যে ডুবে ভেসে উঠি বারবার - ০৩

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০১/২০১০ - ১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
স্বভাবগত কারণে চোখ টিপি নারী-সম্পর্কিত লেখাগুলো একটু বেশি পড়া হয়। স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট, অ্যাকশন অ্যাইড বাংলাদেশ ও পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু পুস্তিকা পড়ছিলাম। বিষয়- নারীর ওপর সহিংসতা। কী কী করলে নারীর প্রতি সহিংসতা ধরা হবে, যৌতুকপ্রথা বন্ধ করতে হলে কী কী করা উচিত ইত্যাদি নানা বিষয়ে ভরা পুস্তিকাগুলো।

বেশ অবাক হয়েই লক্ষ্য করলাম- প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই পুরুষকে নারীর প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরা হয়েছে। নারীর বর্তমান দুরবস্থার মূল কারণ পুরুষ কিংবা বলা ভালো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা- এতে সন্দেহ নেই; কিন্তু যখন সচেতনতামূলক আন্দোলনের পর্যায় আসে, ঘোষিত ‘প্রতিপক্ষ’কে সহায়তাকারীর ভূমিকা নিতে বলা হয়, তখন এ ধরনের মনোভাব কি পুরো আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না? আজকে নারীর পিছিয়ে পড়ার জন্য যদি একমাত্র পুরুষকেই দায়ী করা হয়, এবং সে অনুযায়ী নারী-আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত এনজিওসমূহ কর্মপন্থা ঠিক করে, তাহলে এদেশে নারীমুক্তি (অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে) সুদূরপরাহত বলা যায়। পুরুষ যতোটুকু নারীর প্রতিপক্ষ, নারীও তার চেয়ে নারীর কম প্রবল প্রতিপক্ষ নয়। মূল বিষয় হলো- মানসিকতা। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা যেখানে যেখানে আছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে সেগুলোকেই আসলে ধরা উচিত। নারী হলেই যে তিনি নারী-নিপীড়নকারী নন, এ ধারণার বৃত্ত থেকেও বেরিয়ে আসা দরকার। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা অনেক নারীর মধ্যেই প্রবলভাবে বিদ্যমান। আমাদের প্রধান দুই নেত্রী নারী- কিন্তু তারা কি পুরুষতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক নন? লড়াইটা আসলে কার সাথে- সেটা ঠিক করতে না পারলে নিজের শক্তিক্ষয় ছাড়া অন্য কোনো ফলাফল পাওয়া দুষ্কর।

যৌতুক নিয়েও একই কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, সম্পদের ওপর নারী-পুরুষের সমঅধিকার যতোদিন না প্রতিষ্ঠা করা যাবে, ততোদিন যৌতুকপ্রথা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়- রূপ বদলাবে কেবল। যতোই সমাজ-সচেতনতা বাড়ান বা প্রচারণা চালান, যৌতুকের মূল কারণ নারী-পুরুষের সম্পদের অসম-বণ্টন। এই বণ্টন যতোদিন না হবে যৌতুক ততোদিন থাকবে, নানা ফর্মে, গিফট হিসেবে, পিতামাতা কর্তৃক কন্যাকে গাড়ি উপহার-ফ্ল্যাট উপহার-স্বর্ণ উপহার-জামাই বাবাজিকে মোটর সাইকেল-ফ্রিজ-টিভি-নিদেনপক্ষে হানিমুন করার জন্য টাকা উপহার- নানা ফর্মে যৌতুকপ্রথা থাকবেই। মধ্যবিত্তের শব্দ ও বাক্যজনিত সমস্যা বা সংবেদনশীলতা বেশি, যৌতুক তাই দিন দিন পরিণত হচ্ছে উপহারে। আচ্ছা, পিতামাতার সামর্থ্য থাকলে মেয়েরা কি চান না বিয়ের সময় পিতামাতার কাছ থেকে কিছু না কিছু নিয়ে আসতে? চান না নিজের হাতে কিছু একটা সম্পদ রাখতে? মেয়েরা কি এর উত্তর দেবেন? আচ্ছা, যদি ছেলেদের মতো মেয়েরাও পিতামাতার সম্পদের উত্তরসূরী হন, তাহলে কি মেয়েরা বিয়ের সময় পিতামাতার কাছ থেকে কিছু আনতে চাইবেন?
১২.১২.০৯

২.
অফিস শেষ হয় ৫.১৫-তে। আমি নেমে আসি একটু আগেই- পুঁচকিগুলো আসে তো! ওদের নিয়ে একটু খেলা করি। কেউ কেউ যাবার সময় হ্যান্ডশেক করে, হাত নেড়ে দেয়, কেউ কেউ বললে পাপ্পিও দেয় হাসি । একজন তো দূর থেকে ফ্লাইং কিসও দেয় মামাকে। কয়েকটা রাজকন্যা বিকেলটাকে ভরিয়ে রাখে প্রতিদিন। অফিস ছুটি আমার কাছে তাই শুধু অফিস থেকে বেরুনোই নয়, গুল্টুপুল্টুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটানোর লোভনীয় অফারও।

এ মাসে বাসা বদল করলাম। আগের রুটের অফিসের গাড়ি ছাড়তো ৫.২৫-এ। বর্তমান রুটের গাড়ি ছাড়ে ৫.১৬-তে। তার মানে আমাকে মোটামুটি আরও আগে থেকেই গাড়িতে উঠে বসে থাকতে হবে- আর ওই সময়টাতে ছোট্ট মামারা মাত্র বেরুনোর প্রস্তুতি নেবে। ওরা যখন বের হবে, আমি হয়তো তখন গুলশান ছাড়িয়ে বাড্ডায় পৌঁছে যাবো।

অর্থাৎ মামাদের সাথে বিকেলে এখন আর দেখা হবে না। কোনোদিন দেখা হলে, সেটা হবে সৌভাগ্য। এখন থেকে কচি দাঁত দিয়ে কামড়ে কামড়ে লালামেশানো অর্ধেকটা বাদাম বিকেলবেলা কেউ মুখে তুলে দিবে না, নিজের ঠোঁটের লিপিস্টিক দিয়ে কেউ মামার গালে টিপ দিয়ে দিবে না, কিংবা সিঁড়ির ওপর থেকে নিচে লাফ দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না ধরবে না কেউ- আমার মামারা আমাকে মিস করবে কিনা জানি না, কিন্তু প্রতিটা বিকেলে আমার হৃদয়ে একটা ছোট্ট বেদনার ঢেউ উঠবে। এটা ঢাকা শহর না হলে কবেই গুল্লি মারতাম অফিসের গাড়িকে!
০৩.০১.১০

৩.
গতকাল রাতে ছিনতাই হয়ে গেল- দুটো মোবাইল সেট আর কিছু টাকা। রাত তখন মাত্র নয়টা বাজে, বাসাবো প্রধান সড়কের ওপর ছিনতাইটা হলো। রিকশাটা নাটকীয়ভাবে থামিয়ে কয়েকজন মিলে জোর করে (আসলে জোর করতে হয় নি, গলায় ছুরি ধরে চাহিবামাত্র নিজে থেকেই দিয়ে দিয়েছি) এগুলো নিয়ে নিলো। প্রথমদিকে খুব একটা দুঃখ হয় নি- এও তো জীবনের একটা অংশ। রাত যতোটুকু বাড়তে লাগলো ততোই যেন একটা অপমানবোধ কিংবা অসহায়ত্বের বোধ জন্ম নিতে লাগলো- কয়েকটা মানুষ আমাকে অসহায় বানিয়ে আমার জিনিসগুলো নিয়ে গেলো, আর আমি কিছুই করতে পারলাম না! আচ্ছা, আমরা ধনীরা যখন গরীবের সম্পদ নানা কৌশলে লুট করে তাদের অসহায় বানিয়ে নিয়ে যাই, তখন কি গরীবদেরও এই একই অনুভূতি হয়? নাকি তাদেরকে যে অসহায় বানানো হচ্ছে, সেটা তারা বুঝতেই পারে না!
১৩.০১.১০


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সমবেদনা!
........................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ, পান্থ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রেশনুভা এর ছবি

১। আপনার চিন্তাভঙ্গী ভালো লাগলো। আপনার মতন আমিও মেয়েদের কাছ থেকেই উত্তরের অপেক্ষায়।
২। আপনার মামাদের সাথে খেলতে মন চায়।
৩। এটিএম কার্ড, আইডি কার্ড এগুলো ঠিক আছে তো? ছিনতাই এর পরে আসলেও মেজাজ খারাপ লাগে কতটা অসহায় আমরা তা ভেবে।

গৌতম এর ছবি

১. খুব একটা উত্তর অবশ্য পেলাম না।
২. আমার মামারা কিন্তু বেশ মুডি। অনেক কষ্ট করে আমাকে তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়েছে। হাসি
৩. এগুলো ঠিক আছে। মানিব্যাগটা চাওয়ামাত্র ফেরত দিয়েছে। টাকা বা মোবাইলের জন্য যতোটা খারাপ লেগেছে, তার চেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে অসহায়ত্বের কথা ভেবে।

সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুবুল হক এর ছবি

ঘোষিত ‘প্রতিপক্ষ’কে সহায়তাকারীর ভূমিকা নিতে বলা হয়, তখন এ ধরনের মনোভাব কি পুরো আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না?

এক্কেবারে জায়গামত হাত দিছেন বস্ ।

পুরুষ যতোটুকু নারীর প্রতিপক্ষ, নারীও তার চেয়ে নারীর কম প্রবল প্রতিপক্ষ নয়।

ঠিক এইকথাটাই বেগম রোকেয়া আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে বলে গেছেন। তিনি একে বলেছেন মানসিক দাসত্ব । অনেকদিন খাঁচায় থাকলে পাখি যেমন আকাশে উড়তে ভুলে যায় ঠিক তেমন। আমার মনে পড়ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলগুলোর গেইট আগে (সম্ভবত ৯২/৯৩ পর্যন্ত) বিকেল ৬ টার পর বন্ধ হয়ে যেত। মেয়েদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে মেয়েদের হলে ফেরার শেষ সময় করা হল রাত আটটা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে শামসুন্নাহার ও রোকেয়া হলের কিছু মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিছিল করলো, ভিসির কাছে স্মারক লিপি দিলো - মেয়েরা নাকি এতে খারাপ হয়ে যাবে ! হা.. হা ..হা..

আপনার মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় সমবেদনা জানাই। জীবনের প্রথম মোবাইল ছিনতাই নিয়ে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম, লেখাটি সচলায়তনে দিয়ে দেব শিগগীর।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

নারী আন্দোলনের নামে যা হয়,তাতে যে নারীদের মানসিক ভাবে আরও খাটো করে দেয়া হয় তা বলাই বাহুল্য। রোকেয়া আধুনিক ছিলেন মননে,নারীকে সম্মান দিয়েছেন,মানুষ হতে বলেছেন। নারী অথবা পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা অধিকার আইন থাকবে অথবা অধিকার বোধ আলাদা হবে,এ আমি বিশ্বাস করি না। আমি বেঁচে থাকতে চাই মানুষের সম্মান নিয়ে। অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক মানুষের। জয় হোক মানবিকতার।

-স্নিগ্ধা করবী

গৌতম এর ছবি

আপনার কথাগুলো খুব ভালো লাগলো। আশেপাশের নারীদের মুখে যদি এগুলো শুনতে পেতাম!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

গৌতম এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা পড়ে বেশ মজা লাগলো। এরকম কিছু মানুষ সবসময় সব জায়গায় পাওয়া যায়। মন খারাপ

আপনার লেখাটি পড়ার অপেক্ষায় আছি। তাড়াতাড়ি দেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- যৌতুকের বিরুদ্ধে যারা কথা কবো তাগোরে কইষ্যা মাইনাস। আমি আগে বিবাহ কৈরা নেই। পরিবাররে যৌতুকের লাইগ্যা কয়েকদফা অত্যাচার কইরা নেই, তারপর যৌতুকের বিরুদ্ধে মালকোচা মাইরা নামুম। অখন এইটা নিয়া কথা কইলেই...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

গৌতম এর ছবি

আমি প্রধানমন্ত্রী হইলে বিবাহোদ্যত সব নারী-পুরুষকে লাখ পাঁচেক করে টাকা দিতাম। ইয়ে, মৃত ব্যক্তিদের সৎকারের একটা খরচ আছে না! চোখ টিপি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে ওরা ভালু লুক টের পাইছে। আমার বড়ভাইকরে খালি ছিনতাইকারি ধরে। হে ও ভালু লুক।

গৌতম এর ছবি

আমি অনেক ভালু। কিন্তু এইবার গুণ্ডাপাণ্ডা হইতে মঞ্চাইতেসে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যৌতুক না পাওয়ার জন্য সমবেদনা
অফিসের গাড়িতে ঝুলে যাবার জন্য সমবেদনা
আর মুবাইলের জন্য সমবেদনা

গৌতম এর ছবি

অসংখ্য সমবেদনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শেখ নজরুল এর ছবি

হুমমম..............।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

গৌতম এর ছবি

এর মানে কী ভাই?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নাশতারান এর ছবি

এ যুগের শিক্ষিত মেয়েদের আধুনিকরা দেখলে মেজাজ খিঁচড়ে যায়, দাদা।এরা নারী-পুরুষ সমঅধিকার চায়, আবার বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হলেই সামনের আসনের পুরুষটির দিকে কটাক্ষভরে চেয়ে থাকে।
বেগম রোকেয়া ভেবেছিলেন পুরুষের সমকক্ষ হতে চাওয়াটাই স্বাধীনতার পথে মেয়েদের এগিয়ে নেবে। আজকাল অধিকাংশ শিক্ষিত মেয়ে পুরুষ সহকর্মীর সমান বেতন পেয়ে নিজ পয়সায় শাড়ি লিপিশটিক কিনতে পেরেই আহ্লাদে আটখানা। পরিস্থিতি আদতেও কি বদলেছে?

আমাদের ব্যাচের র‌্যাগের শেষ রাতে আমরা রাত জেগে বুয়েট শহীদ মিনারে আড্ডা দিয়েছিলাম। আমি হাঁচড়ে পাঁচড়ে চারটা মেয়েকে রেখে দিয়েছিলাম আড্ডায়। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ! সারা রাত গান-বাজনা, আড্ডাবাজি করে কাকডাকা ভোরে হলে ফিরেছিলাম সবাই আর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এমন রাতভর আড্ডার আয়োজন করা হবে আরো।
কিন্তু সে আর হয়নি। ঘরে ফিরেই মেয়েরা তাদের বাস্তববুদ্ধি(!)র চোখরাঙ্গানিতে আধখানা হয়ে গেলো এবং আমাকে বোঝাল, "মেয়েরা চাইলেই সব করতে পারেনা।"

এই মেয়েগুলো দুর্ধর্ষ বেতনে দুর্দান্ত সব চাকরি পেয়ে বিয়ের বাজারে নিজের দাম বাড়াবে। সংসারের আমদানি বাড়াবে। আবার বয়ফ্রেন্ড বা স্বামীর মন যোগাতে নিজের বন্ধুমহল এমনকি চরিত্রও বদলে ফেলবে। এই নিরাপত্তাহীনতার উৎস কোথায়?

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সবজান্তা এর ছবি

ব্যাংকে লাইনে না দাঁড়িয়ে, সবার আগে টাকা দেওয়ার মানসিকতাকে আমি অপছন্দ করি। তবে বাসের ক্ষেত্রে এই বক্তব্যে আমি সহমত না।

মোটামুটি দীর্ঘদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন শ্রেণীর বাসে চলাফেরা করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রচুর পুরুষ- যারা বাসে উঠেন, তাদের চরিত্র অত্যন্ত চমৎকার! অফিসগামী উচ্চপদস্থ অনেক পুরুষই বাসের ভীড়ে কী ধরনের কাজ করে থাকেন তা আমি নিজের চোখেই দেখেছি।

আমি অন্তত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে, মেয়েদের সংরক্ষিত আসনের পক্ষপাতী।


অলমিতি বিস্তারেণ

গৌতম এর ছবি

আমি অবশ্য সংরক্ষিত আসনের পক্ষপাতী নই। এতে বরং চিন্তাভাবনা কিংবা সক্ষমতার দিক দিয়ে মেয়েদেরকে আরও সংরক্ষিত করে দেওয়ার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় বলে আমার ধারণা। অসুস্থ বা শারীরিকভাবে অক্ষম ছাড়া কারও জন্য আসন সংরক্ষিত থাকা উচিত নয়। মেয়েরা যে সমস্ত ঘটনার শিকার হন, সেগুলোর জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসা জরুরি। প্রতিবাদ ছাড়া সংরক্ষিত আসন এগুলোকে নীরব প্রশ্রয় দেয়।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রুখসানা তাজীন [অতিথি] এর ছবি

প্রথম নারী হিসেবে মন্তব্য প্রদান করতে হলো আমাকেই, যদি নিক-এর আড়ালে কোন নারী ইতোমধ্যে না করে থাকেন। আমি একমত 'প্রতিপক্ষ' বিষয়ে শুধু পুরুষদের চিহ্নিত না করার ব্যাপারে। আসলে এখানে 'পুরুষ' বা 'নারী' প্রতিপক্ষ কিনা তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে নারী উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক মানসিকতাই হচ্ছে আসল প্রতিপক্ষ। একটা ছেলেকে সমাজে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যে প্রতিবন্ধকতাগুলোর মুখোমুখি পড়তে হয়না, কিন্তু একটা মেয়েকে যেসবের ভিতর দিয়ে যেতে হয়, সেগুলোই আসল প্রতিপক্ষ। স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত হওয়ার ভয়, নিরাপত্তার অভাবের দোহাই কিংবা স্রেফ জনারণ্যে নারীর পদচারণা একটা অশোভন বিষয়- এরকম মানসিকতা লালন করে আমি, আমরা প্রতিক্ষেত্রে একটা নারীশিশুর বেড়ে উঠার গণ্ডিকে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছি। এই চিত্র প্রতিটা বলবোনা, তবে অধিকাংশ পরিবারে এবং যারা নারী আন্দোলনের সাথে জড়িত তারাও নারীর স্বাধীনতার ব্যাপারে কতোটা আন্তরিক, এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। নারী স্বাধীনতা শব্দটা শুনলে অনেকের মধ্যেই একধরণের বিকার লক্ষ্য করা যায় এবং আমার দেখা এধরণের বিকারগ্রস্তদের অধিকাংশই পুরুষ। উচ্চবিদ্যালয়ের একজন পুরুষ শিক্ষককে দেখেছি যিনি 'লোকে খারাপ বলবে' এই ভয়ে নিজের স্ত্রীকে সারাজীবনে বাড়ির পাশের বাজারটিতে যেতে দিতে চাননি। আরেকটা এসএসসি পাশ মেয়ের কাছে আক্ষেপ শুনেছি যে আত্মীয় বাড়ি আর হাসপাতাল ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া স্বামী-শ্বশুর পছন্দ করেননা, তাই মেয়েটি বাইরের আলোবাতাস দেখা থেকে একরকম বঞ্চিত। আমি জানি, আপনিও জানেন আমাদের বৃহত্তর সমাজে এ চিত্র ভুরিভুরি। আমি যে বাইরে বের হতে পারাকেই নারী স্বাধীনতার একমাত্র উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করেছি, সেটা কেন আশা করি তা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখেনা। একটা মেয়ে তার জ্ঞান এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পছন্দনীয় বিষয়গুলিতে অংশ নিতে পারবে- এই কথা শুনলেই যাদের গাত্রদাহ হয়, তারাই আসল 'প্রতিপক্ষ', নারী পুরুষ নির্বশেষে। তবে পুরুষরা মন-মানসিকতায় একটু শোভন হলে সবক্ষেত্রে নারীর বিচরণ যে বহুলাংশে সহজ হয়ে যাবে এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।

গৌতম এর ছবি

আসলে এখানে 'পুরুষ' বা 'নারী' প্রতিপক্ষ কিনা তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে নারী উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক মানসিকতাই হচ্ছে আসল প্রতিপক্ষ।
ঠিক এই কথাটাই বলতে চাই।

নারী স্বাধীনতা শব্দটা শুনলে অনেকের মধ্যেই একধরণের বিকার লক্ষ্য করা যায় এবং আমার দেখা এধরণের বিকারগ্রস্তদের অধিকাংশই পুরুষ।
কিছুটা দ্বিমত। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীদের মধ্যেও এমনভাবে ঢুকে গেছে যেখানে এই ধরনের বিকার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেখা যায়। মনমানসিকতায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও শোভন হতে হবে- কারণ নিজেদের অবস্থান ও বঞ্চনা নিজেরা যথাযথভাবে উপলব্ধি না করতে পারলে অন্য সব ফ্যাক্টর পজেটিভ হলেও সবক্ষেত্রে নারীর বিচরণ সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।