হাইনরিখ বোল-এর প্রশ্ন; পৃথিবীটা কার? ঈশ্বর কি আম্রিকান?

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/১১/২০০৮ - ২:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(অনেক দিন থেকে এরকম একটা লেখা খুঁজছিলাম। "হাইনরিখ বোল-এর ফেরমিন্টেস গেলেন্ডে" ঘাটতে ঘাটতে পেয়ে গেলাম।)

এপোলো ১১ থেকে পৃথিবীর ছবি।

আমি নিশ্চিৎ করে বলতে চাই; ঈশ্বরের প্রশান্ত মানবিক শান্তির বারতা ঘোষিত হোক। কঠিন এবং জটিল প্রশ্ন হল; বারতাটি কার জন্য এবং কার দ্বারা ঘোষিত হবে? বর্তমান সময়ে ধর্মপ্রচারক পুরোহিতবৃন্দও এ নিয়ে বেশ চিন্তিত। একটা মহাদেশকে খৃষ্টান ধর্মে দিক্ষীত করার মানসে পারি জমানোর সময় স্পেন দেশটা কতটুকু খৃষ্টীয় ধর্মানুভূতি লালন করতো? চারশ বছর পর বোঝা যাচ্ছে কী সর্বনাশ এর মধ্যে সাধিত হয়েছে। অসন্তোষের বিষ বাষ্পে বিদ্রোহী মূর্খের দল বিজাতীয় শোষনের বিরোদ্ধে ধীরে ধীরে নিজেদের সংঘবদ্ধ করতে শুরু করেছে। ধর্মাবতারগন ঐশী বানী ছাড়া সঙ্গে করে আর কী নিয়ে আসেন? কারা এই ধর্মাবতার? কী তাদের উদ্দেশ্য? না কোন ভয়ঙ্কর কিছু নয়, নয় কোন নগ্ন দাসত্বের শৃংখল। কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পুরোহিতগন নিজ নিজ দেশের যেমন: জার্মানী, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স যে সব দেশ থেকে তাঁরা আসেন, সে সব দেশ যে জ্ঞান-গরিমায় বিশেষ অগ্রগামী সে ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ রাখেন না। সঠিক এবং সত্যিকারের খৃষ্ট ধর্ম তাঁরা ঈশ্বরের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন, সে কথাও স্বগর্বে ঘোষনা করতে দ্বিধা করেন না।

বারো সদস্যের একদল নৃ- ও বংশগতিবিশারদ এজাতীয় প্রশ্নের সমাধান কল্পে সমবেত হয়েছেন। নীরব সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, মৌলবাদী ধারনার বাহক Summer Institut of Linguistics (SIL) এবং Wychiff Bibl Translators (WBT) উক্ত বিশেষজ্ঞ দলের নিয়োগদাতা। একই মুদ্রার ভিন্নপিঠ হওয়া সত্বেও সংগঠন দুটি কদাচিৎ একসাথে জনসম্মুখে আসে। প্রধানতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হলেও যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানী থেকেও এরা ধর্মান্তরিতকরনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে। SIL তৃতীয় বিশ্বের ভাষা গবেষনা করে। যার নাম ভাষার বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষন। সুসংগঠিত এবং তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তারিত এই SIL-এর সংগৃহীত তথ্যের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতেই বার সদস্যের বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত। সন্ধিহান যার মানে পরীক্ষনিয়, সে দৃষ্টিতে SIL-এর সংগৃহীত তথ্য মোটেও সন্তোষজনক নয়। অবশ্য তাঁদের কাজে কোথাও এমন কোন প্রমান পাওয়া যায়নি যে, তাঁরা স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে নাশকতামূলক তৎপরতায় জড়িত ছিলেন। অতএব, কোন প্রকার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছে তাদের নেই, শুধুই মঙ্গলাকাঙ্খায় মর্তের মাটিতে স্বর্গের সূচনা করতে চেয়েছেন।
SIL ভাষা বিজ্ঞানীরা এমন সব দেশে তাদের কার্যক্রম চালায় যেখানে চার্চ বা খৃষ্ট ধর্মের পক্ষে কখনো কোন সম্পৃক্ততা ছিলনা, যেমন মেক্সিকো। সে সব দেশে তাদের সাদর অভ্যর্থনার অনেক কারনের প্রধান কয়েকটি; বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সে সব সমাজের ভাষা গুলো নথিভূক্ত করেন। যে কোন মূল্যে ঈশ্বরের গুন-গান করেন বলে রাজনৈতিক ভাবে সর্বদা প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন। বাইবেলের মোড়কে ডলারের কড়কড়ে হাতছানি। আর আর্থিক সচ্ছলতার কারনে; রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, যেখানে নেই সেখানে নতুন করে স্থাপন, বিমান বন্দরের আধুনিকী করন ক্ষেত্র বিশেষে নতুন ভাবে তৈরী। রেডিও ষ্টেশন, স্কুল এবং দাতব্য চিকিৎসালয় তো থাকছেই।
এগুলো এদের দৃষ্টিযোগ্য ঐশ্বরীক আর্শীবাদ। অদৃশ্য কিন্তু খুব কার্যকরী ঐশী বানীগুলোর মধ্যে থাকে তাদের ওয়ে অফ লাইফ ইজ দ্যা বেষ্ট! এবং পৃথিবীতে এই জীবন ব্যবস্থাই শুধু মাত্র এবং এক মাত্র সঠিক জীবন ব্যবস্থা। মধ্যসত্তভোগী মধ্যবিত্ত মার্কিনীদের কাগজের ঠোঙ্গায় বার্গার আর প্লাষ্টিকের বোতলে কোকাকোলা, এই তো আম্রিকান সোসাইটি! বেশীর ভাগ আম্রিকান আবার তাদের বার্গার-কোলা নিয়ে বহিরাগতদের নাকসিটকানী বরদাস্ত করতে পারে না। হতে পারে বার্গার-কোলা-র প্রতি এদের অন্য রকম প্রেম, সেটা থাকতেই পারে।
কিন্ত প্রশ্ন হল; তাদের বার্গার-কোলা সংস্কৃতি, দক্ষিন আম্রিকান (ইন্ডিয়ানা) কোন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কেন নিজেদের ওয়ে অফ লাইফ হিসাবে গন্য করবে? SIL কর্মীদের আনন্দ বারতার অন্যতম হল; ব্যক্তিগত সম্পত্তি, একক ব্যক্তিগত কর্ম তৎপরতা আর সাফল্যের পশ্চিমী ধারনা। SIL কর্মীদের এমন অসংখ্য বিজাতীয় শব্দ, যার সাথে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর এবং মেক্সিকোর ইন্ডিয়ানাদের কোন সংস্কৃতিক পরিচয় নেই।
বিশ্ব মানবতার আদিম এবং অকৃত্রিম প্রশ্ন, যে প্রশ্নটা পৃথিবীর সব মহাদেশের সব মানুষের প্রশ্ন হতে পারে, সে প্রশ্নটা হল; এই পৃথিবীটা কার?
{পরের পর্বে সমাপ্য)


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

ইংরেজি লেখার লিংকটা দিতে পারবেন? দুবার পড়েও ধরতে পারলাম না। (কিছু মনে না করলে বেশ কিছু বানান ভুল আছে, বিশেষ করে ণ/ন)।

পুতুল এর ছবি

পুরোটা এক সাথে দিলে মনে হয় ভাল ভাবে বোঝা যাবে। একসাথেই দেব।
বানানের জন্য লজ্জিত, অনেক বানান জানিই না। তবু চেষ্টা করবো যথাসাধ্য।
আমি জার্মান ভাষা থেকে অনুবাদ করেছি। অনেক পুরোনো একটা বই ঘেটে লেখাটা পেলাম। তাই কোন লিংক দেয়া সম্ভব হলনা বলে দুঃখিত।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নির্জর প্রজ্ঞা এর ছবি

ঈশ্বরকে পাবার জন্য ধর্মের আশ্রয় নিতে হবে এ যেন একক সত্য। মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে পাবার জন্য ধর্ম থেকে ধর্মে ঘুরপাক খায়। তার পরিনাম আপনি সুন্দর করে বললেন। ধর্মটা এখন একটা পোশাক যা নিয়ে ব্যবসা করা যায়, দর-দাম করে কিনে দেখা যায় আবার ভাল না লাগলে ফেলেও দেয়া যায়।

ব্যক্ত হোক তোমা-মাঝে অনন্তের অক্লান্ত বিস্ময়
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। লেখাটা আমার নয়, আমি অনুবাদ করেছি মাত্র। কিন্তু লেখার মূল বক্কব্য আমাকে আকৃষ্ট করেছে খুব্ সে জন্যই অনুবাদটা করলাম।
সব কিছুই ধর্মের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করার সমালোচনা করা হয়েছে। ধর্ম আর পুঁজীবাদ খুব মিলেমিশে চলে একসাথে। এখানে সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন লেখক।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনুবাদের ব্যাপারে আলমগীরের সাথে একমত। লেখার ভাবার্থ বুঝতে পারিনি। ইংরেজী লেখাটা পেলে বুঝতে পারতাম এধরনের প্রকাশভঙ্গী কী হাইনরিখ বোল-এর না আপনার।



তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

ইংরেজী লিংকের ব্যাপারে আলমগীরের মন্তব্যে বলেছি। হাইনরিখ বোলের প্রকাশ ১০০ ভাগ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়। ভাবটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। বাক্যগুলো বেশ লম্বা। এরকম অনুবাদ বাংলায় কোন অর্থ প্রকাশ করে না। তাই ছোট ছোট বাক্যে বাংলা করতে হয়। ষ্টাইলটা মূল ধারা সাথে সংগতি রেখে তৈরী করার চেষ্টা করেছি। বলাই বাহুল্য; লেখাটি আমার মনের মত বলেই অনুবাদের জন্য পছন্দ করেছি। সেখানে বক্তব্য, ষ্টাইল বাখ্রগঠন সবকিছুই আমার খুব পছন্দ হয়েছে। চেষ্টা করেছি তার সবটা না পরলেও যতটুকু পারা যায় মূল রচনার কাছাকাছি থাকতে।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শাহীন হাসান এর ছবি

বিশ্ব মানবতার আদিম এবং অকৃত্রিম প্রশ্ন, যে প্রশ্নটা পৃথিবীর সব মহাদেশের সব মানুষের প্রশ্ন হতে পারে, সে প্রশ্নটা হল; এই পৃথিবীটা কার?

মূলটি পড়া নেই, তবুও ভাল লাগলো ...।

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

পুতুল এর ছবি

পুরোটা এক সাথে দেব গুরু। আশা করি পড়বেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

পুরোটা একসাথে পাবার আশায় আছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।