আমি কেন এই বিশ্বকাপ দেখার উপযুক্ত নই

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: শনি, ১২/০৬/২০১০ - ১:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কিছুদিন আগে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ফাউন্ডেশন অর্থায়িত একটি নারী টিভি সাংবাদিক কর্মশালার সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ভালো জায়গায় ভালো খাওয়া এবং সম্ভাব্য পরবর্তী চাকরিদাতাকে খুঁজে পাওয়া - এই দুই ধান্দায়। সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন, অন্যান্য বিশিষ্ট নারীদের মধ্যে, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক উপদেষ্টা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরবর্তীতে পদত্যাগী। সেই ইতিহাস হয়ত কমবেশি জানা। সনদ দেয়া হবে যাদের হাত দিয়ে তাদের মধ্যে তিনিও একজন। স্টেজে উঠলেন। বললেন, এই কথাটি না বললে তার রাতের ঘুম হবে না : ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি নারীর প্রতি অসম্মান করে যে বিজ্ঞাপনের ধারা সৃষ্টি করেছে তার তিনি তীব্র নিন্দা জানান। যদিও এই ভালো উদ্যোগটি - যার অন্তিম লক্ষ্য গণমাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন - ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে, তবু, এইকথা না বললে ঘুমে সমস্যা। কিন্তু আমার হলো। ভালো জায়গার ভালো খাওয়া খেয়ে - এবং সেটি সম্ভাব্য চাকরিদাতার মাত্র ২-৩ চেয়ার দূরে বসে - আমার কী কারণে যেন ভালো ঘুম কেন কোনো ঘুমই হলো না। এই আমার স্বলালিত হিপোক্রিসি। শৌখিন স্ববিরোধ। মার্ক্সবাদবিলাস। কিংবা সারমেয় উদরে অত্যুকৃষ্ট ঘৃত। কারণ যাই হোক। ঘুম হলো না। নইলে খালাত বোনটার সাথে নিশ্চয়ই ঘুমের দেশে দেখা হত। ঘুমের দেশ স্বপ্নের দেশ। সেখানে বহুজাতিক খয়রাতে অবলেরা প্রচণ্ড। খালাত বোন, আপনি যদি প্রথমটাতেই ফেলাফাউটাকে বর্জন করতে পারতেন, তাহলে অপ্রিয় - ভালো খাবারে কাঁকর - কথাগুলো আপনাকে বলতে হতো না, আর আমিও উদারাময়জনিত অনিদ্রা থেকে রেহাই পেতাম।


কিন্তু অনেক ঘি-তেই আজকাল পেট কামড়ায়। মনকুকুরে ডাক পারে। বড়ভাই গো বড়ভাই, আমারে উপযুক্ত কিছু দেন। এইসব দিয়েন না।


বিশ্বকাপ ২০১০ শুরু হলো দক্ষিণ আফ্রিকায়। আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপ। আহ আফ্রিকা! স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে, নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত তখন তুমি কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে জেগে উঠেছিল - লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছন্দেমন্দে আপাতত প্যাচ লেগে গেছে। তারপরও রবীন্দ্রনাথ থেকে কোট করি। সঞ্চয়িতার খোঁজ নাই। আরেকটা কোট মারা যাক। এটা বলেছেন নাভি পিল্লে। ইনি দক্ষিণ আফ্রিকর এক নারী। জাতিসংঘের মানবাধিকার দূত। বলেছেন আমি বর্ণবৈষম্যের একজন শিকার ছিলাম, কিন্তু সেইসাথে একজন ফুটবলপ্রেমীও। বলেছেন আসেন এই সুযোগ বৈষম্যটাকে লাথি মেরে মাঠছাড়া করি (লেটস কিক ডিসক্রিমিনেশন অফ দ্য ফিল্ড)। অন্যায় বাধাগুলোকে ট্যাকেল করি। বর্ণবাদকে অফসাইডে নিয়ে যাই। কথাটা মনে ধরেছে। উদ্বোধনী খেলা দেখে এসে বাংলাদেশের একমাত্র নিউজ চ্যানেলটি দেখতে বসি। বাহ! বাংলাদেশের টিভি নারী সাংবাদিক এবং/অথবা নারী টিভি সাংবাদিক মুন্নী সাহা। ফেলাফাউএর বদান্যতায় যে মেয়েরা সাংবাদিকতা শিখেছে তাদের অনেকেরই আইডল তিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে জেনেছি। সেই মুন্নী সাহার বিশ্বকাপ মজমা! স্টুডিয়োতে ২ অতিথি। গায়ক শুভ্র দেব। ক্রীড়াসাংবাদিক উৎপল শুভ্র। লাগ শালা নামে নামে টক্কর। প্রথমেই পরিচয় পর্ব। দুজনেই বিশিষ্ট। মুন্নী বলে চলেন। একজন সাদা শুভ্র। আরেক জন কালো শুভ্র। পাঠক! আমি এই জিনিসটা লিখার জন্যই এই লেখাটা লিখতে বসেছিলাম। ভেবেছিলাম অনেক আবঝাব কথা বলতে বলতে গায়ের কাঁপুনিটা কমে আসবে। আঙ্গুলগুলো ঠিকমতো চলবে। কিন্তু চলছে না। আমি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত দেখেছি। শুভ্র দেবকে অপ্রস্তুত দেখেছি। উৎপল শুভ্রকে অপ্রস্তুত দেখেছি। অপমানিত দেখেছি। ক্রুদ্ধ হতে হতে সংবৃত হতে দেখেছি। এবং ঠিক শেষ হওয়ার আগে আগে আবার মুন্নী সাহাকে বলতে শুনেছি। সত্যি নাকি হ্যালুসিনেট করেছি জানি না - তিনি আবারও বললেন : দর্শক আমাদের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ। আমাদের সাথে ছিলেন সাদা শুভ্র আর কালো শুভ্র।

কবিগুরু, অন্ধকার আফ্রিকায় নাই। অন্ধকার আমাদের মনে। এবং এই কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে বসে, আমি এই বিশ্বকাপ দেখার অধিকার রাখি না।


একজন শিল্পী ও একজন সাংবাদিকের কাছে একজন অপেশাদার (একদা বেতনভূক) গণমাধ্যমকর্মী – শব্দটি হাস্যকর - হিসেবে সরাসরি দুঃখপ্রকাশের আর কোনো রাস্তা আমার জানা নাই। তবে এই লেখাটা আমার আজকের রাতের সুনিদ্রা নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে না। শুধু এইটুকু জানাই।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

এইরকম নষ্টামিগুলো পয়েন্ট আউট করা দরকার ।

হিমু এর ছবি

চিন্তা কৈরেন্না। একজন ধলা হাসিব আইসা না জুটা পন্ত আপ্নারে কেউ কালা হাসিব কৈবনা।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

মোমেন এর ছবি

`আমি হলে অবশ্য কোন বিপদই হতো না, কারণ যে দু'খানা ঘটনার কথা বলেছেন তার একখানাতেও আমি যেতাম না।

আর কো্থাকার কোন সাংবাদিকের কথায় বিশ্বকাপের উপর অভিমান!!!

মার্ক্সবাদই যত নষ্টের মূল হয় ভাল মতো ঢুকেন না হয় ঝেড়ে ফেলেন দেখবেন কোন ঝামেলা থাকবেনা।

মোমেন

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অবশ্যই। মার্কসবাদের মধ্যে অভিমান শব্দটা নাই। দুঃখের বিষয় আমার লেখাটাতেও নাই। চলেন ছাদে গিয়া পতাকা লাগাই। হুররে ....

পুনশ্চ:
মার্কসপরবর্তী ফানোঁ সাইকোঅ্যানালিসের সাথে শ্রেণীসংঘাতকে মিলিয়েছেন। অ্যাম্বিভ্যালেন্সের যে সূত্র তিনি দিয়ে গেছেন, এতে অভিমান শব্দটা জায়গা করে নিতে পারে।

_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমি অবশ্য বিষয়টাকে অতটা খারাপ কিছু দেখছি না। কথাটা স্থুল রুচির পরিচায়ক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু রেসিজম কিনা সেটা নিয়ে দ্বিমত আছে।

গায়ের রং উল্লেখ করাটা রেসিজমের লক্ষণ নয়। আমি ব্রাউন। আমার বর্ণনা দিতে গেলে বাদামী বর্ণের, এক্স ফিট ওয়াই ইঞ্চি লম্বা, খানিকটা মোটা - এইটাই বলবে সবাই। এটা রেসিজমের লক্ষণ নয়। এটা আমার কিছু বর্ণনা যেটা জন্মগত ('মোটা' বাদে, সেটা অর্জিত খাইছে )।

যদি বলা হত, সুমন বাদামী বর্ণের বলে লেখাপড়ায় ভালো। কিংবা বাদামী বর্ণের বলে অন্যদের থেকে কাজে কর্মে যোগ্য বেশী তাহলে সেটা নির্ঘাত রেসিজম হত।

বরং রংকে রং হিসেবেই দেখেছেন মুন্নী। গায়ের রংকে তার বাইরে অন্য কিছু নিয়ে তার মাথাতেই ছিলনা।

প্রশ্ন আসতে পারে একজন সাংবাদিকের কী এই বোধ থাকা উচিত ছিল না? হয়ত ছিল। কিন্তু আল্টিমেটলী কী আমরা এইরকম পৃথিবীই চাই না যেখানে গায়ের রং একটা সাধারণ প্রপার্টি হিসেবেই থাকবে এবং মানুষ খোলা মনে সেটার আলোচনা করতে পারবে?

এ বিষয়ে সাউথপার্ক কার্টুনটির "রেসিস্ট ফ্ল্যাগ" পর্বটি স্মর্তব্য।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মুর্শেদ ভাই, গায়ের রংটা সাধারণ প্রপার্টি। একমত।

কিন্তু সেটা যেহেতু ওইদিনের অনুষ্ঠানের সাথে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়, এবং যেহেতু এ্‌ই গায়ের রং-কে ভিত্তি করেই আমাদের সমাজেও প্রচণ্ডরকম বৈষম্য চালু রয়েছে, এবং যেহেতু গণমাধ্যমের সাধারণের মনোগঠনে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখে, সেহেতু এই বিষয়ে সতর্কতা কাম্য ছিল। এবং দিনের শেষে যে অসতর্কতা সমাজের জাগ্রত কিংবা সুপ্ত বর্ণবাদকে আরো সলিডিফাইড করে, সেই অসতর্কতা বর্ণবাদেরই নামান্তর। আর আল্টিমেটলি যেখানে গায়ের রং প্রাসঙ্গিক নয়, সেখানে গায়ের রংটাকে টেনে আনাটাই কি বর্ণবাদের লক্ষণ নয়? আপনার দেয়া উদাহরণগুলোতেও কিন্তু সেটাই হয়েছে।

খোলা মনে গায়ের রংয়ের আলোচনাটা ক্রীড়াবিষয়ক টক শোর জন্য মুলতবি রাখলেও, আমাদের প্রত্যাশিত পৃথিবী অর্জনের পথে খুব একটা ছেদ পড়বে না, বলে মনে করি।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কুপমন্ডুক [অতিথি] এর ছবি

আজকের আলু পত্রিকার হেড লাইনটা দেখেন
"কালো আফ্রিকায় উৎসবের আলো"- আগামি এক সপ্তাহের নিদ্রাই চলে যাবে!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এটা বরং বেশ আপত্তিকর। কালো আফ্রিকা মানে কী? আফ্রিকার মাটি কালো? নাকি আফ্রিকা অনুন্নত? নাকি আফ্রিকার মানুষগুলো কালো বলে আফ্রিকাও কালো? খুবই সংকীর্ণ মনের মনে হয়েছে শিরোনামটা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্বাস করেন, এই কথাটাই ভাবতেছিলাম, ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার পথে। সকালে উঠে দেখি পেপারের হেডিং " কালো আফ্রিতায় উৎসবের আলো"। সাথে সাথে কাল রাতে পড়া এই লেখাটার কথে মনে পরে যায়।
কি যে অবস্থা!
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এই প্রসঙ্গেও ধিক্কার জানিয়ে রাখলাম। প্রথম আলোর শুধু হেডিং কেন এ্ই পত্রিকার আগাগোড়ার অনেক কিছুতেই ন্যূনতম সংবেদনশীলতা ও সততার অভাব রয়েছে।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
_________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

মুন্নি সাহার সেই অনুষ্ঠানটি ভাগ্যক্রমে(!) আমারও দেখা হয়েছে!
আমিও কালো শুভ্র-সাদা শুভ্র ব্যাপারটা আপত্তি নিয়ে দেখেছি।

তাহসিন গালিব

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

একটা প্রশ্ন উঠতে পারে। মনে করেন, শুভ্রদেব কিংবা উৎপল শুভ্র- কেউই আসলে, এই বর্ণবাদে (মতভেদে স্থুলতায়) ঠিক মাইন্ড করেন নাই। সেক্ষেত্রেও আমি অবস্থান/বক্তব্য পাল্টানোর কারণ দেখছি না। এটা এইখানে মন্তব্য হিসেবে গুঁজে দিলাম। রেফারেন্স হিসাবে।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য এর ছবি

প্রথম আলোর শিরোনামটি অত্যন্ত আপত্তিকর।আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকার শিরোনাম কি করে এরকম হয়।

স্বাধীন এর ছবি

প্রথম আলোর শিরোনামটি খুবই আপত্তিকর। একটি পত্রিকায় কী করে এরকম শিরোনাম সহ রিপোটিং হতে পারে ভেবে পাই না। হতাশা জনক।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অশ্লীলও বটে। কিন্তু মজা হচ্ছে এর প্রতিটি শব্দই বিচ্ছিন্নভাবে নির্দোষ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সাইফ শহীদ এর ছবি

অনিন্দ্য সব সময় ভাল লেখে। নামটা দেখে পড়লাম বন্ধের দিন শনিবার সকালে। ব্যপারটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হওয়া ভাল।

জন্মগত ভাবে আমরা অনেকেই এখনো কিছুটা সংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসতে পারিনি। এর জন্যে দায়ী কিছুটা 'জিন', কিছুটা গড়ে ওঠার পরিবেশ এবং কিছুটা শিক্ষার পরিবেশ ও বাকিটা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

খুব ছোটবেলার ঘটনা। ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় এক বন্ধে কলেজের ৩ জন ব্রিটিশ VOS শিক্ষক কোলকাতা বেড়াতে যাবার পথে যশোরে আমাদের বাড়ীতে কিছুক্ষণের জন্যে অবস্থান করলেন। আমি আড়াল থেকে শুনলাম আমার বাবা বেশ অবাক হয়ে আমার মাকে বলছে -"খোকন এমন ভাবে সাহেবদের সাথে কথা বলছে যেন তারা বন্ধু।" আমি অবাক হয়েছিলাম আমার বাবার কথা শুনে। পরে চিন্তা করে দেখলাম - ব্রিটিশ ভারতে 'সাহেব'দের অধীনে চাকুরী করেছেন তিনি। তার চোখে আমার এই স্বাভাবিক ব্যবহারটি অন্য রকম লেগেছে। আমার বাবার জন্ম হয়েছিল ১৮৯৬ সালে।

আমি সিংগাপুরে এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছি। দুপুরে খাবার জন্য কয়েক জন এক সাথে লিফট দিয়ে নামছি। কোন ধরনের খাবারের দোকানে যাবো এই আলোচনা হচ্ছে। কোরিয়ান প্রতিনিধি আমাকে প্রশ্ন করলেন - "তোমাদের বাংলাদেশের খাবার কি ভারতীয় খাবারের মত?"
আমার জাতীয়তাবাদে আঘাত লাগলো। মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো - "তা বলতে পারো, যেমন তোমাদের খাবার জাপানী খাবারের মত।"

পরে সেখানে উপস্থিত আমার এক ঘনিষ্ট থাই বন্ধু আমাকে বললো - "তুমি যে এমন রিয়্যাক্ট করো তা জানতাম না। সে তো তোমাকে খোঁচা মেরে কথাটা বলেনি।" লজ্জ্বা পেলাম চিন্তা করে।

আমেরিকার স্কুলে আমার ১৪ বছরের মেয়েকে ভর্তি করা হয়েছে। আমি শুনলাম মা মেয়েকে বোঝাচ্ছে -"আমরা যতেষ্ট খোলা মনের, ফলে কাদেরকে তোমার বন্ধু বানাবে সে ব্যাপারে আমরা নাক গলাবো না। তবে পারলে ব্লাকদের সাথে বেশী মিশো না।"
ততদিনে যতেষ্ট আমেরিকান হয়ে গেছে মেয়ে। প্রচন্ড প্রতিবাদ মায়ের কথায় - "তুমি রেসিষ্টদের মত কথা বলছো কেন?"

উপরের উদাহরণ গুলি সবই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। মুন্নী সাহাকে আমি চিনিনা, দেখিনি - শুধু টিভির পর্দায় ছাড়া। তবে যতটুকু দেখেছি - মনে হয়না কাউকে আঘাত করে 'কালো' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আইনের চোখে 'Intent' একটি বড় ব্যাপার। অনেক সময় বেশী 'সেনসেটিভ' হওয়াও ভাল না - যেমন আমি হয়েছিলাম কোরিয় বন্ধুর প্রতি।

আর তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ নিজেই তো কালোর বন্দনা গেয়ে গেছেন।

সাইফ শহিদ

http://www.saifshahid.com

সাইফ শহীদ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রিয় সাইফ শহীদ,

প্রথমত আমি সত্যি সত্যি ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি আপনার এমন দীর্ঘ ও জীবনলব্ধ মন্তব্য পেয়ে। আপনার ব্যক্তিত্বের অনেক কিছুই (যতটুকু সাম্প্রতিক জেনেছি) আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে দারুণভাবে। সুতরাং এই মুগ্ধতাটুকু আগে জানিয়ে রাখি।

এবার এই প্রসঙ্গ। এই পোস্টটি একেবারেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে লেখা। কিছুটা ভাবালুতায় আক্রান্ত অবশ্যই। কিন্তু আমি একজন সেলেব্রেটেড সাংবাদিকের কাছ থেকে যে ন্যূনতম সংবেদনশীলতা আশা করেছিলাম সেটি না পেয়েই আহত হয়েছিলাম। অবশ্যই হতে পারে যে ব্যক্তিকে খাটো করার জন্য সাদা-কালোর অবতারণা হয়নি। কিন্তু যেহেতু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেই বর্ণবাদের ছোটখাট বীজ লুকিয়ে থাকে আর যেহেতু পৃথিবীটা দিনকেদিন সঙ্কীর্ণ আর সংঘর্ষময় হয়ে পড়ছে, সেহেতু, ওই বীজগুলোকে একটু সাবধানে বেছে ফেলে দিলেই মঙ্গল। আমাদের দেশের কালো মেয়েরা তো বটেই ছেলেরাও কত ধরণের মানসিক সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন সে বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আমার চেয়ে বেশি। সমস্যা হলো, গণমাধ্যম এই সামাজিক বৈষম্যগুলো সচল রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। নাটক-সিরিয়াল-বিজ্ঞাপন তো বটেই, আপাত নিরপেক্ষ সংবাদ ও টকশোগুলোতেও এ্‌ই ধরণের সামাজিক সমস্যাগুলো উৎসাহ পায়। তাই, এই বিষয়গুলোতে মাঝে মাঝে 'ওভাররিঅ্যাক্ট' করাও দরকার। এতে আমার লেখক বা ব্যক্তি ইমেজের ক্ষতি যদি বা হয়েও থাকে, তারপরও, হয়ত বৃহত্তর কোনো পরিবর্তনের পথে ছোট্ট একটা ধাক্কা দেয়া যায়। তাই প্রশ্নগুলো তুলি।

এবং অবশ্যই আমরা কেউ সংস্কারের বাইরে না। যেকোনো সংস্কারকে ঢালাওভাবে বাতিল করে দেয়ারও পক্ষে নই আমি। কারণ সংস্কারের ভিত্তিমূলে সত্যও যে থাকে অনেকটা!

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

পুনশ্চ : মার্কিন অপরাধ আইনে যেকোনো অপরাধের intent বিবেচনা করে ৫ রকম মাত্রা নির্দেশ করা হয়। মেনস রিআ বা গিল্টি মাইন্ডের আইনী ব্যাখা দিতে গিয়ে এই ৫ রকম মাত্রা নির্দেশিত হয়েছিল। culpability বা শাস্তিযোগ্যতার মাত্রাগুলো এমন (কঠিন শাস্তি থেকে লঘু শাস্তির ক্রমানুসারে সাজানো) :

১. Purposefully - the actor has the "conscious object" of engaging in conduct and believes or hopes that the attendant circumstances exist.
২. Knowingly - the actor is practically certain that his conduct will lead to the result.
৩. Recklessly - the actor is aware that the attendant circumstances exist, but nevertheless engages in the conduct that a "law-abiding person" would have refrained from.
৪. Negligently - the actor is unaware of the attendant circumstances and the consequences of his conduct, but a "reasonable person" would have been aware
৫. Strict liability - the actor engaged in conduct and his mental state is irrelevant

আমার মনে হচ্ছে মুন্নী সাহা ৪ এবং ৫ মাত্রার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। বিশেষত ৪।

সূত্র : উইকি
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।