কতিপয় মা ও বিপন্ন দেবশিশুরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/১১/২০০৭ - ১:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..
- অপর্ণা সান্যাল -
আমার সকালবেলাটা কাটে কিছু দেবশিশুর সাথে এক স্কুলে। এখনো এই অসম্ভব জটিল পৃথিবীর কুটিল চক্রান্তগুলো ওরা শিখে নিতে পারেনি। ওদের অপরাধগুলোও এত বেশি সরল যে মনে হয়, পৃথিবীটা যদি শুধু ওদেরই হাতে থাকত, তাহলে হয়তো বেঁচে থাকাটা অনেক সুন্দর হতো। ...

শিশুদের বয়স চার কি পাঁচ। কিন্তু এরচেয়েও ছোট যারা, তাদের কি বলবো, সাক্ষাৎ দেবদূত, তাই না?

এরকমই এক দেবদূতের বয়স সাড়ে তিন মাস। আমার সহকর্মির শিশু, গোলগাল হাত পা, আদুরে জ্বলজ্বলে চোখ। আর মাড়ি বের করে তার ভূবন ভোলানো হাসিতে সবাই কুপোকাত!

চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে ওর মা গত ১ নভেম্বর কাজে যোগ দিয়েছে। অনেকদিন পর তাকে নির্ধারিত ডেস্কে দেখে আমি খুশী হই। জিজ্ঞেস করি, কেমন আছে আপনার বাবু ?

সহকর্মির চোখ ভিজে আসে। এতটুকু ছোট্ট মানুষটাকে সে বাসায় রেখে এসেছে একা, একদম একা!...

নানান দুশ্চিন্তা এসে ভর করে একসঙ্গে। যদি খিদেয় কাঁদতে কাঁদতে বাবুর শ্বাস আটকে যায়; কিংবা ভিজে কাপড়ে শুয়ে থেকে ওর ঠাণ্ডা লাগে। অথবা ধরা যাক হঠাৎ বাড়িতে আগুন লেগে গেলো।... আমি আর ভাবতে পারি না।

কয়েক বছর আগে প্রথম আলোর নকশায় সুমনা শারমীনের একটা লেখা পড়েছিলাম কর্মজীবী মা'দের নিয়ে। কতোটা অনিশ্চয়তা নিয়ে তারা কাজ করেন, তা শুধু তারাই জানেন। এইসব দুঃখ - কষ্ট তাদের একার।

আমার মা’ও কর্মজীবী ছিলেন। কিন্তু আমার ভাইবোনদের ওই রকম একা একা বড় হতে হয়নি। আমাদের মাথার ওপর যৌথ পরিবারের প্রগাঢ় ছায়া ছিলো। আর এখন তো দেখতে পাই, নগর জীবনে যৌথ পরিবারগুলো কি দ্রুত ভাঙছে!

এই সব অসহায় মা’দের জন্য কী কর্মস্থলে থাকতে পারেনা একটি করে ডে কেয়ার সেন্টার? এ জন্য কী খুব বেশী খরচ করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে? মেয়েদের একনিষ্ঠতা তো নিয়ে সব প্রতিষ্ঠানই মোটামুটি সন্তুষ্ট, তাই না!

অবশ্য বাসার কাজের মেয়ে এই সমস্যার একটা চটজলদী সমাধান। তারপরও সেখানে শিশুর নিরাপত্তা, চিত্ত বিকাশ, যথাযথ পরিচর্যা - ইত্যাদি বিষয় থেকে যায়।

আমি গার্মেন্টেসের মা'দের কথা ভাবি। যারা উদয় - অস্ত হাড়ভাঙা খাটুনি দেন, তারা দুধের শিশুটিকে বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রেখে এসে না জানি কোন অনিশ্চয়তায় থাকেন সর্বক্ষণ!

আসলে এই নগর জীবন দেখতে পায় না, মেয়েরা সামনে এগুতে গিয়ে কতোটা রক্তাত হন; কতটা বিপন্নতায় তারা বাস করেন।...

এই সব জানতে হলে বোধহয় সেই যন্ত্রনার ভাগ বুঝে নিতে হয়!


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আহ দেবশিশুগণ!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

রেজওয়ান এর ছবি

জার্মানীতে জন্মহার নিন্মমুখী। তাই শিশুর জন্মকে তারা উৎসাহিত করে বিভিন্নভাবে। এমনিতেই পরিবারে একের অধিক শিশু থাকলে আয় বিবেচনা করে শিশুভাতা, বিনামুল্যে শিক্ষা (ডে কেয়ার সহ) ও কমমুল্যে (ইনসুরেন্স) বিশ্বমানের চিকিৎসা। এছাড়াও ইন্সুরেন্স কোম্পানি দিনে ১৩ ইউরো করে দেয় প্রসূতিকালীন ছুটির সময়ে (শিশু জন্মের ৬ সপ্তাহ আগে থেকে জন্মের ৮ সপ্তাহ পরে পর্যন্ত) এবং এসময়ে বেতনের বাকী অংশটুকু দেয় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

তারপরেও এবছর জানুয়ারী থেকে নতুন নিয়ম কার্যকরী হয়েছে, শিশু জন্মের ১৮-২৪ মাস পর্যন্ত মা যদি শিশুর দেখভাল করার জন্যে চাকুরি ইস্তফা দেয় তাহলে তার সাম্প্রতিক বেতনের অর্ধেকটার (১৮০০ ইউরো পর্যন্ত লিমিট) সমান ভর্তুকি দেবে সরকার। এ ঘোষনার পরে অনেক কর্মজীবি মা চাকুরি ছেড়ে শিশুদের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন।

এ হল এই সমাজের কথা।

বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় যদি পিতা-মাতা বা নিকট আত্মীয়ের সহায়তা না পাওয়া যায় তবে চাকুরিজীবি মহিলার খুবই কষ্ট যা আপনি উল্লেখ করেছেন।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

সৌরভ এর ছবি

মায়াভরা লেখা।
এর আগে আদিবাসীদের নিয়ে লেখাটাও ছিল দারুণ।
ধন্যবাদ, অপর্ণা সান্যাল। আরো লিখুন।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।