"আটপৌরে" ভাষাবিতর্ক: প্রমিত বনাম অমিত বাংলা (আপডেটেড)

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: শুক্র, ১৬/১১/২০০৭ - ১০:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পোস্টটাকে একটু বদলে দিতেছি। যেহেতু, সবগুলো লিংক থেকে পড়বার সময় অনেকেরই নাই, তাই নিজের লেখাটা এইখানে কপি-পেস্ট করতেছি। নিচে অন্যান্য লিংকগুলো থাকল, যথারীতি।



ভাষাবিতর্কের আগুনে আরও দুই ফোঁটা ঘি
সুমন রহমান

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রে নাটকে এবং সাহিত্যে আটপৌরে ভাষার ব্যবহার নিয়ে একটি উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে। মেহতাব খানম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও সৌমিত্র শেখরকে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টি নিয়ে তাদের সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য। মেহতাব খানমের উত্থাপিত প্রসঙ্গটি ছিল মূলত টেলিভিশন নাটকের সংলাপ নিয়ে, ফলে আশা ছিল নাট্যজনদের কেউ মতামত দেবেন এবং দেখলাম সরয়ার ফারুকী সেটা দিয়েছেনও। ফলোআপ হিসেবে ১১ নভেম্বর প্রথম আলো-য় সৌমিত্র শেখর তার আলোচনাটিকে শুধু নাটকের সংলাপে সীমিত রাখেন নি, বরং সাম্প্রতিক সাহিত্যচর্চায় আটপৌরে ভাষার “যথেচ্ছ” অনুপ্রবেশ নিয়েও তার উদ্বেগের কথা বলেছেন।

টেলিভিশন নাটকে, সিনেমায় বা সাহিত্যে আটপৌরে ভাষার অনুপ্রবেশকে “যথেচ্ছ” মনে হওয়ার কারণ কি? সরয়ার ফারুকীর বক্তব্যে তো মনে হচ্ছিল যে, আটপৌরে ভাষার প্রয়োগ নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট চিন্তা রয়েছে। কার ইচ্ছায় ও চিন্তায় তাহলে আটপৌরে ভাষা “মানভাষা”য় প্রবেশাধিকার পাবে? সৌমিত্র শেখর বলছেন সেটা শতবর্ষ আগের অবিভক্ত বাংলার ভাষাচিন্তক ও সংস্কৃতিবোদ্ধাদের ইচ্ছায় বা সিদ্ধান্তে। তারা বহু গবেষণা করে নদীয়া শান্তিপুর অঞ্চলের বাংলাকে প্রমিত বাংলা বলে ঠিক করে গিয়েছিলেন। তাদের সেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের পর একশ বছর গত হল, অবিভক্ত বাংলা বিভক্ত হল, এবং দুই বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক বাস্তবতা দুই মেরুর দিকে ধাবমান হল। অল্প কিছু সাহিত্য আর সামান্য কিছু “জীবনমুখী” গান ছাড়া আর কোন্ বিষয়টা দুই বাংলার কনজিউমাররা এখন শেয়ার করে বলা মুশকিল। একদা অবিভক্ত, কিন্তু বর্তমানে পরস্পর থেকে নানাভাবে দূরে সরতে- থাকা দুই বাংলা চিরকাল একইভাবে ভাষাব্যবহার করতে থাকবে, এটা কেমন আবদার? আর রাষ্ট্রীয় বাস্তবতার কারণেই গ্লোবালাইজেশনের চাহিদা দুইবাংলার কাছে দুরকম, যেহেতু পশ্চিমবাংলা একটা মাল্টিন্যাশন স্টেটের অংশ আর পূর্ববাংলা নিজেই একটা ন্যাশন স্টেট। যে বাংলায় পশ্চিমবঙ্গ আজ সাহিত্য সাংবাদিকতা কি টেলিভিশন নাটক করছে, তার মধ্যে হিন্দি বা “হিংলিশ” ভাষার দাপট কীরকম আছে? কতটা প্রমিত আজ প্রমিত বঙ্গের বাংলা? প্রমিত বাংলার জন্য শতবর্ষ আগে বেঁধে দেয়া সেই স্ট্যান্ডার্ড থেকে একা পূর্ববাংলাই সরে আসছে, এটা বোধহয় ঠিক নয়।

মেহতাব খানমের উদ্বেগ তবু সময়োচিত, ঢাকাই উচ্চবিত্তের “ডিজুস” কালচার দিয়ে আমাদের কল্পনার আবহমান বাংলা নিয়ন্ত্রিত হোক সেটা তিনি বা সরয়ার ফারুকী কেউই চান না। ফারুকীও তার লেখায় সেই উদ্বেগের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এবং “জাতীয়” মিডিয়াকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে উত্তরণের পথ বাতলেছেন। কিন্তু ভাষা মূলত ক্ষমতাসম্পর্কের দ্যোতক, এবং সে কারণেই এই ধরনের উদ্বেগ মূলত মধ্যবিত্তের, যেহেতু মধ্যবিত্ত এটা ভাবতে পছন্দ করে যে তারাই “জাতীয়” সংস্কৃতির মুখ্য আধিকারিক। এই যুদ্ধ দৃশ্যত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যকার একটি সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধ যেখানে তাদের উভয়ের কুরুক্ষেত্র হচ্ছে মিডিয়া। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের নিজ নিজ শক্তিশেল তো আছেই। উচ্চবিত্তের টাকা থাকলেও মধ্যবিত্তের আছে লোকবল আর উচ্চকিত হবার নৈতিক অধিকার। মিডিয়াব্যক্তিত্ব সরয়ার ফারুকী যেভাবে মেহতাব খানমের উদ্বেগকে সমর্থন জানিয়েছেন তা দেখে মনে হচ্ছে এই কৌরব-পান্ডবের যুদ্ধে তিনি যেন কর্ণ! মন মধ্যবিত্তের দিকে, কাজ করছেন উচ্চবিত্তের ভাষায়!

বলাবাহুল্য, নিম্নবিত্ত সমাজ এই যুদ্ধে উপেক্ষিত। গরিব রিক্সাঅলার আবার ভাষা কি? সে তো আমাদেরই বেঁধে-দেয়া ভাষাব্যবস্থায় চলবে, নাকি? অথচ, আমরা খেয়াল করিনা যে, “ডিজুস” বাংলার আগেই নিম্নবিত্তের নিজস্ব বাংলা প্রমিত বাংলার বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তাদের মিডিয়ায়। তাদের মিডিয়া? কেন, দেখছেন না সেই মিডিয়ার দাপটে আমাদের নামী ব্যান্ডশিল্পীদের কাঁধে গামছা, পরনে জিনসের বদলে আলখাল্লা, আর মমতাজকেও দেখুন! সবচে বেশি এলবামের গায়িকা হিসেবে ইতোমধ্যেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম উঠেছে তার। হ্যাঁ, অডিও ক্যাসেটই নিম্নবিত্তের মিডিয়া এবং এই কেন্দ্রাতিগ মিডিয়াটি কোনোরকম বিজ্ঞাপনী প্রশ্রয় ছাড়াই বর্তমানে দেশের সবচে দ্রুত বর্ধনশীল মিডিয়াগুলোর একটা। খেয়াল করে শুনে দেখুন, সেখানেও একরকমের বাংলার চল আছে, যা নিম্নবিত্ত বা নগর গরিবের বাংলা। আমার প্রস্তাব এই ধারার বাংলাকেও বর্তমান তর্কে সামিল করা হোক। তাকে পাশ কাটানোর একাডেমিক আভিজাত্য থেকে মুক্ত হোক ঢাকাই মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত।

এবার সাহিত্যের ভাষা প্রসঙ্গে আসা যাক, যেহেতু সৌমিত্র শেখর সাহিত্যে আটপৌরে ভাষার ব্যবহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তার ঔচিত্যবোধ প্রখর, আটপৌরে বাংলায় রচিত সাহিত্য জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচার অনুচিত বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু কেন? ঢাকাই মিশ্র আটপৌরে বাংলা শেষবিচারে এক ধরনের আঞ্চলিক বাংলাই বটে। মেহতাব খানমের আপত্তির কারণ তো বোধগম্য, তিনি আজকালকার টেলিভিশন-দেখা ছেলেমেয়েদের “শুদ্ধ” বাংলায় কথা বলার ক্ষেত্রে নাটকের ভাষাকে প্রতিবন্ধক ভাবছেন। কিন্তু আঞ্চলিক বাংলায় সাহিত্য তো নতুন কিছু নয়। তাহলে এখন আপত্তি উঠছে কেন? বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করি।

প্রথাগত ধারণাটি হল, আঞ্চলিক বাংলা ততক্ষণ পর্যন্ত “বৈধ”, যতক্ষণ তা উদ্ধৃতি এবং বন্ধনীচিহ্নের মধ্যে থাকে। যেমন, সংলাপ আঞ্চলিক হতে পারে, যদি সেই সাহিত্য কোনো এক আঞ্চলিক জীবনযাত্রার আখ্যান হয়। কিন্তু কথকের বা বর্ণনাকারীর ভাষা হতে হবে অবশ্যই “মানভাষা”, যেহেতু তিনি সাহিত্যিক হিসাবে বাইডিফল্ট মধ্যবিত্ত। তিনি “শুদ্ধ” বাংলায় চাষাভুষার জীবন নিয়ে আলেখ্য রচনা করবেন, আর সততার খাতিরে চাষাভুষার মুখের ভাষা সেরকমই বহাল রাখবেন। তাতে আপত্তি নেই। আপত্তিটা তখনই বাঁধে যখন সাহিত্যের ন্যারেটর বা বর্ণনাকারীর ভাষা প্রমিত বাংলা থেকে বিচ্যুত হয়। এ যেন সাহিত্যিকের এবং সাহিত্য-বিচারকের কেন্দ্রীয় চরিত্র থেকে মধ্যবিত্তের আধিপত্যকে খারিজ করে দেওয়ার সামিল! সাহিত্যে আটপৌরে ভাষার ব্যবহার নিয়ে আপত্তির জায়গাটা, আমার ধারণা এখানেই।

বর্তমান পরিসরে এ নিয়ে বিস্তারিত বলবার সুযোগ নেই। ঐতিহাসিকভাবে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে কেন্দ্রে বিবেচনা করেই সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান এবং নন্দনতত্ত্বের প্রতীকগুলো গড়ে ওঠেছে। এখন কোনো সাহিত্যিক যদি সেই নির্মাণকে মান্য না করেন, তবে আশংকার ঘণ্টি স্বাভাবিকভাবে প্রথমেই বাজবে সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কারণ তারাই মানদন্ডের রক্ষক এবং এর মাধ্যমে সহজেই তাদের আধিপত্য ধরে রাখা যায়। কিন্তু এটা আমরা ভাবি না যে প্রাতিষ্ঠানিক মধ্যবিত্ত ভাবনা আর সমাজে বিদ্যমান মধ্যবিত্ত ভাবধারা এক নয়। আবার এটাও হাস্যকরভাবে মনে করি যে, কেবল মধ্যবিত্তই চিরকাল অপরাপর শ্রেনীসমূহের পক্ষে শিল্পসাহিত্য করবে। কিন্তু ভাষা তো প্রবহমান ঘটনা, সে সমাজে বিদ্যমান শ্রেনীসমূহের ক্ষমতাসম্পর্কের দর্পণও বটে। তাকে “প্রমিত” বাংলা নাম দিয়ে শতবর্ষ আগের কোনো সমঝোতার ঘেরাটোপে আটকানোর চেষ্টা অর্থহীন, কিভাবে অর্থহীন ফারুকী সেটা সংক্ষেপে বলেছেন। আমার বলবার বিষয় হল, যে বিচারে আমরা সাহিত্যের চরিত্রগুলোর মুখে আঞ্চলিক ভাষাকে বৈধ ভাবি, সেই একই বিচারে বর্ণনাকারীর আঞ্চলিক ভাষাকেও বৈধ ভাবতে পারি। সাহিত্যিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি থেকে মধ্যবিত্তকে রেহাই দেয়ার দরকার কিছু আছে, কারণ মুষ্টিমেয় কিছু বাদে মধ্যবিত্তের একটি বিরাট অংশ কিন্তু সাবঅল্টার্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে। বর্তমানের সাহিত্যিক মধ্যবিত্ত কিন্তু সেই উদ্বেগ থেকে বিকশিত হচ্ছে। ফলে, জীবনের প্রয়োজনে, হরহামেশাই তাকে প্রমিত বাংলার বাউন্ডারি টপকাতে হচ্ছে।

আরেকটা বিষয়, প্রমিত বাংলার সাথে শুধু যে উচ্চবিত্তের গ্লোবালাইজড ডিজুস বাংলা মিশছে তা নয়, মিশছে শাহআলম সরকার/মমতাজের “ফাইট্টা যায়” বাংলাও। একইভাবে, নিম্নবিত্তের বাংলায়ও গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব পড়ছে এমন দেখতে পাই। এটাকে মিলনমেলা বা কুরুক্ষেত্র যাই বলুন, তা থেকে মধ্যবিত্তীয় প্রমিত দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব, কার্যত সেটি প্রমিত বাংলাকে আরেকটা মৃতভাষায় পরিণত করার সামিল। বরঞ্চ এই নেয়াদেয়ার প্রক্রিয়ায়, শ্রেণীসমূহের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের এই প্রকাশ্য ও গোপন যুদ্ধে কোন্ শ্রেণীর ভাষা কিভাবে বদলাচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। শিল্পসাহিত্য বা নাটক সেই যুদ্ধের ময়দান হতে প্রস্তুত।

১৬ নভেম্বর ২০০৭

প্রথম আলো আটপৌরে ভাষাবিতর্ক:

মেহতাব খানম

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

সৌমিত্র শেখর

উম্মে মুসলিমা

সৌরভ সিকদার

সুমন রহমান


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

* সৌমিত্রের যুক্তি মানতে পারলাম না। নদীয়া-শান্তিপুরের ভাষা স্রষ্টার প্রদত্ত ভাষা না, বরং প্রমথ চৌধুরী, কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী ও লেখকদের পরিচিত ভাষা বলেই সেটা প্রমিত হয়েছে।

অনেকেই কুষ্টিয়ার ভাষাকে "কী সুন্দর" আহা উহু করেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি যদি সাতকানিয়াতে হতো, চট্টগ্রামে যদি ব্রিটিশদের রাজধানী হতো, তাহলে কি আমরা আজ চট্টগ্রামের ভাষা বা কক্সবাজারের ভাষা নিয়েই আহা-উহু করতাম না?

ভাষা জনগণের ব্যাপার ... বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে ভাষা আটকে থাকে না। সৌমিত্রের লেখায় আরো কিছু যুক্তিহীন কথা আছে -- গুলশানের ভাষাকে আটপৌরে ভাষা বলে দাবী করেছেন। ঢাকার রাজপথে নেমে থাকলে এই কথা উনি সম্ভবত বলতেন না।

আমি ইনাদের মতো ভাষাবিদ বা বাংলার বিশেষজ্ঞ নই ... নিতান্তই মিস্তিরি মানুষ। কিন্তু কে কীভাবে বাংলা বলবে বা লিখবে, তা ঠিক করে দিবেন উপর থেকে এই সব মহাজ্ঞানী মহাজনেরা, তার দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এইসব Language-nazi* দের হাত থেকে বাঁচতে চাই।

(Seinfeld এর দর্শকেরা Soup-Nazi-র কথা হয়তো মনে করতে পারবেন ...)

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

??? এর ছবি

একেবারেই।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ভাষা পরিবর্তনশীল। জীবন্ত প্রাণীর মতই এইটা সারাক্ষণ পারিপার্শ্বিকতার সাথে adapt করতেছে- যাদুঘরের কাঁচের বাক্সে আটকায় রাখার যেমন কোন রাস্তা নাই, ফর্মালিন দিয়া ভাষাকে এক জায়গায় স্থবির করে দেওয়াও সম্ভব না। সমাজ, সাধারণ মানুষ তার নিজের মতই এইটাকে ব্যবহার করবে।

কথা হইতেছে মিডিয়া সেইটাকে কিভাবে প্রতিফলন করবে? আমার তো মনে হয় রাস্তার ভাষা টিভি নাটকে ব্যবহার করায় কারো কোন ক্ষতি হয় নাই, বরং বাস্তবের প্রতিফলন হইছে। পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী যদি সে রকম ভাষাই 'সত্যি' হয়, তাইলে মিছামিছি কেন সুন্দর মেকী ভাষা ব্যবহার হবে? ঘরে বা বাইরে 'যাচ্ছে, খাচ্ছে' এইভাবে কথা বলে, কয়জনকে চিনি?

(তার চেয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত এখনকার টিভি নাটকের মানের উপরে। প্লট, চরিত্র, সংলাপ - সবই দুর্বল। আর অভিনয়ের কথা আর না বলি। চোখ ফিরায় নিতে হয় মাঝে মধ্যে, এমন অবস্থা। নতুন প্রজন্মের মামুনুর রশীদ, মমতাজউদ্দিন, সিডনি বা ফেরদৌসী - এরা কই? )

সংস্কৃতির যারা হুজুর সাজতে চান, তাদের কাছে 'যাইতেছে, খাইতেছে' আবার গ্রহণযোগ্য না। এই রকম লোকই মাকসুদ মিয়ার মুন্ডুপাত করছিলো কয়েক বছর আগে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়া এক্সপেরিমেন্ট করার জন্যে। সেইটা তারা করতে পারে। কিন্তু সরকারী ডিক্রি দিয়া সংস্কৃতি বা ভাষার বিশুদ্ধতা নির্ধারণ হয় না। (যদিও ফ্রান্সের আকাদেমি ফ্রঁসেজ এই চেষ্টাই চালাইতেছে গত দুইশো বছর ধইরা - ফরাসি ভাষার বিশুদ্ধতা, ইত্যাদি - কতখানি সফল হইছে, তা তারাই জানে।) সমাজ যত দ্রুত বদলায়, ভাষাতেও তার প্রতিফলন হইতে বাধ্য।

আর যারা গুলশান-বনানীর বাংলিশ বা উচ্চারণ নিয়া মাতম করে, তারা অহেতুক জুজুর ভয় দেখাইতেছে। গুলশান-বনানী কত বড়, আর তাদের অনুকরণে কথা বলে, এই রকম আলগা স্মার্ট পোলাপানই বা কয়টা? কয়েক লাখ হবে বড়জোর? ওদের সীমানার বাইরে বাংলা এখনো বাংলাই। সাধারণ পাড়ায় যান, ঢাকার বাইরে যান। ঐ রকম ঢং করে কেউই বাংলা বলে না, বললেও মানুষ হাসবে।

আমার তো মনে হয় যে বাংলিশ আর আজগুবি উচ্চারণের থেকে হিন্দি ভিডিও আর চ্যানেল সংস্কৃতি আরো বড় হুমকি। তাও ভালো, অর্ণব, হাবিবরা এসে শহুরে সংস্কৃতিতে বাংলা নতুন গানের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়াইছে। এক সময় তো হিন্দি গানের জ্বালায় টেকা যাইতো না। এখন মাইকে হিন্দির বদলে হাবিব বাজায়, এইটা আমার মনে হয় অনেক বড় জিনিস।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

রাগিব এর ছবি

আর যারা গুলশান-বনানীর বাংলিশ বা উচ্চারণ নিয়া মাতম করে, তারা অহেতুক জুজুর ভয় দেখাইতেছে। গুলশান-বনানী কত বড়, আর তাদের অনুকরণে কথা বলে, এই রকম আলগা স্মার্ট পোলাপানই বা কয়টা? কয়েক লাখ হবে বড়জোর? ওদের সীমানার বাইরে বাংলা এখনো বাংলাই।

পুরাপুরি একমত। গুলশান বনানী বা ধানমন্ডির ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মানুষ পুরা দেশের বাকি মানুষদের তুলনায় অতি নগন্য। দেশের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া গানের অ্যালবাম এখনো কিন্তু মমতাজেরই ... ওরকম ফ-কে ph করে উচ্চারণ করতে থাকা ভং ধরা গায়ক বা হিন্দি সিনেমার না।

(ফ বনাম ph নিয়ে ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা হয়েছিলো ... বহুদিন ধরে নাটক-টাটকে এরকম phul ধরণের উচ্চারণ দেখতাম, যেখানে আমার পরিচিত সবাই কিন্তু ful উচ্চারণ করতো। আমি নিজে জীবনে কোনোদিন phul, phol, phaki, এরকম উচ্চারণ করিনি ফুল, ফল ফাকি এসবকে। আমার বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটেশনাল লিঙ্গুইস্টিক্স বিভাগের এক চীনা ছাত্রের অনুরোধে এক এক্সপেরিমেন্টে গিয়েছিলাম ... ওর স্টুডিওতে কিছু বাংলা লেখা নির্দেশিত পন্থায় মাইক্রোফোনে পড়ার জন্য, যা ও পরে কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করবে। যাহোক, আমি মনের আনন্দে ফুল ফল বলছি লেখা থেকে, দেখি ব্যাটা ভুরু কুঁচকে আছে, পরে আমাকে প্রশ্ন করলো, তুমি ful, fol এরকম বলছো কেনো, phul, phol এর বদলে? ঘটনা হলো, পশ্চিমবঙ্গের কেউ এই শব্দগুলোর ফোনেটিক উচ্চারণ লিখে দিয়েছিলো, আর তাতেই অমিল খুঁজে পাচ্ছিলো।)

এখন প্রশ্ন হলো, হতে পারে প্রমিত বাংলাতে "phul" উচ্চারণ করতে বলা হয়েছে, কিন্তু তাই বলে গলার ভিতর থেকে আমাকে বাংলা বের করতে হবে? এর কোনোই প্রয়োজন আমি দেখি না। মানুষের accent এ কোনো সমস্যা আমি দেখি না। কুষ্টিয়া, নদীয়ার accent বা চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর accent এর মধ্যে কোনোটা ভালো, কোনোটা খারাপ -- এসবের কোনো অর্থ হয় না। বাংলা ভাষা কোনো কমিটি দিয়ে ডিজাইন করা না, বরং শুদ্ধভাষী সংস্কৃত বলা লোকদের চেয়ে অনেক দূরে থাকা আম-জনতার ভাষা হিসাবেই এর উৎপত্তি। ভাষাবিদ হিসাবে সৌমিত্র বা অন্যদের সেটা জানার কথা। সেই সংস্কৃত বলুয়া লোকজনও কিন্তু সেই সময় আম-জনতার ভাষা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বেড়াতো।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

রাগিব ভাই,
ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া আর অসহ্য উচ্চারণের মধ্যে কিন্তু কোন সরাসরি যোগ সূত্র নাই। বারো বছর সেই মিডিয়ামে পড়ার অভিজ্ঞতা থেকেই বলতেছি। আমার চেনা সব বন্ধু বান্ধব, সিনিয়র জুনিয়র পোলাপান, এমনকি ছোট ছোট মামাতো ভাইগুলাও ঠিক উচ্চারণই করে। হাতে গোনা দুয়েকজন পাবেন একটু ঢং বেশী লাগায়, এবং এই রকম পাবলিকের মেয়ে হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এইটা ঠিক যে ভাষায় ইংলিশ অনেক বেশী চলে আসে - সেইটার উৎস ভিন্ন। কিন্তু ন্যাকা, বিরক্তিকর বাংলা উচ্চারণের সূত্র অন্য কোথাও। আসলে যে এইটার কি উৎস, তা ভাষাতাত্বিকদের গবেষণার বিষয়! প্রাইভেট ইউনির পোলাপান? নাকি টেলিমিডিয়ার ন্যাকামি - কথায় কথায় বিজ্ঞাপনে 'হাই, বেবি' মারকা জিনিস? নাকি অন্য কিছু?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফীর সঙ্গে প্রায় একমত। 'প্রায়' বললাম, কারণ আলগা স্মার্ট পোলাপাইনের সংখ্যা কয়েক লাখ হবে বলে আমার মনে হয় না। ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা যদি এক কোটিও হয়, তো তাদের প্রতি একশোজনের কয়েকজন ডিজুস ভাষায় কথা বলে? বিশ্বাস হতে চায় না।

আর রাগিবের ফ বনাম ph বিষয়ে আমার বক্তব্য এরকম: কথ্য ভাষায় ফুলকে ful বলায় কোনও আপত্তি দেখি না। কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক কিছু গায়ক-গায়িকা (বিশেষত ব্যান্ডের) প্রমিত বাংলায় গান গাইবার সময় ভুলকে vul বলে। তা অন্তত আমার কানকে পীড়া দেয়। শুদ্ধ বাংলায় গাইতে চাও? শুদ্ধ উচ্চারণ করো। এখানে খিচুড়ির অবকাশ নেই।

আর মূল রচনা বিষয়ে বলি।
রক্ষণশীলরা ভাষার পরিবর্তনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করলেও এই পরিবর্তন ঠেকায়, কার সাধ্যি!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

??? এর ছবি

কিন্তু যে মিডিয়া নিজেকে জাতির কণ্ঠস্বর ভাবে, সে একটা "ইউনিফর্মিটি" প্রমোট করতেই চাইবে। এইটা তার রাজনীতি, এইটা রাষ্ট্রের রাজনীতিও। এ বিষয়ে কিছু কথাবার্তা বলবার চেষ্টা আমি করেছি আমার লেখায়। বিষয়টা খুব ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট না মনে হয়, কারণ যে মিডিয়া রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে বা সারভেইল্যান্সে থাকে এবং বিকশিত হয়, তার পক্ষে খুব বিপ্লবী হয়ে যাওয়া মুশকিল। তার একদিকে রাষ্ট্রের ম্যানুয়াল, অন্যদিকে স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তবতার দাবি। এই দুয়ের মাঝখানে একটা পথ বানিয়ে নেয়ার চেষ্টা থাকে তার হয়ত।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

কালোবিড়াল এর ছবি

ভাষার বিবর্তন তো স্পন্টেনাস, এই ব্যাপারে আমিও একমত। প্রব্লেমটা হয় তখনই যখন বাংলা ভাষার সাথে আলাদা একটা মাত্রা যোগ করা হয় একটু 'এক্সট্রা সফিস্টিকেসি' দেখানোর জন্য। বাংলা
নাটকে জামালউদ্দিন হোসেন এর মুখে বিশুদ্ধ বাংলা বা রওশন জামিলের মুখে আঞ্চলিক উচ্চারন-কোনোটাই শুনতে খারাপ লাগেনি বা বেমানান মনে হ্য় নি। সম্ভবত কৃত্রিম ভাষাভিত্তিক
সফিস্টিকেসি বাংলা নাটকে প্রথম আমদানী হয় বিটিভির টিপু সুলতান সিরিজে (ম্যাকগাইভার শেষ হওয়ার পর বাংলায় ডাব করা এই অখাদ্য ভারতীয় সিরিয়াল দেখানো শুরু হয়)। 'লন্ডনী কইন্যা' নাটকে বিপাশা হায়াত এর মুখে বিশেষ স্টাইলে 'লন্ডন' উচ্চারন শুনে আমার বমন করার ইচ্ছা হয়েছিল। বাংলা নাটকে এখন যে স্টাইলে কথাবার্তা চলে সেটা কোন প্রমিত বাংলা নাকি ধনীর দুলাল/দুলালীর এক্সট্রা সফিস্টিকেসি জানি না-কমেন্ট করা উচিত হবে না এই ব্যাপারে, কারন বাংলা নাটক দেখি না প্রায় পাঁচ বছর। পাঁচ বছর মনে হয় লম্বা সময়-ডিজুস নামের কি এক নতুন আল্ট্রাস্মার্ট প্রজন্মের কথা শুনি মাঝেমধ্যে।

??? এর ছবি

এই ব্লগটা একটু আপডেট করলাম।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

মুজিব মেহদী এর ছবি

প্রথাগত ধারণাটি হল, আঞ্চলিক বাংলা ততক্ষণ পর্যন্ত “বৈধ”, যতক্ষণ তা উদ্ধৃতি এবং বন্ধনীচিহ্নের মধ্যে থাকে। যেমন, সংলাপ আঞ্চলিক হতে পারে, যদি সেই সাহিত্য কোনো এক আঞ্চলিক জীবনযাত্রার আখ্যান হয়। কিন্তু কথকের বা বর্ণনাকারীর ভাষা হতে হবে অবশ্যই “মানভাষা”, যেহেতু তিনি সাহিত্যিক হিসাবে বাইডিফল্ট মধ্যবিত্ত। তিনি “শুদ্ধ” বাংলায় চাষাভুষার জীবন নিয়ে আলেখ্য রচনা করবেন, আর সততার খাতিরে চাষাভুষার মুখের ভাষা সেরকমই বহাল রাখবেন। তাতে আপত্তি নেই। আপত্তিটা তখনই বাঁধে যখন সাহিত্যের ন্যারেটর বা বর্ণনাকারীর ভাষা প্রমিত বাংলা থেকে বিচ্যুত হয়। এ যেন সাহিত্যিকের এবং সাহিত্য-বিচারকের কেন্দ্রীয় চরিত্র থেকে মধ্যবিত্তের আধিপত্যকে খারিজ করে দেওয়ার সামিল! সাহিত্যে আটপৌরে ভাষার ব্যবহার নিয়ে আপত্তির জায়গাটা, আমার ধারণা এখানেই।

উদ্ধৃতিটা অনেক বড়ো হয়ে গেল বলে দুঃখিত। কিন্তু একজন লেখক এবং পাঠক হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা এখানকার বক্তব্যের সাথে খুব যায়।
ধরেই নেয়া হয়েছে যে সাহিত্য করায় মধ্যবিত্তেরই একচেটিয়া অধিকার। এতদিন যাঁরা এরকমটা ভেবে এসেছেন, তাঁরা একঅর্থে বর্ণবাদীও। এরা বিপুলসংখ্যক সাহিত্যিক ও তাঁদের মূল্যবান সাহিত্যকর্মকে 'লোককবি' ও 'লোকসাহিত্য' আখ্যা দিয়ে তাঁদের ও তাঁদের লেখালেখিকে হেয় প্রতিপন্ন করে এসেছেন। যেটা মোটের উপর বেঠিক। পক্ষপাতিত্বপূর্ণ এই বিবেচনার কারণেই আমরা লালন ফকির, হাছন রাজা, বিজয় সরকার, রাধারমন, উকিল মুন্সি, রশিদউদ্দিন, জালালউদ্দিন খাঁ প্রমুখকে সাহিত্যের মূলধারার বাইরের লোক ঠাউরে আমাদের সাহিত্য বিচারের বাইরে রেখে এসেছি। একান্ত বিচার করতে হলে এর জন্য ব্যবহার করেছি আলাদা মানদণ্ড। আর এর মূল কারণ ছিল তাঁদের ব্যবহৃত ভাষা।

অধ্যাপক-পণ্ডিতদের এরূপ মধ্যবিত্তপনা আজকাল প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এসব দৃষ্টিভঙ্গিওয়ালারা প্রায় ধ্বসে গেলেন বলে।

....................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

??? এর ছবি

আচ্ছা, ভাষার বিবর্তনকে আমরা সবাই যে মোটামুটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং নৈর্ব্যক্তিক ভাবতেছি, আমিও আমার লেখায় এরকম লিখলাম, তার কতটুকু সত্য? কখনো কখনো, ব্যক্তিও তো সমষ্টির ভাষায় বিপুল প্রভাব রাখতে পারেন। প্রমিত বাংলা যে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে দাঁড়াল তার কারণ তো অতি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। বা, আরো আগের কথাই বলি, প্রমিত বাংলার ফাউন্ডেশন হয়েছে বিদ্যাসাগরের হাতে। সেই একই সময় "হুতোমি" বাংলাও ছিল, যে ভাষায় "হুতোম প্যাঁচার নকশা" এবং "আলালের ঘরের দুলাল" রচিত হয়েছে"। কিন্তু বিদ্যাসাগরের লেখালেখির সামাজিক প্রতিপত্তি ঐ সব রচনা থেকে কিছু বেশি ছিল। কালীপ্রসন্ন সিংহ বা ঈশ্বরগুপ্তের লেখা মূলত কলকাতার আটপৌরে ভাষার ডেমনস্ট্রেশন। সাহিত্যিক মূল্যে খাটো হওয়ায় তাদের গদ্য বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথের গদ্যের কাছে হেরে গেছে।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার মনে হয় মান বাংলাটা পরিবর্তনের অনিবার্য একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার প্রধান কারণ হলো এখন আর ভাষাবিদ কিংবা সাহিত্যিকরা ভাষার নিয়ন্ত্রণ করেন না। সাধারণ মানুষও এর নিয়ন্ত্রণ করেন। স্বাধীনতার পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের যে গণমিশ্রণ তৈরি হয়েছে তাতে বিশেষত ঢাকা শহরে একটা আলাদা কমিউনিকেটিভ ভোকাবলারিও তৈরি হয়েছে। এতে শুধু উচ্চারণ সহজীকরণ নয় বরং প্রচুর শব্দ এসে যোগ হয়েছে যা মান বাংলার ডিকশনারিতে নেই
এবং এর প্রভাব আস্তে আস্তে প্রতিফলিত হচ্ছে লিখিত ও দৃশ্য সাহিত্যে

সৈয়দ ফয়সল আহমেদ এর ছবি

আলোচনা ও মতামত পড়তে ভালো লাগছে। ভাষার গতিপথ কেউ আটকাতে পারবে না, কখনো পারেনি। সময়ের সাথে সাথে এর পরিবর্তন হবেই। কতগুলো বিষয় সম্পর্কে একমত হওয়ার প্রক্রিয়া কি হবে?
১।বর্তমানে মান ভাষা তাহলে কি হবে?
২।আলোচনায় ভাষার সাথে উচ্চারণের প্রসঙ্গও এসেছে। যেসকল শব্দের উচ্চারণ নিয়ে মতপার্থক্য আছে সেগুলোর বিষয়ে সমাধানের পথ কি?
৩।মান ভাষা চর্চায় মিডিয়ার ভূমিকা কী হতে পারে?
৪।নাটকে, বিজ্ঞাপনে ইংলিশ উচ্চারণে বাংলা বলা, ইংরেজী বর্ণে বাংলা লেখা বা বর্গীয় ধ্বণীর সঠিক উচ্চারণ না জানাকেই আধুনিকতা হিসেবে ধরে নেব?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।