শিক্ষা নিয়ে কিছু জগাখিচুড়ি কথা

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৮/২০০৯ - ১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন তুলে রাফি একটি পোস্ট দিয়েছেন সচলায়তনে। প্রথমে ভেবেছিলাম এ প্রসঙ্গে রাফির পোস্টেই কিছু মন্তব্য জানাই। সেটা করতে গিয়ে দেখি মন্তব্যের আকার বিশাল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রসঙ্গান্তরে অনেক কথা বলা হয়ে যায়। যে কারণে রাফির মূল প্রসঙ্গগুলোকে কেন্দ্র করে এই পোস্টের অবতারণা।

×××××
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের শিক্ষা সেক্টরে যে যে কর্মকাণ্ড হচ্ছে, হোক সেটা বিতর্কিত বা প্রশংসিত, তার পুরোটাই হচ্ছে নির্বাহী আদেশের বলে। যেহেতু দেশে এখনও পূর্ণাঙ্গ কোনো শিক্ষানীতি নেই বা শিক্ষা-সম্পর্কিত কোনো গাইডলাইন নেই, তাই যখন যার কাছে যেটা ভালো বা সুবিধার মনে হচ্ছে, তিনি সেটাই তখন চাপিয়ে দিতে চাইছেন। শিক্ষার কার্যক্রমগুলো inter-related, বিশেষ করে এক স্তরের শিক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় স্তরেই প্রভাব ফেলে। দেশে আবার একাধিক স্তরের জন্য একাধিক শিক্ষা-কর্তৃপক্ষ রয়েছে। প্রাথমিক স্তরের জন্য সিদ্ধান্তগ্রহণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদের আবার ডিরেক্টরেট অব প্রাইমারি এডুকেশন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগ আছে। ফলে এই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে একাধিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা। একটি জেলা বা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার আনুষ্ঠানিক দিক নিয়ন্ত্রণ করছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তারা। সেখানেও ভাগ আছে। এই কর্মকর্তারা শুধু প্রশাসনিক দিক নিয়ন্ত্রণ করেন। ট্রেনিং বা অ্যাকাডেমিক দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর। অন্যদিকে উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর। মাধ্যমিক স্তরের জন্য শিক্ষা-নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে দায়িত্বে আছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং কলেজ পর্যায়ের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন তো রয়েছেই। তো, প্রতিটি কর্তৃপক্ষই নিজ নিজ সেক্টরের জন্য কাজ করে এবং একজনের কাজ অন্য সেক্টর বা স্তরের উপর কতোটা প্রভাববিস্তার করে সে বিষয়ে কারও কোনো চিন্তা বা মাথাব্যথা নেই। ফলে প্রতিটি পর্যায়ের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ যখন যে বিষয়টি চালু করতে চান, সেটি অন্য পর্যায় বা স্তরে কী প্রভাব ফেলবে, আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা বা শিক্ষার বর্তমান বাস্তবতায় সেটি চালু করা উচিত না, সেগুলো নিয়ে ভাববার অবকাশ পান না বা ভাবার প্রয়োজন বোধ করেন না। কেউ যদি প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তরের কোনো ধরনের (হোক সেটা কারিকুলাম, ম্যানেজমেন্ট, ট্রেনিঙ বা যে কোনো কিছু) ধারাবাহিকতা খুঁজতে যান, তাহলে তাকে হতাশ হতেই হবে।

×××××
Communicative English-এর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। ধারণাগতভাবে Communicative English একটি বেটার অ্যাপ্রোচ। কিন্তু কোন পর্যায় থেকে সেটি শুরু করা উচিত, কখন শেষ করা উচিত, এই অ্যাপ্রোচের সাথে গ্রামারের পার্থক্য কোথায়, কোন পর্যায়ে সেগুলোকে reduce করা উচিত- তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয় নি। নীতিনির্ধারণী মহলে যারা আছেন, তারা যে পর্যায়ে চালু করলে ভালো হবে বলে মনে করেছেন, হুট করে সেই পর্যায়েই চালু করে ফেলেছেন। ফলাফল ইতোমধ্যেই প্রদর্শিত। গ্রামারের বিষয়টিকে তারা মুখ্য মনে করেন নি কারণ এর আগে বহু বছর ধরে গ্রামারভিত্তিক ইংরেজি-বাংলা চালু ছিলো, কিন্তু সেখান থেকেও বলার মতো আহামরি কোনো ফল আসে নি। Communicative English দিয়ে অন্তত যোগাযোগ দক্ষতাটা বাড়বে বলে মনে করা হয়েছিলো, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আদপে পূর্বের-পরের দুটো পদ্ধতির কোনোটাতেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসে নি। মাঝখান দিয়ে সমস্যাটা পোহাতে হলো শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে প্রথম দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মারাত্মক সমস্যা পোহাতে হয়েছে।

কেন এই ব্যর্থতা? গবেষণা-টবেষণা করলে হয়তো নানা ফলাফল পাওয়া যাবে, কিন্তু সাদা চোখে দেখলে একটি সিস্টেম চালুর সময় সিস্টেম-রিলেটেড প্রতিটি বিষয় বা ব্যক্তিকেই আপডেটে করতে হয়। Communicative English তো বটেই, বাংলাদেশে কোনো পর্যায়েই সিস্টেম চালু করার সময় এই অবশ্য-পালনীয় কাজটা করা হয় না। এই যেমন গ্রেড পয়েন্ট চালুর বিষয়টি। সেখানে মার্কিং সিস্টেম বদলানো হলো, কিন্তু অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেম বদলানো হলো না। অবাক হলেও সত্য, বোর্ড থেকে পরীক্ষকদের যখন খাতা দেওয়া হয়, তখন এ সম্পর্কিত কিছুই বলা হয় নি বলে শোনা গেছে। খাতা দেখার জন্য বোর্ডের একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে, বছরের পর বছর ধরে একই গাইডলাইন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেখানে স্বামী/স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করলে খাতা না দেখার পরামর্শ দেওয়া আছে সত্যি কিন্তু অংকের তিন ভাগের দুই ভাগ হলেও যে নম্বর দিতে হয়, সে বিষয়ে কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা নেই।

×××××
গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে আমাদের মতো আম-পাবলিকেরও কিছু দোষ আছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, সবাই সবকিছু বুঝে না, বোঝার দরকারও হয়তো নেই। আজকে যদি এসএসসি বা এইচএসসিতে কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ ব্যবহার করা হতো, তাহলে কি অধিকাংশ মানুষ সেটা বুঝতো? আমার মনে হয় না। এই পদ্ধতিতে মিন নম্বর থেকে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত স্কোরকে বাদ দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ডিভিশন দিয়ে ভাগ করে তারপর গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। ফলে প্রত্যেকের রেজাল্ট সম্মিলিতভাবে সবার উপর নির্ভর করে। সবাই যদি ভালো রেজাল্ট করে তাহলে ৮০ পেয়েও সি পাওয়া সম্ভব, তেমনি সবাই খারাপ করলে ৪৫ পেয়েও এ পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় আইবিএতে একসময় এই সিস্টেম চালু ছিলো, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে চালু ছিলো, কিন্তু এখন বোধহয় দেশের আর কোথাও এটা চালু নেই। বর্তমান পদ্ধতির সাথে এই পদ্ধতির পার্থক্য হচ্ছে, বর্তমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী টু শিক্ষার্থীর পার্থক্যটা বৈজ্ঞানিক না, এই পদ্ধতিতে ইউনিট হিসেবে বিদ্যালয় টু বিদ্যালয়ের পারফরম্যান্স ভালোভাবে মাপা যায়। কিন্তু কিউমুলেটিভে শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্সটা অনেকটাই যথাযথভাবে মাপা যায়। সেক্ষেত্রেও অবশ্য কিছু সমস্যা থাকে। এক বিষয়ের সাথে অন্য বিষয়ের পারফরম্যান্স তুলনা করা যায় না। তুলনা করতে হলে সার্বিকভাবে একটি মিন নম্বর ধরে নিতে হয় এবং তার সাথে স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশনটা কতো হবে, সেটি প্রি-ডিটারমাইন্ড থাকতে হয়। না হলে বাংলার অ্যাসেসমেন্টের সাথে অংকের অ্যাসেসমেন্টে ভ্যারিয়েশন চলে আসতে পারে।

যা হোক, শুনেছিলাম, দেশে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর সময় এই পদ্ধতি নিয়ে ভাবা হয়েছিলো কিন্তু আমজনতাকে বুঝাতে ধকল পোহাতে হবে বলে তারা আর এটার দিকে আগান নি। এমনিতেই যে সমালোচনা হয়, এরকম কিছু করতে গেলে তো আন্দোলন হয়ে যাবে। আমজনতার আর দোষ কি, আইবিএ বা আইইআরে যখন এ পদ্ধতি চালু ছিলো, তখন নাকি অনেক শিক্ষকও এটা সম্পর্কে ভালো জানতেন না।

×××××
সরকার পদ্ধতি বদলের সাথে অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেম বা কারিকুলাম বদলেরও সম্পর্ক আছে। থাকতেই হবে। সরকার ব্যবস্থার সাথে যদি আদর্শের পরিবর্তন ঘটে তাহলে তো এমনিতেই বদলাবে, না হলে নতুন প্রজেক্ট গ্রহণ করার জন্য হলেও বদলাতে হবে। পূবর্বতী সরকারের সব বই-কারিকুলাম রাখা হলে নতুন প্রজেক্ট আসবে না, নতুন প্রজেক্ট না আসলে ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না। সরকার পদ্ধতির সাথে শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তনটা আরেক দিক থেকে রিলেটেড। বিএনপি সরকার আসলে সবসময়ই ধর্মব্যবস্থা-সম্বলিত শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের হিড়িক পড়ে যায়, বিশেষ করে জামায়াতী চাপে এটা করতেই হয়। আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেও কাটছাট করতে চায় না। এছাড়া বঙ্গবন্ধু-জিয়ার চেতনা বাস্তবায়নের নামে আদেখলাপনা তো আছেই!

খুবই অবাক লেগেছিলো যখন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স-সিস্টেমের প্রবর্তন করা হয়েছিলো। যে কথাটা শুরুতে বলেছিলাম, এক স্তরের শিক্ষার প্রভাব অন্য স্তরে পড়ে, সেটা ভেবে দেখা হয় নি বলেই এখানেও সমস্যা তৈরি হয়েছিলো। প্রত্যেকটি সরকারেরই উদ্দেশ্য থাকে তার সময়ে ভালো পড়ালেখা হয়েছে সেটা দেখানো। এর জন্য পাঁঠা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় এসএসসি ও এইচএসসির শিক্ষার্থীদের। সারা দেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে পরিমাণ সিট আছে, গণহারে জিপিএ ৫ দিয়ে সবাইকে প্রমোশন (শব্দটা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহৃত, মূল্যায়ন লিখতে পারলে খুশি হতাম) দেওয়া হলে অরাজকতা যে সৃষ্টি হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।

×××××
তবে এ বছর থেকে সরকার প্রাথমিক স্তরে যে সমাপনী পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছে, আমি সেটার পক্ষে। কারণ একাধিক। তার আগে বলে নেওয়া ভালো যে, সরকার মোটামুটি ভেবেচিন্তে বেশ কয়েক বছর পাইলটিং করে তবেই এটা চালু করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার দেশের বিভিন্ন জেলায় এই সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে আসছে। আগে যেটা বৃত্তি পরীক্ষা ছিলো, এবার থেকে সমাপনী পরীক্ষার ফলে সেটা আর থাকছে না।

এর ফলে প্রথম যে উপকার হবে সেটা হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। দেশে গুণগত শিক্ষা সম্পর্কে অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু গুণগত শিক্ষা যে কী বস্তু, সেটা এখনও আইডেন্টিফাইড হয় নি। ফলে পরীক্ষার ফলাফলকেই গুণগত শিক্ষার একমাত্র সূচক বলে অনেকে ধরে নেন। এতোদিন পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই সূচক থাকলেও প্রাথমিকে ছিলো না। ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার মান নিয়ে কোনো কংক্রিট কথা বলা যেতো না। এডুকেশন ওয়াচ প্রজেক্টের আওতায় এ সম্পর্কিত কিছু কাজকর্ম হলেও সেগুলো যেহেতু কনটেন্ট বেজড না হয়ে টার্মিনাল কম্পিটেনসি বেজড, সুতরাং সাধারণের কাছে সেগুলোর ফলাফল বা প্রভাব ততোটা পড়ে নি।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বৃত্তি পরীক্ষাটা উঠিয়ে দেওয়া। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রচুর লাভ হবে। বৃত্তি পরীক্ষায় একটি বিদ্যালয় থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হতো। এতে বাকি ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রতি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলা ছিলো, সেটা অন্তত দূর হবে। তাছাড়া চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক সময় খুব দুর্বল শিক্ষার্থীদের উঠতে দেয় না, পঞ্চম শ্রেণীর দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর দেওয়া হয় না ইত্যাদি অনেক অভিযোগ ছিলো। সেগুলো দূর হবে। পাশাপাশি বৃত্তি পরীক্ষার নামে ভালো শিক্ষার্থী-খারাপ শিক্ষার্থী ইত্যাদি বিভাজন তৈরি করে তাদের মধ্যে হীনমন্যতা সৃষ্টি করার অভিযোগটি তো পুরনো।

সমাপনী পরীক্ষায় সবাই পরীক্ষা দেওয়ার ফলে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর প্রতিই সমান নজর দিতে হবে। সমাপনী পরীক্ষা কীভাবে হবে, খাতা দেখা কীভাবে হবে, কীভাবে ফলাফল ডিস্ট্রিবিউশন করা হবে ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় ধরে পাইলটিং করা হয়েছে। বলা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা নিয়ে এটাই একমাত্র উদ্যোগ যেখানে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যেখানে নতুন শিক্ষানীতি চালু হচ্ছে, বলা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে আট বছর, সেখানে বোধহয় আরও এক-দুটো বছর অপেক্ষা করে এই পরীক্ষাটা নেওয়া যেতো। অবশ্য এটাও ঠিক যে, বাংলাদেশে পরিকল্পনা তো কতোই হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হতে হতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। সে হিসেবে ধরলে এটা ঠিকই আছে।

অনেক বড় লেখা হয়ে গেলো। শেষ করা দরকার। রাফি যে গিনিপিগের কথা বলছিলেন, আমার মনে হয়, বাংলাদেশে শুধু শিক্ষার্থীকেই গিনিপগ করা হয় না, পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাই আসলে একটা গিনিপিগ। যে যখন যেটা শুনে আসছে, দেখে আসছে, সেটাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। উন্নত দেশের শিক্ষার প্রতি আমাদের একটা মোহ আসছে, পারিপার্শ্বিকতা না মিললেও সেটা প্রয়োগ করার যে প্রচেষ্টা, সেটাই আসলে আমাদের অজান্তে আমাদের গিনিপিগ বানিয়ে রেখেছে।


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার আরেকটা দিক হলো শহরের ছেলেপেলেদের গ্রামে গিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে আসা। (ডাবল রেজিস্ট্রেশন, ঘুস ইত্যাদির মারফতে)। এটা এখন চালু কি না জানিনা, কিন্তু আমাদের সময়ে (২০ বছর আগে) নিয়মিত ব্যাপার ছিলো।

এখন জাতীয়ভাবে সমাপনী পরীক্ষা নিলে আশা করি এই ব্যাপারটা বন্ধ হবে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

গৌতম এর ছবি

এটা সম্ভবত এখন আর চালু নেই। নিয়মকানুন কিছুটা কড়া হয়েছে। শিক্ষকদেরও এজাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর ফাঁকে দু-একটি ঘটনা যে ঘটে না তা বলা যাবে না।

সমাপনী পরীক্ষা দিলে এগুলো তো বন্ধ হবেই, শিক্ষকরা সব শিক্ষার্থীর দিকে সমান মনোযোগ দিতে বাধ্য হবেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

নানা রকম শিক্ষা কমিশনের কথা শোনা যায় যেগুলো অতীতে তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো স্থায়ী হচ্ছেনা কেনো? তাহলে তো এড-হক সিদ্ধান্ত গ্রহনের দরকার পরে না। এবং ইন্সটিটিউশনাল মেমোরির ব্যপারটাও থাকে। যেমন communicative English এর সুবিধা নিতে গিয়ে গ্রামারের ঘাটতির ব্যপারটা হয়ত ঘটতনা যদি না একটা সুগঠিত, অভিজ্ঞ শিক্ষা কমিশন এটা নিয়ে জড়িত থাকত। সেদিক দিয়ে আমি গৌতমদা'র সাথে একমত নির্বাহী সিদ্ধান্ত বিষয়ে।
শিক্ষা বিষয়ে নানা ব্লক থেকে নানা রকমের মতামত রয়েছে। সেই সব মতামতগুলো নিশ্চই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নের বিবেচনাকে মাথায় রেখে প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হচ্ছে একটা স্থায়ী, অরাজনৈতিক শিক্ষা কমিশন যারা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনা গুলো করতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচন বা পরিকল্পনা কমিশন বা দুদকের মত একটা স্থায়ি প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করা দরকার। শিক্ষার রাজনীতিকরন স্বল্প সময়ের জন্য মেনে নিতে পারি যদি মৌলিক কার্যকর দিকগুলোতে শিক্ষা দেবার কৌশল সুচিন্তিত ভাবে নির্ধারিত হয়। সেক্ষেত্রে যন্তর মন্তরের রাজনৈতিক প্রভাবগুলো সময়ের সাথে মিলিয়ে যাবে।
তাই ফোকাসের খাতিরে এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বিষয়টাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি এই মুহুর্তে।
গৌতমদাকে পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। ভীষন দরকারি বিষয়।

গৌতম এর ছবি

শিক্ষা কমিশনগুলো স্থায়ী না হওয়ার কারণ অনেক। প্রথম কারণ হচ্ছে শিক্ষা কমিশনে যারা কাজ করেন তারা নিজেরাই নিজেদের সুপারিশ নিয়ে দ্বিধায় থাকেন, দলীয়পনার বৃত্তে আবদ্ধ থাকেন। ফলে খসড়া রিপোর্ট প্রকাশিত হলেই বিভিন্নজনের তোপের মুখে পড়েন।

আর যারা শিক্ষা কমিশন পাস করাবেন, তাদের এতো সময় থাকলে দেশের অবস্থা এতোদিনে অনেক বদলে যেতো। তারা পাস করাবেন কী, শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট পড়ারই বোধহয় সুযোগ পান না।

একটা অরাজনৈতিক শিক্ষা কমিশনের দাবি বেশ কিছুদিন ধরেই উচ্চারিত হচ্ছে যেটি শিক্ষার নীতি নির্ধারণী বিষয় থেকে শুরু করে শিক্ষার বিভিন্ন সেক্টরের সাথে সংযোগ স্থাপন করবেন। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষা কমিশন শব্দটাই অনেকে বুঝতে চান না। তবে শুনছি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নাকি এই শিক্ষা কমিশনটাকে স্থায়ী করতে চান। শিক্ষা নিয়ে তাঁর কাজ আছে, আগ্রহ আছে, চিন্তা আছে। ফলে কিছুটা আশা পাচ্ছি।

ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

জিপিএ সিস্টেমটাও তো একটা স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে আনতে পারেনি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার - ফলাফল এখন আর পিরামিড স্ট্রাকচারে নেই। আগে দেখা যেত খুউব ভালো করতো অল্প কিছু ছেলেমেয়ে - তারপর বেশ ভালো আরো কিছু - এভাবে ভালো, মোটামোটি এবং খারাপ। কিন্তু এখন এত বেশি জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে (এমনকি গোল্ডেনও) যে কে ভালো কে খারাপ সেটা নির্ধারন করার উপায় থাকছে না। আর এই সমস্যা থেকে আজব আজব আরো সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন বয়স-ভিত্তিক ভর্তি। এখন আবার নাম্বারে ফিরে যাওয়া। মূল কথা পুরো ব্যাপারটাই এখনও গোজামিল দেয়া।

লেখাটা দারুন হয়েছে। বড় হওয়ার পরও একটানা পড়ে ফেললাম।

- নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী (নিক - নিয়াজ)

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ নিয়াজ ভাই। পুরো সিস্টেমটা করা হয়েছে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা ছাড়াই। ফলে আজকে এ অবস্থার সৃস্টি হচ্ছে। সাধারণত এসব ডিস্ট্রিবিশন একটি নরম্যাল কার্ভ গঠন করে, যেটাকে আপনি পিরামিড বলছেন্। কিন্তু এখানে পুরোপুরি উল্টো ঘটনা ঘটছে। তার মানে হয় দেশের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে খুব ভালো শিক্ষার্থী হয়ে গেছে, না হলে সিস্টেমটাই পুরোপুরি গলদ।

কোনটা যে সেটা নিশ্চয়ই আমরা সবাই বুঝতে পারছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বৃত্তি পরীক্ষার নামে ভালো শিক্ষার্থী-খারাপ শিক্ষার্থী ইত্যাদি বিভাজন তৈরি করে তাদের মধ্যে হীনমন্যতা সৃষ্টি করার অভিযোগটি তো পুরনো।

আসলে এতে হীনমন্যতার কিছু নেই; ক্লাসের ফার্স্ট বয় লাস্ট বয়ের চেয়ে পড়াশুনায় ভালো এটা ফ্যাক্ট আবার লাস্ট বয় ক্রিকেট খেলায় ফার্স্ট বয়ের চেয়ে ভালো হতে পারে - এটাও ফ্যাক্ট। ফ্যাক্টকে অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই। এখানে যেটা দরকার, তাহলো যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন এবং আমে-কাঁঠালে না মিশিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যোগ্যতাকে সঠিক দিকে পরিচালিত করা। এজন্য বিভাজনের দরকার আছে। তাছাড়া এরকম বিভাজন একটা প্রতিযোগিতার স্কোপ সৃষ্টি করে। একটা ছেলে বৃত্তি পরীক্ষা বা ভর্তি পরীক্ষার জন্য যে পরিমাণ এফোর্ট দেয়, তা তার পরিশ্রম করার মনোবৃত্তি সৃষ্টি করে, তার নিজের ভেতর থেকে সর্বোচ্চটা বের করে আনতে সাহায্য করে। পৃথিবীটা প্রতিযোগিতার স্থান, সেই প্রতিযোগিতার জন্য তাকে প্রস্তুত করে তোলে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর যোগ্যতাকে আইডেন্টিফাই করা ও তাকে হতোদ্যম হওয়া থেকে রক্ষা করা।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই প্রতিযোগিতা জিনিসটা কৌশলে নষ্ট করা হচ্ছে। জিপিএ ৫ সহজলভ্য, তেমনিভাবে কোথাও ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে না পেরেও প্রাইভেটের বদৌলতে কম্পুবিজ্ঞানী হওয়াও সহজলভ্য। এভাবে একটা হ্যাপি-গো-লাকি অলস এবং শর্টকাট খোঁজা ধান্দাবাজ প্রজন্ম সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটা দেশকে চাঙ্গে তুলতে এর চেয়ে বেশি কিছুর দরকার হয় না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাগিব এর ছবি

সরকার, এবং গৌতম সম্ভবত অন্য অর্থে বলেছেন কথাটা। বৃত্তি পরীক্ষার জন্য স্পেশাল কোচিং ব্যাচ করা হয়, আর আলাদা জোর তাদের উপরে দেয়া হয়। কে কে স্কুলকে বৃত্তি এনে দিতে পারবে, সেটা হিসাব করেই একাজ করা হয়। সম্ভবত এই ব্যাপারটাই গৌতম (এবং সরকারের) বক্তব্য।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

রাগিব, আমিও মনে হয় বক্তব্যটা বুঝতে পেরেছি। এখানে যারা বৃত্তি পরীক্ষা দিতে চান্স পায় না, তারা ঠিক 'অবহেলিত' নয়। যারা চান্স পায়, তারা অবশ্যই randomly সিলেক্টেড হয় না, রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করেই হয়।

কোচিং জিনিসটাকে পুরোপুরি খারাপ বলে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা চলে। কিন্তু কোচিং জিনিসটা ঠিক অতোটা খারাপ না। এখানে প্রশ্ন হলো শিক্ষক তার মূলকাজে ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা। অন্তত আমার শিক্ষকেরা ক্লাস টাইম বাদ দিয়ে আলাদা বৃত্তি পরীক্ষার ব্যাচ নিয়ে কোচিং বসে যান নি। অনেক শিক্ষকই অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল ছাত্রের কাছ থেকে টাকা না নিয়েই পড়ান। যে গরু দুধ দেয়, তার যত্ন আলাদা হবেই। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

গৌতম এর ছবি

সাম্প্রতিক কালের অবস্থা পুরোপুরি ভিন্ন। যেহেতু বৃত্তি পরীক্ষায় ৪০% শিক্ষার্থীকে অংশ নিতেই হয়, শিক্ষকরা তখন চতুর্থ শ্রেণীর কিছু দুর্বল শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কৌশলে অনেক সময় পঞ্চম শ্রেণীতে উঠতে দেয় না। যাদের উঠতে দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ৪০%-কে বছরের প্রথমেই বেছে নেওয়া হয় এবং প্রায় সারা বছরই তাদের বিশেষ যত্নসহকারে পড়ানো হয়। এ সময় বাকি ৬০% শিক্ষার্থীর কী হলো, তা নিয়ে অনেকেরই মাথাব্যথা থাকে না। বিষয়টি মোটামুটি মহামারী আকার ধারণ করেছিলো। এর কারণ হচ্ছে অন্য বেশ কিছু সূচকের সাথে এই বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিদ্যালয়গুলোতে এ/বি/সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হতো।

কোচিং বিষয়টা খারাপ না, এখানে সেরকম কিছু বলাও নেই। কিন্তু একদলকে সারাবছর ভালোভাবে পড়ানো হবে, বাকি দল উপেক্ষিত থাকবে, বিষয়টা মানা কষ্টকর। অথচ হওয়ার কথা ছিলো উল্টো। যারা দুর্বল, শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদেরই বেশি কেয়ার নেওয়া।

এছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ৪০% শিক্ষার্থীকে বাছাই করার সময় হলো নভেম্বর মাস। সারা বছরের শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স দেখে বাছাই করার নিয়ম। কিন্তু বছরের শুরুতেই বাছাই করার কারণে অন্যদের সারা বছর পারফরম্যান্স দেখানোর সুযোগটা আর থাকে না।

আমার মত হলো, অনুশীলনে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া উচিত, সেখানে যারা ভালো করবে, তাদেরকে প্রতিযোগিতায় পাঠানো যেতে পারে। অনুশীলনে সুযোগ দেওয়া না হলে প্রতিযোগিতা তখন স্বপ্ন মনে হয়, যারা প্রতিযোগিতায় যায়, অন্যদের চোখে তারা ঈর্ষান্বিত হয়, হয়তো শত্রুও হয়। শিশুদের মন, অভিমানে ভর্তি, এমন অভিমানই পরবর্তী সময়ে সর্বনাশ ডেকে আনে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গৌতমদা, এখানে তাহলে সমস্যা বাছাই কখন করা হচ্ছে, তার সময়টা। বাছাইটা অক্টোবর নভেম্বরেই করা উচিত। - একমত। কারণ, তাতে বাছাইতে চান্স পাওয়ার জন্যও একটা প্রতিযোগিতা থাকবে। সবাই চেষ্টা করবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

গৌতম এর ছবি

ঠিক। অক্টোবর-নভেম্বরে বাছাই করার আগ পর্যন্ত যার সাথে যেভাবে শিক্ষণ-শিখন কার্যাবলী (টিচিং-লার্নিং অ্যাকটিভিটিজ-এর বাংলা কি এটা? পেডাগোজিতে আবার 'পড়ানো' শব্দটা অনেকে ব্যবহার করতে চান না) সম্পন্ন করা উচিত, সেটা সুষ্ঠুভাবে করা দরকার। উদাহরণস্বরূপ, যে শিক্ষার্থী ভালো অংক পারে, তার দিকে কম মনোযোগ দিয়ে, প্রয়োজনে তাকে দিয়ে পিয়ার টিচিঙের ব্যবস্থা করে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। বিদ্যালয়ের কাজই এটা- সবাইকে একটা লেভেল পর্যন্ত বিকাশের ব্যবস্থা করে দেওয়া। তারপরও পার্থক্য থাকবেই। ডেডলাইনের সময় যে এগিয়ে থাকবে, সেই চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য উপযোগী বলে বিবেচিত হবে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দিগন্ত এর ছবি

আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রেডিং সিস্টেম পছন্দ করি কারণ গ্রেডিং ইঁদুর-দৌড় বন্ধ করে। এই ইঁদুর দৌড়ের কারণে এখন সবাই অঙ্কে ভাল হতে চায়, বেশী নম্বর পেতে চায় পরীক্ষায় আর ক্লাসে প্রথম স্থান পেতে চায়। এইসব বিষয়ে গুরুত্ব বেশী দিলে যে কোনো ছাত্রেরই স্বাভাবিক বুদ্ধির বিকাশ ব্যহত হয় বলেই মনে হয়।

সমাপনী পরীক্ষা কেন ভাল বলে মনে হচ্ছে বুঝলাম না। পরীক্ষাটার আদৌ দরকার কিসের? পঞ্চম শ্রেণীতে এত ছোটো ছেলেপুলের পরীক্ষা নিয়ে কি প্রমাণিত হয়? পরীক্ষা জাতীয় পর্যায়ে হলে চাপ আরো বাড়বে। বাবা-মা সমাজে যাতে মুখ দেখাতে পারে সেই মাফিক নম্বর পাবার দায় বাচ্চাকে নিতে হবে। মানে শুধু কৈশোর নয়, শৈশবটাও মাটি।

জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নিতেই হলে অন্তত অষ্টম শ্রেণীতে নেওয়া হোক। তার আগে ক্লাসের পরীক্ষা আর গ্রেডিং যথেষ্ট। সবাইকে নিজের মত বাড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

গৌতম এর ছবি

পরীক্ষাটা আদৌ দরকার আছে কিনা, সেটা অন্য প্রশ্ন। বর্তমানে যেসব পরীক্ষা এবং যেসব সিস্টেম চালু আছে, সেগুলোর তুলনায় সমাপনী পরীক্ষাটা ভালো- সেটাই আসলে এখানে বলতে চেয়েছি। পরীক্ষা নিয়ে হয়তো খুব একটা কিছু প্রমাণিত হয় না, কিন্তু তারা তো প্রথম শ্রেণী থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে! পরীক্ষা সিস্টেমের সাথে তারা মোটামুটি ফ্যামিলিয়ার। তাছাড়া এই পরীক্ষা হলে বৃত্তি পরীক্ষা, বিদ্যালয়ের পরীক্ষা ইত্যাদি একাধিক পরীক্ষা থেকেও মুক্ত থাকতে পারবে।

জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষাটা আগামীতে হয়তো অষ্টম শ্রেণীতেই নেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বর্ধিত করার চিন্তা হচ্ছে। তখন অষ্টম শ্রেণীতেই প্রথম পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুধীর (অতিথি) এর ছবি

এ বিষয়ে কিছু সম্পূরক আলোচনা অন্যত্র দেখলাম।
নর্মাল ডিসট্রিবিউশনের পক্ষে।

গৌতম এর ছবি

লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রাফি এর ছবি

গৌতম ভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য...।তবে ক্লাস ফাইভে সমাপনী পরীক্ষা চালু নিয়ে আমার আপত্তিটা আপনার লেখার পরেও যায় নি।
আমার যুক্তিগুলো এই সুযোগে বলে নিই...

প্রথম যে উপকার হবে সেটা হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ালেখাতে পরীক্ষা ব্যাপারটারই ঘোর বিরোধী আমি। আমাদের দেশের অভিভাবক বা শিক্ষক সবারই ভাল রেজাল্ট আরো নির্দিষ্ট করে বললে রোল নম্বরের প্রতি একধরণের পক্ষপাত আছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় খারাপ করলে বাকি শিক্ষাজীবনে একটা ছেলে বা মেয়ে তার নিজস্ব উদ্যম নিয়ে এগোতে পারবে না; অন্তত অভিভাবক এবং শিক্ষকরা তা দেবেন না। এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ করলে হতাশাটুকু কাটিয়ে উঠে আবার সফলতা অর্জন সম্ভব, সে পরিমাণ মানসিক শক্তি তখন ছাত্র-ছাত্রীদের থাকে। কিন্তু প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ব্যর্থতা সে সুযোগটুকু তাদের দেবে বলে আমি মনে করি না। প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে শুধু নিজেকে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য তৈরি করার বয়স, এখানে প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু দৌড়ে সবার শেষে গন্তব্যে পৌছানো প্রতিযোগী'র জন্য অনুপ্রেরণাটা অনেক বেশি দরকার।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বৃত্তি পরীক্ষাটা উঠিয়ে দেওয়া।
আমি এক নম্বর পয়েন্টে যা বলেছি বৃত্তি পরীক্ষা সে জিনিসটা ছোট স্কেলে করত, স্থানীয় স্কুলের মাঝে, একটা সেকশনে বিভাজন তৈরি হত; কিন্তু সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে বৃত্তি দিলে আমার মনে হয় মফস্বল স্কুলগুলোর ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের ভেতর একটা হতাশা সৃষ্টি হবে। দেখা যাবে এসএসসি আর এইচএসসি'র মতো এখানেও শহরের নামী দামী স্কুলগুলোর জয়জয়কার।

সবচেয়ে ক্ষতি যা হবে তা হচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর ঘাড়ে আরো কোচিং, আরো প্রাইভেট টীচার এর বোঝা চাপবে। যা শিশুমনের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।