জাতীয়তাবাদ একটি ধর্মের নাম

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: সোম, ২৭/০২/২০১২ - ৫:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। এই অবস্থান থেকে অন্ধ ধার্মিকের অনেকগুলো সমস্যা আমাদের চোখে পড়ে। যেমন ধর্মের প্রতি নিঃশর্ত বিশ্বাস রেখে যুক্তির পথে হাঁটার উপায় নেই, একথা সত্য জেনেও তারা ধার্মিক। জন্মসূত্রের মত একটি কাকতালীয় ঘটনা তাদেরকে একটি বিশ্বাসের প্রতি অনুরক্ত করতে যথেষ্ট। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেই মানুষটির নিজের ধর্মকেই একমাত্র যথার্থ মতবাদ মনে করে।

মানুষের দলবদ্ধ বসবাসের পেছনে একটি বড় চালক ছিল কল্পিত সম্পর্কস্থাপনের প্রবণতা। কল্পিত বলছি কারণ এইসব সম্পর্ক পারিবারিক বা বন্ধুত্ব সম্পর্কের বাইরে অবস্থিত। কল্পিত এই সম্পর্কের ধারণা মানবতার ঊষালগ্ন থেকে প্রস্তরযুগ পর্যন্ত মানুষকে দলবদ্ধ রেখেছে। প্রস্তরযুগে এই কল্পনার সম্প্রসারিত একটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়।

ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত ধরে আছে। জাতীয়তাবাদ যেভাবে এগোয়, তার সাথে কিন্তু ধর্মের অনেকগুলো মিল রয়েছে। ধর্মের মতই কিছু কল্পিত ‘ঐতিহ্য’কে ভিত্তি করে জাতিসত্তা গড়ে ওঠে। ফ্যাসিস্ট আর নাৎসিদের কথা ভাবুন। পাকিস্তানের কথা ভাবুন। যখন আমরা জাতীয়তাবাদকে কাছ থেকে দেখি, তখন লক্ষ করি, ধর্মীয় রেলিক (নবীর দন্ত মোবারক!), মসজিদ, ইমাম, ধর্মযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ, সংসদ, পল্লী-বন্ধু, ও দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী নামে জাতীয়তাবাদে বর্তমান। ধর্মগোষ্ঠির মত জাতীরও একটি সীমানা থাকে। এই সীমানার ওপারে থাকে অন্য জাতি, অন্য সম্প্রদায়। ছাপানো বক্তব্য যত সহজে সম্প্রসারিত হতে থাকে, জাতীয়তাবাদ ততই গভীর হতে থাকে। ঠিক যেমন আসমানি কিতাবগুলো ছাপানো হয়েছিল বলেই অনেকগুলো ধর্ম এখনো বেঁচে আছে। নতুন মিডিয়া জাতীয়তাবাদের এই গতিকে আরো উস্কে দিয়েছে। নৃতত্ব, অভিন্ন প্রতিপক্ষ বা ভাষা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে জাতি গড়ে ওঠার কথা থাকলেও আজকের বাস্তবতায় রাজনৈতিক একক বলতে জাতি-রাষ্ট্র ছাড়া আমাদের সামনে বেছে নেবার অনেক বেশী কিছু নেই।

ইতিহাসে যেমন মানুষ শিয়া-বাহাই বা ক্ষত্রিয়-জৈন বা ক্যাথলিক-জেন্টাইল হিসাবে জন্মাত, এখন আমরা জন্মাই একটি দেশের নাগরিক হয়ে। আমাদের কারো নাগরিক না হয়ে গত্যন্তর নেই, ঠিক যেমন ইতিহাসে কোথাও শূদ্রের ঘরে জন্মে বেদপাঠের অধিকার চাওয়া একটি অপরাধ ছিল। আজকে একটি দেশের পতাকা বা স্মৃতিসৌধ অতীতের ক্রুশ বা মহামানবের চুল-নখের মতই শক্তিশালী প্রতীক। ধর্মের মত কল্পিত একটি ধারনার নামের শহীদদের জায়গা দখল করে নিয়েছে জাতি নামক আরেকটি কল্পিত ধারনার জন্য জীবন দেয়া শহীদেরা।

আগেই বলেছি, জাতীয়তাবাদের কেন্দ্রীয় ধারণা মানে ‘জাতি’ একটি কল্পিত সম্প্রদায়। একটি দল কল্পনা করে তারা একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক একক। জতির সদস্যরা মনের ভেতরে তাদের ঘনিষ্ঠতার স্বরূপ কল্পনা করে নেয়। আমি কখনো বগুড়া যাইনি। কিন্তু বগুড়ার একজন মানুষ বাংলাদেশের পতাকার প্রতি যে টান অনুভব করে, আমিও তাই করি। আমাদের সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াই, আমরা একটি জাতির অন্তর্গত। আমাদের একটি সম্পর্ক আছে। এই কল্পিত সম্পর্কটি লোকায়ত বিশ্বাসে যেমন দেশ ভিত্তিক জাতীয়তা হতে পারে, ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে ইসলামিক উম্মাহ বা বিশ্ব ইজতেমার মত কিছুর মত দেখতে হয়।

জাতি ও ধর্ম দুটোই সমানভাবে কল্পিত।

ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ধর্মের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে নতুন করে আলোচনা অবতারণা আমার লক্ষ্য নয়। এখানে আমি সচলদের আহবান করছি, জাতীয়তাবাদ ধারনা নিয়ে আলোচনা করুন। আরো নির্দিষ্ট করে জাতীয়তাবাদকে ধর্মের মত প্রশ্নাতীত মনে করার নিয়েই আলোচনা হোক।এখানে জাতীয়তাবাদী বলতে আমি বিয়েনপি বা আওয়ামীলীগ বোঝাচ্ছি-না। আমি জাতীয়তাবাদী বলছি তাকে যে তার জাতীয় ধারনাকে চূড়ান্ত মনে করে; যেমন কিছু আমেরিকানের কাছে আমেরিকা ধারণা পবিত্র।

একবার ভাবুন। জাতীয়তাবাদ তো আরেকটি ধর্ম বই নয়। কোন যুক্তিতে আমি, আপনি এই ধর্ম পালন করি?


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ইন্টারেস্টিং।

এইভাবে চিন্তা করলে তো বলা যায় সচলায়তনও একটা ধর্ম-- সচলদের একটা ধর্ম আছে, কিংবা বলা যায় সচলায়তন করা একধরনের সচলায়তনবাদ। ঠিক বুঝলাম তো?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
স্বাধীন এর ছবি

এইভাবে চিন্তা করলে তো বলা যায় সচলায়তনও একটা ধর্ম-- সচলদের একটা ধর্ম আছে, কিংবা বলা যায় সচলায়তন করা একধরনের সচলায়তনবাদ। ঠিক বুঝলাম তো?

আপনার বুঝা ঠিকই আছে। একই হিসেবে গণতন্ত্র, মানবতাবাদ, নারীবাদ, অহিংস মতবাদ, পরিবেশবাদী মতবাদ থেকে শুরু করে সকল মতবাদই একেকটি ধর্ম। আরো স্পষ্ট করে বললে বলা যায় সবই একেকটি "মিম"।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

১। ধর্মপালনও তো অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না। ধর্ম পালনে তো বাধা নাই। ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়। জাতীয়তা আবেগের বিষয়। এগুলো নিয়া যুক্তি বাইর করতে গেলে একটা কুরুক্ষেত্র তৈরি হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। চোখ টিপি

২। পৃথিবীতে এখন ভাষাজাতীয়তাও জোরদার। ওটার আকার প্রকার একটু ভিন্ন। চোস্ত ইংরেজিভাষীরা সব ভাই ভাই। তেনারা অন্যদের নিচুবর্ণ চোখে দেখলেও সেইটা রেইসিজমের মধ্যে পড়ে না। কারণ ঢাল হিসেবে বলতে পারে যে ভাষাটাই তো বুঝি নাই বইলা ভ্রু কুঁচকাইয়া বুঝার চেষ্টা করতেছি। এই রেইসিজম দূর করতে আপনারেও চোস্ত ইংরেজি বলতে পারতে হইবে। কিন্তু তাইতে আপনেও ওদের জাতীয়তা মাইনা নিলেন গিয়া।

৩। জাতীয়তাবহুল পৃথিবীতে জাতীয়তাবিহীন থাকার বিপদও আছে। ধরেন বাঙালি হইয়া আমরা ঠিক করলাম বাঙালি জাতীয়তা ফাতীয়তা মানি না। আমরা জাতীয়তার মইধ্যে নাই। অন্যদিকে আশেপাশের সকল রাষ্ট্র জাতীয়তার বুনিয়াদে বলীয়ান। জাতীয়তাবিহীন আত্মা হইলো গিয়া নতুন জাতীয়তার বীজ বপন করার উর্বর জমিন। ফলে যেইটা হইবে, বাঙালি দলে দলে আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোর জাতীয়তা কবুল কইরা বইসা থাকবে। তাইতে আখেরে লাভের চে ক্ষতিই তো বেশি। দুনিয়াজুড়া তাই পচুর গিয়ানজাম।

অন্যকেউ এর ছবি

ধর্মপালনও তো অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না।

নিরীহ একজন ধার্মিক নিজে সমাজের ক্ষতি করেন না এটা ঠিক। কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদ যখন ক্ষতি করে, তখন তিনি চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রেই। "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে মৌন সমর্থন দেয়" টাইপ আরকি! নিরীহ ধার্মিক মানুষটির এই মৌন সমর্থন তার ওপর যথেষ্ট দায়ভার চাপায়। ধর্মপালন ঠিক এভাবে প্রত্যক্ষ আর মৌন - দুই উপায়েই ক্ষতিকর।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

নিরীহ ধার্মিক মানুষটির এই মৌন সমর্থন তার ওপর যথেষ্ট দায়ভার চাপায়।

এইভাবে হিসাব করলে বিদেশে পড়তে যাইয়া পশ্চিমের সাম্রাজ্যবাদে বুদ্ধিবৃত্তিক ঘি ঢালা আরো প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিকর। বিজ্ঞানের গুণগ্রাহীরাও অবিজ্ঞানবান্ধব সমাজের উপর বিজ্ঞানবান্ধব সমাজের জবরদস্তি, আগ্রাসন, শোষণ, নিধন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণহত্যার বিপক্ষে মোটের উপরে দ্বিধাগ্রস্ত ও চুপ করে চোখ বন্ধ করেই থাকেন। কিন্তু এগুলা খুব দুর্বল যুক্তি।

নিরীহ একজন ধার্মিক নিজে সমাজের ক্ষতি করেন না এটা ঠিক। কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদ যখন ক্ষতি করে, তখন তিনি চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকেন

এইটা একটা ডিডাক্টিভ বক্তব্য। মানে নিরীহ ধার্মিক মাত্রেই যেনো "চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকেন"। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা অনুমান বা ইনফার করতে পারেন বড়জোর। কিন্তু "নিরীহ ধার্মিক" ইম্প্লাইজ "চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকেন" এটা প্রমাণ করতে পারেন না। ফলে সেটাকে রক্ষা করার চেষ্টা চলেছে ", অনেক ক্ষেত্রেই" যোগ করে। কিন্তু তাতেও বক্তব্যটা ত্রুটিপূর্ণভাবে ডিডাক্টিভ ইম্প্লিকেশানের দোষ মুক্ত হইলো না। কারণ, এমন কি ", অনেক ক্ষেত্রেই" এই কথাটারও ভিত্তি নাই। আপনি খালি বলতেছেন।

কিন্তু এখন দেখেন এইরকম একটা ত্রুটিপূর্ণ ডিডাক্টিভ বক্তব্য হইতে কীরূপে একটা ত্রুটিপূর্ণ অ্যান্টাইধর্ম সিদ্ধান্ত উৎসারিত হইতেছে আপনার বক্তব্যে। এরপর আপনি বললেন, "ধর্মপালন ঠিক এভাবে প্রত্যক্ষ আর মৌন - দুই উপায়েই ক্ষতিকর", এখানে আর "অনেক ক্ষেত্রেই"ও লাগানোর চেষ্টা ‍চলে নাই। ধর্মপালন দ্বারা প্রত্যক্ষ ও মৌন ক্ষতি যেনো সরাসরি যৌক্তিকভাবে ইম্প্লাই করতেছে। কিন্তু আপনার ত্রুটিপূর্ণ প্রিমাইস হইতে এই সিদ্ধান্তে যেহেতু আসা যাইতেছে না, ফলত এই সিদ্ধান্তও ত্রুটিপূর্ণ। তবে এই ত্রুটি তেমন অবাক হবার বিষয় না। এইধরনের ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি দিয়া মানুষ বহুদিন যাবৎই স্টেরিওটাইপিং করতেছে, সার্বিকভাবে ধর্মের বিপক্ষে অবস্থান নিতেছে।

সমাজের অনেক অন্যায়েই অনেক মানুষ, এমনকি নাস্তিকও চুপচাপই থাকেন। তা সে নাস্তিকতার কারণে চুপচাপ থাকেন, না কী কারণে চুপচাপ থাকেন, সেইটা বোঝা দায়। মানুষ তো! কিন্তু ধার্মিক চুপচাপ থাকলে আলবৎ ধর্মীয় কারণে চুপচাপ থাকেন, সেইটা আমরা কেমনে জানি বৈজ্ঞানিক নিশ্চয়তার লগেই জাইনা যাইগা! সে লেস দ্যান মানুষ।

যাযাবর এর ছবি

চলুক চলুক

অন্যকেউ এর ছবি

বিজ্ঞানের গুণগ্রাহীরাও অবিজ্ঞানবান্ধব সমাজের উপর বিজ্ঞানবান্ধব সমাজের জবরদস্তি, আগ্রাসন, শোষণ, নিধন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণহত্যার বিপক্ষে মোটের উপরে দ্বিধাগ্রস্ত ও চুপ করে চোখ বন্ধ করেই থাকেন।

বিজ্ঞান প্রসার করার জন্য বা গবেষণাগার ভবনের ক্ষতিসাধন করার প্রতিবাদে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ কারোর গলা কাটে না। কিন্তু ধর্ম প্রসারের জন্য গলা কাটাকাটি আর উপাসনালয় নিয়ে ধর্মীয় দাঙ্গা বেঁধে যাওয়া - এগুলো যথেষ্ট দেখা গিয়েছে। বিজ্ঞানের কোনও কেউকেটা এসে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে বিজ্ঞানের দোহাই পেড়ে অন্য মানুষের গলা কাটতে বলে না, বলে লাভ নাই। ধর্মের ক্ষেত্রে বিষয়টা কীরকম হয়?

"অবিজ্ঞানবান্ধব সমাজের উপর বিজ্ঞানবান্ধব সমাজের জবরদস্তি"? সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সাথে আপনি কি বিজ্ঞানের একটা সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে চাইছেন? পশ্চিমা দেশগুলো মোটাদাগে বিজ্ঞানবান্ধব বলা যায়। কিন্তু তাদের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সাথে এই বিজ্ঞানবান্ধবতার সম্পর্ক কতোখানি? শুধু অস্ত্র তৈরির পর্যায় পর্যন্ত। মহাকাশ গবেষণা বা কৃষি গবেষণার সাথে জাতীয়তাবাদভিত্তিক সামরিক আগ্রাসনের সম্পর্ক নাই। কিন্তু আপনার কথা থেকে কী পাই? "আমেরিকা বিজ্ঞানমনস্ক। আমেরিকা আগ্রাসন চালায়। কাজেই বিজ্ঞানমনস্কতা খ্রাপ।" কথাটা খুব সুন্দরভাবে শুগারকোট করে বললেন, তাতে জেনেটিক ফ্যালাসিটা এড়ানো যাচ্ছে না। মানুষের কোনও একটা নির্দিষ্ট দলের বিজ্ঞানমনস্কতার সাথে, তারা যে দেশে অবস্থান করে সেটার সামরিক আগ্রাসনের সম্পর্ক নাই।

তারপর, আপনি "অনেক ক্ষেত্রেই" কথাটাকে বাদ দিয়ে আমার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে ফেললেন। "অনেক ক্ষেত্রেই" বাক্যাংশটা যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে বাক্যটা জেনারালাইজেশান দাঁড়ায়, এবং এই কারণেই আমি "অনেক ক্ষেত্রেই" বাক্যটা ব্যবহার করেছি। আপনি সাবধানে সেটাকে বাদ দিয়ে প্রথমে বড়ো বাক্যাংশটাকে মিথ্যা প্রমাণ করলেন, জেনারালাইজেশান বললেন, এবং তারপর বাক্যের যে অংশটা পুরো বাক্যটাকে সম্পূর্ণতা দেয়, সেই বাক্যটাকে স্রেফ তুলে এনে বললেন এই অংশটাও পুরো বাক্যকে জাস্টিফাই করে না। "বাঙালি মানুষকে আমি খাদ্যের মূল অংশ হিসাবে ভাতের ওপর নির্ভরশীল হতে দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রেই।" -এই বাক্যের প্রথম অংশে জেনারালাইজেশান আছে, এবং সেটা সমর্থনযোগ্য নয় বলেই শেষ অংশটা যুক্ত হয়েছে। আপনি যখন শেষ অংশটা বাদ দিয়ে বিশ্লেষণ করছেন, তখন সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুযুক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সমাজের অনেক অন্যায়েই অনেক মানুষ, এমনকি নাস্তিকও চুপচাপই থাকেন। তা সে নাস্তিকতার কারণে চুপচাপ থাকেন, না কী কারণে চুপচাপ থাকেন, সেইটা বোঝা দায়।

নাস্তিকদের কোনও নির্দিষ্ট বই, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি কিছুই নাই যেটা তাদেরকে একত্রিত করবে। একজন গণতন্ত্রী নাস্তিক একজন কমিউনিস্ট নাস্তিকের সাথে খুব কম দৃষ্টিভঙ্গিগত মিল শেয়ার করে। শুধু ধর্মের মিথ্যাচারের প্রতিক্রিয়ায় তাদের যে বক্তব্য, সেটা একই। এটা তাদেরকে স্থানীয় ঐতিহ্য অস্বীকার করে চাপিয়ে দেওয়া কোনও জীবনাচরণ অনুসরণ করতে বলে না, যেটা ধর্ম বলে। নাস্তিককে যেখানে কেউ দলগত ইনডেমনিটি দেয় না, সেখানে তার ব্যক্তিগত চুপচাপ থাকা পুরোপুরিই ব্যক্তিগত এখতিয়ার; এবং এই এখতিয়ার একজন ধার্মিকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাহলে আমার আপত্তিটা কোথায়? ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকতায়। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, ধর্মীয় আইনে বর্বরতা থাকলেও তাতে আমাদেরকে দলগতভাবে নিশ্চুপ থাকতে বলে। সৌদি আরবে আট জন বাংলাদেশীর কল্লা কেটে ফেলা হলেও আমরা সেটাতে চুপ থাকি, অনেক সময় বাহ্বা দিই! প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যটা এখানে ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কিন্তু আপনার কথা থেকে কী পাই? "আমেরিকা বিজ্ঞানমনস্ক। আমেরিকা আগ্রাসন চালায়। কাজেই বিজ্ঞানমনস্কতা খ্রাপ।"

কিন্তু এইটা তো আমার কথা না। আমি বলছি, "এগুলা খুব দুর্বল যুক্তি।" আপনার মৌনতাউৎসারিতদায়-সংক্রান্ত যুক্তিটার মতন। অর্থাৎ আপনার কুযুক্তিটার সাথে এগুলা তুল্য। অন্য অনেকে এইসব কুযুক্তিও দেয়। প্রথম প্যারার শেষের লাইন পড়েন নাই দেখি। কী মুসিবত!

আপনি যখন শেষ অংশটা বাদ দিয়ে বিশ্লেষণ করছেন, তখন সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুযুক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দুই বাক্য বাদেই বলছি যে আপনি "অনেক ক্ষেত্রে" লাগাইছেন এবং তাতেও রক্ষা হয় নাই। বিশ্লেষণপাঠে ততোটুকু অপেক্ষার ধৈর্য্য যার নাই, তার কাছে কুযুক্তি লাগাটা আশানুরূপ। টেক্সট যখন পাঠ করবেন, তখন কনটেক্সট বইলা একটা বস্তু আছে জানতে হবে। কনটেক্সটটা পুরা প্যারাসহকারে তৈরি হয়। তবে অনেকেই একটা প্যারার শেষের লাইন পর্যন্ত আর পড়েন না দেখা যায়।

নিরীহ ধার্মিক মানুষের মৌনতা - ডাজ নট ইম্প্লাই - তার ওপর যথেষ্ট দায়ভার আছে।

"ধর্মীয় মৌলবাদ যখন ক্ষতি করে, তখন তিনি চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রেই" - ডাজ নট ইম্প্লাই - "ধর্মপালন মৌন উপায়ে ক্ষতিকর।"

যে কল্লাকাটায় বাহ্বা দেয় তারে নিয়া কথা হইতেছে না। যেই নিরীহ ধার্মিকরে কল্লাকাটায় মৌন পাইলেন, তারে নিয়া কথা হইতেছে। মানুষের মৌনতার মধ্যে আপনি দায় দেখতেছেন, ধর্ম দেখতেছেন, ক্ষতি দেখতেছেন। কীভাবে? এগুলা যাচাইযোগ্যভাবে দেখাইতে পারবেন? অনুমান ছাড়া অন্য কোনো উপায় তো নাই। এইভাবে অদৃশ্যরে দেখার ভান কইরা আপনি জেনারালাইজেশান কইরাই যাইতেছেন। অবস্থাদৃষ্টে আরো করতে থাকবেন আশা রাখি।

অরফিয়াস এর ছবি

আগে মনে হয় পড়তাম "অন্যায় করা আর অন্যায় সহ্য করা দুটোই সমান অপরাধ", ধর্ম এর কারণে সংগঠিত অন্যায় এ যদি কোনো ধার্মিক মৌনব্রত পালন করেন তাহলে কি দায়ভার তার কাঁধেও বর্তায় না??

ধর্ম পালন মৌন উপায়ে ক্ষতিকর কারণ সেটা সংখ্যা বৃদ্ধি করছে, আর যখন মৌনতা সম্মতির লক্ষণ সেখানে ধার্মিক মানুষের চুপ করে ধর্ম পালনে কোনো ক্ষতি নেই কথাটা সত্য নয়|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

এখন আমি নাস্তিক যদি অন্যায়ে মৌন থাকি, তাতে যে দায়ভার, ধার্মিক মৌন থাকলে দায়ভার তাতে তার বেশি না কম? বেশি হইলে অবশ্যই যেইটা দেখা যাইতেছে না সেইটার উপর ভিত্তি কইরা অনুমান তৈরি করতেছেন। ফলে সেই তর্ক বৃথা। আর যদি সমান হয়, তাইলে কিন্তু এই যুক্তি হইতে ধর্মপালনরে ক্ষতিকর হিসাবে দেখান যাইতেছেই না।

লক্ষ্য করবেন। আমার বক্তব্য ছিলো ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না। এখন আপনি বলতে পারেন ধর্মপালন কখনো কখনো মৌনভাবে ক্ষতিকর। কিন্তু ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর দেখাইতে হইলে আপনারে দেখাইতে হইবে - ধর্মপালনকারী মাত্রই হয় প্রত্যক্ষভাবে অন্যায় করে নয়তো মৌন সমর্থন জানায়। এইটা না দেখাইলে "ধর্মপালন ক্ষতিকর" বক্তব্যটা ত্রুটিপূর্ণ জেনারালাইজেশান হয়, ঠিক কিনা?

অরফিয়াস এর ছবি

ধর্মপালনকারী ক্ষতি করছে কিনা, তার আগে প্রশ্ন থাকে ধর্ম সমাজের জন্য ক্ষতিকর কিনা?? এর উত্তরে বলবো, হ্যাঁ, ক্ষতিকর, ধর্ম মানুষের মুক্তচিন্তা শক্তি নষ্ট করে একই সাথে ধর্ম মানুষকে খুব সহজে মৌলবাদী বানাতে সক্ষম হয়, ৯/১১ এর পরে যা যা ঘটেছে তার পেছনে ধর্মের কি অবদান আছে আপনার অবশ্যই জানা থাকার কথা|

এবার আসি খুব পুরনো নয় এমন একটা ঘটনাতে, চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা আশা করি আপনার চোখে পড়েছে, ঐ ঘটনাতে যারা জড়িত তাদের কথা বাদ দেই, এবার আসি যারা মৌনপন্থা অবলম্বন করেছে তাদের কথায়, যখন সাম্প্রদায়িক হামলায় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন চললো মসজিদের দেয়াল ভাঙ্গার উছিলায় তখন কি এই মৌনব্রতধারী সজ্জন ধার্মিক মানুষরা সমাধানে এগিয়ে এসেছে?? আসে নাই, কারণ কি?? কারণ তারা একই ধর্মালম্বী মানুষদের বিপক্ষে যাবেনা| কিন্তু পরবর্তিতে পাওয়া গেলো যে, ইচ্ছাকৃত ভাবে দাঙ্গা ছড়ানোর জন্য টাকা দিয়ে দেয়াল ভাঙানো হয়েছে| কিন্তু এর মাঝখানে যাদের ক্ষতি হয়ে গেলো তাদের কি বলবেন??

ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না

এটা মানতে পারছিনা, কারণ ধর্মই এমন একটা জিনিস যা মানুষকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে পশুতে পরিণত করতে সক্ষম, আর পৃথিবীর কোনো ধর্মেই বিধর্মীদের সম্মন্ধে কোনো ভালো কিছু লেখা নাই, তাই যদি কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম অনুসরণ করি তাহলে আমার সাথে কোনো না কোনো জায়াগায় ভিন্ন ধর্মালম্বীদের মতের বিরোধ বা সংঘর্ষ অনিবার্য।

শুধু এটাই না, জাগতিক বিষয়ের উপর ধারণা ব্যতীত কোনো অলীক বিষয়কে ভিত্তি করে যদি জীবনের মানে খুঁজতে যাই তাহলে ক্ষতি তো অবশ্যই। আপনি কজন ধার্মিক মানুষকে তার নিজের ধর্মের খারাপ দিকটা বলতে শুনেছেন বলুন, তা যে ধর্মেরই হোক না কেনো।

আপনি বলছেন জেনারালাইজেশন কেনো করা হচ্ছে, এর কারণ যখন বেশির ভাগ মানুষ কোনো একটা বিষয়ে একই ধরনের ধারণা পোষণ করে তাহলে আমরা সাধারণ ভাবেই সেই ধারনাটিকে জেনারাইলেজশন করি বৃহত্তর অংশের উপর ভিত্তি করে| তাই ধর্মীয় ধারণার ভিত্তিতে যখন পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ স্পর্শকাতর এবং কোনো না কোনো ক্ষেত্রে উগ্র, সেখানে মৌন ধার্মিক মানুষের ক্যাটাগরিটা একদমই নেগলিজিবল। আর যদি বলেন এর জন্য পরিসংখ্যান দেখাতে হবে তাহলে বলবো হাস্যকর| কারণ ধর্মের নামে মৌন থাকেন এমন মানুষ সমাজে খুব বেশি নয় বরং ধর্মের নামে চোখ বন্ধ করে সাংঘর্ষিক হবার মানুষই বেশি। আর এর জন্য আলাদা উদাহরণ দরকার নেই, কষ্ট করে ধর্মীয় দাঙ্গা দিয়ে খুঁজলে অজস্র পরিসংখ্যান পেয়ে যাবেন।

আপনি ধর্মের নামে মানুষকে শিরচ্ছেদ করার উদাহরণ নিয়ে একটু ইতিহাসটা লক্ষ্য করবেন, আর যদি নাস্তিকতার নামে কারো শিরচ্ছেদ করার উদাহরণ দিতে পারেন তাহলে বুঝবো নাস্তিকতা মৌন হলেও ক্ষতিকর|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সুফিবাদ তো ধর্মেরই ভ্যারিয়েশান। সেখান থেকে দাঁড়ায়ে মোল্লাদের (ও তাদের অন্যায়ের) বিরোধিতাও ধার্মিক সুফিবাদিরা করেন। নাস্তিকরা আসার অনেক আগে থেকে তারা এইটা করতেছেন। তো তারা তো সেইটা অধার্মিকতার জায়গা থেকে করেন না। সেইটা তাদের ধার্মিকতা, ধার্মিক দার্শনিকতারই অংশ। সেই ধর্ম পালন যদি ক্ষতিকর না হয়, ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষতিকর কিছু না হয় ক্যামনে? সেইটার জন্যে লোকে দেখায় যে ধর্মের উদার ভার্শনগুলা আসলে লেস দ্যান ধর্ম। ওগুলারে ধর্মপালন হিসাবে গোনায় ধরা যায় না, নাকি?

আমাদের আশে পাশে কতো লোক, এই যে অনেক সচলই ধর্ম মানেন, নেলসন ম্যান্ডেলাও ধর্ম পালন করতেছেন, তারা ধর্মের কারণে অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কাজ কিছু করতেছেন বইলা তো মনে হয় না। কোনোকিছু অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর দেখানোর জন্যে যে একজস্টিভ ইনিউমারেশান করা লাগে, সেইটা জানেন তো? সেইটা করা ছাড়া তেমন ক্লেইম করারে বলে লজিক্যাল ফ্যালাসি অব হেস্টি জেনারালাইজেশান। ধর্মের ক্ষতি কইরা উঠার উদাহরণ নাই, সেই তর্ক তো করতেছি না। কিন্তু ক্ষতি হইতে পারে আর অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর, দুইটা কি এক কথা? একটা ক্লেইম করবেন, সেইটার ভিত্তি থাকা লাগবে না?

অন্যদিকে ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না এইটা দেখানো কিন্তু তুলনামূলক সহজ। আপনার দরকার কেবল কয়েকজন ধর্মপালনকারীর উদাহরণ, যারা ধর্মপালনের কারণে যাচাইযোগ্য কোনো ক্ষতিই করেন না। তেমন মানুষ আপনার আমার আশে পাশে ম্যালাই আছেন।

অরফিয়াস এর ছবি

নাস্তিকরা আসার অনেক আগে থেকে তারা এইটা করতেছেন।

আশা করবো আপনি নাস্তিকতার ইতিহাস পড়ে এসে তর্ক করবেন| অযথা সুফীবাদ নাস্তিকতার আগে এসেছে এধরনের উদ্ভট কথা বলবেননা|

আপনার হেস্টি জেনারালাইজেশন সম্পর্কে লিখেছি, যদি না বুঝে থাকেন তাহলে জোর করে মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না এইটা দেখানো কিন্তু তুলনামূলক সহজ। আপনার দরকার কেবল কয়েকজন ধর্মপালনকারীর উদাহরণ, যারা ধর্মপালনের কারণে যাচাইযোগ্য কোনো ক্ষতিই করেন না। তেমন মানুষ আপনার আমার আশে পাশে ম্যালাই আছেন।

আপনি এতো কিছু বলার পরেও যখন বলে চলেছেন মৌনব্রতধারী ধার্মিক আমাদের সমাজে বেশি আসেন তাহলে একটু পরিসংখ্যান নিয়ে ক্যাঁচাল করি-

গর্ডন রায়ট, ম্যাসাচুসেটস, ১৭৮০- ধর্মীয় দাঙ্গায় ১,৮০,০০০ পাউন্ড এরও বেশি সম্পত্তির ক্ষতি|

পালেস্তাইন রায়ট, ১৯২৯- ১১৬ মুসলিম, ১৩৩ ইহুদি মৃত। ২৩২ আরব এবং ১৯৮ ইহুদি আহত|

মারিয়া হের্তগ রায়ট, সিঙ্গাপুর, ১৯৫০- ১৮ জন নিহত, ১৭৩ জন আহত।

ইস্তানবুল রায়ট, ১৯৫৫- ২,০০০ দাঙ্গাকারী আটক, ৪,০০০ দোকানপাট ধ্বংস, ৭৮ গির্জা ধ্বংস।

মুম্বাই রায়ট, ১৯৯২- ৯০০ নিহত, যার মধ্যে ৫৭৫ মুসলিম (৬৭%), ২৭৫ হিন্দু (৩২%), ২,০০০ আহত|

গুজরাট রায়ট, ২০০২- ৭৯০ মুসলিম ও ২৫৪ হিন্দু নিহত, ২২৩ জন নিখোঁজ, ৫৩২ উপাসনালয় ধ্বংস, যার মধ্যে ২৯৮ দরগাহ, ২০৫ মসজিদ, ১৭ মন্দির, ৩ গির্জা| ৬১,০০০ মুসলিম ও ১০,০০০ হিন্দু নিজের ঘর ছেড়ে পালান, ১৭,৯৪৭ হিন্দু ও ৩,৬১৬ মুসলিম গ্রেফতার, সব মিলিয়ে ২৭,৯০১ হিন্দু ও ৭,৬৫১ মুসলিম গ্রেফতার, পুলিশ দান্গাকালীন ১০,০০০ রাউন্ড বুলেট মারে, যাতে ৯৩ মুসলিম ও ৭৭ হিন্দু মারা যায়|

আলেকজান্দ্রিয়া রায়ট, ২০০৫- ১০০ জন আহত, ৩ জন নিহত|

গুজরা, পাকিস্থান, ২০০৯- ৮ জন খ্রিস্টান নিহত, যার মধ্যে অন্তত ৪ জন নারী ও শিশু|

জস রায়ট, নাইজেরিয়া

২০০১ - ২ সপ্তাহে, ১,০০০ নিহত
২০০৮- ২দিনে, ৩৮১ নিহত, ৪০০ আহত
২০১০- ৪ দিনে, ২০০ নিহত, হাজারেরও বেশি নিহত এর পরে।

এগুলো অল্প কিছু ধর্মীয় দাঙ্গার পরিসংখ্যান, এছাড়া আরও আছে, এরপরও আপনি যদি আসেন সুফীবাদ আর মৌন ধার্মিকের বয়ান দিতে তাহলে কিছু বলার নাই|

আর একটা কথা, নাস্তিকতার জন্য কোনো যুদ্ধ বা দাঙ্গা হয়েছিল কিনা জানা নেই, জানতে চাই, নাহলে তো হেস্টি জেনারালাইজেশন হয়ে যাচ্ছে আমার তরফ থেকে তাই না?? !!!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আশা করবো আপনি নাস্তিকতার ইতিহাস পড়ে এসে তর্ক করবেন| অযথা সুফীবাদ নাস্তিকতার আগে এসেছে এধরনের উদ্ভট কথা বলবেননা|

নব্যনাস্তিকরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় অন্যায়ের বিরোধিতার আগে থেকেই সুফিরা মোল্লাদের অন্যায়ের বিরোধিতা করেন সেইটা বুঝাইছি।

কিন্তু আপনার পরিসংখ্যান তো আমি মানি না তা না। আমি তো বারবার বলতেছি যে ধর্মের দ্বারা অন্যায় সংঘটনের উদাহরণ আছে। কিন্তু আমি জানতে চাইতেছি, ধর্মপালন করলেই ক্ষতিকর সেইটা আপনি কীভাবে দেখাইবেন?

আর একটা কথা, নাস্তিকতার জন্য কোনো যুদ্ধ বা দাঙ্গা হয়েছিল কিনা জানা নেই, জানতে চাই, নাহলে তো হেস্টি জেনারালাইজেশন হয়ে যাচ্ছে আমার তরফ থেকে তাই না??

এইটার সাথে হেস্টি জেনারালাইজেশানের সম্পর্ক কী? এই প্রশ্ন থেকে বোঝা যাইতেছে হেস্টি জেনারালাইজেশান সম্পর্কে আপনি ধারণা নিতে চান না। লিংক উপরে দিছি, একটু দেখে আসেন না? আপনার জন্য এখানেই একটা অংশ কোট করি:

Hasty generalization usually shows this pattern.

A is X.

B is X.

C is X.

D is X.

Therefore, X is true in any cases.

আপনার উপরের দাঙ্গার পরিসংখ্যান হইতে অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর দেখানোর ধরনটা অনেকটা এই প্যাটার্নেই তো পড়তেছে!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার হেস্টি জেনারালাইজেশন সম্পর্কে লিখেছি, যদি না বুঝে থাকেন তাহলে জোর করে মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।

ওখানে আপনি (অধিকাংশের ব্যাপারে) জেনারালাইজেশান কেনো করা হয় সেইটা নিয়ে বলছেন। হেস্টি জেনারালাইজেশন নিয়ে বলেন নাই। হেস্টি জেনারালাইজেশনে সকলের উপর একটা ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্য আরোপ হয়। আমার অভিযোগ অধিকাংশের ব্যাপারে জেনারালাইজেশান নিয়াও না, সকল ধর্মপালনকারীরে হরে দরে ক্ষতিকারীর কাতারে দাঁড় করানোর বিপরীতে। সেইটা নিয়া আপনি কিছু বলেন নাই।

সহজ কথায় আসেন। হয় সকল মানুষের ক্ষেত্রে প্রমাণ করেন ধর্মপালন ক্ষতিকর, নাইলে ধর্মপালন ক্ষতিকর কথাটারে কোয়ালিফাই করেন। কথা এতো ঘুরাইলে তো হেস্টি জেনারালাইজেশনের দোষ কাটে না।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনি ধর্ম পালন ক্ষতিকর আমার এই জেনারালাইজেশনকে হেস্টি বলতে চাচ্ছেন, কিন্তু কেনো সেটা হেস্টি না সেটা বললাম একবার,

যখন বেশির ভাগ মানুষ কোনো একটা বিষয়ে একই ধরনের ধারণা পোষণ করে তাহলে আমরা সাধারণ ভাবেই সেই ধারনাটিকে জেনারাইলেজশন করি বৃহত্তর অংশের উপর ভিত্তি করে| তাই ধর্মীয় ধারণার ভিত্তিতে যখন পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ স্পর্শকাতর এবং কোনো না কোনো ক্ষেত্রে উগ্র, সেখানে মৌন ধার্মিক মানুষের ক্যাটাগরিটা একদমই নেগলিজিবল।

এখানে কোন অংশটা আরও ব্যাখ্যার দাবীদার??

ধর্ম পালন ক্ষতিকর কারণ যে ধর্ম পালন করে সে তো আর একা করে না, তার সাথে আরও অনেকেই থাকে, যদি কোনো ধর্মের বৃহত্তর অংশ একটি উগ্র বোধে উদ্বুদ্ধ থাকে তাহলে সেই মৌন ব্যক্তির ধারণার উপর ভিত্তি করে আপনি এই বৃহত্তর অংশের জেনারাইলেজশন কে হেস্টি কেনো বলছেন বুঝলামনা, আপনি ভাবছেন আমি আপনার হেস্টি জেনারালাইজেশন এর সংগা বুঝছিনা, ধারণা ভুল, কারণ মৌন ধর্ম পালনকারী বলে কেউ নেই আমি আগেই বলেছি, কোনো না কোনো সময় ভিন্ন ধর্মালম্বীর সাথে তার মতের বিরোধ অবশ্যম্ভাবী। হেস্টি জেনারাইলেজশন এর এখানে কোনো প্রশ্নই নেই|

সকল ধর্মপালনকারীরে হরে দরে ক্ষতিকারীর কাতারে দাঁড় করানোর বিপরীতে।

প্রত্যক্ষ ক্ষতি কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষতি এর কোনটা ঠিক ক্ষতি না বলবেন কি?? !!

সহজ কথায় আসেন। হয় সকল মানুষের ক্ষেত্রে প্রমাণ করেন ধর্মপালন ক্ষতিকর, নাইলে ধর্মপালন ক্ষতিকর কথাটারে কোয়ালিফাই করেন। কথা এতো ঘুরাইলে তো হেস্টি জেনারালাইজেশনের দোষ কাটে না।

আমি সহজ কথাতেই প্রথম থেকে আছি, সরল বাংলায় যুক্তি দিচ্ছি, আর কথা কেউ ঘুরাচ্ছেনা, বরং আমি যা বলছি আপনি সেটাকে বারবার বিরোধিতা করে চলেছেন একটা জায়গায় যেখানে আপনি মানতে রাজি নন মৌন ধর্ম পালনকারী ক্ষতিকারক কিনা|

আমি বলছি হ্যাঁ, ক্ষতিকারক, উপরে যে দাঙ্গার বিবরণ দিলাম, তাতে কি সবাই আগে থেকেই উগ্র ধর্মপালনকারী ছিলো??
নাকি সমাজে অনেক সাধারণ মানুষের মতো এরাও অনেকেই মৌন পন্থা অবলম্বন করতো?? অবশ্যই করতো, কিন্তু যখন বৃহত্তর ধর্মীয় স্বার্থে আরেকজনকে হত্যা করতে হয়েছে তখন অনেকেই মৌন থেকে অতি সরব হয়েছেন| আর এখানেই ধর্মের অপজাদু যা চির পরিচিত একটি সাধারণ মানুষকে শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় স্লোগানে পশুতে বদলে দিতে পারে|

ধর্ম পালন ক্ষতিকর আর কতবার কতভাবে কোয়ালিফাই করলে আপনি এটা বুঝবেন জানিনা, তবে বুঝতে যদি সত্যি চান তাহলে মনে হয়না এখানে আর বেশি কিছু বলার আছে|

অযথা তর্ক বাড়াচ্ছিনা, কারণ, যে বুঝেও বোঝেনা, তাকে শত বোঝালেও লাভ নেই| আর আমাদের সমাজে ধর্ম ঠিক এভাবেই টিকে আছে, কারণ আমাদের শত উদাহরণ, শত লাশ দিলেও ধর্ম খারাপ কিংবা ক্ষতিকর আমরা মানবোনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমার কাছেও মনে হচ্ছে আপনি "অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটে" আর "অবশ্যম্ভাবী" এই দুটো ব্যাপারের পার্থক্যটা না বোঝার চেষ্টা করছেন। ধর্মের মৃত্যুহুমকিকে সাথে নিয়েই বেড়ে ওঠা। তাই বলে ধর্মের ব্যাপারে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত নই। যুক্তির কাছে আমি বশ্য। আমি আপনার যুক্তিগুলো থেকে "ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর" বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। আমার আশেপাশের অজস্র ধর্মপালনকারীর মধ্যে আমি ক্ষতিকর কিছু দেখি নি। তারা ভালো মানুষ। তাদের মতো আরো মানুষ চিরকাল পৃথিবীতে আসুক আশা করি। ফলে সকল উপায়েই "ধর্মপালন অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর" মেনে নিতে আমি ব্যর্থ। ধার্মিকমাত্রই একদিন লাশ ফেলতে পারে এমন ভাবনার ভয়ঙ্কর ফলাফলগুলো নিয়ে অনুরোধ একদিন বসে ভাববেন। আমিও তর্ক আর বাড়াচ্ছি না। লেট আস অ্যাগ্রি টু ডিস্যাগ্রি।

ফেরদৌস আহমেদ এর ছবি

ভাই, বাংলাটাও সুন্দর করে লিখতে পারেন না, একটা গুরুচণ্ডালী মার্কা ভাষায় লেখার কাজটা করতে এসেছেন, ঐ ভাষাটা আপনি পাড়ার রকে বসে বিড়ি টানতে টানতেই ব্যবহার করুন না। আর বাংলায় লিখলে শুধু বাংলায় লিখুন, ইংরেজী লিখতে চাইলে সেই সুযোগটাও আছে এখন সচল-এ। বাংরেজীতে লিখে বিদ্যে জাহির করার তো কোন দরকার নেই। আপনি যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে উলটো পালটা বলেছেন কেবল, সুফীদের আগেও ঈশ্বর অবিশ্বাসীরা সমাজে ছিল। আপনি বরং ফরহাদ সাহেবের কাছ থেকে আরো নতুন নতুন ছবক নিতে ব্যস্ত থাকুন, খামোকা কেন সময় নষ্ট করেন সচলে এসে উদ্ভট সব কথা বলে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ঈশ্বর অবিশ্বাসী অবশ্যই ছিলো। কিন্তু সুফিদের মতো দীর্ঘকাল ব্যাপী নাস্তিকদের গোষ্ঠিগতভাবে ধর্মের অন্যায়ের বিরোধিতা সম্ভব ছিলো না বলে আমার মত, কারণ নাস্তিকদের গোষ্ঠিবদ্ধতা (বা সেটার সুযোগ) অনেকটা আধুনিক ঘটনা। শুধু ধামকি আর সবক না দিয়া বরং ভুল থাকলে শুধরে দ্যান। এখন নাস্তিকরা গোষ্ঠিগতভাবে সমালোচনা করতে পারতেছে। এইসবই সুলক্ষণ। কিন্তু ঢালাও ক্যারাক্টারাইজেশান বা স্টেরিওটাইপিং সুলক্ষণ নয়, ভিত্তিপূর্ণও না। বরং একধরনের রেইসিজম। ঢালাওভাবে একটা গোষ্ঠিকে হীনমানব দেখানো তার উপর অত্যাচার নিপীড়ন গণহত্যা চালানোর নৈতিক ভিত্তি তৈয়ার করে। সেই ভিত্তি তৈরি হয়েও আছে, গণহত্যাও চলতেছে। সেইটা এতোটাই সর্বব্যাপী যে অনেকে দেখতেই পাইতেছেন না। তবে, ভাইডি। অন্যকেউ আর অরফিয়াসের সাথে এতোটা তর্ক করা গেছে এই জন্যেই যে তারা হুমকি ধামকি বাদে বিষয়ে আলাপ করে গেছেন। আপনারও যদি আরো কথা বাড়ানোর ইচ্ছা থাকে, তাইলে হুমকি ধামকি ভাষাসবক এইসব বাদ দিয়া বিষয়ে আলাপ করার অনুরোধ থাকলো। যেমন দুয়েকটা উদাহরণ দিয়া আমার 'সুফি নাস্তিকের আগে' দাবিটা হয়তো খুব সহজেই নাকচ করতে পারেন। জিনিসটা নিয়া খুব শক্ত অবস্থানও নিতেছি না, কারণ আমার মূল বক্তব্যের প্রিমাইস না এইটা। কিন্তু আপনার অ্যাড হোমিনেম অ্যাটাক দিয়া ঢালাও স্টেরিওটাইপিংয়ের বিরুদ্ধের আমার প্রদত্ত যুক্তিগুলা কি নাকচ হয়? নাকি এমন পৃথিবী আশা করেন যেখানে তেমনটা ঘটে?

সত্যপীর এর ছবি

আপনি বরং ফরহাদ সাহেবের কাছ থেকে আরো নতুন নতুন ছবক নিতে ব্যস্ত থাকুন, খামোকা কেন সময় নষ্ট করেন সচলে এসে উদ্ভট সব কথা বলে।

এই পোস্ট এবং মন্তব্যে দুর্দান্ত, ধ্রুব বর্ণন, অরফিয়াস, অন্যকেউ প্রমুখের যে যুক্তি পালটা যুক্তির খেলা চলছে তাতে অংশ নেবার মত পড়াশোনা বা ক্ষমতা আমার নাই। কত কি যে জানতে পারি এসবে। তাই হুট করে আপনার এই মন্তব্যে আটকে গেলাম, ধ্রুব ভাই এখানে উদ্ভট কথা কোথায় বললেন বলেন তো? আমি তো দেখলাম কিছু বুদ্ধিমান লোক বিতর্কে লিপ্ত। উনি কিভাবে কথা বলছেন তার থেকে কি বলছেন সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

হয়তো আপনার সুফীবাদ ঈশ্বর নাস্তিকতা ইত্যাদি বিষয়ে অগাধ পড়াশোনা তাই উনার কথা ভুল ঠেকছে, আমি কিন্তু দুই পক্ষের কথাই হাঁ করে পড়ছি। যেহেতু আপনিও সেরকমই জানেন মনে হচ্ছে, দয়া করে ধ্রুব ভাইয়ের ভুল যুক্তি, ফরহাদ সাহেবের সাথে এই পোস্টের প্রাসঙ্গীকতা এবং সময় না নষ্টকারী দরকারী কথা দিয়ে মন্তব্য ঝাড়ুন।

আর এক লাইনে এত কমা ব্যবহার করবেন না, দুর্বল লিখকের লক্ষন।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আর মৌনতারে দায় দেখানো ইটসেল্ফ বিপত্তিকর। উপরেই আরো কিছু তুলনীয় কুযুক্তির উদাহরণ দিছিলাম। ওগুলার ব্যাপারে কী বলবেন? পশ্চিমের উন্নয়নের অংশীদার হইলে পশ্চিমের গণহত্যার প্রত্যক্ষ সমর্থন দেয়া হয় না মৌন সমর্থন দেয়া হয়? যার বেতন পান, তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন অনেক কিছু বলতে পারেন না, সেইটারে কি মৌন সমর্থন বলেন, নাকি সমান অপরাধের দায় বলেন? এখন সেইখানে নিজে ঠিক থাইকা যান, কিন্তু ধার্মিক চুপ থাকলে তার ঘাড়ে ধর্মপালনের দায় থাকে, এই অসঙ্গতি কেনো?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

নাস্তিকদের কোনও নির্দিষ্ট বই, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি কিছুই নাই যেটা তাদেরকে একত্রিত করবে।

নব্যনাস্তিকতা একটা মতাদর্শ, যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। সে তার বিস্তারের লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে কাজ করে। একই যুক্তিতে অন্যায়ে মৌনতার প্রাতিষ্ঠানিক দায় সেখানেও আছে ভাবতে পারেন। এই দেখেন ক্রিস্টোফার হিচেন্সরা কিন্তু ধর্মবিরোধিতা করতে গিয়া ইরাক আফগানিস্তানে গণহত্যা ঘটানো যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধগুলারে সরব সমর্থনই কইরা বসেন। সেইখানে নব্যনাস্তিক্যবাদের প্রাতিষ্ঠানিকতারে ক্রিয়াশীল ভাবতে পারেন। কিন্তু একজন নব্যনাস্তিক যুদ্ধের ব্যাপারে মৌনতা পালন করলে সেইটার জন্যে তার নব্যনাস্তিকতারে দায়ভারযুক্ত করতে আমি নারাজ। সেইটা একটা হাস্যকর প্রস্তাবও। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ধার্মিক চুপচাপ থাকলে নিশ্চিতভাবেই সেইটা ধর্মের দোষ। আমার কাছে সেইটাও সমান হাস্যকর।

অরফিয়াস এর ছবি

নাস্তিকেরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মৌন এরকম ধারণার ভিত্তি কি?? আর নাস্তিকরা যদি অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল না হয় তাহলে অবশ্যই সে দায়ভার তাদের, দেখুন নাস্তিকতার কিন্তু দুইটা অংশ- উগ্র এবং সাধারণ| কিন্তু আপনি যদি এখন উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের সাথে উগ্র নাস্তিকতার তুলনা করতে আসেন সেটা তাল মেলাবে না, কেনো, কারণ পৃথিবীতে যেহারে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ ছড়িয়েছে কিংবা যে সংখ্যায় উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী ব্যাক্তি বা সংগঠন আছে তার তুলনায় এখানে উগ্র নাস্তিকতার হার নেগলিজিবল, সেই একই জেনারালাইজেশন এর তফাৎ এখানেও|

অদ্ভুতভাবে ধার্মিক চুপচাপ থাকলে নিশ্চিতভাবেই সেইটা ধর্মের দোষ। আমার কাছে সেইটাও সমান হাস্যকর।

আপনার কাছে হাস্যকর হতে পারে, কিন্তু অনেকের কাছেই না| এর কারণ পৃথিবীর ইতিহাস ঘটলে ধর্মের কারণে যে সংঘর্ষ আর মৃত্যুর হিসেব আপনি পাবেন, সেখানে যদি আপনি বলেন যে না ভাই ধর্ম খারাপ জিনিস না, চুপচাপ থাকলেই হয়, তাহলে বেশ মজার| আর শুধু তাই নয়, নাস্তিকতাকে যদি এখন ধর্মীয় মৌলবাদের পাল্লায় মাপেন তাহলে সেটা হবে "ফাকিং ফর ভার্জিনিটি"

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

নাস্তিকেরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মৌন এরকম ধারণার ভিত্তি কি

যেসব নাস্তিক ইরাক আফগানিস্তানের কল্লাকাটা, পাত্থর মারা মোল্লা মুসলমানরে অবিরত 'বর্বর' বইল্যা লেসার (lesser) হিউম্যান জাহির করার প্রতিযোগিতা ‍করে, তাদের দেখবেন ইরাক আফগানিস্তানে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রায়শই যেনো আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। অবিরত একটা জনগোষ্ঠিরে লেসার হিউম্যান দেখানো তাদের উপর গণহত্যা চালানোর নৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। গত একশবছরে সংঘটিত গণহত্যাগুলার কতভাগ ধর্মের কারণে সেই হিসাবটা কইরা একটু বইলেন যে ধর্ম কতোটা অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর ও হুমকি হইয়া উঠতেছে মানবসভ্যতার জন্য, আর কোনটার সামনে কোনটা ফাকিং ফর ভার্জিনিটি। কিন্তু তার মানে এই না যে একজন নাস্তিক চুপ থাকলেই তার গলায় দায় জড়াইয়া দিবো। আমরা মন পড়তে পারি না যে কে কী কারণে চুপচাপ সেইটা ওরাকলের মতো বইলা দিবো। এ কারণে সকলের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা স্বীকার করা হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

"এ কারণে সকলের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা স্বীকার করা হয়।"

চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা স্বীকার করে আমার 'চাকমা-খাস' বন্ধুদেরকে সাফ সাফ বলে দিলাম, বাংলা ভাষা, হিন্দু-ইসলাম বা এই প্রজাতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাতে তারা আর বাধ্য় নয়।

তখন কি আমার পিঠের চামড়া অক্ষত থাকবে?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

তখন কি আমার পিঠের চামড়া অক্ষত থাকবে

বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে সেইটা অক্ষত রাখার ওয়াদা সংবিধানে তো নিছে বইলাই পড়ছি।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এইখানে আপনের ২ নং মন্তব্যটাও ডিডাক্টিভ। এবং স্টেরিওটাইপিং-এর দোষে দুষ্ট

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

নির্ঘাত! ভাষাজাতীয়তার সবচেয়ে প্রকট বা উগ্র প্রকাশটাকে 'সব ভাই ভাই' আকারে প্রকাশ স্টেরিওটাইপিং ছাড়া আর কী? ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ!

কথা সেটাই দাঁড়ায় যে ভাষা জাতীয়তা বা যেকোনো তত্ত্ব মতবাদই অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকর কিছু না। আগেই ক্ষতিকর ধরে আগালেই তো সমস্যা। আমরা প্রত্যেকটারই চরম বা ক্ষতিকর যে অবস্থাটা, সেটা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে পারি। বিপদগুলো জানতে পারি।

মন মাঝি এর ছবি

আগেই ক্ষতিকর ধরে আগালেই

এই ধরণের "আগেই ক্ষতিকর ধরে" আগানো বা ব্ল্যাঙ্কেট দোষারোপ/ক্যারেক্টারাইজেশনকে কি এক ধরণের উগ্র মতাদর্শিক রেইসিজম, সাম্প্রদায়িকতা বা সেক্ট্যারিয়ানিজম বলা যেতে পারে ?

****************************************

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ওটাতো জানতাম লিবারেল হিউম্যানিজম নামে পরিচিত। মানবতার জন্যে যুদ্ধের কথা শোনেন নাই? মহান ধর্মযুদ্ধের মতোই তো। হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আরে নাহ!


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অন্যকেউ এর ছবি

ধর্ম যেভাবে ভাইরাসের মতো নিজেকে বিস্তার করে, জাতীয়তাবাদ সেটা করে না। সে কেবল নিজের অন্তর্গত যারা আছে, তাদেরকে যুক্ত করে টিকে থাকার কিছু সুবিধা দেয়। এই একই বৈশিষ্ট্য সমাজও প্রদর্শন করে। কিন্তু এই তিনটা ভিন্ন ভিন্ন চালকের কিছু মিল যেমন আছে, অমিলও আছে। তিনটার মধ্যে ধর্মকেই সবচেয়ে ক্ষতিকর হিসাবে দেখি, কারণ ধর্মই একমাত্র জ্ঞানের বিরোধিতা করে এবং মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধতার যেসব স্বাভাবিক স্থানীয় বৈশিষ্ট্য, সেগুলোকে ছাপিয়ে বিজাতীয় বৈশিষ্ট্য চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় সমাজকাঠামোর ক্ষতিসাধন করে। এই ক্ষতিকর প্রকৃতির দিক থেকে বিচার করলে, জাতীয়তাবাদের ক্ষতি করার প্রবৃত্তি যেহেতু কম, তাই একে ধর্মের সাথে কাতারভুক্ত করাতে একমত হতে পারি না।

কাল্পনিক ধারণার বশবর্তী মানুষ হয়ে চলেছে, এই বিষয়টায় কিছুদূর পর্যন্ত একমত হতে পারি। কিন্তু এটার কারণে যেকোনও ধরণের কল্পনাকেই ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে, এটা কিছুটা কষ্টকল্পনার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সব কল্পনাকে যদি বিদায় করতে হয়, তাহলে একটার অনুপস্থিতি বা শক্তি হ্রাসের সময়ে অন্যটা অস্বাভাবিক হারে শক্তি বৃদ্ধি করে নিতে পারে, এরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জাতীয়তাবাদ না থাকলে সেটার শূন্যস্থান যুক্তি বা মুক্তচিন্তা দিয়ে প্রতিস্থাপিত না হয়ে অর্গানাইজড রিলিজিয়ন দিয়েও হতে পারে।

কল্পনাভিত্তিক ধারণাগুলো দূর করার প্রক্রিয়াটা প্রায়োরিটাইজড হওয়া উচিত। ধর্মের মতো একটা ভয়ঙ্কর বিজ্ঞানবিরোধী প্রতিষ্ঠান কার্যক্ষম থাকা অবস্থায় জাতীয়তাবাদের মতো আপাত অক্ষতিকর ধারণা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তা দেখি না। ধর্ম আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিক, তারপর একে নিয়ে ভাবা যাবে, তারপর একে দূর করে মানুষের পৃথিবী তৈরি করা যাবে। তার পরে পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে "জাতীয় সীমানা রক্ষা"র সমরাস্ত্র তৈরির ট্রিলিয়ন পরিমাণ অর্থ বিজ্ঞান গবেষণায় লাগতে পারবে, আমরা হয়তো পাশের গ্রহে আবাসনও তৈরি করে তুলতে পারবো।

কিন্তু যতদিন না ধর্ম বিদায় নিচ্ছে, কম ক্ষতিকর জাতীয়তাবাদকে বিদায় দিতে উৎসাহিত হব না।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

মন মাঝি এর ছবি

জাতীয়তাবাদ ধর্মের চেয়ে কম ক্ষতিকর বা আপাত অক্ষতিকর আমার মোটেই মনে হয় না। নাৎসীজম কি ছিল ? জার্মান জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশই তো তাই না? এই জাতীয়তাবাদের বিস্ফোরনের ফলেই ২য় বিশ্বযুদ্ধের সৃষ্টি হয়, যে যুদ্ধের ফলে সম্ভবত ৫-১০ কোটি লোক মারা যায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের (এবং পরেও?) আগে পৃথিবীর ইতিহাসে তাবৎ ধর্মযুদ্ধ মিলেও কি এত লোক নিহত হয়েছিল ?

****************************************

যাযাবর এর ছবি

চলুক

কালো কাক এর ছবি

চলুক

অন্যকেউ এর ছবি

আপাত অক্ষতিকর বলে আসলে জাতীয়তাবাদের আসল চেহারাটা প্রকাশিত হয় না। এটা আমারই ভুল। আর, শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন, যেকোনও রাষ্ট্রিক যুদ্ধকেই তো কমবেশি এই আওতায় ফেলা যায়। সেই হিসাবে জাতীয়তাবাদের কারণে পৃথিবীতে যতো হত্যা হয়েছে, সেই সংখ্যা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবার কথা। কাজেই জাতীয়তাবাদের সমর্থনে আমি দাঁড়াচ্ছি না। আমার অবস্থান, জাতীয়তাবাদকে ধর্মের আগেই অপসারণ করতে গেলে ধর্ম জাতীয়তাবাদের স্থান নেবে কি না, এই সংশয় থেকে উদ্ভূত। এখনও পর্যন্ত জাতীয়তাবাদের যে সামরিক ক্ষমতা, ধর্মের সামরিক ক্ষমতা তার ধারেকাছেও নয়। কিন্তু ধর্ম আরও বেশি অন্ধত্ব এবং আনুগত্যের চাষ করে; সামরিক ক্ষমতা ধর্মের হাতে গেলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে সেই বিষয়ে আমি সন্দিহান।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

স্বাধীন এর ছবি

ধর্ম যেভাবে ভাইরাসের মতো নিজেকে বিস্তার করে, জাতীয়তাবাদ সেটা করে না।

জাতীয়তাবাদ, ধর্ম সকলেই যদি একেকটি "মিম" হয় তবে জাতীয়তাবাদও ধর্মের মতো নিজেকে অন্যের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই একক ভাবে শুধু ধর্মকে ভাইরাস বলাটা সঠিক হবে না।

অন্যকেউ এর ছবি

জাতীয়তাবাদ কি ধর্মের মতো ভিন্নতর জাতিসত্ত্বায় নিজেকে বিস্তার করতে চায়? এই বিষয়টা ঠিক নিশ্চিত হতে পারলাম না। জাতীয়তাবাদ ভাইরাস হিসাবে শুধু টিকে থাকে এবং নিজস্ব জনসংখ্যার কাছে আনুগত্যের আশ্বাস চায়। ধর্ম নিজস্ব জনসংখ্যার বাইরেও প্রসারিত হতে কাজ করে। জাতীয়তাবাদের এই বৈশিষ্ট্যটা কম মনে হয়েছে, এজন্যই ধর্মকে স্পেসিফাই করছি ভাইরাস হিসাবে, সংক্রমণের বেসিসে।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

জাতীয়তাবাদ কি ধর্মের মতো ভিন্নতর জাতিসত্ত্বায় নিজেকে বিস্তার করতে চায়? এই বিষয়টা ঠিক নিশ্চিত হতে পারলাম না। জাতীয়তাবাদ ভাইরাস হিসাবে শুধু টিকে থাকে এবং নিজস্ব জনসংখ্যার কাছে আনুগত্যের আশ্বাস চায়।

ভাষা জাতীয়তা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সেইটা করে। এছাড়া উগ্র জাতীয়তা নিজের জনসংখ্যার বাইরেও বহির্দেশে কলোনির দ্বারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক তৈরি করে। যুদ্ধ, ধর্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে ভিন্ন জাতিরে নিধন করে, নয়তো 'পরিশোধন' করে, অঙ্গীভূত করে। এইভাবে সে তার বিস্তার নিশ্চিত করে। ধর্মের চাইতে উপায় ভিন্ন হইতে পারে, কিন্তু বিস্তারের ইচ্ছা তারও আছে। ফলে বেচারা শুধুই টিকে থাকতে চায় না। একটু আধটু বিস্তারের ইচ্ছাও রাখে।

শান্তুনু বড়ুয়া এর ছবি

জাতীয়বাদ নিয়ে এই রকম একপেশে বক্তব্য ঠিক মানতে পারলাম না।

আশরাফ এর ছবি

ভাই, মানতে পারলামনা বলে চলে গেলে তো হবেনা। কেন মানতে পারলেননা সেটা বলে যান প্লীজ।

মন মাঝি এর ছবি

আপনার কথা মত তাহলে মনুষ্যত্ব-ও কল্পিত। মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবতাবাদ, মানবজাতি, নীতি, নৈতিকতা, আমি, আপনি, সে - বিশ্বব্রম্মান্ডের প্রায় তাবৎ বিষয়ই 'কল্পিত'।

.............

মানুষের দলবদ্ধ বসবাসের পেছনে একটি বড় চালক ছিল কল্পিত সম্পর্কস্থাপনের প্রবণতা.... কল্পিত এই সম্পর্কের ধারণা মানবতার ঊষালগ্ন থেকে প্রস্তরযুগ পর্যন্ত মানুষকে দলবদ্ধ রেখেছে।

দ্বিমত। যদ্দুর জানি, মানুষের যুথবদ্ধতার পিছনে কোন কল্পিত সম্পর্কস্থাপনের প্রবণতা নয়, ছিল চরম ও কঠোরতম বাস্তবতা-র ঠ্যালা। বেঁচে থাকার বেহদ্দ প্রয়োজন! সেই আদিযুগে মানুষের দলবদ্ধতা না থাকলে, আজকে আপনি সচলায়তনে লিখতেন না। আমিও এটা পড়তাম না। পৃথিবীতেই থাকতাম না আমরা কেউ!

আদি যুগের যুথবদ্ধতা আর "জাতীয়তাবাদ" এক জিনিষ নয়। 'জাতীয়তাবাদ' অতি আধুনিক জিনিষ। মাত্র কয়েকশ বছর এর বয়স। এরা সম্পূর্ণ আলাদা।

প্রস্তরযুগে এই কল্পনার সম্প্রসারিত একটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম

এ ব্যাপারেও একমত হতে পারছি না। প্রস্তরযুগের বা তার আগের যুথবদ্ধতার সৃষ্টি মূলতঃ কঠোর বাস্তবতার ঠ্যালা ও প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। পক্ষান্তরে কাল্পনিক ধর্মের সৃষ্টি মূলত মনস্তাত্ত্বিক প্রয়োজনে (এক্সপ্লয়েটেশনর প্রয়োজন বা এর অন্যান্য ব্যবহার আরো পরে এসেছে বলেই মনে হয়)। এই পর্যায়ে দু'টোর কোনটাকেই আমার একটা আরেকটার সম্প্রসারিত রূপ মনে হচ্ছে না - বরং মূলত অসম্পর্কিত ও ভিন্ন প্রকৃতির মনে হচ্ছে।

ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত ধরে আছে।

দ্বিমত। "জাতীয়তাবাদ" ধর্মের হাজার-হাজার বছর পরে এসেছে বলেই জানি। সামগ্রিক ভাবে ধর্মের জন্ম কত সহস্র বছর আগে জানি না, তবে মহাভারতের বয়স নিদেনপক্ষে আড়াই হাজার বছর তো বটেই। আর জাতীয়তাবাদ ? এটা আসলে একটা পশ্চিমা প্রত্যয় বা মতাদর্শ। ইংরেজি Nationalism থেকে আমদানি করে যার বঙ্গানুবাদ হয়েছে "জাতীয়তাবাদ" - যার জন্ম ইউরোপে ২-৪ শ' বছর আগে মনে হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এরা একে অপরের হাত ধরে আসেনি।

জাতি ও ধর্ম দুটোই সমানভাবে কল্পিত।

আবারও দ্বিমত। আপনি মনে হয় বেনেডিক্ট এন্ডারসনের সংজ্ঞাটা্র অপপ্রয়োগ করছেন। প্রথম কথা হচ্ছে এন্ডারসন এটাকে 'কল্পিত' (ইমাজিন্‌ড) বললেও, কাল্পনিক বা 'ইমাজিনারি' (অবাস্তব/অস্তিত্ত্বহীণ কাল্পনিক) অর্থে ব্যবহার করেননি মনে হয়; ২য়ত এই মত বহুল-বিতর্কিত; তৃতীয়ত বেশির ভাগ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই মনে হয় এই 'কল্পনা' বা 'ভাবগত ঐক্য'-কে নেশন ও নেশনহুডের অন্যতম উপাদান হিসাবে স্বীকার করলেও - আরো অনেক বাস্তব উপাদানের কথাও বলেন - যা ধর্মের মধ্যে নাই।

আপনি মনে হয় ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে এই 'কল্পনা'-র উপাদানের ক্ষেত্রে মিল দেখে বা 'কল্পনা'-র সাথে তাদের কিছু সম্পর্ক দেখে দু'টোকেই এক গোত্র ভূক্ত করে ফেলেছেন। এভাবে দেখতে গেলে (কোন একটা বৈশিষ্ট্য একটু কমন পড়লেই) পৃথিবীর সব কিছুর সাথেই সব কিছুর কোন না কোন ভাবে কিছু না কিছু সম্পর্ক বা মিল আছে। আপনার প্রতীয়মান যুক্তি অনুসরন করলে তাহলে কি বলতে হবে - কোন কিছুর সাথেই কোন কিছুর পার্থক্য নেই ? সবই এক? মানুষ-বাঘ-পাখি-গাছপালা সবই এক, কারন এসবেরই জীবন আছে বলে? আলাদা-আলাদা নাম বা শ্রেণিবিভাগের তাহলে কি অর্থহীণ ? একই ভাবে তেল/জল/পেট্রল, চাল/গম, গাড়ি/রিক্সা, ইত্যাদি সবই এক? এই পথে শেষমেশ তাহলে কি আমাদের 'সবই পরমব্রম্মের ভিন্ন ভিন্ন রূপ' টাইপের কোন মায়াবাদে পৌঁছে যেতে হবে ?

এই কল্পিত সম্পর্কটি লোকায়ত বিশ্বাসে যেমন দেশ ভিত্তিক জাতীয়তা হতে পারে, ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে ইসলামিক উম্মাহ বা বিশ্ব ইজতেমার মত কিছুর মত দেখতে হয়।

জাতীয়তা বা জাতীয়তাবাদ কোন লোকায়ত বিশ্বাসের ব্যাপার না আমার জানা মতে। এটা আধুনিক ও আর্বান এবং অনেকটাই পশ্চিমাগত একটা রাজনৈতিক মতবাদ ও চেতনা - যার মধ্যে কথিত 'কল্পনা' বা 'ভাবগত ঐক্যের' উপাদান ছাড়াও অর্থনীতির মত অতি বাস্তব উপাদানও থাকে, থাকে বিবিধ কমন স্বার্থ, ভূগোল, ইতিহাস, ভাষা, কৃষ্টি, এথনিসিটিসহ আরো অনেক কিছুর ঐক্যবদ্ধকারী ও ব্যবধান সৃষ্টিকারী উপাদান। বাংলায়/উপমহাদেশে শ্রেণী/বর্ণ/পেশা ইত্যাদি অর্থে 'জাত' কথাটা ব্যবহৃত হত বটে, কিন্তু সেটা আর আধুনিক জাতীয়তা বা জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ 'নেশন' ও 'ন্যাশনালিজম' এক জিনিষ নয়। আপনি মনে হয় বারবারই এই দুইটা গুলিয়ে ফেলছেন। আলাদা করা দরকার ছিল না?

'বিশ্ব ইজতেমা' স্রেফ একটা সাময়িক বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিবর্গের সাময়িক জমায়েতহাসি এটাকে আপনি যদি জাতীয়তা বলেন, তাহলে ক্রীড়ানন্দে ফুটবল বা ক্রিকেট দেখতে স্টেডিয়ামে যাওয়া দর্শকরাও জাতি আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবীতে রাস্তায় মিছিল করা সাংবাদিকরাও 'জাতি' (নেশন)।

ইসলামিক উম্মাহ জাতীয়তাবাদ না। এটা একধরণের জোড়াতালি কাল্পনিক সম্প্রদায়বাদ বা 'বিশ্বাসীদের আন্তর্জাতিক সঙ্ঘ'-ও বলা যেতে পারে, যা জাতীয়তাবাদের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না। এই উম্মাহ এমনকি এক্সক্লুসিভলি মুসলমানদেরই হতে হবে এমনও না হয়তো, কারন স্বয়ং মুহম্মদ (সঃ) রচিত শাসন্সংক্রান্ত রাজনৈতিক দলিল বা সংবিধান বিখ্যাত "মদিনা সনদে" ইহুদী ও পৌত্তলিকদেরও সুস্পষ্টভাবে এই উম্মাহ্‌র সদস্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আবার আধুনিক উম্মাহ্‌র বেশির ভাগ দেশেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিক রয়েছেন। আর এই দেশগুলির কেউই বোধহয় তাদের জাতিরাষ্ট্রিক জাতীয়তা বিসর্জনও দিতে রাজি না কোন উম্মাহ্‌-র জন্য। মোদ্দা কথা বর্তমানের বিচারে এটা খানিকটা ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মতই একটা প্রায় সোনার-পাথরবাটি আন্তর্জাতিক জোট, "জাতি" তো না-ই!

জাতীয়তাবাদকে ধর্মের মত প্রশ্নাতীত

জাতীয়তাবাদ মোটেই ধর্মের মত প্রশ্নাতীত না। এটাকে প্রশ্নাতীত বা পার্ফেক্ট হিসাবে এখন আর কল্পনা করাও হয় না। এটা আদি যুথবদ্ধতার মতই, বাস্তব সমাজ বিবর্তনের ধারায় মানুষের অতি বাস্তব প্রয়োজনেই ইতিহাসের একটা বিশেষ পর্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে, আবার আদি কৌম সমাজ যেমনি বিবর্তিত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বদলে গেছিল - তেমনি জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনসৃষ্টিকারি বাস্তবতার বিবর্তন ঘটলে বা বৃহত্তর/জোরালোতর প্রয়োজন সৃষ্টি হলে জাতিয়তাবাদের অস্তিত্ত্বও তেমনি ক্ষয় বা বিলোপ পেতেই পারে। আর হ্যাঁ, জাতিয়তাবাদের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে পৃথিবীর সর্বত্রই না-না রকম প্রচুর প্রশ্ন-বিতর্ক চলে, এবং তার মাধ্যমে এর চেহারার পরিবর্তনও ঘটে বৈকি। ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে (২য় বিশ্বযুদ্ধ সহ) ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক জাতীয়তাবাদী দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মানবতার বিপর্যয় ইউরোপীয়দের কাছে জাতীয়তাবাদকে প্রচণ্ড প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল বৈকি। যদ্দুর জানি, সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধকল্পেই তাদের মাঝে ধীরে ধীরে একটা পর্যায় পর্যন্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক একীকরণের চিন্তার উদয় হয়। সফলতার যতটুকুই আসুক এখনো পর্যন্ত, আধুনিক ইইউ-র পিছনে এরকম কিছু একটা উদ্দেশ্য কি খানিকটা ছিল না? সুতরাং জাতীয় ধারনা বা জাতীয়তাবাদ ধর্মের মত চুড়ান্ত কিছু নয়, বরং বহুপাক্ষিক সমঅভিজ্ঞতা, সমউপলব্ধি ও স্বার্থের সম্মিলনে তা পরিবর্তন বা বিবর্তনযোগ্য হতেই পারে। আর তার মৌলিক কারনটাই হচ্ছে যে, একটার বিষয়বস্তু নেহাতই ইহলৌকিক আর আরেকটার পারলৌকিক। মৌলিক ভাবেই তারা পৃথক।

ভাষা-সংস্কৃতি-এথনিসিটি-ধর্ম- ইত্যাদি বাদেও আলোচ্য জাতি/সমূহ ও সন্নিহিত অঞ্চলের অর্থনৈতিক বাস্তবতা, সুবিধা ক্ষমতা ও বৈষয়িক স্বার্থের পারস্পরিক ক্যালকুলাস, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতার পার্সেপশনে মিল/অমিল জাতীয় অনেক অতি বাস্তব বিষয়ের উপরেই নির্ভর করবে এই বিবর্তন কতটুকু হবে বা আদৌ হবে কিনা। ইন ফ্যাক্ট 'কল্পিত' কমিউনিটি বা জাতির 'কল্পনা' আসলে এই জাতীয় অনেক অতি স্থুল উপাদান ও হিসাব-নিকাশের উপরেই অনেকখানি নির্মিত বলে আমার ধারনা। এই কল্পনার বিবর্তন তাই বাস্তবতার পরিবর্তনের উপরেই নির্ভরশীল, তার আগে আমার-আপনার বা গুটিকয়েক মানুষের উইশফুল থিঙ্কিং দিয়ে কিছুই বদলাবে না। আর তা যদি বদলাত, তাহলে আমি অন্তত বলতাম - এরপরও আমি জাতীয়তাবাদ-ই চাই! 'বিশ্বমানবতাবাদ' বা 'এক ও অখন্ড মানবজাতি'-ভিত্তিক অবিভাজ্য বিশ্ব-জাতীয়তাবাদ, যেখানে সারা পৃথিবীতে একটাই মাত্র জাতি ও একটাই মাত্র জাতিরাষ্ট্র থাকবে - মানবজাতি ও পৃথিবী। তার মাঝামাঝি আর কিছুই না! কারন এই দুইয়ের মাঝামাঝি আর যে কোন কিছুই আমার মতে কমবেশি ছলনা, ভেজাল ও ফাঁকিঝুকির ফল হতে বাধ্য।

সুতরাং না, জাতীয়তাবাদকে আমি আরেকটা ধর্ম মনে করছি না, বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাতিলও করে দিতে পারছি না।

****************************************

যাযাবর এর ছবি

আপনার সাথে সহমত চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

তাহলে মনুষ্যত্ব-ও কল্পিত। মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবতাবাদ, মানবজাতি, নীতি, নৈতিকতা, আমি, আপনি, সে - বিশ্বব্রম্মান্ডের প্রায় তাবৎ বিষয়ই 'কল্পিত'।

"মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবতাবাদ,"- কাল্পনিক বললে খুব বেশি ভুল হবে কি?? যদি মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবতাবাদ মানুষের বৈশিষ্ট্য হয় তাহলে সভ্যতার ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে, রক্ত ছাড়া কিন্তু সভ্যতা এগোয়নি। আর এর বিপরীত যদি হয় পাশবিকতা এটাও কিন্তু কাল্পনিক কারণ মানুষ কোনো অংশেই পশুর থেকে কম নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি| তাই মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবতাবাদ- একটি কাল্পনিক মানদন্ডের উপর ভিত্তি করেই তৈরী| এটা একটা আদর্শ কাল্পনিক ধারণা ও মূল্যবোধ, যার বাস্তবায়ন নেই|

"নীতি, নৈতিকতা"- অবশ্যই কাল্পনিক, আমার কাছে যে নীতি ভালো ও গ্রহণযোগ্য সেটা আরেকজনের কাছে অগ্রহণযোগ্য কিংবা পাগলামী মনে হতেই পারে| এখানেও মানুষ তার কল্পনা শক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে একটি মানদন্ড তৈরী করেছে যা কিনা ব্যাক্তিবিশেষে পরিবর্তনযোগ্য| তাহলে কোনো ধারণার যদি বাস্তব প্রেক্ষাপট আলাদা হয় তাহলে তো তাকে কাল্পনিকই বলে| যেমন- সমাজতন্ত্র বলে সমাজে সাম্য, কিন্তু যদি বাস্তবতার নিরিখে দেখি কিন্তু পুরো সাম্য কখনই সম্ভব নয়, ব্যবধান কমানো যায়, তাই সমাজতন্ত্রের ধারণা আদর্শ হিসেবে অসাধারণ কিন্তু বাস্তব ভিত্তিতে এর প্রয়োগ কাল্পনিক|

"আমি, আপনি, সে - বিশ্বব্রম্মান্ডের"- না এগুলো কাল্পনিক নয়, কারণ পদার্থের জন্য কল্পনার দরকার পড়েনা, অস্তিত্ব এই জিনিসগুলোর সবকটারই আছে, তাই এর জন্য কল্পনার দরকার নেই, এগুলো প্রমানিত সত্য, কারো কল্পনাতে হেরফের হচ্ছেনা, আজকে আমি যদি আর একজনকে হাতির মতো কানওয়ালা কল্পনা করি তাতে সেই ব্যক্তির কান হাতির মতো হয়ে যাচ্ছেনা|

আর জাতীয়তাবোধের ধারণা খুব পুরনো নয়, মানুষ এর সংগবদ্ধ থাকা থেকেই এর উদ্ভব, তখন হয়তো এর কোনো নির্দিষ্ট নাম বা ব্যাখ্যা ছিলোনা, কিন্তু এর প্রমান কাজেকর্মে বিদ্যমান| যেমন- দ্রাবিড় বা আর্য জাতি যখন সংবদ্ধ ভাবে তাদের প্রথা মেনে জীবনযাপন করে চলে তখন সেটা তাদের আলাদা আলাদা জাতীয়তাবোধেরই পরিচায়ক। প্রাচীন ভারতবর্ষে যখন শ্রেণী ব্যবধান কিংবা জাতপ্রথার উদ্ভব এর পেছনেও কিন্তু একটি বিশেষ শ্রেনীকে কিংবা জাতিকে আলাদা করে রাখার কল্পনা কাজ করেছে, সামগ্রিক ভাবে মানুষজাতি হিসেবে চিন্তা করাটা সমস্যা| তাই আলাদা আলাদা জাত তৈরী করে নিজেদের আলাদা করে প্রকাশ করা বা একের থেকে অন্যের পার্থক্য তুলে ধরার ধারণা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মন মাঝি এর ছবি

"মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানবতাবাদ,"- কাল্পনিক বললে খুব বেশি ভুল হবে কি??..."নীতি, নৈতিকতা"- অবশ্যই কাল্পনিক

আমিও তো সেকথাই বলছি! পোস্টলেখকের কিছু বাক্য পড়ে মনে হয়েছিল কিছু 'কল্পিত' হলেই খ্রাপ হয় আর ধর্ম আর জাতীয়তাবাদ যেহেতু সমানভাবেই 'কল্পিত' - সেহেতু এই কল্পনাদোষে তারা সমানভাবেই খ্রাপ। এর পালটা উদাহরণ দিতেই মানবতা, নৈতিকতা - এসবের উল্লেখ। অর্থাৎ স্রেফ কল্পনাদোষেই কিছু খ্রাপ হয়ে যায় না। ইন ফ্যাক্ট মানবসভ্যতার বেশির ভাগ ভাল জিনিষই মনে হয় কল্পনার উপরে দাঁড়ানো ইন্ট্যাঞ্জিব্‌ল্‌স। মোদ্দা কথা বেশির ভাগ জিনিষেরই ভাল-মন্দ দিক আছে, ভাল মন্দ ব্যবহার আছে - সার্জনের ছুরি বনাম ডাকাতের ছুরির মত খানিকটা।

"জাতীয়তাবাদ"-এর ধারণাটা যে অন্য যে কোন পূর্বতন মানব সমাজের যূথবদ্ধতা থেকে ব্যাপক ভাবেই পৃথক মনে করি, সে কথা আগের মন্তব্যেই বলেছি। এই দুইয়ের তুলনা চলে না। যূথবদ্ধতা হাজার বা লক্ষ বছর আগে প্রায় প্রাকৃতিক বাস্তবতার তাগিদেই তৈরি হয়েছিল, অন্যদিকে "জাতীয়তাবাদ" যা আসলে ইউরোপিয় 'ন্যাশনালিজম" শব্দের অনুবাদ - একটা বিশেষ আধুনিক আমদানিকৃত রাজনৈতিক

আইডিওলজি

যার জন্ম মূলত ইউরোপেই এবং মাত্র কয়েকশ বছর আগে জাতিরাষ্ট্রের তত্ত্বের হাত ধরে। এটা অনেকটা 'আমরা সবাই সমান'-এর প্রাগৈতিহাসিক ভাবাবেগের সাথে মার্ক্সিজম-লেনিনিজমের জটিল অত্যাধুনিক 'বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের' পার্থক্যের মত। এই পার্থক্য আর তার ইমপ্লিকেশনগুলির পার্থক্য ভয়াবহরকম গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমি মনে করি। যেমনটা আমরা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট-স্ট্যালিনিস্ট কমিউনিজমের সূত্রায়ন, প্রয়োগ ও ফলাফলের ক্ষেত্রে দেখেছি।

দ্রাবিড় বা আর্য জাতি একধরনের প্রিমিটিভ রেশিয়াল বা বড়জোর এথনোসেন্ট্রিক পরিচয় বা বোধ হতে পারে, জাতীয়তাবাদী তথা 'ন্যাশনালিস্ট' নয় কোন মতেই। ঐতিহাসিক ভাবেও তা দৃশ্যমান - আর্যত্ব বা দ্রাবিড়ত্ব থেকে গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র বা অন্যান্যদের তথা আধুনিক ভারতের ঘোষিত বহুত্ববাদী, মাল্টি-এথনিক জাতীয়তাবাদ থেকে তা মৌলিক ভাবেই পৃথক এবং বহু সহস্র বছরের ব্যবধানে স্থিত। আর এই 'জাতীয়তাবাদ'-এর প্রেরণা ইউরোপীয় উৎস থেকেই প্রাপ্ত, প্রাচীণ ভারতের আর্যত্ব বা দ্রাবিঢ়ত্বের পরিচয়বোধ থেকে নয়। এখানে এর চেয়ে বিশদ আলোচনা সম্ভব নয়। শুধু এইটুকু বলি আগেই যেমন বলেছি, সব ধারণা মিলিয়ে ফেলাটা মনে হয় কাজের কথা নয়, এমনকি কিছু সাদৃশ্য যদি পাওয়াও যায়। যেমন মানুষ ও বান্দর ঠিক এক প্রজাতির প্রাণী নয় অনেক সাদৃশ্য সত্বেও, দু'টো করে হাত-পা থাকার পরও। পৃথকীকরণটা জরুরী। নইলে সামনে এগুনো যায় না।

"আমি, আপনি, সে - বিশ্বব্রম্মান্ডের"- না এগুলো কাল্পনিক নয়, কারণ পদার্থের জন্য কল্পনার দরকার পড়েনা

এগুলি কাল্পনিকই। কারন এগুলি স্রেফ 'পদার্থ' নয়, এগুলি 'আইডেন্টিটি' - যা একধরণের মানসিক ও সামাজিক কন্সট্রাক্ট। অন্যভাবে বললে, জাতীয়তাবাদের 'কল্পনার' মতই একধরণের 'কল্পনা'। পদার্থের কোন ইন্ডিভিজুয়াল 'ব্যাক্তিত্ব' বা 'আইডেন্টিটি' নেই, তার প্রয়োজনও পড়ে না। "আমি, আপনি, সে" বলতে আমরা এই 'ব্যাক্তিত্ব' ও 'আইডেন্টিটি'-কেই রেফার করি, স্রেফ একটা জড়বস্তুর পিণ্ডকে শ্রেণীগত ভাবে নির্দেশ করি না। টেবিল সবজায়গাতেই টেবিল, 'অরফিয়াস টেবিল', 'মন মাঝি টেবিল', বা স্রেফ 'অরফিয়াস' বা 'মন মাঝি' বলে কোন টেবিল হয় না। পদার্থ হওয়া সত্বেও টেবিল, চেয়ার, টেবিল-চেয়ারই, ইট-কাঠ-পাথর-ধুলা-বালু সর্বত্রই ইট-কাঠ-পাথর-ধুলা-বালুই, এদের 'ব্যাক্তিত্ব' নেই - নেই একদম ইন্ডিভিজুয়াল আইডেন্টিটি - যা মানুষের থাকে। 'পদার্থের' স্রেফ অব্জেক্টিভ বস্তুগত অস্তিত্ব থাকে, মানুষের "আমি, তুমি, সে" অব্জেক্টিভ-সাব্জেক্টিভ দু'টি মিলিয়েই তৈরি একটি মনস্তাত্ত্বিক/সামাজিক কন্সট্রাক্ট। হ্যাঁ, একটা 'কল্পিত' কন্সট্রাক্টই, অনেকটা 'জাতীয়তাবাদ'-এর মতই। 'ইমাজিন্‌ড', কিন্তু ইমাজিনারি নয়! এবং এই 'ইমাজিন্‌ড' বা 'কল্পনা' মোটেই ফেলনা না (যেমনটা পোস্ট-লেখকের বয়ানধারায় মনে হয়), নয় 'ইমাজিনারি' বা অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয়। স্রেফ 'কল্পিত' বলেই ক্ষতিকর নয়, নয় অন্য ভাল বা খারাপ কিছুর সাথে তুল্য। লেখকের বয়ানে যেটা মনে হওয়ার সুযোগ থাকে। বরং ঠিক উটোটা। নইলে মানবসভ্যতার অনেক সদর্থক ও মহৎ ইন্ট্যাঞ্জিবল্‌স-ই ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে একই যুক্তিতে। আগেই যেমন বলেছি। এখানেও সেই পৃথকীকরণের প্রসঙ্গটা এসে যাচ্ছে। জাতীয়তাবাদসহ অন্য সব ক্ষেত্রেই এই পৃথকীকরণ বা ডিফারেন্সিয়েশন/ডিস্ক্রিমিনেটিং বিচারবোধ প্রযোজ্য।

এই জন্যেই বা জন্যে, আমি জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সাথে তুল্য বলে মনে করছি না বা কোন সমান-চিহ্ণ টানছি না। বা এটাকে নিরঙ্কুশ ভাবে ভাল বা খারাপ কিছু বলছি না। এর দু'টো দিকই আছে। তবে সভ্যতার বর্তমান স্তর ও বাস্তবতায় অনেক ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা ছিল এবং এখনো রয়ে গেছে বলেই মনে করি, ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে এর ভাল ও মন্দ উভয়বিধ প্রয়োগ বা ফলাফল সত্বেও (ক্ষেত্র বা প্রেক্ষিতের পার্থক্যের কারনে যা দুনিয়ার কম-বেশি প্রায় সব বিষয়েই হয়। অনেকটা এক রোগের বেলায় অন্য রোগের ওষুধ দেয়ার মত কি? জানিনা তুলনাটা ঠিক হল কিনা।)।

যাই হোক, "আমি, তুমি, সে" অর্থাৎ 'আইডেন্টিটি' বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী কাম রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লিয়াহ গ্রীনফিল্ডের একটা ইন্টারেস্টিং উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করি -

It defines the position of its bearer (which may be an individual or a group) in, and serves as a map or blueprint for, a certain, more or less extensive, sphere of the social world, with the help of which this world, in fact, is constantly reconstructed. An identity, every identity, in other words, represents a means of constructing and defining the social reality of the bearer.

****************************************

অন্যকেউ এর ছবি

'বিশ্বমানবতাবাদ' বা 'এক ও অখন্ড মানবজাতি'-ভিত্তিক অবিভাজ্য বিশ্ব-জাতীয়তাবাদ, যেখানে সারা পৃথিবীতে একটাই মাত্র জাতি ও একটাই মাত্র জাতিরাষ্ট্র থাকবে - মানবজাতি ও পৃথিবী। তার মাঝামাঝি আর কিছুই না! কারন এই দুইয়ের মাঝামাঝি আর যে কোন কিছুই আমার মতে কমবেশি ছলনা, ভেজাল ও ফাঁকিঝুকির ফল হতে বাধ্য।

ভালো বলেছেন। সহমত। চলুক চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

দুর্দান্ত এর ছবি

"'বিশ্বমানবতাবাদ' বা 'এক ও অখন্ড মানবজাতি'-ভিত্তিক অবিভাজ্য বিশ্ব-জাতীয়তাবাদ, যেখানে সারা পৃথিবীতে একটাই মাত্র জাতি ও একটাই মাত্র জাতিরাষ্ট্র থাকবে - মানবজাতি ও পৃথিবী। তার মাঝামাঝি আর কিছুই না! কারন এই দুইয়ের মাঝামাঝি আর যে কোন কিছুই আমার মতে কমবেশি ছলনা, ভেজাল ও ফাঁকিঝুকির ফল হতে বাধ্য।"

ভালো বলেছেন। কিন্তু এটা কি বাস্তবে সম্ভব?

মন মাঝি এর ছবি

বাস্তবে সম্ভব কিনা জানি না, তবে বর্তমানে এটা বাস্তব না এটা তো আমার মন্তব্যেই পরিষ্কার। কিন্তু 'জাতিয়তাবাদ' একটা বিদ্যমান বাস্তবতা, এবং আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরেও আরও বহুকাল বোধহয় তা-ই থাকবে। এবং বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এটা এ মুহূর্তে বর্জনীয়ও না। সুতরাং এটাকে নিয়েই কাজ করতে হবে আমাদের এর ত্রুটিবিচ্যুতি সত্বেও। ইট্‌স দ্য নেক্সট বেস্ট থিং টু ওয়ান-ওয়ার্ল্ড ওয়ান-নেশন আইডিয়ালিজম, অন্তত এর এক্টা আপডেটেড সংস্করণ।

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পোস্ট এবং মন্তব্যসমূহ উভয়ই বেশ আগ্রহজাগানিয়া, চিন্তাজাগানিয়া। ধর্ম বা জাতীয়তাবাদ - কোনটাই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। যে প্রশ্ন করতে জানে না - সে অন্ধ-গোঁড়া। যে প্রশ্ন করাটাকে ভুরু কুঁচকে দেখে - সে বিপদজনক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

" ধর্ম বা জাতীয়তাবাদ - কোনটাই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। যে প্রশ্ন করতে জানে না - সে অন্ধ-গোঁড়া। যে প্রশ্ন করাটাকে ভুরু কুঁচকে দেখে - সে বিপদজনক।"

সহমত।

অরফিয়াস এর ছবি

সরাসরি মন্তব্যে যাওয়ার আগে একটা ছোট ঘটনা বলে নেই, শীতের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম, তখন বিজয় দিবস, বিকেলে হঠাৎ এক বন্ধুর একটা ব্লগ দেখলাম, বেশ তীব্র আলোচনা হচ্ছে দেখে অংশ নিলাম, ঘটনাটা বন্ধুর এবং তার সহপাঠিনীর, সকালে তারা দুজনেই বিজয় দিবসের আনন্দে সামিল হতে যায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে সে সুযোগে প্রায় ধর্ষণ এর মতো অবস্থা হয় সেই নারীবন্ধুটির, ছেলেটি অনেক চেষ্টা এমনকি প্রায় ক্ষমা প্রার্থনা করেও পার পায়নি, কোনমতে বিপর্যস্ত হয়ে তারা দুজন যখন বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হয় তখন আর কোনো ভাষা ছিলোনা। এর পরে প্রচন্ড ক্ষোভ থেকে ছেলেটির ব্লগ, তাতে সে প্রশ্নবিদ্ধ করলো জাতীয়তাবাদকে, কোন জাতীয়তাবাদের অহমিকায় আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করি, যখন নিজেদের বিজয় দিবসেও ভিড়ে আমরা এক একজন সেই পুরনো হায়েনাদের মতো হয়ে যাই, আমরা নিজেদের কোন দিক থেকে আলাদা মনে করি যখন একজন নারীকে দেখলেই দলবদ্ধ আক্রমন চালাই।

সেই সময় ব্লগটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মনে হলেও, কথাটা ভাববার মতো| আসলে জাতীয়তাবাদ কি?? এই ধারণা কিংবা অনুভূতি আমাদের কোথা থেকে সৃষ্টি হয় কিংবা কিসের দ্বারা আমরা চালিত হই??

যদি একটি আলাদা জাতিগত পরিচয় জাতীয়তাবাদ হয় তাহলে কিন্তু সংগার সাথে আমাদের ধারণার মিল নেই, যদি একটি দেশের পরিচয়ে আমাদের জাতীয়তার পরিচয় তাহলে সেই জাতীয়তা বোধে আমরা কি অর্জন করেছি বা করতে পারছি?? এখানে আলোচনা হতে পারে উভয় দিক থেকেই, কিন্তু কখনো কখনো জাতীয়তাবোধের এই ধারনাটি কিন্তু উগ্র বা অন্ধ বোধেরও জন্ম দেয়| একারণেই "উগ্র জাতীয়তাবোধ" কথাটির জন্ম|

কোনকিছুই তা যত ভালোই হোকনা কেনো যখন যুক্তি-তর্কের উর্ধ্বে চলে যায় তা ভালোর দিক নয়, কোনো কিছুই পৃথিবীতে প্রশ্নের উর্ধ্বে হওয়া উচিত নয় তা সে যতই স্পর্শকাতর বিষয় হউক না কেনো| কারণ যদি তর্ক কিংবা যুক্তির বাইরে জিনিসটাকে চিন্তা করা শুরু করি এবং ধারনাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে প্রতি পদে অনুসরণ করি তাহলে কালক্রমে সেটা অন্ধ বিশ্বাস এবং পরে একটি উগ্র বোধের সৃষ্টি করে|

এবার আর একটি ঘটনা, এক আস্তিক বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি যৌক্তিক ও খোলা মন নিয়ে ভাবো?? সে সাথে সাথে সম্মতিসূচক উত্তর দিলো, আমি যখন প্রশ্নও করলাম যদি তুমি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসরন করো তাহলে তুমি কি করে খোলা মন নিয়ে ধর্ম-ঈশ্বর এসব নিয়ে ভাববে কারণ তুমি তো আগেই তোমার ধর্মীয় রীতি অনুসরন করে চলেছ?? সে কোনো ভাবেই মানতে রাজি হলোনা এবং পুরো তর্কের সময় ধরেই আমাকে বলে চললো আমি নাকি তাকে আমার মতো করে কথা বলাতে চাচ্ছি কিন্তু সে বলবেনা, বরং আমি তার থেকেই শুনতে চাচ্ছিলাম| শেষে সে কোনভাবেই সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললো সে নাকি আংশিক খোলা মনের !!!

ধর্ম মানুষ অনুসরন করছে অনেক আগে থেকে, কিন্তু একজন মানুষ ধর্ম অনুসরন করে তার জন্মের ভিত্তিতে, সে যেই পরিবারে জন্ম নিচ্ছে সে পরিবারের ধর্ম পালন করছে যদিনা ধর্মান্তরিত হয়| তাহলে একজন মানুষ কি করে মেনে নিচ্ছে যে পারিবারিক ভাবে যে ধর্ম তাকে পালন করতে হচ্ছে সেটাই তার জন্য উত্তম পথ?? কারণ সেটা সে নিজ বুদ্ধি-বিবেচনায় গ্রহণ করেনি, সে বংশানুক্রমিক ভাবে পেয়েছে| আর যদি কোনো ভাবে তার ধর্মকে সে প্রশ্নবিদ্ধ না করতে পারে তাহলে সে অন্ধ অনুসরন করে চলেছে, কোনো ধার্মিক মানুষকে আজ পর্যন্ত আমি তার ধর্মের খারাপ দিক বলে যে কিছু থাকতে পারে সেটা নিয়ে বলতে শুনিনি, বরং সবার কাছেই নিজ নিজ ধর্ম সেরা| তাহলে এই যে প্রচ্ছন্ন যৌক্তিকতার অভাব সেখানে কেউ আলোচনায় আগ্রহী নয়, বরং নিজ নিজ মতবাদ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী| একই ভাবে "ধর্ম" প্রচলিত সমাজে যেভাবে পালন করা হচ্ছে এই ধারণাটিও কি প্রশ্নের উর্ধ্বে?? মোটেই নয়|

এরকমই যেকোনো ধারণা, যখন কোনো ব্যাক্তি, যুক্তির বাইরে থেকে অনুসরন করে চলে, কিংবা প্রশ্ন করতে অনাগ্রহী হয়, তাহলে সেখানে জন্ম নেয় গোয়ার্তুমির বা অন্ধ বিশ্বাস এর| জাতীয়তাবাদও এর উর্ধ্বে নয়, এর যেমন ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে| তাই এই ধারনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবেনা এমন মনে করিনা, বরং যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে এর ক্ষতিকর দিকগুলোও উঠে আসা উচিত।

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দুর্দান্ত এর ছবি

" যেকোনো ধারণা, যখন কোনো ব্যাক্তি, যুক্তির বাইরে থেকে অনুসরন করে চলে, কিংবা প্রশ্ন করতে অনাগ্রহী হয়, তাহলে সেখানে জন্ম নেয় গোয়ার্তুমির বা অন্ধ বিশ্বাস এর| জাতীয়তাবাদও এর উর্ধ্বে নয়, এর যেমন ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে| তাই এই ধারনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবেনা এমন মনে করিনা, বরং যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে এর ক্ষতিকর দিকগুলোও উঠে আসা উচিত।"

সঠিক।

তানিম এহসান এর ছবি

বেশ চিন্তা জাগানিয়া লেখা।

একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়।

নৃবিজ্ঞানের (ব্যাকবেঞ্চি যদিও) ছাত্র হিসেবে এটাকে শুধুমাত্র পুঁজিবাদ কিংবা আমলাতন্ত্রের সাথে মিলিয়ে দেখলে খুব বেশি সরলীকরণ বলে মনে হচ্ছে, আবার এটাও মনে হচ্ছে যে আপনি একটা ফোকাস থেকে লেখাটাকে গোছাতে চেয়েছেন।

জাতীয়তাবাদ একটি ধর্মের নাম, আসলেই কি শুধু তাই? জাতি তার নৃতাত্ত্বিক পরিচয়েও এমনকি তার আরো সব স্বাজত্যবোধের কথা বলে কিন্তু সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ব বলে নৃতত্ত্বেরই যে শাখাটি আছে সেটি কিন্তু মানুষ কিংবা জাতিকে একটা অনন্যতার পরিসর দেয় - এখানে শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয় তার সামগ্রিক ’অনন্য’ অস্তিত্বকে খুব বেশি সুযোগ নাও দিতে পারে।

শুধুমাত্র ধর্মের গণ্ডীতে ব্যাখ্যা করলে ’ধর্ম’ বিষয়টাকেও একটা বড়সড় ছাড় দেয়া হয়ে যায়; কেন যেন মনে হচ্ছে এতে করে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর (টোটেম নির্ভরও হতে পারে) অস্তিত্ব একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পরে যেতে পারে। আর শুধুমাত্র পুঁজিবাদ দিয়েই কি মানুষের অভিন্ন অস্তিত্বের বোধ কে ব্যাখ্যা করা যাবে পুরোপুরি? বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের আজকের যে জাতিগত অস্তিত্ব তাতে পুঁজিবাদের আগ্রাসন কিন্তু আমাদের জাতিগত চরিত্রকে পুরোপুরি ধারণ করেনা, বরং জাতিগত চরিত্রের একটা ক্রমবর্ধমান বিপন্নতাকেই নির্দেশ করে বলেই আমি মনে করি। নাকি আপনি পুঁিজবাদ কে একদম আদিপর্ব থেকে ধরে দেখছেন ..।

আপনার লেখায় কোথাও আপত্তি করছিনা, আলোচনা চালিয়ে যেতে ভালো লাগবে। আপনার এইরকম একটা প্রশ্ন উত্থাপন নিশ্চয়ই অনেক চিন্তার সম্মিলিত ফসল ... দেখা যাক কোথায় যেয়ে দাড়াই আমরা হাসি

নাড়িয়ে দেয়া অব্যাহত থাকুক হাসি .... ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্য়বাদ। আপনি যে বুঝতে পেরেছেন কেন আমি কিছুটা মোটাদাগ কথা বলেছি, সেটা ভাল লেগেছে।

"বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের আজকের যে জাতিগত অস্তিত্ব তাতে পুঁজিবাদের আগ্রাসন কিন্তু আমাদের জাতিগত চরিত্রকে পুরোপুরি ধারণ করেনা, বরং জাতিগত চরিত্রের একটা ক্রমবর্ধমান বিপন্নতাকেই নির্দেশ করে বলেই আমি মনে করি।"

এরকম একটা ভাবনাই এই পোস্ট এর শান-এ-নূযুল বলতে পারেন। তবে পুঁজিবাদের সাথে আগ্রাসন কথা ব্য়াবহার করা চাইতে বরং এর প্রসার বলতে আমি বেশী আগ্রহী। আমাদের পুজিবাদ বাইরে থেকে আসা কোন আগ্রাসী শক্তি নয়। পুঁজিবাদ আমাদেরই নিজস্ব জিনিস। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে রপ্তানি বানিজ্য় কেন্দ্র। পুঁজিবাদ আমাদের মজ্জায় মজ্জায়।

আবারো ধন্য়বাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

প্রসার-আগ্রাসন কিংবা মজ্জাগত - এই জায়গাগুলোতে আমি দ্বিমত করবো। পুঁজিবাদের প্রসার ঘটেছে অনেক আগেই, আগ্রাসন শুরুর ইতিহাস কিন্তু খুব পুরাতন নয় - আমি বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপট এর কথা বলছি।

আমরা যেসব তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট নিয়েই দেখতে যাইনা কেন, তত্ত্বগুলো কিন্তু সার্বজনীন হিসেবেই এসেছে - সম্পূর্ণ নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে তার আনুপাতিক সাযুজ্য নিয়ে কেউ ভাবেনা। এই নিয়ে আমাকে নিজের বিভাগে কম ঝামেলায় পড়তে হয়নি, এখনও যে ঝামেলা নেই তাও বলবোনা। এই কথাটা এই কারণে বললাম কারণ পুঁিজবাদ এর যে ধারণায়ন নিয়ে আমরা চলি তার প্রায়েগিকতার জায়গায় আমাদের ইতিহাস সম্পূর্ণ অনন্য একটা প্রেক্ষাপট। কেন বলছি একথা? কারণ, এই সেদিনও আমাদের পুঁিজ বলতে ছিলো আত্মীয়তা, যৌথতা আর রেসিপ্রোসিটি (বাংলা মনে পড়ছেনা রেসিপ্রোসিটি’র); রেসিপ্রোসিটি’র মুল জায়গাটাতেই এখন পুঁজিবাদ আগ্রাসী রূপ নিয়েছে বাংলাদেশে, দেনার পরিমাণ বাড়ছে সবার চক্রবৃদ্ধি হারে।

সহজভাবে দেখলে ’পুঁজি’ অবশ্যই আমাদের মজ্জাগত কিন্তু সেটা শুধুমাত্রই ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠী স্বার্থকে রিপ্রেজেন্ট করে, এখানে এসে যদি আপনি জাতীয়তাবাদকে পুঁিজ হিসেবে দেখার সাহস করে ফেলেন তাহলে বলবো ’বাহ’ (এখন আমার তাই মনে হচ্ছে কিন্তু) হাসি -- এই চমৎকারিত্ব কিন্তু একটা সূক্ষ্ম সুতোর উপর ঝুলে আছে এবং পুরো বিষয়টা নির্ভর করবে আপনি সবশেষে কোথায় যেতে চান তার উপর। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি একটা আলোচনার সূত্রপাত ঘটালেন মাত্র, তাই হোক।

শুধু একটা অনুরোধ, প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীগুলোর (মান্দি, মারমা, মুরং, হাজং ...) জন্য জাতীয়তাবাদ তাদের জাতিগত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র অবলম্বন, এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমাদের বাংলাদেশের জন্যেও সেটা ভয়ংকর রকম গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদকে মিলিয়ে একটা উপসংহারে পৌঁছুনর চেষ্টাই যদি আপনি শুরু করে থাকেন তাহলে বলবো আপনার হাইপোথিসিস এর মুল অনুষঙ্গের জায়গাটা হয়তো আরো একটু পরিপূরক ভাবতে পারে। ধর্মের কল নিয়ে আমরা বহুদূর পর্যন্ত ধর্মব্যবসায়ীদের সাথে লড়াই করতে পারি, জাতীয়তাবাদ নিয়ে যারা ব্যবসা করে তাদের সাথে এই নিয়ে লড়াইয়ে জাতীয়তার সাংস্কৃতিক চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ হোক, সেখানে ধর্ম জড়িত হয়ে গেলে জাতীয়তাবাদ ব্যবসায়ীরা বক-ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে একটা অসাধারণ অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে একদম প্রথমেই।

আপনার প্রস্তাবিত প্রপঞ্চটা আমাকে বেশ আনন্দ দিচ্ছে ভাবনার জায়াগয়, ফোকাসটা যেন হারিয়ে না যায়।

জাতীয়তাবাদকে পুঁিজ করে যারা ব্যবসা করে তাদের জন্যে একরাশ ঘৃণা রেখে গেলাম।

স্বাধীন এর ছবি

জাতীয়তাবাদ আর ধর্মকে শুধু এককভাবে তুলনা করাটা ঠিক হলো না। কারণ উপরে পিপি'দার মন্তব্যে যেমন বলেছি জাতীয়তাবাদ, মানবতাবাদ, গণতন্ত্রবাদ, কিংবা সমাজতন্ত্রবাদ থেকে শুরু করে সকল মতবাদ/আদর্শই একেকটি ধর্ম। আরো সুস্পষ্ট করে বললে সকলেই একেকটি "মিম"।, এখন যেকোন মিমের মতো ধর্ম যেমন নিজেকে অন্যের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে জাতীয়তাবাদ কিংবা মানবতাবাদ সহ সকল মতবাদই নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আপনি যেমন নিজের ধারণাটিকে, নিজের চিন্তাটিকে, বা আদর্শটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন অন্যেরাও তাদের আদর্শটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই শুধু ধর্ম কিংবা জাতীয়তবাদকে এককভাবে দোষ দেওয়া হলে সেটা ফ্যলাসি হবে।

এখন কথা উঠতে পারে তাহলে কোন "মিম"টি ভালো বা খারাপ সেটা কিভাবে বিবেচিত হবে? আমার মতে সেটা বিবেচিত হবে কোনটা প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিকে থাকে তার উপর। সময়ের প্রয়োজনে, টিকে থাকার প্রয়োজনে একেকটি মিমের উদ্ভব হয়। মানুষই এই মিমগুলো ধারণ করে তার প্রয়োজনে আবার মানুষই সেগুলো বর্জন করবে, কিংবা পরিমার্জন করবে নিজেদের প্রয়োজনে। ধর্ম নিশ্চয়ই একসময় অপরিহার্য ছিল তাই মানুষ ধর্মকে লালন করেছে। কিন্তু আজ বহু মানুষ ধর্ম পালন না করেও চলতে পারছে, তাই তাদের কাছে ধর্মের মিমের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গিয়েছে। একই কথা প্রযোজ্য জাতীয়তাবাদ, মানবতাবাদ থেকে শুরু করে সকল মতবাদের ক্ষেত্রে। অনেক দিন আগে মুক্তমনায় এই প্রসঙ্গে একটি লেখা লিখেছিলাম "জিন এবং মিম"।, আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।

আমার কাছে মনে হয় অন্যান্য প্রাণী গোষ্ঠীর তুলনায় মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পেছনেও রয়েছে এই "মিম" এর বিশাল অবদান। অন্যান্য প্রাণী গোষ্ঠী যেখানে কেবলমাত্র জিনের প্রতিলিপি তৈরি করে সেখানে মানুষ জিনের প্রতিলিপির সাথে মিমেরও প্রতিলিপি তৈরি করে। জিনের মিউটেশান যেখানে খুব ধীর গতির, মিমের মিউটেশান সেখানে দ্রুত গতির। যে কারণেই বিবর্তনের এক দম শেষ দিবসে এসে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হলেও খুব সহজেই মানুষ অন্যান্য জীব গোষ্ঠি্কে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে হুর হুর করে, এবং এ সম্ভব হয়েছে মস্তিষ্কের এই মিমের প্রতিলিপির ফলেই। মানুষ তার পূর্ব-অভিজ্ঞতায় অর্জিত জ্ঞান তার পরবর্তী জেনেরাশানে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, এবং ছড়িয়ে দিতে পেরেছে অন্যান্য মানুষের মাঝেও।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক। আলোচনা, পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজের ধারনাটাকে সম্বৃদ্ধ করতে পারবো, আশা করছি।
শিক্ষাকাল > 'দোলনা থেকে কবর (মৃত্যু) পর্যন্ত'।

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্য়বাদ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

সাম্প্রদায়িকতাবাদ ও জাতীয়তাবাদ দুটোকে আলাদা বিষয় হিসেবে দেখছি। সম্প্রদায় গড়ে উঠে ধর্মকে কেন্দ্র করে বা, কোন বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে; যেমন: মুসলিম সম্প্রদায়, খ্রীস্টান সম্প্রদায়, হিন্দু সম্প্রদায় ইত্যাদি। সম্প্রদায়গুলোর সমস্যা হলো এরা গায়েবী বিষয়ে বিশ্বাস করে; প্রমানিত বৈজ্ঞানিক সত্যের বাইরে এরা নিজেদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বড় করে দেখে; এমনকি প্রকৃত ন্যায় নীতিবোধও ধর্মগ্রন্থের কথার কাছে ফেল মেরে যায়। ধর্মভিত্তিক জাতীয়বাদ ধারনাটাই ভুল; তাহলে সাম্প্রদায়িকতা কোথায় যাবে!
জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠে বৃহত্তর পরিসরে রাষ্ট্র ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়কে কেন্দ্র করে; এখানে ধর্মের অবস্থান দুর্বল। যেমন ধরুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে রাষ্ট্রভিত্তিক এক জাতি ধারণা। অথবা, বাঙালী জাতীয়তাবাদ; ধর্ম অঞ্চল নির্বিশেষে এক বাঙালী জাতিভিত্তিক চেতনা।
জাতীয়তাবাদ ধারনাটি রাজনৈতিক ও নৃতাত্তিক। অনেকেই দ্বিতীয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধংসযজ্ঞকে জাতীয়তাবাদের কুফল হিসেবে দেখেন। এখানে, দোষটি জাতীয়তাবাদের নাকি, কতিপয় ব্যক্তির মস্তিষ্কপ্রসূত ভ্রান্ত ধারনার অমানবিক ফসল সেটি দেখার বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দায় জাতীয়তাবাদ ধারনার উপর চাপাতে পারা যায় না। থার্ড রাইখের জার্মান জাতীয়তাবাদের ধারনার দায় পুরো জাতীয়তাবাদের ধারনাকে কলুষিত করে না বরং এর দায় কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের।
ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের বড় পার্থক্য হলোর- ধর্ম গায়েবী বিষয়ের ধারনা থেকে আসে, ধর্মগ্রন্থগুলোর বাণী সেটি ভাল হোক বা, খারাপ হোক চুড়ান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ কোন গায়েবী বিষয়জনিত ধারনা নয়। ন্যায় নীতি নির্ভর বাস্তব যুক্তির নিরিখে জাতীয়তাবাদের বির্বতন চলে।
জাতীয়তাবাদ কোন অন্ধবিশ্বাস বা, অপরিবর্তনযোগ্য কোন একক ধারনা নয়। ন্যায়বোধ, যুক্তির নিরিখে, সময়ের প্রয়োজনে জাতীয়তাবাদের ধারনা পরিবর্তিত হবে।
জাতীয়তাবাদকে ধর্মের মত পিছুটান কোন বিশ্বাস বা, প্রশ্নাতীত কোন বিষয় মনে করা অমূলক।

অরফিয়াস এর ছবি

থার্ড রাইখের উত্থানের পেছনের কাহিনী কি জাতীয়তাবাদের উগ্রতা নির্দেশ করে?? নাকি একটি বিপন্ন জাতীয়তাবোধকে শক্তিশালী করতে গিয়ে অন্ধের মতো অনুসরন করার ফল হচ্ছে থার্ড রাইখের হত্যাযজ্ঞ বা সারা বিশ্বকে দলিত করার চিন্তা?? প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, হিটলার এর মতো রাজনৈতিক নেতার উত্থানের পেছনে কিন্তু অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে দেশের বিপন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা| হিটলার এর শৈশব এবং তার ধ্যান ধারণা থেকে কখনই কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রমান মেলেনা, কিন্তু পরিণত বয়সে তার এই জাতীয়তাবোধ ও নিজের জাতিকে সবার থেকে উঁচুতে বসানোর ধারণা কিন্তু নাজী উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়| তাহলে এটা কি এরকম নয় যে জাতীয়তাবাদ ও এমন একটা জিনিস যা অন্ধের মতো অনুসরন করলে শেষ পর্যন্ত ধর্মীয় মৌলবাদ হতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতার মতই ফল দেয়?? সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে কি জাতীয়তাবাদের সাথে ধর্মের মিল পাওয়া যাচ্ছেনা??

আর থার্ড রাইখের ফলে রাশিয়াতে যে অত্যাচার করেছে হিটলার এর সৈন্যবাহিনী এর জবাবে রাশিয়া যখন জার্মানি অধিকার করে নিলো তারাও কিন্তু সমান ভাবেই খুন-ধর্ষণ-নির্যাতন করেছে, এটা কিন্তু তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, তাই রাশিয়া কিংবা অন্য দেশগুলোও কি নিজেদের উগ্র প্রতিক্রিয়ার অভিযোগ থেকে মুক্ত??

এছাড়া ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানি যে একটি ভঙ্গুর জাতিতে পরিণত হয়েছিল এর পেছনে কি পাশ্চাত্য দেশগুলোর কোনো দায় নেই?? হিটলার এর মতো উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতার আদর্শ তৈরী করার পেছনে তো অনুঘটক হিসেবে এগুলোই কাজ করেছে, আর তার পেছনে সাধারণ জনগনের সমর্থন ছিলো তখন| নিজেদের জাতীয়তাবোধকে রক্ষা করতে হিটলারকে অনুসরণ করেছিলো সাধারণ মানুষ। তাহলে কি একই ভাবে নিজের ধর্মকে রক্ষা করতে গিয়ে ধর্মযুদ্ধ নামের ক্রুসেডে জড়িয়ে পড়েনি মানব সভ্যতা??

যদি হিটলার এর নাজী বাহিনীর কারণে ঘটা ২য় বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদের উধাহরণ ও মানব সভ্যতার চরম ক্ষতিকর দৃষ্টান্ত হয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সমাজতন্ত্র দমনে ভিয়েতনাম অভিযানে লক্ষ্ লক্ষ্ মানুষকে নাপ্লাম বোমা ফেলে পুড়িয়ে হত্যা করার মতো জঘন্য দৃষ্টান্তকে কি বলবো?? হিটলার এর কর্মকান্ড থেকে এটা কি কোনো অংশে কম??

জাতীয়তাবাদ কোন অন্ধবিশ্বাস বা, অপরিবর্তনযোগ্য কোন একক ধারনা নয়। ন্যায়বোধ, যুক্তির নিরিখে, সময়ের প্রয়োজনে জাতীয়তাবাদের ধারনা পরিবর্তিত হবে।

সময়ের প্রয়োজনে বিপন্ন জাতীয়তাবোধকে রক্ষা করতে যে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্পত্তি এটাও তো একধরনের সময়ের চাহিদায় পরিবর্তিত ধারণাই বলা যায়|

তাই জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সাথে তুলনা করা কি খুব একটা বেখাপ্পা শোনায়??

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দুর্দান্ত এর ছবি

" ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের বড় পার্থক্য হলোর- ধর্ম গায়েবী বিষয়ের ধারনা থেকে আসে, ধর্মগ্রন্থগুলোর বাণী সেটি ভাল হোক বা, খারাপ হোক চুড়ান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ কোন গায়েবী বিষয়জনিত ধারনা নয়। ন্যায় নীতি নির্ভর বাস্তব যুক্তির নিরিখে জাতীয়তাবাদের বির্বতন চলে।"

তাহলে পাকিস্তানিরা যে তাদের 'কওম' এর ধারণাকে চুড়আন্ত ধরে নিয়ে ত্রিশলক্ষ প্রাণ নিয়ে নিল? সেখানে কি ধরণের "ন্যায় নীতি নির্ভর বাস্তব যুক্তির নিরিখ" ছিল বলে আপনি মনে করছেন? নাকি সেটাও "কতিপয় কতিপয় ব্যক্তির মস্তিষ্কপ্রসূত ভ্রান্ত ধারনার অমানবিক ফসল" বলে মেনে নিতে হবে?

কালো কাক এর ছবি

জাতীয়তাবাদ'ও একটি ধর্ম , অবশ্যই। ধর্মীয় মৌলবাদ যেমন ক্ষতিকর মৌলবাদি জাতীয়তাও তেমনি ক্ষতিকর। কট্টর জাতীয়তাবাদের ক্ষতির উদাহরণ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো আছেই। খুব সাম্প্রতিক উদাহরণ খুঁজলে ভারতীয়রা যখন সীমান্তে বাংলাদেশি শিশুকিশোরদের কোমরে প্রাণঘাতি অস্ত্র খুঁজে পায় সেটাকেও আনা যায়। তাদের মৌলবাদি জাতীয়তাবাদই আমাদের দেশের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া নিরীহ শিশুদেরকেও তাদের চোখে সন্ত্রাসী দেখায়।
শান্তিপূর্ণ ধর্ম পালনে কোন ক্ষতি নাই, শান্তিপূর্ণ জাতীয়তাবাদেও ক্ষতি নাই যতক্ষণ না সেটা অন্যের ক্ষতির কারণ হয় বা অন্যের ক্ষতি দেখলেও চোখে ঠুলি পরিয়ে দেয় ।

দুর্দান্ত এর ছবি

"শান্তিপূর্ণ জাতীয়তাবাদ"

এইটা কি জিনিস ভাই?

দ্রোহী এর ছবি

আগে বলেন কোন জাতীয়তাবাদ, বাঙালি না বাংলাদেশি? চোখ টিপি

দুর্দান্ত এর ছবি

আমি আপাতত দক্ষিণ ঢাকাইয়া জাতীয়তাবাদে ঈমান এনেছি। ইয়া হাবিবি।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তাই? হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দুর্দান্ত এর ছবি

তাই না?

যুধিষ্ঠির এর ছবি

হুম। এভাবে আগে ভাবি নি যে প্রগতিশীলতা বা মুক্তচিন্তার সাথে জাতীয়তাবাদের ধারণাটা সাংঘর্ষিক হতে পারে। অনেকটা ধর্মভীরু বৈজ্ঞানিক, প্রগতিশীল ধার্মিক - এ রকম ধারণার মত। আমার কাছে মনে হয়, মূল সমস্যাটা হয় গোত্রবদ্ধতা নিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা (সুপিরিয়রিটি বা অন্য কোন) কমপ্লেক্সের কারণে। মানে, আপনি আমার মত না তাই আপনি নিকৃষ্ট - এ ধারণাটা ছড়িয়ে পড়ে আর সমস্যাটা শুরু হয়। সেটা ধর্মে হয়, জাতীয়তাবাদে হয়। ব্লগে হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে তো হামেশাই হয়, বিভিন্ন মাপে।

কাজি_মামুন এর ছবি

প্রথমেই দুর্দান্তকে দুর্দান্ত পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। আমি সচল বা হাচল হলে অবশ্যই প্রিয়তে নিতাম।
জাতীয়তাবাদ (যা আমার অনেক দিনের আগ্রহের বিষয়) নিয়ে একটি অসাধারণ আলোচনা হয়েছে এখানে। অসাধারণ বলার অর্থ এই নয় যে, আমি কোন মতবাদে বিশ্বাস করি। আসলে এইসব আলোচনা চিন্তা জাগায়; এই সব লেখা পড়ার পর নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ মনে হয়।

একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়।

ভাইয়া, লাইনটা খুব মনে ধরেছে। মনে হয় দুর্দান্ত একটা ব্যাখ্যা আছে। যদি একটু পরিষ্কার করে দেন, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।

ছাপানো বক্তব্য যত সহজে সম্প্রসারিত হতে থাকে, জাতীয়তাবাদ ততই গভীর হতে থাকে। ঠিক যেমন আসমানি কিতাবগুলো ছাপানো হয়েছিল বলেই অনেকগুলো ধর্ম এখনো বেঁচে আছে।

অসাধারণ! কিন্তু অনেকেই আছে যারা আসমানি কিতাবকে অস্বীকার করে নিজেদের সংস্কারহীন ও প্রগতিশীল ভাবেন; কিন্তু মনের ভিতর পুষে রাখেন উগ্র জাতীয়তাবাদের বিষ-বাষ্প।

ইতিহাসে যেমন মানুষ শিয়া-বাহাই বা ক্ষত্রিয়-জৈন বা ক্যাথলিক-জেন্টাইল হিসাবে জন্মাত, এখন আমরা জন্মাই একটি দেশের নাগরিক হয়ে।

হ্যাঁ, ভাইয়া, আমি এই বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন থেকেই ভাবছি; অনেককে প্রশ্নও করেছি। কিন্তু অনেক প্রগতিশীল লোকও শেষপর্যন্ত জাতীয়তাবাদের মোহ থেকে বের হতে পারেনি (যেমন আমিও পারি না বেশীরভাগ ক্ষেত্রে)। বিষয়টি আমার মাথায় আসে, ডক্টর ইউনুস নোবেল পেলেন যখন। ঠিক এক বছর আগে পেয়েছিলেন ওয়াঙ্গারি মাথাই (সদ্য প্রয়াত) আফ্রিকার গ্রিন রেভুলেশনের জন্য। আমার প্রশ্নটা ছিল, কেন আমি ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তিতে খুশী হয়েছিলাম? মাথাইয়ের প্রাপ্তিতে নয় কেন? ইউনুস অনেক বড় কাজ করেছেন ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে; কিন্তু মাথাইয়ের কাজও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না বিশ্ববাসীর জন্য। তাছাড়া, আমি বাংলাদেশী হলেও ইউনুসের কাজের সরাসরি প্রভাব আমার উপর নেই, যেমনটা নেই মাথাইয়ের কাজের প্রভাবও। তারপরও এটাই তো বাস্তব, আগের বছর মাথাইয়ের পরিবর্তে ইউনুস পেলে আমি বেশী খুশি হতাম। এমনকি, ২০১২ সালেও বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত কম অবদান রাখা কোন ব্যক্তি যদি অনেক বেশী অবদান রাখা এক বিদেশীকে টপকে নোবেল পায়, আমার খুশির বাঁধ ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু আমার এই খুশী কি বিশ্বের সামগ্রিক স্বার্থের জন্য ভাল হল? এটাই কি জাতীয়তাবাদ? ভাইয়া, এই জাতীয়তাবাদ কি উগ্র? উগ্র না হয়েও জাতীয়তাবাদ কি খারাপ হতে পারে অথবা পারে না?

আজকে একটি দেশের পতাকা বা স্মৃতিসৌধ অতীতের ক্রুশ বা মহামানবের চুল-নখের মতই শক্তিশালী প্রতীক।

অসাধারণ, ভাইয়া। জাতীয়তাবাদের স্বরূপ বোঝার জন্য বা চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য আপনার এই বাক্য আমি আমার উদ্ধৃতির খাতায় জমিয়ে রাখলাম। ব্যবহার করব আপনাকে উদ্ধৃত করেই।

আবারো বলছি, আমি কোন বিশেষ পক্ষ থেকে লিখিনি। ব্রেইন স্টর্মিংই আমার লক্ষ্য। বুঝতে চাই। মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ঝালাই করতে চাই। ভাল থাকবেন, ভাইয়া।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বিশাল আলোচনা চক্র মগজে ব্যাপক ঘোরপ্যাচ লাগাতে শুরু করলে অর্ধেকে ক্ষান্ত দিলাম।

জাতীয়তাবাদ বিবর্তনের ধারায় ধর্মে রূপ নিতে পারে একসময়। তেমন অবস্থা দাড়াতে পারে রাজনৈতিক দলেরও। দুশো বছর পর হয়তো এই অঞ্চলের প্রধান দুটি ধর্মের নাম হতে পারে বিম্পি আর আম্লিগ। নেতাদের মুখ নিসৃত বাণীসমূহ একেকটা হাদিসে রূপ নিতে পারে, বঙ্গবন্ধু বা জিয়া হয়ে যেতে পারেন দুজন পয়গম্বরের নাম। সেদিন একটা পোষ্টারে দেখলাম, ছাত্রলীগের এক চুনোপুটি নেতা রাঘব বোয়াল নেতাকে পোষ্টার ছাপিয়ে মুজিবীয় শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বুঝতে শুরু করলাম, চাকা ঘুরছে সময়ের

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।