জীবনানন্দ কি আত্মহত্যা করেছিলেন?(শেষ পর্ব)

রাফি এর ছবি
লিখেছেন রাফি (তারিখ: শুক্র, ১০/১০/২০০৮ - ১২:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্ব
মাল্যবান চরিত্রটির সাথে জীবনানন্দ প্রায় মিলে যান। উৎপলাকে দূর্মূখ , স্বার্থপর ঝগড়াটে দুশ্চরিত্র এইসব হিসেবে একেবারে কৃষ্ণবর্ণে আঁকবার কারণ কী? উৎপলার প্রতি পাঠককে একেবারে বিষিয়ে দেয়ার জন্য লেখকের অতিব্যস্ততা এবং উত্তেজনা লুকিয়ে রাখাও যায়নি। উৎপলার প্রতি পাঠককে একেবারে চটিয়ে দিয়ে লেখকও কি একধরণের মানসিক শান্তি পাচ্ছেন না? কিন্তু কেন বলা হচ্ছে ‘মাল্যবান’ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস হলে জীবনানন্দের আত্মহত্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না?

কেমন ছিল জীবনানন্দের দাম্পত্য জীবন?? বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে অস্বস্তিবোধ করছি কিন্তু উভয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন শুধু এই যুক্তিতেই মনে করছি আলোচনাটা বোধহয় অশোভন হবে না। কথাগুলো কারো সুক্ষ্ম রুচিবোধকে আহত করলে অগ্রীম মাফ চেয়ে নিচ্ছি-

‘জেঠিমা খুব গুণী এবং কম বয়সে খুব সুন্দরী ছিলেন। তিনি পরে শিক্ষিকাও হয়েছিলেন- শেষে এসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ওদের দুজনের মধ্যে ভাল মনের মিল হয়নি আর তার প্রতিফলন রয়েছে জীবনানন্দের কবিতার মধ্যে’।
(আমার জ্যাঠামশাইঃ অমিতানন্দ দাশ)

‘নিজের বাসাতেই কবি থাকতেন বহিরাগতের মত। একদিন হঠাৎ আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, যদি স্ত্রী আপনার আমন্ত্রণে ঘনিষ্ঠ হবার সায় না দেয় কী করবেন? কী করা উচিত? দাম্পত্য সম্পর্কের যে অস্বাভাবিকতার বীজ এই প্রশ্নটির মধ্যে রয়েছে সেই অস্বাভাবিকতা কবির পারিবারিক জীবনে লক্ষ্য করেছিলাম।।... শুনেছি শ্রীমতি জীবনানন্দ নাকি প্রায়ই বাড়ি ফিরতেন বেশি রাত করে, জীবনানন্দের মধ্যে সবসময়ই ম্রিয়মাণতাও লক্ষ্য করেছি। দাম্পত্য জীবনে রজনীগন্ধার ঘ্রাণে সুরভিত আবহের পরিবর্তে একটি বিষায়িত পরিমন্ডল প্রতিদিন ঘনীভূত হয়ে থাকছে। আমার এই আশংকা এই অনুমানগুলি পরবর্তীকালে কবির নিজের হাতেই তাঁর মাল্যবান উপন্যাসে বিস্ফোরকভাবে বিয়োগান্ত বিক্ষোভের আকারে প্রকাশিত।।.... স্বামী স্ত্রীর এই অস্বাভাবিক সম্পর্ক শুধু জীবনানন্দের চারিত্রিক সংযমের জন্যই অশালীন চেহারা নিতে পারেনি’।
(অগ্রজ কবি জীবনানন্দঃ বিরাম মুখোপাধ্যায়)

জীবনানন্দের বোন সুচরিতা দাশের সহকর্মী মিনু সরকার জানাচ্ছেন,

‘লাবণ্য দাশের নিকটাত্মীয় ছিলেন রহস্য উপন্যাস লেখক নীহাররঞ্জন দাশগুপ্ত। লাবণ্য দাশ প্রায়ই আমার কাছে অভিযোগ করতেন উনিও তো লেখক কিন্তু কত টাকা উপার্জন করেন খ্যাতিও তো কম নয়। কিন্তু এতই দূর্ভাগা তিনি তাঁর কবি লেখক অর্থ তো উপার্জন করতে পারেনই নি, খ্যাতির তো প্রশ্নই উঠে না। সমাজে তাঁর নাম কেউ শুনেছে বলে মনে হতো না।

...... লাবণ্য দাশের সাথে কথা বলে আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি জীবনানন্দের বিবাহিত জীবন যেমন সুখী ছিল না; তেমন সুখী ছিল না লাবণ্য দাশের দাম্পত্য জীবনও। জীবনানন্দের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে তিনি কাউকে বলেছিলেন, অচিন্ত্যবাবু, প্রেমেন্দ্রবাবু ,সজনীবাবুরা যখন শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন এবং তোমাদের মত অল্পবয়সী ছেলেপিলেরা তখন বলতেই হবে তোমাদের দাদা বড়ো লেখক ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের জন্য তিনি হয়ত অনেক রেখে গেলেন, কিন্তু আমার জন্য কী রেখে গেলেন বলো তো’!

আমি বই ঘেঁটে যতটুকু জানতে পেরেছি এই কেউ-টা ছিলেন ভূমেন্দ্র গুহ।আর ছেলেপিলেরা ডাক্তারী পড়ুয়া তাঁর বন্ধু বান্ধবরা। এই কয়েকটি ছেলেই ১৫ই অক্টোবরের পরে ‘পাশে বসে রাতজাগা, ওষুধপত্তর খাইয়ে দেয়া, রোগীর সুবিধামত তাঁর শরীরটিকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে সাজিয়ে দেয়া, মুখ ধুইয়ে দেয়া,কাপড়চোপড় পালটে দেয়া আর সর্বক্ষণ ঘোরের মধ্যে তাঁর প্রলাপ শুনে যাওয়ার কাজগুলো করেছিলেন’।

তবে এসম্পর্কে কবিপত্নীর উদ্ধৃতি কিন্তু বেশ স্বস্তিদায়ক.....

‘অনেকে বলেন তিনি নিপাট ভালমানুষ, আত্মভোলা কোনদিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল না ইত্যাদি। এসব যখন শুনি বা পড়ি তখন আমার খানিকটা অদ্ভূত লাগে। কারণ ঐ ছবিতে আমি যেন আমার অচেনা ব্যাক্তিত্বহীন একজন শৌখিন কবির সাজানো ছবি দেখতে পাই। আমি ঐ ব্যাক্তিত্বহীন জীবনানন্দকে সত্যিই চিনি না। আমার স্বামীর ছবি আমার কাছে সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাঁর উদার মন আর ব্যাক্তিত্বের জন্য জীবনে আমি অনেকবার অনেক সমস্যা থেকে উদ্ধার পেয়েছি মনে পড়ে।

আর একটি ব্যাক্তিগত কথা মনে পড়ে -বিবাহিত জীবনের শুরুতে জ্যাঠামশাইকে যে কথাটি দিয়েছিলেন তা সারাজীবন রেখেছিলেন। আমাকে কোনদিন কোন কারণে ক্ষুণ্ন করেননি’।
(আমার স্বামী জীবনানন্দঃ লাবণ্য দাশ)

কিন্তু আমি ভুলতে পারি না ‘কারূবাসনা’ উপন্যাসের এই সংলাপ এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ...

‘হেম-কিন্তু তবুও আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে।
মা- কার?তোমার? কেন?
হেম-চৌকাঠের সাথে দড়ি ঝুলিয়ে কিংবা বিষ খেয়ে যে মরণ সেরকম মৃত্যু নয়। আউটরাম ঘাটে বেড়াতে গিয়ে সন্ধ্যার সোনালী মেঘের ভিতর অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করে; মনে হয় আর যেন পৃথিবীতে ফিরে না আসি।
মা- ও এইরকম? কিন্তু এতো সম্ভবপর কোন কথা নয়। আউটরাম ঘাট কোথায়?
হেম- গঙ্গার একটা ঘাট’।

আমার সহজ বুদ্ধিতে এরকম কথোপকথন স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। লাবণ্য দাশ অতি সাধারণ বাঙ্গালী মহিলা ছিলেন, জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য পেতে চেয়েছিলেন। লাবণ্য দাশের দৃষ্টিকোণ থেকে এই চাওয়াকে অসঙ্গত বলার কোন উপায় নেই। কিন্তু আর্থিক প্রাচুর্য জীবনানন্দের কোন কালেই ছিল না; মনভুলানো কথায় জীবনকে মুখর করে রাখাও এই অন্তর্মুখী মানুষটির চরিত্রে ছিল না। লাবণ্য দাশ প্রায়শই অবহেলার অভিযোগ করতেন স্বামীর বিরুদ্ধে। মোট কথা অবহেলা বা অক্ষমতা যাই হোক সংসারের সব কাজ লাবণ্য দাশকে একাই সামলাতে হত। এ নিয়ে তার খেদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেটে নি।

অন্যদিকে জীবনানন্দের শান্ত এবং সর্বংসহা চরিত্রের শুদ্ধতার পরীক্ষা চলেছে প্রায় ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে, তার সাথে ছিল দুঃসহ সামাজিক ও আর্থিক জটিলতা, অপরিসীম বিচ্ছিন্নতাবোধ, অকল্পনীয় মৃত্যুলিপ্সা এবং বোধের অতীত এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’। এসব কিছু বিবেচনায় আমি বিশ্বাস করি জীবনানন্দ স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছিলেন।


মন্তব্য

রাফি এর ছবি

সিরিজ লেখায় এতদীর্ঘ একটা বিরতি দেয়ার কারনে পাঠকদের কাছে
ক্ষমাপ্রার্থী।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার সিরিজের শুরুতে জীবনানন্দের মৃত্যু বিষয়ক যে ইঙ্গিতটি পষ্ট হয়ে উঠছিলো, তিনি আত্মহত্যা করেন নি, সিরিজ শেষে এসে পুরো উল্টিয়ে দিলেন !
অর্থাৎ, জীবনানন্দ স্বেচ্ছামৃত্যুকেই বেছে নিয়েছিলেন ?

ব্যাখ্যা দিতে পারবো না, কিন্তু আমার অস্পষ্টতা কাটলো না মনে হয় !

তবে আপনার এই শ্রমসাধ্য সিরিজটা খুবই আকর্ষণীয় ও তথ্যবহুল হয়েছে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রাফি এর ছবি

রণদা প্রথমেই সিরিজটার নিয়মিত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আসলে আপনি যে ইঙ্গিতের কথা বলছেন তা বোধহয় প্রথম পর্বে ঘটনা পর্যায়ের বাঁচার আকুতির কথা। সেটা প্রকৃতপক্ষে বার্তাবাহী কোন কিছু ছিল না। শুধু জীবনানন্দের কাছের এবং বিশ্বস্ত একজনকে ঘটনার বর্ণনাকারী হিসেবে দাঁড় করানোই মূখ্য ছিল।
আর অস্পষ্টতার কথা আর কি বলব! আমার নিজের কাছেই কি আর ততটুকু স্পষ্ট নাকি ব্যাপারটা???

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার অধিকার সব মানুষেরই আছে

কবিদের অধিকার সবচেয়ে বেশি

রাফি এর ছবি

গুরু গুরু

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি:
তার সাথে ছিল দুঃসহ সামাজিক ও আর্থিক জটিলতা, অপরিসীম বিচ্ছিন্নতাবোধ, অকল্পনীয় মৃত্যুলিপ্সা এবং বোধের অতীত এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’।

-এই থেকে কবিদের মনে হয় উত্তোরণের কোনো পথ নাই। সেই ভয়ে কবি হইতে চাই না। দেঁতো হাসি
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রাফি এর ছবি

জুলিয়ান ভাই আপনি ঔপন্যাসিকই থাকেন; কবি হয়ে গেলে আমাদের কী হবে?
নিয়মিত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মুজিব মেহদী এর ছবি

আপনার সিরিজটা ফলো করেছি আগাগোড়া। যদিও একটিও মন্তব্য (সম্ভবত) করা হয় নি। শেষে এসে কয়েকটা কথা বলি।

জীবনানন্দের নিজের বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি এবং তাঁর সতীর্থ ও স্বজনদের জবানিতে তাঁর সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিক অশান্তির যে চিত্র আপনার সিরিজটিতে উঠে এসেছে, তা দিয়ে ঠিক ঠিক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুই বরণ করেছিলেন। বড়োজোর বলা যায় যে, তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু করণ করে থাকতে পারেন।

আমি ধারণা করি, তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করবেন না বলেই মৃত্যু নিয়ে যা কিছু ভাববার তা ভেবে নিয়েছিলেন। ওরকম কিছু করবার খানিক ইচ্ছে যদি মনে তৈরি হয়েও থাকে, সে ইচ্ছেকে বারবার লিখে অপনোদন করেছেন। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, যে ঘন ঘন বলে, 'ইচ্ছে করে আত্মহত্যা করি', সে কখনো আত্মহত্যা করে না। যারা এই কাজটা করে, তারা কখনো প্রায় বলে না।

যিনি প্রকৃত কবি তিনি এমনিতেই প্রায় সময় ঘোরগ্রস্ত থাকেন। জীবনানন্দ দাশের মধ্যেও এই ঘোরগ্রস্ততা ছিল। তদুপরি ছিল আপনার কথিত দুঃসহ সামাজিক ও আর্থিক জটিলতা, অপরিসীম বিচ্ছিন্নতাবোধ, অকল্পনীয় মৃত্যুলিপ্সা এবং বোধের অতীত এক 'বিপন্ন বিস্ময়'। তো, এসব একজন কবির সহজাত ঘোরগ্রস্ততাকে আরো অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা পথেঘাটে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।

এই যুক্তিতে আমি ধারণা করি, জীবনানন্দের মৃত্যুঘটনাটি ছিল নেহায়েতই একটি দুর্ঘটনা, যেটা আনমনা হয়ে তাঁর ট্রামলাইন অতিক্রম করা অবস্থায় ঘটেছিল।

......................................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

রাফি এর ছবি

মুজিব ভাই আমার কোন লেখায় প্রথমবারের মত আপনার মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগছে।

জীবনানন্দের নিজের বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি এবং তাঁর সতীর্থ ও স্বজনদের জবানিতে তাঁর সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিক অশান্তির যে চিত্র আপনার সিরিজটিতে উঠে এসেছে, তা দিয়ে ঠিক ঠিক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুই বরণ করেছিলেন। বড়োজোর বলা যায় যে, তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু করণ করে থাকতে পারেন।

আপনার কথার সারমর্মের সাথে আমার দ্বিমত নেই। কিন্তু জীবনানন্দের লেখা যখন পড়ি তখন এসমস্ত সকল যুক্তি ছাড়িয়ে তার স্বেচ্ছামৃত্যুর শত শত ইঙ্গিত আমার কাছে কেন জানি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আগাগোড়া সিরিজের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মুজিব মেহদী এর ছবি

এ রে, আপনার জবাব দেখতে এসে চোখে পড়ল যে, আমি ভুল করে তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু করণ করে থাকতে পারেন লিখে বসেছিলাম। শব্দটা হবে 'বরণ'। আশা করি আপনি এই টাইপোটাকে আমলে নেন নি।
আপনার এই উপসংহারের সাথে যেতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ধন্যবাদ।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চিন্তিত

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রাফি এর ছবি

খাইছে

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মেঘা এর ছবি

মানুষ যখন তার চারপাশের বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় জর্জরিত থাকে তখন অনেক সময় এমন হয়! এতোক্ষণ পড়ে যাচ্ছিলাম আর একটা ঘটনার কথা ভাবছিলাম। আমার নানাভাই ট্রেনের ধাক্কায় পাঁজরের হাড়গোড় গুঁড়ো হয়ে মারা গিয়েছিলেন। সে সময় সবাই নাকি বলেছিল সংসারের এতো অশান্তির কারণে সে আত্মহত্যা করেছে! জীবনানন্দের সাথে তুলনা করে কথা বললাম না আসলে বললাম মৃত্যুর ঘটনাটার জন্য।

ঘোরগ্রস্থতা কবিদের থাকবেই তবে এই ঘোরগ্রস্থতার কারণে যদি কবি মৃত্যুবরণ না করতেন তাহলে আমাদের বাংলা সাহিত্য না জানি আরও কত সমৃদ্ধ হতে পারতো!

অসাধারণ একটা সিরিজ লিখে যাবার জন্য ধন্যবাদ।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।