দেউল্লা, কাদেরের তিনটি অণুগল্প!

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বুধ, ০৬/০৩/২০১৩ - ৮:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১) দেউল্লা রাজাকার ও এক জল্লাদ
ঢাকা শহরের গরমের সময়ের এক কর্মব্যস্ত সকাল। প্রজন্ম চত্তরের আন্দোলন আর জাগরণের ধাওয়া খেতে খেতে জামাতের তান্ডবও কিছুটা স্তিমিত। এমনি এক দিনে দেউল্লা রাজাকারের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফঁসিখানায়। নভোচারীর পোষাক পরিয়ে তার শেষ ইচ্ছেটিও পুরণ করা হয়েছে। তার সাথে একই গাড়িতে বসে জল্লাদ। নভোচারীর পোষাক পরে দেউল্লা রাজাকারের চেহারা কিছুটা উজ্জল হলেও বিরক্তিতে কুঁচকে আছে জল্লাদের চেহারা। বাড়িতে বউবাচ্চা ফেলে এতো দুরে যেতে কার মন চায়! এমনি এক যানজটের শহরে জেলখানা থেকে ফাঁসিখানা কেনো একটা দূরে করা হল, তার কথা পরিকল্পনাকারীরাই বলতে পারেন!

জানজটের মাঝে চুপচাপ বসে থেকে একঘেয়ে লাগে জল্লাদের। আর অন্যদিকে তসবীহ গুনে আল্লাহকে ডেকে চলেছে দেউল্লা। একটু পরপরই মাথাটি গাড়ির ছোট্ট জানলা দিয়ে বের করে দেখে, তাকে ছাড়িয়ে নেবার মিছিলটি বের করা হলো কি না। যানজটে গাড়িটি না এগুলেও মিছিলের কোনো চিহ্নই দেখা গেল না। একটি দাঁড়কাক উড়ে এনে তার মাথায় একগাদা বিষ্টা ত্যাগ করলেও টের পেলনা দেউল্লা। ঠিক সেই মূহুর্তে জল্লাদ বলে,
- আপনের কপাল ভালা দেউল্লা ভাই।
জল্লাদের কথা শুনে চমকে ওঠে দেউল্লা। কিন্তু বুঝতে পারেনা কিছুই। তাই জিজ্ঞেস করে,
- কী, কী কইলেন?
- আপনের কপালডা ভালা দেউল্লা ভাই।
- কেন?
- আপনের ত আর বাড়িত ফেরন লাগব না। এই ঢাকা শহরের যানজট ঠেইল্লা বাড়িত ফিরনের থাইক্কা ফঁসিতে মরণও অনেক ভালা।

২) মিষ্টার জামাত আর মিসেস বিএনপির সংসার
মিষ্টার জামাত আর মিসেস বিএনপির বিয়েটা বেশ ঘটা করেই সম্পন্ন হলো। এমন কি বিগত প্রগতিশীল সরকারের কিছু নেতাও দলনেত্রীকে ফাঁকি দিয়েই যোগ দিয়েছিলেন বিয়ের ভোজসভায়।

কিন্তু কদিন পরই ফোন করে মিসেস বিএনপি তার দেশ মাতাকে। তার গলার আওয়াজ শুনেই কোনো এক গোলমালের আভাস টের পান দেশমাতা। উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করেন,

- কী রে! কী হয়েছে?
- আমাদের ঝগড়া শুরু হয়েছে।
- বিয়ের পর এক আধটু এমনই হয়। তাতে চিন্তার কী?
- সেটা আমার জানা আছে মা। এটা তো প্রথমবারের বিয়ে নয়! কিন্তু লাশটা নিয়ে কী করবো, সে পরামর্শ চাইছি।

৩) কাদের ও মোল্লাবউ
জেলখানার বাগানে কাজ করতে মই থেকে পড়ে চোয়াল ভাঙ্গে কাদের মোল্লার। তার মতো রাজাকারকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে জোলখানার কোনো কর্মচারিই রাজি হয়না। অবশেষে সেখানে নিয়ে যাবার জন্যে তার বউকে অনুমতি দেয়া হয়।

জেলখানার গাড়িতে আরো কিছু কয়েদী বসে। হাসপাতালের পথে তাদেরকে স্থানান্তর করা হবে অন্য জেলখানায়। একটি মাত্র খালি আসনে কাদের মোল্লাকে বসায় তার বউ। নিজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।

একটি যানজটে থামল গাড়িটি। হ্যাঁচকা টানে আবার চলতেই খুলে যায় দরজাটি। কাদের মোল্লার বউ ছিটকে পড়ে গাড়ির বাইরে। অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে কাদের। বউকে বাঁচানোর কোনো তাগিদই নেই তার।

তার কাণ্ড দেখে দেখে হতবাক হয়ে চীৎকার করে উঠে এক কয়েদী। বলে,
- তোর বউ পইরা গেল, আর তুই কিছু করলি না রাজাকার হারামজাদা।
কোনোক্রমে মুখটি একটু খুলে উত্তর দেয় কাদের,
- আমারে কী কও! তোমার চাপা এমন কইরা ভাঙ্গলে তুমি নিজেও হাসতে পারতা না।

-------------------------------------
(চেনা জানা কিছু গপ্পের রূপান্তরণ)


মন্তব্য

lopamudra এর ছবি

দারুন!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লিখেছেন জনাব তীরন্দাজ !

এই শুভ প্রয়াস চলতে থাকুক, স্বদেশের সুস্থতার স্বার্থে ।

বিজন কথক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।