ছাতার গল্প

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: শনি, ১৫/০৩/২০০৮ - ৫:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যস্ততা, অসুস্থতা আর ভ্রমণ মিলিয়ে জিমে যাওয়া হয় না মাসেরও ওপরে। জিমওয়ালারা ওদিকে মাসের দুই-তিন তারিখেই নিয়ম করে চাঁদা নিয়ে যায়। ব্যাঙ্কের হিসেবের অঙ্কে কিছু সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। তেমন গায়ে লাগে না। তবে অন্য যে জিনিসটা না চাইতেই গায়ে লাগে, তাহলো চর্বি। দাওয়াত ছাড়া মাংস খাই না -গরুর কিলো ১০ টাকার দিকে ধাবিত হওয়াই তার একমাত্র কারণ নয়- কিন্তু একবেলা ভাত না খেলে যে বাঁচি না বাপু। এই একবেলা ভাতের শর্করা কিভাবে চর্বি হয়ে শরীরের মধ্য প্রদেশে জমে, শক্তির কোন নিত্যতা ফর্মূলায় এটাকে ফেলা যায়, সে গবেষণা করে কেউ নোবেল প্রাইজ পাক; আমি বাপু এই ভূঁড়ি সামলাতেই যে হিমশিম খাই।

দুঃখের ব্যাপার হলো, এখানে কেউ 'মেদ-ভূঁড়ি কি করি'র সমাধানে আত্মনিয়োগ করা কোনো মঘা-ইউনানী দাওয়াখানার লিফলেট বিলায় না। গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট খেয়ে যেমন রাতারাতি চিকনা সেপাই থেকে বজলু পালোয়ান হওয়ার দাওয়াই নেই; একইভাবে এই বাড়তি চর্বি ঝেড়ে ফেলার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। ডায়েটিং ফায়েটিং কোনো কামের না। কয়দিন ডায়েটিং করলে চর্বিগুলা ঘাপটি মেরে বসে থাকে, এক দাওয়াত খেলেই আবার ফুলেফেঁপে ওঠে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ি ক্রিকেট খেলার সময়। আগে যেখানে টানা ১০ ওভার বল করে যেতে পারতাম, এখন হাফ লিটার দুধ খেয়েও দুই ওভার ফুল রানআপে বল করার পর শ্বাস নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়, হার্টে হাতুড়ি পিটায় আর বেঢপ ভূঁড়িটা ফুটবলের মত ডিগবাজি খেতে থাকে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচার একটাই উপায়, তা হলো জিমে যাওয়া।

কথা হচ্ছিলো এটা ছাতার গল্প হবে। এর মধ্যে জিম আসলো কোত্থেকে? সব রচনাই কি শেষ পর্যন্ত যায়যায়দিন বিশেষ সংখ্যা স্টাইলে গরুর রচনায় শেষ হবে? উমমম, না। এর জন্যই চলেন ছাতার গল্প শুরু করা যাক।

আমার একটি ছাতা আছে। ছোটখাট। অনেকটা লেডিস ছাতা স্টাইল। তবে রঙ কালো। দেশ ছাড়ার সময় যে জিনিসগুলো সাথে এনেছিলাম, তার প্রায় সবই সময়ের কাছে আত্ম সমর্পণ করলেও ছাতাটা এখনও বহাল তবিয়তে বর্তমান।

তো, সেদিন রাতে জিম থেকে বেরোতে গিয়েই দেখি, ধুম বৃষ্টি। এখানে ধুম বৃষ্টি খুব একটা হয় না। কিন্তু এই রাত দশটায় খালি বৃষ্টি না, সাথে ঝড়। এখনও ঠান্ডা, গ্রীষ্ম আসেনি; গাছগুলো এখনও ভোরবেলার শীতনিদ্রা দিচ্ছে। পাতাপুতা নাই। তাই ঝড়ের গতিপ্রকৃতি বুঝারও কোনো উপায় নাই। ছাতা যথারীতি ব্যাগে আছে। বের করতে করতে সতর্ক হয়ে গেলাম। নিজে ভিজে ছাতা বাঁচাবো কিনা একটু দোনোমোনো করলেও শেষ পর্যন্ত স্বার্থপরতারই জয় হলো।

হাঁটা ধরি। বাতাস অনেকটাই আউলা, একেক দিক থেকে একেকবারে দমকা, বৃষ্টি সম্ভবত বাতাসের মত এত দিক পালটায় না। একদম সামনে থেকে ৬০° কোণে হিট করছে। কোনোমতে মাথা বাঁচিয়ে চোখ ঢেকে হাঁটি। ৮ মিনিট যুদ্ধ করে ট্রাম স্টপেজে গিয়েও শান্তি নেই। সেখানে ছাউনি একেবারেই অপ্রতুল।

শহর থেকে বাইরে রাত দশটার জনমানবহীন ট্রাম স্টপেজ। ঠিক জনমানবহীন নয়। ছাতাহীন এক সুন্দরী গায়ের জ্যাকেটটা যতোদূর সম্ভব চেপে সেই ঝড়-বাতাস-বৃষ্টির থেকে নিজেকে বাঁচাচ্ছে। আমার ছাতা তখনও কাজ দিচ্ছে। কোমর থেকে নিচাবধি ভিজে গেলেও উর্ধাঙ্গ তখনও প্রকৃতির তান্ডব থেকে অক্ষত।

ছাতাটা ছোট। কিন্তু এই সুন্দরী যুবতিকে শেয়ার দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই শীতের রাতে, এই ঝড়-বাদলায়, এই নির্জনতায় কত কতভাবে কত উষ্ঞ চিন্তা এসে আবার হারায়।

- নেক্সট ট্রাম কতক্ষণ পরে?
- আরো মিনিট পাঁচেক। তুমি কই যাইবা?
- সিটিতে। তুমি?
- আমি আরেকটু দূরে। তোমার নাম জানতে পারি?
- আনিয়া। তুমি?

নাম বলি। এরপরের স্টেপ কফি খাওয়ার প্রস্তাব। তবে সে স্টেপে আর যাওয়া হয় না। এই রাতে এর সাথে কফি খেলে আমাকে যে গল্পটা তার পর থেকেই লিখতে হবে এবং সেটা সচলায়তনের জন্য নয়, যায়যায়দিনের ছাতা সংখ্যায় ছাপাতে।

ভোর হলে আবার অফিস। আবার কাজ। ট্রাম থেকে নেমে আবার হাঁটি। ৩ মিনিটের পথ। হাওয়ার ঝাপটা কমেছে। বৃষ্টি এখনও চলছে ঢিমে তালে। কিছু মুখে দিয়েই ঘুমাতে হবে। কফি খেয়ে রাত জাগার সেই সময় আর কই?


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

দেশ থেকে ফিরে আসার পরে আপনার লেখার ভাবসাবই দেখি বদলে গেছে!
এটাও চমৎকার লাগলো।
সবগুলো পর পর বসিয়ে একটা গল্প দাঁড় করিয়ে ফেলেন।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আরেকবার দেশে গেলে কি হবে ভাবছি। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা টা বেশ লাগল। খুব সহজ কিন্তু প্রাঞ্জল। যায় যায় দিন এর পাঠকদের জন্য ও লিখতে পারেন চাইলে, কিন্তু সচল পাঠকদের জন্য নিয়মিত এমন দারুন সব লেখা উপহার দিয়ে যাবেন, এই আশা থাকল।
সঙ্গে অনেক শুভকামনা ও রইল।

অতন্দ্র প্রহরী

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। যায় যায় দিনে সেইসব বিশেষ সংখ্যা বের হয় এখনও? অনেকদিন টাচে নাই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ি ক্রিকেট খেলার সময়। আগে যেখানে টানা ১০ ওভার বল করে যেতে পারতাম, এখন হাফ লিটার দুধ খেয়েও দুই ওভার ফুল রানআপে বল করার পর শ্বাস নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়, হার্টে হাতুড়ি পিটায় আর বেঢপ ভূঁড়িটা ফুটবলের মত ডিগবাজি খেতে থাকে।

বলাই দা'র ফুলটস পোস্ট। চোখ টিপি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হ, ফুলটস পাইয়াই মজা কইরা বাউন্ডারী! আমার ক্যারিয়ার শ্যাষ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শালার, সৃষ্টিকর্তা ত্যালা মাথায়ই খালি ত্যাল ঢালে রে! মন খারাপ
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই জন্যই কই, পরের শালীর দিকে তাকাইয়া না থাইকা নিজের শালী বানানোর প্রজেক্ট হাতে নাও।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হিমু এর ছবি

ছাতার মাধ্যমে সুন্দরীদের রক্ষা করা ... বেশ প্রতীকী ব্যাপার। বুদ্ধিমান হোন ঠিক কাজটি করুন টাইপ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

Gib AIDS keine Chance!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শেখ জলিল এর ছবি

এই শীতের রাতে, এই ঝড়-বাদলায়, এই নির্জনতায় কত কতভাবে কত উষ্ঞ চিন্তা এসে আবার হারায়।
....শীতেই উষ্ণ রোমান্টিক চিন্তা বুঝি বেশি আসে!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

শীত বড়োই রোমান্টিক জিনিস। আর বর্ষায় বাঙালি এখনও রোমান্সের কাঙ্গাল।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ছাতাটা ছোট। কিন্তু এই সুন্দরী যুবতিকে শেয়ার দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ছাতা কিংবা মাথার শুষ্কতা হইতে সুন্দরী-সান্নিধ্য উত্তম বলে কথা। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বোঝা গেলো, গল্পটা ছাতা বিষয়েই! চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জুবায়ের ভাই, যাযাদি স্টাইলে মারলাম আর কি! তাদের বিশেষ সংখ্যার সব গল্পই শোয়ার ঘরে গিয়ে শেষ হতো। শ. রে. একটা জিনিসই বটে!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফ্রুলিক্স এর ছবি

ছাতা, সুন্দরী, কফি, বৃষ্টির রাত!!! দেশে কি ইন্টারনেট কানেকশন আছে?? প্রতিকি কথাবার্তা

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই রে! চিন্তায় ফেলায় দিলা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

বৃষ্টির দিনে একই ছাতার নিচে জড়োসড়ো দুজনের হেঁটে চলা.... কি রোমান্টিক!

------------
কুচ্ছিত হাঁসের ছানা

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তুহিন ভাই, একদম ঠিক। দৃশ্যটা কল্পনা করতেও কেমন রোমান্স জাগে। টিপ টিপে বৃষ্টি, হালকা বাতাসে উড়ছে তার শাড়ির আঁচল। কোমর জড়িয়ে ধরে ঘন হয়ে হাঁটা। ...

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তারপর আনিয়ার কি হৈল?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হেহ হেহ হেহ
এইটার জবাব গুগলিও হৈতে পারে আবার অফব্রেক ও হৈতে পারে! চোখ টিপি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তারপর ট্রামে দেখা এক দোস্তের সাথে। আনিয়ার সাথে পরিচয় করায়া দিলাম। দোস্তের ছাতা আছিলো না। ভিজা চুপচুপা। ঠান্ডায় কাঁপে। কফি ফরজ। আনিয়াও দেখি হেব্বি কফি কফি করতাছে। কইলাম, তাইলে তুমরা একলগে কফি খাও গিয়া। আমি ছাতা লইয়া ভাগা দিলাম।

(বেশি দেই নাই। মিডিয়াম পেস। চোখ টিপি )

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনের সেই চুল-দাঁড়িওলা (যদি থাকে) দোস্ত'র জন্য জাঝা
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হ, গল্পের পরবর্তী অংশটা সে লিখবে বলে পাঠকের দাবী।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।