যারা বাদুড় (মানব) সম্প্রদায়...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১২/১২/২০১২ - ৯:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পিচ্চিকালে গাছ থেকে বাদুড় ঝোলা দেখতে যাওয়া আমার অন্যতম পছন্দের কাজ ছিল ।প্রায় সন্ধ্যায় সেজ মামার হাত ধরে পদ্মা নদীর পাড়ে, শাহ্‌ মখদুম কলেজের ধারে যে বিশাল প্রাচীন বটগাছটা ছিল,সেখানে বাদুড় ঝোলা দেখতে যেতাম। সেইসব সন্ধ্যায় কালো কালো বাদুড়ের উল্টামুখো ঝুলে থাকা দেখে আমি খুব রোমাঞ্চিত হতাম। কি ভীষণ রহস্যময় মনে হত সেইসব সন্ধ্যাগুলো। তারপর একদিন একটা গল্প পড়লাম বাদুড়দের নিয়ে। একটি রুপকধর্মী গল্প ছিল সেটা। গল্পটি বুঝার বয়স তখন হয়নি আমার তাই গল্পটি পড়ে পুরা বাদুড়জাত কেই খারাপ ভেবে বসলাম। ব্যাস,হয়ে গেল বাদুড় দেখার আড়ি।

কয়েক বছর পড়ে যখন যে কোন ঘটনা বিশ্লেষণ করতে শিখেছি অল্পবিস্তর, বুঝলাম বাদুড় নামক নিতান্তই নিরীহ প্রানিটির সাথে বড্ডও কঠোর আচরন করেছিলাম সে সময়। আহা সেই বয়সে রীতিমত মুগ্ধভক্ত ছিলাম আমি তাদের। আমার অপরিপক্কতার কারনে বাদুড়েরা মনে হয় রাজশাহীতে তাদের বাচ্চা ভক্তটিকে হারিয়েছিল।

সে যাই হোক, বাদুড়ের প্রতি জমে থাকা ক্ষোভ তো দূর হয়েছিল, কিন্তু সেই সাথে একটি বাস্তব সত্য আবিস্কার করেছিলাম মানুষদের নিয়ে। সেই সত্যিটুকু বলার আগে বাদুড়ের গল্পটা বলে নেই। গল্পটি কার লেখা বা কোথায় পড়েছিলাম আজ আর মনে নেই, হুবহু গল্পটাও মনে নেই, যতটুকু মনে পড়ে তাতে গল্পটি খানিকটা এরকম ছিল-


সে অনেকদিন আগের কথা। তখন চারিদিকে শুধু শান্তি আর শান্তি বিরাজ করত। এমন সময়ে হঠাৎ একদিন শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে পশুকুল আর পক্ষী কুলের বিশাল ক্যাচাল বাধল। ক্যাচাল থেকে রীতিমত যুদ্ধ লাগার উপক্রম। দুই পক্ষের দাবি তারাই শ্রেষ্ঠ। কেউ কাউকে ছাড় দিবেনা, তো আর কি, মীমাংসা হবে যুদ্ধের ময়দানে। দুই দলেই সাজ সাজ রব পড়ে গেল। এক নদীর দুই পাড়ে দুই দলের শিবির তৈরি হল। পশুরা সব দলে দলে পশু শিবিরে যোগদান করলো, আর পাখিরা পাখি শিবিরে। এই যুদ্ধের ডামাডোলে শুধু বাদুড় প্রজাতি কোন দলে যোগদান করলো না, তারা অপেক্ষা করে রইল যুদ্ধের ভাবগতিক বুঝার।

কিছুদিন যাবার পর যুদ্ধের পাল্লা পশুকুলের দিকে হেলে পড়ল। প্রচুর পাখি মারা পড়তে লাগল, ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছিল পশুদের জয় কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার। বাদুড়েরা দেখল এই সুযোগ। অবশেষে এক শুভক্ষনে বাদুড়ের রাজা পশু সর্দারের নিকট হাজির হল। অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে হাত কচলা কচলির পর মূল বক্তব্য যা শোনা গেল, সেটা ছিল- বাদুড়েরা পশু সমাজে যোগদান করে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে চায়। পশু সর্দার তো অবাক, বলে কি বাদুড়! বাদুড় হল পক্ষী, পক্ষীদের মত উড়তে পারে, সে কেন পশুদের দলে যোগ দিবে? পশু সর্দারের অভিযোগ শুনে বাদুড় রাজ এক গাল হাসল- এই কথা, এখুনি যুক্তি দিয়ে তাদের পশু হবার দাবি জোরদার করবে। বাদুড়ের যুক্তি হল বাদুড় পাখিদের মত ডিম পারেনা, ডিমে তা দেয়না। বাদুড় স্তন্যপায়ী প্রাণী পশুদের মতই। আর তাছাড়া বাদুড় যেহুতু উড়তেও পারে যখন তখন পাখিদের দুর্বলতার খবরও এনে দিতে পারবে পশুদের। পশু সর্দার সাত পাঁচ ভেবে রাজি হল।

এর কিছুদিনের মধ্যেই আবার হঠাৎ পাখিরা সংগঠিত হল পশুদের বিরুদ্ধে, এবার যুদ্ধের পাল্লা পাখিদের দিকে হেলে পড়ল। বাদুড় তো দেখল মহা বিপদ, সাথে সাথে বাদুড়রাজ এবার পাখি সম্রাটের কাছে গেল। আবার তার সেই ইনিয়ে বিনিয়ে হাত কচলাকচলি, দাবি একটাই পাখিদের দলে যোগ দিতে চায়, বাদুড়দের নাকি ভুল হয়ে গেছিল। তারা তো আসলে পাখিই- উড়তে পারে যখন তখন। যাই হোক, সাত পাঁচ ভেবে পাখি সম্রাট বাদুড়দের দলে নিল।

দিন কেটে যায়, যুদ্ধ আর থামেনা, কোন মীমাংসা হয়না। মাঝে মাঝে সন্ধির প্রস্তাব আসে দুই পক্ষ থেকেই কিন্তু কার যেন অজানা প্ররোচনায় ভেঙে যায়। আসলে ততদিনে দুই দলের রাজা বুঝতে পেরেছে, শ্রেষ্ঠত্বের দাবি ছেড়ে দিয়ে মিলেমিশে থাকাটাই কাজের কথা। কিন্তু ইতিমধ্যে সুবিধাবাদী দুই দল তৈরি হয়ে গেছে দুই পক্ষেই আর তাদের ইন্ধনদাতা হল বাদুড়েরা। দুই পক্ষের এই যুদ্ধের মধ্যে ফাঁকতাল দিয়ে তারা তাদের আখের গুছাচ্ছিল।

গল্পের শেষে পশুকুল এবং পাখিকুল তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং মিলে মিশে থাকা শুরু করে। এবং সবার আগে তারা বাদুড় এবং সুবিধাবাদী সকল পশু পাখিদের, গোত্র ছাড়া করে। সেই থেকে বাদুড় পাখিদের দলেও নাই, পশুদের দলেও নাই।

এই গল্পের বাদুড়দের মত, আজকাল চারিদিকে শুধু বাদুড় সম্প্রদায়ের মানুষদের-প্রচণ্ড স্বার্থপর, সুবিধাবাদী মানুষদের দেখতে পাই আমি।

বছর কয়েক আগে দাদা বাড়ি গিয়ে বেশ কিছুদিন ছিলাম। চাঁপাই নবাবগঞ্জের একটি শান্ত মিষ্টি গ্রাম। গ্রামের পরিবেশ ভারি চমৎকার। সময় কাটানোর জন্য সারাদিন এদিক সেদিক একা একাই ঘুরে বেড়াতাম। কখনও বা গ্রাম সম্পর্কিত চাচা, দাদা, চাচী বা দাদীর সাথে গল্প জুড়ে দিতাম। ঘুরতে ঘুরতে মনে হল, সময়টা কাজে লাগায়। এরপর সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে মুরব্বী যারা উনাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, যুদ্ধকালীন সময়ের গল্প শুনতে শুরু করলাম।

সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় লক্ষ্য করেছিলাম সেটা হল গ্রামের মোটামটি সবাই বেশ ধার্মিক হলেও তারা কেউ জামাত শিবির পছন্দ করেননা। কেউ কেউ তো জামাত শিবিরের কথা তোলা মাত্র শব্দ করে থুতু ফেলেছিলেন মাটিতে। কেউ ভুলে যাননি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জামাতিদের ভূমিকা। খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন,কিছুটা অবাকও, আসলেই কি পুরা গ্রামে জামাতি কেউ নাই?

কৌতূহলী হওয়াতে বড় চাচার কাছে জানতে চাইলাম। উনি বললেন গ্রামে মাত্র দুই ঘর মানুষ জামাত ইসলামী সাপোর্ট করে। একজন কিছুটা প্রভাবশালী, মসজিদে সালিশে আসে, ভাল চাঁদা দেয়, কেউ তাকে পছন্দ করেনা কিন্তু সামনা সামনি কিছু বলেনা। আর অন্য আরেকটি পরিবার তাদের চামচা। শুনার সাথে সাথে মাথায় হিসেব করতে বসেছিলাম গ্রামে যদি মোট ১০০ ঘর মানুষ বসবাস করে (১০০ ঘরের বেশী ঘর মানুষ আছে, আমি ১০০ পর্যন্ত গুনে ইস্তফা দিয়েছিলাম )তাহলে তাদের দুই ঘর মানে মাত্র ২% মানুষ জামাত শিবির সাপোর্ট করে পুরো একটি গ্রামে।

দাদা বাড়ি থেকে ফেরার সময় একটি পরিকল্পনা নিয়ে ফিরেছিলাম, সেটি হল রাজশাহীতে আমি যে পাড়ায় থাকি তার হিসেব নিকেশ। আমার বহুদিনের পর্যবেক্ষণ বলে সব মিলিয়ে তিন বাড়ির লোকজন জামাত বা শিবিরের দলের ভক্ত আমাদের পাড়াতে, সেখানে কম করেও দেড়শ পরিবারের বসবাস। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রেও সর্ব মোট ২-৩ % লোক জামাত-শিবিরের সাপোর্টার। সেদিন সচলে পড়লাম, ফেসবুকেও দেখলাম এক রিকশাওয়ালা নাকি জামাতি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীপক্ষ পরিচয় পেয়ে এক যাত্রী কে রিকশা থেকে নামিয়ে দিয়েছেন।

এখন আমার প্রশ্ন হল একদম সাধারন মানুষের মনোভাব যদি জামাতিদের সম্পর্কে এই হয়ে থাকে তাহলে জামাত শিবিরের সাপোর্টার কারা এবং সাধারন মানুষের ঘৃণা সত্ত্বেও কিভাবে জামাত এত বাড় বাড়তে পারে?

আচ্ছা ধরলাম সারা দেশে সব মিলিয়ে ১০% মানুষ জামাতের সাপোর্টার।তাহলেও বাকি ৯০% মানুষ ধার্মিক হোক বা না হোক জামাতিদের সাপোর্ট করেনা। হয়ত তারা ধার্মিক তাই ধর্মের ভয়ে সরাসরি বিরুদ্ধচারন করেনা কিন্তু সক্রিয় সাপোর্ট করে বলেও তো মনে হচ্ছেনা। [যদিও এটি কোন সঠিক পরিসংখ্যান নয়, আমার পরিচিত দুই এলাকার মানুষদের উপর ভিত্তি করে এই লেখাটি।] তাহলে এই ৯০ভাগ মানুষ কেন বাকি ১০ ভাগ মানুষকে প্রতিহত করতে পারছেনা?

৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের অস্ত্র ছিলনা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছিলনা, খাদ্য ছিলনা, আশ্রয় ছিলনা, নিরাপত্তা ছিলনা,একবুক অনিশ্চয়তা ছিল আর পাকি হারামিদের পাশাপাশি ছিল রাজাকার, আলবদরের মত দেশীয় বেঈমানেরা। এত এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা বীরের মত বাংলাদেশ ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। তখন পারলে এখন নয় কেন???

৮৯এর স্বৈরাচার শাসকের পতনকালে আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল এক হয়ে প্রতিবাদ করেছিল, আর এইভাবেই সাধারন মানুষের সক্রিয় সমর্থনে স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল আর গনতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিল। তখনও কিছু মানুষ চায়নি এরশাদের পতন। কিন্তু তবুও সম্মিলিত চাওয়ার কাছে বিরুদ্ধপক্ষীয় অবরোধ কাজে লাগেনি। আবারো আমার প্রশ্ন তখন পারলে কেন এখন নয়???

আমার মতে,এখন পারছেনা তার কারন হল বাদুড় সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের সবার ভিতরে বসবাস করে, আর সমাজে দিন দিন এইসব বাদুড়রুপী, সুবিধাবাদী, নিজ আখের গোছান মানুষের সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে ।

ছোটতে পাড়ার সেই জামাতি তিন পরিবারের এক পরিবারের মেয়ে আমার খেলার সাথীদের একজন ছিল। সেই সুবাদে মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যেতাম। তার বড় ভাই ছাত্রশিবির করত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন শিবিরদের ভয়ংকর তাণ্ডব, মাঝে মাঝে শুনতে পাই আজ এর হাতের রগ কাটছে তো কাল ওর পায়ের রগ, সেই কাটাও নাকি এত ভয়ংকর যে ক্ষতিগ্রস্ত হাত অথবা পা আর কোনদিন স্বাভাবিক হয়না। এই সব গল্প শুনে শুনে ভয় পেতাম খুব আর প্রচণ্ড ঘৃণা হত এমন সব মানুষদের। আমার সেই খেলার সাথীর কাছে শুনতে পেতাম তার ভাই নাকি শিবিরের সক্রিয় সদস্য, অনেক টাকা পায় শিবির করে বলে, আর ভার্সিটি পাশ করলেই নাকি খুব ভালো চাকরি। বুঝতে শেখার পর থেকে সেই পরিবারের ভালো দুই একজন মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকলেও বাকিদের সযত্নে এড়িয়ে চলেছি। ওর বলা কথাগুলো মাথায় ছিল,পরবর্তীতে মিলিয়ে দেখেছি, আসলেই খুব ভালো সরকারী চাকরি করে তার সেই ভাই,নিজের যোগ্যতায় নয়, শিবিরের ক্যাডার হবার যোগ্যতায় !!

এতখানি ক্ষমতা কিভাবে পায় জামাত-শিবিরের দল!!!??? যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পরে তাদের মাটিতে মিশে যাবার কথা ছিল, যেখানে লেজ গুটিয়ে তাদের পালানর কথা ছিল, যেখানে মানুষের ঘৃণায় তাদের ডুবে যাবার কথা ছিল, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের অস্তিত্ব বহু আগেই বিলোপ হবার কথা ছিল,সেখানে আজ বিজয়ের মাসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য তাদের ডাকা হরতালে-অবরোধে গাড়ি পুড়ে, মানুষজন ভয়ে কাজে যেতে পারেনা,অসহায় মানুষ মারা যায়, তাদের তাণ্ডবে নরক গুলজার হয়...কিভাবে এটা সম্ভব হয়???

সম্ভব হয়েছে, সম্ভব হচ্ছে কারন আমাদের চারিপাশে অসংখ্য বাদুড়রুপী মানুষের বসবাস, যারা প্রচণ্ড স্বার্থপর, সুবিধাবাদী, ক্ষমতালোভী। বঙ্গবন্ধু তাই জামাতিদের নিষিদ্ধ করলেও এই ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল আর তাদের নেতারাই জামাতিদের গর্ত থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসে ক্ষমতার লোভে, গদির লোভে। আর আমরা যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত তারাও যে এক একজন বাদুড়, তাই তারাও নীরবে এইসব রাজনৈতিক মানুষদের এই ভয়ংকর কর্মকাণ্ডকে, সুবিধাবাদী আচরণকে, সম্মতি দিয়ে চলি ব্যক্তি স্বার্থের জন্য। দল ক্ষমতায় গেলে ব্যক্তি আমি লাভবান হব, দল ক্ষমতায় গেলে আমার পকেট ভারী হবে,এইটাই হল মুখ্য বিষয়। একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, ত্রিশ লক্ষ শহীদ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাকি সব-সব কিছুই গৌণ। দলের ক্ষমতায়নের আড়ালে যে জামাত-শিবির নামক নর্দমার কীটেরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে এটি কোন বিষয়ই নয়।

সেদিন ছোট ভাইয়ের কাছে শুনলাম তার এক বন্ধুর পরিচিত একজন নাকি শিবিরে যোগ দিবে, কারন শিবির করলে মেলা সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এই আসলে বর্তমান সমাজের অবস্থা। আর এভাবেই জামাত শিবির সমাজের অসংখ্য বাদুড় সম্প্রদায়ী মানুষদের সুযোগ নিয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে বলে জামাতিরা তালেবানদের থেকে অস্ত্র সস্ত্র, টাকা পয়সা পেয়ে থাকে,সত্যি মিথ্যা জানিনা, কিন্তু মুল কথাটা হল তাদের সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। ডাকাতেরা যেখানে দরজা ভেঙ্গেও অনেক সময় ডাকাতি করে সেখানে আমরা দরজা জানালা খোলা রেখে তাদের সাদরে আমন্ত্রন জানিয়েছি!

বিভিন্ন সময়ে জামাতিদের বিভিন্ন কর্ম এবং পরবর্তীতে সেই পক্ষীয় সাফাই নিয়ে যখন ফেসবুক, ব্লগে ঝড় উঠে বুঝতে পারি আমরা এইসব ভীষণ মেধাবী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক কিংবা ভালো চাকুরী করা বিভিন্ন পেশার মানুষেরা আসলে বেশিরভাগই বাদুড়রুপী মানুষ!!

আর তাই, জামাত যখন মাথা তুলে উঠতে চাইবে বাদুড় প্রজাতির মানুষেরা তাকে উঠতে দিবে, জামাত যখন কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জোট বাঁধবে বাদুড় প্রজাতির মানুষেরা তাতে সম্মতি দিবে,জামাত যখন বোমা ফাটাবে, গ্রেনেড ফাটাবে, হরতাল দিবে, অবরোধ দিবে বাদুড় প্রজাতির মানুষেরা তাদের সমর্থন করবে, জামাত যখন পুলিশ পিটাবে তারা বসে বসে তালিয়া বাজাবে। শুধু কোন এক "সাধারন মানুষ" রিকশাওয়ালা কোন এক জামাতিকে রিকশা থেকে নেমে যেতে বলার সাহস দেখাবেন... তাই আর অন্য কোন মানুষ নয় শুধু কোন এক "সাধারন মানুষ" রিকশাওয়ালা বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। শুধু কোন গ্রামের বয়স্ক সহজ সরল চাষি, কুলি, মজুর এই সব মানুষদের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ জেগে থাকবে হৃদয়ে, শুধু অল্প কিছু মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে অবিচল থাকবেন, শুধু অল্প কিছু বুদ্ধিজীবীরা মৌলবাদীদের আক্রমনের পরোয়া না করে লড়ে যাবেন আর বাকিরা আরও বেশী করে, আরও দ্রুতগতিতে বাদুড় প্রজাতির মানুষে পরিণত হতে থাকবে।

[এই লেখাটি একান্তই নিজস্ব চিন্তা ভাবনার ফলাফল। বিশ্লেষণে অথবা অন্যকোথাও কোন ভুল হয়ে থাকলে ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। ]


মন্তব্য

আমার আমি এর ছবি

আপনার লেখা এত প্রাণবন্ত!!! আসলেই চারপাশে বাদুড় শ্রেণীর মানুষ দেখতে দেখতে আমিও ক্লান্ত। গুরু গুরু

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। এই সব বাদুড় সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা। যদি গল্পের সেই পশু প্রজাতি আর পাখি প্রজাতির মত আমরাও বাদুড় প্রজাতির মানুষদের সম্পূর্ণ রুপে বর্জন করতে পারতাম। সমস্যা হল এদের সংখ্যা এত বেশী যে শেষে না ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়! মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

রংতুলি এর ছবি

চলুক চলুক

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি

উত্তম জাঝা!

চরম সত্য কথা এবং উপলব্ধি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিবির করত অধিকাংশই দেখি এখন প্রশাসনে কোন না কোন ভাল পোষ্ট দখল করে আছে, আর সেটাও প্রলুদ্ধ করে নতুনদের। আর আছে বাদুড় শিক্ষকেরা, তারাই যোগায় ইন্ধন। আমার স্কুলটা পর্যন্ত চলে গেছে জামাতের দখলে, বায়োলজি আর ফিজিক্স নিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকেরা জামাত কর, চিন্তা করা যায়!!!!

সজাগ থাকুন, সজাগ রাখুন।

( সেই নিরীহ বাদুড়গুলোর কথা মনে পড়ে গেল, নদীর তীরে রিক্সায় যাবার সময় মুখ তুলে উপরের দিকে তাকাতাম না, এক বন্ধুর মাথায় একবার বাদুড় ইয়ে করে দিয়েছিল কিনা খাইছে )

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এটাই তো সমস্যা অনুদা। বেশিরভাগ মানুষ এত বেশী সুবিধাবাদী আর স্বার্থপর !! উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকেরা তো জামাত করবেই, নিজের আখের গোছাতে হবেনা। খুবই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আশে পাশে এমন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বড্ডও ভয় হয় আরও কি যে দেখতে হবে ভবিষ্যতে। মন খারাপ
রাজশাহী ভার্সিটির অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। আপনার স্কুলটা যেহুতু ভার্সিটির ভিতরে তাই জামাত সহজেই দখল করতে পেরেছে। এই ধরনের ঘটনা শুনলে এত খারাপ লাগে, প্রচণ্ড রাগ হয়।

আমাদের সবারই সজাগ থাকতে হবে, সজাগ রাখতে হবে!

(বাদুড়ের ইয়ে হো হো হো )

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

১১৫ বছর আগে ব্রাম স্টোকার কিভাবে এই অমানুষগুলোকে কল্পনা করে ড্রাকুলা এবং ভ্যাম্পায়ারের গল্প লিখেছিলো সেটা ভেবেই অবাক হতে হয়। যদিও ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ারকে জামাত-শিবিরের নৃশংসতার তুলনায় ফেরেস্তা বলেই মনে হয়।

আপনার লেখা নিয়ে নতুন করে কিছু আর বলবোনা। লেখালেখি না থামুক।

ফারাসাত

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা কিন্তু ধারনা করা হয়ে থাকে কাউন্ট ভ্লাদ দ্য ইমপেলারের বাস্তব নৃশংসতার ঘটনা অবলম্বন করে লেখা হয়েছিল। সে যাই হোক, জামাত-শিবিরের নৃশংসতা আসলেই কোন অংশেই ড্রাকুলার চেয়ে কম নয় বরং বেশী বলা যায়।

এই সব বাদুড় সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা। যদি গল্পের সেই পশু প্রজাতি আর পাখি প্রজাতির মত আমরাও বাদুড় প্রজাতির মানুষদের সম্পূর্ণ রুপে বর্জন করতে পারতাম। সমস্যা হল এদের সংখ্যা এত বেশী যে শেষে না ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয় !

আমরা প্রত্যেকে যদি ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে জাতীয় স্বার্থ দেখি তাহলেই কিন্তু হয়।

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আমার এইসব লেখালেখি প্রচেষ্টা পড়ার জন্য। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ, সুন্দর গুছিয়ে লেখার জন্য।
এই বাদুড় শ্রেণীর মানুষেরা আমার-আপনার পরিবারের কাছাকছিই আছেন। আমরা অনেকেই চক্ষুলজ্জার খাতিরে এদেরকে কিছু বলিনা।
আর ঐযে বললেন সুবিধাবাদী চরিত্রের কারনেই এরা বাদুড়শ্রেণীর মানুষ। হ্যাঁ, বাদুড়শ্রেণীর মানুষেরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে। এরা আমাদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়েই এ সুযোগ তৈরি করে নিয়েছে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এই সব বাদুড় সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্যই তো আজ দেশের এই অবস্থা। যদি গল্পের সেই পশু প্রজাতি আর পাখি প্রজাতির মত আমরাও বাদুড় প্রজাতির মানুষদের সম্পূর্ণ রুপে বর্জন করতে পারতাম। সমস্যা হল এদের সংখ্যা এত বেশী যে শেষে না ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয় !

আমরা প্রত্যেকে যদি ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে জাতীয় স্বার্থ দেখি তাহলেই কিন্তু হয়।
কেন যে আমরা লোভের কাছে মাথা নত করি??? কেন যে আমরা এত দুর্বল???

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ভাবনা এর ছবি

গুরু গুরু
আপনাকে ধন্যবাদ, সুন্দর গুছিয়ে লেখার জন্য।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।