বিপরীত বসন্তে

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০২/২০০৯ - ৭:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাইরে নতুন পলেস্তারা লাগানো সাদা বাড়ীটির দিকে সবার চোখ পড়ে সহজে। সরকারী পার্কের কাঁকর বিছানো পথ মাড়িয়ে সোজা শহরে আসার পথে এই বাড়ীটিই সবার আগে দাঁড়িয়ে। বেশ সুন্দর নিকোনো, নিপূন একটি ছবি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। বাইরে ধবধবে সাদা রঙ প্রতিদিনের মতোই তাজা আর উজ্জল। সুন্দর এই দিনটি। শীতের সকালের ঝকঝকে রোদ ঘন নীল আকাশ থেকে নেমে এসে চুমু খায় শরীরে।বাড়ীটির সাদা আকাশের রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে কোন এক চিত্রকরের আঁকা ছবি হয়ে নেচে ওঠে সামনে। ঘন নীল রঙএর জানালাগুলো। সবকটিই খোলা, যেনো জীবনের অপরি্রিত, অনাঘ্র দরজাগুলোও খুলে দিয়েছে কেউ। তারপরও এই নিসর্গ আলোর মাঝে পুরো বাড়ীটির অবস্থানে এমনি একটি নির্লিপ্ত ভাষা, যা কিছুটা অনাগত ভয় ধরিয়ে দেয় বুকে।

আমরা দু’জনে হাত ধরে হেঁটে হেঁটে সেই বাড়ীটির পাশ ঘেষে এগিয়ে গেলাম। আমার হাতের মাঝে ওর হাত ঘেমে যাওয়াতেই কিছুটা ভিজে ভিজে মনে হলো। ওর বুকের ভেতরের স্পন্দন দুজনের হাত বেয়ে আমাকেও ভীত আর স্পন্দিত করলো। ওর চোখে কি জল? জানিনা, এমনকি জানারও সাহস হলোনা আমার।

- আজই আমাদের শেষ দেখা, তাইনা?
- তাই।
- আমার উপর রাগ করোনা কিন্তু!
- রাগ করবো কেন? আমরা দু’জনেই তো এই চেয়েছিলাম।
- ঠিক বলেছ তুমি।
- তোমার রাগ হচ্ছে?
- না! একেবারেই না!

বাড়ীটা পেরিয়েই একটি রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালাম দু’জন। অনেকগুলো পথ এসে মিলেছে একসাথে। পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলাম একবার। তারপরর দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে পেছনে সরে যেতে লাগলাম। আমাদের দূরত্ব ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকলো। কিন্তু আমাদের হাসি কোন এক নির্লিপ্ত ঘোড়সওয়ার হয়ে আমাদের সামনে স্থির হয়ে রইলো।

রঙ্গিন ফ্রক পরা একটি কিশোরী ভারী বইখাতা হাতে স্কুলের পথে। সেও আমাদের দেখে থমকে দাঁড়ালো একবার। তারপর আমাদেরই চোখে চোখ রেখে হাসিমুখে ধীরে ধীরে পেছনে হাঁটা শুরু করলো। বাজার ফেরৎ এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক আমাদের দেখে থমকে দাড়ালেন হঠাৎ। তারপর আমাদেরই মতো হেসে হেসে এক পা এক পা করে পেছন দিকে পিছিয়ে যেতে শুরু করলেন। রাস্তার ট্রাফিক পুলিশ তার কর্তব্য ভুলে গিয়ে খুব সুন্দর করে হাসলেন একবার। পরক্ষনেই আমাদের চোখে চোখ রেখে পেছন দিকে হাঁটা শুরু করলেন। রাস্তায় যে যানবাহনের ভীড় জমে গেল, সেদিকে নজরই করলেন না।

এমনি করে অনেক অনেক সময় বেয়ে পেছন ফিরে হেঁটে চললাম আমরা অনেকে। আমাদের দৃষ্টি একে অন্যের উপর নিবদ্ধ করে রাখলেও আমাদের ব্যবধান বেড়েই চলেলো প্রতিটি সময়ে বৃত্তবদ্ধ রেখাচিত্রে। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত মিলে মিশে ছবি আঁকে ক্যনভাসে। সেখাসে সেই সাদা বাড়ীটি, একই জায়গায়, একই ভালোবাসা আর নির্লিপ্ততার অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে।


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুন চলুক

গল্পের নামটাও খুব সুন্দর হয়েছে।

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ঝরাপাতা এর ছবি

বাহ বেশ . . .


নিজের ফুলদানীতে যারা পৃথিবীর সব ফুলকে আঁটাতে চায় তারা মুদি; কবি নয়। কবির কাজ ফুল ফুটিয়ে যাওয়া তার চলার পথে পথে। সে ফুল কাকে গন্ধ দিলো, কার খোঁপায় বা ফুলদানীতে উঠলো তা দেখা তার কাজ নয়।
___________________________ [বুদ্ধদেব গুহ]


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ফারুক হাসান এর ছবি

দারুণ চিত্রকল্প আর তার বর্ণনা! মুগ্ধতা

তীরন্দাজ এর ছবি

হঠাত করেই এসে গেল লেখাটি, জানিনা কেনো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ফারুক হাসান এর ছবি

হঠাত করে আসা গল্পটাকে কাগজবন্দী করতে পারায় আপনাকে অভিনন্দন। অনেক সময়ই আলসেমিতে তা করা হয়ে উঠে না।
-----------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী,
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

তানবীরা এর ছবি

তীরুদা, গল্প সুন্দর। এবার একটা মিল মহব্বতের গলপ হোক তাহলে।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

দৃশা এর ছবি

একমত।
--------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।