চোখের সামনে সিদ্ধান্তহীনতা

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: মঙ্গল, ১১/১২/২০০৭ - ৩:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অফিসের কাজে গত সপ্তাহে ঘুরে আসলাম উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে। ঢাকা থেকে দিনাজপুর, সেখান থেকে মানচিত্র অনুযায়ী নিচে নামতে নামতে বাগেরহাট পর্যন্ত গেলাম। বাগেরহাট থেকে মাগুরা হয়ে আবার ঢাকা।

এর আগেও এ ধরনের ট্যুর করেছি। কিন্তু এবারের ট্যুরের ক্ষেত্রটি ছিলো ভিন্ন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলেছে, সিডর এসে বদলে দিয়েছে প্রতিবেশ পরিস্থিতিও। ফলে একবছর আগেকার মানুষ বদলেছে অনেকখানিই।

আমার মনে পড়ে, আজ থেকে বছরখানিক আগেও আমি যখন জিজ্ঞেস করতাম, কী করছেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী- তখন এক ধরনের কনক্রিট উত্তর পাওয়া যেতো তাদের কাছ থেকে। কেউ আশাবাদী উত্তর দিতো, কারো উত্তর হতো চরম নৈরাশ্যবাদীর। তবু কেউ একটা কিছু বলতো। এবারকার উত্তর শুনে মনে হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের ফলে মানুষ কিছুটা আশা দেখতে শুরু করেছে যে, এখন হয়তো একটা কিছু পরিবর্তন আসবে তাদের জীবনে। যেদিন থেকে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিয়েছে, সেদিন থেকেই হয়তো তাদের এ আশার সূত্রপাত। কিন্তু দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, সার ইত্যাদি বিষয়ে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সে আশা কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি সিডরের প্রভাবও বেশ ভালোভাবেই পড়েছে তাদের ওপর। হাতে টাকা নেই, রান্না করার মতো খাবার নেই, শীতের পোশাক নেই- সব নেইয়ের কারণে মানুষ বুঝতে পারছে না সামনের দিনগুলোতে কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। কোথায় গিয়ে কী করা উচিত, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মানুষগুলো।

সিদ্ধান্ত ভুল হোক বা শুদ্ধ, নিতে পারাতেই এক শান্তি। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা যে যন্ত্রণার!

গৌতম


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

নির্বাচিত সরকারগুলো গণধিক্কারের শিকার হয়েছে জনগণের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকায়। অনির্বাচিত অলৌকিক সরকারও সেই পথেই হাঁটছে। একটা জিনিস আমি খুব অবাক হয়ে ভাবি, প্রত্যেকটা সরকারে যাওয়া লোকগুলো এমন চরম ভোদাই হয় কি করে! সবাই যখন জনগণকে বাঁশ দেয়, তখন একটু সদিচ্ছা নিয়ে ভালো কাজ করলেই তো জনগণেরও উপকার হয়, নিজেদের ক্ষমতাও অটুট থাকে। দেশের যদি উন্নতি না হয়, টাকার মান হু হু করে কমতে থাকে, সমান তালে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে সেই তপ্ত হাওয়া থেকে কেউইতো রেহাই পাবে না। প্রত্যেকটা সরকারে একপাল ছাগোলই থাকে, যারা পুরোটা সময়ই লুটেপুটে সোনার হাঁসটাকে একবারেই কাত করতে চায়। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনাই নেই এইসব আবাল হায়েনাদের।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৌরভ এর ছবি

অনেক দিন দেশে ফেরা হয়ে ওঠেনা। প্রায় বছর দেড়েক।
এবার বাধ্য হয়েই যেতে হলো সম্পূর্ণ হঠাৎ।

সে যাক, আসল কথায় আসি।
বাবাকে হাসপাতালে ঘুমিয়ে রেখে এসে আমার ক্লান্ত মা আর আমি বাড়ি ফিরছিলাম। মা বললেন, বাবা, আটা কিনতে হবে পথে । আমি বল্লাম হোক্কে

দুই কেজি আটা কিনতে গিয়ে সেই সাতসকালে আরেকটু হলে আমি দোকানদার ভদ্রলোকটি টাকা ফেরত দেবার পর - চিতকার করে উঠেছিলাম।

এ কীভাবে সম্ভব?
দুই কেজি আটা ৮০ টাকা। এক কেজি রান্নার সব্জিতেল ৯৫ টাকার মতো।
দেড় বছর আগে আমি নিজে ৪৮ টাকা লিটারে তেল কিনেছি।

আমি আমার ভাইটিকে এ প্রশ্ন করতে করতে লজ্জ্বা পেয়েছি - সে কীভাবে সংসার চালায়।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মানুষকে ভেংগে ফেলা হয়েছে বড় নির্মমভাবে ।
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে আমি আশাবাদী, মানুষের চোখে আবার দেখা যাবে আশার আলো। মানুষ আবার মেতে উঠবে নিজেকে নিয়ে। মানুষ আবার গড়ে তুলবে নিজেকে। মানুষ আবার ছাড়িয়ে যাবে নিজের সব সীমাবদ্ধতাকে। দরকার শুধু কিছুটা সময়ের।

গৌতম

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পুরাপুরি দায়ভার সরকারের ঘাড়ে চাপানো অনুচিত হবে। কাঁচা বাজারগুলা ভেঙে তারা বেআক্কেলের মতই কাজ করেছে। তবে খাবারের দাম বাড়াটা বিশ্বব্যাপীই একটা ক্রাইসিসের আকার ধারণ করেছে। ইকনমিস্ট পত্রিকার এ সপ্তাহের প্রচ্ছদ - The End of Cheap Food। এই নিয়ে একটা বিস্তারিত লেখা দেওয়ার ইচ্ছা আছে। সস্তা খাবার আর সস্তা জ্বালানীর যুগ শেষ হয়ে গেলে আমাদের কি ভবিষ্যত হবে, সেটা ভাবার বিষয়।

কিন্তু কথা ঠিকই, গরীবের তো এই গ্লোবাল ট্রেন্ড জেনে পেট ভরবে না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা তো এখন খাবার দিয়ে জ্বালানি বাড়াচ্ছি। ১০০টা গরীবের পেটের চাইতে একজন ধনীর গাড়ির সিলিন্ডার যে অনেক বেশি দামি! অনেক বেশি প্রয়োজনীয়!
গৌতম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।