প্রকৃত সারস

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন আনন্দী কল্যাণ (তারিখ: রবি, ২৬/০৯/২০১০ - ২:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল কী কারণে যেন সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হয়েছিলাম। ঘাড়ে দু’তিন ফোঁটা পানি পড়ল। কোত্থেকে পড়ে তা দেখার জন্য উপরে তাকায় দেখি ইয়া বড় এক চাঁদ উঠেছে। চাঁদে চোখ পড়ার সাথে সাথে শোলক বলা কাজলা দিদি, ঝলসানো রুটি, ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভাল, গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না ইত্যাদি হাবিজাবি লাইন লাইন ধরে দাঁড়ালো। পস্ দিলাম, দেখি নিজের কী মনে হয়। ফকফকে মাথা। এদিক ওদিক ঝাঁকাই, পরিপাটি খালি। এই উত্তরাধুনিক দিনকালে চাঁদ, ফুল, পাখি নিয়ে লেখা নিষেধ। এ থিওরি কি আমার? নাহ। কী লেখা উচিৎ আর উচিৎ না, এইসব কুতর্ক বাদ দিয়ে স্বতঃস্ফুর্ত কলম চালাই। যেমন ইচ্ছা লেখার আমার কবিতার খাতা। শামসুর রাহমান। খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি, এক পৃথিবী লিখবো বলে, একটা পাতাও শেষ করিনি। জয় গোস্বামী। স্বতঃস্ফুর্ত শব্দটা ভুল নিশ্চই, বিশ্বস্তভাবে ভুল। একটা নিজের লাইন, একটা নিজের শব্দ। চাই, নাই। কুমারী মেরী? না, তিনি ঈশ্বরের। কোথায় পাব তারে? রবিঠাকুরের। অনাঘ্রাতা? এ শব্দটাও রবির। আমার একটি কথা বাঁশি জানে। চলবে না, রবিকবির গানের লাইন। লারারও প্রিয় গান। এবার চাঁদ কে একটা কুৎসিত গালি দিতে মন চায়। হচ্ছে না, হবে না। হাংরি, অ্যাংরি, বিটের ইশারা। এরপর হাউল খুবলে খায় বাকিটুকু।

I saw the best minds of my generation destroyed by madness, starving hysterical naked,

dragging themselves through the negro streets at dawn looking for an angry fix,

angelheaded hipsters burning for the ancient heavenly connection to the starry dynamo in the machinery of night,

who poverty and tatters and hollow-eyed and high sat up smoking in the supernatural darkness of cold-water flats floating across the tops of cities contemplating jazz,
Moloch! Moloch! Robot apartments! invisable suburbs! skeleton treasuries! blind capitals! demonic industries! spectral nations! invincible madhouses! granite cocks! monstrous bombs!

They broke their backs lifting Moloch to Heaven! Pavements, trees, radios, tons! lifting the city to Heaven which exists and is everywhere about us!

Visions! omens! hallucinations! miracles! ecstacies! gone down the American river!

Dreams! adorations! illuminations! religions! the whole boatload of sensitive bullshit!

Breakthroughs! over the river! flips and crucifixions! gone down the flood! Highs! Epiphanies! Despairs! Ten years' animal screams and suicides! Minds! New loves! Mad generation! down on the rocks of Time!

Real holy laughter in the river! They saw it all! the wild eyes! the holy yells! They bade farewell! They jumped off the roof! to solitude! waving! carrying flowers! Down to the river! into the street!

নিজেকে কেমন এঁটো লাগে। অসোয়াস্তি। তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা। নিঃশ্বাসে সীসা। চোখ জ্বলছে। বোধ হয়, গালফ অফ মেক্সিকোতে পেলিক্যানের সাথে মিলে চৌবাচ্চা মৃত্যু আমার, তেল একটি ননপোলার দ্রব্য বিধায় জলের সাথে মিশ খায় নি, তাই অক্সিজেন দুষ্প্রাপ্যতা। মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়। আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ। সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে, বিষের পুতুল। পরজীবি স্বর্ণলতা ছাড়া আর কী? অভিমন্যুর মত ঢুকে গেছি কৌরবশ্রেষ্ঠদের ব্যূহে, না জেনেই বের হবার কৌশল। যা বলি, যা লিখি, যা গাই, প্রতিটা অক্ষর, প্রতিটা সুর কারও না কারও। বড় অনিরাপদ লাগে। কিছু শব্দ, কিছু লাইন ঘুরে ঘুরে বিরামহীন তুকতাক চালায়। মাদল বাজে, সময় হল নৈশভোজের। আমাকে ছেড়ে দাও, আমি বাড়ি যাব।

বেবাগ স্মৃতিহীন আর নিরক্ষর হয়ে ধুলায় বসে আঙুল দিয়ে লিখে আরেকবার শুরু করতে চাই। হয় না?

দোহাইঃ [১] মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়- বিনয় মজুমদার

[২] আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ। সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে, বিষের পুতুল। - আবুল হাসান


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আরেহ!! এটা কোন আনন্দী! হাসি

কেমন আছো?

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

হেহে, এনারে আমি চিনি না।

ভালোই আছি। একটু বোরড। তুমি? হাসি

তিথীডোর এর ছবি

লেখাতে প্লাস,
মাঝরাতে আবুল হাসানকে মনে করিয়ে দেওয়ায় মাইনাস!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আমাদের তখন মাঝদুপুর, তাই ভুতের ঢেলা খেয়ে এই আবজাব হাসি

পুতুল এর ছবি

সুন্দর।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কবির জন্য কবিতা লেখাই নির্বন্ধ। এর বাইরে কবি যাই করতে যাক হাঁসফাঁস করে মরবে। কাব্যলক্ষ্মীর প্রতি অবহেলা প্রকৃতি সহ্য করেনা। কবিতা - তা কয়েকটা শব্দ হোক বা পংক্তি তার যতোটা নামবে কবির নিঃশ্বাস ততো স্বাভাবিক হয়ে আসবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

কথা একদম সত্য, পাণ্ডবদা।

সুরঞ্জনা এর ছবি

মাঝদুপুরে চাঁদ? হাসি
আজকাল এত কম লেখা কেন?
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

লিখতে চাই, পারি না।হয় না।

সুরঞ্জনা এর ছবি

............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

কুলদা রায় এর ছবি

আনন্দীর জন্য আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতার এক টুকরো-

ঘুম এসে কোলে করে নিয়ে গেছে যতোবার আমার শরীর,
ততোবার স্বপ্নের দংশন;
জাগ্রত আমার
মন থেকে কোন্ অফুরন্ত গোলাপ ছুটেছে।
নীলিমায় পুঁতে দিও আমার কাফন ॥
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কুলদাদা, কবিতাটার জন্য।

সবজান্তা এর ছবি

মারাত্‌মক !

আমার কেন জানি এই ধরনের স্বগতোক্তি জাতীয়, কিংবা কবিতা সংক্রান্ত গদ্য যা কিনা মাঝে মাঝে কবিতারও অধিক বলে মনে হয়, দারুণ লাগে (যথেষ্ট প্যাঁচাইতে পারলাম কি ? )

আর পাঁচ তারা শুধু শিরোনামটার জন্যই। বিনয়ের এই কবিতাটা আমার কাছে দারুণ লাগে।


অলমিতি বিস্তারেণ

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

হেহে, যথেষ্ট প্যাঁচাইসেন দেঁতো হাসি

বিনয়ের কিছু কিছু লাইন অপার্থিব, মনে হয় এই ধুলোমাটির পৃথিবীতে সৃষ্টি নয়, অন্য কোনখানে।

অদ্রোহ এর ছবি

ব্লগরব্লগর ঠিক যুতসই মনে হচ্ছেনা, এ ধরনের আনকোরা লেখার জন্যে একটা নতুন ক্যাটাগরি না হলেই নয় হাসি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ব্লগরব্লগর ভারি নিরাপদ ক্যাটাগরি, সবকিছু এঁটে যায় ওতে দেঁতো হাসি

এটার নাম দিয়েছি কোলাজ, আর কিছু মাথায় আসল না।

ধন্যবাদ পড়বার জন্য।

দময়ন্তী এর ছবি

সুন্দর সুন্দর! ভারী সুন্দর৷

ইয়ে, ওটা 'ব্যুহ', বুহ্য নয়৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দময়ন্তীদি ঠিক করে দেবার জন্য।
আলসেমি করে ডিকশনারি দেখা হয় নি, কনফিউশন ছিল হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দুর্দান্ত। কবিতার কোলাজ অসাধারণ লাগলো।

হে হে হে... আমিও একটা করছিলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- নজরুল ভাই হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।