আসলে সে সব ছিল নিতান্তই বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়

কারুবাসনা এর ছবি
লিখেছেন কারুবাসনা (তারিখ: সোম, ১৪/০৭/২০০৮ - ১০:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এমনি এমনি বাড়ি গেলাম। বিকেলে প্রতনুকে খুঁজতে এক রথের মেলার জনস্রোতে। দুইপাশে মানুষ সরে সরে যাচ্ছে, ভীড় এগোয় না, বিহ্বলতা বাড়ে। চারপাশে দড়িতে প্ল্যাস্টিকের পুতুল, বেলুনে-পিস্তলে বিবিধ জুয়ার উপকরণ। আর সারা ভীড় জুড়ে আমার এক পরিচিত কিশোরী গন্ধ।

গন্ধটা ফিরে এল আবার। প্রতনু এই ঘরে পড়ায়, এখন কেবল রবি। একঝাঁক পিচ্চি।১১-১২ ক্লাস, তারপর কিছুতেই পড়াতে রাজি হয় না সে। অনার্স পড়ানো ভারী ঝক্কির! তবু তাদের সকলের সাথেই যোগাযোগ থাকে, ওই ঘরেই। সারা সপ্তাহ সে থাকে মুর্শিদাবাদে। ওখানকার একটা কলেজে সে পড়ায়। রবিবার চুঁচুড়ায়। ব্যাচের পর ব্যাচ, কিশোরী গন্ধ।

আমি নতুন কিছু লিখলে রবিবার যাই, শোনাতে সেই গন্ধে বসে পড়ি, পাতা উল্টাই, আর শীতল বোধ করি। পিচ্চিদের অনেককেই আমি চিনি, ছোট শহরে যা হয়। এখনো নাকি তারা সকলেই আমাকে চেনে। ওই ঘরে আটকানো আমার আঁকা এক বিশাল ক্যানভাসের সূত্রে।

মেলায় দাঁড়িয়ে আমি পুতুল খুঁজি, আর কাঠের কাজ, তালপাতার সেলাই। পাইনা। রঙিন ছিটকাপড় মেলানো আসন কিনি কেয়েকটা। আর চারপাশে সব যেন চেনা মুখ দেখি। পিচ্চি মেয়েগুলো মেলায় এসেছে তাদের পিচ্চি কোলে নিয়ে। এরা কিছুতেই গন্ধটা হারাতে চায়নি। আমার মজা লাগে।

বারদুয়েক গেছি স্কুলটায়, ঘুটেবাজার ছাড়িয়ে। অভিজিত বারুইদের বাড়ি ছিল ঠিক গায়ে গায়ে। গেছি। কুট্টিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি কয়েকবার, সাইকেলের রড তা মনে রাখলেও রাখতে পারে। আসলে কাদার মত নীল রং আর সাদা ব্লাউজের কেমন জানি একটা গন্ধ আছে, নেলপালিশের মত। সারা রথতলা জুড়ে আছে গন্ধটা, কিশোরীদের দ্বিপ্রাহরিক হৈচৈ, আর বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যাওয়ার পর থেকে যেভাবে নীল হয়ে যায় রাস্তা ঘাট, আর কিছু প্রাইভেট টিউটরের ১৪ বাই ১২ তা ঠিক মত দেখা হয়ে উঠলনা কোন দিন, একটু আপসোস হয়।

আমি মাঝেমাঝে ছেলেবেলায় যাই। হাতদিয়ে ছুঁয়ে-টুঁয়ে দেখি সব ঠিকঠাক আছে কি না। আসলে সে রকম সময় এলে তুলোরা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে, উড়ে উড়ে যায়। যেন একেকটা খালি নীল-সাদা ট্রেন উড়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে, দেল প্যালাইডুয়ার স্টেশনের মত। আকাশে দূর জেটপ্লেনের রেখা আমি আর এখন তাকিয়ে দেখিনা, সব নীল-সাদা একই গন্ধে সাদা-মাটা হয়ে পড়ে ছেলেবেলায় পৌঁছে গেলে।


মন্তব্য

শ্যাজা এর ছবি

হুমমম..

কিশোরীগন্ধটা বেশি বেশি পাওয়া যায় বলেই মোবাইলে চার্জ থাকে না হুঁ?!!
অবশ্য মাঝে মাঝে একটু গন্ধ পাওয়া ভাল। নইলে সব কেমন পানসে পানসে লাগে।।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

কারুবাসনা এর ছবি

এর সাথে মোবাইলের যোগ কোথায়? বুঝিয়ে বল।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে ঘুরে আসা ভালো,
পুরনো গন্ধ নতুন করে চিনে আসা ভালো।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

পলাশ দত্ত এর ছবি

ছোটোবেলায় ঘুরে আসা ভালো? অতীতে ঘুরে আসা ভালো? তাও যদি হয় নিজেকে জড়িয়ে থাকা অতীত?

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিজের অতীতে যেতে ভয় পাই। তবুও অতীত- নিজের কৈশোরের অতীত- প্রায় সবসময়ই আমাকে হন্ট করে।

আপনার লেখায় এই হন্টনেসের, এই ব্যথিত হওয়ার গন্ধটা পেয়েছি।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

কারুবাসনা এর ছবি

হ্যাঁ এটা বেশ যন্ত্রনার।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি মাঝেমাঝে ছেলেবেলায় যাই। হাতদিয়ে ছুঁয়ে-টুঁয়ে দেখি সব ঠিকঠাক আছে কি না। আসলে সে রকম সময় এলে তুলোরা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে, উড়ে উড়ে যায়। যেন একেকটা খালি নীল-সাদা ট্রেন উড়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে, দেল প্যালাইডুয়ার স্টেশনের মত। আকাশে দূর জেটপ্লেনের রেখা আমি আর এখন তাকিয়ে দেখিনা, সব নীল-সাদা একই গন্ধে সাদা-মাটা হয়ে পড়ে ছেলেবেলায় পৌঁছে গেলে।

কী ভয়ঙ্কর! আমি ছেলেবেলায় যেতে পারি না, যেতে গেলেই আলো-আঁধারির এক সুড়ঙ্গযাত্রার ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে ছেঁড়া-ছেঁড়া দৃশ্য ভেসে যায়। ওই আমি বাড়ির প্রান্তে পরিত্যক্ত কুয়ার দিকে ঝুঁকে ভয় পাচ্ছি! ওই সন্ধ্যাবেলায় হুজুর এসেছে আরবি পড়াতে, আর আমি দূরের দেয়ালে ছায়াদের নড়াচড়া দেখে কেঁপে উঠছি। ওই যে, মা গোসল করছে আর আমি টিনের ফুটো দিয়ে চোখ পেতেছি। মা বলছে, বাবু জহরে-কহরে মরবি। তারপর বেরিয়ে এসে আমাকেও চুবিয়ে নিয়ে বারান্দায় রাখা চৌকির ওপর বসিয়ে ডিম ভর্তা দিয়ে গরম ভাত ঘি মাখিয়ে খাওয়াল। ওই তো, আমার গোলাপি মা আমাকে কোলে নিয়ে বসেছে...

বেশিদূর যাওয়া যায় না সেখানে....

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জিফরান খালেদ এর ছবি

ভাষাটা অসাধারণ।

তীরন্দাজ এর ছবি

ছেলেবলায় যেতে পারলে বারবারই যেতাম!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।