লিটল ম্যাগের সংগ্রহ থেকে / সহবাস

ফকির ইলিয়াস এর ছবি
লিখেছেন ফকির ইলিয়াস (তারিখ: সোম, ২১/০৪/২০০৮ - ২:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাঝে মাঝে আমি আমার সংগ্রহের লিটল ম্যাগাজিন গুলোর
মধ্যে ডুবে থাকি। আজ ২০ এপ্রিল ০৮ রোববার।
পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট দখল করে রেখেছেন নিউইয়র্ক শহর।
তাই বাইরে বেরুতে মন চাইছিল না। কড়া নিরাপত্তার মাঝে
বের হতে অভ্যস্ত নই আমি কখনো।
হাতড়াতে গিয়ে একটা লিটল ম্যাগে নজর পড়লো।
সহবাস । সম্পাদক - হাসান মোরশেদ । চতুর্থ সংখ্যা।
জুন- সেপ্টেম্বর, দুই হাজার সাল।

এ সংখ্যায় ছিল ৫ টি গল্প। লিখেছেন , জাকির আহমদ চৌধুরী, হাসান মোরশেদ, ফারুক আহাম্মদ মেহদী, রিয়াদ আওয়াল, নজমুল আলবাব।
১ টি অনুবাদ গল্প , অনুবাদ করেছেন অর্ণা রহমান।
১টি প্রবন্ধ লিখেছেন , পলাশ দ্ত্ত।
কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের সাথে আলাপচারিতা করেছেন
পাপড়ি রহমান।
মাত্র ৩২ পৃষ্টার ছোট কাগজ। অথচ খুব পরিপুষ্ট।
হাসান মোরশেদ এর রুচিরা চরিত আবার ও পড়া হয়ে গেল।
হাঁ, তার গল্প -রুচিরা ও হাওয়ার নাবিকগণ।
পড়া হয়ে গেল নজমুল আলবাব এর - ব্যক্তিগত আখ্যান


দুটি প্রশ্ন উঁকি দিয়ে গেলো মনে।
১। গল্পকার রিয়াদ আওয়াল কি এখনো গল্প লিখেন ?
২। সহবাস - কি এখনো বের হয় ??


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আরিফ জেবতিকের লিখাটা আবার খুঁজে বের করে পড়লাম।
এখানে দেখুন।
কিছুক্ষনের জন্য অন্যজগৎ থেকে বেড়িয়ে আসা।
অভিনন্দন আপনাকে, ফকির ইলিয়াস ।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
জেবতিকের লেখাটা আগে পড়ি নি । এখন পড়লাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'সহবাস' ছিলো একদল স্বপ্নবাজ তরুনের আবেগী উদ্যোগ ।
ফকির ইলিয়াস তখনই মুলধারার পরিচিত কবি । মফস্বল থেকে (এখন নগর হলেও সে সময় তো সিলেট আসলে মফস্বলই ছিলো) প্রকাশিত ক্ষীনাঙ্গি এই কাগজ যে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন এবং আটবছর পর ও সংগ্রহে রেখেছেন- এই খবর জেনে 'সহবাস' পরিবারের একজন হিসাবে তাঁর প্রতি আমার অসীম কৃতজ্ঞতা ।

রিয়াদ আওয়ালের যখন 'সহবাস' এ গল্প লেখে তখন তার বয়স ১৮ থেকে ২০ এর কোঠায় । এখন সে বিদেশী ব্যাংকের ব্যস্ত এক্সিকিউটিভ ।

'সহবাস' পরিবারের প্রায় সকলেই দীর্ঘ শীতঘুমে ছিলাম। ঘুম শেষে কারো কারো জেগে উঠার চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে । আরিফ জেবতিক ও নজমুল আলবাবের বই প্রকাশ হলো এবারের মেলায় । পাঠক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে দুটোই । অর্জুন মান্না কবিতা লিখছেন ।

রিয়াদ আওয়াল ও এইভাবে জেগে উঠলে ভালো লাগতো,ভালো হতো
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সহবাস'এর সংখ্যাগুলো নিয়ে একটা ই-বুক করলে কেমন হয়? আমরা সবাই পড়ার সুযোগ পেতাম ।

সৌরভ এর ছবি

বন্ধু শিমুলের প্রস্তাবে আমার সমর্থন।

আলবাব ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো "সহবাস" নিয়ে স্মৃতিচারণ করা তার একটা পোস্টে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

ই-বুকের প্রস্তাবে বিপ্লব।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে।
হাঁ , ই বুকের প্রস্তাবটি আমিও সমর্থন করছি। সম্পাদক ও অন্যান্য
সহযোগীরা তা বিবেচনা করতে পারেন।
একটা আর্কাইভ হয়ে গেলে তা মাঝে মাঝে হাতড়ানো যাবে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কে বলে রে সেই প্রভাতে নেই আমি ...

জানলাম সহবাস রয়ে গেছে কোথাও না কোথাও । সিলেট শহরের তালতলার সেই জীর্ণ ড্রয়ারে , পোকা খাওয়া আরো কিছু বইয়ের সাথে ; অথবা নিউইয়র্কের কোন এক অট্টালিকায় কোন এক কবির বইয়ের তাকে ।

ধন্যবাদ ফকির ইলিয়াস , বড্ড স্মৃতিকাতর করে দিলেন এই বিষন্ন সন্ধ্যায় ।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

বিনা নোটিশে বাবা হঠাত্ ই চলে গেলেন ! তাঁর কান্ধে বসে বসে লাল পতাকা উড়ায় যে বালক,পৃথিবী জুড়ে এক যৌথ খামারের স্বপ্ন ভেঙে, নিজস্ব বেঁচে থাকবার লড়াই ; নৈঋতের আকাশ লাল করে তার পৃথিবীতে নেমে আসে সহসা !! মিছিলের বন্ধুদের টিপ্পনী , হৃদয়ের পাড়া-পড়সীদের উপহাস নিয়ে এক একটা সন্ধ্যা মনুর প্রবাহের সঙে মিশে কোথা থেকে কোথা যেন চলে যায় !
প্রান্ত খুঁজে না পাবার সেই দিনে , মদন মোহন কলেজের পাঁচ তলায় , একদুপুরে মোরশেদ,আরিফ, মান্না, মনিদের সঙে পরিচয় । বোধের অতলে একেবারে একলা আমি , নিঃস্ব আমি , কী ভীষণ আকুতি নিয়ে স্রোতে স্রোতে আবারো ভেসে উঠতে চাই ।
তেমনি একটা একলা রাতে কাঁদতে কাঁদতে , বিদ্যুতহীন , হ্যারিকেনে আলোয় কি যেনো লিখি , লিখে ফের অবুঝ শিশুর মতো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি !
সেই বেদনা-বিষাদে মাখামাখি লেখাটা মোরশেদ,আরিফরা ছাপায় ।
শ্মশান সন্ন্যাসের পদাবলী লিখে সেইদিন যেমন , এতোটা বছর পর আবার পড়তে বসলেও কেন জানি , চোখের জমিন ভিজে গিয়ে , বহ্যূত্ সবের দিকে নিয়ে যায় ।
ইলিয়াস ভাই ,সহবাসের গল্প লিখে আপনি আবার আর্দ্র করে তুললেন চরাচর !

---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

নজমুল আলবাব এর ছবি

আরও অনেক কিছুর মতো সহবাসও আমি যতন করে রাখিনি। নিজের যত্নই নিতে পারিনা আর কবেকার কোন ছোট কাগজ!

ইলিয়াস ভাই অনেক কিছুই মনে করিয়ে দিলেন...

সহবাস এর পর আর বেরুয়নি। এটিই তার মৃত্যুসংখ্যা। এই সংখ্যার সম্পাদক সম্ভবত অর্জুন মান্না। বিষ্ণুপ্রিয়া মণীপুরি ভাষা শহীদদেরকে উৎসর্গ করা হয় সংখ্যাটি। উৎসর্গপত্রটা লিখেছিলাম আমি। তখনও জানতামনা মণীপুরিদের ভেতরকার বিরাট দ্বন্দের খবর। কেন বিষ্ণুপ্রিয়াদের মণীপুরি বলা হলো সেটা নিয়ে ভালই কেচালে পড়েছিলাম। উত্তম নামের এক মাথাপাতলা ছিলো। সহবাস এর কান্ডারী টুকু'দার কাছে সে জানতে চাইলো কে লিখেছে এই উৎসর্গপত্র? তিনি বল্লেন, নজমুল আলবাব। সে বল্ল আলবাবরে সে পিটাবে। টুকুদা বল্ল তাইলে তুমি অপুর সাথে যোগাযোগ কর। সেসময় আমার মোটামুটি একটা বদনামের জিন্দেগানি ছিলো। উত্তম রোজ সন্ধায় প্রান্তিকের বারান্দায় আমাকে ধরে, স্বপনের চায়ের দোকানে চা খাওয়ায় আর আলবাব এর গোষ্টি উদ্ধার করে, সঙ্গে অশ্লিল ভাষায় বিষ্ণুপ্রিয়াদের বংশ লতিকা বর্ণনা করে। মোটামুটি সপ্তাহ দুয়েক রিহার্সেলের ফাঁকে ফাঁকে আমি উত্তমের চা বিস্কিট গিলেছিলাম। পরে সে অন্যকাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

রিয়াদ আমার পছন্দের গল্পকারদের একজন ছিল। এখন বেটা হাফ লাখ বেতনের এক্সিকিউটিভ, মাঝে মাঝে দেখা হলে সাম্প্রতিক শেয়ার বাজারের হকিকত জানায়। বন্ধুর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও বন্ধুর কর্পোরেট বউয়ের সাথে তার ভালই পিরিতি। গত বছর আমার পেট কাটা হলে সে আমারে দেখতে এসেছিলো, আর আমারে যখন প্রেরিত পুরুষদের বাহিনী কুত্তা দৌড়ানো দিচ্ছিলো তখন কেন এইসব দেশ উদ্ধার করি, আর ভেজালে পড়ি তা নিয়া বিস্তর বক্তব্য দিয়েছিল। সারাদিনই ইন্টারনেটে থাকে বেটা। কিন্তু ডিএসই কিংবা সিএসই'র সাইটে ঢুকতে যত আগ্রহ তার, ব্লগ সাইটের জন্য তার শতভাগের একভাগও নাই।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

রিয়াদ আওয়ালের ভার্চুয়াল জানাজা পড়া হোক ।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ফকির ইলিয়াসের এই লেখাটি সমস্ত লিটল ম্যাগিয়ানদের অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত! তাহলে যে উৎসাহ নিয়ে তারা কাজ করে চলছে, তাতে আবেগ আর স্বপ্ন দেখার আরো একটা নতুন জোয়ার কাজ করতে শুরু করবে। আর বুকের ভেতরে থাকবে বোধ, এই পৃথিবীতে কখনো সবকিছু পুড়ে খুড়ে শেষ হয়ে যায় না, কোথাও না কোথাও টিকে থাকে তার অবশেষ!
মহীরুহ উপড়ে পড়ে, কিন্তু তার বীজ থাকে মাটির ভিতর আশ্রিত, নতুন জলে শুরু হয় তার আবার বেঁচে ওঠার মহাস্নান...

--------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।