"প্রত্যাখ্যাতা প্রতিশ্রুতা": রাশিদা সুলতানার গল্প

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: বুধ, ০৩/১০/২০০৭ - ১২:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাশিদা সুলতানা সমসাময়িকদের মধ্যে আমার বিশেষ পছন্দের লেখক। তার গল্প প্রথম পড়ার পর আমি অনেকদিন বুঁদ হয়ে ছিলাম তার গল্পের চরিত্রদের নিজস্ব বিপন্নতার মধ্যে। অসাধারণ সরলতায় আর সততায় তরতর করে লেখেন তিনি। বই বেরিয়েছে দুটো, "অপনা মাঁসে হরিণা বৈরী" এবং "আঁধি"। সচলের পাঠকদের তার গল্পের স্বাদ নিতে স্বাগত জানাই।.....



প্রত্যাখ্যাতা প্রতিশ্রুতা
রাশিদা সুলতানা



রাতেই প্ল্যান করলাম তোমার সাথে দেখা করব। তোমাকে জানানোর কোনো সুযোগই পাইনি। অন্যদের কাছে জানতে পেরেছি তোমার জ্বর। শরীর খুব বেশি খারাপ। রাত বাড়ছে আর আমার ভয় বাড়ছে। তোমার ওখানে যাব চিন্তা করতেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আনন্দও হয়, আবার আতঙ্কও হয় ভীষণ। ইদানীং তোমাকে যত ভালোবাসি, ভয়ও পাই ঠিক ততটাই। কখনো কখনো এমন ভয়ঙ্কর ধমক দাও যে দম বন্ধ হয়ে থাকে কিছুসময়। শুরুর দিকে কখনোই কোনোদিন আমাকে ধমকে দিতে না। শুধুই ভালোবাসতে। একটু পরপরই বলতে, "আমার ছোট্ট টুনটুনিটাকে কোথায় যে রাখি ?" কেঁপে কেঁপে উঠতাম আমি।

সকালবেলা বাসে চেপে বসলাম। একটার পর একটা গ্রাম পার হচ্ছি। পুকুর, ধানি জমি, আল বেয়ে যাওয়া গ্রামের ক্লান্ত চাষী। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ। মাঝেমাঝে হঠাত্ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তোমাকে না জানিয়ে যাচ্ছি। কী ধমকই না তুমি লাগাও। অবশ্য এমনও তো হতে পারত, তুমি ভারি খুশি হয়ে উঠলে আমাকে দেখে। বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললে, "আমার টুনটুনিটাকে কত দিন পর দেখলাম !"

কপালে যা-ই থাক, তোমার কাছে আমাকে যেতেই হবে। এই মুহূর্তেই। এ ই আমার নিয়তি। আমি নিজেকে থামাতে পারিনি কিছুতেই। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বোধ হয় এখন আমাকে আটকাতে পারবে না। পথে যেতে যেতে নিজের মৃত্যুও কামনা করছি বার বার। জানি, পরবর্তী অভিজ্ঞতা মৃত্যুর চেয়েও কুৎসিত হতে পারে। ধর্ষিত হওয়ার চেয়েও বেশি অপমানের হতে পারে। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, তোমার সাথে আমার দেখা হতেই হবে। হতেই হবে।

মনে হয় হাজার বছর তোমাকে দেখি না। চোখ বন্ধ করে তোমাকে ফোটাবার চেষ্টা করি মনে। অনচ্ছ কুয়াশায় দেখি তোমার চোখ, তোমার ঠোঁট, তোমার দাঁত, ছ-ফুট লম্বা তোমার অবয়ব কিন্তু পুরোটা তোমাকে একসাথে দেখতে পাই না। বা, ক্বচিত্ পেলেও, একটু পরেই ছবিটা কেমন ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়। দু-তিনদিন ধরে সারাক্ষণই মনে হচ্ছে এ জীবনে তোমার সাথে বুঝি আর দেখা হল না। বুকের মধ্যে এত হিম বয়ে বয়ে আমি বড্ড ক্লান্ত। তোমার দিকে যাওয়া ছাড়া তাই, গত্যন্তর নাই আমার।

বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। কচুরিপানাভর্তি একটা পুকুরের ঘাটলায় একটা মেয়েলোক কাপড় কাচছে। তার ব্লাউজ ছাড়া শরীরে শাড়িটা কোনোরকমে প্যাঁচানো। একপাশে একটা স্তন বেরিয়ে আছে। নিজেকে ওই অবস্থায় ভাবতেই কেমন আড়ষ্ট হয়ে যাই। ক্ষুধা, দারিদ্র্র্য, সংসারের ক্লান্তি মানুষকে লজ্জা, আত্মসম্মানবোধ, এসবের ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়।
টেনশন হচ্ছে খুব। তোমাকে না জানিয়ে এভাবে আসাটাকে কেমনভাবে তুমি নেবে আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমি কী করব ? তুমি অসুস্থ শোনার পর থেকে সমস্ত পৃথিবীটাকে অসহ্য লাগছে। নিজেকে মনে মনে তৈরি করে নিই যেকোনো অসম্মান, অপমানের জন্য।

একসময় পৌঁছে যাই তীর্থে। দুপুরের রোদ্দুর চেটেপুটে খাচ্ছে তার আশেপাশের মানুষগুলিকে। ক্লিপ খুলে ঘাড়ের উপর ছড়িয়ে দিলাম চুল। রিকশায় বসে ছোট্ট আয়নাটা খুলে লিপস্টিক, ব্রাশঅন, সবকিছু ঠিকঠাক করলাম। বোধশক্তির ঊর্ধ্বে মনে হচ্ছে নিজেকে এখন। শীতের আকাশে মেঘ জমেছে। শীত-কুয়াশা ভেদ করে তোমাকে দেখছি। চোখ বন্ধ করে দেখতে পাচ্ছি তোমার খরগোশ দাঁত, কিন্তু ছুঁতে পারছি না তোমাকে। রিকশায় উড়ে যাচ্ছি, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হঠাত্ হঠাত্।

তোমার বাসার খুব কাছে চলে এসেছি। সারিসারি গাছের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে দূরে দাঁড়িয়ে আছে তোমার দারোয়ান। পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে আছে। প্রতিটা গাছ, প্রতিটি পাতা, তোমার বাড়ির সামনের লেকের জল -- সব - - স্থির হয়ে আছে। আর কয়েক মুহূর্ত পরেই অ্যাডাম আর ঈভের দেখা হবে। আলোর বন্যায় পুরোটা পৃথিবী ভেসে যাবে !

তোমার বাসার সামনে দু-তিনজন লোক দাঁড়ানো। তোমার কাজের ছেলেটা আমাকে দেখে সামনে এগিয়ে এল। অস্থিরভাবে জানতে চাইলাম - "কেমন আছে তোমার স্যার ?" সে জানাল, আগের চেয়ে বেশ ভালো, আজ অফিসে গেছে। ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম বাসায় অন্য কেউ নেই। তোমার জাদু বেডরুমটা আমাকে টানছে। দৌড়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে তোমার দোতলায় উঠে যাই। তোমার ঘরটার বাতাস তোমার নিঃশ্বাসসৌরভে পূর্ণ হয়ে আছে। এখানেই তো ছাদ ফুঁড়ে তুমি নেমে এসেছিলে . . . মহাকালে প্রবেশ করি। স্বপ্নঘোরলাগা একটি রাত। সারা রাত নক্ষত্রালোকে তোমার হাত ধরে নেচেছি, রবিশঙ্কর বাজছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। ঘোরাচ্ছন্ন আমি মাঝে মাঝে কেঁপে উঠেছি। বলেছি, "তোমাকে না দেখে আমি কেমন করে থাকব ? কেমন করে বাঁচব ?" তখন সমস্ত আকাশ আঁতিপাঁতি করে, তন্ন তন্ন করে সবচেয়ে সুন্দর নক্ষত্রটা এনে আমার ঠোঁট ছুঁইয়ে বলেছ, "দ্যাখো, এ ই অমৃত।" আমার ঠোঁট ছুঁয়ে, মুখের ভিতর দিয়ে হৃত্ পিণ্ডকে স্পর্শ করে, নক্ষত্রটি আমার পেটের ভিতরে চলে গেল। তুমি বললে, "এই নক্ষত্রটারও একদিন হৃত্ পিণ্ড হবে। আমৃত্যু তুমি তোমার পেটে হাত দিয়ে এর ধুকপুকানি শুনবে। আমার দেয়া অমৃত তোমার শরীরের অংশ হয়ে থাকবে। যতবার মা হবে তুমি, ততবার আমার নক্ষত্র মোড়ানো একটা করে শিশু কোলে আসবে তোমার।"
তোমার ঘরটা একটা সমুদ্র হয়ে উঠেছে। একবার ঢেউয়ের মাথায় করে ভুস করে উঠে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, আবার ডুবে যাচ্ছি জলের অতলে। এক্ষুনি ফোন করব তোমার অফিসে। তুমি হয়তো বলবে, "সোনামণি, টুনটুনি আমার ! কত দিন পরে তুই এলি ! একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি। তোকে আমি বুকে চেপে রাখব। নিঃশ্বাস নিতে দেব না।"

তোমার ফোন বাজছে। বুকটা ধক্ধক্ করছে। এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, অযুত সেকেন্ড। তারপর তোমার কণ্ঠ, "কী খবর, কেমন আছ ?" বললাম, "আমি তোমার বেডরুমে, শিগগির বাসায় চলে এসো।"

এবং সহসা পৃথিবী আঁধার হয়ে যায়, ইস্রাফিলের বাঁশিতে পড়ে ফুঁ - "ইউ শুড নট হ্যাভ কাম। আমার বাসায় অনেকজন আত্মীয়স্বজন আছে। বাসা থেকে বেরিয়ে বাসে চড়ে সোজা ঢাকা চলে যাও।" পৃথিবীর সব রঙ একে একে নিভে নিভে যায়। আকাশ, নক্ষত্র, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়, ভূমিকম্প - সমস্ত কিছু হামলে পড়েছে আমার উপর। আমি ভেঙে টুকরো টুকরো হতে হতে তোমার সমুদ্রবিছানায় আছড়ে পড়ি, আমার স্বর্ণস্বর্গ নিমেষে হাবিয়া হয়ে যায়। আমি চিত্কারে ফেটে চৌচির। নবপ্রসূতির মতো।

কিন্তু কেমন করে ভাঙব আমি এই অশুভ চক্র ?

ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আবার ফোন করি। বলি - "তোকে তো আমি এক পলক দেখবই। মৃত্যু ছাড়া আরকিছুই আমাকে আটকাতে পারবে না।"

"অফিসে এসো"।

কিন্তু একজন স্বর্গভ্রষ্টা মানবী, একজন প্রত্যাখ্যাতা প্রতিশ্রুতা আমি, আমার এই মৃত, শটিত শরীরটাকে টেনে তোমার অফিস পর্যন্ত নিয়ে যাই কেমন করে ?

তোমার অফিসরুমে ঢুকলাম। ঝিলের মতো ঝিলিমিলি এক ঘরে ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশার মতো তুমি কাজ করছ। আমাকে দেখে চিত্কার করে উঠলে।

"তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? তোমার কি মানসম্মানের ভয়ও নেই?"
মাথা নিচু করে ভাবছি, ঈভের সব রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেলে অ্যাডামের সম্মানবোধ একটু বেড়েই যায় বোধ হয়। তোমার সামনে এখন অসংখ্য লোকজন। কেউ ফাইল সই করাচ্ছে, কেউ এসেছে নানা তদবির নিয়ে। ইচ্ছে হচ্ছে চেঁচিয়ে কাঁদি। একটা একটা করে আমার শরীরের কোষগুলো মরে যাচ্ছে। আমি আমার মৃত্যু হচ্ছে, টের পাচ্ছি।

তুমি তোমার চারপাশের লোকদের বিদায় করে দিলে। বললে - "ভীষণ অসুস্থতায় কাটিয়েছি ক-টা দিন, চার দিন পর আজ অফিসে এসেছি, শরীরটা এখনও কাঁপছে। আমাকে না জানিয়ে কেন এলে?"

আমি চুপচাপ তোমার মুখে তাকিয়ে আছি। ভারি শীত করছে। হিমেল কুয়াশার মধ্যে দেখতে পেলাম জ্বরে তোমার ঠোঁটদুটো টকটকে লাল। কুয়াশায় হারিয়ে যাচ্ছে তোমার মুখটা। এই ঘরে এত হিম কেন? তুমি এত রোগা হয়ে গেলে কেন?
মৃত্যুর ওপার থেকে বললে, "এতগুলো লোকের সামনে কাঁদছ। আমাকে ছোট করছ। নিজেকে ছোট করছ।" তারপর করুণা মিশেল কন্ঠে জানতে চাইলে - "গাড়িতে পৌছে দেব তোমাকে?" পুরো শরীরের, মনের, শক্তি এক করে বললাম - "না !"

মাথার উপর আবার কড়্কড়্ বাজ পড়ল। পুড়ে কাঠকয়লা আমি :
"তোমার আচরণ দিন দিন অস্বাভাবিক হচ্ছে মনে হচ্ছে। আমাকে ভালোবাসবে, আবার অস্বাভাবিক আচরণ করবে কেন? ভালোবাসবে, কিন্তু এমন ভালোবাসবে কেন, যা তোমাকে অসুস্থ করে ফেলবে? তুমি জানো, বাবা, চাচা, ভাই, ঘরভর্তি থিকথিক করছে আত্মীয়স্বজন। ভাগ্যিস ওরা আজ মেঘনা ব্রিজে বেড়াতে গেছে। আমাকে না জানিয়ে আমার বেডরুমেই বা ঢুকেছ কোন্ সাহসে? আমাকে তুমি ডোবাবে? আর, নিজেকে কতটা ছোট করছ, বোঝো?"

আমি নিথর পাথর। দূর আকাশে বিশীর্ণ হল অনেক বাগান। শুধু মনে মনে বলছি, "আমি কী করব বলো? প্রতিটি জোছনায়, প্রতিটি আনন্দে, প্রতিটি বৃষ্টিতে তোমার চোখ, তোমার ঠোঁট, তোমার দাঁত, তোমার নিশ্বাস, তোমার বেডরুম, তোমার পানি খাওয়ার মগ, বেডসাইড টেবিল ল্যাম্প্, মানিপ্ল্যান্টের লতা, তোমার বারান্দায় ঝোলানো সব অর্কিড, তোমার লনের ঘাস - সবকিছু আমাকে নিরন্তর ডাকে। বুদ্ধি বিবেচনা ব্যক্তিত্ব সম্মানবোধ - সব লোপ পেয়ে যায়। মনে হয় মৃত্যু ছাড়া আর কোনোকিছু তোমার দিকে আমার যাওয়াকে রোধ করতে পারবে না। তোমার ঘর থেকে উঠে যাওয়ার একফোঁটা শক্তি বাকি নেই আমার শরীরে। শীত-কুয়াশা ফুঁড়ে তোমার জ্বরে পোড়া টকটকে লাল ঠোঁটদুটো শুধু দেখছি।

একসময়, তবু, নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াই। দরজা খোলার আগমুহূর্তে পেছন ফিরে তোমাকে দেখি। তুমি হাত নাড়ালে।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পড়লাম। কি পড়লাম একটু ভাইবা নেই। চিন্তিত

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

গল্পটায় ন্যারেশন আর ডেস্ক্রিপশনের একটা যথাযোগ্য ভারসাম্য আছে। গল্প পড়ার পর মনে হয় কি যেন বাকি থেকে গেল। আরো বেশী ঘটনার অনুপস্থিতি এবং কাব্যময় বর্ণনা মাঝে মাঝে গল্পটাকে কবিতা হিসেবে ভ্রম জাগায়। চমৎকার লেগেছে। গল্পটা সামনে আনার জন্য সুমন ভাইকে ধন্যবাদ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার লাগল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রথম আলোয় ওঁর দুর্দান্ত একটা গল্প পড়েছিলাম ।
এক আধুনিক দম্পতি,দু জনেরই এক্সট্রা মেরিটাল এফেয়ার । দু জনই জানে আবার দুজনই গোপন রাখে । এ রকম একটা টানাপোড়েন ।
রাশিদা সুলতানা কে শুভেচ্ছা ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারও রাশিদা সুলতানা ইদানিং কালের পছন্দের লেখকদের মধ্যে একজন। সুমন রহমানকে ধন্যবাদ! প্রথম আলোর গল্পটা পড়ে সাগর পাবলিশা্রসএ গিয়ে দেখলাম এঁর লেখা কোনো বই রাখা তো নাই ই বলার পরেও যোগার কোরেও দিতে পারলো না।

স্নিগ্ধা

শ্যাজা এর ছবি

রাশিদা সুলতানার লেখা পড়ি সৃষ্টিতে। পড়ি আর মোহিত হই। রাশিদা সৃষ্টির নিয়মিত লেখকদের একজন। শেষ তাঁর যে গল্পটি (গল্পের নামটা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না) পড়ি সেটি এক জোড়া নর-নারীর সম্পর্ক নিয়ে একটা গল্প। তারা স্বামী-স্ত্রী। তাদের পরকীয়া, তাদের দৈনন্দিন দিনযাপন, তাদের সন্তান। দুজনেই জানে ও মেনে নিয়েছে যে তার সঙ্গী/সঙ্গীনী বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে লিপ্ত।

গল্পটি পড়ে আমি কয়েকদিনের জন্যে ঐ গল্পের ভেতরেই ঢুকে গিয়েছিলাম যেন। রাশিদাকে চিঠি লিখি, তিনি উত্তরও দেন। এই গল্পটি সম্পর্কে বলেন, এটি আপনার ভালো লেগেছে? বাংলাদেশে আমারে লোকজনে রাস্তা-ঘাটে গাইল দেয় এইরকম গল্প লেখার জন্যে!

আমি অবাক হই না রাশিদার চিঠি পড়ে। স্বাভাবিক। খুব স্বাভাবিক। শরীরের ঘা কে আর খুলে দেখাতে চায়।

ধন্যবাদ সুমন।
রাশিদার লেখা তুলে দেওয়ার জন্যে।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লিংক দিতে পারেন?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রাশিদা সুলতানা আগে পড়া ছিলোনা... পড়লাম... ভালো লাগলো...
আরো তো পড়তে হয়...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এ ধরনের লেখা পড়ে আর অনেকের মত আমি ততোটা মুগ্ধ হতে পারি না। নিজের বোধ-বুদ্ধির প্রতি একধরনের বিরক্তিও জন্মায়- অন্যরা যে সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছে আমি তা দেখতে পাচ্ছি না।
আমার কেবল মনে হয়, এখানে শব্দের মারপ্যাঁচ আছে, বর্ণনার ঘনঘটা আছে, মনের ভাবকে প্রকাশ করে দেখানোর নানারকম চেষ্টা আছে, কিন্তু যা থাকার কথা ছিল- সেই গল্পই নেই।

গল্পে যে গল্পটাই আসল, একথা বোধহয় বাংলার নবীন গল্পলেখকেরা মানেন না।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

??? এর ছবি

কিন্তু শোমচৌ, এখানে গল্পহীনতা দেখলেন কোথায়? পুরাদস্তুর গল্প আছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমার তো মনে হয় অদিতি ফাল্গুনী বা অপরাপর লেখকদের গল্পের ক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য বেশি লাগসই হতে পারত। রাশিদা তো বেসিক্যালি কাহিনী বর্ণনাই করেন।

..............................................................
[i}শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী![/i}

হাসান মোরশেদ এর ছবি

গল্প বলার চেয়ে গল্পহীনতা চিহ্নিত করা বোধকরি আরো বেশী দুঃসাহস,যেহেতু নিঃশ্বাস নেয়াটা ও একধরনের ধারাবাহিক গল্পবিশেষ ।
শোমচৌ সাহসী নিঃসন্দেহে চোখ টিপি
----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।