জয়ি কাহিনী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১২/০৪/২০০৮ - ১০:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাবা সরকারি চাকরি করেন সেই সুবাদে চট্টগ্রামে ছিলেন । আজব! এখানে আমার সুবিধা কি? বাবা তো তখনো বিয়ে করেনি! আমি আসবো কোথা থেকে! যাই হোক বাবা তখন নতুন বিয়ে করে দুই বছরের মত ওখানে ছিলেন। কিন্তু আফসোস আমার জন্ম ওখানে হয়নি। আমি আবার ভাই বোনদের মধ্যে দুই নম্বর!(ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি দুই নম্বর সন্তানরা বাদর গোছের হয়!)।তবে আম্মুর কাছে চিটাগাং এর কথা অনেক শুনেছি আর তখন থেকেই আমার ওখানে যেতে খুব ইচ্ছা করত । অবস্থা এমন দাড়িয়ে গিয়েছিলো যে হঠাৎ করেই আম্মুকে ডেকে বলতাম-আম্মু আমি যদি কখনো পালিয়ে যাই তাহলে চিটাগাং এর জঙ্গলে গিয়ে খোঁজ করবে ।

আম্মু তখন কি ভাবতো কে জানে!ভার্সিটিতে এডমিশন টেস্ট দেওয়ার সময় কি মনে করে CU এর ফর্ম কিনে ফেললাম যদিও আমি জানি আমার যাওয়া হবেনা তারপরও একটা চেষ্টা আর কি! পরীক্ষার দিন চলে আসছে কিন্তু তখনও আমার যাওয়ার কোন ব্যবস্থাই হয়নি । পরিক্ষার দুই দিন আগে বাবাকে ফোন করে বললাম যে ভাবেই হোক আমার চিটাগাং যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে । বাবা আমাকে সহজ বাংলা ভাষায় বোঝালেন যে আমার যাওয়া হবেনা, সাথে অবশ্যি কিছু উপদেশ বাণী। আমি লক্ষী মেয়ের মত বাবার কথা শুনছি আর টপটপ করে চোখের পানি ফেলছি। তবে বাবা বুঝতে পারেননি যে আমি কাঁদছি। আমার এই অপূর্ব ক্ষমতা আমার ছোট বোন অদূরে বসে আবাক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছিল। আমার এই বোনটা প্রায়ই বলে আপু তুই কাঁদতে কাঁদতে এত সহজ ভাবে কথা বলিস কি করে? আমি তার কথায় শুধু হেসে ভ্রু নাচাই।

যাই হোক আমার সেবার আর যাওয়া হয়নি, যেদিন পরীক্ষা হয়েছে সেদিন আমি কেঁদে ওড়না ভিজিয়েছি। আমি বাংলা সিনেমার নায়িকার মত বালিশের ওপর পরে কাঁদি না, হাপুস নয়নে হেটে হেটে কাঁদি তাই বালিশ না ভিজিয়ে ওড়না ভিজিয়েছি। আমার ফ্যাচ ফ্যাচ কান্নার মধ্যে মেঝো মামা ফোন করেছে। বলে নেওয়া ভালো আমার এই মামা সব সময়ই মজা করে কথা বলে। মামা ফোন করে প্রথম কথাই বলল এভাবে-কি ব্যাপার মানুষের বাসায় বেড়াতে যাও ভালো কথা কিন্তু বেড়াতে গিয়ে আবার ছেলেও পছন্দ করে আসো!! আমার তো আক্কেল গুরুম অবস্থা, আমার মত এত সহজ সরল মেয়ের(!) নামে একি অপবাদ। আমি বললাম ছিঃ মামা আমি তো কোনো ছেলের দিকে তাকাই-ই না(!) ছেলে পছন্দ করব কি করে? মামা কপট রাগ দেখিয়ে বলল-তাহলে ছেলের বাসার লোকরা তোমার কথা বলে কেনো। আমার মাথা তখন চরকির মত ঘুরছে কারণ এত ছেলের মধ্যে কার কথা মামা বলছে সেটাই বুঝছি না, মামা কে বললাম-ধুর কি বল কিছু ই বুঝিনা। মামা পরে যা বলল তা থেকে বুঝলাম যে কিছু দিন আগে মামীর সাথে তার মামার বাসায় গিয়েছিলাম মামীর মামাতো ভাই এর জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছিল, এক মাসের মধ্যেই বিয়ে করে ছেলে বউকে নিয়ে দেশের বাইরে সাঁতার দেবে। উনি শিপে চাকরি করেন তাই সাঁতার দেবে বললাম। পুরোনো নিয়মে পাত্রী দেখা চলছিলো মানে একের পর এক পাত্রী দেখা ,পাত্রীর বয়স অবশ্যই বরের থেকে অনেক কম হতে হবে,পাত্রী দেখতে হুর পরীর মত হতে হবে যেন মনে হয় আল্লাহ বেহেস্তের জন্য হুর পরী বানাতে গিয়ে ভুলে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েছেন।

যাই হোক মামীর মামাতো ভাইরা পরিবারের সবাই মিলে মানুষ দশ-বার জন এর মত, তারা এক জন করে পাত্রী দেখে এবং পরে দশ জন দশ রকম মন্তব্য করে ফলে কোন পাত্রী ই তাদের পছন্দ হয় না। এমন করে তাদের পাত্রী দেখার সংখ্যা সত্তর পার করেছে। অবশেষে আমাকে দেখে নাকি তারা দশ জনে এক মত দিতে পেরেছে। অন্য সময় হলে আমি মুখ চেপে হাসতে হাসতে গড়া গড়ি খেতাম কিন্তু চিটাগাং এ যেতে না পেরেই আমার তখন সর্বহারার মত অবস্থা। মামা বলল-তোমার আব্বুকে এখনো বলা হয়নি, তুমি রাজি থাকলে বল তোমার আব্বু আম্মু কে জানাই, রাজি আছি বলতে হবেনা হু বললেই চলবে। আমিতো মামার কথা শুনেই রেগে কাই হয়ে গেলাম, মাথার মধ্যে কাজ করছিল তখন মামা এখনো যেহেতু বাবাকে জানায়নি সুতরাং কোন ভাবেই এই কথা বাবার কানে দেওয়া যাবেনা। আমি রেগে গিয়ে দুনিয়া ফাটিয়ে বললাম-এর জন্য ই তো বলি ঐ বাসার সবাই আমার সাথে অতি আগ্রহ নিয়া কথা বলল কেনো, তুমি যে ছেলের কথা বললা ঐ ছেলের এজ জানো? তাছাড়া ঐ ছেলেকে বিয়ে করে আমি করবোটা কি? ছেলের বয়স বেশি, বিয়ের এক বছরের মাথায় পোলাপান কোলে নিয়া ঘুরব পোলাপান ট্যা ট্যা করবে, তাছাড়া তোমরা খালি আমার পরীক্ষার সময় এই সব বিয়ের কথা তোল কেনো? সামনে ডি.ইউ. এর পরীক্ষা আর আজ আমার সি.ইউ তে পরীক্ষা ছিলো দিতে পারিনি আমার মেজাজ খুব গরম, যদি এই কথা আব্বুর কানে যায়-সিওর আমি সাত তালার ওপর থেকে ঝাপ দেবো (তখন যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেটা ছিল সাত তলা )। মামা আমার কথা বিশ্বাস করে বাবাকে আর এসব কথা কিছুই জানায়নি, জানালে বিয়ে হতো না তবে এটা নিয়ে যে কাহিনী হতো সেটা আমার ভালো লাগতো না।

তারপর আর কি-ঐ ছেলের বিয়ে হয়েছে আঠারো বছরের এক মেয়ের সাথে এবং বিয়েতে আমার মামা-মামী দাওয়াত পায়নি কারণ তাদের ধারণা মামা চেষ্টা করলেই আমার সাথে বিয়েটা হতো। আর আমি চিটাগাং এ যেতে না পারার দুখ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছি। তবে চিটাগাং এ কিন্তু আমি গিয়েছিলাম, সেটা আরেক কাহিনী করে। পাত্রের মা পরে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। ছেলের বিয়ে হওয়ার পর মামা-মামীর সাথে দেখা করার সময় উনি আমার সাথেও দেখা করেছেন, আমি তাকে নানু নানু ডেকে বাড়ি মাথায় তুলেছি, সম্পর্কে উনি আমার নানুই হন আর আমি চাচ্ছিলাম না যে উনি অস্বস্তি বোধ করেন আমার সাথে কথা বলতে। আমি ওনাকে সামনে বসিয়ে পটপট করে অনেক কথা বলেছি আর উনিও অনেক ধৈর্য্য ধরে আমার বকবক শুনেছেন....................

---------------------------------
জয়িতা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্যামেলিয়া আলম

সহজ করে নিজের কথাগুলো জানানো এক বিশাল গুণ। আমার অনেক পছন্দের বিষয় এটি। (যদি আদৌ নিজের কথা হয়ে থাকে। অন্যের হলেও ভাল-------)

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমিও সহজ ভাবে বলতে ও শুনতে পছন্দ করি।জটিলতা আমার একদমই পছন্দ না।লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো।

স্বপ্নাহত এর ছবি

আমিও ধৈর্য ধরে বকবকানি পড়লাম।খারাপ তো লাগলোনা...

আরো বকবক করেন।আমরাও কানের পোকা না কী জানি আছে সেটা নাড়ানোর চেষ্টা করি... দেঁতো হাসি

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

খারাপ লাগেনি? ভালো কথা...পরবর্তি লেখাগুলোতে চেষ্টা করব আপনার কানের পোকা যেনো নরাচরা করে উড়েই যায়..। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।