নিউটনের আপেল কাহিনী - কতটুকু সত্যি, কতটুকু মিথ?

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/০৯/২০০৭ - ৭:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি গত পর্বে চন্দ্রশেখর আর এডিংটনের বিখ্যাত বিবাদ নিয়ে একটি লেখা দিয়েছিলাম। ভাবছি পদার্থবিজ্ঞানের মজার মজার বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সচলায়তনের পাঠকদের জন্য কিছু লেখা যায় কিনা। আমি অবশ্য জানি না এ ধরনের লেখায় পাঠকেরা কতটুকু আগ্রহ পান। যদি পান তবে হাল্কা আওয়াজ দিয়েন। সিরিজটা চলবে। নইলে আবার সেই আদি-অকৃত্রিম জলপাই প্যাদানিতে ফিরে যাব।

আমার এই লেখাটা নিউটনকে নিয়ে। ঠিক নিউটনকে নিয়ে নয়, আসলে নিউটনের সেই বিখ্যাত আপেল কাহিনী নিয়ে। আমরা সবাই নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার কাহিনীটা জানি যার ফলশ্রুতিতে এসেছে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব। কিন্তু এই গল্পের আদৌ কি কোন সত্যতা আছে? নিরপেক্ষ অণুসন্ধান কি বলে? লেখাটা বছর দু’এক আগে ভোরের কাগজে ছাপা হয়েছিল। ভোরের কাগজে তখন “একুশ শতক” নামে একটা বিভাগ চালু ছিল (এখন বিভাগটি বন্ধ হয়ে গেছে)। সে বিভাগে বিজ্ঞানের ওপরে লেখা টেখা ছাপাত তারা। আমারটাও দয়া করে ছাপিয়েছিল তারা। পরে যায় যায় দিন-এ (তখন সাপ্তাহিক) পুনঃমূদ্রিত হয়।

==============================

নিউটনের আপেল কাহিনী - কতটুকু সত্যি, কতটুকু মিথ?

'বলি আমরাও পারতাম'!

'কি পারতাম?' আমি অবাক আমার বন্ধুর 'ইউরেকা' মার্কা চাহনিতে।

'কি অবার? এই মধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার করে জগৎবাসীকে তাক লাগিয়ে দিতে'।

'তো সমস্যা কেথায়? তাক লাগাতে মানা করেছিল কে?'

সমস্যা তো গোড়াতেই। নিউটন সাহেবের কপাল ভাল। উনি বসেছিলেন তার বাগানে আপেল গাছের নীচে। গাছ থেকে আপেল খসে মাথায় পড়তেই তিনি বুঝে ফেলেছিলেন মহাকর্ষের নিগূঢ় রহস্যের কথা। কিন্তু উনি বিলেতে না জন্মে এই বাংলাদেশে জন্মালে তাঁকে বসতে হত আপেল নয়, কাঁঠাল গাছের নিচে। মাথায় আপেল পড়া আর কাঁঠাল পড়া তো আর এক কথা নয় রে ভাই! বাঙালী বিজ্ঞানীদের কপাল তাই মন্দ! মাধ্যাকর্ষণের ধারণা মাথায় এলেও কাউকে বলে যেতে পারেন নি। বিশাল ওজনের বেমাক্কা কাঁঠালের আঘাতে অকস্মাৎ মৃত্যু হওয়ায়...

'থাক! থাম এবার। তুই কি জানিস, নিউটনের এই আপেল মাথায় পড়ার কাহিনীটি একেবারেই বানানো?'

'বানানো মানে?' এবার অবাক হওয়ার পালা আমার বন্ধুটির!

'বানানো মানে, বানানো। স্রেফ বানোয়াট! তোর কি সত্যিই মনে হয় নাকি যে তিনি বাগানে বসলেন, মাথায় আপেল পড়ল- আর তার পরেই মহামতি নিউটনের বোধদয় হল- মারহাবা! নিশ্চয়ই এমন কোন নিয়ম প্রকৃতিতে আছে যার কারণে আপেল কিংবা অন্য বস্তু মাটিতে পড়ে! আমার আর তোর মত আহাম্মক তো সবাই!'

নিউটনের প্রথম জীবনীকার ডেভিড ব্রিউস্টারের গ্রন্থে এই আপেল সংক্রান্ত কোন কাহিনীই কিন্তু স্থান পায় নি। তিনি ভেবেছিলেন এই কাহিনীটি আদম-ইভের পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে কম গাঁজাখুরি কিছু নয়। আর বিজ্ঞানী গাউসের মতে এই গল্পটি 'একেবারেই রাবিশ'। আসলে মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের আবিষ্কারের পর অনেক বিজ্ঞানের 'ক-অক্ষর গোমাংস'রা এই সূত্রটি কিভাবে নিউটনের মাথায় এলো এ সম্বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করলে নিউটন বোধহয় বাধ্য হয়েই এই 'আপেল তত্ত্বের' অবতারণা করে সবাইকে তুষ্ট করতে উদ্যোগী হন। এমনি একটি কাহিনী উঠে এসেছে ড শিশির কুমার ভট্টাচার্যের ...

পুরো লেখাটি পাওয়া যাবে এখানে :
http://www.mukto-mona.com/Articles/avijit/bohorer_kagoj/newton_bh_kagoj.pdf


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

চলবে মানে? পুরোপুরি দৌড়াবে।

অভিজিৎ ভাই, আপনি লিখতে থাকুন।

(নিউটনের আপেল কাহিনীর দ্রোহী ভার্সন শুনলে ব্যাপারটা বিশ্বাস করার একটা সম্ভাবনা থেকে যেত। কিন্তু আফসোস, ওটা শোনানো যাবে না। শোনালে মডু আমাকে খাড়া ব্যান করে দেবে।)


কি মাঝি? ডরাইলা?

অভিজিৎ এর ছবি

নিউটনের আপেল কাহিনীর দ্রোহী ভার্সন শুনলে ব্যাপারটা বিশ্বাস করার একটা সম্ভাবনা থেকে যেত। কিন্তু আফসোস, ওটা শোনানো যাবে না। শোনালে মডু আমাকে খাড়া ব্যান করে দেবে।

কি মাঝি? মডুর ভয়ে ডরাইলা?


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

তারেক এর ছবি

দৌড় দৌড় দৌড়াক! দ্রোহী ভাই ধরা খাইছুন!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অভিজিৎদা,
পুরো লেখাটা এখানে দ্যান না। কে আবার কষ্ট করে পিডিএফ ডাউনলোড করতে যায়?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত এর ছবি

সেটাই। অপেক্ষায় থাকলাম।

______ ____________________
suspended animation...

অভিজিৎ এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ লিখেছেন:
অভিজিৎদা,
পুরো লেখাটা এখানে দ্যান না। কে আবার কষ্ট করে পিডিএফ ডাউনলোড করতে যায়?

দোষ ত আপনার। বললাম যে বর্ণসফটের কনভার্টার বানিয়ে দিতে। দিলেন ত না। নিজের পুরান লেখা বার বার টাইপ করতে কার ইচ্ছা করে?


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ও পুরোটা লিখতে হচ্ছে বুঝি? সরি। আপনি আমাকে একটা ওয়ার্ড ডকুমেন্ট পাঠিয়ে দিতে পারবেন বর্ণসফটে লেখা? অথবা ইন্টারনেটে কোথাও পাওয়া যাবে?

আমার ইমেইল:

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অভিজিৎ এর ছবি

জনাব উদ্ভ্রান্ত,

আপনার ঠিকানায় আমার দুইখান বর্ণসফটে লেখা ওয়ার্ড ডকুমেন্ট পাঠানো হইল। সাথে বর্ণসফটের ফন্ট ও পাঠানো হইয়াছে।

আপনার অনুগ্রহ কামনা করিতেছি।

===========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাল লাগছে। লিখতে থাকুন। সচলে পুরোটা থাকলে সুবিধা হত পড়তে।

muzib mehdy এর ছবি

Fantastic. Please post more.

হিমু এর ছবি

বর্ণসফটের কনভার্টার বানানো তো জরুরি হয়ে পড়লো মুর্শেদের জন্য।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

আর্মি ব্যাকড সরকারের মোত পিছহন থেকে মুর্শেদকে আরেকবার তাগদা দিলাম। অচীরেই পেয়ে যাব মনে হয়।


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হিমু এর ছবি

অভিজিৎ, এখন থেকে অভ্র দিয়ে লিখুন প্লিজ। যতদিন বর্ণসফট কনভার্টার হাতে না পাচ্ছেন ততদিন সচলে নতুন লেখা ঝেড়ে যান।

ফি/ফাই (গোল্ডেন রেশিও) নিয়ে একবার বেশ তর্ক জমেছিলো। এ নিয়ে কি কিছু লিখবেন?


হাঁটুপানির জলদস্যু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আলফা ভার্সন তৈরী হয়ে গেছে। আজ রাতে বেটা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তুলে দিবো তখন। বাকিটুকু আপনার ইনপুট থেকে ঠিক করতে হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অভিজিৎ এর ছবি

যাক মুর্শেদ ইন একশন। ধৈর্য ধরে আছি সুনা হাসি

=========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

কনফুসিয়াস এর ছবি

ইন্টারেস্টিং!
তবে এত দিনের মজার কাহিনিটার জন্যেও খানিকটা মায়া হচ্ছে।
আরো লিখুন।
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক এর ছবি

পদার্থবিদ্যা বিষয়ে লেখা চলুক... জলপাই পড়তে এখন আর ভাল্লাগেনা... হুদাই... গায়ে গতরে সহ্যও করতে হইবো আবার নেটে বইসা পড়তেও হইবো তাগোরে নিয়া ? মাফ চাই।
তারচাইতে পদার্থবিদ্যা ভালো... জ্ঞান বাড়ুক... ছোটবেলায় পদার্থবিদ্যার মজার কথা (রাশিয়ান, প্রগতি) খুব পছন্দের ছিলো... পইড়া অনেক মজার মজার জিনিসও বানাইছিলাম...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অবিলম্বে বর্নসফটের কনভার্টার যোগ করে অভিজিৎকে সচলায়তনে সচল রাখার জোর দাবী জানাই।


(দাবী জানাইবার কাজ, জানাইলাম।এখন ব্যাটা প্রোগ্রামার মাথা ঘামিয়ে মরুক,আমার কী!)

দিগন্ত এর ছবি

আমি এরকম আরো একটা ঘটনা নিয়ে বিবাদ পড়েছিলাম - সেটা হল গ্যালিলিওর পিসার টাওয়ারের ওপর থেকে বস্তু ফেলে পরীক্ষা করা নিয়ে। সেটাও নাকি কখনো ঘটেনি বাস্তবে ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অভিজিৎ এর ছবি

ঠিকি বলেছেন । গ্যালিলিওর এই পিসার গল্পটাও সম্ভবতঃ মিথ্যা। ইংরেজীতে বলে apocryphal । কারণ, ভারী জিনিস এবং হাল্কা জিনিস যে একসাথে পড়ে তা পরীক্ষার জন্য পিসার স্তম্ভে ওঠার দরকার নেই। সাধারণ একটা স্লাইডিং প্লেনেই পরীক্ষাটি সার্থকভাবে করে দেখানো সম্ভব। এ নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছে আছে।
===============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।