দেয়া হয়েছে। ১৯১৪ সাল থেকে ওনার আর কোন ফরমাস আসেনি। কিন্তু এ অবধি যতগুলো উল্লেখযোগ্য নীলাম বা সরাসরি কেনাবেচা হয়েছে, তার খবর রেখেছি। তাই তাঁর এতবড় সংগ্রহ নিয়ে তেমন কিছু ঘটলে খবর পেতাম। সুতরাং ধরে নেয়া যায়, এই আজব ভদ্রলোক এখনও বেঁচে আছেন বা তার সংগ্রহ তার আত্মীয় পরিজনদের হাতেই রয়েছে।

আমার আগ্রহ হলো, তাই চিঠিগুলো পড়ার পরদিনই, অর্থাৎ গতকাল সন্ধ্যায় সোজা সাকসেনের এই আজব মফস্বল শহরে রওয়ানা হয়ে গেলাম। ছেট্ট রেলষ্টেশনটি পেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়তেই বিশ্বাস হতে চাইল না, যে এই মফস্বল শহরের সস্তা চটকদার বাড়ীগুলোর কোন এক কামরায় এমন একজন মানুষ বাস করতে পারেন, যার কাছে রেমব্রান্টের অপরূপ ছবি, ড্যুরার ও মনটেগনাসের স্কেচ পুরো অক্ষত অবস্থায় থাকতে পারে। কিন্তু এখনকার পোষ্ট অফিসে গিয়ে যখন প্রশ্ন করলাম, এই নামে এখানে কোন জঙ্গল ও অর্থবিদ্যা উপদেষ্টা বাস করেন কি না, তারা ঠিকই বলতে পারলেন। অবাক হলাম খুব। স্বীকার করতে বাধ্য, একটু দুরু দুরু বক্ষেই দুপুরের কিছুটা আগে সেদিকে রওয়ানা হলাম।

বাসাটি খুঁজে বের করতে তেমন বেগ পেতে হলোনা। এক সস্তা দালানের দোতালায় তাঁর বাস। দালানটি দেখে মনে হলো কোন এক দুরদর্শী রাজমিস্ত্রী ষাটের দশকে তাড়াহুড়ো করে কোনভাবে দাঁড় করিয়েছে। একতলায় থাকেন এক সাদামাটা দর্জী, দোতালার বা দিকে দেখা গেল এক পোষ্টমাষ্টারের নামফলক, আর ডানদিকে চিনেমাটির ফলকে জঙ্গল ও অর্থবিদ্যা উপদেষ্টা নাম লেখা। একটু ইতস্তত: করে বেল বাজানোর সাথে সাথেই কালো পোষাক পড়া সাদা চুলের এক বৃদ্ধা দরজা খুলে দিলেন। আমি আমার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে জানতে চাইলাম, বন উপদেষ্টার সাথে দেখা করতে পারি কি না। একটু অবাক ও কিছুটা সংশয়ী দৃষ্টিতে আমাকে দেখে কার্ডটি নিলেন তিনি। মনে হলো মফস্বল শহরের এই পুরোনো বাড়ীতে বাইরের অতিথির আগমন কদাচিৎ। তিনি আমাকে ভদ্রভাবে অপেক্ষা করার জন্যে অনুরোধ করে কার্ডটি নিয়ে ভেতরের ঘরে গেলেন। প্রথম ফিসফিসিয়ে কিছু আলাপ আলোচনা শোনা গেল ও তারপরই জোর এবং খনখনে পুরুষের গলার আওয়াজ।
- ও! বার্লিন থেকে মি: আর..। এত বড় সংগ্রাহক! অবশ্যই আসতে পারেন.. অবশ্যই আসতে পারেন.. খুবই আনন্দের কথা।
এবং সাথে সাথেই সে বৃদ্ধা গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এলেন আবার ও আমাকে সাদরে ভেতরে নিয়ে গেলেন।

ওভারকোটটি খুলে ভেতরে ঢুকলাম। সহজ ভাবে সাজানো ঘরে সোজা হয়ে দাঁড়ানো যতো না বয়স্ক, তারচেয়ে বেশী ধারালো চেহারার এক ভদলোক। তাঁর মুখের উপরে ঘন খোঁচা খোঁচা গোঁফ ও পরণে সেনাবাহিনীর পোষাক। আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে দু’হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন । এই প্রানখোলা স্বতস্ফুর্ত আমন্ত্রনের মাঝে এক ধরণের অস্বাভাবিক অসাঢ়তা তাঁর দাড়ানোর ভঙ্গীতে টের পেলাম। আমার দিকে এক পা ও এগিয়ে আসেন নি, বরং আমাকেই বেশ অপ্রস্তুত অবস্থার মাঝে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতে হলো। যখন তাঁর হাত ধরতে গেলাম, দেখলাম তার হাত সামনে না এগিয়ে আমারই হাতের অপেক্ষায় স্থির। পরক্ষনেই বুঝলাম, উনি অন্ধ।

ছোটবেলা থেকেই কোন অন্ধের মুখোমুখি হলে বেশ অসহায় বোধ করতাম। এক ধরণের অপরাধ ও জড়তায় ভুগতাম এই ভেবে যে, একজন মানুষকে আমি যতোটা প্রানবত্ত ভাবে অনুভব করছি, সে মানুষটি ততটা পারছেন না। এবারও আমাকে প্রাথমিক জড়তা কাটাতে হলো, যখন তার খাড়া, ঘন ভুরুর নীচে তার মৃত, কোন এক শুন্যতার দিকে মেলে ধরা চোখের দিকে তাকালাম। কিন্তু এই অন্ধ ভদ্রলোক বেশীক্ষন আমাকে এই বিমুঢ় অবস্থায় থাকতে দিলেন না। তাঁর হাতে আমার হাত স্পর্শ করতেই তিনি ধরে জোরে ঝাঁকি দিলেন ও তার অভ্যর্থনার পূনরাবৃত্তি করলেন।
- এক বিরল অতিথি, বলেই চওড়া হাসি হেসে বললেন,
- আমি সত্যিই অবাক! বার্লিনের এক নামীদামী মানুষ পথ ভুলে আমাদের এখানে।...তার মানে যখনই ওখানকার কোন ব্যবসায়ী আমাদের কথা ভেবে ট্রেনে চড়েন, তখনই সাবধান হওয়া জরুরী ।....আমাদের এখানে বলা হয়, ঘরবাড়ী আর টাকাপয়সা সামলাও, যখন কোন জিপসী আসে। তবে অনুমান করতে পারছি, কেন আমার কাছে এসেছেন।... আমাদের দরিদ্র, ধ্বংসপ্রাপ্ত জার্মানীতে ব্যাবসাপাতির অবস্থা খুবই খারাপ। ভাল ক্রেতাও আর নেই, বড় বড় ব্যাবসায়ীরা তাই হঠাৎ পুরোনো ক্রেতাদেরই তালাশ করছেন, অনেকটা হারানো ভেড়া খুঁজে বের করার মতো।.. কিন্তু আমার এখানে, মনে হচ্ছেনা ভাগ্য খুলবে আপনার। আমরা গরীব, পেনশনভোগীরা এমনি অবস্থায় যে, খাবার টেবিলে এক টুকরো রুটি দেখলেই আনন্দিত বোধ করি। আপনারা যে পাগলের মতো দাম চান, তার কাছাকাছি আমরা কখনোই যেতে পারবো না। আমরা এখন চিরদিনের জন্যেই বাতিল।

তার কাছে কিছু বিক্রি করা আমার উদ্দেশ্য নয়, এ কথা বলে ভুল শুধরে দিলাম তাঁর । জানালাম, কোন কাজে কাছাকাছি কোথাও এসেছি ও এই সুবাদে তার মতো জার্মানীর এত বড় শিল্পসংগ্রাহকদের একজনকে সন্মান জানানোর সুযোগটি হেলায় হারাতে চাই নি।

জার্মানীর এত বড় শিল্পসংগ্রাহক শব্দটি শুনেই অভাবনীয় এক পরিবর্তন দেখা গেল বৃদ্ধের চেহারায়। একক্ষন ওনি ঘরের মাঝখানে সোজা হয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু এবার তার দাঁড়াবার ভঙ্গীতে এক আলোর বিচ্ছুরণ ও ভেতর থেকে ফুটে ওঠা গর্ব এসে ভর করলো। স্ত্রী যেদিকে থাকবেন বলে অনুমান তার, সেদিকে মুখ ফেরালেন।
- শুনছ!
পুরোপুরি উৎফুল্ল তাঁর গলার আওয়াজ। মিলিটারীর কর্কশ আওয়াজ একেবারেই বদলে গেছে এবার, যা একটু আগেও ছিল। এখন কোমল, আদুরে তার গলার স্বর। আমার দিকে ফিরে বললেন,
- এটা সত্যিই খুব আনন্দের যে আপনি আমার কাছে এসেছেন। কিন্তু আপনার আসা বিফলে যাবে না। এখানে আপনি এমন কিছু দেখতে পাবেন, যা আগে কখনও পান নি। এমনকি সম্পশালী বার্লিনেও নয়। কিছু কিছু কাজ দেখবেন, যা ‘আলবারটিনা’ এবং প্যারিসেও এতটা নিখুত পাওয়া যাবে না। ষাট বছরের সংগ্রহে একসময় অনেক কিছুই জমে যায়, যা রাস্তাঘাটের নয়। লুইস, আলমারীর চাবিটা দাও‍!

কিন্তু এবার যা ঘটলো, তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বৃদ্ধাটি তাঁর পাশে দাড়িয়ে ভদ্র, স্মিত হাস্যে ও একধরণের শান্ত নম্রতায় আমাদের আলাপে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অনুরোধের ভঙ্গীতে দুই হাত তুললেন ও একই সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে আমাকে না সূচক ইশারা করলেন, যার অর্থ আমি প্রথম বুঝতেই পারিনি। তারপর তিনি তাঁর স্বামীর কাছে এগিয়ে গেলেন ও আলতো করে দুই হাত তাঁর কাধে রেখে বললেন,
- ভদ্রলোককে কি একবারও জিজ্ঞেস করতে চাও না, তোমার সংগ্রহ দেখার সময় এখনই ওনার আছে কি না? দুপুর হয়ে এলো প্রায়। খাবার পর তোমাকে একঘন্টা বিশ্রামের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন ডাক্তার। আমার মনে হয়, যদি বিশ্রামের পর তুমি ভদ্রলোককে সবকিছু দেখাও, সেটাই ভাল? শেষে আমরা সবাই একসাথে কফির টেবিলে বসতে পারতাম। তাছাড়া সে সময় আনেমারি ও বাড়ীতে থাকবে। আমার চাইতে সে এসব অনেক বেশী বোঝে ও তোমাকে ভাল সাহায্য করতে পারবে!

বলা শেষ করেই আবার আন্তরিক অনুরোধের সুরে আগের মতো একই ঈশারা করলেন বৃদ্ধা। এবার আমি তাঁকে বুঝতে পারলাম। আমি বুঝলাম যে তিনি চাইছেন, কোথাও কোন দুপুরের নিমন্ত্রণের কথা বলে শিল্পকর্মগুলো এখনই দেখার পরিকল্পনা থেকে বিরত হই। যেন বলি, এগুলো দেখা আমার জন্যে পরম আনন্দ ও সন্মানের হলেও বিকেল তিনটার আগে অসম্ভব।

একটা শিশুর কাছ থেকে খেলনা কেড়ে নিলে যেমন বিরক্ত হয়, তেমনি বিরক্ত হলেন বৃদ্ধ। এদিক ওদিক মাথা নেড়ে বললেন,
- বার্লিনের ভদ্রলোকদের কখনোই সময় থাকে না। কিন্তু এবার আপনাকে সময় নিতে হবে। একটি বা দুটো নয়, সাতাশটি বড় বড় এলবাম। প্রতিটি এক একজন শিল্পীর। কোনটাই অসম্পূর্ন নয়। ঠিক আছে, বিকেল তিনটাতেই। কিন্তু সময়মতো আসবেন, না হলে সব দেখে শেষ করতে পারবো না।

আবার তিনি শুন্যে আমার দিকে হাত এগিয়ে দিলেন।
- একটা কথা মনে রাখবেন। আমার সংগ্রহ দেখে আপনি আনন্দিত হতে পারেন, হিংসেওও করতে পারেন। কিন্তু যতোই হিংসে করবেন, ততই আনন্দিত হবো আমি। সংগ্রহকরা এমনই, নিজেদের জন্যে সব, অন্যদের জন্যে কিছুই নয়!
তারপর আমার হাত ধরে জোর ঝাঁকুনি দিলেন আবার।

বৃদ্ধা আমাকে দরজা অবধি এগিয়ে দিলেন। আমি সারাক্ষণই তাঁর ভেতরে এক ধরণের অস্বস্তি, এক ধরনের লজ্জামেশানো ভয় দেখতে পাচ্ছিলাম। এবার, দরজায় বেরুনোর আগের মূহুর্তে অতি নীচু স্বরে আমাকে বললেন,

- আমার মেয়ে আনেমারি আপানাকে হোটেল থেকে আনতে যেতে পারে কি? ...বিভিন্ন কিছু কারণে এটাই ভাল হতো সবচেয়ে।...আপনি তো আপনার হোটেলেই খাওয়াদাওয়া সারবেন, তাইনা?
- অবশ্যই, আমি খুবই খুশী হবো তাতে। এতো আমার জন্যে আনন্দের ব্যাপার।
বললাম আমি।

সত্যিসত্যিই এক ঘন্টা পর, হোটেলের রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার শেষ করা মাত্রই, সাধারণ পোষাকে একটু বুড়িয়ে যাওয়া একটি মেয়ে সন্ধানী দৃষ্টিতে প্রবেশ করল। এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে সাথে সাথেই তার সাথে রওয়ানা হতে চাইলাম। কিন্তু মেয়েটি হঠাৎ কোন এক অজানা লজ্জায় লাল হয়ে, তার মায়ের মতো একই রকম অস্বস্তিতে, ওখানে যাবার আগে তার কয়েকটি কথা শোনার জন্যে অনুরোধ জানালো। প্রতিবারই যখন সে কথা শুরু করতে চাইল, ততবারই মুখ থেকে শুরু করে কপাল অবধি লাল হয়ে গেলো ওর। পোষাকে বারবার হাত ঘসতে ঘসতে অবশেষে বলতে শুরু করলেও, প্রতিবারই একটু বলে স্তব্ধ হয়ে আবার নতুন কোন জড়তায় থমকে গেল বারবার।

- মা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। ..আমাকে সব বলেছেন।...আমাদের একটি বিশেষ অনুরোধ আছে আপনার কাছে।...বাবার কাছে যাবার আগেই তা আপনাকে জানাতে চাইছি।...বাবা আপনাকে অবশ্যই তার সংগ্রহ দেখাতে চাইছেন... এবং এই সংগ্রহ...এই সংগ্রহ... সম্পূর্ন নয়। এর অনেকগুলোই এখন আর নেই... এবং দু:খজনকভাবে বেশীরভাগই নেই। ...

আবার টেনে নি:শ্বাস নিতে বাধ্য হলো সে। তারপর হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে দ্রুত বললো,

- আপনার কাছে আমাকে পুরোপুরি সৎ হতে চাইছি।... বর্তমান সময়টি কেমন, জানেন আপনি, আশা করি আমাকে বুঝতে পারবেন সেজন্যেই।... যুদ্ধ যখন শুরু তখন বাবা পুরোপরি অন্ধ। এর আগেই চোখে সমস্যা হচ্ছিল প্রায়ই, অবশেষে যুদ্ধের উত্তেজনা তাঁর দৃষ্টিশক্তির পুরোটাই নষ্ট করে দিল। সাতাত্তর বছর বয়েস হওয়া সত্বেও ওনি ফ্রান্সে যুদ্ধে যোগ দেবেন বলে পণ করেছিলেন। আমাদের সৈন্যরা যখন ১৮৭০ সালের মতোই সামনে এগুতে ব্যার্থ হচ্ছিল বারবার, অস্বাভাবিক হাতাশ আর ক্ষিপ্ত হন তিনি। তার পরপরই তাঁর দৃষ্টিশক্তি খুব দ্রুত কমতে শুরু করে। যদিও শারিরীক দিক থেকে তিনি এখনও পুরোপুরি শক্ত। অল্প ক’দিন আগেও তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা হাঁটতে পারতেন, এমনকি শিকারেও যেতেন। কিন্তু অন্ধত্বের কারণে এখন তিনি আর হাঁটতেও যেতে পারেন না ও তাই তাঁর আনন্দের একমাত্র উপকরণ হচ্ছে তার সংগ্রহ। .. এগুলো তিনি প্রতিদিন দেখেন ... আসলে দেখেন না ... দেখতে পারেন না। কিন্তু প্রতিদিন বিকেলে এলবামগুলো বের করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেন... একটার পর একটা ... একই ক্রমানুসারে ... যা তাঁর গত দশ বছর ধরে মুখস্ত। অন্য কোন কিছুই এখন আর তাকে আকর্ষন করে না। ...প্রতিদিন পত্রিকা থেকে সব নীলামের খবরগুলো আমাকে পড়ে শোনাতে হয়। ... প্রতিবারই যতো বেশী মূল্যের খবর শোনেন, ততো বেশী উল্লসিত হন তিনি।...কারণ ... এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাবার এখন আর সময় ও মূল্য সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। ... ওনি জানেনই না ... সব হারিয়ে এখন নি:স্ব আমরা। তাঁর পেনশনের টাকায় মাসে দু’দিনের বেশী চলা যায় না। ... তারপর আরো সমস্যা হয়েছে। আমার বোনের স্বামী যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছেন। বোনকে চারটি সন্তান সহ রেখে গিয়েছেন একা। .. কিন্তু আমাদের এতবড় আর্থিক সমস্যার কথা বাবা কিছুই জানেন না। প্রথম আমরা মিতব্যায়ি হবার চেষ্টা করেছি, আগের চেয়ে অনেক বেশী, কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। তারপর এটা সেটা বেচা শুরু করলাম, বাবার প্রিয় সংগ্রহগুলো ছোঁওয়ার কথা প্রথমে একেবারেই ভাবিনি। প্রথম দিকে একটা দু’টো গহনা, যা ছিল। কিন্তু গহনাই বা কতটা ছিল! বাবা গত ষাট বছরে প্রতিটি পয়সা, যা বাঁচাতে পেরেছিলেন, শুধুমাত্র তাঁর সংগ্রহের পেছনেই ব্যায় করেছেন। একসময় বিক্রি করার মতো কিছুই রইল না। ... আমরা কি করবো, কোন উপায় খুজে পাচ্ছিলাম না। ... তখন মা একটা আর আমি একটা ছবি বিক্রি করলাম। বাবা কখনোই সে অনুমতি দিতেন না, কিন্তু উনি জানতেন না, অবস্থা কতোটা শোচনীয়। উনি জানতেন না, কালোবাজারে খাদ্যদ্রব্য কেনা কতোটা কঠিন। উনি এটাও জানেন না যে আমরা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছি। এলসাস ও লোথরিংগেন আমাদের ছেড়ে আসতে হয়েছে। পত্রিকা থেকে এসব খবরাখবর আমরা আর তাকে পড়ে শোনাই নি, তাঁকে উত্তেজিত করতে পারে এই ভেবেই।

রেমব্রান্টের একটি মুল্যবান ছাপ আমরা বিক্রি করেছি। যে কিনেছে, বেশ কয়েক হাজার টাকার বিনিময়েই। আমরা ভেবেছি কয়েক বছর এতেই চলে যাবে। কিন্তু আপনি তো জানেন, টাকাপয়সা কত দ্রুত ফুরিয়ে যায়। ..... যতটুকু দরকার ততটাকুই রেখে, বাকী পুরোটা ব্যাঙ্কে রেখেছিলাম, কিন্তু দু’মাসের মাঝেই শেষ। তারপর আরেকটি বিক্রি করতে বাধ্য হলাম ও পরে আরেকটি। কিন্তু মূল্য এতো দেরীতে পেলাম, যে ততক্ষনে সে টাকারই অবমূল্যায়ন ঘটেছে। তারপর চেষ্টা নীলামে বিক্রি করার। যদিও মিলিয়নের ঘরে দাম, ঠকানো হলো আমাদেরকে। ... মিলিয়ন যখন হাতে এলো, তখন তার মূল্য সাদা কাগজের মতোই। একটা দুটো ভালো সংগ্রহ বাদে যা সব মূল্যবান ছিল, সব এভাবেই হাতছাড়া হয়ে গেল, শুধুমাত্র প্রতিদিনের নগ্ন চাহিদা, বিবর্ণ জীবনকে আরো ক’দিন টিকিয়ে রাখার জন্যে আর বাবা এসবের কিছুই জানলেন না।

সেজন্যেই আপনার আসাতে এতোটা আতঙ্কিত হয়েছিলেন মা। .... এলবামগুলো খুললেই তো সব সত্য বেরিয়ে পড়তো। ... প্রতিটি পাতায়, যেখানে বাবা স্পর্শ করেই বুঝতে পারেন, একই ধরণের কাগজ ও নকল ছবি রেখেছি, যাতে টের না পান। কোন ছবির পর কোনটি আসবে, তা তাঁর মুখস্ত। ছবিগুলো ছুঁয়ে ও গুনে বাবা আগে চোখে দেখে যতটুকু আনন্দ পেতেন, এখনও ততটুকুই পান। এছাড়া এ ছোট্ট শহরে এমন কেউ নেই, যাকে বাবা এই সম্পদ দেখানোর যোগ্য মনে করেন। প্রতিটি পাতার প্রতিই তাঁর উন্মাদ ভালোবাসা। ..আমি নিশ্চিত, .. উনি যদি টের পান তার অগোচরে সবই উধাও, বুক ভেঙ্গে যাবে তার। ড্রেসডেন থেকে তামার উপর ছাপ যিনি পাঠাতেন, তার মৃত্যুর পর, এত বছর শেষে আপনিই প্রথম, যাকে বাবা তাঁর সংগ্রহ দেখাতে চাইছেন। সেজন্যেই আপনাকে অনুরোধ করছি.......,

এবং হঠাৎ হাত দুটো উপরের দিকে তুললো মেয়েটি। তার চোখ ভেজা।

- ... আপনাকে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাদের এত বড় ক্ষতি করবেন না। ... আমাদেরকে কষ্ট দেবেন না। তাঁর সর্বশেষ কল্পনাজগৎকে ধ্বংস করবেন না। দয়া করে সাহায্য করুন আমাদের‍! প্রতিটি পাতা উনি আপনাকে দেখাবেন। দয়া করে বাবাকে বিশ্বাস করান যে, সবই আগের মতোই রয়েছে। সামান্য সন্দেহ দেখা দিলেই বাঁচবেন না বাবা আর। হয়তো তার উপর অবিচার করেছি আমরা, কিন্তু কোন উপায় ছিল না বলেই। তাছাড়া আমাদেরকে তো বেঁচে থাকতে হবে। আমার বোনের চার শিশুর জীবনের মুল্য কতগুলো ছাপা কাগজের মূল্যের চেয়ে নিশ্চয়ই বেশী। ... এ পর্যন্ত তার কোন আনন্দকেই ধ্বংস করিনি আমরা। প্রতি বিকেলে তিন ঘন্টা পাতার পর পাতা উল্টিয়ে, প্রতিটি ছবিকে মানুষ ভেবে কথা বলে উনি তো আনন্দেই আছেন। আর আজ ... আজ হয়তো তাঁর সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারতো। বহু বছরের অপেক্ষা তাঁর, সত্যিকারের এক বিশারদকে তার সংগ্রহ দেখানোর। ..আপনাকে হাত জোড় করে অনুরোধ জানাচ্ছি, তাঁর এই আনন্দ ধ্বংস করবেন না।

মেয়েটির কথা আমার ভেতরে এমন অলোড়ন তুললো, তা আপনাকে ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। ব্যাবসায়ী হিসেবে এ ধরণের বিধ্বংসী ঠকবাজীর ঘটনা আমরা যথেষ্ট দেখেছি, যেখানে এই অর্থনৈতিক মন্দায় অনেককেই সর্বশান্ত হতে হয়েছ, তাদের সারা জীবনের মূল্যবান সম্পদ পেটেভাতের বিনিময়ে বিকিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভাগ্যের এই নিদারুন পরিহাস আমাকে বিশেষভাবে স্পর্শ করলো। স্বাভাবিকভাবেই আমি বিষয়টি গোপন ও আমার সাধ্যমতো যা করার করবো বলে কথা দিলাম।

দু’জনে একসাথেই বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। পথে আরো বিশদ জেনে আরো বেশী তিক্ত হলো মন। কি সামান্য পয়সার বিনিময়ে এই সহজ সরল মহিলাদেরকে এতোটা নিদারুণভাবে ঠকানো হয়েছে! তাতে তাদেরকে আমার সব ক্ষমতা দিয়ে সাহায়্য করার সিদ্ধান্ত আরো দৃঢ় হলো। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজার কাছে যেতেই আমরা সেই খনখনে কিন্তু আনন্দমাখা গলায় শুনতে পেলাম,
- আসুন, আসুন, ভেতরে আসুন।
একজন অন্ধের সুক্ষ শ্রবনশক্তির প্রভাবে উনি আমাদের পায়ের শব্দ শিড়িতেই শুনে থাকবেন।

- আপনাকে তার সংগ্রহ দেখাতে হেরাওয়ার্থ আজ এতোটা অধৈর্য যে, দুপুরে ঘুমোতেই পারে নি।

বললেন বৃদ্ধা একগাল হেসে। এরই মাঝে মেয়ের সাথে একবার দৃঘ্টিবিনিময়েই আমার সম্মতির কথা জেনে নিয়েছেন। টেবিলে উপর এলবামগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। অন্ধ ভদ্রলোকের হাতটি ধরতেই নতুন কোন সম্ভাষন না জানিয়ে চেপে আমাকে একটি সোফায় বসিয়ে দিলেন।

- ঠিক আছে, আমদেরকে এক্ষুনিই শুরু করতে হবে। অনেক দেখার আছে, বার্লিনের ভদ্রলোকদের তো আবার সময় খুবই কম। এই যে প্রথম এলবামটি দেখতে পাচ্ছেন, এটি ড়্যুরারের। এ সংগ্রহ যে প্রায় সম্পূর্ন, তা দেখার পরই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। প্রতিটি ছাপই একটি আরেকটি চেয়ে সুন্দর। আপনি নিজেই দেখুন,
বলেই প্রথম পাতাটি খুললেন তিনি। শিরোনাম ‘বড় ঘোড়া’।

তারপর তিনি অতি সুক্ষ হাতে আঙ্গুলের ডগায় শক্ত কাগজের ফ্রেমে আঁটা একটি বিবর্ণ কাগজ এমন সাবধানে হাতে নিলেন যে, ছুঁলেই যেন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। অদ্ভুত এক উল্লাসে অর্থহীন এই কাগজটি হাতে তুলে ধরলেন। মিনিটখানেক কাগজটির দিকে নিবদ্ধ থাকলো তার অন্ধ চোখ। হাত তুলে কাগজটি তাঁর চোখের সামনা সামনি ধরলেন। তখন কোন এক ঐন্দ্রজালে তাঁর পুরো চেহারায় একজন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের উত্তেজনা। তাতে তাঁর মৃত স্থবির চোখের তারায়, কাগজটির প্রতিফলনে বা তাঁর নিজেরই আত্মিক উত্তাপেই হোক না কেন, এক প্রতিসরণীয় ঔজ্জল্য, এক আত্মচেতনার আলো এসে ভর করলো।

- এবার!
গর্বের সাথে বললেন তিনি।
- এরচেয়ে সুন্দর কোন ছাপ আর কোথাও কখনো দেখেছেন? কতো সুক্ষ, কতো পরিচ্ছন্ন, প্রতিটি দাগ স্পষ্ট। আমি এটা ড্রেসডেনের আর একটি ছাপের সাথে মিলিয়ে দেখেছি। এটার পাশাপাশি ওটাকে একেবারেই ভোতা মনে হয়। এবার দেখুন এর সিলগুলো! দেখুন!

কাগজটির উল্টো দিকটি মেলে ধরলেন। আঙ্গুলের নখে কাগজটির কতগুলো খালি জায়গার দিকে এমনভাবে চুলমাত্র সুক্ষতার সাথে নির্দেশ করলেন যে, আমি সেখানে অক্ষরগুলো সেখানেই আছে ভেবে তাকাতে বাধ্য হলাম।
- দেখুন, নাগলার এর সিল, এই যে এখানে রেমি ও এসডাইলের সিল দেখুন। এই নামীদামী সংগ্রাহকরাও হয়তে কখনোই ভাবেননি যে এই মুল্যবান কাগজটি এই ভাঙ্গা বাড়ীতে স্থান পাবে।

আমার শিড়দাঁড়ায় ভেতরে শীতল এক স্রোত বয়ে গেল। যেভাবে একটি খালি কাগজকে চোখে না দেখে ছবি ভেবে উল্লসিত এই ভদ্রলোক, আমার জন্যে তা রীতিমতো ভৌতিক বলে মনে হলো। মিলিমিটার হিসেবের সুক্ষতায় তিনি তাঁর আঙ্গুলের নখে সিলের কাল্পনিক অক্ষরগুলো স্পর্শ করছেন। ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার, কোন উত্তর দেবার ক্ষমতাও রইল না। বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে দুই মহিলার দিকে তাকাতেই তারা একজন কম্পিত ও আরেকজন উত্তেজিত হাত তুলে অনুনয় জানালেন। নিজেকে সংবরণ করে আমি আমার অভিনয়ে মন দিলাম।

- অবিস্মরণীয়, অতুলনীয় সুন্দর ছাপ!
মুখ থেকে কোনক্রমে বের করার সাথে সাথেই গর্বে আলোকিত হলো তাঁর পুরো চেহারা।
- এটা তেমন কিছুই নয়! জয়ের উল্লাস তাঁর কন্ঠে।
- আপনাকে প্রথমে ‘মেলাঙ্কোলিয়া’ অথবা ‘পাসিয়ন’ দেখার পর বলতে হবে। চোখে লেগে থাকার মতো কাজ। হলফ করতে পারি, এই মানের দ্বিতীয়টি আর কোথাও পাবেন না। দেখুন এবার!
আবার আঙ্গুল নির্দেশিত হলো আরেক কাল্পনিক সৃষ্টির দিকে।
- দেখুন, তাজা, ছোট ছোট দানার মতো উষ্ণ রঙ। এটা পেলে বার্লিন তার মিউজিয়াম পরিচালক বা যে কোন সংগ্রাহককে মাথায় তুলে রাখতো।

দুই ঘন্টাব্যাপী তিনি তাঁর নেশা ও কথার তোড়ে বিজয়োল্লাস চালিয়ে গেলেন। কতোটা ভৌতিক ছিল পরিবেশ, তা আপনাকে বর্নণায় বোঝানো আমার সাধ্যের বাইরে। তাঁর সঙ্গে এই একশো বা দু’শো খালি কাগজের টুকরো ও সস্তা ধরণের নকল দেখে যাওয়া, যা এই অসহায় অবোধ মানুষটির স্মৃতিতে ধ্রুবতারার মতোই সত্য। যা তিনি নির্ভুলভাবে ও সঠিক ক্রমানুসারে প্রতিটির আলাদা সুক্ষ বর্নণায় সন্মানের সর্বোচ্চ শিখরে তুললেন, এক অদৃশ্য শিল্পসংগ্রহ, যা বাস্তবে বাতাসে উড়িয়ে দেয়ার মতোই মূল্যহীন। এই প্রবঞ্চিত মানুষটির জন্যে সেগুলো এখনও এতো বেশী জীবন্ত, ও তারঁ আত্মদৃষ্টির প্রখরতা এতো বেশী বলশালী যে, আমার নিজের কাছেও এগুলো একসময় প্রায় সত্য বলেই মনে হতে লাগলো। শুধুমাত্র একবার তার এই বিশ্বাসের উন্মাদনা আর লোমহর্ষক আনন্দ চুরমার হবার উপক্রম হয়েছিল। রেমব্রান্টের ‘আন্টিওপ’ (একটি পরীক্ষামূলক ছাপ, বাজারে যার মূল্য এখন অস্বাভাবিক চড়া) দেখাতে গিয়ে এর ছাপের স্পষ্টতা নিয়ে প্রশংসায় বিমুগ্ধ ছিলেন তিনি। প্রশংসার সাথে সাথে তার উত্তেজিত, কিন্তু নির্ভুল আঙ্গুলও প্রগাঢ় ভালোবাসায় সেই ছাপ বেয়ে বেয়ে চলছিল এদিক সেদিক। একসময় সে আঙ্গুল ছবির ফ্রেমের বাইরে এক সাদা কাগজে গিয়ে পড়লো, যেখানে দাগের গভীরতা অনুপস্থিত। এক কালো ছায়া এসে ভর করলো তাঁর কপালে, গলার স্বরেও অনিশ্চয়তা।
- এটা তো, .... এটা কি রেমব্রান্টের আন্টিওপ?

বলে বিড় বিড় করলেন তিনি, কিছুটা লজ্জায় পড়েই। সাথে সাথে হস্তক্ষেপ করলাম আমি। ফ্রেমে বাঁধানো কাগজটি তাঁর হাত থেকে নিয়ে প্রতিটি সম্ভাব্য খুটিনাটি উল্লসিত বর্নণা শুরু করলাম। লজ্জিত অন্ধ বৃদ্ধের চেহারা, রঙ আবার শান্ত হলো। যতো বেশী প্রশংসা করলাম আমি, তত বেশী এক অনাবিল আন্তরিকতায় ও রৌদ্রোজ্জল আত্মগর্বে ভরে উঠলেন বয়েসের ভারে ন্যূজ, শীর্ণকায় এই বৃদ্ধ। বিজয়ের উল্লাসে স্ত্রী ও মেয়ের দিকে ফিরে বললেন,

- এতদিন পর একজন সত্যিকারের বোদ্ধা খুঁজে পেলাম! তোমরা, তোমরাও তাঁর কাছ থেকে শুনে রাখ, এই কাগজগুলো কতো অমূল্য! সমস্ত টাকাপয়সা যখন আমার এই সংগ্রহের পেছনে ঢালতাম, আমার প্রতি তোমাদের বিশ্বাসই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সত্যি কথা, গত ষাট বছরে কোন বিয়ার নয়, ওয়াইন নয়, সিগারেট নয়, বই, সিনেমা, থিয়েটার বা কোথাও বেড়াতে যাওয়াও নয়, সব জমিয়েছি এই সংগ্রহের পেছেনই। এখন তোমরা দেখছ তার ফলাফল। আমি যখন আর থাকব না, তোমরা তখন ধনী, এই শহরের সবচেয়ে বড় ধনী, ড্রেসেডেনের সবেচেয়ে বড় ধনীদের সমকক্ষ। তখন তোমরা আমার এই বোকামীর জন্যে আনন্দিত হবে। কিন্তু আমি যতক্ষন বেঁচে আছি, একটি কাগজও বাড়ীর বাইরে যেতে পারবে না। আগে আমার লাশ বাড়ী থেকে বের করবে, তারপর আমার সংগ্রহ।

এই কথা বলতে বলতে পরম আদরে হাত বোলালেন তাঁর খালি এলবামগুলোর গায়ে। পুরো বিষয়টা আমার কাছে একাধারে ভীতিপ্রদ ও অন্যদিকে স্পর্শকাতরও বটে। গত কয়েকটি যুদ্ধের বছরে এতোটা পরিপূর্ন , এতোটা পরম আত্মতৃপ্তির ছাপ কোন জার্মান চেহারায় দেখিনি। তার পাশে দাঁড়ানো দুই মহিলা, যেন এক জার্মান শিল্পসম্রাটএর দুই রহস্যময়ী চরিত্র, যারা যীশুর কবরে শেষ সন্মান জানাতে হাজির হয়েছেন। ভাঙ্গা, খালি কবরের সামনে একাধারে লোমহর্ষক ভীতি ও বিস্ময় অন্যধারে যীশুর প্রতি বিশ্বাসের চুড়ান্ত উচ্চতায় দাঁড়িয়ে। সেখানে যীশুর ঐশ্বরিক ক্ষমতার সামনে বালিকাদের যে চিত্র, এই বুড়িয়ে, দুমড়ে যাওয়া, হাড়হাভাতে নিম্নবিত্ত চেহারায় একই শিশুসুলভ আনন্দ, আধো হাসি, আধো কান্নায় মেশানো একই দৃশ্য, যা এতটা শিহরণে কখনো দেখিনি। কিন্তু আমার প্রশংসায় তখনো এই বৃদ্ধ যথেষ্ট পরিতৃপ্ত নন। প্রতিবারই এলবামগুলো উল্টে পাল্টে দেখাচ্ছিলেন আমার আরো প্রশংসার তৃষ্ণায়। যখন খালি এলবামগুলো বন্ধ করে পাশে সরানো হলো ও কফির জন্যে তাঁর অনিচ্ছা সত্তেও টেবিল খালি করা হলো, তখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। কিন্তু আমার এই অপরাধবোধের গ্লানি মেশানো মুক্তির শ্বাস ভদ্রলোকের বাধভাঙ্গা আনন্দ ও অদম্য উচ্ছাসের কাছাকাছি একেবারেই ম্লান! হঠাৎই যেন তিরিশ বছর বয়স কমে গিয়েছে তাঁর! এই সংগ্রহের পেছনে হাজারো যতো ঘটনা, যতো খোঁজাখুঁজি, যতো চাতুর্য ছিল, একটার পর একটি বলে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে কারো সাহায্য ছাড়াই উঠে এলবাম খুলে কাগজ বের করে আনছেন। একসময় আমি যখন বিদায় নিতে চাইলাম, চমকে উঠলেন তিনি। অবাধ্য শিশুর মতো মাটিতে পা ঠুকে ঠুকে বার বার বললেন, অর্ধেক দেখাই শেষ হয়নি আমার, এখনই কেন বিদায়! মহিলাদের উপরই কঠিন দ্বায়িত্ব পড়লো, তাঁকে এই বলে বোঝানো যে, আমাকে আটকে রাখলে ট্রেন ধরতে পারবো না।

একসময় যখন তার হতাশা মেশানো বাধা ব্যর্থতায় পর্যবসিত ও বিদায়ের সময় হলো, তখন খুব নরম হয়ে গেলো তাঁর কন্ঠস্বর। আমার দুই হাত টেনে নিলেন নিজের হাতে, একজন অন্ধের অনুভবশক্তির বলে হাত থেকে শুরু কব্জির জোড়াগুলোতে এত আদরে স্পর্শ করলেন যেন, মনে হলো ওনি আমাকে আরো বেশী কথা, আরো বেশী ভালোবাসা জানাতে চাইছেন, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না।

- আপনি যে আমাকে দেখতে এসেছেন, আমার জন্যে বিরাট, অভাবনীয় আনন্দ।
তাঁর কথাগুলো এমনভাবে ছুঁয়ে গেল আমাকে, যা কোনদিনই ভুলতে পারব না।

- অবশেষে একজন সত্যিকারের জ্ঞানীকে সব দেখাতে পারা আমার জন্যে অপার এক আনন্দ। কিন্তু মনে রাখবেন, এই অন্ধ বৃদ্ধের কাছে আসা আপনার একেবারেই বিফলে যায়নি। আমার স্ত্রীকে সামনে রেখে আপনার কাছে এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার উইলে আপনার ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানকেই এসব সংগ্রহ নীলামে বিক্রি করার অধিকার দিয়ে যাব। এই অপরিচিত অমূল্য সম্পদকে দেখাশোনা পৃথিবীতে পরিচিত করানোর বিরল সন্মানের অধিকারী আপনিই হবেন।

বলেই এলবামগুলোর গায়ে মমতায় হাত বোলালেন তিনি।

- কথা দিন আমাকে, একটি সুন্দর ক্যটালগ তৈরী করবেন। এই ক্যটালগই হবে আমার কবরের নামফলক, এর চেয়ে ভাল কোন চাওয়াই আমার নেই।

আমি তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। একজন আরেকজনের কাছে ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে। মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছিলেন ওদের একজন। সে কাঁপুনির সঞ্চার হলো আরেকজনের শরীরেও। তাতে মনে হচ্ছিল দু’জনের একই শরীর। একজন তার সমস্ত সম্পদ দেখাশোনার দ্বায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন। যদিও সে সম্পদের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, শুধুমাত্র অদৃশ্য এক সংগ্রহ, তারপরও তার বিশ্বাস ও ভালোবাসা আমাকে এক অপরিসীম তৃপ্তি দিলো। মিথ্যে জেনেও আবেগে আপ্লুত হয়ে কথা দিলাম তাকে। আবারো এক আলো তাঁর মৃত চোখের তারায় খেলা করে গেলো ও আমাকে অনুভব করার জন্যে তাঁর ভেতর থেকে উঁপচে পড়া আকুলতা তাঁর হাতের আদরে টের পেলাম। সে স্পর্শে ছিল কৃতজ্ঞতা আর আশীর্বাদ।

মহিলারা আমাকে দরজা অবধি এগিয়ে দিলেন। ভদলোকের প্রথর শ্রবনশক্তির কথা ভেবে কোন কথা বলার সাহস ওরা পেলেন না। কিন্তু চোখের জলে ভেসে কৃতজ্ঞতাভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। অবশের মতো সিড়ি বেয়ে নীচে নামলাম। আসলে লজ্জা হচ্ছিল আমার। নিজেকে মনে হলো রূপকথার কোন এক ফেরেশতার মতো, কোন এক দরিদ্র অন্ধের ঘরে ঢুকে এক ঘন্টার জন্যে চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছে কোন এক প্রক্রিয়ায়, যে প্রক্রিয়ায় তাকে সারাক্ষনই অবলীলায় মিথ্যে বলে যেতে হয়েছে। আসলে আমি এসেছিলাম কিছু মুল্যবান সংগ্রহ অল্পমূল্যে হাতিয়ে উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন যা নিয়ে গেলাম, তা তারচেয়েও দামী। এই ভোতা, নিরানন্দ সময়ে এক নি:কলঙ্ক আনন্দ নিজে উপস্থিত থেকে অনুভব করার সুযোগ পেলাম। এটা এক ধরণের আত্মিক আলো, শিল্পকে ঘিরে এক ধরনের অপার্থিব আবেগ, যা এখনকার মানুষ ভুলেই গিয়েছে প্রায়। তারপরও কেন নিজেকে লজ্জায় অবনত মনে হচ্ছিল আমার, তার কোন উত্তর জানা ছিলনা আমার।

রাস্তায় এসে পড়তেই সশব্দে দোতালার জানালা খোলার আওয়াজ শুনে ফিরে তাকালাম। ভদ্রলোক তাঁর অন্ধ চোখে আমি যে দিকে যেতে পারি, সেদিকে ফিরে একটি রুমাল নাড়িয়ে আমার নাম ধরে ডাকছেন। দেহটি এমনভাবে বাইরে ঝুঁকিয়ে দিয়েছেন যে, বিপদ এড়ানোর জন্যে দুই মহিলা দু’দিক তাঁকে থেকে রেখেছেন।

- আপনার ভ্রমণ শুভ হোক!

একজন বালকের মতো উল্লসিত, সজীব তার গলার আওয়াজ। এ দৃশ্য ভোলার মতো নয়: জানালায় এক পাকা চুল বৃদ্ধের উচ্ছসিত চেহারা, রাস্তার সব মুখগোমড়া, ম্রিয়মান, ব্যতিব্যস্ত মানুষের উপরে। তার উপরে আমাদের বাস্তব, নোংরা পৃথিবীকে ছাড়িয়ে একগুচ্ছ নরম সাদা মেঘের সারল্য। তখনই অতি পুরোনো একটি কথা আমার মনে এলো। সম্ভবত: তা গ্যেটেই বলেছিলেন, ‘শিল্প সংগ্রাহকরা সত্যিই সুখী মানুষ’।


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

অনুবাদটি কি খুব বড় হয়ে গেল? আলাদা আলাদা পর্বে দিলেই কি ভাল হতো?
সামহোয়ারে দিয়েছিলাম বলে অনেকেই হয়তো আগেই পড়েছেন।

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিকই আছে। ছোট গল্প একটানে পড়তেই ভালো লাগে।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ইনিই কি সেই Zweig? বউ সমেত সুইসাইড করছিলো দুঃখের চোটে?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

তীরন্দাজ এর ছবি

হ্যা, ইনিই সেই লোক সুবিনয় মুস্তফি।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

??? এর ছবি

হৃদয়গ্রাহী গল্প। কিছু টাইপো আছে, আর অনুবাদের ভাষায় অল্প কিছু জড়তা রয়ে গেছে। রিভাইজ করলেই সেগুলো দূর হয়ে যাবে (যেচে পড়ে এসব বললাম, আশা করি কিছু মনে করেন নি)। সুন্দর একটি গল্প অনুবাদ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আগের বার পড়েছিলাম । তখনই গেঁথে গিয়েছিলো ।
আবার পড়লাম স্বাচ্ছন্দ্যে ।
ধন্যবাদ তীরুদা ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

তীরন্দাজ এর ছবি

গল্পটি আগে বাংলায় অনুদিত হয়েছিল কি না, তা বলতে পারবো না। তবে নিজে কখনো পড়িনি ইমরুল হাসান।

একেবারেই কিছু মনে করিনি সুমন রহমান। এ ধরণের সমালোচনাই কাম্য। কিন্তু প্রবাসে একেবারেই একা পড়ে গিয়েছি। ভুলগুলো অন্য কারো চোখে সহজে ধরা পড়তো। সেরকম কাউকে দরকার ছিল খুব। নিজে কয়েকবার রিভাইজ করেছি, তারপরও রয়ে গিয়েছে। আপনারা কেউ কি সাহায্য করতে প্রস্তুত?

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ!

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাইফ তাহসিন এর ছবি

সরাসরি অনুবাদ পড়লাম, দূর্দান্ত লাগল তীরুদা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।