আবার ঘুরে এল সেই বৈশাখ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৪/২০০৮ - ৩:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-নিরিবিলি

ফাস্ট সেমিস্টারের এক মেয়েকে কুশল বিনিময় করতে করতে প্রশ্ন করেছিলাম,কি করছ পহেলা বৈশাখে?স্টাইলের সাথে হাত নেড়ে বলল,উত্তরা ক্লাবে একটা পার্টি আছে।সদ্য সৌদি থেকে আগত সুন্দর মেয়েটা পহেলা বৈশাখে ঝাকানাকা পার্টিতে যাবে।বাঙ্গালী হয়েও বাংলাকে সে জানতেও চায় না,ইচ্ছাও প্রকাশ করে না।

হোটেল রেডিসনে বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য পহেলা বৈশাখ এবং তার পরের দিন বিশেষ আয়োজন হবে।বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে তা উপভোগ করবেন।আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে সাতজন মেয়েকে ভল্যান্টিয়ার হিসেবে যেতে হবে।তাদের কাজ হবে মডেলিং করা।মিসের কাছে জানতে পারলাম জনৈক ড্রেস ডিজাইনার যিনি এক্সপসিভ কিছু ড্রেস ডিজাইন করবেন তা পরে
ওই সাতজন মেয়েকে মমবাতি হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে গ্যালারি প্রদক্ষিণ করতে হবে।এ হলো আমাদের গুলশান বনানীর বর্ষবরন।ওদের বর্ষবরণ নতুন পোশাকে আর আমার ছোট্টবেলার বর্ষবরণ দিন দিন যেন চারদেয়ালে বন্দী হয়ে যাচ্ছে।

বছরের প্রথমদিন ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম মা সবার গায়ে তিনবার করে ফু দিয়ে
যাচ্ছেন,ইস্পেশাল দোয়া করা হয়েছে সবার
জন্য।সবার অনেক ব্যস্ততা মেলার আয়োজন করতে হবে।এলাকার বাউল এসে গান গেয়ে গেয়ে মাতিয়ে যাবে সবাইকে।ঢোলকের চেয়েও বড় ঢোলের তালে গেয়ে উঠে,"আমরা সবাই নতুন বসরে নতুন কইরে সাজবো......।"মেলার কদমা,মুরালির চেয়ে নাগরদোলার জন্য সবার বায়না থাকত বেশী।মামার কাছে আবদারের পর আবদার করেই যেতাম।সকালে মেলার পালা শেষ হলে সাইকেল ভ্রমন,বড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে আনন্দ দেখে
বেড়ানো।তারপর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুকুর ঘাটে পারিবারিক জলসা।যার যা ইচ্ছা তাই করতো।

ছোটবেলায় দেখতাম বৈশাখে সবার মুখে আনন্দ কিন্তু ঝড়ের আশায় সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশের কোন কোণে যদি মেঘের ছিটে ফোটা দেখা যায়!টিনের চালের বৃষ্টির শব্দ,বড় বড় গাছগুলোতে বাতাসের ধাক্কা খাওয়ার শব্দ...।এখন তো বাড়ির বিশ গজের মধ্যে কোন বড় গাছই খুঁজে পাওয়া যাবে না।গাছগুলো ছোট হতে হতে ড্রয়িং রুমের ছোট টবে পরে আছে।আমার বিনোদন তো এখন একুশ ইঞ্চি মনিটরে। ব্যস্ততায় শুধু দির্ঘশ্বাস আর স্নৃতি থেকে গুনগুন-
"মন চলে যায় তেপান্তরে সেই ছেলেবেলা কড়া নাড়ে"

safina901@yahoo.com


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি বড় হয়েছি শহরেই গ্রামের মজাটা বুঝিনা তবে আমার দেশকে আমার জানার বোঝার ইচ্ছা আছে। এখনো নিজের দেশ নিজের মা কে জানলাম না অন্য দেশের সংস্কৃতি নিয়ে হইচই করে কি হবে...আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো।

(জয়িতা)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ জয়িতা।আমিও ঢাকায় বড় হয়েছি কিন্তু বৈশাখের বেশীর ভাগ দিন কাটিয়েছি নানুবাড়ী। আর এখনও অনেক সময় পড়ে আছে দেশকে জানার।শুধু ইচ্ছার অভাব আমাদের।
-নিরিবিলি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।