শ্বাসরোধী সেক্যুলার কথা

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/১২/২০০৭ - ২:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদীদের চলমান সশস্ত্র জঙ্গি মহড়ার প্রেক্ষিতে সেক্যুলারিজম নিয়ে আলাপ করা পরিষ্কার ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে দৃশ্যত পক্ষ দুইটি: এক, "ইসলামি" জঙ্গি, আর দুই, সেক্যুলার-ভাবাদর্শী। আর ঝুঁকিটা হচ্ছে, একপক্ষ কর্তৃক অন্যপক্ষের "এজেন্ট" হিসাবে "আবিষ্কৃত" হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। বর্তমান আলোচনার উদ্দেশ্য তৃতীয় একটি সত্যের দিকে ধাবিত হওয়া, কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিন্তাবলয়ের যে হাল, তাতে কাউকে "তৃতীয় পক্ষ" বিবেচনা করার ধৈর্য প্রথম দুইপক্ষের আছে বলে মনে হয় না। হয় তুমি বাম, না হয় ডান; হয় তুমি নায়ক, না হয় ভিলেন! এরকম দুইমাত্রার চিন্তাজগত আমাদের!

যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে একবাল আহমাদ-এর "টেরোরিজম" বা এডোয়ার্ড সাঈদের "ওরিয়েন্টালিজম"-এর আলোচনা অগ্রসর হয়, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তা থেকে ভিন্ন। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রখানি কোনোভাবেই ইসলামি জাতিসত্তার ওপর হুমকি হয়ে উঠতে চায় না। তার সংবিধান "বিসমিল্লাহ" দিয়ে শুরু, তার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ফলে, এই দেশে যারা "পরিপূর্ণ ইসলামি ব্যবস্থা" কায়েমের লক্ষ্যে পরিকল্পিত সন্ত্রাসে ধাবিত, তাদের তত্ পরতা রাজনৈতিক হলেও রাষ্ট্রের বিপক্ষে দাঁড়ানোর সেই স্পিরিট এখানে নাই, হম্বিতম্বি আছে মাত্র। বিচ্ছিন্ন নাশকতামূলক কর্মকান্ডই এই হম্বিতম্বির শেষ কথা। ফলে তা যত না রাষ্ট্রের শত্রু, তারচে বেশি ব্যক্তিপর্যায়ে মুক্তচিন্তার শত্রু। আর আমাদের দেশের সরকারগুলো এদের জিইয়ে রাখতে খুব পছন্দ করে, কারণ এরা হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উপপত্নী হিসাবে অবস্থান করে, না-হয় রাষ্ট্রকর্তৃক সাধারণ নাগরিকদের হালাল অধিকার খর্বকরণকে জায়েজ করে।

"ধর্মীয় উগ্রবাদ" আজ যাকে বলা হচ্ছে, তাকে সেক্যুলারিজমের এন্টিথিসিস হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। বলাবাহুল্য, এই বিবেচনায় অন্যায় নাই। যেমন অন্যায় নাই "থিসিস" হিসাবে সেক্যুলার-ধারণাটির বিবর্তনটা খেয়াল করার মধ্যেও। ইতিহাসের বেদনাদায়ক সংঘাতের পথ পাড়ি দিয়ে মানবজাতি রেনেসাঁযুগে তার জীবনের বস্তুগত ও ভাবগত শর্তগুলোর মধ্যে যে সমঝোতা স্থাপন করেছিল, সেক্যুলারিজম তারই তুরীয়দশা। একথা হেগেল তার "দ্য ফিলসফি অব হিস্টরি" গ্রন্থে লিখেছেন। কিন্তু, হেগেল যাই লিখেন, সত্য এটাও যে, উত্ সবিচারে এটাও একটা ধর্মতাত্ত্বিক কনসেপ্ট। মধ্যযুগের খৃস্টীয় য়ুরোপে "সেক্যুলারাইজেশন" বলতে বুঝাত সন্ন্যাসজীবন থেকে যাজকজীবনে যাবার বৈধ রাস্তা। রেনেসাঁর উষালগ্নে "সেক্যুলারাইজেশন" হয়ে দাঁড়াল খাসজমি বণ্টনবিধি: গির্জার সম্পত্তি আমজনতায়। আধূনিক যুগ আমাদের উপহার দিল সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিল্পায়ন, মুক্ত বাজার এবং সেক্যুলারিজম। হেগেল ঠিক বলছিলেন যে, এই সেক্যুলারিজম-ই য়ুরোপীয় আধুনিকতাবাদের মূল স্তম্ভ। সেক্যুলারিজম শুধু যে ধর্মের বিরাষ্ট্রীয়করন করেছে তাই নয়, সেই সাথে ধর্ম, নৈতিকতা, রাজনীতি ইত্যাদি ধারণার নতুন ব্যাখ্যাও হাজির করেছে। এটা প্রকারান্তরে য়ুরোপীয় নেশন-স্টেটের খুঁটি মজবুত করে। উনাদের উপনিবেশবাদী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটা অ-য়ুরোপীয় বিশ্বেও বিস্তার লাভ করে। ধর্মপ্রসঙ্গে কার্ল মার্ক্সের বিবৃতির সরল পাঠ এবং গত শতকের দুনিয়াব্যাপী মার্ক্সবাদী স্বপ্ন একে আরো নির্বিকল্প জায়গায় নিয়ে গেছে। ফলে, সেক্যুলারিজম বলতে তৃতীয় বিশ্বেও আমরা বুঝি একটা সভ্য, গ্রহণযোগ্য এবং সার্বজনীন ব্যবস্থা। অথচ দার্শনিক রলস নীতির প্রশ্নে "ওভারল্যাপিং কনসেনসাস"এর দোহাই দিয়ে বলছিলেন, আধুনিক বিষম-সমাজে কোনো সার্বজনীন সর্বকালীন নীতি থাকতে পারে না। তার মৃদুভাষণ আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে নি।

কিন্তু আজ সেক্যুলার য়ুরোপের কী অবস্থা? য়ুরোপীয় ইউনিয়নে তুর্কিদের প্রবেশাধিকার নিয়ে এত তুলকালাম কি এজন্য হচ্ছে না যে, তুর্কিরা মুসলিম? আরো মুসলিম য়ুরোপে আছে সত্য, যেমন বসনিয়া। দুনিয়ার সবচেয়ে সেক্যুলার এই মুসলমানদের নির্বিবাদে কচুকাটা করছে খৃস্টান-সার্বিয়ান ফ্যাসিস্ট-রা। খোদ য়ুরোপে। মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রাল!

উদ্দেশ্য কিন্তু পরিষ্কার। য়ুরোপকে "মহাদেশ" নয়, একটা ধর্মীয় সভ্যতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। তাই, ফ্যাসিবাদের ইতিহাস থাকা সত্বেও য়ুরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানীর প্রবেশ নিয়ে একবিন্দু সংশয় হয় না, তুরস্কের প্রবেশ নিয়ে খুব হয়। তাদেয়ুজ মাজোয়েকি ছিলেন ইউএন কমিশন ইন দ্য বলকান রাইটস-এর নির্বাহী। তার ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রকাশ্যে জানতে চাওয়া হয়, কেন তিনি, নিজে পোলিশ ও খৃস্টান হয়েও, বসনিয়দের পক্ষে গলাবাজি করেন যাদের বেশির ভাগ মুসলমান? তিনি অনেক বুঝান, বলেন দেখো বসনিয়া য়ুরোপের জন্য হুমকি নয়, এরা অনেক ভাল মুসলমান। ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর পদত্যাগ করেন। পদত্যাগকালে তিনি খেদের সাথে বলেন যে, বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসেও য়ুরোপ কোনো মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে সহাবস্থানে অসমর্থ রয়ে গেল!

বোঝা যায়, আধুনিক যুগের গোড়ায় য়ুরোপ যে সেক্যুলার ভাবাদর্শ দিয়ে চালিত হয়েছিল, তার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। নিজেদের জন্য এই এজেন্ডা আর তাদের পছন্দ না (আধুনিক উপনিবেশবাদের একটা বৈশিষ্ট্য এই যে, য়ুরোপ বা গোটা পশ্চিম-ই নিজেদের কাছে নানারকম চেহারায় হাজির থাকে, কিন্তু বহির্জগতে তাহাদের চেহারা একরকম!)। সেক্যুলার ভাবাদর্শের চাইতে এখন খৃস্টীয় পরিচয়ের একটা সভ্যতা তৈরির দিকেই তাদের ঝোঁক।

এসব ঐতিহাসিক টানাপোড়েনে ইতোমধ্যেই আমাদের চিরপূজনীয় সেক্যুলারিজম য়ুরোপে একটা প্রান্তীয় মতাদর্শে পরিণত হয়ে গেছে। এটা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে অবস্থান করে, অবস্থান করে য়ুরোপের দাতাসংস্থার পলিসি বইয়ে, আর তৃতীয় বিশ্বের এমন কিছু গরীব দেশে, যাদের সমস্যা অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষার, কোনোভাবেই ধর্মের না। তবু চাহিবামাত্র ইহার বাহককে সেক্যুলার-সহনশীলতার প্রমাণ দিতে বাধ্য থাকতে হয় ঐসব তৃতীয় বিশ্ববাসীর!

সেক্যুলার রাষ্ট্রের সহনশীলতার প্রমাণ কি? যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকে "যুদ্ধ" চালাতে গিয়ে হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, সেটাকে তারা বলে "কোলেটারাল ড্যামেজ"। বনিবনা না হলে কোনো রাষ্ট্রের সাথে বহির্জগতের সমস্ত লেনদেন বন্ধ করে দিয়ে সে দেশে লাগাতার দুর্ভিক্ষ ঘটতে দেয় এবং এভাবে অসংখ্য নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে সেটার নাম দেয় "অর্থনৈতিক অবরোধ"! ১৯৮২ সালে সিরিয়ার সেক্যুলার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের জেনারেল যখন পাখির মতন মানুষ মারেন, বা একদা-সেক্যুলার সাদ্দাম হোসেন যখন লাখ লাখ শিয়া আর কুর্দীকে গ্যাসচেম্বারে ঢোকান তখন সেগুলো সেক্যুলার ব্যবস্থায় হালাল-ই ছিল। ফলে, সেক্যুলার ব্যবস্থা মানেই যে খুব সহনশীল ব্যবস্থা এমন নয়। সেক্যুলার ব্যবস্থায় সন্ত্রাসকে নির্মূল করা হয় না, রেগুলেট করা হয় মাত্র। এইটা বাংলাদেশের সেক্যুলার সরকারও করে। ভারতের সেক্যুলার সরকারও করে।

য়ুরোপের সেক্যুলারিজম এখন নিছকই "প্রজেক্ট ফর আদারস"। তৃতীয় বিশ্বের অনেক চিন্তাবিদ এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা বলেছেন। বাংলাদেশে ফরহাদ মজহারকেও এই অবস্থানে দাঁড়াতে দেখি আমরা। কিন্তু তার তত্ত্বীয় অবস্থানটি যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে চায়, সেখানে ফরহাদ মজহারকে খুব যুক্তিগ্রাহ্য লাগে না। যে ধরনের জাতিগত সংগ্রামের প্রেক্ষিতে সেক্যুলারিজম ও জঙ্গীবাদ নিয়ে ফরহাদ মজহারের অনুধাবন লিবারাল-দের এবং প্রান্তীয় হতে থাকা সেক্যুলারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে পৌঁছাতে পারত, হালের জঙ্গী মহড়া সেই ধাঁচের কিছু নয়। এখানে কিছু বঞ্চিত মানুষকে আকাশকুসুম দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা হয়েছে। তাদের গরীবীকে "রেগুলেট" করা হয়েছে। সরকারগুলোর এযাবতকালের নীরবতা এবং সেই প্রলোভনে আরো ইন্ধন দিয়েছে। সন্ত্রাস দমনে র‌্যাবেরও কিন্তু দুই পলিসি: সর্বহারা নামধেয় চরমপন্থীদের জন্য "ক্রসফায়ার" আর "ইসলামি" জঙ্গীদের জন্য গ্রেফতার। বোঝা যায়, সর্বহারা নিয়ে সরকারের আর কোনো গোপন অভিলাষ নেই, কিন্তু "ইসলামি" জঙ্গিপনার জন্য এখনি ডেডএন্ড নয়। তাতে আমরা ভাবতেই পারি, হালের জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের বিদ্যমান সরকারতন্ত্রের শত্রু নয়, সরকারের ভাবমূর্তির শত্রু বড়জোর। ভাবমূর্তির সমস্যা মিটে গেলেই সরকার আবার এই বিষয়ে বধির হয়ে পড়বে। ফলে আমাদের এখন ভাবা দরকার কোন্ আর্থসামাজিক প্রণোদনায় একটা ডিক্ল্যারড ইসলামি রাস্ট্রের ভিতরে বসে আরেকটা ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন গিলছে কিছু লোক? তাদের সমাজতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট কি? কওমী মাদ্রাসাপদ্ধতির কথাও আলোচিত হচ্ছে এ প্রসঙ্গে, সেটাকে আরো আনুবীক্ষণিকভাবে দেখা দরকার। কেন একসময়ের বিপ্লবী শিক্ষাব্যবস্থা আজকে জঙ্গী তৈরির কারখানা হয়ে উঠছে? কওমীদের নেতা আমিনী কেন আজো এই শিক্ষাব্যবস্থার সরকারি স্বীকৃতির জন্য কোনো আন্দোলন করেন না? অথচ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এরকম আকাঙ্ক্ষা ও দাবি জোরেশোরেই আছে বলে জানা যায়।

যে কথাগুলো ফরহাদ মজহার ১৭ অক্টোবর ২০০৫ সিরিজ বোমাহামলার প্রেক্ষাপটে বলে "সিভিল" সমাজের নানামুখী সমালোচনার মুখে পড়েছেন, সেটা ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদাজাতীয় আন্দোলনের মুখে হয়ত বেশি মানাত। তিনি যেসব প্রশ্ন হাজির করেন সেগুলো জরুরি, সময়োচিত এবং বৈধ প্রশ্ন নিঃসন্দেহে, যে প্রেক্ষিতে হাজির করেন তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। কিন্তু প্রেক্ষিত অনুধাবনের দায় তো তাকেই নিতে হবে, আর ওটাই সবচে জরুরি। তাছাড়া তার চিন্তা, যতদূর শুনতে ও বুঝতে পারি, বিদ্যমান সরকার-কাঠামোতে স্বস্তি আনয়ন করে। তিনি নিজে এই সরকার-ব্যবস্থার তীব্র সমালোচক হওয়া সত্বেও তাকে নিয়ে এহেন সরকারি স্বস্তির উত্ স কী? তিনি নিজে কী ভাবেন এ বিষয়ে? সেটাও আমাদের জানার দাবি আছে।

সেক্যুলারিজম আর ধর্ম কোনোটাই ফিক্সড ক্যাটেগরি না, তালাল আসাদ বলেন। আবার সেক্যুলার আর মৌলবাদীও বাইনারী অপজিট, এমনও না। আমাদের লালন সেক্যুলার ছিলেন না (কেউ কেউ অবশ্য তাকে খামোখাই "সেক্যুলার" বলে আরাম পান) সে কারণে তিনি মৌলবাদী হয়ে যান নাই। আবার সেক্যুলারিজমও একটা ধর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে বোঝা যায়। তারা একে ধর্ম হিসাবে মানে, যার ফলে সেক্যুলারিজমের প্রতিপক্ষ তাদের কাছে নিছক প্রতিপক্ষ থাকে না, নিখাদ শত্রু হয়ে যায়। ৯/১১-এর পর বিশ্বব্যাপী "সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে যুদ্ধ" সেই স্পিরিটের দ্বারা সমর্থিত (চালিত যদিও নগ্ন অর্থনৈতিক লালসা দিয়ে)। সেদিক দিয়ে য়ুরোপ বরং অনেক বদলে গেছে। তারা য়ুরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে আর সেক্যুলারিজমের স্পিরিটের মধ্যে নেই বলেই মনে হয়। এটা কি আগামী দিনের বিশ্বব্যবস্থার মোড়বদলের ইঙ্গিত?

২০০৫

ঋণস্বীকার: Talal Asad, Formation of the Secular, California 2003


মন্তব্য

??? এর ছবি

হাসিবের ভোখেনব্লাট-৬ এর মন্তব্য প্রতিমন্তব্য ইত্যাদি করতে করতে হঠাত্ মনে পড়ল, এইরকম বিষয় নিয়ে একটা লেখা আমিও লিখেছিলাম ২০০৫ সালে। লেখাটা খুঁজে পাওয়া গেল। একটা কমপ্লিমেন্টারি পোস্ট হিসেবেই দিয়ে দিলাম এখানে।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

দিগন্ত এর ছবি

"য়ুরোপীয় ইউনিয়নে তুর্কিদের প্রবেশাধিকার নিয়ে এত তুলকালাম কি এজন্য হচ্ছে না যে, তুর্কিরা মুসলিম?" - কিন্তু তুর্কি ছাড়াও আরো অনেক দেশ ঢুকতে পারছে না ই-ইউ তে - তাদের ক্ষেত্রে কি কারণ দেখানো হচ্ছে? আর তুরস্ক মুসলিম বলেই যে ঢুকতে পারছে না এমন কথা আমি প্রথম শুনছি। সেরকমি যদি হত তবে ই-ইউ তো তুর্কীদের দেশে আসা (মাইগ্রেশন) বন্ধ করত।

"দুনিয়ার সবচেয়ে সেক্যুলার এই মুসলমানদের নির্বিবাদে কচুকাটা করছে খৃস্টান-সার্বিয়ান ফ্যাসিস্ট-রা। " - সেটা থামিয়েছে কারা? সেই আবার সেকুলাররাই - তাই না? আমেরিকা আর জর্জ বুশ এ কারণেই আলবেনিয়ায় পপুলার। আলবেনিয়াও তুরস্কের মতই মুসলিম দেশ।

"আবার সেক্যুলারিজমও একটা ধর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে বোঝা যায়। " - আপনি একটা ব্যাপার ভুল করছেন, সেকুলারিসম দেশ চালানোর একটা পদ্ধতি মাত্র - আলাদা কোনো ধর্ম নয়। আমেরিকার অধিকাংশ মানুষ খ্রীষ্টান, তাই জনমতে তার প্রভাব পড়বেই। সেকুলার বলে আমেরিকায় বাকি ধর্মের লোকজনে সমান অধিকার পায় - তাই সব ধর্মের লোকে মাইগ্রেট করে। ধর্মীয় সিস্টেমের থেকে সেকুলার সিস্টেম এখানেই অনেক এগিয়ে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

??? এর ছবি

আর তুরস্ক মুসলিম বলেই যে ঢুকতে পারছে না এমন কথা আমি প্রথম শুনছি।

তাও তো শুনলেন। কতলোকে না শুইন্যাই মইরা যায়!! শুনছেনই যখন আরেকটু পড়েন। অবশ্য সময় থাকলে। লম্বা থ্রেড। পড়লেই বুঝতে পারবেন য়ুরোপ কেয়া চিজ!
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

দিগন্ত এর ছবি

অর্ধেকের বেশী পড়ে ফেললাম। বাকিটা পরে পড়ব (পড়বই)। কিন্তু আমি যেটা বুঝলাম সেটা হল ইউরোপিয়রা তুরস্ক সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না। উলটো দিকে তুর্কীরাও মনে হয়না খুব একটা সহজে ই-ইউ কে মেনে নেবে। সুতরাং উভয়ে কাছাকাছি আসা অবধি মিশ খাওয়া শক্ত - বলে না তেলে আর জলে মেশে না!!


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

আমি পড়ে যে মতামতটা ভাল বলে মনে করলাম সেটা এখানে দিচ্ছি - তুরস্ক আর ই-ইউ আলাদা থাকাই ভাল, কারণ ঃ
"Turkey is not a part of Europe culturally,and only a small part geographically."


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি সুমনের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আরো প্রীত তার সংযত বিশ্লেষণে।
জিওপলিটিক্স-এর সীমান্ত কোনো স্থির বিষয় নয়। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপল তো তুরস্কই ছিল। সেটা ইওরোপীয় ঐতিহ্যের অংশ হতে পারলে মুসলিম তুরস্ক নয় কেন? পাশ্চাত্য বা বৃহত্তর ইউরোপ (আমেরিকা+কানাডাসহ)তাদেরই গ্রহণ করে যারা তাদের খ্রীস্টিয় ঐতিহ্যজাত সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে, যেমন আফ্রিকীয় খ্রিস্টানদের। কিন্তু মুসলিম মেয়েদের স্কার্ফ তারা সয় না, কারণ তা অখ্রীষ্টীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তারা যখন বলে ‌‌‌'আওয়ার ওয়ে অফ লাইফ' তখন কী বিশেষ সংরক্ষিত পরিচয়কে বলে না? দেয়ার ওয়ে অফ লাইফ যেহেতু আত্মবিলোপ ছাড়া সম্ভব না, সেহেতু সহাবস্থানও তারা অসম্ভব করে তোলে।
অন্যিদিকে আরব ও মুসলিম অভিবাসীদের জন্য বিশেষ আইন করার মাধ্যম কি মতাদর্শ বা রাজনীতিহীন? যদি তার রাজনীতি ও মতাদর্শ থেকে থাকে, তালাল আসাদ বলছেন, সেটা কী বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণাজাত নয়?

::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রাসেল এর ছবি

জনাব ওয়াসিফ আপনিও বিশ্বাস করেন তুরস্কের ইউরোপিয়ন ইউনিয়নে ঢুকতে না পারার কারণ তার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা? তার নিজস্ব ধারার সেকুলারিজম আর ইউরোপিয়ান সেকুলারিজমের ভেতরে পার্থক্য আছে? এটা পক্ষান্তরে মুসলিম নিষ্পেষিত এবং বঞ্চিত মতবাদকে সামনে নিয়ে আসে- তাদের আপনি খ্রীষ্টিয় উগ্রপন্থী লেবেল দিতে চাইছেন- তারা কৌশলে ধর্মীয় আগ্রাসন চালাচ্ছে সেকুলারিজমের নামে এই মতবাদকে সমর্থন করছেন- ভালোই লাগছে দেখে- তবে পেট ফেটে হাসি আসছে - একই সাথে জুজুর ভয়ে ভীত এবং পশ্চিমা ইসলামি জঙ্গী ধারণার সাথে সঙ্গমরত যুগল ভাবনা দেখা যায় না- আপনি চমৎকার লিখেছেন-

পোশাকেরও ধর্ম থাকে এই একটা বিশেষত্ব ছিলো ১৯৪০ এর দশকে যখন দ্বিজাতিতত্তবের গোয়ারভুত ছিলো সক্রিয়- আজ দেখলাম আদতে অনকের ভেতরেই এই সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদ আছে- তারা শোভন পোশাকে এই বাঁদরে ল্যাজ লুকিয়ে রাখে-

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

দিগন্ত এর ছবি

আমার মনে হয় এই লিঙ্কটা সবাই পড়ে দেখতে পারেন। তথ্য সংক্রান্ত সব ইস্যু ঠিকঠাক করার জন্য।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দিগন্ত, সুমন ঠিকই বলেছেন - ইউরোপীয় নেতারা মুখে স্বীকার না করলেও আমজনতা ঠিকই বুঝিয়ে দেবে। তুরস্ক এত বিরাট মুসলিম অধ্যুষিত দেশ - তাদের সবাইকে ইউরোপে অবাধ যাতায়াত আর কাজের সুবিধা করে দিলে কন্টিনেন্টের আইডেন্টিটির কি হবে, সেটা নিয়ে সবাই শঙ্কিত। ৯/১১ পরে ইউরোপীয়রা নিজেদের খুব বেশী বাহবা দিয়ে ফেলেছিল - দেখ্‌ এগুলা খালি আমেরিকাতেই হয়, কিন্তু আমরা ইউরোপীয়রা কত উদার, আমাদের মাল্টিকালচারালিজম কত সফল, আমাদের ইমিগ্র্যান্টরা কি বেজায় খুশী।

সবই বুলশিট। মাদ্রিদ আর লন্ডন বম্বিং-এর ইউরোপীয়দের মাথা ঘুরে গেছে একদম। এবং তারাও যে কত বড় রেসিস্ট ছিল এবং আবারো হতে পারে তা নতুন করে বোঝা যাচ্ছে। ইমিগ্র্যান্টরাও যে কত খুশী তার প্রমাণ গত তিন বছর ধরে প্রতি নভেম্বরে পালা-পার্বণের মত করে প্যারিসের বাইরে দাঙ্গা। মাল্টিকালচারালিজম কিছুই না - ইমিগ্র্যান্টদের ঘেটোতে বন্দী করে রাখার একটা ধান্দা, ভাল স্কুল-কলেজ আর চাকরির কোনদিনই নাগাল পাবে না তারা এইভাবে থাকলে। সেটা বুঝেই সারকোজি চাকরির বাজার আরেকটু উন্মুক্ত করার জন্যে এত কসরত করছেন, কিন্তু সনাতনী ফরাসিরা তা দিতে রাজী না।

সারকোজি দিয়েই শেষ করি। তিনি তুরস্ককে ইউনিয়নে ঢুকতে দেয়ার ঘোরতর বিরোধী। তার সাম্প্রতিক ক্যাম্পেইন-এর বড় একটা প্রতিশ্রুতি ছিল এইটা। বরং তিনি নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন - বলেছেন তুরস্ক, মরক্কো এই সব দেশ মিলে নতুন একটা মেডিটেরানিয়ান বা ভূমধ্য সাগর ইউনিয়ন তৈরী করুক! বেটা বহুত চাল্লু...

প্যারিস দাঙ্গা আবার -
http://news.bbc.co.uk/2/hi/europe/7114521.stm
সারকোজির ভূমধ্য ইউনিয়ন -
http://www.iht.com/articles/2007/05/10/africa/france.php
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

ব্যক্তিগত বায়াসের সাথে সেকুলারিসম এর কোনো সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রের বায়াস থাকলে, তবেই তা সেকুলারিসম ভায়োলেট করে। সেকুলারিসম মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম নয় - রাষ্ট্রের ধর্ম।

তবে, ভূমধ্য সাগর ইউনিয়ন এর আইডিয়াটা বেশ ভাল। আমার মনে হয় ওটাই ঠিকঠাক হবে। ইউরোপের সাথে তুর্কীরা মেশে না, ওরা ই-ইউতে গেলে ওদেরও সমস্যা, ইউরোপেরও সমস্যা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

??? এর ছবি

সুবিনয়, আপনার মাল্টিকালচারিজম আর Ghettoization এর প্রসঙ্গে ইয়াসমিন মুভিটার কথা মনে পড়ল। এটা অবশ্য মুদ্রার অন্য পিঠ। এক পিঠে "ভূমিপুত্র" দের পক্ষে সোজাসাপ্টা ডিসক্রিমিনেশন, অন্য পক্ষে ইমিগ্র্যান্টদের নিজেদের আভ্যন্তরীণ সমস্যা। কালা আদমি এবং মুসলিম এশিয়ানদের ঘেঁটোর বাইরে আনা যাবে না। আবার তাদের ছাড়াও তো চলে না! এমন ফোলানো-ফাঁপানো জিডিপি-র তেলচর্বি তো ওরাই যোগায়! প্যারিসের দাঙ্গা কি সাধে হয়?
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাইজান
বাইবেল কুরান ও ইহুদীবাদ নামে একজনরে ৫০০ পৃষ্ঠার বেশি একটা বইয়ের প্রুফ দেখতে দেখতে আর মিসিং লিংক এবং এডিটিং পয়েন্ট খুঁজতে খুঁজতে আমি এখন স্বপ্নেও ইব্রাহিমের বংশের তিন ধারা মুসা ইসা আর মোহাম্মদকে মহাশূন্যে দাঁড়িয়ে মারামারি করতে দেখি

ওই বইয়ের প্রথম ফ্লেপের জন্য আমি যে ড্রাফটা করেছি তার একটা অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি

গত চার হাজার বছর ধরে ইব্রহিম বংশের এই তিনটি ধারাই কোনো না কোনোভাবে লড়াই করছে একের বিরুদ্ধ্যে অন্যে। হত্যা করছে একে অন্যকে। আর সবক্ষেত্রেই হত্যার সহায়ক কিংবা ঢাল কিংবা অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করছে একই ঈশ্বর এবং একই গোষ্ঠী ইতিহাসর তিনটি উত্তরাধিকার বা ধর্মকে

গত চার হাজার বছর ধরেই রাজনৈতিক ইতিহাসের ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের রাজনীতিকরণের মধ্যেই আবর্তিত হচ্ছে সেমেটিক ইব্রাহিমের এই তিনটি উত্তরাধিকার

দিগন্ত এর ছবি

"এখন স্বপ্নেও ইব্রাহিমের বংশের তিন ধারা মুসা ইসা আর মোহাম্মদকে মহাশূন্যে দাঁড়িয়ে মারামারি করতে দেখি"

আপনার ইতিহাস থেকে কি ভারত আর চিন বাদ যাচ্ছে!!


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাসেল এর ছবি

সেকুলারিজমের যে সংজ্ঞা আসলো এখানে সেটার সাথে সাংঘর্ষিক একটা ধারণা আমার সেকুলারিজম সম্পর্কিত চেতনায়-
ইউরোপের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্ম ছিলো খ্রীষ্টান তবে ক্ষমতা চর্চার কেন্দ্র ছিলো চার্চ- চার্চের আধিপত্য দুর করতে গিয়ে সেখানে অর্থনীতি আর সমাজনীতির ক্ষমতার চর্চার ক্ষেত্রটা বদল হয়েছে- সেখানে মানুষের অধিকার আর মানুষের মৌলিকত্ব বিবেচনার জায়গাটা বদলেছে-

সুমন রহমান অনেক বিজ্ঞ মানুষ অন্তত ৩ থেকে ৪ জন বিশেষজ্ঞ আর দার্শনিকের উক্তি য়ন করে বলতে চাইছেন তিনি একটা কথা বললে সেটা ফেলনা হতে পারে না- আর তার বিরোধিতা করাটাও বিষম দায়ের বিষয়-

আমাদের জঙ্গী চিহ্নিত হওয়া আর ইসলামী জঙ্গীবাদের উৎস এক নয়- বরং আমাদের জঙ্গী চিহ্নিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক অধীনতাকে আগে বিবেচনা করা প্রয়োজন- অনেকগুলো গলদের জায়গা আছে- তবে জ্ঞানী মানুষকে জ্ঞান দিতে চাওয়া আর বাপকে চুদতে শিখানোর ভেতরে একটা সমস্যার বিষয় যেহেতু উপস্থিত তাই সুমন রহমানকে আরও একটু এগিয়ে হাওয়ায় ছড়ি না ঘুরিয়ে অনুরোধ করতে পারি আরও একটু ইতিহাস পড়তে আর সেই সাথে সেকুলারিজমের আরও নানাবিধ ব্যাখ্যা এবং অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক- অর্থনৈতিক ছদ্ম উপনিবেশিকতা এবং এর নানাবিধ ধারণা সম্পর্কে পড়তে-

হয়তো জ্ঞানী মানুষ নিজেই নিজের ভ্রান্তি উপলব্ধি করবেন= আর সাঈদের অরিয়েন্টালিজমের ভেতরে গিয়ে বুঝতে ব্যর্থ সুমন কেনো কি? কিয়ের এত প্যাঁচ-

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

রাসেল আপনি শোভনভাবে আপনার ভিন্ন মতামত কি প্রকাশ করতে পারতেন না ? এভাবে যে কারো বিরোধীতা করা কি অত্যন্ত রূড নয়? সাধারন পাঠক হিসেবে যদি আমি আপনার কাছে একটু পরিণত সমালোচনা আশা করি তা কি অন্যায় হবে? সময় পেলে বিষয়টা ভাববেন আশা করি।

??? এর ছবি

তবে জ্ঞানী মানুষকে জ্ঞান দিতে চাওয়া আর বাপকে চুদতে শিখানোর ভেতরে একটা সমস্যার বিষয় যেহেতু উপস্থিত তাই সুমন রহমানকে আরও একটু এগিয়ে হাওয়ায় ছড়ি না ঘুরিয়ে অনুরোধ করতে পারি আরও একটু ইতিহাস পড়তে আর সেই সাথে সেকুলারিজমের আরও নানাবিধ ব্যাখ্যা এবং অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক- অর্থনৈতিক ছদ্ম উপনিবেশিকতা এবং এর নানাবিধ ধারণা সম্পর্কে পড়তে-

আপনের বক্তব্যের কিছুই বুঝলাম না, খালি ঐ "চুদা"র বিষয়টা ছাড়া। দুইবার পড়লাম। খালি মনে হৈল কী যেন কী একটা হৈয়া গেছে! বাদ দ্যান, আসেন চা খাই! হাসি
auto

..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

??? এর ছবি

কী আর করা! নিজের পয়সায় চা খাওয়াইয়া খাওয়াইয়া পোলাপাইনেরে ঠান্ডা রাখতেছি!!
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

রাসেল এর ছবি

ইমরুল হাসান আপনি হয়তো সুমন রহমানের ভাবনা জগতের সহবাসী তবে আপনার ভাবনার মাথাটা কিংবা থিংকিং ক্যাপটা নিজের মাথার শিরোস্ত্রান করলে আরও ভালো হতো-অন্যের বুলি আর বক্তব্য বুঝবার দুর্বলতা দেখে এর বেশী কিছু বলতে পারছি না- পঠনের বিকল্প নেই- হৈয়া গেছে আর কৈয়া গেছে এই একটা ধারা ধরে রেখে আসলে তেমন বাগবিস্তার ব্যতীত কিছুই হয় না-
যাই হোক জ্ঞানী সুমন রহমান যখন বলেন একটা কথা এবং সে কথায় গলা মেলাতে যখন অনেকেই হাজির হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে অনেকের ভাবনার টুপি এখন সুমন রহমানের কাছেই- তাই তার কাছেই একটু আলোচনার আব্দার- আসুন আমরা একটু আলোচনা করি-

আলোচনা বাকবিধি কিংবা শব্দের উৎস নিয়ে না- শব্দের ব্যবহারিক অর্থ নিয়েও না- আসুন একটু আলোচনা করি আমাদের বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলো নিয়ে-
আধুনিকতা- প্রগতিশীলতা- এবং অবশ্যই সেকুলারিজম নিয়ে- এটা আপনার অধীত বিষয়- তবে সাঈদের বক্তব্যের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারার ব্যর্থতা কার ঘারে বর্তাবে এটা বলা মুশকিল।

এই যে একটা মনোজ্ঞ আলোচনা যা ধ্রুব হাসানের বক্তব্য মতে রুঢ়- যদিও বুঝলাম না কেনো- সুমন রহমান নিজের সীমাবদ্ধতা মানতে চান না- তিনি সর্বজ্ঞ এবং সবজান্তা এবং অবশ্যই অনেক ফেলানো মানুষ- সেই মানুষকে জ্ঞান দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখাতে চাই নি- তিনি ইশ্বর না হলেও অনেকের ভাবনার দায় নিয়ে অনেকের কল্প লোকের ইশ্বর- তিনি আরও বেশী মাত্রায় তদারকি ব্যবস্থায় বিশ্বাসী- তিনি পুলিশী পাহারায় বিতর্ক করতে ভালোবাসেন আর নীচ জনতাকে বলতে ভালোবাসেন আহা ওরা অবুঝ ওদের জ্ঞান দাও- এই অবুঝ বান্দারা মাঝে মাঝে একটু উলটা পালটা কথা বলবেই-

তুরস্কের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রবেশে বাধা দান এবং তৃতীয় বিশ্বে অর্থনৈতিক উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ইউরোপ এবং আমেরিকা একটা ধর্মীয় সম্প্রসারনশীলতার নীতি গ্রহন করেছে এই একটা বক্তব্য এবং খ্রীষ্টীয় সাম্রাজ্যবাদী ভাবনা এখন সেকুলারিজমবাহিত এটা মানতে পারছি না- যদিও সুমন রহমান এমন একটা কথা বলেছেন- তিনি যা প্রমাণ করতে চেয়েছেন বিভিন্ন বক্তব্যের ধুয়া তুলে- তার আগে আলোচনা হওয়া দরকার মুসলিম হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ট দেশসমুহে উন্নত বিশ্বের পররাষ্ট্র নীতি এবং একই সাথে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে বাদ দিয়ে কোন ধরনের ধর্মীয় আগ্রাসনবাদের আলোচনা তিনি করতে চাইছেন-
সস্তা জনপ্রিয়তা কিংবা কিছু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে কিছু সহায়তা দান যদি তার উপলক্ষ্য হয় তবে তাকে আধুনিকতা- মানবিকতা এবং প্রগতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করতে আমন্ত্রনা জানাবো না-

যাই হোক অহেতুক অনেক কথা বললাম- সুমন রহমান সজ্জন- চা পানের আমন্ত্রন জানিয়েছেন- আমরা চা পান করবো না- বরং আলোচনা করতে পারি- দেখা যাক আপনার জ্ঞানের পরিসীমা-

সুমনর রহমানের অনেক জ্ঞান- আঙ্গুল ডুবালে তল খুঁজে পাওয়া যায় না- তার জ্ঞানের প্রসবণে একটু স্লান করবো- আসুন আলোচনা করি আলাদা পোষ্টে- আধুনিকতা- প্রগতিশীলতা- মানবিকতা এবং আমাদের বর্তমান বিশ্ব-

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাসেল, আপনি কি আর একটু বুঝিয়ে বলবেন আপনার মতাদর্শগত অবস্থান টা ঠিক কি আসলে? আমি কিন্তু মোটেই আপনাকে challenge করছি না - একেবারেই না, আমার নিজের যেহেতু এ ব্যাপারে (সেক্যুলারিজম ইত্যাদি) জানার আগ্রহ আছে তাই জিজ্ঞেস করছি। আর আমি ইতিহাস বিষয়ে অনেক জানি এমন দাবী করা যাবে না, অতএব আমাকে পালটা প্রশ্ন করে লাভ নেই - আমি শুধু আপনার বক্তব্য আর যুক্তি গুলো বুঝতে চাচ্ছিলাম।

(অতি) সবিনয়ে -
স্নিগ্ধা

রাসেল এর ছবি

প্রিয় স্নিগ্ধা, আমার মতাদর্শগত অবস্থানটা আসলে কেনো গুরুত্বপূর্ণ? এখানে আলোচক সুমন রহমান বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যাক্তি, তার কাছে আমি কিছু জানতে চেয়েছিলাম, আপনার মতো আমারও সেকুলারিজম সম্পর্কে জানবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে- তবে সেকুলারিজম শব্দটা যত সহজে বলে একটা আবহ আর একটা যা তা লিখে দেওয়া যায় আদতে সেকুলারিজম কি এতটা সস্তা একটা বিষয়?
সুমন রহমানের কাছে অনুরোধ ছিলো এটাই তিনি তার বাগ্মিতা দিয়ে ধন্য করবেন, আমাকে জানাবেন আধুনিকতা, প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা এবং এর পরে তিনি আমাদের সেকুলারিজমের পাঠ দিবেন-
আমি এই পর্যায়ের পরে এসে তার সাথে আলোচনা করতে আগ্রহী-অবশ্য কতিপয় মাঝারি মানের মানুষের পারস্পরিক উস্কানি এবং পরস্পরের পিঠে তেল মালিশ দেখে ভালো লাগে- তাদের এই সস্তা ভাঁড়ামো দেখে করুণাও হয়- তাই আমরা আলোচনা করে একটু নির্ধারণ করি মাঝারি মানের লেখকেরা এবং আঁতেলবনতে চাওয়া মানুষেরা আদতেকতটা সস্তা এবং পঠনবিমুখ।

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

বোঝা যাচ্ছে, মহাত্মন, আপনি গাছ দেখে আগে কাঠই দেখবেন। ইগো-কাতর হয়ে কাতরাবেন। সুমন কে, তার থেকেও গুরুতর ভাবে তিনি তার চিন্তা বলেছেন। এবং বুঝতে পারছি, আপনারও জোরালো যুক্তি ও মত আছে। খুব চমঃকার হতো না, তর্কটা তর্কের মতো চালালে? তার আগে মনে হয় একটু নিশানা ঠিক করে নেয়া দরকার। আমরা সেকু্লারিজম নামক রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক প্রপঞ্চের ক্রিটিক করছি। যাবতীয় সেকু্লারিটিকে নয়। এ দুইকে আলাদা করে নিয়ে আলোচনা করলে পরস্পরকে ভুল বোঝার সম্ভাবনা কমে যায়।
সুমন ও তার সহমত ধারণ কারীদের এক কাতারে ফেলে কী সুবিধা হয় আলোচনার বুঝছি না। তবে এটা বুঝছি যে, সেকুলারিজমের সমালোচনা করলে আপনার অস্ত্রে ভাব ও মূর্তি দুইই কোরবানি হতে পারে। সেকুল্যারিজম কখনো কীরকম সহিংস ও ফ্যাসিস্ট হয়, এটা তার নমুনা। অবশ্যই আপনি যতটা বুঝেছেন ততটা। আমার খালি মনে পড়ছে সুকুমার রায়ের এই ছাড়াটি:
ধেড়েটার বুদ্ধি দেখ,
চড় মেরে সে নিজের গালে
কে মেরেছে দেখবে বলে
উঠেছে গিয়ে টিনের চালে।
ভাই চড়া সুর থেকে নেমে আসুন একটা দিলখোশ আলোচনা করি। কী ভাই চলবে?

::::::::::::::::::::::::::::::::::

বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।