খাম

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: রবি, ২০/০৪/২০০৮ - ৮:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিন পর রাতে পুরনো ডায়েরিটা পড়ছিলাম।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডায়েরী।বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ডায়েরী লেখাকে একটা অভ্যাসে পরিনত করেছিলাম।স্বাভাবিকভাবেই নানান নষ্টালজিক ঘটনায় ঠাসা ডায়েরীটা।সেগুলোই এতদিন পর পড়ছিলাম।ডায়েরীর ভিতর একটা খাম পেলাম।সাদা,ছোট্র একটা খাম।খামের গায়ে আকাশী বর্ণের দু-তিনটি মিকিমাউস টাইপের কার্টুন আঁকা।আমি খামটি দেখতে থাকি,পরম মমতাভরে হাত বুলোতে থাকি খামের উপর।কেন জানি চোখ ভিজে আসতে থাকে আমার।মাথা নিছু করে ছিলাম।কয়েক ফোঁটা পানি গিয়ে পড়ে আমার চশমাটার উপর।ঝাপসা হয়ে ওঠে চশমাটা।আম্মা রুমে ঢুকে আমাকে ডাকেন কিরে কি হেয়েছে চোখে পানি কেন।আমি চেয়ারে ঝুলানো গামছাটা দিয়ে চোখ আর চশমাটা মুছি।না মাথাটা ব্যথা করছিল তো তাই একটু নিক্স লাগালাম মাথায়,চোখেও গেছে বোধহয় একটু।মিথ্যা কথাটা আমাকে বলতেই হয়।সাবধানে দিবিনা ,আমাকে বললেই হত লাগিয়ে দিতাম।মাথা ব্যথা করছে তো বসে আছিস কেন?আমি লাইট বন্ধ করে দিচ্ছি শুয়ে পড়।একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আম্মা লাইট নিভিয়ে চলে যান।আমি শুয়ে পড়ি।আমার চোখে মনাদের বাড়িটা ভেসে ওঠে।

বেশ বড়ই বাড়িটা।ঢাকা শহরে এরকম বড় বাড়ি খুব একটা চোখে পড়ে না।মেইন গেট পেরিয়ে বড় একটা বাগান পড়ে ।বাগানের মধ্যে প্রসস্থ রাস্তাটা দিয়ে কিছুক্ষন হাটলে তবেই মূল দালানের গেটটা পাওয়া যায়।আমি মনাকে ওদের অদ্ভুদ ডিজাইনের বড় বাড়িটা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।ও বলেছিলো ওদের দাদার বানানো বাড়ি।ঐতিহ্যের খাতিরে নাকি ভাঙা হয়নি।মনাদের শ্রেনীর লোকেরা ঐতিহ্য খুব পছন্দ করে তাই আমি আর বিশেষ কিছু বলিনি।মনাদের বাড়ীতে আমাকে কয়েকদিন যেতে হয়েছিলো।

মনাকে আমি পড়াতাম ,খুব বেশীদিন না অল্পদিন।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মফস্বলের স্কুল শিক্ষক বাবার কাছে কয়েকমাস টাকা নেওয়ার পর মনে হচ্ছিল না অনেক হয়েছে আর না এবার নিজেই কিছু করি।এক বন্ধুর মারফত গেলাম ওকে পড়াতে ঠিক ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বারোদিন আগে।ফাইনাল রিভিশনের জন্য যাওয়া আরকি।প্রথমদিন মনাদের বাড়ীতে ঢুকতে একটু ভয় হয় আমার।বড়লোকদের বাড়ী,আগে কখনো এরকম বাড়িতে ঢোকা হয়নি। বিশেষত 'কুকুর হইতে সাবধান 'জাতীয় কথাবার্তা আমার জানা ছিল এবং তৎসংক্রান্ত দু একটি ঘটনাও কোথাও কোথাও পড়েছিলাম।তাই বড়লোক সংক্রান্ত আমার একটা ভয় ছিল।কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছু হয়নি।গেটে একজন দাড়োয়ান দাড়ানো ছিল সে আমাকে আমার নাম আর আসার কারন বলামাত্র দরজা খুলে বাগানের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছিল।হয়ত আগেই বলা ছিল।আমি মনাদের বাড়িটা দেখে অবাক হয়েছিলাম,অবাক হয়েছিলাম ওদের গাড়িগুলো দেখেও।একটা পরিবারের এতগুলো গাড়ীর কি দরকার হতে পারে কিছুতেই মাথায় ঢোকেনি সেদিন আমার।

মনাকে পড়ানোমাত্র আমি আবিষ্কার করলাম সে দুনিয়াসম্পর্কিত অনেক সাধারণ জিনিসই দেখেনি,বোঝেও না অনেককিছু।মনা কখনো খেজুর রস খায়নি ,চড়েনি নৌকায়ও।কুমড়ার ফুল দিয়ে যে বড়া বানানো যায় তা সে জানতনা।আমি বলার পর সে এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল যেন আমি একটা কুখাদ্যর রেসিপি দিচ্ছি ওকে।আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে জানতে পারি পাটগাছ ও ভুট্রাগাছ নামের যে দুটি অতি পরিচিত গাছ আছে তা মনা কখনো দেখেনি।সে মনে করেছিল ভুট্রাগাছ লিচু গাছের মত বড় কোন গাছ হবে।আমি মেয়েটার কথাবার্তা শুনে হাসি,অবাকও হই।মনার সরলতা আমার ভালই লাগে।নানান বিষয়ে কথা বলতে বলতে সময় গড়িয়ে যায়,পড়ানো হয়ে ওঠে সামান্যই।আমার আর মনার গল্প শেষ হয়না।

মেয়েদের সাথে আমি আগে এরকমভাবে কখনও মিশিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠার আগে যখন বাড়িতে থাকতাম তখন বলা যায় একরকম এড়িয়েই চলতাম মেয়েদের।মেয়েদের সাথে কথা বলতে কেন জানি রাজ্যের লজ্জা ভর করত আমার ওপর।আম্মা ব্যাপারটা জানতেন তাই হল থেকে যখন ছুটিছাটায় বাড়িতে যেতাম তখন জিজ্ঞাসা করতেন কি রে কোন বান্ধবি -টান্ধবি হল।আমি আম্মার কথাটার মানে বুঝতাম আর একটু মুচকি হেসে বলতাম না,হল না। তাই মনার সাথে অনবরত কথা বলার সময় মনার মাঝে মেয়েদের নতুন করে আবিষ্কার করতে থাকি আমি।কথা বলার সময় মনা অকারনে খিলখিল করে হেসে ওঠে।কোন ছেলেবন্ধু হলে আমি নিশ্চিত বিরক্ত হতাম কিন্তু মনার এরকম অসংযত,অকারন হাসি আমার ভালো লাগে,এক ধরনের ভাললাগা তৈরী হতে থাকে মনার জন্য ,আগে যা কখনও হয়নি কোনো মেয়ের জন্য।আমি বুঝতে পারি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি,কিন্তু এ দুর্বলতা আমি ঠেকাতে পারিনা।আমার খারাপ লাগতে থাকে।আমার অবস্থাগত কারনে দুর্বল হওয়ায় আমার খারাপ লাগতে থাকে,খারাপ লাগতে থাকে ছাত্রীর প্রতি দুর্বল হওয়াতেও।আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকি।

বারোদিন পড়ানো হয়ে গেলে মনা আমাকে সাদা খামটি দেয়।বলে ভাইয়া আম্মু দিয়েছে।এর আগে আমি কখনো পড়ানো বাবদ খামভর্তি টাকা নেইনি।একটু বিব্রতবোধ হয় আমার।চট করে খামটি সামনের পকেটে রাখি।মনাকে আর পড়ানো হবেনা,হয়ত দেখাও হবেনা কখনও ভাবনাটা মাথায় চেপে থাকে ।মনটা ভারী হয়ে ওঠে আমার।যন্ত্রের মত পড়াই আমি,কোন গল্প হয়ে ওঠেনা সেদিন।পড়ানো হয়ে গেলে আমি বলি মনা আজকে তাহলে যাই,ভালোভাবে পরীক্ষা দিও।মনা বলে, আচ্ছা।আমি মনার কিছু বলার জন্য বৃথা অপেক্ষা করতে থাকি।মনা কিছু বলেনা,চুপ করে থাকে,ফোন আসে ফোন ধরে কথা বলতে থাকে।আমি বসেই থাকি,কেন জানি যেতে ইচ্ছে করেনা।মনা ফোন কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়,আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। আমি বসে আছি কেন মনার তো কিছু বলার কথা নয়,কেউ একজন ভিতর থেকে আমাকে নাড়া দেয়।আমাকে উঠতেই হয়।আমি বলি ঠিক আছে গেলাম।দরজার দিকে পা বাড়াই আমি,মনাও দেখি দরজা পর্যন্ত আসে।আমার বুকের ভিতরটায় ধক করে ওঠে,আমি দরজায় গিয়ে দাড়াই।মনা কি কিছু বলবে,আশান্বিত আমি চেয়ে দেখি মনার দিকে।মনা বলে ভাইয়া দোয়া করবেন,চান্স পেলে খাওয়াব।আমি বলি হ্যাঁ দোয়াতো করবই।দরজার সামনের লনটাতে পা বাড়াই আমি।

মনাদের বাড়ী থেকে এই একটি খাম নিয়ে আমি ফিরে আসি।মনার সাথে আমার আর কখনও দেখা হয়নি।এই পৃথিবীতে কেইবা কাউকে মনে রাখে!মাঝে মাঝে আমি খামটা বের করে দেখতাম।মনার কথা চিন্তা করতাম,কেমন আছে বোকা মেয়েটা! আমি হয়ত তখনও বুঝিনি মনার কাছ থেকে এই একটিমাত্র খামের বেশী আর কিছু পাওয়ার যোগ্যতা আমার ছিলনা।

eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

শেষটা ভাল---- তবে আপনার বাক্যগুলো একসাথে সংযুক্ত হয়ে আছে---- পরের বার দেবার সময় একটু দূরত্ব নিয়ে দেবেন আর বানানও হয়তো অসাবধানে কিছু ভুল হয়ে আছে------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

অতিথি লেখক এর ছবি

বানান ভুল কিছু আছে যেগুলো চোখ এড়িয়ে গেছে,আর কিছু আছে যেগুলো বাংলায় দুর্বল হওয়ার কারনে হয়েছে।
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

স্বপ্নাহত এর ছবি

শেষ প্যারাটা আমারও ভাল্লাগসে...

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

ভালো লাগলো...
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমারো ভালো লেগেছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমি হয়ত তখনও বুঝিনি মনার কাছ থেকে এই একটিমাত্র খামের বেশী আর কিছু পাওয়ার যোগ্যতা আমার ছিলনা।

লেখা ভালো হয়েছে। তবে কিছু কিছু বানান ভুল বড় বেশি চোখে লাগে। আশা করি কিছু মনে করবেন না। লেখা ভালো লাগল দেখেই বললাম।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু আলতো বিষাদ হৃদয়ে পুরলাম । লেখার আবেদন, বানান ভুল জনিত অশ্লীলতাকে ছাপিয়ে গেছে পুরোদমে ।

মাঝ রাতের বর্ষণ

------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো।লেখায় যে ভুল তা ঠিক হয়ে যাবে লিখতে লিখতে।
-নিরিবিলি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বেশ ।

সৌরভ এর ছবি

ভীষণ ভাল্লাগলো।
নিজের কিছু ফেলে আসা স্মৃতির সাথে মিলে যাওয়ায় খুব কাছাকাছি বোধ করলাম।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

শেষ প্যারা, বিশেষ করে শেষ লাইনটা বেশ ভাল লাগল।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ভালো। এর বেশী কিছু বলা অদরকারী হয়ে পরেছে।
মন খারাপ করবেন না eru
ব্যাপার নাহ্ হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

eru এর ছবি

ভাইরে গল্পটা শুধু উত্তম পুরুষে লেখা,নায়ক হিসেবে আমাকে বিবেচনা করলে খুব বিব্রতকর বিষয় হবে আমার জন্য।
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইরে,
বড়লোকের মাইয়াগো হৃদয় নাইরে!

ফেরারী ফেরদৌস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।