সৌমিত্র দোয়েল সোহাগের খুনীরা কে কোথায় ?

জাহামজেদ এর ছবি
লিখেছেন জাহামজেদ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৬/০৮/২০১০ - ৫:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুনির তপন জুয়েল একদিনে এই তিন খুনে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো সিলেট। সবার চোখে যেন আবার ভেসে উঠে শিবিরের পূর্বসুরি আলবদর রাজাকারদের একাত্তরের নৃশংসতার কথা। অন্যদিকে ট্রিপল মার্ডারের মাধ্যমে শিবির সিলেট নগরীতে আতন্ক ছড়ালেও খুনীরা ঠিকই পালিয়ে যায়। পালিয়ে যায় না বলে বলা উচিৎ তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার খুনীদের নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। দেশে তখন স্বৈরাচার বিরোধী তুমুল আন্দোলন চলছে। এই সুযোগে এই বিষয়টা কিছুটা ধামাচাপা পড়ে যায়। তারপরও এই তিন খুনের পর থেকেই জাসদ ছাত্রলীগ শিবির খুঁজে শহর চষে বেড়ায়। বদলা নেওয়ার জন্য তারা মরিয়া। কিন্তু স্বৈরাচারের ভয়াল থাবা তাদেরকে খুব একটা এগুতে দেয় না। হামলা মামলা চলতে থাকে জাসদ ছাত্রলীগ কর্মীদের উপরে। অবশেষে স্বৈরাচারের পতন হলে নানাভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়া জাসদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদলে যোগ দিতে শুরু করে। সেই সময়টাতে সিলেটে ছাত্রদলের বলতে গেলে কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। কিন্তু জাসদ ছাত্রলীগের ত্যাগী আর পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা যখন ছাত্রদলে যোগ দেয়, তখন সিলেটে ছাত্রদল নিজস্ব একটা অবস্থান নিয়ে ফেলে। অন্যদিকে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে শিবির আবার মাঠ দখলের রাজনীতিতে নামে।

তারা সর্বপ্রথম নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করে আলিয়া মাদ্রাসা আর মদন মোহন কলেজে। আলিয়া মাদ্রাসাতে অবস্থান নিতে গিয়ে হযরত শাহজালাল দরগার মাদ্রাসা ছাত্রদের সাথে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তখন শিবির আবার তাদের স্বরূপে ফিরে গিয়ে বেশ কজন মাদ্রাসা ছাত্রের হাত পায়ের রগ ও জিহবা কেটে ফেলে। এরপর ধীরে ধীরে শিবির শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক কলেজে গ্রামকেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু করে। তারা শহরটাকে চারটা অঞ্চলে ভাগ করে আলাদা আলাদা চারটা ব্লক তৈরি করে। চারটা ব্লকের নাম যথাক্রমে- শাহজালাল, শাহপরান, উত্তর, দক্ষিণ। শহরে মদন মোহন কলেজ আর আলিয়া মাদ্রাসাকে তারা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া শহরের পায়রা আবাসিক এলাকাকে গড়ে তুলে নিজেদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে।

এভাবে ধীরে ধীরে তারা সিলেটে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। ৯৬ সাল পর্যন্ত তাদেরকে বারবার ছাত্রদলের বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে। তারপরও থেমে থাকেনি তাদের রাজনীতি আর সদস্য সংগ্রহ অভিযান। পায়রার পর তারা শহরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় গড়ে তুলে নিজেদের দ্বিতীয় ক্যান্টনমেন্ট। কিন্তু উপশহরে তারা বেশিদিন নিজেদের কতৃত্ব ধরে রাখতে পারে না। ছাত্রদলের কাছে বারবার মার খেয়ে উপশহর ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। তারপরও নগরীর জামেয়া স্কুল কেন্দ্রিক রাজনীতি তারা চালিয়ে যায় কিশোরদেরকে তাদের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত করার জন্য। বিএনপি ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর সিলেটে যখন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা মামলার ভয়ে পলাতক তখন শিবির সিলেটে তাদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলে। এক্ষেত্রে তারা ছাত্রলীগ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হয় না। কারণ, ছাত্রলীগের নেতারা তখন গ্রুপিং আর টেন্ডারবাজি নিয়ে ব্যস্ত। এই নিয়ে যখন ছাত্রলীগ ব্যস্ত তখন শিবির সিলেটে পুরোদমে চালিয়ে গেছে তাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযান। তারা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে, গ্রাম থেকে বিস্তৃত হয়ে শহরে এসেছে এবং জামাতের নেতৃত্বেও তখন চলে এসেছে মুনির তপন জুয়েলের খুনীদের অনেকেই। এরপর তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সিলেটে আরো তিনটি খুন করে।

সৌমিত্র হত্যাকান্ড

১৯৯৮ সালের ২৪ মে শিবির হত্যা করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা সৌমিত্র বিশ্বাসকে । শামসুদ্দিন ছাত্রাবাসে ক্রিকেট খেলা দেখা নিয়ে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হলে শিবির ক্যাডাররা নগরীর ব্লু বার্ড স্কুলের সামনে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে সৌমিত্রকে। কিন্তু হত্যাকারী কেউই গ্রেফতার হয়নি এবং এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কারোরই বিচার হয়নি। অথচ তখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ছিলো। এই হত্যাকান্ডের সাথে কারা জড়িত ছিলো এটাও জানা যায়নি আজ পর্যন্ত। একটা চোরাগুপ্তা হামলাতেই নিহত হয় সৌমিত্র। তাই সৌমিত্র হত্যার সাথে কারা কারা জড়িত ছিলো এটা বলতে পারেনি কেউ।

সৌমিত্র হত্যাকান্ডে শিবিরের কারা জড়িত ছিলেন এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। এই হত্যাকান্ডে কোনো মামলাও করা হয়নি। তবে তৎকালীন একাধিক ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলে জেনেছি, এই হত্যাকান্ডে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিবির ক্যাডাররা ছাড়াও পায়রা এলাকায় বসবাসকারী কিছু স্থানীয় শিবির ক্যাডারও জড়িত ছিলো।


দোয়েল হত্যাকান্ড

হামিদ আহমদ খান দোয়েল নামের এক ছাত্রদল কর্মীকে ২০০২ সালে ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের মদনমোহন কলেজের ক্যাম্পাসে কুপিয়ে হত্যা করে শিবিরের ঘাতকরা। দোয়েল হত্যারকান্ডের মতো কোনো নৃশংস এবং বর্বরোচিত খুন এর আগে সিলেটে কখনো হয়নি।

auto

দোয়েল হত্যাকান্ডের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, তখন মদন মোহন কলেজে দোয়েলের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় ছাত্রশিবির। দোয়েলের কারণে তারা তখন ক্যাম্পাসে তাদের নতুন কর্মী সংগ্রহ অভিযানে বাঁধার মুখে পড়ে। দোয়েল শহরের স্থানীয় ও অনেক স্মার্ট ছেলে হওয়ার কারণে মোটামুটি অনেক ছাত্রই তার আহবানে ছাত্রদলে যোগ দিতে থাকে। এমন শোনা যায়, দোয়েল নাকি কলেজে ঢুকে প্রথমে ছাত্রশিবির করতো, তারপর ছাত্রশিবিরের নোংরা রাজনীতি আর মতাদর্শের কারণে সে প্রায় ১৫০ জনের মতো শিবির কর্মী নিয়ে ছাত্রদলে যোগ দেয়। দোয়েল হত্যাকান্ড ছিলো একেবারেই পূর্বপরিকল্পিত।

যেদিন দোয়েল খুন হয় সেদিন কলেজে ছাত্রদলের একটা অনুষ্টান ছিলো। সবাই অনুষ্টানে ব্যস্ত এমন সময় দোয়েল কি একটা কাজে কলেজের বাইরে যায়। আর এই সুযোগে ছাত্রশিবির ছাত্রদলের অনুষ্টান যে ভবনে হচ্ছিলো সেই ভবনের কলাপসেবল গেট বন্ধ করে দেয় এবং দোয়েল ফিরে আসার পর নারায়ে তাকিবর আল্লাহু আকবর স্লোগান দিতে দিতে তাকে ঘিরে ফেলে । তারপর রামদা, চাপাতি এসব দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপাতে থাকে। দোয়েল হত্যাকান্ডের আমি নিজেও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। এই ঘটনার কথা মনে হলে এখনো শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়, কসাইরা গরুকেও যে এভাবে কাটে না।

দোয়েলকে যখন আঘাতের পর আঘাত করা হচ্ছে তখন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কলেজের তিনতলা থেকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না। কারণ, ছাত্রশিবির তো নিচের গেটটি আগেই বন্ধ করে দিয়েছে।

দোয়েলের হত্যার ধরণ ছিলো খুবই ভয়াবহ। তার শরীর থেকে ঘাতকেরা তার একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শিবির এই হত্যাকান্ডটি ঘটায় মুলত কলেজে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে আর দোয়েলের সাথে যারা ছাত্রদলে যোগ দিয়েছিলো তাদেরকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে শিবিরকে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে তার পরিণতি কেমন হতে পারে। এই হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিলো শিবির ক্যাডার আলাল, শাহিন, জুম্মা, রাসেল, মহসিন, মিনার, সোলেমান, শফিকুর রহমান, কামরুল, ঝলক, শিপলু ও রাজ।

দোয়েলকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করার পরদিন বিএনপির সভাপতি এম এ হক জামাতের সাথে সমছোতা করে ফেলেন। তিনি জামাতের নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্টান ও বাসায় পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেণ যাতে ছাত্রদলের কারো দ্বারা জামাত শিবিরের কেউ আক্রান্ত না হতে পারেন !!!

এই হত্যাকান্ড প্রকাশ্যে সংঘঠিত হলেও দোয়েল খুনের আসামিদের অনেকেই বিদেশে চলে যায় এবং যারা পরবর্তীতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলো তারা সবাইও একসময় ছাড়া পেয়ে যায়।

সোহাগ হত্যাকান্ড

সিলেট ভেটেরিনারী কলেজের মেধাবী ছাত্র রফিকুল হাসান সোহাগকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট নৃশংসভাবে খুন করে শিবির ক্যাডাররা। সোহাগ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

auto

তুচ্ছ একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোহাগকে হত্যা করা হয়। জানা যায়, সেদিন রাত আনুমানিক আটটার দিকে সোহাগ কলেজ ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে হোস্টেলে ফিরছিলো। হঠাৎ করে তাকে এসে কিবরিয়া নামের এক শিবির কর্মী সাইকেল দিয়ে ধাক্কা মারে । এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। দুজনের উচ্চস্বরের কথাবার্তা শুনে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিবির সভাপতি মাসনূন সবার কাছে সমঝোতার আগেই ৩০ মিনিট সময় চেয়ে নেন। এই ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যেই শিবির কর্মীরা প্রস্তুত হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে সোহাগের উপরে। তাকে শিবিরের ঘাতকেরা নতুন হলের ৩৫৭ নাম্বার কক্ষে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে উপুর্যপুরি কুপাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সোহাগকে রুমের ভিতরে ফেলে রেখে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বাইরে থেকে তালা দিয়ে যায়। এরপর সোহাগকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চার ঘন্টা জীবনের সাথে লড়াই করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুলিশ সোহাগ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় সীতাকুন্ডের ভাটিয়ানার জাকির হোসেনের ছেলে জাহেদ হোসেন ও সরাইলের আবুল বাশারের পুত্র মফিকুল হককে গ্রেফতার করে। পরদিন বিএনপি নেতা এম এ হকের নেতৃত্বে জামাত শিবিরের সাথে এই হত্যাকান্ডেরও আপোষ করে ফেলে বিএনপি। কিন্তু ছাত্রদল বিএনপির সিদ্ধান্ত না মেনে শহরে জামাত শিবির নেতাকর্মী ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা চালাতে থাকে। পরবর্তীতে উপযুক্ত সাক্ষ্যের অভাবে জাহেদ ও মফিক জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়।


সৌমিত্র দোয়েল সোহাগের খুনীরা বর্তমানে কে কোথায় আছে :

আলালুর রহমান আলাল : মদনমোহন কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি । দোয়েল হত্যার পর মধ্যপাচ্যে চলে যায়। বর্তমানে সে সিলেট শহরেই জামাতের সিনিয়র নেতাদের সাথে আবাসন ব্যবসায় জড়িত। এয়ারপোর্ট রোডে বেশ কিছু জায়গা সে আরো কয়েকজন শিবির নেতা মিলে সম্প্রতি কিনেছে একটি হাউজিং করার জন্য। এছাড়া সে মুনির তপন জুয়েলের অন্যতম খুনী আবদুর রহমানের নর্থইস্ট ল্যান্ড ডেভেলপম্যান্ট কোম্পানী নামের আবাসন প্রকল্পের অংশীদার।

শাহিনুর রহমান : দোয়েল হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি। বর্তমানে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় থাকে। হত্যাকান্ডের পর বেশ কয়েকদিন পালিয়ে ছিলো। এখন প্রকাশ্যেই নগরীতে ঘুরে বেড়ায়। মদন মোহন কলেজ ক্যাম্পাসেও তার নিয়মিত যাতায়াত আছে। মুনির তপন জুয়েলের অন্যতম খুনী জিয়াউদ্দিন নাদেরের পরিচালিত সিলভার ভিলেজ হাউজিংয়ের সাথে জড়িত।।

জুম্মা : এই জুম্মার উপুর্যপরি রামদার আঘাতে শরীর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয় দোয়েলর। বর্তমানে সে ইংল্যান্ড প্রবাসী। দোয়েল হত্যার পর চট্রগ্রামে পালিয়ে যায়। এরপর চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়। পুলিশ তাকে চট্রগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। কিছুদিন জেল খাটার পর সে জামিনে বের হয়ে আসে। এখন হত্যা মামলা থেকে পুরোপুরি খালাস পেয়ে এক জামাত নেতার মেয়েকে বিয়ে করে লন্ডনের এক রেস্তোরায় বাবুর্চির কাজ করে। জুম্মা প্রায়ই সিলেটে আসে। তার বাসা নগরীর নবাব রোডে তখন সে অবস্থান করে। লন্ডনে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর জন্য জামাতি নেতাদের সাথে সেভ বাংলাদেশ, সেভ ইসলাম নামে একটা সংগঠন করে ফান্ড সংগ্রহ করছে।

সোলেমান আহমদ : কানাডার উইন্ডসরে থাকে। খুনের পর বহুদিন পলাতক ছিলো। তারপর বডি কন্ট্রাক্টে( আদম ব্যসায়ীদের একটা চুক্তি ) চলে যায় কানাডাতে । কানাডার সিটিজেনশীপ নিয়ে বর্তমানে ওখানেই থাকে। মাঝেমধ্যে দেশে আসে। দোয়েল হত্যা মামলা থেকে খালাস পেয়ে গেছে অন্যদের সাথেই।

রাসেল : সিলেট শহরেই থাকে। বর্তমানে সে মদনমোহন কলেজে ছাত্রশিবিরের নীতিনির্ধারকদের একজন। পাশাপাশি জামাত নেতাদের পরিচালিত বিভিন্ন হাউজিংয়ের সাথে জড়িত।

কামরুল, ঝলক, শিপলু, রাজ : সবাই এখনো ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো মহানগর শিবিরের বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্বে আছে। পাশাপাশি সবাই জামাত নেতাদের পরিচালিত বিভিন্ন হাউজিং প্রকল্প ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্টানের সাথেও জড়িত।

জাহেদ হোসেন : জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে বেশ কিছুদিন ভেটেরিনারী কলেজ শিবিরের দায়িত্বে ছিলো। বর্তমানে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কর্মরত।

আইনের দুর্বলতা আর পর্যাপ্ত সাক্ষ্যের অভাবে সিলেটে বারবার প্রকাশ্যে হত্যাকান্ড ঘটিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে শিবিরের খুনীরা। কিছুদিন পালিয়ে থেকে তারা আবার ঠিকই নগরীতে এসে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পাশাপাশি সিলেটে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে সৌমিত্র দোয়েল ও সোহাগকে হত্যার জন্য জামাত শিবিরের এই খুনী পিশাচদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেসময়ের টুলটিকর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রকীবের সহযোগীতায় শিবির আরেকটা ডিফেন্স লাইন গড়েছিলো টিলাগড়ের পেছনে কল্যানপুর আর মীরাপাড়ায়।

সৌমিত্র ছিলেন চট্রগ্রামের ছেলে। ছাত্রলীগ করতেন কিন্তু অস্ত্ররাজনীতির সংশ্রবে ছিলেননা।

দোয়েলের বড়ভাই মনে হয় হাসেম, তাইনা?

আব্দুল হক- বদরুদ্দীন কামরানের মতো বাটপারদের কারনেই ঘাতকেরা এরকম প্রতিষ্ঠা পায়।

আগেরটার মতোই দরকারী পোষ্ট। আমার মনে হয় বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের ঘাতক-দালাল বিরোধী প্রতিরোধ ইতিহাস সংগ্রহ করে গ্রন্থিত করা জরুরী। আমাদের অনেক কিছু হারিয়ে যায়।

জানি সহজসাধ্য নয় তবু কেউ এই উদ্যোগ নিক।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জাহামজেদ এর ছবি

আবদুল হক গেছে। ছাত্রদলের ছেলেরাও হকরে এখনো রাজাকার বলে গালি দেয়। কিন্তু কামরান তো নগর মহাজন হয়ে বসে আছে এখনো। সেদিন টিভিতে দেখলাম জামাতের কয়েকজন পরিচালিত শেয়ার মার্কেটের একটা ব্রোকারেজ হাউজের উদ্বোধন করতে গিয়ে হাসি হাসি মুখ করে শফিকুর রহমানের সাথে গল্প করছে।

আওয়ামীলীগ হাইকমান্ডও কামরানের এই জামাত প্রীতির কারণে তাকে এখন খুব একটা পাত্তা দেয় না। মিসবাহউদ্দিন সিরাজকে তৈরি করা হচ্ছে পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের জন্য।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জানবেনা কেনো? কিন্তু ঐ যে ভোটের হিসাব।
এই লোকের জন্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নাটকের দলগুলোর ভোটপ্রার্থনায় নামে আবার এই লোক কাজীর বাজার মাদ্রাসার মাওলানা হাবীবুর রহমান( তসলিমা নাসরীনকে মুরতাদ ঘোষনাকারী) এর ভোট পায়, জামাত নিয়ন্ত্রিত আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে সর্ব্বোচ্চ ভোট তার।
এই হলো স্থানীয় রাজনীতির জটিল অংক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

না। আমি বলতে চাচ্ছি এই লোক যদি চিহ্নিত জামাতপন্থীই হয় তাহলে তো ভোটের হিসাব করে আওয়ামীলিগের লাভ নাই। কারণ দিন শেষে সেই ভোট যাবে চারদলীয় জোটের বাক্সে। আর সিলেটের মেয়র আওয়ামী লীগের, কেবল এই আত্মসন্তুষ্টি ছাড়া আর কী পাইলো তাইলে মেয়র ইলেকশন থেকে আওয়ামী লীগ! বাদবাকি কাম-আকাম-কুকাম সবই তো লুফে নিবে জামাত তথা চারদলীয় জোট! এইটা বুঝেও হিসাবটা কোনদিকে করলো লীগ? আর সেই হিসাব এখন পাল্টে গিয়ে আরেকজনকে কেনো তৈরী করাচ্ছে‌? তাহলে কি কামরান লীগে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছিলো তখন‌? যেই ঘোষণার মেরিট সে রক্ষা করে নি! অথবা লীগের ইন্টেল কামরান সম্পর্কে ভূয়া খবর দিয়েছে কেন্দ্রকে।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

জাহামজেদ এর ছবি

মেয়র ইলেকশন আওয়ামীলীগ করে ঠিকই, কিন্তু প্রার্থী হিসেবে কামরান সর্বদলীয়।

আম ভোটারদের কাছে তার জনপ্রিয়তা এত বেশি যে আওয়ামীলীগ ভোটের রাজনীতির কারণে চায় না কামরান হাতছাড়া হয়ে যাক। বিএনপি আমলেও সে বিএনপি জামাতের বিশাল একটা অংশের ভোট পেয়ে সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হয়! জামাতিরা মেয়র ইলেকশনে কোনো প্রার্থী দেয় না, কারণ, কামরান তো বলতে গেলে তাদেরই প্রার্থী ! অন্যদিকে বিএনপি দেয় আব্দুল হককে, যে কিনা ভোট দিতে গিয়ে নিজের ভোট কাকে দিবে এই নিয়ে দ্বিধাদন্দে ভুগে ব্যালটের বদলে সিল মেরে দেয় নিজের পাঞ্জাবির হাতায় ! আবদুল হকও একজন খাঁটি জামাতপ্রেমী লোক।

কামরান আর হকের কারণেই সিলেটে জামাতের এত রমরমা অবস্থানে চলে যাওয়া।

কামরান মেয়র হলে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কোনো লাভ নেই। দলের একটা সিল কামরানের শরীরে থাকার কারণে ছাত্রলীগ আর যুবলীগের ছেলেরা নগর ভবনের কিছু কাজ কাম একটু পায়, এই যা।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আওয়ামীলীগ হাইকমান্ডও কামরানের এই জামাত প্রীতির কারণে তাকে এখন খুব একটা পাত্তা দেয় না। মিসবাহউদ্দিন সিরাজকে তৈরি করা হচ্ছে পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের জন্য।

জাহামজেদ,
এরশাদের আনুকুল্য নিয়ে পাইলট স্কুলের জায়গা দখল করে মধুবন মার্কেট তৈরীর সময় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের যে আন্দোলন করেছিল, সেই আন্দোলনে কারা পুলিশের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল আর কারা রাগীব আলীর টাকায় আমেরিকায় গিয়েছিলো সেটা ও কিন্তু জানা যেতে পারে ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জাহামজেদ এর ছবি

কারা রাগীব আলীর টাকায় আমেরিকায় গিয়েছিলো

মোরশেদ ভাই, আপনার এই কথাটা মনে হয় আমি ধরতে পেরেছি। তারপরও একটু ডিটেইলে কি যাওয়া যায় ?

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যদি সে সময়ের কিংবদন্তী জাকির ভাই'র মুখ খুলতে পারতে কোনভাবে তাহলে সিলেটের ছাত্ররাজনীতির অনেক এডভেঞ্চারাস গল্প-সল্প পেয়ে যেতে।
অথবা তাপস ভট্টাচার্য্য।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জাহামজেদ এর ছবি

যদি সে সময়ের কিংবদন্তী জাকির ভাই

আপনি কি আলপাইন রেস্তোরার জাকির ভাইয়ের কথা বলছেন ?

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হুম। তবে এই লোক এখন আর কথা বলবেনা মনে হয়।
তাপস ভট্টাচার্য্য মনে হয় উত্তর-পূর্বে আছেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

সিলেটে বোমা হামলার দায়ে আটক ডাক্তার রিফা এই মিসবাহউদ্দিন সিরাজের শালা না?



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হ্যাঁ। মিসবাহউদ্দীন সিরাজ এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

তালিকা থাকুক। থাকুক প্রতিটি এলাকার ইতিহাস। এই ভাবেই।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

জাহামজেদ এর ছবি

দোয়েল হাসিমের ছোট ভাই।

টিলাগড় এলাকার কল্যাণপুর আর মিরাপাড়ার ডিফেন্স লাইন এখন ভেঙ্গে গেছে। টিলাগড় এলাকাবাসী ও ছাত্রলীগের আজাদ গ্রুপের কাছে বেশ কয়েকটা বড় ধাক্কা খেয়ে শিবির টিলাগড় এলাকা থেকে বিতাড়িত। এছাড়া শায়খ আবদুর রহমান ওই এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়ার কারণে জামাতের নেতৃস্থানীয় অনেকেই ওই এলাকা ছেড়ে চলে আসে। শায়খ রহমান যে বাসায় থাকতো ওই বাসাটাও ছিলো নেতৃস্থানীয় এক জামাত নেতার প্রবাসী ভাইয়ের।

অন্যদিকে আবার কল্যানপুর মিরাপাড়াতেই জিয়াউদ্দিন নাদের ডাকাত মজিদ পরিবারের প্রায় শত একর জায়গা দখল করে হাউজিং করেছে।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

জেসমিন [অতিথি] এর ছবি

মেয়র কামরান জামাতের লোক ?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

না। সেরকম কিছু বলা হচ্ছেনা এখানে। মেয়র কামরান সবার লোক। এই সবার মধ্যে জামাত ও আছে হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

জামাতের লোক, কিন্তু করে আওয়ামী লীগ .......... হয়তোবা ভোটটা দেয় বিএনপিতে, কদমবুসি করে এর্শাদেরে, আর মাঝে মাঝে বামেদের সাথে বসে ফোক সং শোনে .............. অনেক কিছুই হইতে পারে। দুনিয়ায় আইজকাইল আর আজব কিছু নাই। আমি সিলেটের লোক না আর জীবনে কোনওদিন সিলেটে যাইনাই। তবে বুঝলাম নাঃ জামাতের লোক কেমনে মাল খাইয়া, জোসনা রাইতে, খালি গয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চইড়া চইড়া হাসন রাজার গান শোনে (অথবা বলিতে হবে হজ্ব করিবার পূর্বে 'শুনিতেন')। এই না হইলে 'কামড়ান'। এরকম 'কামড়ান' আমাদের দেশের প্রতিটা এলাকায় আছে যাদের কাজ হচ্ছে দেশটাকে কামড়িয়ে কামড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা।

রাতঃস্মরণীয়

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বদরউদ্দীন কামরানকে সরাসরি জামাতের লোক বলার মতো তথ্য প্রমান কারো হাতে নেই। কিন্তু জামাতের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত শক্ত অবস্থানে তাকে দেখা যায়নি।
যুদ্ধাপরাধী বিরোধী দলীয় কর্মসূচীতে অবশ্য তিনি থাকেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমজনতার কাছে কামরানের দুর্বার জনপ্রিয়তার রহস্য কী? তিনি আগারটা খান,তলারটাও কুড়ান, এই কথা কী সিলেটবাসী জানেনা?

অদ্রোহ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দূর্বার জনপ্রিয়তার রহস্য একটাই- কামরান সাধারন মানুষরে ভোগায়না। সিটি কর্পোরেশন থেকে যে কোন কাগজপত্রে মেয়রের স্বাক্ষর সহজেই সংগ্রহ করা যায়। এমনও কথা আছে আপনি যদি কামরানের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে যান সিটি কর্পোরেশনে, সেটা ও না দেখে হাসিমুখে সে স্বাক্ষর দেবে।
চেনা-অচেনা, আওয়ামী লীগ-বিএনপি লাগেনা যে কারো পারিবারিক অনুষ্ঠানে মেয়র সাবরে উপস্থিত পাওয়া যায়। মেয়র সাব নাট্য উৎসবে প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন করেন, মাদ্রাসা জলসায় গিয়ে ওয়াজ ও করেন।

সাধারন মানুষ এসব সহজ জিনিসকে অনেক গুরুত্ব দেয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জাহামজেদ এর ছবি

আপনি যদি কামরানের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে যান সিটি কর্পোরেশনে, সেটা ও না দেখে হাসিমুখে সে স্বাক্ষর দেবে।

বিয়াপক মজা পাইলাম। তবে কথাটা একেবারে সত্য!

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

জাহামজেদ এর ছবি

আমজনতার কাছে কামরানের দুর্বার জনপ্রিয়তার রহস্য কী?

জনপ্রতিনিধিদের যে জিনিষটা জনপ্রতিনিধি হয়ে নাই হয়ে যায় সেই দোষটা কামরানের নাই। আজ আপনি গিয়ে বলেন, আপনি আমার বাসায় রাইতে খাইতে আসেন, দেখবেন কামরান হাজির, কেউ মারা গেছে দেখবেন জানাজা শুরু হওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে কামরান জানাজায় হাজির, আপনি মুড়ি চানাচুরের দোকান দিবেন, কামরান গিয়ে উদ্বোধন করে আসবে, ফোর স্টার হোটেল করবেন, উদ্বোধনের জন্য কামরান আছে, মেয়ের বিয়েতে ভিআইপি গেষ্ট লাগবে, কামরানরে বললেই চলে আসবে, আপনার বাসার ট্যাক্স অনেক চলে আসছে, কামরানকে বললেই মাফ করে দিবে, আর্ট কালচার করবেন, টাকার দরকার, দেখবেন সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে কামরান টাকা দিয়ে দিছে, বৈশাখের অনুষ্টান করবেন, কামরান আছে, চাকরির জন্য সুপারিশ দরকার, কামরান আছে...

জামাতের ইফতারেও কামরান আছে, এরশাদের অনুষ্টানেও কামরান আছে, জামাতের বিচার সালিশ শেষ করে দিতে কামরান আছে, জামাত জায়গা দখল করবে, সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা লাগে, কামরান আছে...

কামরানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে খোকন নামের যে ছেলেটা কাজ করে সে ও এক সময় সক্রিয় শিবির করতো।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝলাম, কামরান নিজের পাবলিক ডিলিংস সম্পর্কে বেশ সজাগ। মালুম হচ্ছে, সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল অংশ বেশ কোণঠাসা অবস্থায় আছে। আচ্ছা,জামাত শিবিরের উত্থানে তার মদদ এখনো কী পরোক্ষই আছে?

অদ্রোহ

একুশ তাপাদার [অতিথি] এর ছবি

সিলেটে শিবিরের অবস্থা আগের মতো নাই, প্রভাব কমছে, আরো কমবে। আমি উপশহরে থাকি ২০০০ সাল থেকে । তখন এখানে শিবিরের বেশ প্রভাব ছিলো, বসায় বাসায় আসতো , কিশোরদের মসজিদে নিয়ে তামিল দেয়ার চেষ্টা করত । এখন এসবের কিছুই চোখে পড়েনা ।

৯৯ সালের দিকে আমি গ্রাম থেকে শহরে পড়ার জন্য আসি। ভালো স্কুলে (ব্লু বার্ড/পাইলট) ভর্তির সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমার পরিবার আমাকে জামাতী স্কুল জামেয়ায় ভর্তী করিয়ে দেন (জীবনের বাজে ৩টি বছর কেটেছে ওখানে) । ওই স্কুলে এসেম্বলিতে জাতীয় সঙ্গীত পড়ানো হতো না, পড়ানো হতো জামেয়ার শপথ (এখন কি হয় জানিনা) । দুপুর বেলা নামাজে পড়তে বাধ্য করত, না পড়লে জুতা দিয়ে পর্যন্ত মারতে আসত অশিক্ষিত বর্বর শিক্ষকগুলো। ওই স্কুলে আমি প্রায় নিসঙ্গ হয়ে পড়ি । শিবিরের সমর্থক ফরম পূরন করার জন্য প্রতিদিন শিবিরের নেতাকর্মীরা স্কুলে আসত ।জনি নামের এক শিবির সাথীর সাথে প্রায় মারামারি হতো । একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওই শিবির সাথী ও তার সঙ্গিরা আমাকে মারধোর করে - আমি একা অতটা প্রতিরোধ করতে পারিনা । রাগে ক্ষোভে একধরনের জটিল মনপীড়ায় ভুগতে থাকি। এদিকে বাসায় কিশোর কন্ঠ নিয়ে আসত একদল ।- কি ভয়াবহ বিশ্রি সময় ছিলো তখন । এসএসসি'র গন্ডি পেরোতেই হাফ ছেড়ে বাঁচি । কলেজে উঠে কিছু বন্ধুবান্ধব পেয়ে সাহসও বাড়তে থাকে ।
এইচএসসি'র পর প্রান্তিকের সন্ধান পাই, তখন প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রান্তিকে বসত , সেই থেকে আমার এই শহরে সত্যিকার কিছু বন্ধু পাওয়া, বন্ধুসভা এখন আর না করলেও এখনো সেই বন্ধুদের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগ করে পার করছি। শহর সিলেটে সংস্কৃতি চর্চা করার চেষ্টা করছি।

তিন বছর আগে এক ১৪ ডিসেম্বরে উপশহরের কিছু শিবিরের কর্মীকে দেখি আমাদের রোডে বায়তুল মাল তোলতে আসছে - আমার বাসায়ও এলো- শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে সেদিন শিবিরের সেই সব শুয়রদের ইচ্ছেমতো গালাগালি দিয়ে রোড় থেকে বের করে দিছিলাম , এরপর এক ঝাঁক জামাতী জামাতের লিফলেট নিয়ে আসছিল তত্ত্ববধায়ক আমলে - আমি সেই লিফলেট ছিঁড়ে ফেললে ওরা বলে এতে নাকি কোরানের আয়াত ছিল . আমি আরো একটি লিফলেট ছিঁড়ে ফেলি আর বলি - জামাতের লিফলেটে যাই থাকুক সেটা ছিঁড়ে ফেলা নৈতিক দায়িত্ব । ওরা অনেকক্ষন দূর থেকে থাকিয়ে আমাদের রোড় থেকে দাওয়াত কার্যক্রম বন্ধ করে চলে যায় । এরপর থেকে এই এলাকায় জামাত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে পড়ে না (মসজিদের ভেতরের কাহিনী বলতে পারবো না) । এখন শুধুমাত্র কামরানের মতো কিছু পৃষ্টপোষকের জন্য জামাত-শিবির সিলেটে ঠাঁই পায় ।

মেয়র কামরান জামাতীদের সাথে নানা ব্যবসায় জড়িত, সে ক্ষমতায় থাকলে জামাতীরাই লাভবান হয় বেশি। কামরানে বিশেষ ক্ষমতা হলো - সে যে অনুষ্টানে যাবে সেই অনুষ্টানের মুড বুঝে একটা বক্তব্য দিয়ে আসতে পারে । এই লোকরে দেখলে এখন আমার ঘেন্না লাগে ।

জাহামজেদ এর ছবি

সিলেটে শিবিরের অবস্থা আগের মতো নাই, প্রভাব কমছে, আরো কমবে।

তোমার এই ধারণাটা ভুল। ছাত্রদলের সিলেটের সবচেয়ে শক্তিশালী দুইটা গ্রুপ উপশহর কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে শিবির উপশহর থেকে বিতাড়িত। ভেটেরিনারি কলেজে খুন হওয়া সোহাগ উপশহরের একটা গ্রুপের সাথে জড়িত ছিলো। এই খুনের পর বিএনপি জামাতের সাথে সমঝোতা করলেও উপশহরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ নিজেদের বিভেদ ভুলে এক হয়ে যায়। তারপর সম্মিলিত ভাবে তারা জামাত শিবিরের ঘাটি গুলোতে বারবার হামলা চালাতে থাকে। শিবির ছাত্রদলের দুই ব্যাটালিয়নের সাথে সম্মিলিত যুদ্ধে না গিয়ে উপশহর ছেড়ে যায়।

তবে শহরে তাদের অবস্থান আগের থেকেই শক্তিশালী আছে। যদি শক্তিশালী না থাকতো তাহলে কিভাবে বারবার যুদ্ধাপরাদীর বিচার বিরোধী মিছিল করে, নিজামি মোজাহিদের জন্য মিছিল করে, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা কমিটির নামে শহরে ভাঙচুর চালায় ?

স্কুলে এসেম্বলিতে জাতীয় সঙ্গীত পড়ানো হতো না, পড়ানো হতো জামেয়ার শপথ (এখন কি হয় জানিনা) । দুপুর বেলা নামাজে পড়তে বাধ্য করত, না পড়লে জুতা দিয়ে পর্যন্ত মারতে আসত অশিক্ষিত বর্বর শিক্ষকগুলো। ওই স্কুলে আমি প্রায় নিসঙ্গ হয়ে পড়ি । শিবিরের সমর্থক ফরম পূরন করার জন্য প্রতিদিন শিবিরের নেতাকর্মীরা স্কুলে আসত ।জনি নামের এক শিবির সাথীর সাথে প্রায় মারামারি হতো । একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওই শিবির সাথী ও তার সঙ্গিরা আমাকে মারধোর করে - আমি একা অতটা প্রতিরোধ করতে পারিনা । রাগে ক্ষোভে একধরনের জটিল মনপীড়ায় ভুগতে থাকি। এদিকে বাসায় কিশোর কন্ঠ নিয়ে আসত একদল ।

স্কুলের কোমলমতি শিশু আর কিশোরদের ওরা নানা ছলনায় ওদের আদর্শে বিশ্বাস করাতে চায়। আমি জামেয়াতে পড়িনি, কিন্তু আমাকেও এসব তোমার মতো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে। তাই বলে কি আমি শিবির হয়ে গেছি? শহরের কোনো চেলেকেই ওরা প্রভাবিত করতে পারে না, কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসা দরিদ্র পরিবারের ছেলেদেরকে ছেলেদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলে।

জামেয়াতে এসেম্বলিতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না এটা জানা ছিলো না।
এই জামেয়ার প্রথম অধ্যক্ষ্য কে ছিলো জানো, একাত্তরে সিলেটের আলবদর প্রধান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দোয়েল হত্যাকান্ডের বর্বরতায় বধির স্নায়ূ পর্যন্ত কেঁপে উঠলো...

এইসব লেখা আসুক। আন্তর্জালে হলেও সামনের সময়ের মানুষ ইতিহাস খুঁজে পাবে...

_________________________________________

সেরিওজা

তাসনীম এর ছবি

খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি এই লেখাগুলো, অনেক ধন্যবাদ তথ্যগুলো সামনে নিয়ে আসার জন্য।

দোয়েল হত্যাকান্ডের মত ভীতিপ্রদ বর্বরতা দিয়ে ৮০ এর দশকেই শিবিরের যাত্রা বেগবান হয়। বর্বরতাটা করা হয় মানুষের মনে ভয় ঢুকানোর জন্য। বাংলাদেশে মৌলবাদীরা কোন না কোনভাবে জামাত শিবিরের সাথে সম্পর্কিত, এই অশুভ শক্তির প্রতি জিরো টলারেন্স কেউ দেখাতে পারেনি, বরং ভোটের গাণিতিক সমীকরণে আদর্শ বিসর্জন দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো বারেবারে। আজকের এই বাস্তবতা এক দিনের ভুলে নয়।

আমি নিজেও দেখেছি যে ছাত্রদল ছাত্রশিবিরকে প্রতিহত করেছে ৯০ এর দশকে। সম্ভবত চারদলীয় জোট হওয়ার পর ওদের প্রেম জোরালো হয়। ২০০১ সালের এই জোট জামাত-শিবিরকে কীভাবে শক্তিশালী করেছে, সেটার উপর লেখা পড়ার ইচ্ছে আছে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

আমি নিজেও দেখেছি যে ছাত্রদল ছাত্রশিবিরকে প্রতিহত করেছে ৯০ এর দশকে। সম্ভবত চারদলীয় জোট হওয়ার পর ওদের প্রেম জোরালো হয়।

চারদলীয় জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সিলেটের ছাত্রদল শিবিরকে সিলেটের দুটো কলেজ থেকে বিতাড়িত করে। সারদেশের কথা বলতে পারি না, তবে এখনও পর্যন্ত সিলেটে ছাত্রদলের তরুণ নেতৃত্ব জামাতের সাথে বিএনপির জোটবদ্ধ হয়ে থাকাটা মেনে নিতে পারে না। এজন্য শিবিরকে সিলেটে বারবার ছাত্রদলের বাঁধার মুখেই পড়তে হয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ভয়ে শিবিরকে ঘাটাতে যায় না। সিরেটে যদি ছাত্রদল না থাকতো তাহলে তো শিবিরের ভয়ে কেউ কথাই বলতে পারতো না ! আমার অনেক ঘনিষ্ট বন্ধু সিলেটে ছাত্রদলের নেতৃস্থানীয় পদে আসীন, তাদের সাথে কথা বললে বোঝা যায়, বিএনপির হাইকমান্ডের উপরে তারা কতটুকু নাখোশ এই জামাত প্রীতির কারণে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গে সিলেটের ছাত্রদলের নেতাদের বলতে শুনেছি, এমন কুলাঙ্গারদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিৎ!

আরেকটা তথ্য, ইলিয়াস আলি নামে সিলেটে বিএনপির এক নেতা আছেন, এককালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্যও অনেক খ্যাত ছিলেন। তিনি সিলেটের বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর একটা ভালো ব্যাপার তার মধ্যে দেখা গেছে, ইলিয়াস আলি দুই চোখে জামাত শিবিরকে দেখতে পারেন না! এজন্য বিএনপির ইলিয়াস আলি গ্রুপ জামাতের সাথে সম্মিলিত কোনো কর্মসূচিতে যায় না।
অনেক খারাপের মধ্যেও কিন্তু এমন দু'একটা ভালো কিছু থাকে!

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তাসনীম এর ছবি

সিলেটে ছাত্রদলের তরুণ নেতৃত্ব জামাতের সাথে বিএনপির জোটবদ্ধ হয়ে থাকাটা মেনে নিতে পারে না। এজন্য শিবিরকে সিলেটে বারবার ছাত্রদলের বাঁধার মুখেই পড়তে হয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ভয়ে শিবিরকে ঘাটাতে যায় না। সিরেটে যদি ছাত্রদল না থাকতো তাহলে তো শিবিরের ভয়ে কেউ কথাই বলতে পারতো না ! আমার অনেক ঘনিষ্ট বন্ধু সিলেটে ছাত্রদলের নেতৃস্থানীয় পদে আসীন, তাদের সাথে কথা বললে বোঝা যায়, বিএনপির হাইকমান্ডের উপরে তারা কতটুকু নাখোশ এই জামাত প্রীতির কারণে।

এই অবস্থা কী এখনো আছে?

৯০ এর গন-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল যার অনেকটাই ছিল বেগম জিয়ার স্বৈরাচারবিরোধী আপোষহীন ভূমিকার জন্য, তখন ছাত্রদের প্রগতিশীল অংশও ভুলে গিয়েছিল রাজাকার উত্থানে বিএনপির ভূমিকা।

কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থা নেই, বিএনপি রাজাকারদের বশংবদ দল হিসাবে আভির্ভূত হয়েছে, বিএনপিপন্থীদের কথাবার্তাও রাজাকারদের মতই শোনায়। এরকম পরিস্থিতিতেও কী সিলেটের প্রগতিশীল ছাত্ররা ছাত্রদলের দিকে ঝুঁকে আছে?

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

সিলেটে যারা রাজনীতি করে, বিশেষ করে শহরের ছেলেরা, তারা ছাত্রদলই করে।
ছাত্রদলের ছেলেরা সিলেটে ছাত্রলীগের সাথে কোনো যুদ্ধে যায় না, তাদের সব যুদ্ধ শিবিরের বিরুদ্ধে। এটা যদি না হতো তাহলে কি চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শিবির ছাত্রদলের দুই নেতাকে খুন করতো ?

.....................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তাসনীম এর ছবি

আমি এটার কারণটা জানতে চাই, সারাদেশেই দল আর শিবিরের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং কারণটা অবশ্যই শীর্ষপর্যায়ের জোট কিন্তু সিলেটে ছাত্রদল আর শিবিরের মধ্যে এই আড়াআড়ির কারণটা কী?

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

সিলেটে ছাত্রদল করাটা একটা ফ্যাশন। যে ছেলে নির্বাচনে আওয়ামীলীগে ভোট দেয়, সেই ছেলেকেই অনেক সময় দেখা ছাত্রদলের মিছিলে জিয়ার সৈনিক বলে স্লোগান দিচ্ছে। শহরে ছাত্রদলের এই আধিপত্যের শুরু জাসদ ছাত্রলীগের আধিপত্য বিলীন হওয়ার সাথে সাথেই।
সিলেটে এখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের কিছু শুনতে পেরেছেন ? কিন্তু ছাত্রদলের গ্রুপিং মারামারি চলতেই আছে, শহরে ছাত্রলীগ অবস্থান নেয় ছাত্রদলের সাথে সমঝোতা করে। ছাত্রদলের প্রতিটি গ্রুপের ছায়ায় থাকে ছাত্রলীগের একেকটি গ্রুপ। শিবির যখন কোনোভাবে ছাত্রলীগের উপরে আঘাত করতে যায়, তখন পেছন থেকে ছাত্রদল ছাত্রলীগকে নানাভাবে সাহায়্য করে। এমনকি আমি নিজে দেখেছি ছাত্রদলের ছেলেরা হেলমেট পড়ে ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

কেন এমন, কারণ, মুনির তপন জুয়েলের সহযোগীরা জাসদ ছেড়ে ছাত্রদলে যোগ দেন। শুরু থেকে তারা শিবিরকে দেখতে পারতেন না। এই রীতিটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এখনো রয়ে গেছে।

....................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

দেবজ্যোতি দাস দেবু এর ছবি

চমৎকার কিছু বিষয় উঠে এসেছে জাকিরের লেখার মাধ্যমে ।সাবাস জাকির ।

আমি সৌমিত্র বা সোহাগকে তেমন চিনতাম না ।ওদেরকে তেমন একটা দেখিও নি ।তবে দোয়েলকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম ।ওর খালা আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল ।কলেজে প্রায় সময় ওর সাথে কথা হত ।ঐ জঘন্য হত্যাকান্ডের দিন আমিও কলেজে ছিলাম ।ঐ দৃশ্যটা মনে হলেই শরীরে কাপুনি উঠে যায় । কলেজের গেইটে ওকে শেষ বারের মত দেখেছিলাম ।কিন্তু ওটাই যে শেষ তা চিন্তাই করতে পারিনি ।তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঐ সময় ছাত্রলীগ ক্যাম্পসে ছিল এবং ঐ নারকীয় হত্যাকান্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল ।কলেজের গেইট বন্ধ থাকায় সাধারণ ছাত্ররা ভিতরে যেতে পারেনি ।যেতে পারলে হয়ত দোয়েলকে এতো নির্মমতার স্বীকার হতে হত না ।

ঐ খুনিদের মধ্যে শাহিনকে আমি একটু বেশিই চিনতাম ।কলেজ হোষ্টেলকে তখন বলা হত শিবিরের ঘাটি আর ঐ শাহিন ছিল শিবিরের অস্ত্রের ডিলার ।ওর রুম ছিল অস্ত্রের গোডাউন ।সবাই বিষয়টা জানতো কিন্তু কি কারণে যেন কোন দিনই ওর রুমে অস্ত্র ধরা পরে নি ।আমাকে একদিন দেখিয়েছিল ।এরপর ভয়ে আমি কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি ।এখন অবশ্য হোষ্টেল ভেংগে ফেলায় ওদের কোমর একটু দুর্বল হয়েছে ।এখন ওদের ঘাটি হয়েছে লামাবাজার মিডটাউন কমপ্লেক্স ।

স্কুল বা কলেজ থেকে ওদের বের করে দিলেই ওদের উৎখাত করা যাবে না ।কারণ ওদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মাদ্রাসাগুলো ।ওখান থেকেই আসল জামাত কর্মী তৈরি হয় ।ওটাই ওদের আসল ঘাটি ।প্রতি বছর সিলেটে মাদ্রাসা থেকে কয়েকশত ছাত্র বের হচ্ছে ।এর অর্ধেকের যদি ব্রেইন ওয়াস ওরা করতে পারে তাহলে তাদের আর কি চাই ?আর সিলেটের লোক জন একটু বেশি ধর্মপরায়ণ হওয়াতে লোকবল সংগ্রহে ওদের কষ্ট কম হয় ।

''তিন বছর আগে এক ১৪ ডিসেম্বরে উপশহরের কিছু শিবিরের কর্মীকে দেখি আমাদের রোডে বায়তুল মাল তোলতে আসছে - আমার বাসায়ও এলো- শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে সেদিন শিবিরের সেই সব শুয়রদের ইচ্ছেমতো গালাগালি দিয়ে রোড় থেকে বের করে দিছিলাম , এরপর এক ঝাঁক জামাতী জামাতের লিফলেট নিয়ে আসছিল তত্ত্ববধায়ক আমলে - আমি সেই লিফলেট ছিঁড়ে ফেললে ওরা বলে এতে নাকি কোরানের আয়াত ছিল . আমি আরো একটি লিফলেট ছিঁড়ে ফেলি আর বলি - জামাতের লিফলেটে যাই থাকুক সেটা ছিঁড়ে ফেলা নৈতিক দায়িত্ব ।''
- একুশের এই জায়গাটা খুব ভাল লাগলো ।

জাহামজেদ এর ছবি

দেবু, তোকে এখানে দেখে ভালো লাগলো। মিডটাউন কমপ্লেক্স তো ওইটা, যেখানে এক শিবির কর্মী শাবির এক মেয়েকে এনে জিম্মি করে রেখেছিলো ?

তারপর শুনেছি, মদনের হোস্টেলটাও নাকি আর ক্যাম্পাসে নেই ?

দোয়েলের খালা কি সাপ্লাইয়ের কলি ছিলো, আমাদের সাথে প্রান্তিকে আড্ডা মারতো ?

...........................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

দেবজ্যোতি দাস দেবু এর ছবি

তোর কথা ঠিক ।এটাই সেই মিডটাউন কমপ্লেক্স ।যেখানে এখনো নানা ধরনের অপকর্ম হয় ।বাইরে থেকে বুঝাই যায় না ভিতরে কি হচ্ছে ।

হ্যাঁ,হোস্টেলটা এখন ভেঙ্গে এখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে ।এখন সেখানে আলাদা বিল্ডিং করে ক্লাস করানো হয় ।

হ্যাঁ,দোয়েলের খালা আমাদের সেই কলি ।

ধ্রুবনীল এর ছবি

অনলাইনে জামাত শিবিরের সিলেটের রাজনীতি সম্বন্ধে সার্চ করতে গিয়ে এই লেখা পেলাম।

সুলেখিত, তথবহুল লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে সিলেটে জামাত শিবিরের রাজনীতি বিষয়ক আরও তথ্য পাবার আশা রাখি। চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।