নদী অববাহিকা ও আন্তর্জাতিক আইন

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: শুক্র, ২২/০৫/২০০৯ - ৪:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচল জাহিদের লেখা পড়ে অনুপ্রেরণা নিয়ে লিখলাম জলসম্পদ বিষয়ক আইন নিয়ে। পাঠকেরা উৎসাহী হলে লিঙ্কে গিয়ে আইনগুলো পড়ে দেখতে পারেন। লেখাটা রসহীন তবে আশাকরি দুর্বোধ্য হবে না।

জলসম্পদ নিয়ে দেশে দেশে বিবাদ বহুবছরের পুরোনো, কারণ জল মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান। মধ্যপ্রাচ্যের মত অঞ্চলে যেখানে পৃথিবীর জলসম্পদের মাত্র ১% পাওয়া যায় অথচ জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান, সেখানে এই বিবাদ বাকী অংশের থেকে বেশী জোরালো। সাম্প্রতিককালে জলসম্পদের ক্রমাগত দুষ্প্রাপ্যতার কারণে বিবাদের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জল-সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে আইনি সহায়তায় বিবাদ-মীমাংসা আধুনিক যুগে শুরু হয়েছিল ইউরোপ আর আমেরিকাতে। প্রথমদিকে মনে করা হত যে দেশ বা অঞ্চলে নদী বা কোনো জলসম্পদের অবস্থান, সেই দেশের সার্বভৌম অধিকার থাকবে সেই সম্পদের ওপর (Harmon Doctrine)। কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নতির পর বড় বড় বাঁধ তৈরীর ফলে বোঝা গেল এরকম অধিকারের ফলে অববাহিকার উজানের দেশ বেশী সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে অন্য বিকল্প হিসাবে মোহানার নিকটবর্তী দেশের প্রয়োজন ছিল নদীর জলের পরিমাণ ও গুণাবলীর ওপর সম্পূর্ণ অধিকার যাতে উজানের দেশ কোনোভাবেই সেই জল নিতে (বা দূষিত করতে) না পারে। উভয় নীতিই পক্ষপাত দোষে দুষ্ট, তাই এই দুই নীতি থেকে সরে এসে সমতার (Equity) নীতি অনুসারে জলসম্পদের বন্টন করার আইন চালু হল। সমতা অর্থাৎ সকল বিষয় ও প্রভাব ভেবে নিয়েই জলসম্পদ বন্টন হবে।

autoআন্তর্জাতিকভাবে প্রথম এই জলসম্পদ-আইন প্রস্তাব করা হল হেলসিঙ্কিতে। প্রাথমিকভাবে এই খসড়া প্রস্তাবনা বা গাইডলাইন শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক নদীগুলো জন্য প্রযোজ্য ছিল। এর পরে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৭০ সালে এ নিয়ে একটি বহুপাক্ষিক চুক্তির প্রস্তাবনা হয়। এর নাম দেওয়া হয় নৌচলাচল ব্যতিরেকে আন্তর্জাতিক নদীসম্পদ ব্যবহারের আইন (সংক্ষিপ্ত, পূর্ণাঙ্গ)। ১৯৯৭ সালে এই সনদের প্রস্তাবিত বয়ানের ওপর ভোটাভুটি হয় ও ১০৩-৩ ভোটে তা গৃহীত হয়। একে আইন হিসাবে গ্রাহ্য হবার জন্য সব দেশকে আভ্যন্তরীণ পার্লামেন্টে তার গ্রহণযোগ্যতা স্বীকার করতে হবে। সনদটির মূল সমস্যা দেখা দেয় চিন (তুরস্ক, চিন আর রোয়ান্ডা বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল **) এর বিরোধিতা করায়। এই চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত তাই এখনও অবধি মাত্র ১৬টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। (ছবিতে - স্বাক্ষরকারী দেশ, পক্ষের-বিপক্ষের দেশ)

আশার কথা, আন্তর্জাতিক আইন সংঘ (International Law Association) নামে একটি সংস্থা - যারা জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক সাহায্য করে - তাদের প্রস্তাবিত আইনসমূহ নিয়ে বার্লিনে আলোচনার পরে ২০০৪ সালে জলসম্পদ আইনের প্রস্তাবনা (সংক্ষিপ্ত ,পূর্ণাঙ্গ) হয়। এই আইন আদপে জাতিসংঘের আইনের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ, যাতে নৌচলাচল সম্পর্কিত আইনও অন্তর্ভুক্তি পেয়েছে এবং হেলসিঙ্কি আইনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। এই আইন কমিটিতে ভারত ও বাংলাদেশের সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেছে ও উভয় দেশই আইন নিজদেশে স্থানীয় আইনের মাধ্যমে একে গ্রহণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

autoআগের আইনগুলোর মত এক্ষেত্রেও আইনের মূলনীতি হল সমতা। তবে আগের তুলনায় বার্লিন কনভেনশনে অনেক স্পষ্টভাবে তা উল্লিখিত আছে। সমতার নীতি অনুসারে যে যে মাত্রা অনুসারে অববাহিকার একাধিক দেশের মধ্যে জলসম্পদ বন্টন হওয়া উচিত সেগুলো হল (আর্টিকেল ১২, ১৩) -
১) ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক অবস্থা
২) সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন,
৩) জনসংখ্যা,
৪) এক দেশের ব্যবহার অন্য দেশকে প্রভাবিত করে,
৫) বর্তমান, ভবিষ্যত ও সম্ভাব্য ব্যবহার
৬) জলসম্পদ সংরক্ষণের ও উন্নয়নের খরচা
৭) বিকল্পের সুযোগ
৮) প্রস্তাবের সময়কাল
৯) পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব
১০) প্রাসঙ্গিক অন্য যে কোনো মাত্রা
এ বিষয়ে উল্লেখ্য যে এখানে জলসম্পদের মধ্যে পানীয় ও রান্নার জন্য ব্যবহৃত জলকে ধরা হচ্ছে না (ধরা হচ্ছে না খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জলকেও)। সমতার মাধ্যমে বন্টনের সময় জনসাধারণের জীবনধারণের জন্য অবশ্য-প্রয়োজনীয় জলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে আর এজন্য প্রয়োজনীয় জল বরাদ্দ রাখতে হবে। (আর্টিকেল ১৪)

autoজলসম্পদ বন্টনের মত নৌচলাচলের ক্ষেত্রেও অববাহিকার সব দেশই একে অপরকে সমতার ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে জলপথ ব্যবহার করতে দেবার কথা বলা আছে। নৌচলাচলের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে জলপথ ব্যবহারের, অববাহিকার বন্দর ও ডক ব্যবহারের এবং নদীপথে মালপত্র পরিবহনের স্বাধীনতা (অস্ত্রবাহী বা নৌবাহিনীর জাহাজ এই চুক্তির আওতায় আসে না) - অবশ্য সেজন্য ব্যবহারকারী দেশের ওপর নন-ডিস্ক্রিকিমিনেটরি কিছু শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। (আর্টিকেল ৪৩-৪৯)

এছাড়াও এই আইনে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, অববাহিকার অবস্থা পর্যালোচনার কমিটি গঠন, ভৌমজল ব্যবহার, খরা-বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ, জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বিবাদ-মীমাংসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মোট ৭৩টি অনুচ্ছেদ আছে। তবে এদের সকলেরই মূলভিত্তি একই - সমতা। কোনো অবস্থাতেই অববাহিকার সম্পদের সার্বভৌম অধিকারের কথা বলা নেই।

কিন্তু এই সমতার আইনটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ম্যাকেফ্রি প্রশ্ন তুলেছেন ও বলেছেন যে এই সমতার সংজ্ঞায়িতকরণের জন্য পরের বিশেষজ্ঞরা যে দ্বন্দে পড়বেন। একটা প্রশ্ন রেখেছেন উনি। ধরা যাক তিনটি দেশ (বা অঞ্চল) ক, খ আর গ একই নদী অববাহিকায় অবস্থিত(তুলনীয় বলে যথাক্রমে নেপাল, ভারত আর বাংলাদেশ ভাবতে পারেন)। ধরা যাক পর্বতসঙ্কুল "ক" অঞ্চলে কোনো চাষাবাদ হয়না কিন্তু সমতল "খ" ও "গ" দেশে হাজার হাজার বছর ধরেই চাষ হয়ে আসছে। এখন, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে দেখা গেল "ক"-তেও চাষ করা সম্ভব হবে। তাই, ক সিদ্ধান্ত নিল যে তারও জল লাগবে। কিন্তু এর ফলে খ ও গ দেশে জলের যোগাণ কমতে বাধ্য। এখন সমতা এখানে কি ভাবে আনা সম্ভব হবে? যদি, ক-কে কিছু জল দিতেই হয় তাহলে খ আর গ বলবে আমাদের কৃষকেরা না খেয়ে মারা যাবে। আবার ক বলবে সমতা অনুসারে চাষ করার অধিকার আমার আছে, নদী অববাহিকার জলের ভাগ আমারও প্রাপ্য।

জটিলতা থাকলেও একটা বিষয় বুঝে নেওয়া উচিত যে নদী-অববাহিকার সব সম্পদের সমতা মেনেই ব্যবহার হওয়া উচিত। আর এই সমতার মাধ্যমেই একমাত্র বিবাদ-মীমাংসা হতে পারে। দুঃখের বিষয় এই ব্যাপারে রাষ্ট্রনীতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। চিন, তুরস্ক ও রোয়ান্ডার জাতিসংঘে বিরুদ্ধ ভোট থেকেই তা স্পষ্ট। তাছাড়াও, অববাহিকার দুই দেশের বিবাদের সময় প্রায়শই উজানের দেশ নদীবাঁধের সময় নিজ জলসম্পদের ওপর সার্বভৌমত্বের দাবী জানায় আর ভাটির দেশ জলপথ ও বন্দরের ওপর নিজের সার্বভৌমত্বের দাবী ছাড়তে চায় না। শুধু তাই নয়, এই সার্বভৌমত্বের ধারণা জনগণকে বোঝানোও সহজ - দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর সর্বভৌম অধিকার রাষ্ট্রের। অথচ, ভাটির দেশের জলপথ উজানের দেশ ব্যবহার করলে নিজ-স্বার্থেই সে জলসম্পদের যথেচ্ছাচার করবে না, এই ফর্মুলায় উভয়েরই লাভ, সমতা মেনেই। আন্তর্জাতিক আইন মাত্রেই এক-একটি কম্প্রোমাইজ ফর্মুলা - যা মেনে উভয়পক্ষই কিছুটা করে ক্ষতি স্বীকার করেও বিবাদ-মীমাংসা করা সম্ভব। সেই হিসাবে জলসম্পদ সহ অববাহিকার সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পদের সমতা মেনেই সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত। এতেই রাষ্ট্রের কাল্পনিক সার্বভৌমত্বের কিছুটা ক্ষতি হলেও অববাহিকার মানুষের সবথেকে বেশী লাভ। ভবিষ্যতে আইনও সেই পথেই চলবে। আর অববাহিকার দেশগুলোও আশা রাখা যায় সমতার পথে চলে নিজেদের মধ্যেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ-মীমাংসা করে নেবে।

** এই তিন দেশ মূলত নদীর ওপর সার্বভৌম ক্ষমতায় বিশ্বাসী। চিনের সব বড় নদীরই উৎপত্তি চিনেই, বরং মেকং ও ইরাবতী সহ কয়েকটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নদীরও উৎসও চিন। তুরস্কের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার - টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তুরস্কে উৎস হলেও ইরাকে এই দুই নদী জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ। রোয়ান্ডা ও উগান্ডা হল নীলনদের (শুভ্রনীল বা হোয়াইট নীল) উৎস। তাই এরা ভাটির দেশের সাথে সমতা মেনে জলসম্পদ ভাগ করতে উৎসুক নয়।


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

তাছাড়াও, অববাহিকার দুই দেশের বিবাদের সময় প্রায়শই উজানের দেশ নদীবাঁধের সময় নিজ জলসম্পদের ওপর সার্বভৌমত্বের দাবী জানায় আর ভাটির দেশ জলপথ ও বন্দরের ওপর নিজের সার্বভৌমত্বের দাবী ছাড়তে চায় না। শুধু তাই নয়, এই সার্বভৌমত্বের ধারণা জনগণকে বোঝানোও সহজ - দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর সর্বভৌম অধিকার রাষ্ট্রের। অথচ, ভাটির দেশের জলপথ উজানের দেশ ব্যবহার করলে নিজ-স্বার্থেই সে জলসম্পদের যথেচ্ছাচার করবে না, এই ফর্মুলায় উভয়েরই লাভ, সমতা মেনেই। আন্তর্জাতিক আইন মাত্রেই এক-একটি কম্প্রোমাইজ ফর্মুলা - যা মেনে উভয়পক্ষই কিছুটা করে ক্ষতি স্বীকার করেও বিবাদ-মীমাংসা করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিক নদীর ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে পানিবন্টনই মূল ইস্যু। সমতার ভিত্তিতে বা উজানের দেশের ভাটির নৌপথ ব্যবহার তার সমাধান হয় কিভাবে? ধরা যাক, বাংলাদেশ পানির জন্য ভারতকে তার নৌপথ ও বন্দর ব্যবহার করতে দিল। ভারতও কি সমতানুযায়ী বাংলাদেশকে তার নৌপথ ও বন্দর ব্যবহার করতে দেবে? ব্যাপারটা কি এতই সহজ! নদীর পানি তো বাংলাদেশের প্রাপ্য অধিকার, তার বিনিময় কোন কিছুতে হতে পারে না। কম্প্রোমাইজ-ফর্মূলায় নদীপথ ও বন্দরের ব্যবহার বড় দেশের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার ওপরই মূলত নির্ভরশীল। না হয় ওটা ছোটদেশের জন্য খাল কেটে কুমীর আনার মতই ব্যাপার হবে।

দিগন্ত এর ছবি

দুটোই উভয় দেশের প্রাপ্য অধিকার। একই অববাহিকায় অবস্থিত হলে যেহেতু তারা নদীর জল শেয়ার করে তাই আববাহিকার বন্দর ও নদীর জল - দুটোই দুজনের প্রাপ্য। এটাই কম্প্রোমাইজ। নাহলে যে যার সীমার মধ্যের অংশটুকুতে সার্বভৌমত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে।

আমি ইচ্ছা করেই ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কি কি হবে তা লিখিনি, কারণ আইন কিভাবে এখানে প্রয়োগ হবে তা নিয়ে কোনো আলোচনা পড়তে পাইনি। তবে আইনে স্পষ্ট যে নৌচলাচল ও জলসম্পদ উভয়েই সমগুরুত্ব পাচ্ছে - আর দুটোতেই কম্প্রোমাইজ ফর্মুলা আসছে।

তবে এখানে আমার মতামতের কোনো দাম নেই। যেমন আইন লিখেছে আমি তেমনই বলেছি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

দিগন্ত
অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য। আমার কিছু মন্তব্য ছিলঃ

এই আইন আদপে জাতিসংঘের আইনের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ, যাতে নৌচলাচল সম্পর্কিত আইনও অন্তর্ভুক্তি পেয়েছে এবং জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের সনদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে।

আমি যতটুকু জানি বার্লিন আইন (২০০৪) হেলসিঙ্কি আইনের (১৯৬৬) স্থলাভিসিক্ত হয়েছে 'জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের সনদের' নয়, সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে তা উত্থাপিত ও গৃহীত হতে হবে।

আন্তর্জাতিক আইনের সমতার বিষয়টি আসলেই ধোঁয়াটে, এবং ফলশ্রুতিতে একে সংগায়ন করে আসলেই দুষ্কর। এজন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে উজানের দেশ অধিক সুবিধা ভোগ করে। আমার মতে একটি অভাব অন্যটির দ্বারা পূরন সম্ভব নয়, তাই পানির ব্যবহার এর অভাব বা কমতি নদীচলাচল দিয়ে পূরন সম্ভব নয়। নদী চলাচলের আর পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তির পক্ষপাতি আমি।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

জাতিসংঘে এ বিষয়ে কিছু পাস করানো সম্ভব নয় (চিনের ভেটো অধিকার) বুঝেই হয়ত এই আইনের অবতারণা। একই কারণে জাতিসংঘের সনদে ভারত-বাংলাদেশ সহ অধিকাংশ দেশই স্বাক্ষর করেনি, অথচ উভয়েই এই চুক্তির স্বাক্ষরকারী। আর খুঁজে দেখলাম সুপারসিডিং-এর ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্যই সঠিক মনে হয় - হেলসিঙ্কি আইনের স্থানে এই আইন এসেছে। তবে ভারত-বাংলাদেশ ক্ষেত্রে এই আইনই বিবেচ্য কারণ উভয়েই চুক্তির স্বাক্ষরকারী, অপরদিকে জাতিসংঘের সনদে এদের কেউই স্বাক্ষর করে নি। আন্তর্জাতিক কোর্টে বিচার হয় উভয়েই স্বাক্ষর (signed and ratified) করেছে এমন আইনের সাহায্যেই।

নদী চলাচলের আর পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তির পক্ষপাতি আমি।

চুক্তির ক্ষেত্রে দেখা গেল যে দেশগুলো উজানে তারা ভাটির বন্দর সুবিধার দিকে বেশী আগ্রহী আর ভাটির দেশগুলো উজানের জলবন্টন ব্যবস্থায় বেশী উদ্যোগী। তাই গিভ অ্যান্ড টেক অনুসারে উভয়ের ভাবনাকেই চুক্তির অংশ হিসাবে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য হল যাতে উভয়ের স্বার্থই বজায় থাকে। ভাটির বন্দর বাঁচিয়ে রাখতে গেলে নাব্যতা দরকার, নাব্যতা ধরে রাখতে হলে উজানের দেশকে যথেষ্ট পরিমাণ জল বন্টনের সময় ভাটির জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। তাই বন্দর ব্যবহারের স্বাধীনতা জলবন্টনকে সুনিশ্চিত করে। একারণে একই চুক্তিতে উভয় ব্যবস্থার উল্লেখ রাখা হয়েছে। উজানে চেষ্টা করলেও বন্দর তৈরী সম্ভব নয়, আবার ভাটিতে জল আসবেনা উজানে জল টেনে নিলে।

আমার মতে একটি অভাব অন্যটির দ্বারা পূরন সম্ভব নয়, তাই পানির ব্যবহার এর অভাব বা কমতি নদীচলাচল দিয়ে পূরন সম্ভব নয়।

ব্যাপারটা উলটো ছিল। ভাটির দেশের হাতে নৌচলাচলের কন্ট্রোল বেশী আর উজানের দেশের ক্ষেত্রে জলের বন্টনের কন্ট্রোল বেশী। তাই জলের কমতি নদীচলাচল দিয়ে পূরণ হবে না - বরং একে অপরকে সুবিধা দেবে - ভাটির দেশ বন্দর ব্যবহার করতে দেবে আর উজানের দেশ জলবন্টন সুনিশ্চিত করবে। তাতে বন্দরের নাব্যতা বজায় থাকবে।

আইন ধোঁয়াশা না হয়ে উপায় নেই। আন্তর্জাতিক কোর্টে জলসম্পদ নিয়ে মামলার খুব একটা উদাহরণও নেই (যতটা আছে সমুদ্রসীমা নিয়ে)। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইন বানানো হয় "যদি সীমানা না থাকত", এরকম ক্ষেত্রে কি হত তা ভেবে নিয়ে। তাই কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে সব মাত্রা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশা রাখি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।