পরবাসী

উলুম্বুশ এর ছবি
লিখেছেন উলুম্বুশ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৭/০২/২০০৮ - ৩:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিখেছেন উলুম্বুশ

প্লেনটা মাটি স্পর্শ করল। লাউডস্পীকারে শোনা গেল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের ঘোষণা। সাথে সাথে বুঝি জীবন্ত হয়ে গেল প্লেনের ভিতরটা। এই প্লেনে যে এত বাংগালী আছে এতক্ষণ বোঝাই যায়নি। আর দেরি নয়। সবার মধ্যেই হুড়োহুড়ি ভাব পড়ে গেছে। সবাই ছুটে যেতে চাইছে বাইরে অপেক্ষমান প্রিয়জনের কাছে। প্রায় সবাই প্রিয়জনদের ছেড়ে অনেকদিন হলো সোনার খোঁজে প্রবাসী। আজ তাই ওদের চোখে ঘরে ফেরার অনাবিল আনন্দ। যদিও ফেরা বলা যায়না। কারো হয়ত ১ মাস কারো বা আমার মতই ১ সপ্তাহ। এই আমরা এত ভালবাসি এই দেশটাকে তাও যে কেন দেশ ছেড়ে আমাদের এত দূরে থাকতে হয় তার উত্তর সবার মত আমার ও অজানা। চিন্তায় ছেদ পড়ল "আপনি নামবেন না?" পাশ ফিরে থাকাতেই দেখতে পেলাম ছেলেটাকে। মুখ থেকে কৈশোরসুলভ সারল্য এখনো ছেড়ে যায়নি। বড় বড় চোখে খুশির ঝিলিক, মুখে একটা আনন্দের ছটা। উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে প্রায় দৌড়েই নেমে গেল। এত ছোট থাকতেই দেশ ছাড়া হতে হল ওকে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মুখ দিয়ে। তাড়া নেই আমার। ভীড় কমলে ধীরে সুস্থেই নামব।

মনে পড়ে গেল ২০ বছর আগের এইরকম একটা দিনের কথা। তপু জাপান থেকে এসেছিল ছুটিতে। ১ মাসের জন্য। সোনায় মোড়ানো সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলিকে ভালো করে উপভোগ করার আগেই তপুকে বিদায় দিতে হয়েছিল আমাদের। আমাদের সবাইকে কষ্টের জালে আটকে রেখে ও চলে গিয়েছিল জাপান। তাই ওর প্রথম দেশে আসা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সবার মধ্যেই আলোড়ন তুলেছিল। ফুলের একটা পাপড়ি তার স্থানে আসছে হোক না কিছুদিনের জন্য। আর এখন কেউ নেই আশেপাশে।
পাস করে সবাই যে কি তাড়াতাড়ি আলাদা হয়ে গেল.........।আমিও তা থেকে আলাদা নই। সোনার দেশের হাতছানি সইতে না পেরে চলে গেলাম আমেরিকা। তাও আজ ১৫ বছর হয়ে গেল। এবার এলাম ৬ বছর পর। তারপরও তপুর যাবার সময়টা খুব মনে পড়ে। ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়তেই একটা ক্লিষ্ট হাসি হাসলাম। তখন ভাবতাম আজীবন এইভাবেই কাটবে, চাকরীতে ঢুকেও ছুটির দিনে আড্ডা দিব তাশ পিটাব...... আরো কত কি।

এবার দেশে ফেরার খবর বাসা ছাড়া আর কেউ জানেনা। কাকেই বা জানাবো। আগের মতন দেশে কেউ আর নেই। ছোটভাইটা নিতে আসবে বলেছিল। আমি অবশ্য মানা করেছিলাম। নিজের দেশে একলা বাসায় না ফিরতে পারার কোনই কারণ নেই। চেকিং এর সামনে আসতেই আমার বুক দুরুদুরু করে উঠল। এই জিনিসটার প্রতি ভয়টা আমার আজো দূর হলনা।

এয়ারপোর্ট গেট দিয়ে বের হয়েই সববারের মত উপলব্ধি করলাম এটা একটুও পালটায়নি। এখনও হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রিয়জন্দের নিয়ে ব্যস্ত। হয় অভ্যর্থনায় নয় বিদায়। যা নিউইয়র্ক কিংবা অন্য কোথাও সম্ভব নয়। ওদের এত সময় কোথায়। আমরাও ওদের থেকে ব্যস্ততা শিখতে ব্যস্ত। তাই এই দৃশ্য দেখলে কেমন যেন চোখে পড়ে। অদ্ভুত লাগে এখন। সবাই এক সাথে প্রিয়জনদের উদ্দেশ্য হাত নাড়ছে। কে যে কাকে উদ্দেশ্য করে তা বোঝার কোন উপায় নেই। আমি হাটতে লাগলাম। হাটতে হাটতেই লোকটার উপর চোখ পড়ল। মনে হল যেন আমাকেই নাড়ছে। ভালমতন লক্ষ্য করার আগেই হারিয়ে ফেললাম। তাও এগিয়ে গেলাম কিছুটা কৌতুহল হল বলে কিন্তু পেলাম না। মনে হয় আমারই ভুল হয়েছিল। কিন্তু আমার ভুল হয়নি। গেট পেরুতেই কাঁধে হাত পড়ল
-কিরে শালা , কেমন আছিস?
তাকিয়ে দেখলাম সেই লোকটি। চমকে গেলাম। আর যাই হোক ওকে আশা করিনি এখানে। হতভম্ব ভাব কাটার আগেই ওর কথার তুবড়ি
-শালা, কতক্ষণ ধরে হাত নাড়ছি। নাড়তে নাড়তে হাত ব্যাথা করে ফেললাম আর আমারে দেখলি না?
কোনভাবে অস্ফুটভাবে বললাম
-তপু তুই?
-চিনতে পেরেছিস তাহলে। কেমন চমকে দিলাম...?
-তুই কোথা থেকে জানলি আমি আসছি?আমি তখনো অবাক।
-চল আগে তুই, বলছি। তোর ভাই দাঁড়িয়ে আছে ওইদিকে , ওর কাছেই শুনেছি। ঠিক আগের মতই হাসি দিয়ে বলল তপু। ওর সাথে আমার দেখা ১০ বছর পর। ওই সবার আগে দেশ ছেড়েছিল তাই বুঝি দেশে ফেরার তাড়া ওরই ছিল। জানতাম দেশে আছে কিন্তু এখানে এমনভাবে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি। তপুকে আগের মতই লাগল।
-জাপান থেকে চলে এলি কেন দোস্ত? জিজ্ঞেস করি আমি।
উত্তরেও হাসল ও। হাসতে হাসতেই বলল, আমি শালা চলে আসলাম দেশে ভাবলাম বন্ধুদের সাথে থাকি আর তোরা সবাই চলে গেলি বিদেশ।
-সবাই আবার একসাথে হবার কথা স্বপ্নেই ভাবি। তপুর শেষ কথাটা বিষণ্ন করে দেয় আবহাওয়াটা।সূক্ষ একটা অপরাধবোধ গ্রাস করে আমাকে। কিছুক্ষণ নিরব আমরা দুজনেই।
কথা শুরু করে তপুই আবার।
-তোর ছোটভাই এর সাথে সেদিন মগবাজারে দেখা। ওই বলল তুই আসছিস এই সপ্তাহে। তাই চলে এলাম । এত কম ছুটি কেন। ১ সপ্তাহ একটা সময় হল।
-আর বলিসনা। এত ব্যস্ত থাকিযে এই ১ সপ্তাহ ম্যানেজ করতেই জান বেরিয়ে গেছে। তাও এইবার ওদেরকে আনতে পারলাম না। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা আর কি কি যেন আছে। আসতেই চাইলনা। কেন যেন আসতেই চায়না ওরা। তুই কি করছিস এখন?
-আমি আর কি করব। একটা কোম্পানিতে আছি। ৯-৫ টা খাটানোর কথা কিন্তু ৮টার আগে কোনদিন বাসায় আসতে পারিনা। আর অবসর সময়ে মানুষের কথা শুনি, বিদেশেই ভালো ছিলা কেন আসলা হাবিজাবি।
বিদেশে মন টিকাতে পারেনি তপু। কিন্তু দেশে এসে কি সুখে আছে ও? উত্তরটা ওর মুখে খুঁজতে চেষ্টা করলাম।
-কিরে কি দেখিস?
-তোকে দেখে খুব চমকে গেছিরে? একদম ভাবতেই পারিনি।
-হ্যা তা ভাববা কেমনে। অন্য সময় কত ভাবিস ...
প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে গেলাম। সত্যই বলেছে তপু। ব্যস্ততার ভিড়ে এত ভাবার সময় কই? প্রথম দিকে মেইলে যোগাযোগ ছিল। সেটা কখন যে থেমে গেছে খেয়ালই নেই। এমন সময় ছোট ভাইটা সামনে এসে দাড়াল।
-ভাইয়া কেমন আছ? তপু ভাইয়াকে চিনতে পেরেছিলা।তোমাকে চমকে দেওয়ার জন্য আমাকে বলল পিছনে থাকতে।
-ভালোই আছি। বাসার সবার কি খবর।
-চল নিজেই গিয়ে দেখবা। তোমাকে পৌছে দিয়ে আমাকে আবার দৌড়াতে হবে অফিসে।
গাড়িতে চড়ে বসলাম। গুলশান আসতেই নেমে গেল তপু। কাজ আছে ওর বাসায় আসবে পরে।

সন্ধ্যায় তপু এল বাসায়। অনেকদিন পর আসায় মায়ের কাছে বেশ বকাঝকা খেল হাসিমুখে। আমার মনে হল আগের দিনগুলি বুঝি। এখনই এসে হাজির হবে মিম আর মর্তুজা। কার্ডের জমজমাট আসর বসবে। বহুদিন পরে দুই বন্ধুতে আড্ডা দিলাম। বহুদিনের অনভ্যাসে অস্বস্তি হচ্ছিল প্রথমে। নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হতে হতেও হলাম না। বহুদিনের প্রবাসজীবন আবেগের অনেকটাই শুষে নিয়েছে।
-তুই জাপানেই থেকে গেলি না কেন?
-ধুর মানুষ থাকে নাকি ওখানে?
-তাহলে অন্য দেশেও যেতে পারতি। আমেরিকা চেঞ্জ করা তো তোর জন্য খুব সহজ ছিল।
-বিদেশেই যদি থাকব তাহলে জাপান কি দোষ করল।
-এখন আফসোস হয়না তোর।
-আফসোস হয়না আবার। জ্যামে বসে থাকতে থাকতে হয়। কোথাও কাজ করাতে গেলে ঘুষ দিতে গেলে হয়। সবাই যখন তোর মত জিজ্ঞেস করে কেন আসলা থেকে গেলেই পারতা তখন হয়। কিন্তু দিন শেষে নিজেকে ধন্যবাদ দেই । এখানে বিদেশের মত আরাম নেই এটা সত্যি কিন্তু দেশে থাকাটাই একটা মহা আরাম রে। তুই কি শান্তি পাস ওখানে?
চুপ করে রইলাম আমি। এইধরণের সস্তা সেন্টিমেন্ট কে পাত্তা দেইনা আমি কখনো। দিলে আর বিদেশে থাকা যায়না।
- আমিই তোদের মধ্যে সবার আগে গেলাম। বলেই চলছে তপু। কিন্তু যতদিন ছিলাম একটুও শান্তি পাইনিরে। সবসময় ভাবতাম কেন এত কষ্ট করছি। তাই স্বিদ্ধান্ত নিয়ে একেবারে যখন চলে এলাম, তখন মনের শান্তি ফিরে পেলাম কিন্তু তোদের আর পেলাম না। নতুন করে বন্ধুও আর তখন হয়না।
তপুর কন্ঠে বিষণ্নতা স্পষ্ট।

আমরাই কি ভেবেছি এরকম হবে? যে মানুষগুলো একসময় আমার চারপাশে না থাকলে আমার কিছুই ভালো লাগতনা, এখন বছরের পর বছর ধরে কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি। একটা দ্বন্দ্ব পেয়ে বসল আমাকে। একদিকে পুরান জীবন ফিরে পাবার ব্যকুলতা, অন্যদিকে বাস্তব জীবনের সতর্কতা। তপু মুখে যত যাই বলুক যে ও দেশে শান্তিতে আছে, আমি কিন্তু বেশ বুঝতে পারছিলাম ও কেমন যেন হতাশায় ভুগছে। দেশে ফিরে আমাদের সাথে নতুন করে পুরান জীবন শুরু করার স্বপ্নটায় ও বড় আঘাত পেয়েছে। আমার জীবনও কি তপুর মতন না? আমি কি আসলেই সুখী? মনে হতে লাগল আমার আর তপুর জীবনের কোন তফাৎ নেই। , একতা ছোট্ট বাঁকহীন নদী যার কাজ শুধুই বয়ে চলা, ঝড় তোলার সামর্থ্যহীন। হঠাৎ মনে হতে লাগল, আমিও কি পারিনা তপুর মতন দেশে ফিরে আসতে?
পাশ থেকে সুন্ধরী এয়ারহোস্টেজ রাতের খাবার এগিয়ে দিতেই চিন্তায় ছেদ পড়ল। ওই দিনের পর তপুর সাথে আর দেখা হয়নি। ও জরুরী কাজে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিল। সপ্তাহ ও তো মাত্র ৭ দিন। কালকেই আমেরিকায় ফিরে আমাকে একটা জরুরী মিটিং এটেন্ড করতে হবে। ধুৎ নিজের চিন্তার উপর খুব বিরক্তবোধ করলাম। দেশে কি মানুষ বাস করতে পারে? এত মানুষের ভিড়, এত ময়লা ধুলা, এত হরতাল কোন সিস্টেম নেই। এ দেশের কোন ভবিষ্যত নেই। এরকম একটা স্বিদ্ধান্ত নিয়তে পেরে মনটায় শান্তি আসল আমার। তপুটা ভীষণ বোকা। এখনো কেমন বাজে চিন্তাভাবনা নিয়ে পড়ে আছে। ফুহ ! আবে দিয়ে কি আর জীবন চলে। কানে হেডফোনটা দিতেই গান ভেসে এল-

"ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদেরই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আসে দেশ এক সকল দেশের সেরা..."


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ছুঁয়ে যায়...

রায়হান আবীর এর ছবি

ভাল লাগল। কিন্তু এইটা কি আপনার নিজের ঘটনা...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভাই, এক্কেরে ঈমানে কই, এইডা একটা জম্পেশ বর্ণনা হইছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বের যে বিষয়টা প্রায় প্রতিটি প্রবাসীর জন্য কাজ করে, তাকে চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন।

আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে দ্বিধাহীনভাবে বলি, দেশে যাবো না(অবশ্য দেশে যেতে বাধ্য হলে সেটা ভিন্ন কথা); তারপরেও যখন খুব ক্লান্ত লাগে, তখন আকাশের দিকে সেই ছোটবেলার রঙধনুটাকে খুঁজি; এদের আকাশ বড় বেশি পরিষ্কার, এখানে ধোঁয়া-ধুলোয় ঢাকা কুয়াশা নেই, রঙধনু আছে কি নেই, তা দেখারও শারিরীক বা মানসিক অবসর নেই। খুব অসহ্য মনে হয় সব। তবুও ভাবনার দিন শেষে বাস্তবতায় অভিযোগিত হওয়ার যুদ্ধে নামতেই হয়।

জীবনটা আরেকটু বড় হলে হয়তো এক্সপেরিমেন্ট করে দেখা যেত। তার আর সময় কই!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

উলুম্বুশ

ধন্যবাদ ভাইয়া। রায়হান এইটা আমারই কাহিনী তবে আরো ১৫ বছর পরের anticipation করা। ১৫ বছর পরে এমনই হবে বলে আশা (নাকি আশংকা ?) করছি। সেই হিসেবে এইটা ভবিষ্যত সত্য।

রায়হান আবীর এর ছবি

হুম

Man can do what he wants, But he can't want what he wants

দ্রোহী এর ছবি

একেবারে আমার নিজের গল্প।

বিদেশে এসেছি দেড় বছর হতে চললো। নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি একটুও বরং স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় দগ্ধ হয়েছি প্রতিনিয়ত। কতবার ভাবি ফিরে যাই নিজের দেশে। কার্জন হলের আড্ডায়, বন্ধুদের ভীড়ে, চা-দোকানে দাড়িয়ে বিঁড়ি ফোঁকার সেই দিনগুলো কি ভীষণভাবে আহত করে দিয়ে যায় আমাকে প্রতিমুহুর্তে।

জানি এ যাত্রায় কোন ফিরে যাওয়া নেই। হয়তো আর কখনোই ফেরা হবে না। কে জানে, হয়তো ফেরা হবে। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে ফিরে যেতে চাই তা আর কখনোই পূর্ণ হবে না। তা পূর্ণ হবার নয়.....


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের সবারই গল্প নয় কি? সবাই কম বেশি এইরকমই ভাবি চলে যাব দেশে আবার এইটাও বুঝি যেই জীবন আমাদের টানে সেটা নেই সেখানে। কেন এমন হয়?

একজন প্রবাসী এর ছবি

খুবই সুন্দর লিখেছেন উলুম্বুশ
প্রথমবার দেশ ছাড়ছিলাম কিছু মূলধনের আশায় যে সেটা জমা হলেই দেশে এসে কিছু একটা করবো ।
তিন বছর পরবাস জীবন শেষ কইরা দেশে গেলে সবারই একই প্রশ্ন
কেনো আইলাম?
কবে যামু?
কয় দিনের ছুটি ?
যারেই কই একবারে আইসা পড়ছি
আমার দিকে কেমন একটা পাগল পাগল ভাব নিয়া তাকায়।
এর পরে তিনবছরের জমানো টাকা দিয়ে গেলাম সেই কিছু একটা করতে ।
চান্দাবাজ কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহারন সহ ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা দিমুনে আরেকদিন সচল হইলে ।
আর তার সাথে চান্দাবাজির অফিশিয়াল টার্ম ঘুষ ।
এর পরে যে দেশ ছাড়ছি
আট বছর পার কইরা দিলাম।
আমার সময় হয় ত দেশে হরতাল অবরোধ
দেশে অবস্থা ভালো ত এই দিকে ছেলেদের স্কুল এক্সাম
নতুবা আমার নিজের কাজের ব্যাস্ততা
তারপরও বাংলাদেশ আমার নিজের দেশ
বাংলাদেশের ভালো খবরে যেমন খুশিতে চিত্কার করে উঠি
বাংলাদেশের খারাপ খবরে তেমনি নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলি
এটাই একজন প্রবাসীর একান্ত ভালোবাসা

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়লাম, ভেতর থেকে কে যেন চিৎকার করে বলতে চাইল আমিও মানুষ, আমারও মন খারাপ হয় দুরদেশে থাকতে। সামলে নিলাম নিজেকে, এখন অনেক কিছু সহ্য করা শিখেছি, এবং অনেক কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি।প্রকৃত মানুষ হতে হবে, পথ যে এখনও অনেক বাকি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।