প্যারামাউন্ট পিকচার্স যদি ‘অ্যান আমেরিকান ট্র্যাজিডি’র বদলে ‘এ বাংলাদেশী হিরো’ নামের একটা ছবি বানাতো - তাহলে দিব্যি আযাদের গল্পটা সিনেমায় ঢুকিয়ে দেয়া যেত। মফস্বলের ঐ গেয়ো ছেলেটাই আমাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে উন্নতি করেছে। ওর কথা বললেই বন্ধূদের চেখে মুখে চোখে মুখে একটা ঈর্ষার ভাব ফুটে ওঠে। এখন এই শহরের জাদরেল মার্কেটিয়ারদের মধ্যে - সে একজন কেউকেটা।
২০০৯। গ্রীষ্মের ছাঁতিফাটা গরমে হাসফাঁস করছে কলকাতা। আমরা আধো অন্ধকার আলোর মধ্যে ঘরময় বইয়ের স্তুপের ভেতরে বসে আছি। আমার চোখ কবি ও প্রাবন্ধিক তরুণ স্যানালের মুখের উপর স্থির। দু'কান - প্রাণভরে তার কথা শুনছে। কথা বলতে বলতেই- মাঝে মাঝে তার দৃষ্টি চলে যাচ্ছে জানালার পাশে বেড়ে ওঠা রক্তজবা গাছটির পাতার ফাঁক গিলে আকাশের দিকে। ঝাকড়া চুলের মত বেড়ে ওঠা এই রক্তজবার চারাটি তিনি বয়ে এনেছিলেন সেই সূদুর পাবনা থ
শূন্য একোরিয়ামের মধ্যে একটা আলো- ঘরের মধ্যে আর কোন আলো জ্বলে না। চল্লিশ পাওয়ারের টাংস্টেন বাল্বের হলুদ আলো একোরিয়ামটার স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের মধ্যে দই এর মত জঁমাট বেঁধে আছে। কিছুদিন আগেও ওখানে একজোড়া গোল্ডফিশ লেজ নেড়ে সাতরে বেড়াতো। যতেœর অভাবে দুটোই মরে গিয়েছে। প্রথমে একটা। নিঃসঙ্গতার যন্ত্রনায় অন্যটা। শূন্য একোরিয়ামটার দিকে তাকাই- নিঃসঙ্গ গোল্ডফিশটার শেষদিনগুলো ওখানে ভেসে বেড়াচ্ছে। একস
গল্পটা সবচেয়ে পুরনো। ইহুদি, খ্রীষ্টান আর মুসলিম ধর্মে আমরা যারা বড় হয়েছি- তারা সবাই এই গল্পটা সত্যের মতন জানি।
বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে সেই কখন । আকাশটা একদম নীল। বৃষ্টিশেষের সোনালী রোদে সেই নীল - অনেক উচুঁতে মনে হয়। জানালার গ্রীলে জমে থাকা বৃষ্টির ফোটাগুলো মুঁক্তোদানার মত জ্বলছে। সেখানে একটু ছোঁয়া লাগাতেই তর্জনীটা কেমন ভিজে যায়। চোখের সামনে ভেজা আঙ্গুলটা নিয়ে এসে ‘এ’ যখন ভাবছে - এই ভেঁজা ভেঁজা জলটা একটু আগেই মেঘ হয়ে আকাশে উড়ছিল...
প্লেনটা এতক্ষন মেঘের মধ্যে ছিল। মেঘ ফুড়ে নির্মেঘ আকাশে বের হয়ে আসতেই আলোর বিন্দুগুলো ঝুপ করে ভেসে ওঠে। সের্গেই আইজেনস্টাইন জানালার কাঁচের ভেতর দিয়ে অনেক নিচে আলোর বিন্দুগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন। রাশি রাশি মশাল জ্বালিয়ে কোন এক অজানা শহর জেগে আছে। কোন শহর?
বেহালার ছড়ের টানে সন্ধ্যার রঙগুলো গড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো আকাশজুড়ে।
ক্যারিয়ার! আসলে ব্যাপারটা খুব গোলমেলে লাগে আমার কাছে। ক্যারিয়ার শুনলেই ক্যারিয়ারশূন্য মেয়েটার কথা মনে পড়ে। বিলবোর্ডে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল বেচারী। আমার এক বন্ধু ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
‘বড় হলে আমি এই নিষ্ঠুর শহরটা থেকে ঠিক পালিয়ে যাবো। তুমি কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারবে না, মা।’
মাকে বলি আমি। মা হাসে। তারার আলো হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আর শহরটা স্টিল ক্যামেরায় তোলা একটা ছবি হয়ে চোখের উপর লেপ্টে থাকে।
আমার মনে হয়, আমরা প্রত্যেকেই এমন একজনকে ভালবাসি - যে কি না, আসলে এই পৃথিবীতেই থাকে না। আমাদের মনের মধ্যে ওরা কোথাও থাকে। বাইরের পৃথিবীতে ওদের ছায়া পড়ে। সেই ছায়ার আদল কারো মুখে খেলে গেলে আমরা তাদের প্রেমে পড়ি।