পাওলো কোয়েলোর গল্প লেখার নেপথ্যে

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শুক্র, ২১/০৮/২০০৯ - ৩:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নাস্তা করতে এসে পাওলো কোয়েলো এমন খাঁসা গল্পের কাঁচা মালের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। ভাগ্যই বলতে হবে। তবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা অন্তর দৃষ্টিতে দেখলেই গল্প হয়না। তার জন্য আলাদা একটা আরতি থাকতে হয়। সেটা না থাকলে নিঁখুত পর্যবেক্ষণ দিয়েও কোন গল্প দাঁড় করানো দায়।

এইটুকু ভাবতে ভাবতে পাওলো কোয়েলো আবার পর্যবেক্ষণে ফিরে এলেন। এত খন্ডকালিন দর্শন সাধারনতঃ কোয়েলোর হয়না। তিনি একটা ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করে, শারীরিক ভাবে সেখানে থেকেও অন্তরদৃষ্টিতে দূরে যেতে পারেন। সেখানে দাঁড়িয়ে এখানে বসা এই পাওলো কোয়েলো সহ পুরো চিত্রটা তিনি পাখির চোখে দেখেন, তার পর সংগৃহীত উপাত্ত নিয়ে নিরবে ভাবেন। বিভিন্ন কোন থেকে ঘটনাটা দেখার চেষ্টা করেন। তার পর এমন একটা কোন ঘটনা বর্ণনার জন্য বেছে নেন; যেখান থেকে পুরো ঘটনা দেখা যায় অথচ লেখকের বা বর্ণনাকারীর উপস্থিতি ঘটনা সংশ্লিষ্ট কেউ টের পায় না। অনেকটা চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহকের মত।

অবশ্য সেটা অনেক পরের কথা। যে ঘটনা নিয়ে লিখবেন তা অনেক দিন নিজের মনে রেখে দেন। তারপর আরাম কেদারায় বসে সমুদ্রের বিশালতার সামনে নিজের ক্ষুদ্রতাকে অনুভবের চেষ্টা করেন। এক ধরনের যোগ সাধনা বলা যায়। তারপর চোখ বন্ধ করে লেখার গল্পটা সাজান। বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ঘটনা দিয়ে শুরু এবং শেষ করেন। অনেক গুলো নমুনা তৈরী করে তার কোন একটা মনে গেঁথে গেলে শুরু করেন লেখা। পাওলো কোয়েলো এই কার্য পদ্ধতিকে ফুল-প্রজাপতি-ফল সূত্র নামে অভিহিত করেন।

এই ধরনের একটা পরিপক্ক গল্পের উপাত্ত নিয়ে সাগর পরে এসেছেন গত সন্ধ্যায়। অনেক দিনের অভ্যাস। পাওলো কোয়োলোকে লিখতে হলে এখানেই আসতে হয়। কারণ, ইন্ডিয়ানাদের কোকা এবং গাঁজা খেয়ে ইহজাগতিকতার উর্দ্ধে ঊঠে বিভিন্ন দেবতাদের সাথে আত্মিক মিলন ঘটিয়ে কোন জাগতিক সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার মতই এক একটা গল্প তৈরী হয়। এখানে এই সমুদ্রের তীরে বালুকাবেলায় এমন একটা ঐন্দ্রালিক মন্ত্র আছে। তার টানেই আর্নল্ড হেমিংওয়ে মাছ ধরার মত একটা বিশ্ব বিখ্যাত গল্প লিখতে পেরেছিলেন। সব এই জলের ইন্দ্রজাল।

হয়তো এই কারনেই পাওলো কোয়োলোর পূর্ব পুরুষরা ইউরোপের মায়া ছেড়ে দক্ষিন আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ে ছিলেন। এক হাতে কৃপাণ আর এক হাতে বাইবেল নিয়ে সারা দক্ষিন আমেরিকা, সত্য বলতে কি, সারা বিশ্ব তাঁরা জয় করেছিলেন। এখনো এসব কথা মনে হলে পাওলো কোয়োলোর মাথা নত হয়ে যায়! হ্যাঁ, ছিল অনেক নিষ্ঠুরতা অমানবিকতা! সেটা কোন সভ্যতায় নেই! টিকে থাকতে হলে এর প্রয়োজন আছে। ডারউইন দেখিয়েছেন কি ভাবে যোগ্যতমের অভিষেক হয়। আজকের বিজ্ঞান তাকে কেবল অবনত মস্তকে নমস্কার করতে পারে। আরেকটা বিষয় ভেবে পাওলো কোয়েলো খুব অবাক হয়। মানুষের লক্ষ বছরের ইতিহাসে সাদা চামড়ার মানুষেরাই কেবল এই সব অসাধ্য সাধন করতে পেরেছে। পৃথিবীতে যা কিছু দেখে মানুষ বিস্ময়ে অবাক হয়ে থাকে বলতে গেলে তার সবই সাদা চামড়ার মানুষের তৈরী। ব্যাবিলনের বাগান, ভারতের তাজমহল আর মিশরের পিরামিড বাদ দিলে কালো মানুষেরা আর কি করেছে!

অবশ্য মূহুর্তের জন্যই কেবল এই সব ভাবনা পাওলোর মাথায় আসে। সে জন্যই লেখায় তার প্রভাব থাকে না মোটেই।
চুরমুর করে কি যেন একটা ভাঙ্গলো! পাওলোর ভাবনায় ছেদ পড়ে। বাক বিতন্ডা বা সংলাপ তিনি পর্যবেক্ষণের সময় তেমন আমল দেন না। কোন চরিত্রে কি সংলাপ বিশ্বাস যোগ্য শোনাবে সেটা তিনি ভাল করেই জানেন। তাই ঘটনা দেখা ছাড়া তিনি অন্য কিছু তেমন মনোযোগ দিয়ে শুনেন না।

সে জন্যই রোনাল্ডোর বউ যখন প্রায় চীৎকার করে বলল;
-খানকীর পুত মাল খাইয়া কাইল রাতে তোর কোন মা-র লগে পোন্দাইছস?
কথা শুনে এই সাতসকালে রোনাল্ডোর রাগে মূর্ছা যাবার কথা!
কিন্তু রোনান্ল্ডো তার বউয়ের কথায় কেবল বলল;
-মাগী তুই অহন আমার হোটেল খালী কর।
আর এই সময়ে কোন কৈফিয়ত না পেয়ে সিলভিয়া আরো রেগে গিয়ে গত রাতের একটা খালি বিয়ারের বোতল হাতের নাগালে পেয়ে সেটাই ছুড়ে মারলো।
রোনাল্ডো কফির মেশিনটা চালু করতে হাত বাড়িয়ে ছিল। ঠিক সেই মূর্হুতে বোতলটা রোনাল্ডোর পেছন দিয়ে গিয়ে পাশের দেয়ালে লেগে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো।
তার কয়েকটা পাওলো কোয়োলোর টেবিলের পায়ায় ধাক্কা খেয়ে ছড়িয়ে গেল। চমক ভেঙ্গে তিনি নিজেকে ঘটনার ভয়ঙ্কর রকম কাছে আবিস্কার করে একটু অস্বস্তি বোধ করলেন। নীল রং-এর কাঁচের কনা গুলো পা দিয়ে সরিয়ে নড়েচড়ে বসে নিজের উপস্থিতি বিবাদমান দুই পক্ষের গোচরে আনার চেষ্টা করলেন বোধ হয়। এই সব পরিস্থিতিতে যে কোন ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বের হয়ে যেতেন। কিন্তু পাওলো কোয়েলো মানুষের এই সব বিবাদ-বিসম্বাদ বেঁচেই খান। কাজেই এই সব ঝুঁকি তাকে নিতেই হয়।

নীচুর সাথে নীচু না হলে তিনি মানুষের মনের টানা-পোড়নের কথা লিখবেন কি করে! অবশ্য এই হোটেলে তিনি ঘরের মানুষের মত। এদের উপর মায়া পরে গেছে। তাই এখানেই আসেন বারে বারে। এখন অবশ্য জায়গাটা আগের মত নিরিবিলি আর নেই। অনেক লোকের আনাগোনা। তবে গরমের সময় লোকের ভীড় তেমন থাকে না। ইউরোপে এখন বসন্ত। তাই ইউরোপীয় ভ্রমনকারী এখন ব্রাজিলে তেমন নেই। বলতে গেলে সব অতিথি ইউরোপ থেকেই আসে। তবে শীতের সময়। বরফে আচ্ছাদিত থাকে বলে সংগতি সম্পন্ন ইউরোপীয়রা এখানেই আসে। বিকিনী পড়ে এই সমুদ্রের জলে বড় দিনে সাঁতার কাটা যায়, অথচ ইউরোপে কোমর সমান বরফ ভেঙ্গে পাশের গলির রুটির দোকানে যেতে হয়!

পাওলো কোয়েলো তখন এখানে আসার চিন্তাই করেন না। এত ভীড় থাকে। তো বছরের এই সময়টা এই নিরালায় তিনি লিখে কাঁটান। এখন পর্যন্ত যা লিখেছেন তাতে পেট চালাবার জন্য আর লিখতে হয় না। এখন লিখেন সৃষ্টির আনন্দে। কাজেই অনেক সময় নিয়ে যত্ন করে লেখা যায়। একেকটা বই বিশ্বের সব ভাষায় পাঠকের শীর্ষ তালিকায় থাকে।

প্রথম বইটা লেখার সময় পরিশোধযোগ্য মূল্যে একটা হোটেল খুঁজতে গিয়ে রোনাল্ডোর এখানে আসেন তিনি। তখন মূল্যের আকাশ-পাতাল পার্থক্য চোখে পরার মত ছিল না। রোনাল্ডোর মত কয়েকজন ইন্ডিয়ানা গ্যাং জীবনের অবশান ঘটাতে এই ধরনের ব্যবসায় নেমেছে। লেখকের একটা সামাজিক দায়ীত্বের মত; রোনাল্ডোদের পক্ষে নিজের একটা আত্মিক দায় থেকেই এখানে এসে উঠেছিলেন। তখন রোনাল্ডোর রমরমা ব্যবসা। গহীন জঙ্গলে আদিবাসীদের একচ্ছত্র আধিপত্য তখন আর নেই। জীবিকার সন্ধানে তারা প্রগতির চাকায় ধাক্কা দিতে দলে দলে সভ্যতার আলোর নীচে জমায়েত হতে পর্তুগীজদের পত্তনে শহরের অবিচ্ছেদ্য আংশ হিসাবে সস্তা শ্রম আর বস্তির জোয়ার এনেছে। রোনাল্ডোর মত মানুষ সেই বস্তিতেই পয়দা হয়েছে। সব পথের পোলাপানের মত রোনাল্ডোরাও জানেনা কে বা পিতা কেবা মাতা। ছোট ছোট ছিঁচকে চুরি দিয়ে শুরু হলেও একটা সময় এরা নিজেদের জন্যই হুমকী হয়ে দাঁড়ায়। বাল্যকালে ছুড়ি-চাকুর খোঁচা দেয়া এবং খাওয়া রোনাল্ডোরা যখন মাদক ব্যবসায়ীদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়, তখন দৈনন্দিনের হাঙ্গামায় ছুড়ির জায়গায় পিস্তলের ব্যবহার শুরু হতে থাকে। শহরে ভদ্রলোকের বসবাস অসম্ভব দেখে অনেকে ব্রাজিল ছেড়ে পর্তুগালে পাড়ি জমান। বিষয়টা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে গিয়ে গ্যাং লিডারদের বিভিন্ন ভাবে সরকারী সহায়তায় পূর্ণবাসন শুরু হয়।

রোনাল্ডো সেই সুযোগে সমুদ্রের নীল নোনা জলের মাছ ভেজে ছুটির দিনে মধ্যবিত্তের নৈসর্গীক ছায়ায় অবগাহনকে একটা অপার্থিব মাত্রা যোগিয়ে বেশ কড়কড়ে টাকার মালিক। তারপর ব্রাজিল থেকে পর্তুগালে ফেরৎ যাওয়া কোন দম্পতীর কাছ থেকে এই পুরানো হোটেলটা কিনে একেবারে নবাবী হালে রাজত্ব করে চলেছে। তখন আদিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কিছু ছাত্র বিশ্বের সব ধনীদেশ থেকে এখানে ভীড় জমিয়েছিল। তাদের একজনের সাথে রোনাল্ডোর বেশ গভীর প্রণয় একেবারে বাচ্চা পয়দায় উত্তীর্ণ হয়। অন্যদিকে গার্মান বংশদভূত কিছু কোম্পানী সংক্রিয় কাঠ কাটার আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। তার ফল হল; আগে আদিবাসীরাই কুড়ালির কাজটা করে গাছ কাটতে হতো। এখন সে কষ্ট তাদের আর করতে হয়না। গোটা কয়েক ট্রাক গভীর অরন্যে চালিয়ে দিলে প্রতিদিন প্রায় বর্গকিলিমিটার এলাকা চাষের উপযোগী হয়ে উঠে। সাগর পারে অপেক্ষা করা জাহাজ গুলি দিনান্তেই কাঠে বোঝাই হয়ে ইউরোপের পথে নোঙ্গর তোলে।
সেটা যন্ত্র কৌশলের আরেক বিস্ময়। জাহাজ থেকে ক্রেন গাছ গুলো তুলে একটা বড় গামলায় রাখে। প্রসেস হয়ে অন্যমাথায় আসবাবপত্রের কাঠ, কাগজ একেবারে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে বের হয়। নিজোর চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আধুনিক ছাপাখানার মত। লেখক বইলিখে পান্ডুলিপি জমা দেন আর সেটা পাঠকের হাতে দেয়ার মত অবস্থায় মেশিন থেকে বের হয়।

ইউরোপ থেকে আগত রোনাল্ডোর সেই প্রণয়িনীর প্ররোচনায় সে গভীর অরন্যে কিছু জায়গা কেনে। তখন আয় ভাল তাই ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতেও রোনাল্ডোর তেমন বেগ পেতে হয় না। সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশী জঙ্গল কিনে নেয় রোনাল্ডো। সিলভিয়া তখন দুই সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। অরণ্য রক্ষার তাগিত তার নিজের। সেটার কুফল সে কেন ছেলে মেয়েদের ঘাড়ে তুলে দেবে! ইউরোপের মত শিক্ষার পরিবেশ সে ছেলে মেয়েদের এখানে কি ভাবে দেবে! শুরু হয় দ্বন্ধ। তার সাথে যোগ হয় ভ্রমন কারীদের অনিহা। আয় কমে আসছে দিনদিন। ব্যাংকের কিস্তি সময় মত দেয়া আগের মত সহজ নয়। শীতের সময় বেশ ভালই চলে। কিন্তু গরমের সময় খুব টানাটানী করতে হয়। তাও প্রথম দিকে চলে যেত। এখন প্রায় অসম্ভব। সিলভিয়ার কাছে বন সংরক্ষণ একটা ফ্যাশনের মত। সাদা চামড়ার মানুষ জীবনের পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খুব সহযেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু রোনাল্ডো ব্যাপারটা নিজের অস্তিত্বের সাথে মিলিয়ে দেখছে। তাঁর পূর্বপুরুষের বসতভিটা তাকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করতে হবে। দরকার হলে সে এই হোটেল বিক্রি করে ব্যাংকের সব দেনা মিটিয়ে জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করবে।

সিলভিয়ার জন্য এতদূর যাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। সে চায় জঙ্গল নিলামে উঠুক। বিক্রি করে যা আসবে তাতে ব্যাংকের দেনা শোধ করেও অনেক টাকা বেঁচে যাবে। রোনাল্ডোর মত নাদানরা একবার শেকড়ের সন্ধান পেলে আর ফেরানো সম্ভব না। কারণ এদের কখনো শেকড় ছিল না। সেখানে যুক্তি বুদ্ধি লাভ লোকসানের বিপরীতে অবস্থান প্রধান হয়ে উঠে। রোনাল্ডোর শেকড় সে পৃথিবীর কোন ঝুলন্ত বাগানের বিনিময়েও ছাড়তে নারাজ। পরিবেশের কারণে সিলভিয়া রোনাল্ডোদের সাথে মিশতে গিয়ে ওদের মতই হয়ে গেছে। নীচুর সাথে নীচু হয়ে সে রোনাল্ডোদের গালিও রপ্ত করে নিয়েছে এবং সেটা রোনাল্ডোর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইন্ডিয়ানা ভাষায়। সেটাও একটা কারণ: যে জন্য পাওলো কোয়োলো ওদের ঝগড়ার সংলাপ গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না। কারণ তিনি শুধুই পর্তুগীজ ভাষা জানেন। সিলভিয়ার মত নিজেকে বিপন্ন করে ইন্ডিয়ানের সাথে মেশেননি। সত্যি বলতে এদের পর্তুগীজ ভাষা শিখিয়েও কোন লাভ হয়নি। ব্রাজিলের এক ফুটবল ছাড়া আর কোথায় ওদের প্রতিনিধিত্ব আছে? যে কারণে কলেরায় প্রেম বইটা লেখার সময় একটি সস্তা বেশ্যা ছাড়া আর কোন চরিত্রে এদের খাপ খাওয়ানো গেল না!

-তুই খানকী তোর মায় খানকী, আমার পোলা মাইয়া লইয়া আমি জঙ্গলেই যামু। তুই রাস্তা মাপ।
রোনাল্ডোর এত বাড়াবাড়ি ঠিক হচ্ছে না। মেয়েটাকে ঘাড় ধরে ঠেলতে ঠেলতে পাওলো কোয়োলোর সামনে দিয়ে গেটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এবার উঠতে হয়। এখানে নাস্তা করা পাওলো কোয়োলোর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা নতুন গল্পের প্লট মাথায় এলো। যারা নোবেল প্রাইজ দেয় গল্পটা তাদের বিরুদ্ধেই যায় যদিও। কিন্তু এখন ঝুকি নেয়া যায়। গুন্টার গ্রাস তার নাৎসী সংশ্লিষ্টতার কথাও নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরেই আত্ম জীবনীতে স্বীকার করেছেন।
দেখা যাক এটা নিয়ে কোন গল্প দাঁড় করানো যায় কিনা। ভাবতে ভাবতে ভদ্রলোকের বসার মত একটা রেস্তোঁরার খোঁজে বের হলেন পাওলো কোয়োলো।


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

ঘুমচোখে পড়লাম। বেশ ভালো লাগলো দন্দ্বটা। ঘুম থেকে উঠে আবার পড়লে হয়তো পুরোটা বুঝতে পারবো।

পুতুল এর ছবি

আপনার ঘুম ভাল হোক।
আবার পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

জটিল!
দেখা যাক কোন গল্প দাঁড়ায় কিনা। পাওলোর লেখাগুলো আবেগকে নাড়া দেয় খুব বেশি।
হয়ত এ গল্পে রোনাল্ডোর মত কোন চরিত্র আসবে। রোনাল্ডোর ভেতরটা এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলবেন যেটা আমরা বাইরে থেকে উপলদ্ধি করতে পারি না।

পুতুল এর ছবি

একটা গল্প দাঁড়ালে মন্দ হতো না। আশা করি পাওলোর সময় হবে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তুলিরেখা এর ছবি

চমৎকার। তারপরে কি হলো?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ।
তারপর কি হল? সেটা জানতে পারলে নিজেই লিখে ফেলতাম। দেখি পাওলো কি করে। তারপর জানাব।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ভালো লেগেছে লেখাটি। লেখাটি কি এখানেই শেষ হয়ে গেল, নাকি আরো চলবে? যদি চলতে থাকে তাহলে কোন কথা নাই, কিন্তু যদি এখানেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে প্রশ্ন আছে একটা।
এই লেখাতে পাওলো কোয়েলো যা দেখছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন আপনি। এই গল্পে তাহলে পাওলো কোয়েলোর ভূমিকাটি কি? সে তো শুধু দেখছে, যেমন করে আমরা সবাইই দেখছি (আপনার বর্ণনা পড়ে)।
আপনার লেখা ভালো লাগে বলেই প্রশ্নটি করলাম।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

পুতুল এর ছবি

লেখাটি চালানোর মত কোন সুযোগ আমার নেই। কারণ রণক্ষেত্রটা আমার অপরিচিত।।
মার্কেজের "কলেরায় প্রেম" ছবিটি দেখেছিলাম কয়েকজন বন্ধুর সাথে দল বেঁধে।
কেন যেন আমি খুব মুগ্ধ হতে পারলাম না। অবশ্যই দলছুট হয়ে গিয়েছিলাম আমার অনুভূতি প্রকাশ করে।

আমাদের অনেক গভীর দর্শনের লেখক আছেন। নাম না জানা এমন একজন লেখক "জনপদ বধূ" নামে একটা উপন্যাস লিখেছিলেন। বইটার শুরু এবং শেষের দিকে কয়েকটা পৃষ্ঠা না থাকায় কখনো জানতে পারবনা লেখকের নাম। একজন পতিতার গল্প। এমন আরেকটা উপন্যাস আকবর হোসেনের "অবাঞ্চিত"।

"জনপদ বধূ" পড়ে যে ভাবে বা যে কারণেই সে পতিতা হল, তাতে তাকে খুব শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে হল। এখানে আমি শুধু দর্শক ছিলাম না। বিধবা বিবাহের প্রবক্তা দয়ার সাগর বিদ্যা সাগরের পুত্র হতে চেয়েছিলাম। সম্ভবত তখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি।

তেমনি অবাঞ্চিত পড়ে মনে প্রশ্ন জেগেছিল- মানুষ কিভাবে জারজ (বাষ্টার্ড) হয়? সেতো মানুষই। আমার জন্মের উপর আমারতো কোন নিয়ন্ত্রন নেই। যাকে জারজ বলা হচ্ছে (গালি বা তাচ্ছিল্যার্থে) তার জন্মের জন্যতো সে দায়ী নয়। তখন ক্লাস ফাইভ থেকে বার্ষিক পরিক্ষা দিয়ে মহাপন্ডিত আমি! মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তখন থেকেই পছন্দ করতাম না।

শুধু শরৎ চন্দ্রের "পথের দাবী" পড়ে আমি স্বদেশী হয়ে গেলাম। সেটাও সেই ছোটবেলার কথা। ইচ্ছে করতো আবার এদেশে ইংরেজ আসুক আর আমি ক্ষুদিরাম হই, সূর্য়্য সেন হই। এমন একটা অনুভূতি না এলে নিদেন পক্ষে দেবদাস হতে চাই। তা না হলে আমার বই পড়ার দরকার নাই।

মার্কেজের "কলেরায় প্রেম" ছবিতে ঐ পতিতা আর চাকর- বাকর ছাড়া কোন দক্ষিন আমেরিকান বা ইন্ডিয়ানার উপস্থিতি নেই। সব সাদা চামড়ার মানুষের প্রেম -ভালবাসার বা না বাসার বগরবগর। একটু অবাক হলাম কেউ ভাবে না, ইন্ডিয়ানাদের দেশটা কি করে পর্তুগীজ বা স্পেনিস ভাষাভাষী মানুষের দেশ হয়ে গেল!

আমরা সেখানে সবাই দর্শক ছিলাম। যেমন থাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত সব সফল লেখকের লেখার মুগ্ধ পাঠক হয়ে। যাদের লেখা পড়ে কেউ ক্ষুদিরাম হতে চায় না, বা মানুষ কেন জারজ (বাষ্টার্ড) হবে সে প্রশ্ন মনে জাগে না! তাদের লেখার আমরা সবাই পাঠক বা দর্শক। কাজেই আমাদের একজন পাওলো কোয়োলোকে সামনে বসিয়ে শুধু দেখতে পারি। উজাড় হয়ে যাক ব্রাজিল বা সুন্দর বনের সব গাছ। আমাদের দেখা ছাড়া এই সর্বনাশী চলচ্চিত্রে আর কোন ভূমিকা নেই।

মার্কেজকে (পাওলো কোয়েলো) বেছে নিয়েছিলাম একটা বির্তক এড়াতে। এখানে হুমায়ূন আহমেদ আসতে পারেতেন। তখন বির্তকটা কেমন হতো জানি না। হয়তো কোন বিতর্কও হতো না। কিন্তু আমি খুব গুছিয়ে সব কথা বলতে পারি না। তাছাড়া টাইপ করতে সময় লাগে অনেক। সব মিলিয়ে ইচ্ছা থাকলেও কোন বির্তকে যোগ দিতে পারি না। কাজ ;সংসার ,সচলায়তন। আপনার প্রায় সব লেখা পড়েও মন্তব্য করতে পারি না। সময় নেই। কিন্তু পড়ি। আর আমার বানান ভুল হয় অনেক। খুব বিব্রত হই। আমার সব লেখা এমনকি মন্তব্যও আমার বউ দেখে দেয়। এতো দীনতা নিয়ে স্বাধীন ভাবে কথা বলা মুস্কিল। কাজেই সেদিকটায় যেতে পারি না।

ধন্যবাদ আপনাকে।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফরিদ এর ছবি

গতকাল বইমেলায় আকবর হোসেনের অবাঞ্চিত প্রায় প্রতিটা স্টলে খোজেছি। এছাড়া মেলার বাইরেও অনেক অনেক খুজেছি। রাত দশটা পর্যন্ত আমি আকবর হোসেনের অবাঞ্ছিত ছাড়াও তার অন্যান্য বইগুলোরও তালাশ করেছিলাম। এখন গুগুলে পিডিএফ কপির জন্য সার্চ দিয়ে আপনার এই লেখার লিংক পেলাম। আচ্ছা বাংলা সাহিত্যের পুরোনো বইগুলো কি হারিয়ে গেছে? আকবর হোসেনের বইগুলো কি আমি আর পাবনা? কারো জানা থাকলে আমাকে সন্ধান দিন প্লিজ আমি যেভাবেই হোক কালেকশন করব। প্লিজ...।। আমার মোবাইল নম্বরঃ ০১৭২০৪৪৮৪২৩

ধুসর গোধূলি (যাচাই আমিই করে দিছি) এর ছবি

হুমমম....

পুতুল এর ছবি

এইটা কি আমগো ধূগো;হুম........
*******************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো বেশ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই।
*******************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

পুরো লেখাটি পড়লাম। একটু ধোঁয়াটে, অস্পষ্ট ভাবের বিন্যাসে অনেক কথার বিরল বাগান সাজিয়েছেন আপনি। সে কথাগুলো একক ভাবে স্পষ্ট, কাচা পেয়ারার মতো অনেকটা .....। কিন্তু সব মিলিয়ে একটি অস্পষ্টতা, যা আমাদের ভাব আর বাস্তবতার মিলনে কুয়াশাচ্ছন্য।

প্রার্থিব আর অপ্রার্থিব জীবনের টানাপোড়নে একজন লেখকের দৃষ্টি সেখানেই বারবার নিবদ্ধ হবে আর এটাই স্বাভাবিক। আর সেজন্যেই লেখাটি খুব ভালো লেগেছে আমার।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

কিন্তু সব মিলিয়ে একটি অস্পষ্টতা, যা আমাদের ভাব আর বাস্তবতার মিলনে কুয়াশাচ্ছন্য।

গুন্টার গ্রাস কোন সাখ্যাতকারে বলে থাকবেন
আমি খুব গুছিয়ে মিথ্যা বলেতে পারি। লেখক হতে হলে সেটা খুব জরুরী।

আমারও তাই মনে হয়। লেখক হওয়ার জন্য নয়, ভয়ে আমি অন্তত সত্যটা কুয়াশার জালে অস্পষ্ট করে রাখি। কিন্তু প্রভুদা বলেছিলেন সব কিছু নিংড়ে সত্যটাকে বের করাই লেখকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

লেখাটা ভাল লেগেছে যেনে ভাল লাগল।
ধন্যবাদ তীরুদা।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।