দ্বিতীয় প্রহর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৬/০৪/২০০৮ - ১২:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
সকালে ঘুমটা ভাঙতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল সোমার। সকালটা কেমন যেন ভয়াবহ রকম সুন্দর লাগছে। জানালার ফোকর গলে তরল সূর্যের আলো ঢুকেছে। আর ভেন্টিলেটারের ভেতর দিয়ে আসা আলো ওপাশের দেয়ালে ফুলতোলা এক নকশা তুলেছে। বিছানা ছেড়ে কেন যেন উঠতে ইচ্ছা হচ্ছে না ওর। মনে হচ্ছে চোখ বুঁজে আরো কিছুক্ষণ যেন গড়াগড়ি দিয়ে নেয়। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটা সম্ভব হল না অয়নের চিৎকার চেচামেচির কারণে। রোজকার মত আজকেও সকালে উঠেই খেলতে নেমে গেছে। কু-ঝিক-ঝিক আওয়াজ তুলে ট্রেন হয়ে নিজেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বারান্দা।

আনোয়ারা ধমক দিলেন অয়নকে থামার জন্য। কিন্তু বলাই বাহুল্য তাতে কোন কাজ হল না। ছেলেটা বড্ড বেয়ারা হয়ে গেছে, কোন কথাই শুনতে চায় না। আজকাল মেজাজ ধরে রাখা তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে গেছে। প্রেশারটাও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশ। পুরো সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক আগেই তিনি বুঝেছেন যে অসচ্ছল পরিবারের গৃহিনী হওয়ার চেয়ে বড় অভিশাপ যেন আর দ্বিতীয়টি নেই। চুলোয় ভাত চড়িয়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকেই ডাকতে লাগলেন তিনি, "সোমা, এ্যাই সোমা, উঠবি না! বেলা তো কম হল না! এতবড় মেয়ে, কোথায় একটু উঠে মাকে কাজে সাহায্য করবে তা না, খালি ঘুম আর ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়ানো! এদেরকে নিয়ে আর পারি না! এবার একটু রেহাই দে আমাকে!"

আরো কিছুক্ষণ ঘুমানোর ইচ্ছা থাকলেও এরপর আর চেষ্টা করেও ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা গেল না। উঠে পড়ল সোমা। ওড়নাটা ঠিকমত গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে এল ঘর থেকে। রান্নাঘরে একবার উকি দিয়ে চলে গেল বাথরুমে। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে আবার চলে এল রান্নাঘরে।

- কি হয়েছে মা! জানোই তো সকালে ঘুমাতে একটু ভাল লাগে আমার। খালি খালি ডেকে তুললে! আজ তো কলেজে আমার কোন ক্লাসও নাই।

বিরক্ত হলেন আনোয়ারা।
- কতবার না বলেছি দাঁত ব্রাশ করতে করতে রান্নাঘরে ঢুকবি না! যা মানা করি তাই বেশি বেশি করিস খালি। আর ওদিকে দেখ অপুটা উঠল নাকি। এতবড় ধাড়ি ছেলে। কোন চিন্তা নাই। গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। যা ডাক ওকে। ওদিকে আবার তোর বাবা এখুনি বাজার নিয়ে চলে আসবে।
- বাহ মা, ভাইয়া তো চাকরির চেষ্টা করছেই। তারপরও কেন খালি তোমরা ওর পিছে লাগো বল তো! সকাল সকাল এসব নিয়ে খিটিমিটি কেন যে কর!
- হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি কিছু বললেই তো খিটিমিটি হয়ে যায় সেটা। যাও এবার তোমার ভাইকে ডেকে তোল। কমপক্ষে বাপকে তো বাজারে সাহায্য করতে পারে, তা না, পড়ে পড়ে খালি ঘুমাতে দাও!

আপনমনেই গজগজ করতে লাগলেন আনোয়ারা। মা যখন বেশি রেগে যান বা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন না, তখন এরকম তুমি করে বলা শুরু করেন, এটা সোমা জানে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ও বের হয়ে এল রান্নাঘর থেকে। অয়ন তখনো দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছে বারান্দায়। ওকে থামতে বলে সোমা গেল অপুকে ডাকতে।

দরজায় টোকা দিয়ে বলল ও, "ভাইয়া তাড়াতাড়ি উঠে পড়। মা কিন্তু রেগে আছে খুব।"
ঘুম জড়ানো গলায় উত্তর দিল অপু, "যা তো, বিরক্ত করিস না। যখন উঠার উঠব।"
সোমা বলল, "ঠিক আছে, যখন মা চেচামেচি শুরু করবে তখন উঠিস তাহলে। ভালভাবে বললাম, শুনলি তো না! তখন আবার বলিস না যে আমি ডাকতে আসিনি।"
"যা তো, ভাগ!"

সরে এল সোমা। হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে বারান্দায় এল। ফুলগাছের টবে পানি দিল ও। তারপর ধরল অয়নকে।

- এ্যাই, তোকে বলেছি না সবসময় এরকম ছুটোছুটি করবি না! আয় তো এদিকে আয়। মা কিন্তু আরো রাগ করবে।
- আপু জানো, কাল না পিংকি ওর পুতুলের বিয়ে দিয়েছে। আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল। আমি যাইনি বলে ওর সে কি রাগ! তুমিই বল আমি তো পল্টুর সাথে ক্রিকেট খেলছিলাম, কিভাবে ওর পুতুলের বিয়েতে যাই!
- হ্যাঁ, অনেক পন্ডিতি হয়েছে। এবার যা তো, মাদুরটা বিছিয়ে খেতে বোস। বাবা বাজার নিয়ে চলে এলে কিন্তু আবার বকা দিবে তোকে এই অবস্থায় দেখলে।

বলতে বলতেই রহমান সাহেব চলে এলেন বাজার নিয়ে। সোমা এগিয়ে গিয়ে বাজারের ব্যাগটা হাত বাড়িয়ে নিল। রহমান সাহেব বেশ হাপিয়ে গেছেন। ঘামে জবজব করছে পাঞ্জাবিটা। ব্যাগটা সোমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবিটা উনি বারান্দার তারে মেলে দিয়ে বসলেন।

বাজারের ব্যাগটা আনোয়ারার কাছে দিয়ে সোমা বারান্দায় এল। অয়ন এতক্ষণে শান্ত হয়েছে। পুরো বাড়িতে শুধু রহমান সাহেবকেই ভয় পায় তার ছেলেমেয়েরা। ভয়ের চেয়ে বরং কিছুটা সমীহ করে চলে।

- বাবা, এক গ্লাস পানি দেব?
রহমান সাহেব উত্তর দিলেন না। তার মানে উনি পানি খাবেন। আজকাল কথাবার্তা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন উনি। এটা নিয়েও আনোয়ারার ক্ষোভ। মাঝে মাঝেই দুঃখ করেন যে কথা বলার কোন মানুষ পান না তিনি আজকাল, সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।

আনোয়ারা ভাত বাড়তে বাড়তেই অপু উঠে পড়ল। ঘুমে ফোলা চোখ ডলতে ডলতে বলল, "কি ম্যাডাম, এই সকালেই কেন এত ডাকাডাকি! এখনো তো দশটাই বাজেনি।"

আনোয়ারা জবাব দিলেন না। কিছু কিছু সময় চুপ করে থাকাটাই ভাল। আর এই ছেলেটাকে নিয়ে তার আশারও শেষ নাই। অনেকদিন থেকে চাকরির চেষ্টা করছে ও, কিন্তু লাভ হচ্ছে না। মাঝখানে একটা চাকরি পেয়েছিলও বটে কিন্তু কিছুদিন পরই বসের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ঝোঁকের মাথায় হুট করে চাকরি ছেড়ে এসে পড়ল। ছেলের এইসব খামখেয়ালি একদমই পছন্দ না আনোয়ারার। চুপচাপ সবার প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে তিনি বাজার নিয়ে বসলেন। ছোট মাছ আর কিছু তরিতরকারি। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি একটা। অয়নটা আজকেও খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করবে। ছোট মাছ দেখলেই কেন যেন খেতে চায় না ছেলেটা। কিন্তু কিছু করারও নেই। রহমান সাহেবের চাকরি শেষ হয়েছে কয়েকমাস হল। পেনশনের টাকায় যতটা সম্ভব তিনি করছেন। এই মুহুর্তে অপুর একটা চাকরি হলে খুব ভাল হতো। আনোয়ারা রোজই নামাজ পড়ে দোয়া করেন আল্লাহর কাছে, যেন তিনি এই ছেলেটার মাথায় কিছুটা বুদ্ধি দেন আর তাড়াতাড়ি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই সোমা এল মায়ের কাছে।
- মা, দুশো টাকা দেবে?
- কেন! এখন আবার টাকা কিসের। আর কদিন আগেই না নিলি তিনশ টাকা। এত তাড়াতাড়ি শেষ! এত খরুচে হাত ভাল না কিন্তু বলে দিলাম।
- আহা, শোনই না, লোপার জন্মদিন পরশু। ওকে কিছু একটা গিফট দিতে হবে না!
- থাক, অত গিফট দেওয়ার দরকার নেই। সংসার চলে না, উনার আবার বান্ধবীর জন্মদিন!
- দেবে না বললেই হয়, আবার এত কথার দরকার কি! ভাইয়া বললে তো ঠিকই দিয়ে দিতে! ভেবেছ আমি জানি না? ও যে তোমার কাছ থেকে রেগুলার টাকা নেয় সেটা আমি ভালই জানি।

মুখ বেজার করে চলে গেল ও নিজের ঘরে। আবারো দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আনোয়ারা। মাঝে মাঝে নিজেকে বড়ই অসহায় লাগে তার। কি করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। ছেলে মেয়ের মনের অবস্থা তিনিও বুঝতে পারেন কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সবসময় সবকিছু করা তার জন্যও সম্ভব হয় না। অপুর বের হয়ে যাওয়ার শব্দ পেলেন তিনি। এই যে ছেলেটা বের হল ফিরবে হয়ত সন্ধ্যার পর বা কখনো কখনো অনেক রাতে। কোথায় যায়, কি করে, কাদের সাথে থাকে, আল্লাহমাবুদ জানেন। জিজ্ঞেস করেও কোন জবাব পাননি। জবাব আশাও করেননি। ছেলেটা বড়ই খামখেয়ালি। কখন কি যে করে কোনই ঠিক ঠিকানা নাই।

কিছুক্ষণ পর ঘরে এলেন তিনি সোমার কাছে। দেখলেন ও বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

- কিরে তুই না বললি তোর ক্লাস নেই আজ, কোথায় যাচ্ছিস এখন?
- লোপার বাসায়। দুপুরে ওর বাসাতেই খাব। বিকালের মধ্যেই ফিরে আসব।
- ভাল। এভাবে সবাই যার যার মত যেদিকে খুশি যা, আমি একা একা বাড়ি পাহারা দেই!
- উফ মা, ঝগড়া কোর না তো প্লীজ। লোপার মামা এসেছে লন্ডন থেকে। ওখানকার এক মেয়েকে নতুন বিয়ে করেছে। দেখতে যাচ্ছি।
- কেন, ফিরিঙ্গি মেয়ে কখনো দেখিসনি? অত দেখার কি আছে!

সোমা চুপ করে রইল। আনোয়ারাও চুপচাপ বের হয়ে এলেন ঘর থেকে। কিছুক্ষণ পর আবার গেলেন ওর ঘরে। পঞ্চাশটা টাকা ওর হাতে দিয়ে মোলায়েম গলায় বললেন, "রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করিস না, তাড়াতাড়ি ফিরিস।"

- তোমার কাছে না দুশো টাকা চাইলাম। দিলে মোটে পঞ্চাশ!
- যা তো, আর কথা বাড়াস না। থাকলে দিতাম। তোর বাবার কাছে আবার চাইতে হবে।

২.
বাইরে বের হয়েই সোমার মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেল। ইশ, সকালটা এত সুন্দর কেন! কিছু কিছু সৌন্দর্য আছে যেগুলো দেখলে মনের ভেতর কেমন একটা হাহাকার জাগে, সযতনে নিজের কাছে আগলে রাখতে ইচ্ছে করে। মন খারাপ ভাবটা আরো বাস্তবে রূপ নিল লোপার বাসায় গিয়ে। ঢুকতেই শুভ ভাইয়ের সাথে দেখা, লোপার বড় ভাই। মুচকি একটা হাসি দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞস করল, তারপর জরুরি একটা কাজের কথা বলে বের হয়ে গেল সে। লোপার বাসায় আসার একমাত্র কারণ হল শুভ ভাইয়ের সাথে কিছুটা গল্প করা। গত কয়েক মাস হল শুভ ভাইকে ও খুব পছন্দ করে কিন্তু সেটা সে বুঝতেই পারে না! শুভ ভাইটা যে কেন এত বোকা! এইতো কিছুদিন আগেই সোমা আভাসে ইঙ্গিতে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল ওর মনের অবস্থা। কিন্তু বেরসিকের মত তিনি কথার মাঝখানেই চলে গেলেন দেশের পরিস্থিতিতে। আর সবথেকে বড় কথা হল সব কথা কি আর মুখ ফুটে একটা মেয়ে বলতে পারে! আর কিছু কথা তো বলতেও হয় না, স্রেফ বুঝে নিতে হয়। তবে শুভ ভাইয়ের যে অবস্থা তাতে মুখ ফুটে না বলে দিলে আদৌ কোনদিন সে বুঝতে পারবে কিনা তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে সোমার।

মাঝে মাঝে সোমা মনে মনে অনেক কিছু চিন্তা করে, পরে ওর নিজের মনেই লজ্জা লাগে। ছি, যদি শুভ ভাই জানতে পারে! তবে জানলে একদিক থেকে ভালও বটে এটা, অন্তত তাহলে তো আর তাকে ভালবাসার কথাটা বলা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে না। সোমা প্রায়ই কল্পনা করে যে শুভ ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে ওর। কল্পনাতে এমনকি দুটো বাচ্চাও দেখে ও। বড়টা মেয়ে, ছোটটা ছেলে। মনে মনেই সোমা শুভ ভাইয়ের জন্য রান্না করে, ওর অফিস থেকে ফেরার অপেক্ষা করে, দেরি হলে দুঃশ্চিন্তা বা অভিমানও করে। এমনকি শুভ ভাই কিভাবে ওর অভিমান ভাঙাবে সেটা নিয়েও মাঝে মাঝে কল্পনা করে ও। এই পর্যায়ে এসেই লজ্জায় থেমে যায় ও। একদিন তো কলেজের কমনরুমে বসে আড্ডার মাঝেই সোমা হারিয়ে গিয়েছিল ওর কল্পনার রাজ্যে। এক পর্যায়ে লোপা ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল বেশ রসালো এক ইয়ার্কি দিয়ে। লোপার মুখে কোনকিছুই আটকায় না। এমন এমন সব কুৎসিত কথা এত অবলীলায় বলে ফেলে যে সোমা নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়। কিছুদিন আগেই তো ইতিহাস বিভাগের দুই ছেলেমেয়ে বাথরুমে কিভাবে ধরা পড়েছিল সেটা নিয়ে রসিয়ে আলাপ করছিল ও। এক পর্যায়ে তো বাধ্য হয়ে সোমা উঠেই এল মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে।

কল্পনায় অবশ্য শুভ ভাইকে ভাই বলে ডাকেনা সোমা। রোমান্টিক একটা নামে ডাকে ও। শুভ ভাইও ওকে আদর করে অন্য একটা নামে ডাকে ওকে ওর নিজের কল্পনাতেই। কিছুদিন আগে তো আরেকটু হলে মুখ ফসকে সোমা ওই নামটা ডেকেই ফেলেছিল শুভ ভাইয়ের সামনে। শেষ পর্যন্ত কোনমতে রক্ষা।

লোপার বাসায় এলেই আন্টি একগাদা নাস্তা খেতে দেয়। সোমার খুব প্রিয় এই বিষয়টি। আজকেও যথারীতি নিয়মের বাত্যয় ঘটল না। নাস্তা খেতে খেতেই লোপার কেনা নতুন কয়েকটা ড্রেস নিয়ে কথা হয়ে গেল। সোমার অবশ্য ওর কথাতে অত মন ছিল না। ও ভাবছিল শুভ ভাইয়ের কথা। তাড়াতাড়ি ফিরলে দেখা করা যেত কিন্তু কখন যে ফিরবে সে তার কোন ঠিকঠিকানা নেই।

হঠাৎ করেই লোপা বোমা ফাটানোর মত একটা কথা বলে বসল।
- এ্যাই সোমা জানিস, ভাইয়াটা না মনে হয় কারো প্রেমে পড়েছে!
শুনেই মুখটা কেমন পাংশু বর্ণ হয়ে গেল সোমার। একটু থেমে জিজ্ঞেস করল,
- তুই কিভাবে বুঝলি! তোকে বলেছে বুঝি!
- আরে ধ্যাত, এসব কথা আবার বলতে হয় নাকি! বোঝা যায়, বুঝলি? অবশ্য তুই আবার যে লাজুকলতা, তুই আর কি বুঝবি!
- বাহ, তোর ভাই প্রেমে পড়েছে এটা তো ভাল খবর। তা কার প্রেমে পড়ল তা তো বলবি!
- গত কয়েকদিন থেকেই খেয়াল করেছি ব্যাপারটা। দাড়া, বের করে ফেলব কিছুদিনের মধ্যেই। লোপা যে কাজে হাত দেয়, তাতে ও কখনোই হার মানে না!
- হুহ, হয়েছে, থাক থাক, আর নিজের গুনগান করতে হবে না।

বেশিক্ষণ অবশ্য মন টিকল না আর লোপার বাসায়। মনটা কেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। শুভ ভাই অন্য কাউকে ভালবাসে এটা ভাবতেই ভেতরটা শূন্যতায় ভরে গেল, কেমন একটা দলা পাকিয়ে আছে ঠিক গলার কাছে। সোমা বের হয়ে এল কিছুক্ষণের মধ্যেই। আর বের হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে আবারো শুভ ভাইয়ের সাথে দেখা। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে তার। সোমার খুব ইচ্ছ করছিল চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে। ইচ্ছেটা বুকের ভেতর চাপা দিয়ে একটু হাসি দিল ও।

শুভ ভাই বলল, "এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছ যে আজ!"
কথাটা শুনেই সোমার ভেতরটা একটু নেচে উঠল। কথাটার ভেতর কেমন একটা আন্তরিকতার ছোঁয়া।
- কই, অনেকক্ষণই তো ছিলাম। আপনার কাজ শেষ?
কথাটা যেন শুনতেই পায়নি শুভ ভাই, কেমন অন্যমনষ্ক হয়ে বলল, "সোমা, বসবে? তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। অনেকদিন থেকেই তোমাকে বলব বলে ভাবছি, কিন্তু বলা হচ্ছে না।"
- কি কথা? বলে ফেলেন এখুনি।
মাথাটা একটু চুলকিয়ে, "নাহ, থাক। আজ না। পরে কখনো বলব।"
- না না, আপনি বলতে পারেন, আমার কোন সমস্যা হবে না। আমার সময় আছে।

শুভ ভাই মাথাটা নিচু করে আছে। সোমার খুব ইচ্ছে করছিল ও বলে, "আরে বলোই না, কি একটা বলবে বলে সেই কখন থেকে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছ, তুমি যে কি না!"

- সোমা, তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে। তোমাকে বলতে যেয়েও বলতে পারিনি অনেকবার।

শুনেও যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না সোমা। এও কি সম্ভব! এই কথাটা শোনার জন্য ওর হৃদয় যে কি তৃষিতের মত অপেক্ষায় ছিল তা বুঝতে পারল ও। হঠাৎ করেই আনন্দে ভরে উঠল ওর হৃদয়ের শূন্যাঞ্চলগুলো। পরম আবেশে অনুভূতিগুলো ডানা মেলার আগেই মিষ্টি হাসি হেসে সকল লজ্জা ভেঙ্গে শুভ ভাইয়ের হাতটা ধরে সোমা বলল, "সেই কবে থেকে এই কথাটা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছি। আর তুমিও বোকার মত চুপ করে ছিলে এতদিন, তুমি যে কি না!"

অতন্দ্র প্রহরী


মন্তব্য

স্বপ্নাহত এর ছবি

আপনার লেখার ধরণটা বেশ সুন্দর।পড়তে বিরক্তি লাগেনা।গল্পটাও ভাল লাগলো।

আমি ক্যানো গল্প লিখতে পারিনা? মন খারাপ

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

থেংকু! খাইছে
কি যে কও না মিয়া! আমার চাইতে বহুত ভালো লেখ তুমি এবং তোমরা (এবং আপনারাও)! আমি তো আগেই কইছি, ফ্যান হয়্যা গেছি তোমাগো!
গল্প লিখতে পারবা না কেন! শুরু কর, দেখবা ঠিকি দাঁড়া করায়া ফেলতে পারবা। আর আমি যদি লিখতে পারি (মান যাই হোক না কেন), তাইলে যে কেউ পারবে! হাহাহা।

অতন্দ্র প্রহরী

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অনেক অনেক ভালো লেগেছে, শুধু শেষ প্যারাটা বাদে। ওটা অন্য অনেক ভাবে করা যেত।

শেষ হইয়াও হইলো না শেষ - টাইপ কিছু একটা আশা করাটা অভ্যেস হয়ে গেছে। ঠাকুর এমন এক সংজ্ঞা সেট করে গেছেন যে, ওটা থেকে বেরোন মুশ্কিল।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ঠিকই বলেছেন, অন্য অনেকভাবে করা যেত। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

বেশ লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমারো! হাসি
(আপনার মন্তব্য পড়ে)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।