লক্ষ্যচ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৫/২০০৮ - ২:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হস্তিনাসাকো ( বর্তমান হাতিরপুল) এলাকায় একদা প্রহ্লাদ সিং নামে এক নামী প্রতিপত্তিশালী শিকারীর বাস ছিল। শিকারে তার বড়ই সুনাম- হাতি, বাঘ এমনকি সিংহ শিকার পর্যন্ত মশাই বাদ দেন নি,তবে কিনা এ তল্লাটে উনি সিংহ কোথায় পেলেন তা চিন্তার বিষয় বটে । আমি যে সময়ের কথা বলছি ততদিনে উনি দেহরক্ষা করেছেন আর প্রপিতামহের সুনাম রক্ষার ভার এসে পরে উচ্ছন্নে যাওয়া অকালকুষ্মান্ড প্রতাপ সিং এর উপর । বলি হারি তার গুণের... শিকার ছাড়া বাদ বাকি যেসব কাজে মানুষের বদনাম হতে পারে, তাতে সে ছিল সিদ্ধ্বহস্ত। তবে কিনা শরীরে যে বইছে প্রপিতামহের রক্ত...তাই শিকারের নেশাটাও তার ছিল। অদ্যাবধি কম বার তো আর সাহেব জঙ্গলে যান নি...কিন্তু সেই এক ই দৃশ্যের পুনারাবৃত্তি...ভাড়ার খালি আর গজ গজ করে গালাগালি......নিশানা রে... নিশানার মায় রে ও......( শুন্য স্থানে খুব ই আপত্তিকর “চ” কারান্ত শব্দ... প্রতাপ সিং এর হয়ে আমি ক্ষমাপ্রার্থী )।

যাই হোক খারাপ ভাল তাকে ত বাদ দিতে পারি না, সেই আমার গল্পের নায়ক......শিকারী প্রতাপ সিংহ। তো কোন এক শুভক্ষনে বা কুক্ষনে প্রতাপ বাবু শিকারের উদ্দেশ্যে গহীন অরন্যে উপস্থিত...একা...সঙ্গে প্রপিতামহের রাইফেল খানা। পণ করেছে নিজের বদনাম টা ঘুচিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবে আজ। বহু ঘরাঘুরি করে লতা পাতার ফাঁকে একটা হরিণীর দেখা মিললো ...বন্দুক খানা তাক করে গুলি ছুড়তেই সেই পুরানো ঘটনা......লক্ষ্যচ্যুতি, মানে কিনা প্রতাপ এর ভাষায় নিশানা মিস্। আর যায় কোথায়...সেই গালাগাল...... নিশানা রে... নিশানার মায় রে ও......। আর যেই না মুখ খারাপ করা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা স্থলে এক ঋষি এসে উপস্থিত, কে রে তুই আমার এত বছরের সাধনার বিঘ্ন ঘটালি......আমার তপবনে প্রানহানি প্রচেষ্টা......তায় আবার এই কুৎসিত ভাষন...এই মূহুর্তে তুই এই অভয়ারণ্য ত্যাগ কর, নচেৎ তোকে আমি অভিশাপ দেব। শুনে তো প্রতাপ এর প্রাণ যায় আর কি, শিকার করবার অভিপ্রায় এসে এমন খারাপ অবস্থায় আগে ত পরেনি, যাই হোক সত্য যুগের ঋষি তার কথা তো ফেলা যাবে না...এই ভেবে স্থান ত্যাগ করল সে।

স্থান ত্যাগ করল বটে কিন্তু তার যেই বেয়ারা স্বভাব, ভাবলো, দেখিনা অন্যত্র চেষ্টা করে, অরণ্যের এ ধারে ও ঋষি টেরটিও পাবে না। যথা চিন্তা, ঠিকই কিছক্ষন এর মধ্যে একটা বন্য শুকর তাক করে গুলি দাগলো......আবারও সেই পুনারাবৃত্তি..... শালা, নিশানারে.........নিশানার......বলে শেষ করতে পারেনি প্রতাপ কিন্তু ঋষি যোগবলে উপস্থিত । পুনারায় যদি তুই এই অরণ্যে শিকার চেষ্টা করিস এবং ফের মুখ নোংরা করিস,তবে আমি অভিশাপ দিলাম বজ্রাঘাতে তোর মৃত্যু হবে। এ কি বললেন প্রভু ! আমায় ক্ষমা করুন অভিশাপ ফিরিয়ে নিন, শিকার আমার রক্তে ! ...... প্রতাপ এর প্রলাপ এ মন ভিজল না সাধুর......অগত্যা অরণ্য ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছে প্রতাপ......আর হয়ত আধা ক্রোশ হাটলেই অরণ্যের সীমানা শেষ......হলুদের উপর উজ্জ্বল ডোরাকাটা.......প্রতাপ শিকার ছাড়তে চাইলেই কি ছাড়তে পারে ? মনে মনে ভাবলো হয়তো ঠাকুরদাই চাইছেন, একটা বাঘ শিকার করে নাতি টা তার বংশের মুখ উজ্জ্বল করুক। সুনামের লোভ আর কাঁচা হাত, ফলাফল অপরিবর্তনশীল.........নিশানা মিস্.........শালা নিশানারে......নিশানার মায়রেও......... । শো শো শব্দে বাতাস বইতে শুরু করল হঠাৎ, জঙ্গলের প্রতি টা গাছ যেন শন শন শব্দে দুলছে, রাতের মত কালো হয়ে মেঘ জমতে সুরু করেছে আকাশে......সামনে দাঁড়িয়ে সেই ঋষি, মুখে স্মিত হাসি......প্রতাপ বলল......বাবা এ কি হচ্ছে ! আমায় ক্ষমা করুন আমি ভয় পাচ্ছি ! বাবা আমায় দয়া করুন ! ঋষি বল্লেন দেখ বৎস এখন প্রলাপ করে কোন লাভ নেই, আমি সত্য যুগের সাধক আমার বচন ত বৃথা যায় না, তোমায় আমি আগেই সাবধান করেছিলাম......যা হোক বজ্রপাতে এখন তোমার মৃত্যু হবে, তুমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা কর যেন তোমাকে তড়িৎ মৃত্যু দিয়ে তিনি তোমার কষ্ট লাঘব করেন।

ততক্ষনে খুব ঝড় শুরু হয়ে গেছে। আনত মস্তিষ্কে,আবদ্ধ নয়নে, করজোরে শেষ প্রার্থনা করছে প্রতাপ......কিন্তু শেষ করতে দিল না বিধি.........কড়ড়ড়ড়ড়াআআআআআৎৎৎৎৎৎ শব্দে ধরণী কাঁপিয়ে বজ্রপাত হল ! কয়েক মূহুর্ত পেরিয়ে গেল.........ধীরে ধীরে চোখ খুলছে প্রতাপ আর ভাবছে সারা জীবন যত পাপ করেছি......নরক ছাড়া আর কোথায় স্থান হবে.........কিন্তু একি ! জায়গা টা তো বেশ পরিচিত.........সেই তপোবনের মতই লাগছে ! তাহলে তাহলে কি সে মারা যায়নি ? ঋষি কি মিত্থ্যা অভিশাপ দিলেন ? একটু আগেই ঋষি যেখানে দড়িয়ে স্মিত হাসছিলেন সেখান টা ফাঁকা....শুধু মিহি একটা সুতার মত পাকানো সাদা ধুঁয়া দেখা যাচ্ছে.........আর বজ্রপাত এর পর মেঘের গুরুগম্ভীর গুর গুর শব্দের রেশটা রয়ে গেছে.........তবে হ্যাঁ, খুব মনযোগ দিলে বোঝা যায় একটা দৈব উচ্চারন.........নিশানা কে........ নিশানার মাতা কেও............ ( প্রভু তুমিও ? .........যাই হোক প্রভুর পক্ষ থেকেও আমি ক্ষমাপ্রার্থী )

জটায়ু


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেগেছে জটায়ু ভাই। বজ্রপাতে শব্দের সাথে আমরা পরিচিত। তাহলে
'কড়ড়ড়ড়ড়াআআআআআৎৎৎৎৎৎ' দিয়ে কেমন শব্দ বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝলাম না। তবে কি সত্য যুগে বজ্রপাতের শব্দ অন্যরকম ছিল ??

অভী আগন্তুক
-----------------------
যাহা লিখিব সত্যই লিখিব ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হুমম।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা! হোয়াট আ গপ্পো! খুব মজা পাইলাম।

কীর্তিনাশা

খেকশিয়াল এর ছবি

বেড়ে লিখেছেন জটায়ুদা !

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

স্নিগ্ধা এর ছবি

লেখার হাত তো চমৎকার!!

ব্রইহন্নঅলা এর ছবি

I laughed after a long time.Really fatafati.....carry on.

ব্রইহন্নঅলা এর ছবি

ki lekchen apne koi chilen atodin....khub valo lagche...sotti

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।