"বড় বড় নগরীর বুকভরা ব্যথা..."

রাফি এর ছবি
লিখেছেন রাফি (তারিখ: সোম, ২৭/০৭/২০০৯ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাঝে মাঝে সময় তার চঞ্চলতা ভুলে যায় অথবা সময়কে ভুলে যাই আমি।এই শহরের পথে পথে অনেক সূর্যকাতর দিনে আমার পদক্ষেপ শিথিল হয়ে এসেছে, আমি থেমে গেছি অনেক সূর্যজ্বলা মধ্যাহ্নেও। বিকেলের বৈরাগ্য আর সন্ধ্যার মাধূর্যে অনেকবারই আমি আনাড়ি অভিনেতায় পরিণত হয়েছি, নিরুত্তাপ স্বাভাবিকতার সাদামাটা উৎসবেও আমার নিমন্ত্রণ ছিল না কখনই। তবু আমি বেঁচে ছিলাম; মুখর ছিলাম আমার মত করে। নিজেকে ছাপিয়ে উঠার এক অক্ষম চেষ্টা আমাকে প্রায়ই উপহাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে, আমার হাত পা মুক্ত ছিল না বেশিরভাগ বিক্ষোভেই। লক্ষ জনতার অযুত মিছিলে আমাকে মৌন শ্লোগান নিয়ে হাঁটতে হয়েছে বিপ্লবী হওয়ার মানসে; অথচ প্রিয়জনের শোক মিছিলে সাহস করে আমি দু'কদম ফেলতে পারিনি কখনো। যাবতীয় মানবীয় অনুভূতিকে আমি বিদ্রুপ করেছি অনেক সচেতনতায়।অশ্রু ব্যাপারটাতে অস্বাভাবিক রকম অবমাননা ছিল আমার।শেষ পর্যন্ত আমাকে আবেগের বাণিজ্য করেই আহার যোগাতে হয়। স্ববিরোধী উপাধিটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্যই লাগে তাই জীবনে ভণ্ড বলে গালি দিয়ে আমাকে বিব্রত করতে পারে নি কেউ।

সমাজ মানুষকে মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয় না যতক্ষণ না সে নিজেকে সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণ করে; সমাজে একটা শ্রদ্ধার আসন পেতে হলে তাকে বাঁধাধরা কিছু গুণের ফেরি করে বেড়াতে হয়।দারুণ সংবেদনশীল একটা মন নিয়ে ঘরের কোণে চুপটি করে বসে থাকলে কেউ এসে দরজার কড়া নাড়বে ততটা ভাগ্যবান সবাই হয় না, আমার হয়ে ওঠা হয়নি। ভাবনাগুলো বড় এলেমেলো হয়ে গেছে আজকাল, গোছানো শব্দটার উপর আমার অধিকার হারাতে বসেছে প্রায়; প্রায়ই ভাবি জীবনে কিছুই হওয়া হলো না ; আবার হয়েছি হয়ত অনেক কিছুই। আরো দশ বা বিশ বছর যদি বেঁচে থাকা হয় অপূর্ণতার তালিকাটা লম্বা হবে আরো বুঝতে পারি, হয়ত লম্বা হবে প্রাপ্তির হিসাবটাও। নদীর এক তৃতীয়াংশ সাঁতরে'ছি মাত্র, তবু কেন জানি আজকাল 'নিতাই' কে বড় মনে পড়ে, তারাশঙ্কর এর 'নিতাই'। সকাল সন্ধ্যা কানের কাছে নিতাই হাহাকার করে বেড়ায়"জীবন এত ছোট কেনে, জীবন এত ছোট কেনে।"

জীবনে কী হতে চেয়েছিলাম, কী-ই বা হতে চাই; কখনো বোধহয় বোঝা হয়ে উঠবে না আমার; কজন'ই বা বুঝতে পারে????


মন্তব্য

হিমু এর ছবি
রাফি এর ছবি

যা ভাবছিলাম; সম্পাদনা করার আগেই ধরা...হাসি

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দারুণ লিখেছেন। অনেকের সাথেই আপনার ভাবনাগুলো মিলে যাবে।

রাফি এর ছবি

পিপিদা আমরা সবাই একই ভাবনা ভাবি, একই নিয়মের মুন্ডুপাত করি; কিন্তু নিয়ম পাল্টানোর সাধ্য আমাদের নেই।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

রাফি এর ছবি

ইয়ে, মানে...
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

রাফি... রাফি... ভাই রাফি... বললে বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, যে কয়জন সচলের অনুপস্থিতি আমাকে মাঝে মাঝে ভাবায়, যাদের কারণে চিন্তিত হই, খুব মিস করি, আপনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আমি বহুদিন ভাবছি আপনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কী সমস্যার কারণে সচলে আসতে পারেন না, ইত্যাদি...

লেখাটা কেন জানি না খুবই মন ছুঁয়ে গেল। আপনার লেখায় অদ্ভুত এক মায়া মেশানো থাকে, আবেগটা স্পর্শ করে খুব। মনে হয় এই লেখাটা আমার জন্যই লেখা, আমাকে নিয়েই লেখা। (এই পোস্টেও) আপনার এই ভাবনাগুলো মাঝে মাঝে আমার মধ্যেও উঁকি দেয়...

যেখানেই থাকেন, ভাল থাকেন। অসংখ্য শুভেচ্ছা আর শুভকামনা থাকল।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

রাফি এর ছবি

আপনার মন্তব্য মন ছুঁয়ে গেল খুব।
প্রহরী ভাই, আপনার মোবাইল নম্বর বদলেছেন বোধ হয়। আপনাকে ধরার চেষ্টা করেছি অনেকবার, অসচল থাকার সময়টুকুতে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

হুমমম... ভাবনা গুলো আমারও একই, শুধু আমি এতটা সুন্দর করে বলতে পারিনা, এই যাহ!

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রাফি এর ছবি

আপনার বলার ভঙ্গিটাও কিন্তু বেশ! এত সহজভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে সাহস লাগে...।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নিবিড় এর ছবি

আরে... অনেক অনেক দিন পর লিখলেন তাইলে। প্রহরী ভাইয়ের মত অনেকদিন মনে হয়েছে, কই গেল লোকটা? মাঝে মাঝে মন্তব্যে দেখা গেলেও লেখায় দেখা যায় নি আপনাকে অনেক দিন। অতিথি থাকার সময় আপনার কিছু মন্তব্য আমাকে এখনো দারুন অনুপ্রাণিত করে।

লেখাটা মন ছুয়ে গেল। কী হতে চেয়েছিলাম আর কি হতে চাই বা কি হতে পারব আসলেই মনে হয় পরিষ্কার নয় আমাদের অনেকের কাছেই। ভাল থাকবেন।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রাফি এর ছবি

ধন্যবাদ নিবিড়। তোমার নতুন সিরিজ কিন্তু আমার চোখ এড়ায় না; অফলাইনে পড়ি বলে হয়ত মন্তব্য করা হয়ে উঠে না।
ভাল থেক।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

সচল জাহিদ এর ছবি

ভাবনাগুলো বড় এলেমেলো হয়ে গেছে আজকাল, গোছানো শব্দটার উপর আমার অধিকার হারাতে বসেছে প্রায়; প্রায়ই ভাবি জীবনে কিছুই হওয়া হলো না ; আবার হয়েছি হয়ত অনেক কিছুই। আরো দশ বা বিশ বছর যদি বেঁচে থাকা হয় অপূর্ণতার তালিকাটা লম্বা হবে আরো বুঝতে পারি, হয়ত লম্বা হবে প্রাপ্তির হিসাবটাও।

রাফি যাক তোমাকে সচলে দেখা গেল। তোমার লেখাটি হৃদয় ছুঁয়ে গেল, কিন্তু সেই সাথে মনটাও খারাপ হয়ে গেল। এভাবে ভেঙ্গে পড়া তোমাকে সাজেনা, সময় পেলে একসময় আমার কিছু কথা তোমার সাথে শেয়ার করব বুয়েটকে নিয়ে তাহলে বুঝবে কতটা কষ্ট আমি পেয়েছি। আমরা ব্রেইন ড্রেইন বলে বলে মাথা খুঁড়ে মরি অথচ তার কারন কখনই খুঁজে দেখিনা। ভাল থেক।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রাফি এর ছবি

অনেকদিন ধরেই অনেক কথা জমেছিল। ভেঙ্গে যাতে না পড়ি, দোয়া করবেন স্যার।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার পোস্ট দেখে ভালো লাগল। ভূমেন্দ্র গুহর সাথে ঘরোয়া বৈঠকের দিন আপনাকে মিস করেছি। আপনার ফোন নাম্বারও আমার কাছে ছিলনা আর আপনিও তখন ডুব মেরেছিলেন। যাকগে আবার জীবনানন্দ নিয়ে একটা কিছু শুরু করে দিন। উনি তো মহাসমূদ্র তাই উনার বা উনার কবিতা সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় পেতে কষ্ট হবার কথা না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তিথীডোর এর ছবি

"জীবনে কী হতে চেয়েছিলাম, কী-ই বা হতে চাই; কখনো বোধহয় বোঝা হয়ে উঠবে না আমার; কজন'ই বা বুঝতে পারে????"

এই লাইনক'টায় দুই তারা।
বাকি অংশে তিন তারা।
২+৩= কাঁটায় কাঁটায় পাঁচতারা খোচিত হইলো! হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।