যে প্রথার গভীরে আছে অপমান, বেদনা দেউলেপনা

আয়নামতি এর ছবি
লিখেছেন আয়নামতি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০২/০৫/২০১৫ - ২:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দৃশ্য-এক

- হ্যালো অমুক, আমি তমুক বলছি, তোমার খালু কী বলেছেন আমি ফোন করবো আজ?

-বিস্ময় চাপা দিতে দিতে অমুকের প্রশ্ন -আমাকে কেন ফোন করতে হলো জানতে পারি?

- হোয়াট দ্য ***! তুমি আমার বায়োডাটা দেখোনি? ইমেলে এ্যাচাট করে পাঠিয়েছি তো।

এখুনি ইমেল খোলো।

তোমার নামটা পছন্দ হয়েছে বুঝলে? স্মার্ট নেম। আমার লাস্ট নেমের সাথে দারুণ মানাবে।

তুমি দেখতে ঠিক কার মতো? মৌসুমী হামিদ কিংবা দীপিকা পাডুকোনের মতো কী?

- আমি দেখতে আমারই মতো।

- হা হা, সে তো বুঝলাম। তারপরও কিছু মিল থাকে না অন্যের সাথে?

এই ধরো আমার সাথে যেমন বলিউডের অমুক নায়কের মিল আছে, লোকে বলে আর কি!

- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন ওদের সাথে আমার মিল থাকতে হবে!

- ওরা আমার পছন্দের নায়িকা তাই।

শোনো, আমি কিন্তু ড্রিঙ্ক করি, বাঙ্গালি মেয়েদের এসব নিয়ে কিছু ন্যাকামি আছে যা আমার সহ্য হয় না।...... এসব কথা সামনাসমনিই হোক বরং।

অমুক তারিখ তমুক জায়গায় বিকেল শার্প ৫টায় চলে এসো। কফি খেতে খেতে কথাও হবে আর তুমি ঠিক কার মতো সেটাও বোঝা যাবে।

কথোপকথন এই পর্যায়ে থামিয়ে চলুন একটা কবিতার ভেতর ঢোকা যাক।

"বউ কী রকম হবে"

অলোক সরকার

------------------

চিরহরিতের দেশে সে এক কাহিনী
আমরা চেয়েছি
বউ হবে প্রজাপতি আঁকা
মাটির কলসি
যা উল্টে রাতারাতি পাপ ঢাকা যায়
বউ হবে বর্ষাজলে বেড়ে ওঠা তীব্র লাউডগা
কিন্তু সে কামুক দেখে এক ছুটে পালিয়ে আসবে।

ভাত বেড়ে দেবে
জামা কেচে দেবে
জুতো মুছে দেবে
আমরা চেয়েছি তবুও তার কামপাতা যেন বেরিয়ে না পড়ে।

সিঁদুর পরবে
আলপনা দেবে
পায়েস বানাবে
মাতাল স্বামীর জন্য জানলার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

চিরহরিতের দেশে সে এক কাহিনী
আমরা মাতাল
আমরা ধনুক
আমরা পলাতক

বোতল ফাটিয়ে
হাতঘড়ি বেচে
পুলিশের বন্ধুর জিপে বাড়ি ফিরে আসি
কিন্তু বাড়ি ফিরে যেন আলপনা দেখি
যেন দেখি
বউ ভাত বেড়ে একা বিয়ের রাতের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে।

কবিতা শেষে আরেকটি দৃশ্যপটে চোখ রাখা যাক।

দৃশ্য-দুই

পরিবারের বিবাহযোগ্যা মেয়েটিকে আজ দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ। সকাল থেকেই তার তোড়জোড়। হাতেমুখে উপটান লাগিয়ে মামীর হুকুম মতো বসে থাকতে হয়েছে মেয়েটিকে। ছোটোচাচীর পরামর্শে ঘন্টাখানিক ঘুমিয়েও নিয়েছে। সবার চোখেমুখে চেনা দুশ্চিন্তা, এবার মুখ রক্ষা হবে তো?

বাবা-মা মুখে সেরকম কিছু না বললেও ওঁদের অসহায় মুখচোখ দেখে মায়া হবার বদলে মেয়েটির অভিমান হয়। বরাবরই সে নিরীহ গোছের। মুখ ফুটে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা জোর গলায় বলতে শেখেনি। এবার নিয়ে সাতবারের মতো তাকে দাঁড়াতে হবে অনেকগুলো তীক্ষ্ণ চোখের সামনে। যারা যাচাই বাছাইয়ের নামে ভালোমন্দ খেয়ে দেয়ে উঠে যাবার সময় আলগোছে জানাবেন 'পরে জানাচ্ছি।' গতানুগতিকভাবে তাকে আজও হয়ত শুনতে হবে, 'ছবিতে মেয়ের রংটা এতোটা বোঝা যায়নি তো! আচ্ছা, শুনি আর্টকলেজের ছেলেমেয়েরা সবাই নাকি গাঁজা চরস খায়? এত দারুণ সব সাবজেক্ট থাকতে তুমি বাপু আর্ট ফার্ট নিয়ে পড়তে গেলে কেন?'

এসব অবান্তর প্রশ্ন সঙ্গে থাকা তথাকথিত শিক্ষিত পাত্রটির জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক। তার মুখ টিপে হাসতে থাকা মেয়েটিকে সেরকম আভাস দেয়। ভীষণ ক্লান্ত লাগে তাকে ঘিরে এই এক প্রহসন নাটকে। খুব ইচ্ছে করে স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করে প্রতিবাদ জানাতে। মাটি দু'ভাগ হয়ে সীতাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করে ছিল প্রকৃতিমাতা। রাজভবনের বায়ু কিংবা সূর্য যাকে দেখতে পায়নি কখনো সেই দ্রৌপদীকে দুঃশাসন রাজসভায় অপমানিত করলে উপস্হিত সভাসদের কেউ এর প্রতিবাদ করেননি একমাত্র বিকর্ণ ছাড়া। জীবন মিথ না। যে কারণে অভিভাবকের দল পাত্রী দেখবার নাম করে যেমন খুশি অপমান করে যেতে পারেন। এখানে না সহায় হয় প্রকৃতি,না বিকর্ণ নামের কোনো প্রতিবাদী চরিত্র।

যেখানে প্রতিবাদ নেই সেখানে প্রতিকার আশা করা বৃথা। এই শতকেও তাই পাত্রী দেখানোর রীতি লোপাট হয় না আমাদের সমাজ থেকে। হয়ত রেওয়াজে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু আচরণে কমবেশি সবাই নিজের নিজের ইচ্ছের ফর্দ মিলিয়ে নিতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে আর্ট কলেজের শ্যামলা মেয়েটিকে দেখতে আসা পাত্রপক্ষের বা পিলে চমকে দেবার মতো বায়োডাটার মালিকের আচরণ "বউ কী রকম হবে"র মত খানিকটা। বলছিনা একতরফা শুধু মেয়েদেরই বাছ বিচার চলে, ছেলেদের বেলায় এমনটা হয় না।

কোথাও কোথাও ছেলেদেরও বাছ বিচার করা হয়। কিন্তু মেয়েদের অপমানের যন্ত্রণার কাছে সেসব নগণ্য। খুব কম পরিবার আছে যাদের মেয়ে/বোনের জীবনে এরকম অসহ্য অপমানজনক ঘটনা নেই। দুঃখের বিষয় নারীত্বের এই অপমানে নারীরাই সঙ্গ দেন যথেষ্ট মাত্রায়।

এক্ষেত্রে অনেক সময়ই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা সভ্য দেশে বসবাস করেও সভ্যতা রপ্ত করতে আমরা অনেকেই ভীষণ রকমের ব্যর্থ হই। নারীর সম্মানহানি শুধু মাত্র কিছু বিকৃত মনষ্কের ন্যাক্কারজনক আচরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। পাত্রী দেখার নামে নারীকে অসম্মান-অপমানের আচরণ উচ্চ শিক্ষিত, রুচিশীল বলে পরিচিত মানুষের মাধ্যমেও হরদম ঘটছে।

প্রথম কথোপকথনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এখানে। ফোনে কথোপকথনরত ভদ্রলোকটির অবস্হান যুক্তরাষ্ট্রে,তিনি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা মানুষ। অথচ বৈবাহিক সম্পর্ক স্হাপনজনিত সংস্কৃতিতে তিনি সামন্ত প্রভু। প্রাথমিক আলাপে শিষ্টাচারের ধারও ধারেননি এহেন মানসিকতার কারণে। অন্যের জীবনকে নিজের ইচ্ছার শিকলে বাঁধতে চাওয়ার নাম কখনো বিয়ে হতে পারে না। আজকের পরিপ্রেক্ষিতে তো নয়ই। একে অন্যের পছন্দ অপছন্দকে যেখানে সম্মান দেখাবার কথা, সেখানে তাকে অগ্রাহ্য করা বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে যেরকমটা হয় সেটি কী নারীর প্রতি অসম্মানের, অপমানের নয়? আমাদের সমাজবিধির মধ্যে মেয়েদের খাটো করবার চর্চা চলে এসেছে বলে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষিত পুরুষের তাকে প্রতিবাদহীন মেনে নেয়াটা তো শুধু নারীরই অপমান না পুরুষটির জন্যেও অপমানের, তার শিক্ষাদীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এমন আচরণে।

যে মেয়েটি শিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়ে চারুকলায় পড়েছে তাকে কেন অন্যের চিন্তার খোপে নিজেকে মানিয়ে নেবার আপোষ করতে হবে? আমার স্বপ্ন কেমন হবে সেটা অন্য একজন ঠিক করে দেবার কে? আমার নামের ব্যবচ্ছেদের স্বাধীনতাই বা অন্যের ইচ্ছা মাফিক কেন হতে হবে? কেন আমাকে অন্যের পোশাকে সাজতে হবে? অন্যের বাড়িয়ে দেয়া থালায় কেন আমি সোনামুখ করে খাবো? একজন ভিখিরিরও একটা নিজস্ব থালা থাকে। যুগ পালটেছে কিন্তু আমাদের আচরণ পালটানোর কোনো লক্ষণ নেই।

অপমান মুখ বুঁজে সহ্য করে আমাদের অগ্রজেরা সংসার জীবন নামের মায়ায় নিজেদের জুড়ে দিলেও একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আপনি কিংবা আমি কেনো তেমনটা মুখ বুঁজে সয়ে নেবো? মেয়ে দেখানোর নামে সমাজে চলতে থাকা নারীত্বের অপমান করার সভায় শিক্ষিত রুচিশীল পুরুষদের সবাইকে না হলেও একটা বড় অংশকে বিকর্ণের ভূমিকায় দেখতে চাই। হোক প্রতিবাদ। প্রতিবাদ যেখানে, সুন্দর প্রতিকার সেখানে আলো হাতে এসে দাঁড়ায়।

কনে দেখার এই অপসংস্কৃতিকে রুখে দিতে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের শক্ত অবস্থান থাকা চাই। বাধ্য হয়ে অপসংস্কৃতির ঢলে গা ভাসিয়ে দিয়ে এসব অনাচার মেনে নেয়াটা শুধু আপোষকামিতা নয়, এটা চরম কাপুরুষত্বেরও লক্ষণ। আমি জানি আজকাল অনেক ছেলে বেরিয়ে এসেছেন ওই কুসংস্কৃতি থেকে এবং একটা মেয়ের পছন্দ অপছন্দকে সম্মান দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু তার সংখ্যা অতি নগণ্য। এখনো মধ্যযুগীয় সামন্ত মানসিকতা বিরাজ করছে অধিকাংশ পুরুষের মনে, এমনকি পশ্চিমা দেশে বসবাস করা বাংলাদেশী মানুষদের মধ্যেও। সভ্য দেশে বাস করেও অসভ্যতায় সায় দেয়া পুরুষের সংখ্যাই দুঃখজনকভাবে অনেক অনেকগুন বেশী।

পুরুষেরা যদি প্রচলিত এই কুসংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পারেন তাহলে সমাজ চলমান এই সংস্কৃতিকে বদলাতে বাধ্য হবে। সুতরাং পুরুষকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীদের পাশাপাশি। বিয়ে হলো একটি যৌথজীবনের সূচনা। বিয়ের সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সমন্বিত সভ্য সহাবস্থান পরিবারের বাকী জীবনের জন্যও বিশেষ প্রয়োজনীয়। আসুন কুসংস্কৃতি বর্জন করে আলোর পথের যুথবদ্ধ যাত্রী হই।

-----------

কৃতজ্ঞতা:
জয় গোস্বামী।
অলোক সরকার।


মন্তব্য

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

[quoteনারী নিজের কাঠামোতে বাস করেনা, নারী বাস করে পুরুষের নির্মাণ করে দেওয়া কাঠামোর মধ্যে]

এখনও অনেক অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে বৈকি! হাসি

এক লহমা এর ছবি

চলুক
"নারীর সম্মানহানি শুধু মাত্র কিছু বিকৃত মনষ্কের ন্যাক্কারজনক আচরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। পাত্রী দেখার নামে নারীকে অসম্মান-অপমানের আচরণ উচ্চ শিক্ষিত, রুচিশীল বলে পরিচিত মানুষের মাধ্যমেও হরদম ঘটছে।" যৌবনে ভেবেছিলাম আমরা বড় হয়ে বুড়ো হতে হতে এই কুৎসিত, এই অমানবিক অত্যাচারী প্রথা বন্ধ না হলেও অনেক কমে আসবে। আজ দেখি, সে এখনো অনেক দূরের পথ।

"এখনো মধ্যযুগীয় সামন্ত মানসিকতা বিরাজ করছে অধিকাংশ পুরুষের মনে, ... ... সভ্য দেশে বাস করেও অসভ্যতায় সায় দেয়া পুরুষের সংখ্যাই দুঃখজনকভাবে অনেক অনেকগুন বেশী।" - সেইটাই! মন খারাপ

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তাপস শর্মা এর ছবি

সামাজিক অবস্থান, পরিস্থিতি - এগুলি নিয়ে না হয় আর নাই বা বললাম। বুলি আউড়ানো মনে হবে শুধু। এই শ্রেণীর সামাজিক বিয়ে এবং মেয়েদের পণ্যের ঢংয়ে প্রেজেন্ট করার মানসিকতা যতদিন চলতে থাকবে ততদিন এগুলি চলতেই থাকবে। এগুলি বিয়ে না, এগুলি পাত্রী পক্ষের পক্ষ থেকে পাত্রপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা। আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েটির জন্য এই কিসিমের বিয়ে হয়ে ওঠে এক ধরনের সামাজিক ধর্ষণ...

এবং একটা অংশে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত অব্জারবেশনে মনে হয় এইসব ক্ষেত্রে নারীদের কিছু পরিস্থিতির জন্য নারীরা দায়ী, - এক তরফা চাপানো কথা বলছি না, অনেক উদাহরণ দেয়া যায় এর জন্য... কিন্তু কথা আবার সেটাই সামগ্রিকভাবে তাকে বুঝানো হয় সে মেয়ে, সুতরাং মেনে নেয়াটাই তার একমাত্র অপশন...

হয়তো বদলাবে একদিন। হয়তো আমরা দেখে যেতে পারবো না, হয়তো...

অতিথি লেখক এর ছবি

যখন স্কুলে পড়তাম, তখন হস্তাক্ষর ভাল হওয়ার কারণে পরিবারের অনেকের বিয়ের বায়ডাটা আমাকে লিখতে হত। কি নিদারুণ হাস্যকর জিনিস ছিল সেগুলি! পাত্র-পাত্রীর বর্ণনার তুলনায় তাদের পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা (উদাঃ খালু উপসচিব, প্রমাতামহ সাবেক জেলা পরিষদের মেম্বার, প্রপিতামহ ব্রিটিশ আমলে জজ কোর্টের পেশকার, বোনের শ্বশুর কলেজের অধ্যক্ষ) দিয়ে ভরা থাকতো (এখনও হয়ত থাকে)। এসব তথ্য হবু পাত্র-পাত্রীর জন্য কিভাবে প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে ভাবার বালাই কারও ছিল না।

আসলে প্রাক-শিল্পায়িত সমাজে বিয়ে দুজন ব্যক্তির মধ্যে হয় না, হয় দুটি পরিবারের মধ্যে, দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে। পরিবারকে খুশী করার জন্য দুজন মানুষ হয়ত সুখের ভান করে সারাজীবন কাটিয়ে দেন একটা অসুখী সম্পর্কে। আমাদের পূর্ব প্রজন্ম এভাবে বিয়ে-সংসার করতেন, কারণ তারা অন্য কিছু জানতেন না; আর জানলেও সামাজিক চাপের কাছে হার মেনে নিতেন। কিন্তু "অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ" নামের এই অসুস্থ চর্চা তো আমাদের ধরে রাখার দরকার নেই। তারপরও আমরা ধরে রাখি...

Emran

তিথীডোর এর ছবি

বিবাহ নিয়ে কথাটথায় যাবো না, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ নামক জিনিসটিকে ডরাই।

নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা মানুষ

হেহ, নামকরা জায়গা থেকে পাশটাশ করা চদরিদের নিয়ে ঈষৎ মুগ্দ্ধতা ছিলো একসময়। সে বেকুবি ঘোর কেটেছে।
মানুষ হিসাবে যা শেখার দরকার, যা কিছু শেখা উচিত-- লোকে ঐ অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ডের মধ্যেই শেখে, 'পরিবার' থেকে। সেখানে ঘাটতি থাকলে, মানে গার্জিয়ান লেভেলে মানুষ করার খামতি থাকলে গ্র্যাড ইস্কুলে আর কী-ই বা শিখবে।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমত বিবাহ একটা ব্যার্থ প্রথা। সহযাত্রার ক্ষেত্রে এর তেমন কোনো প্রয়োজন নাই। যতটুকু যা আছে তা সামাজিক নিরাপত্তার খাতিরে, যেহেতু আমরা মানুষেরা খুব একটা মানুষ এখনো হইনি, উন্নততো দূরের কথা। আর এই বিয়ে যদি হয় যথাযথ পূর্ব পরিচয়হীন পারিবারিক আয়োজনে কেবল, তা কেবল দৃষ্টিকটূই নয়, প্রকারান্তরে অশ্লীলও। আর তখন এই চুক্তি চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে বিকারই যে সামনে আসবে তাতে আর বিষ্ময়ের কী? একদিন সব ঠিক হওেব এসবকে এখন অতিকথন বাগাড়ম্বর মনে হয়। যা হোক তবুও আশা করাটাও এক ধরনের প্রথা।

লেখা ভালো লাগলো।

স্বয়ম

রানা মেহের এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে।
মেয়ে দেখা নিয়ে আমার কিছু কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে। নিজের আর অন্যের। এই জিনিসটা তার প্রাচীন সব গৌরব নিয়ে এখনো কীভাবে টিকে আছে, সেটা একটা রহস্য।

একটা জিনিস। বিশ্ববিদ্যালয় লেভলে পড়া একটা মেয়ের এইটুকু কন্ঠ থাকা উচিত যে তার বাবা মাকে বলবেন, সাতবার পাত্রপক্ষের সামনে যাবার মতো অসভ্যতা আর হয়না। নিরীহ হওয়া মানে যে নিজের মর্যাদা রক্ষায় নির্মম হওয়া যাবেনা, সেরকম কিন্তু নয়।

পারলে নারী সপ্তাহে আরো লেখা নামিয়ে দিন হাসি

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তিথীডোর এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়া একটা মেয়ের এইটুকু কন্ঠ থাকা উচিত যে তার বাবা মাকে বলবেন, সাতবার পাত্রপক্ষের সামনে যাবার মতো অসভ্যতা আর হয়না।

চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সুমাদ্রী এর ছবি

পারিবারিকভাবে পাত্রকে পাত্রী দেখানোর মাধ্যমে আমাদের এখানে যে বিয়েটা হয় সেটা মেয়েদের জন্য অপমানজনক, ক্লান্তিকর কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যাদের কপালে আসলেই প্রেম জুটে না, কারও সাথে সিরিয়াস সম্পর্ক তৈরী হয় না অথচ তারা বিয়ে করতে চান, সবার মত স্বাভাবিক একটা জীবন-সংসার করতে চান তাদের জন্য আর কোন পথ খোলা আছে বলে মনে করেন আপনি? এখন অবশ্য অনেক ঘটকালির আন্তর্জালিক ঠিকানা আছে, কিন্তু এটাও আসলে একটা লটারি খেলাই তো।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

মরুদ্যান এর ছবি

কথা সত্য, রাস্তা খোলা নেই। মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তাপস শর্মা এর ছবি

এই বস্তু আজকের আমাদের পত্রিকায় রবিবারের যে বিশেষ 'পাত্র-পাত্রী' খোঁজার পেইজ থাকে সেখানে পেলাম। যদিও এগুলি কী রকম ভয়ংকর সেক্সিস্ট এবং রেসিস্ট এড হয় তা বলে হুদা প্যাঁচাল পাড়তে চাই না। মাগার এই জিনিস আমার বিশেষ পছন্দ হইছে। শালায় কিছু বাকি রাখছে না, তাই তুলে দিলাম...

রানা মেহের এর ছবি

পাত্রের বর্ণনা শুনে আমি নিজেইতো প্রেমে পড়ে গেলাম।
পাত্রীর একটা যোগ্যতাতো আমারই আছে, দেশের বাড়ি সিলেট।
তাপস, একটু প্লিজ খোঁজ করুন না ভাই বিবাহিত মুসলিম এক সন্তানের জননী পাত্রী পোস্টে এপ্লাই করতে পারবে কি না। মনে বড় আশা ছিল মন খারাপ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আয়নামতি এর ছবি

এই রকম পাত্র পাইলে ভাবিয়া দেখা যায় কিন্তু! দরকারে ধর্মরে জলেতে ভাসানো কুনু বেপার না চোখ টিপি

আয়নামতি এর ছবি

প্রৌঢ়ভাবনা- লাথি মেরে যদি কাঠামোর কোমরটা ভেঙে দেয়া যেতো!

একলহমা- কমে আসবে ভেবে চুপচাপ থেকে যাওয়ার জন্য রীতিটা তো কমেইনি বরং আজকেও এই চরম অপমানজনক ব্যবস্হাটা রয়েই গেছে। প্রতিবাদ না করলে প্রতিকার আসে কেম্নে!

তাপস শর্মা- বুলি আওড়ানো কিংবা কথার কথা যথেষ্ট হয়ে গেছে। আপনি আপনার অবস্হানে থেকে এসব ব্যাপারে 'না' বলুন অন্যকেও বলতে উৎসাহ যোগান। এসব রীতি ভোজবাজির মত যেমন একদিনেই গড়ে ওঠেনি, তেমনি একদিনেই একজনের প্রতিবাদে লোপাটও হবে না। তবুও আওয়াজ তোলা দরকার। হয়ত আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এর সুফল পাবে।

ইমরান- আপনার মন্তব্য পড়ে আমাদের বাড়িতে আসা পাত্রপক্ষের চাচা/মামা চৌদগুষ্টির কে কী ইত্যাদির রম্য ইতিহাস মনে পড়ে গেলু দেঁতো হাসি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ কে খারিজ না করে বরং মেয়ে/ছেলে দেখার রীতিটাকে খারিজপূর্বক কেম্নে একটা সভ্য পথে আগানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করাটা জরুরী। কারণ সবাই প্রেম করে বিয়ে করবেন এমনটা অসম্ভব চিন্তা বটে।

তিথীডোর- বিবাহ বিষয়টারে ডরেরই লাগেরে! যে কারণে বিবাহ কে চিরদিনের জন্য 'না' করিয়াছি শয়তানী হাসি
দু'একজনকে দিয়ে সবাইরে জাজ করা বোকামি হয়ে যায় আসলে। সেটা করিও না।

মানুষ হিসাবে যা শেখার দরকার, যা কিছু শেখা উচিত-- লোকে ঐ অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ডের মধ্যেই শেখে, 'পরিবার' থেকে। সেখানে ঘাটতি থাকলে, মানে গার্জিয়ান লেভেলে মানুষ করার খামতি থাকলে গ্র্যাড ইস্কুলে আর কী-ই বা শিখবে।

এ কথাই যদি কহিলা তাইলে রানাপুর কথায় আঙুল উঁচাইলা কেনু? বিষয়টা স্ববিরোধী হয়ে গেলু না! ইয়ে, মানে...

স্বয়ম- ডাইরেক্ট একশনে নেমে যাবার সময় হইছে। কেউ একজন শুরু করবে এই আশায় থাকতে থাকতে কেয়ামত আসিয়া পড়িবে তো!

রানা মেহের- এরকম অভিজ্ঞতা ৬০% কিংবা তারো বেশি মেয়েরই আছে হয়ত। রহস্যের কিছু নাই আসলে, আমরা অর্থাৎ আমাদের পরিবারের হর্তাকর্তারা চেয়েছেন বলেই টিকে আছে এটা। আর প্রতিবাদ না হওয়ায় পোয়াবারো হয়েছে আরো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েরা সবাই যদি সেরকম প্রতিবাদীই হতেন তাহলে তো আজকে আমাদের মেয়েদের(শিক্ষিত)
অবস্হানটা অন্য রকম হবার কথা ছিল। সেরকম কি দেখি আমরা? গত বছরের কোন এক সময়ে পত্রিকাতে খবর এসেছিল
ডাক্তার মেয়ে তার বাবাকে অনুরোধ করছিল শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে যেন বাবা এসে নিয়ে যান। তার পরিণতিটা জানেন হয়ত।
কেন একজন ডাক্তার মেয়েকে এতটা অসহায় হয়ে বাবার কাছে সহানুভতি চাইতে হবে? কারণ আমাদের সমাজ ওরকমটাই ভাবতে শেখায়। তুমি মেয়ে, তোমাকে বিনাবাক্যে সব মেনে নিতে হবে। নারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে কয়জন শিক্ষিত নারীকে সরব হতে দেখা যায় বলে ভাবেন? রেশিওটা তেমন আশা জাগানিয়া না মোটেও। চারুকলার ঐ মেয়ে আমার আপুর স্কুল জীবনের বন্ধু। তার বিবাহ পরবর্তী জীবনটা আরো ভয়াবহ রকমের হয়েছে। ওঁর পতিদেবতা অফিস যেতেন বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে, ভাবা যায়??? ইবসেনের 'নোরা' যে কারণে আমার আইডল। সবাই মিলেই লেখালিখি হোক। হোক প্রতিবাদ।

সুমাদ্রী- খুব ঠিক কথা বলেছেন সবাই প্রেম করে বিয়ে করবেন এরকম ভাবনাটা অসম্ভব এবং অবাস্তব।
অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ঘোর বিরোধী তা কিন্তু বলছি না, বলছি মেয়ে/ছেলে দেখানোর অস্বাস্হ্যকর রীতিটা বন্ধ করা দরকার।
মেয়ে তো বেকারিতে গড়া কেক বা পেসট্রি না যে অর্ডার মত গড়ে দেয়া হবে বেকারি থেকে। পরিবারের একগুচ্ছের আত্মীয় স্বজনের উপস্হিতিতে একটা মেয়েকে অপ্রস্তুত হতে হয় সেরকম পরিস্হিতি এড়িয়ে যিনি বিয়ে করতে আগ্রহী তিনি যদি পাত্র/পাত্রীর সাথে নিজেই স্বশরীরে কথা বলার অবস্হায় যেতে পারেন(ফুনের ঐরকম না কিন্তু!) তবে ভালো হয়।
দরকারে সেশনটা দু'পর্বের হতে পারে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাওয়ালারা আরো ভালো কিছু পরামর্শ দিতে পারেন।
--------
যারা প্রকাশ্যে বা আড়ালে আবডালে চোখ টিপি থেকে লেখাটা পড়ছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আসলে এসব লিখে কিছু হয়না জানি। তারপরও লিখলাম অন্তত একজনও যদি এবিষয়ে 'না' বলেন সেটাই বা কম কী!

তিথীডোর এর ছবি

নাহ, বিষয়টা স্ববিরোধী হয়ে গেলু না।

  • মানুষ হিসাবে যা শেখার দরকার, যা কিছু শেখা উচিত-- লোকে ঐ অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ডের মধ্যেই শেখে, 'পরিবার' থেকে।
  • বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়া একটা মেয়ের এইটুকু কন্ঠ থাকা উচিত যে তার বাবা মাকে বলবেন, সাতবার পাত্রপক্ষের সামনে যাবার মতো অসভ্যতা আর হয়না।

পরিবার ওই কন্ঠ তোলাটা শেখানোর মতো সাপোর্টিং হলে সাতবার পাত্রপক্ষের সামনে যাবার মতো অসভ্যতা করতে বলতো নাকি? হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

এক লহমা এর ছবি

আমি, আমার সমমনা অনেক মানুষ প্রতিবাদ করেছে। তার কিছু সুফল কোথাও কোথাও ফলেছে। কিন্তু আরও এত বহুগুণ মানুষ হয় চুপ করে থেকেছে, নয় এই প্রথাকে সমর্থন করে চলেছে যে, সেই সুফল সিন্ধুতে বিন্দু পরিমাণ হয়ে রয়েছে। তবু, প্রতিবাদ জারি রাখা, প্রতিবাদ বাড়িয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুই জন মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার কমপক্ষে তিনটা উপায়ের কথা আমরা জানি।

১। নিজে খাইট্টা খাওয়া পদ্ধতি। এটাতে ভাগ্যের সহায়তা আবশ্যক। ভাগ্য সহায় হলেও আনুষ্ঠানিকতা পর্যায়ে দেখাদেখির একটা অনুষ্ঠান থেকেই যায়।
২। অভিভাবকদের খাটানো পদ্ধতি। এটাতে দেখাদেখির কমপক্ষে একটা মাস্ট পর্ব থাকে।
৩। পাখি ভাই পদ্ধতি। এটাতে দেখাদেখি না করাটা গলায় দড়ি দেয়ার শামিল।

সুতরাং দেখাদেখি ব্যাপারটা থেকেই যাচ্ছে। এটাকে অবমাননাকর অনুষ্ঠানের আকারের না করে শুধুমাত্র ঐ দুই জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। যারা সংসার করতে যাচ্ছে তারা পরস্পরকে কিছুদিন দেখুক, বুঝুক। আর যাদের ফাউ পোলাও-কোর্মা খাওয়ার শখ তারা কাঙালীভোজের অনুষ্ঠানে যেতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একটু অন্যরকম বিষয়। কনে দেখা ব্যাপারটা যে নারী লাঞ্ছনার পর্যায়ে পরে এদেশের অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না, কিংবা বুঝেও সুবিধামাফিক চুপ থাকে। নারীরাও যথেষ্ট সোচ্চার না। তুমি লিখলা বলে আমারো দুকলম যোগ করতে ইচ্ছে করলো।

যে কয়টি অপসংস্কৃতিকে আমাদের সমাজ সানন্দে মেনে নিয়ে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে, কনেদেখা তার মধ্যে অন্যতম। তো, এই পদ্ধতির পরিচালনা প্রযোজনা এবং পরিবেশনায় থাকেন অভিভাবকমহল। অভিভাবকমহল নারী পুরুষ উভয় পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে ভিন্ন ভিন্ন সময়েই। দেখা গেছে দুই পক্ষই এই পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট। কেননা যে মানুষটি মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে নতজানু কনে পক্ষ, সেই মানুষই ছেলের বিয়ের সময় দাপুটে বরপক্ষ। আমি একদম কাছের মানুষদের মধ্যেই দেখেছি এটা। সুতরাং অভিভাবক লেভেলে এই পদ্ধতি বর্জন প্রায় অসম্ভব। তাহলে কি এই অনাচার যুগের পর যুগ চলতেই থাকবে?

না, আমি পুরুষদের বলছি। আপনি যদি পুরুষ হন, এই কুপদ্ধতি প্রতিরোধ করতে পারেন আপনিই। এই অপসংস্কৃতিকে উৎখাত করার জন্য কোন বিপ্লবের দরকার নাই। আপনি যদি এখনো বিয়ে না করে থাকেন, আপনি নিজেই শুরুটা করতে পারেন। আমি বলছি না এরেঞ্জড বিয়েকে উৎখাত করতে হবে। থাকুক এরেঞ্জড ম্যারেজ। সবাই প্রেম করে বিয়ে করার সাহস সুযোগ করতে পারে না নানান কারণে। কিন্তু কনেদেখা ব্যাপারটাকে সভ্য করা সম্ভব। আমার মতে বিয়েটা যেহেতু দুই জনের জীবনের ব্যাপার, প্রাথমিক পছন্দের ব্যাপারটা ওই দুজনের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত।

ধরা যাক পাত্রের মা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে একটি মেয়েকে দেখে ভাবলো মেয়েটিকে তাঁর ছেলের সাথে মানাতে পারে। তখন সেই মা সেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারে মেয়েটা বিয়ের জন্য তৈরী কিনা। যদি ওরা পাত্র সম্পর্কে প্রাথমিক জেনে আগ্রহী হয় তারপর পাত্র এবং পাত্রী দুজন দুজনকে দেখাদেখির জন্য একটা যোগাযোগ সুত্র তৈরী করে দিতে পারে। এরপর পাত্রপাত্রী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে যাচাই করে দেখতে পারে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারগুলো। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তাড়াহুড়ো না করে দুজনকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সরাসরি না হলেও অন্তত ফোনে। ভীষণ দরকার এই আলাপন। সেই আলাপের পর তারা নিজ নিজ পরিবারকে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। রেজাল্ট পজিটিভ হলে পরিবার বাকী কাজ শুরু করতে পারে। নিগেটিভ হলে তো ওখানেই শেষ। এই ক্ষেত্রে পাত্রপাত্রী দুজনেই সমানভাবে দুজন দুজনকে যাচাই করার একটা সুযোগ পাবে এবং মেয়েটা কনের দেখার কুসংস্কৃতির নামে সামাজিকভাবে অপদস্থ হবে না।

এখানে যেসব বিবাহিত পুরুষ মন্তব্য করছেন, তারা নিজের উদাহরণটাও এখানে লিখলে ভালো হতো। আমি প্রেম করে বিয়ে করিনি। পারিবারিক পছন্দের বিয়ে। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দশটা দেখে বিয়ে করবো না। একটা দেখেই বিয়ে। বউ ভালো হলে আমার ভালো, বউ খারাপ হলে আমি দার্শনিক হয়ে যাবো, সেটা জগতের ভালো। এটা সক্রেটিস পদ্ধতি। তো আমি কি হলাম সেটা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু বাজারের সেরা গরুটা কোরবানী দিয়ে যারা জিপিএ ফাইভের উল্লাস করে, তাদের সাথে সেরা বউ বাছাই করা কোন পার্থক্য আমি দেখি না। তবে এটুকু বুঝি নারীকে তারা পশুর চেয়েও কম সম্মান দেয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পুরুষেরা যদি প্রচলিত এই কুসংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পারেন তাহলে সমাজ চলমান এই সংস্কৃতিকে বদলাতে বাধ্য হবে। সুতরাং পুরুষকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীদের পাশাপাশি। বিয়ে হলো একটি যৌথজীবনের সূচনা। বিয়ের সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সমন্বিত সভ্য সহাবস্থান পরিবারের বাকী জীবনের জন্যও বিশেষ প্রয়োজনীয়। আসুন কুসংস্কৃতি বর্জন করে আলোর পথের যুথবদ্ধ যাত্রী হই।

একমত। সেইসাথে সঠিক যৌনশিক্ষা এবং আমাদের জাতীগত মানসিকতার বদলও প্রয়োজন মনে হয় আমার কাছে।

আয়নামতি এর ছবি

তিথীডোর- মেয়ে এত বুঝে এইটা বুঝে না, পরিবারের সাপোর্ট থাকলে তাকে সঙের মত বার বার পত্রপক্ষের সামনে
দাঁড়াতে হয় নাকি! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই সবাই কন্ঠ ছাড়ো জোরের দলে যাইতে পারে না। এর অনেককক উদাহরণ প্রত্যক্ষ করিয়াছি বলেই উক্ত বক্তব্যে সহমত জানাইতে পারতেছি না সরি!

একলহমা- ঠিকই, সিন্ধুর মাঝে বিন্দুর অবস্হান থাকা না থাকারই সমান। বহুগুন মানুষ যদি মেয়েদের মানুষ সম্মান দেবার কথা ভেবে একটু কন্ঠ ছাড়তে পারতো তাহলে আজকেও এই অসভ্যতা টিকে থাকতো না রে।

ষষ্ঠপাণ্ডব- অভিজ্ঞতার আলোকে অতি মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। আপনার মতামতের সাথে সহমত না জানিয়ে পারছি না।

নীড় সন্ধানী- আপনিও অভিজ্ঞতার আলোকে অতি মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। আশা করবো আপনাদের পরামর্শ প্রেমহীন শ্রেণির
বিবাহে আগ্রহী ভাই/বোনদের কাজে লাগবে। বিবাহ সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত ভাবনা জেনে মজা লাগলো।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ-

সঠিক যৌনশিক্ষা এবং আমাদের জাতীগত মানসিকতার বদলও প্রয়োজন মনে হয় আমার কাছে।

পুরাই সহমত। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের বিষয়ে সন্দেহ আছে। দেশজুড়ে পহেলা বৈশাখের ঘটনা
নিয়ে এত আলোড়ন হলো অথচ ক্ষমতায় থাকা নারী সকল কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা নেত্রীদের পক্ষ থেকে সেভাবে প্রতিবাদ হলো না! ভাবা যায!!!

অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি লেখা পড়ে আপনাদের মতামত জানাবার জন্য।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

নিজের পছন্দমতো বিয়ে করেছি, তাতেও গালমন্দ কম শুনিনি। মানুষের কথা শুনে হাসতাম। তাদের বিস্ময় দেখে অবাক হতাম। কেউ কেউ বলতো, আহারে মেয়েটাতো ভাল বলেই জানতাম!
আমি কিন্তু সেই প্রথমই জেনেছিলাম, আমি ভাল মেয়ে নই।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

বিবাহ ব্যাপারের সুফল আর কুফল দুইটাই আছে। সে ব্যাখ্যায় না গেলাম ( ঠিক মতো বুঝাইয়া বলতে পারবো না তাই খাইছে ) । বিবাহের আগের যে ইস্যু, অ্যারেঞ্জ অথবা নিজেদের সম্মতিতে পছন্দ সহ পরিবারের সম্মতি আদায়ক্রমে, নারী আর পুরুষের পছন্দ-অপছন্দের ইস্যুতে ছোটখাটো যে মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয় , পরবর্তীতে সে ইফেক্ট ছেলের মাধ্যমেই ছেলের পরিবারে পড়তে পারে ক্ষেত্র বিশেষে তার স্ত্রীর উপর।

আধুনিকতা কয়জন মানুষকে সত্যিই আধুনিক করতে পারছে কে জানে ! চাপাইয়া দেয়াটা একজন মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের উপর যেমন কমে নাই, শ্বশুর বাড়ি থেকেও কমে নাই স্বামী বা তার বাড়ির লোকজন থেকে। এই কনে বা ছেলে দেখাদেখির পার্টটা হরিবল! নিজের নিজের ঘরের মানুষকে যদি আমরা সঠিক জিনিসটা বুঝাইতে পারতাম, তাইলে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসতো!

অপর্ণা মিতু

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রায় এক দশক পিরেম করিয়া বিবাহ করিলাম সবেমাত্র দেঁতো হাসি । এইসব দেখাদেখিটেখির ধার ধারতে হয়নি একেবারেই কিন্তু বিয়ের দিন আমার পূর্বপরিচিত এক সম্পর্কিত শ্বশুর যে আচরণ করলেন তারপর নিজেরই মনে হলো বোধহয় ঘটা করে দেখা, বিয়ের কয়েকমাস আগে আশির্বাদ-এইসব নিয়ম মানা হলো না বলেই তার মনে এত ক্ষোভ! ঘটনা কিন্তু পুরাই একশ’ ভাগ সত্যি-পরে তাই শুনলাম; আচার-প্রথায় তাদের নাকি এতই বিশ্বাস যে মানুষকে মানুষ মনে না করলেও ক্ষতি নেই কিন্তু প্রথা মানতে হবে তা সে যত বর্বর প্রথাই হোক চোখ টিপি

দেবদ্যুতি

আয়নামতি এর ছবি

সাদিয়া সুলতানা- লোকের কথায় কী আসে যায়! মনের কথা শুনতে হয়। খারাপ ভালু সবই আপেক্ষিক
বেপার আসলে। তবে লুকের কথা শোনার আগে থেকেই আমি জানি, আমি খ্রাপ দেঁতো হাসি এণ্ড ইউ নো আই ইনজয় বিয়ং এ খ্রাপ পার্সন চোখ টিপি

অপর্ণা মিতু- কথা সত্যি, পরিবার থেকে চাপিয়ে দেবার চর্চাটা ওঠে গেলে সমাজ থেকেও চটিবাটি গুটিয়ে পালাতো এটা।
আফসোস এমনটা খুব কম পরিবারে হয়।

দেবদ্যুতি- আর নিয়ম, সংস্কার! ঋতুপর্ণের ফার্স্ট পার্সনে আছে দেখো, একজনের অন্তর্জালি যাত্রার ব্যবস্হা হয়েছে।
সেখানে অসুস্হ তার উপরে বুড়ো বাবাকে রাত বিরাত না মেনেই গঙ্গা স্নান করানো হচ্ছে পৈতাকে শুদ্ধ রাখবার জন্য। আহারে সংস্কার রে! বাবার জন্য মায়া না থাকলেও পৈতার জন্য ষোলোয়ানাই আছে। ধর্মের এই গোড়ামি সে যে ধর্মের হোক না কেন, মানুষের জন্য কতোটা উপকারী ভাববার বিষয় বটে। বাপ্রে! ধর্ম নিয়ে কথা না বলাই ভালু খাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।