আমাদের অনলাইন দাবা টুর্নামেন্ট

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: বুধ, ১৩/০৪/২০১১ - ৬:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাহিদ ভাইয়ের কাছ থেকে আচমকা আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম দাবা খেলার। উনি কানাডাতে থাকেন, আমি ইউরোপে। ইন্টারনেটের কল্যাণে দুরত্ব খুব সমস্যা করে না। আন্তঃমহাদেশীয় দাবা খেলতে থাকি আমরা। টুকটাক খেলাতে আর কথাতে আমরা আবিষ্কার করি, দাবা খেলেন এরকম পরিচিতজনের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অনেকেই নিভৃতে দাবা খেলেন। অনেকেরই দারুণ পছন্দের খেলা এটি। আর সবার কথা জানি না, আমি দল পাকাতে দারুণ পছন্দ করি। দল পাকাতে পারলেই হৈ-হুল্লোড় হয়, আড্ডা জমে ওঠে। সবাই মিলে খেলার ভাবনাটা মাথাচাড়া দেয় সেই ভাবনা থেকেই।

প্রথমবার খুব বড় আয়োজন করতে সাহস হয় না। তালগোল পাকিয়ে যাবার ভয় কাজ করে। ছোট্ট একটা নোটিশ দিয়ে শুরু করি আমরা।
অনলাইনে একটা দাবা টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে চাই, কে কে খেলতে চান?

নোটিশটা বোধহয় সবার নজরেও পড়ে না। প্রথমবার খেলতে আগ্রহী হন দশজন। খেলোয়াড়রা ছড়িয়ে থাকেন সারা পৃথিবীতে। টুর্নামেন্টের আয়োজনে সবচে বড় সমস্যাটা হয়ে দাঁড়ায় সময় মেলানো। একজন খেলোয়াড়ের যখন অবসর মেলে তখন আরেকজনের হয়তো মধ্যরাত। কেউ সময় বের করতে পারলে হয়তো তার প্রতিদ্বন্দ্বীর জরুরি কাজ পড়ে যায়। আমাদের খেলতে হয় অফিস, পড়াশোনা, ল্যাব, সংসারের মতো অনেক ঝামেলা বাঁচিয়ে। দেশে ইন্টারনেট আর বিদ্যুতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেন না অনেকেই। তারপরও আমরা খেলতে থাকি। অফিসের জরুরি কাজ এড়িয়ে, থিসিস লেখায় অনভিপ্রেত বিরতি দিয়ে, প্রেমিকা/সহধর্মিনীর অগ্নিদৃষ্টিতে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়েও যে যার মতো সময় করে নেন সবাই। শুনেছি সচলের এক মডু মডারেশনে ফাঁকি দিয়ে খেলেছিলেন। মডুরা বহুরূপী হওয়ায় তাঁকে চিহ্নিত করা যায়নি।

খেলাগুলো হয়েছিল চেস.কম-এ। এই সাইটটির অনেকগুলো সুবিধা আমাদেরকে মুগ্ধ করে। ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত থাকায় জটিল 'সাইনইন' প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয় না। নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায়। যে কেউ খেলা দেখতে পারেন। ইচ্ছেমতো পুরোনো চাল রিওয়াইন্ড করা যায়। খেলা মাঝপথে বিরতি দিয়ে অফলাইন হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে কথা (chatting) বলতে পারেন। দর্শকরা খেলায় মন্তব্য করতে পারেন। খেলোয়াড়দের ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলতে পারেন। চাইলে দাবার বোর্ড ব্যবহার করে চাল এঁকে বুঝিয়ে দিতে পারেন। খেলোয়াড়রা খেলার মাঝে দর্শকদের সেসব মন্তব্য দেখতে পান না। তাঁরা সেসব পড়তে পারেন খেলা শেষ হওয়ার পর।


কেবল অনলাইনে দাবার আয়োজন করতেই আমরা একটা গ্রুপ খুলে ফেলি ফেসবুকে। আমাদের আড্ডা জমে ওঠে। আমরা মনিটরের দিকে ঝিম মেরে বসে থাকি। প্রতিদ্বন্দ্বীর ফন্দি ধরতে পেরে কুটিল হাসি দেই। অন্যেরা কমেন্ট করেন। টুকটাক জটিলতা এড়িয়ে, মহাদেশীয় খেলোয়াড়দের অংশগ্রহনে দারুণভাবেই শেষ হয় আমাদের অনলাইন দাবা টুর্নামেন্ট। প্রথম অনলাইন দাবা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেন আমাদের তানিম ভাই এবং জাহিদ ভাই। চমকপ্রদ একটা খেলার শেষে বিজয়ী হন সচল জাহিদ। আমাদের জাহিদ ভাই।

এই সুযোগে অভিনন্দন জানিয়ে যাই আমাদের প্রথম অনলাইন দাবা টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন জাহিদ ভাইকে

মাথায় ঘিলু কম থাকায় আমি নিজে এবার বিশেষ সুবিধা করতে পারিনি। প্রথম থেকেই হেরে ভূত হয়েছি। (ভাবছি আর্মি জয়েন করব কি না!) তবে আমি ছাড়বো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব দ্রুতই আরেকটা টুর্নামেন্টের আয়োজন করে একেবারে দেখিয়ে দেবো সবাইকে। আমাদের সুহানও তার লাল প্যান্টটা পরে নাই বলে গত টুর্নামেন্টে একটুর জন্য বিজয়ী হতে পারেনি। পরবর্তী টুর্নামেন্টের জন্য শুনেছি সে তার 'লাল প্যান্ট' ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি করতে দিয়েছে। তানিম ভাইকে কথা দিয়েছিলাম ফাইনালে তার পক্ষের চিয়ার গার্ল হিসেবে থাকবে ওনার পছন্দের পুনম পাণ্ডে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মৌলবাদীদের নানা ঝামেলা এড়িয়ে পুনম আসতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। তানিম ভাই তাই মনের দুঃখে ভুল চাল দিয়েছিলেন ফাইনালে...

প্রথম আয়োজন বলেই কিছুটা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আমরা পুনম পাণ্ডের উপস্থিতি আগে থেকেই নিশ্চিত করব। ধুগোদা (ধুসর গোধূলি) গত টুর্নামেন্টে সূক্ষ্ম কারচুপি ধরতে পেরেছিলেন। এসব সূক্ষ্ম কারচুপিকে স্থূল করে তোলার জন্য এবার বিশেষ আম্পায়ার হিসেবে তিনি থাকবেন। খুব শীঘ্রই আমরা আমাদের পরবর্তী টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছি। যাঁরা খেলতে চান তাঁরা চটজলদি আমাদের গ্রুপে যোগ দিয়ে নাম নিবন্ধন করুন। খেলা কীভাবে কোথায় হবে সব সেখানেই পাওয়া যাবে। গ্রুপে যোগ দেয়ার আগে কেবল মনে রাখতে হবে এই গ্রুপটি শুধুমাত্র দাবার জন্যেই।

পরবর্তী টুর্নামেন্টে আপনারা অংশ নেবেন সেই আশায় রইলাম।

বানান কৃতজ্ঞতা: বুনোহাঁস

ছবি: 
03/06/2009 - 3:20am

মন্তব্য

সচল জাহিদ এর ছবি

সে এক বিরাট ইতিহাস, ঘরে ছিলনা কেরসিন!! আসলে দাবা খেলা ভুলেই গিয়েছিলাম, চর্চাতো দূরের কথা সাদা রাজা কালো ঘরে বসে না সাদা ঘরে বসে সেটাও ভুলে যেতে বসেছিলাম। হঠাৎ গতমাসে সচলে একটি পোষ্ট আসে, 'আসেন দাবা খেলি শিরোনামে'। লেখক ক্রিকেটের জোরে হারিয়ে যাওয়া দাবার জন্য আক্ষেপ করছিলেন। সেই পোষ্টে অনার্য সঙ্গীত গেমনট ডট কমের কথা লিখেন যেখানে অনলাইন দাবা খেলা যায়। কম্পিউটারে দাবা খেলা মানেই জানতাম একটি দাবা খেলার প্রোগ্রামের সাথে খেলা। গেমনটে যেয়ে দেখলাম সেখানে অনলাইনে প্রতিপক্ষ হিসেবে রক্তমাংসের মানুষের সাথে খেলা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একই সময় দুই জন খেলোয়াড় অনলাইনে নাও থাকতে পারেন সেই জন্য একটি চালের পর ৩ দিন পর্যন্ত প্রতিপক্ষ সময় নিতে পারে। তবে যে দুইজন খেলবেন তারা নিজেরা যদি সময় করে একই সাথে খেলতে বসেন তবে জমপেশ খেলা হবার কথা। সেই উদ্দেশ্য থেকেই অনার্য সঙ্গীতরে ফেইসবুকের মাধ্যমে দাবা খেলায় আমন্ত্রন জানানো। টুকটাক খেলা চলার ফাকেই এই টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা। বাকী গল্প এই পোষ্টের মাধ্যমে সবার জানা।

পুরো আয়োজনের সময়টা দারুন কেটেছে। যদিও ল্যাবে কাজ বাদ দিয়ে খেলেছি তারপরেও চমৎকার কিছু সময় কেটেছে। এই আয়োজনের পেছনে সবচাইতে পরিশ্রম করেছে অনার্য সঙ্গীত, টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা, নিয়মাবলী, খেলার শিডিউল, খেলার ফলাফল জানানো সব কিছুই সে করেছে। এই পোষ্টের মাধ্যমে অনার্য সঙ্গীতকে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করে গেলাম। আশা করি বড় মাপে এই জাতীয় টুর্নামেন্ট শীঘ্রই আবার হবে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

জুয়েল এর ছবি

জাহিদ ভাই যে ভাল দাবা খেলেন তা ত জানা ছিল না। তবে কায়েস ভাই এর মত crazy মনে হয় না। কায়েস ভাই জানলে নাচতে নাচতে join করবে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

হুঁ, কেবল লাল প্যান্টটা ছিলো না দেখে প্রথম খেলা শেষেই বিদায় নিলাম। থাকলে দেখে নিতাম সব ব্যাটাকে... এইবার খালি প্যান্টটা আসুক- এক্কেবারে ফাটিয়ে ফেলবো দেঁতো হাসি

টুর্নামেন্টে দারুণ মজা হয়েছে। খেলার মাঝে কেউ বাজার করতে যান, কেউ রাত জেগে খেলে পরদিনে ক্লাস বা অফিসে গিয়ে ঝিমান। আন্তঃমহাদেশীয় এইরকম একটা প্রতিযোগিতার স্বাদ এই প্রথম পেলাম। খেলা খুব একটা না পারলেও খেলা নিয়ে মজা করতে আমি একদম পিছপা নই।

সকল প্রতিযোগীকে শুভেচ্ছা। আর অনার্য সঙ্গীতকে বিশাল একটা ধন্যবাদ বহু ঝামেলার মাঝেও এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্যে।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

প্যান্ট-ট্যান্ট কিছু না তোর উচিত ছিল আমার সাথে কয়েক দান লাইভ খেলে- হেরে- একটু অভিজ্ঞতা নিয়ে- তারপর ওখানে খেলতে বসা চাল্লু

ফারুক হাসান এর ছবি

শুধু দাবা খেলাটাই একটু কম পারি, নাইলে ফাটিয়ে দিতাম। চোখ টিপি
টুর্ণামেন্টটা জটিল হয়েছে মন হলো চলুক

অমিত আহমেদ এর ছবি

দারুণ উদ্যোগ চলুক
আগামী টুর্নামেন্ট জুনের আগে শুরু হয়ে গেলে অংশ নেয়া সম্ভব হবে না। এরপরে হলে অবশ্যই আছি।

জহিরুল ইসলাম নাদিম(!) এর ছবি

আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে (সিকি শতাব্দীর কম হবে না) আমার সম্পাদনায় একটা ম্যাগাজিন বের হয়েছিল। আপনার ওয়ারীর বাসা থেকে একটা ছড়া জোগাড় করে তাতে ছাপিয়েছিলাম। সম্ভবতঃ সেই ছড়াটিও আপনার সংগ্রহে নেই। ম্যাগাজিনের কোনো কপি এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। তবে স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে ছড়াটি। তুলে দিচ্ছিঃ

ঘরে মশা বাইরে মশা
যায় না শোয়া যায় না বসা
অতিষ্ঠ প্রাণ মশার গানে
গেলাম পৌরসভার পানে।

পৌরসভার প্রৌঢ় লোকে
নাস্তানাবুদ নানান শোকে
এত্তকিছুর মধ্যিখানে
মশার ব্যাপার ক্যামনে ঢোকে?

প্লেনে অষুধ ছিটিছিটি
হাসছে মশা মিটিমিটি!

সাফি এর ছবি

অনার্যর দেখি গুণের শেষ নাই

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এই ছড়াটি মনেহয় উনি রিটন ভাইয়ের পোস্টে লিখতে চেয়েছিলেন। এই ছড়া লিখেছি আমি! তাও সিকিশতাব্দী আগে! অ্যাঁ

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফি এর ছবি

অনার্য, দারুন মজা লেগেছে খেলে... অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

দ্রোহী এর ছবি

একদিন আমিও! দেখে নিয়েন, একদিন আমিও!

রাজীব  রহমান এর ছবি

আমারো জাহিদ ভাইয়ের মত অবস্থা। দাবা খেলা একরকম ভুলেই গেছি। শেষ কবে খেলেছি মনে করতেই পারছি না... বছর দশেকের কম হবে না...

অনার্যকে এই আয়োজনের জন্য অনেক ধন্যবাদ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।