জীবিত মৃতদের সংলাপ

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৩/২০০৮ - ১০:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিন পর সচলে এসে আড্ডাবাজি শুরু করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। হঠাৎ করে এভাবে নিজেকে উধাও করে নিজেই বেশ মজা পাচ্ছিলাম। বন্ধু বান্ধবদের দু'একজন যে টোঁকা মেরে জিগ্যেস করেননি যে বেঁচে আছি কি না, তা অস্বীকার করব না। তাদের কথার উত্তর দেওয়ার আগে প্রতিবারই নাকের সামনে হাতের তালু দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করে আশ্বস্ত হয়ে উত্তর দিয়ে বলেছি, "বেঁচে আছি"। বেঁচে থাকার মতো আনন্দকর শব্দ এখনকার সময়ে আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না। আমরা দাঁত কামড়ে বেঁচে থাকতে শিখেছি সেই ছোট বেলা থেকে। টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডাইরিয়া, বসন্ত, জন্ডিস, রোগ ব্যাধি, সাইক্লোন, খরা, বন্যা, হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রা কোন কিছুই আমাদের মারতে পারে না। আজরাইলকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য নীরবে-নি:শব্দে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে থাকি। একেবারে মরে যাওয়ার আগে আমরা অনেক বেশী মৃত্যুর স্বাদ নিয়ে যাচ্ছি। কারণ, এদেশে এখন মৃতরাই সবচেয়ে বেশী সুখী। এরাই একমাত্র এখন বেঁচে বর্তে আছে। বাকী জীবিতরা মৃতের মতো ভং ধরে আছে।

অনেক বছর আগে গল্পের বইতে পড়েছিলাম। লেখকের নাম মনে নেই। অসুস্থ মুমূর্ষ স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে স্ত্রী জায়নামাজে বসে দোআ করছে, "হে পরওয়ারদিগার, আমার স্বামীকে না নিয়ে তুমি আমাকে নিয়ে যাও। তবুও তাকে বাঁচিয়ে রাখো"। বলতে না বলতেই কিম্ভুতকিমাকার আকৃতির প্রাণী ঘরের দাওয়ায় এসে হাজির। বাড়ীর গরু খাবার না পেয়ে হাঁড়ির মধ্যে মুখ দিয়ে মুখোশ বানিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকতে যাচ্ছিল। স্বয়ং আজরাইল ঘরের দাওয়ায় হাজির ভেবে আতঙ্কিত স্ত্রী চীৎকার করে বলে উঠল, "রুগী তো পাশের ঘরে"। ভাগ্যিস, ব্যাপারটা ক্ষুধার্ত গরুর মুখে আটকে পড়া হাঁড়ির মুখোশেই আটকে ছিল। আজকাল মুখোশ পড়া আজরাইলদের ভয়ে তটস্থ থাকেন সজ্জনরা। কখন এরা কাকে সমন দিয়ে বসেন।

আজকাল দেশের আগামাথা সবাই লেখক সেজে বসে আছেন। স্বয়ং সেনাপ্রধানও এবারের একুশের মেলায় হাজির। এরশাদ যখন রাস্ট্রপতি ছিলেন তখন প্রতি সপ্তাহে বক্তৃতার মাঝেও তার কবিতা শুনতে হতো। অথচ ক্ষমতার চামচ মুখ থেকে খসে পড়ার পর থেকে একটি ছত্রও তৈরী হলো না। অথচ ক্ষমতাহীন অবসর মুহুর্ত্বে লেজে হোমো এরশাদের মহাকাব্য রচনা করার কথা ছিল। আমাদের সেনাপ্রধানও গণতন্ত্রের প্রেসক্রিপশন নিয়ে সংকলন তৈরী করে হাজির। মহাসমারোহে বই মেলায় হাজির। কিন্তু পাবলিক এখন আবার সংকলন টংকলন পড়তে চায় না। নতুন বোতলে পুরনো মদের কদর এদেশের লোকজন বুঝে না। এরা আবার মুখচেনা ব্রান্ডে বিশ্বাস করে। কাজেই নতুন বোতল বাজারজাত স্বভাবতই কম হয়। লোকজন পুরনো বোতলের ব্রান্ডের মাল খুঁজতে থাকে। লোকজনের এই পুরনো প্রীতি কি আর কলমের খোঁচায় বদলাবে? তাই বোতলের ফেরীওয়ালা দু'দিন পর পর বদলালেও নতুন বোতলের কদর বাড়ছে না। হায়রে অভাগা দেশ!!

গতকাল খবর পেলাম, এরশাদকে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে সৌদী যুবরাজ মার্সিডিজ দিয়েছেন। কি প্রগাঢ় বন্ধুত্ব!! এই দেশে মরা হাতির দামও যে কোটি টাকা তা সকল কচুপুজারীরা জানে। মার্সিডিজ কি আর মাগনা আসে? বিনিময় মূল্যটা উহ্য থাকে। যুবরাজ জানে, তাই অর্ঘ্য দিয়ে যায়। কে কয়টা বিমানর অর্ডার পাবে, কয়লার খনি পাবে, মুর্তি পাবে, সমুদ্রের ইজারা পাবে, কাঁটাতারে আটকানো রেল লাইন পাবে, তার উপর নির্ভর করবে বাদ বাকী হিসেব নিকেশ। নগদ হিসেব। বাকীর হিসেবে এখন কেউ ধরা দেয় না। সবাই নিজের হিস্যা নিয়ে ব্যস্ত। রাজনৈতিক সরকার না থাকলে আরো সুবিধা। লুটে পুটে খেতে কোন মানা নেই। এটাই হচ্ছে আজকালকার জিও পলিটিক্স। গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থাপনা। স্বয়ং হার্ভার্ড প্রফেসর বাংলাদেশে ঘুরে নগদ নারায়ণ হাতে নিয়ে শিকাগো ট্রিবিউনে আগ্রাসী সামরিক শক্তির বন্দনা তৈরী করতে বসে যান। গত মাসেই লেখাটা বেরিয়েছে। চোখে পড়েছে। পড়েছি। আজকাল যতো কম বলা যায় ততোই ভাল। আর যদি বলতে হয় তাহলে টিভির টক শো গুলোর মডেলে কথা বলতে হবে। স্বৈরাচারী চর্কায় কে কয় মন ঘি ঢালবে তার উপর নির্ভর করবে এসব জীবিত মৃতদের জীবন যাপন।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এইতো আইসা পড়ছে হিমুর আব্বুভাই।
মিয়া আপনেও কি বড় হুজুরের মতো কোনো সংকলনের উদ্দেশ্যে কলম ধরছিলেন নাকি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আড্ডা'দাকে স্বাগতম।

বড় হুজুর কে? @ ধুসর

অতিথি লেখক এর ছবি

"বেঁচে থাকার মতো আনন্দকর শব্দ এখনকার সময়ে আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না।"----- নিষ্ঠুর বাস্তবতা।

রাকিব হাসনাত সুমন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রতিদিন সকালে চোখ খুলে নিজের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলি- বাহ বেটা বাঘের বাচ্চা
বেঁচে গেলি বাড়তি আরও একটা দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঠিকাছে।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আড্ডাবাজ এর ছবি

হিমু কে? বড়ো হুজুর কে? হিমুর সাথে বড়ো হুজুরের সম্পর্ক কি? আপনার কাশি সারছে? নার্সের খবর কি?@ধুসর।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো কথা।

অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আহা, এই লোকটাকে দেখিই না।
কই আছে কেমন আছে কে জানে।
খোদানাখাস্তা - র‌্যাবে ধরে নাই তো আবার?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।