শিক্ষাব্যবস্থায় "গিনিপিগ ব্যাচ" আর কত বাড়বে??

রাফি এর ছবি
লিখেছেন রাফি (তারিখ: বুধ, ১২/০৮/২০০৯ - ২:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে সকাল বেলায় পত্রিকা দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদ একটু বেশি হয়ে গেছে। একের পর এক অদ্ভুত সব পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে, আধাখেচড়া অবস্থায় তা রেখে আবার সে বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা।

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কোন শেষ নেই; একেবারে স্কুলজীবন থেকে কর্তৃপক্ষের যথেচ্ছাচারের স্বীকার হয়ে আমাদের জীবন ভজঘট হয়ে গেছে। ক্লাস এইটে উঠে প্রথমবার শুনলাম, নতুন বই হবে ইংরেজির, Communicative English নামে গালভরা নাম শুনতে লাগলাম স্যারদের মুখে, টিভির বিজ্ঞাপনে আর গাইড বইয়ের মলাটে। হঠাৎ করে, অপরিকল্পিত ভাবে আনা সেই সিলেবাস English grammar শেখার পথ হুট করে বন্ধ করে দিল। ইংরেজি পরীক্ষা হলো; কিন্তু প্রশ্নপত্রে tense এর কচকচানি নেই, translation নেই, voice, narration কিছুই নেই। সে সময় ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ মনে হয়েছিল আমার কাছে। নতুন নিয়মে পরিবর্তিত হলো পাবলিক পরীক্ষা দু'টাও। এসএসসি আর এইচএসসি সিলেবাসেও যোগ হল communicative English.
সিস্টেমটায় যে কত বড় গলদ ছিল তা টের পেলাম এইচএসসি পাসের পর, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে টের পেলাম, আমি জানি না ইংরেজি লেখার basic নিয়মগুলো কী? ইংরেজি লিখতে পারি, ইংরেজি পড়তেও পারি কিন্তু কেউ যদি বলে এই বাক্যটা ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ কি না? তখন মাথা চুলকাতে হয়। নিজের চেষ্টায় তখন বকেয়া ব্যাকরণ আবার পড়া শুরু করলাম; এখন যতটুকু জেনেছি তাতে কাজ চলে যায়,তবে গর্ব করার মত জ্ঞান নেই; কথায় আছে না সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়।
চার বছর যাওয়ার পর শিক্ষাবোর্ডের সিলেবাস প্রণেতাদের ভুলটা চোখে পড়েছে,শেষমেষ পাবলিক পরীক্ষায় গ্রামার এর জন্য আলাদা নম্বর বরাদ্দ রেখে নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা হচ্ছে । মাঝখানে আমরা চার ব্যাচ গিনিপিগ রয়ে গেলাম।

এ-তো গেল শুধু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের সিলেবাসের কথা। পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে, প্রশ্নপত্র কোন ধাঁচের হবে, মেধা যাচাই এর জন্য কোন পদ্ধতি বেছে নেয়া হবে এ নিয়ে একধরণের ছেলেখেলা চলছে অবিরাম। একসরকার আসছে, তাদের নিজস্ব থিওরী দিচ্ছে(আমি আসলে ঠিক বুঝি না সরকার পরিবর্তনের সাথে শিক্ষাপদ্ধতি আর সিলেবাসের কী সম্পর্ক থাকতে পারে?? কিন্তু সাদা চোখেই পরিষ্কার, এখানে "হাকিম যদি নড়ে হুকুম নড়তে বাধ্য")

এসএসসি ২০০১ ব্যাচ বোধহয় শিক্ষা(অব্যবস্থা)'র সবচেয়ে বড় শিকার। নির্বাচনী পরীক্ষারও এক সপ্তাহ পর আমরা প্রথম খবর পাই, মেধাযাচাই পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসছে। তখন আমাদের মূল সমস্যা ছিল ফলাফল কোন্‌ পদ্ধতিতে দেবে, গ্রেডিং নাকি স্ট্যান্ড। গ্রেডিং হলে অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে বাংলা-ইংরেজি পড়তে হবে বেশি বেশি, নাইলে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে চেষ্টা করতে হবে ফুল মার্কস রাখার। সে বিভ্রান্তির মীমাংসা হয় মূল পরীক্ষার দু'সপ্তাহ আগে। আমরা সাধ্যমত নতুন নিয়মের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারলেও, যারা খাতা দেখবেন সেই মহামান্য শিক্ষকরা শিক্ষাবোর্ডের যাবতীয় নির্দেশনা'কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নম্বর দিয়েছেন পুরনো অভ্যাস বজায় রেখেই। চতুর্থ বিষয়ে প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্ট মূল ফলাফলের সাথে যোগ না হওয়া এবং শিক্ষকদের ন্যায্য নম্বর বণ্টন এই যুগপৎ ক্রিয়ায় গ্রেডিং এ ধ্বস নামে।

এরপর এই পদ্ধতিতে দু'দফা সংশোধন করা হয়; এক এ গ্রেডের জন্য বরাদ্দ ৬০-৭৯ নম্বরের সীমাকে আরেকটু ছেঁটে ৭০-৭৯ করা হয় এবং মূল ফলাফলে চতুর্থ বিষয়ে প্রাপ্ত গ্রেডিং পয়েন্ট যোগ করার বিধান করা হয়। কিন্তু আমরা যারা ভুক্তভোগী ছিলাম তাদের ফলাফল এর পরের সিস্টেমের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য কোন উদ্যেগ কর্তৃপক্ষ নেয়নি। ফলাফল চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণী নির্ধারণে বিড়ম্বনা, প্রতিনিয়ত আমরা যার মুখোমুখি হচ্ছি।

এই অভূতপূর্ব পদ্ধতি বাস্তবায়নের পর নতুন আরেক নিয়মের প্রবর্তন করা হয়; সকল কলেজে ভর্তি করা হবে শুধু এসএসসি'র জিপিএ দেখে, জিপিএ সমান হলে বয়সের জ্যেষ্ঠতা'র ভিত্তিতে। এর পক্ষের যুক্তি হিসেবে দাড় করানো হয়েছে কোচিং সেন্টার বাণিজ্য বন্ধের মহান উদ্দেশ্যকে। আমার প্রশ্ন হলো একাডেমিক কোচিং(১ম থেকে ১০ম) যদি চলতে পারে তাহলে ভর্তি কোচিং কী দোষ করল? এই বছর থেকে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম বাদ দিয়ে ভর্তি করা শুরু হয়েছে নম্বরের ভিত্তিতে; বোর্ড থেকে পাঠানো নম্বরের ভিত্তিতে সমান জিপিএ প্রাপ্ত ছাত্রদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাই করা হয়। আমি বুঝি না, তাহলে গ্রেডিং সিস্টেমের মূল্য থাকল কোথায়? এরা কি আসলে গ্রেডিং এর মানে বোঝে??

এতসব হৈ-হুল্লোড় এর মধ্যে আরেক নতুন ফর্মূলা একমুখী শিক্ষা নিয়ে বেশ উদ্যমের সাথে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করে feasibility study করতে বিদেশ ঘুরে এসেছেন কর্তাব্যক্তিরা; একমুখী শিক্ষা নামের এই অশ্বডিম্ব প্রসব থেকে বোর্ডকে বিরত করতে জাফর ইকবাল স্যার সহ অনেক শিক্ষাবিদ এগিয়ে এসেছিলেন। চাপে পড়ে সেটা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে (এখনো বাতিল করা হয় নি কিন্তু!!)

এরপর নিয়ে আসা হল আরেক সিস্টেম, কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি।গ্রামপর্যায়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অন্ধকারে রেখে চেষ্টা করা হল ২০০৯ সাল থেকেই এসএসসি'তে এ পদ্ধতি চালু করে দেবার। বিভিন্ন গাইড বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মালিক-প্রকাশক দের ডেকে এই পদ্ধতি'র মানসম্পন্ন মডেল বই বাজারে ছাড়তে বলা হল; কেউ কেউ বই প্রকাশও করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষক অভিভাবকদের বাধার মুখে মুখ থুবড়ে পড়ল এটিও। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের তৈরি করা গেলে এই পদ্ধতিটা বাংলাদেশের শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। এখন ধাপে ধাপে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর শোনা যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত একমুখী(একই ধরণের শিক্ষাব্যবস্থা;বর্তমানে এগার ধরনের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে -সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি বিদ্যালয়, আনরেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন এবতেদায়ী মাদ্রাসা, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, স্যাটেলাইট বিদ্যালয়, কিণ্ডারগার্টেন এবং এনজিও পরিচালিত পূর্ণাঙ্গ প্রাথমিক বিদ্যালয়।) শিক্ষা চালু করা হবে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু আজকের প্রথম আলোর বলছে পঞ্চম শ্রেণীতে আরেকটা পাবলিক পরীক্ষার তোড়জোড় চলছে। আমি বুঝতে পারছি না এই পাবলিক পরীক্ষার উদ্দেশ্যটা কী? পরবর্তীতে কি এর ফলাফলের কোন মূল্য থাকবে(এসএসসি বা এইচএসসি'র মত)। নাকি বৃত্তি পরীক্ষার বিকল্প হিসেবেই এটা আসছে???

বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এই হ-য-ব-র-ল অবস্থা কতদিন চলবে? এই দেশে একেকটা শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা একেক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বেরোচ্ছে, এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। যে কোন একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তৃণমূল পর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, প্রস্তাবিত পদ্ধতি'র খারাপ দিকগুলোর সমাধান কী হবে, দেশের শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে কী ভাবছেন এগুলো বিবেচনায় আনা উচিত। আর কোন পদ্ধতি চালু হলে হুট করে সেটা বন্ধ না করে, নতুন পদ্ধতির সাথে আগেরটার একটা মেলবন্ধন করানো দরকার। সরকার পরিবর্তিত হলে পাঠ্যবইয়ের লেখক বদলে যাবে, ইতিহাস একেকজন একেকভাবে শিখাবেন এইসব বালসুলভ আচরণের ইতি হওয়া দরকার।নইলে এই দেশের প্রত্যেকটা শিক্ষিত নাগরিকই ভাববে যে শিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে তার মেধা আর মননের বিকাশ ঘটেছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ।


মন্তব্য

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ রাফি।
দারুণ কইছেন! আমাদের মাথামোটা নীতিনির্ধারকেরা শুনলে হয়।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

রাফি এর ছবি

ভাই উনারা কিছুই শোনেন না; তারপরও আমাদের গান আমাদের গাইতে হবে। মনের ঝাল মেটানো বলে কথা...। মন খারাপ

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ লেখা, রাফি। খুব ভালো লাগল। অনেক জরুরি বিষয়গুলো উঠে এসেছে আপনার লেখায়। কবে যে আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি নির্ধারকদের টনক নড়বে, কে জানে! এই বেহাল অবস্থার সত্যিই পরিবর্তন হওয়া দরকার, once and for all.

রাফি এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রহরী ভাই।
এতো শুধু পদ্ধতি'র কথা বলছি, content আর ধর্ম নিয়ে যে হুলস্থুল নিত্যদিনই চলে তার তো কোন ইয়ত্তা নেই।
এরা যে কী করতে চায়, শুধু এরাই জানে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

Bappy এর ছবি

লেখাটি খুব ভাল লাগল। অনেক জরুরী বিষয়গুলো এই লেখার মধ্যে অন্তভূক্ত হয়েছে।

ধন্যবাদ

-Bappy

রাফি এর ছবি

পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই চমৎকার লাগলো লেখাটা।

আমার চোখে আপনাদের সময়ে যে এ+ (সম্ভবত ১৮টা) গুলো ছিল সেগুলো স্ট্যান্ডের থেকেও অনেক উপরে। এখনতো এ+ সবাই পায়! এ+ না পেলে মনে হয় সেটা এখন একটা খবর হয়। "ওমুক বাড়ির ছেলে এ+ পায় নি" - বরং এটা নিয়ে এখন আলোচনা হয়।

এখন আর শিক্ষা(অ)ব্যবস্থায় কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই। একেক বছর একেক নিয়ম। ভুক্তভোগী আপনার মত আরো অনেক ছাত্রছাত্রী।

- নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী [ নিক - নিয়াজ ]

রাফি এর ছবি

আমাদের সময় এসএসসিতে এ+ ছিল ৭৬ টা, এইচএসসি'তে ২০টা।
আট বছরে ১০০০ গুণ বেড়েছে এ+। এই হারে বাড়তে থাকলে একটা পর্যায়ে এ+ পেয়েও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে না এমন হাজার হাজার ঘটনা ঘটবে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

দারুন সময়োপযোগী লেখা।
২০০৩ এএসসি ব্যাচ হওয়ায় অতটা দূর্ভোগ পোহাতে হয়নাই।
২০০১ ব্যাচ এসএসসি এইচএসসি দুটোতেই আসলে বঞ্চনার শিকার।

---------------------
আমার ফ্লিকার

রাফি এর ছবি

২০০১ এসএসসি ব্যাচের বঞ্চনা সবে শুরু; চাকরির প্রমোশন এবং চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রেণী'বিচার যদি অব্যাহত থাকে আর সব গ্রেডিং ব্যাচকে একই মাপকাঠিতে যাচাই করা হয় তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সাবিহ ওমর এর ছবি

গ্রামার নিয়ে যা বলেছেন, সেটা আমার বেলায়ও হয়েছে। Communicative English ব্যাপারটা ছিল পুকুরে ইলিশ মাছ চাষের চেষ্টা।

ওমরের ব্লগ

রাফি এর ছবি

ভাল বলেছেন, পুকুরে ইলিশ মাছ চাষ...।। হাসি
তা ভাই আপনি কোন ব্যাচ।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

হিমু এর ছবি

আমাদের সময় ক্লাস সিক্স সেভেন থেকে ইংরেজিতে বিকট সব গ্রামার পড়তে হতো। বইগুলি লেখা ছিলো দুর্বোধ্যভাবে, মানে ক্লাস সেভেনের একটা ছেলে বা মেয়ে সেটা নিজে পড়ে কিছুই বুঝবে না। আমি ইংরেজি পড়তাম আব্বার কাছে, ভুলভাল করলে দেখতাম তিনি চরম বিরক্ত হতেন, যে এতো সোজা জিনিসটা পাল্লি না? বিব্রত বোধ করতাম, আর অনুভব করতাম কোনো একটা গ্যাপ আছে আমাদের দুইজনের ইংরেজি শিক্ষার পদ্ধতিতে।

কমিউনিকেটিভ ইংরেজি নিয়ে আরেকটু আলোকপাত করতে পারো? আমি চলনসই ইংরেজি শিখেছি টিভি দেখে আর কমিক্স পড়ে। ভাষার ব্যাকরণ আত্মস্থ করে শিখেছি কলেজে উঠে, বই পড়ে স্প্যানিশ শিখতে গিয়ে! সেই ষাট সত্তর বছর আগে ছাপা স্প্যানিশ ব্যাকরণ বইতে (নটরডেম কলেজের নোভাক লাইব্রেরিকে ধন্যবাদ) ভাষার টুকরোগুলি অত্যন্ত সহজভাবে বোঝানো ছিলো। সেই ব্যাকরণজ্ঞান সম্বল করে আমি পরে ফরাসী আর জার্মান শিখেছিলাম। যদিও জার্মান ছাড়া বাকিগুলি নিয়ে বিয়াপক সমস্যা হয় এখন, কিন্তু চিন্তা করে দেখো, আমি ক্লাস ইলেভেনে থাকার সময় নিজে নিজে একটা বই [ইংরেজিতে লেখা] পড়ে ব্যাপারগুলি শিখতে পেরেছিলাম। সমস্যা হচ্ছে, ঐ স্তরের বই ক্লাস সেভেনের একটা বাচ্চা ছেলে বা মেয়ের জন্যে লেখা দুরূহ। আর ইংরেজি শিক্ষা শুধু ক্লাসরুমে হলে মুশকিল। যে কোনো ভাষাই শিখতে হয় তীব্র [ইনটেনসিভ] পদ্ধতিতে, নাহলে সেটা ছাপ ফেলে না। আমি জার্মান শিখতাম সপ্তাহে তিনদিন চার ঘন্টা করে। দেড় বছরের মাথায় ভাষাটা কাজ চালানোর মতো শিখে গেছি। ফরাসী শিখতে গিয়েছিলাম সপ্তাহে দুইদিন দু'ঘন্টা করে, তা-ও নানা গ্যাপ দিয়ে, চার বছর ধরে দুই বছরের কোর্স শেষ করার পর দেখা গেলো আমার সনদপত্রটুকুই সম্বল, শুনে বুঝতে সমস্যা হয়, বলতে গেলে ভাবতে হয়, পড়ে শুধু খানিকটা বুঝি। ইংরেজির ক্ষেত্রে ঠিক এই একই সমস্যা, আর সামাজিক চাপের কারণে সংকোচ আর আতঙ্ক কাজ করে ছাত্রছাত্রীদের মনে।

এই উদাহরণকে পাশ কাটিয়ে বলি, যখন ছোটো ছিলাম, পাশের বাসার আন্টি সারাদিন হিন্দি সিনেমা দেখতেন ভিসিআরে, আমি খেলতাম তাঁর সাথে গিয়ে। ঐ যে চার-পাঁচ বছর বয়সে ক্রমাগত হিন্দি শোনা, আমি হিন্দি ওভাবে শিখে গিয়েছি। চর্চা মোটেও নেই, কিন্তু হিন্দিভাষী জগতে আমি বিচরণ করতে পারবো স্বচ্ছন্দে। এই সুযোগটা কেন ইংরেজির ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে না? রেডিও আর টিভিতে ইংরেজি ব্লক খোলা উচিত, কেবল ইংরেজি ভাষাটা কানে রাখার জন্য। যেমনটা বললাম, আগে বিটিভিতে চমৎকার সব সিরিয়াল দেখাতো, এখন সেগুলিও ডাব করে দেখায় নির্বোধ কর্তারা। ইংরেজি শেখার সুযোগটা কই?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রাফি এর ছবি

নোভাক লাইব্রেরীতে ঢুকার সৌভাগ্য হয়েছিল কিন্তু ঐভাবে বই খুঁজে দেখা হয় নি। আমাদের ক্লাস হত লাইব্রেরী'র পাশে ৪৩১ নম্বর রুমে। মক্কার লোক যেমন হজ্জ্ব পায় না তেমনি আমরাও কখনো ঢুকতাম না লাইব্রেরী'তে; কালেভদ্রে ঢুকলেও বা'পাশের ব্যালকনীতে গিয়ে পত্রিকা পড়েই খালাস।

কমিউনিকেটিভ ইংলিশ এর চেষ্টাটা এসেছিল বোধ করি ইংরেজিকে গ্রামারের জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা হিসেবে।
IELTS, TOEFL এ যেমন ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ে কোন comprehension এর মূলভাব, sentence completion এর ক্ষেত্রে বাক্যের sense প্রভৃতি দেখা হয় তেমনি একটা চেষ্টা করা হয়েছিল বলে আমার মনে হয়। কিন্তু তা করতে গিয়ে প্রথমদিকে গ্রামার পুরোপুরি উঠিয়ে দেয়া হয়, তাতেই মূল সর্বনাশটা ঘটে।

আর বাংলা ডাবিংয়ের কথা কী বলব? যে দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা বলা হয় সেই সব সিরিয়ালগুলোতে তাতে ছেলেমেয়েরা ইংরেজি শেখা তো দূরের কথা; বাংলাও ভুলে যাবে সেইসব অদ্ভুত বাচনভঙ্গি আর বাক্য কাঠামো শুনে শুনে...

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

হিমু এর ছবি

গিনিপিগ ব্যাচ নিয়ে বলি, আমাদের শিক্ষাকর্তাদের মধ্যে মনে হয় পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো ধরনের সচেতনতা বা আগ্রহ নেই। একটা ব্যাচে নম্বরের স্লটের ভিত্তিতে গ্রেড করা হলে ভিন্ন নিয়মে অন্য ব্যাচের সাথে ছাত্রদের তুলনা কীভাবে চলবে, এ নিয়েও তাঁদের মাথাব্যথা নেই। যে কোনো ফলাফল আসা উচিত জেড স্কোর দিয়ে, যে এই ছাত্র "ক" বিষয়ে তার ব্যাচে ৮৫.৬% শিক্ষার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছে, আবার "খ" বিষয়ে এগিয়ে আছে মাত্র ৪১.২% এর চেয়ে। আবার চাইলে ইতিহাসে তার স্থান কোথায়, সেটাও নির্ধারণ করা সম্ভব পরিসংখ্যানের মাধ্যমে।

গ্রেড পদ্ধতিকে আমার একটা সচেতন স্যাবোটাজ বলে মনে হয়। আমি মনে করি, নাম্বারের স্লটটিকে আরো উচ্চাভিলাষী করা উচিত। লক্ষ লক্ষ মিডিওকার তৈরি করা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য হতে পারে না। গণিতে ৮০ নম্বর পেয়ে এ প্লাস পায় যে জাতি, সে জাতিতে ৮১ নম্বর পাওয়ার উচ্চাভিলাষ কি আদৌ তৈরি হবে? গণিতে এ প্লাস হওয়া উচিত ৯৫ বা ৯৭ নাম্বারে! আমাদের সময় অনেকে ক্যালকুলাস শিখতো খণ্ডিত ভাবে, কারণ বেশ কিছু জিনিস ছেড়ে শিখলেও পরীক্ষায় মোটামুটি ফল করা যায়। ক্যালকুলাস কি খণ্ডিতভাবে শেখার জিনিস? এ তো প্রকৃতির নিয়মের ভাষা! পৃথিবীর তাবৎ আচরণ ক্যালকুলাসে অনূদিত হয়েছে। ঠিক এই জিনিসটিই ঘটবে মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে, খণ্ডিত শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে একটা বড় ধাক্কা আর হতাশায় ভুগবে ছাত্রছাত্রীরা।

শিক্ষা বিষয়ক পরিকল্পনা যারা করেন, তাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়ে, এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রাফি এর ছবি

percentile একটা সমাধান, তার সাথে যোগ হতে পারে standard deviation এর ব্যাপারটা। কোন একজন ছাত্র তার বছরের গড় নম্বর থেকে কত কম বা বেশি পেল তার ভিত্তিতে গ্রেডিং হতে পারে। আর সেই ডাটা বেইজকে পূর্ববর্তী বছরের সাথে মিলিয়ে আরো নিখুঁত করা যেতে পারে মেধা যাচাই।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আজকের পেপার পড়ে আমার মনেও মোটামুটি এই ভাবনা গুলোই এসেছিলো।
চলুক
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

রাফি এর ছবি

ভাই আমাদের মনে হলে কী হবে? যাদের ভাবার কথা তারা তো মাথা বন্ধক দিয়ে রাখছে।
ধন্যবাদ।
পরীক্ষা শেষ কবে?

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সচল জাহিদ এর ছবি

যথারীতি প্রানবন্ত আর তথ্যপূর্ণ লেখা। আমাদের কথা বলি, আমরা এসএসসি '৯৪ ব্যাচ। তখনকার বিজ্ঞান বইয়ের এক হাস্যকর জিনিস ছিলঃ এসো নিজে করি।কখনই নিজে করা সম্ভব নয় এমন কিছু জিনিস দিয়ে আমাদের পদার্থ রসায়ন আর জীববিদ্যা পড়তে হয়েছে। ঐগুলান না নিজে করতে পারতাম না শিক্ষকেরা করাতেন। বাংলাদেশে বা আগের পাপীস্তানের সময় আমাদের বাবারা পদার্থ রসায়ন আর জীববিদ্যার জন্য আলাদা বই পড়তেন, এখনো সেই আলাদা বই মাঝখানে আমরাই জগা খিচুড়ী পড়ে এসেছি আর তার খানি টেনেছি ইন্টারে এসে। তার উপর ছিল ৫০০ প্রশ্নের ব্যাঙ্ক। সেই ব্যাঙ্ক আবার '৯৬ সালে এসে উধাও হয়ে গেল। এই দেশে আসলে পন্ডিত একটু বেশী হয়ে গেছে আর সেই সাথে পন্ডিতদের আবার দলও আছে। সেজন্য হাকিম পরিবর্তন হলে হুকুমও পরিবর্তিত হয়।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রাফি এর ছবি

৫০০ প্রশ্নের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। চিন্তা করেন স্যার, কী ধরণের ফাজলামো ছিল সেটা? এইদিক থেকে এখনকার MCQ সিস্টেম ভালো। প্রশ্ন মোটামুটি মানসম্পন্ন হয়।

কিন্তু একটা ব্যাপার আমার মাথায় খেলে না; ৫০০ থেকে সব অবজেকটিভ কমন, objective আর subjective দুইটা মিলে পাস হলেই পাস। এত সুযোগ দেয়া সত্যেও সে আমলে পাশের হারের বেহাল দশা ছিল কেন? শুধু ছাত্রদের অলসতা নাকি এর পেছনে আরো কোন গভীর কারণ ছিল?

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ স্যার।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

guest_writer এর ছবি

আমি ২০০০ এ এস এস সি...আমার মনে হয় আমাদের সময়কার পড়াশোনা টাই ভালো ছিলো । আপনারা যারা ২০০১ র ব্যাচ তাদের থেকে ঝামেলা শুরু হয়েছে আর ১০ বছর ধরে চলছে...খুবি বাজে ব্যাপার।
nawarid nur saba

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।