তবে কী মূর্খ আমজনতার বৃদ্ধাঙ্গুলি চোষণই একমাত্র কর্তব্য!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৯/০৮/২০০৮ - ১১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০% - এ স্থির হইয়াছিল। মানুষকে ক্রমান্বয়ে দূর্ভিরে স্বাদ উপলব্ধি করিতে হইয়াছিল এবং দূর্ভিক্ষের স্বাদ যতই সুমিষ্ট কিংবা তেতো হোক না কেন প্রজন্ম - ৭০ তাহা বাস্তবে পরখ করিয়া তাহাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি আরও সমৃদ্ধ করিযাছিলেন বলিয়াই শুনিয়া আসিয়াছি। মহামতি অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় সে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বলাই বাহুল্য। এমনকি সম্প্রতি ইতিহাস সচেতন সুপণ্ডিত হিসেবে শায়েস্তা খানের সময়কালকে দূর্ভাগা জাতিকে স্মরণ করাইয়া তাহার পবিত্র দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হইয়াছেন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত অর্থনীতিতে ৫০% মুদ্রাস্ফীতি স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক তাহা বুঝিবার মত বিদ্যা-বুদ্ধি এই অধমের নাই কিন্তু সেই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি এমনকি ২০০% -এ দাঁড়াইলেও আমার ন্যায় অল্পবিদ্যার কারবারীদের নিকট খুব একটা বেমানান ঠেকিত না! সে যাহাই হউক অর্থনীতির কৌশল নির্ধারণ দুরে থাকুক অর্থবছরের বাজেটখানা পড়িয়া তাহাতে কী বলা হইয়াছে উহা বুঝিবার সামর্থ্য মূর্খ আম-জনতার থাকিবার কথা নহে। সুতরাং কোন কিছু না বুঝিয়াই খামোখা আস্ফালনের কী অর্থ থাকিতে পারে?

পৃথিবীব্যাপি মুদ্রাস্ফীতি এক চরম রুপ পরিগ্রহ করিতে যাইতেছে বলিয়া অর্থ শাস্ত্রের পণ্ডিতগণের ধারণা। এই ধারণা যে একেবারে অমূলক নহে তাহার অকাট্য প্রমাণ ইতস্ততঃ ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। প্রতিবেশি ভারতের উদাহরণ সর্বাগ্রে উপস্থাপিত হইলে সুবিধাই বটে। গত বছরে আমাদের এই বৃহত্ প্রতিবেশির মুদ্রাস্ফীতি ৩% -এ ঘোরাফেরা করিলেও বর্তমানে তাহা ১১ বা ১২% -এ ঠেকিয়াছে। গণচীনের অভিজ্ঞতাও যে সুখকর নহে তাহা বেশ বলা যায়। গত বছরের ৩% তিনগুণ বাড়িয়া বর্তমানে ৯% -এ স্থির হইয়াছে। আরেক ভ্রাতা পাকিস্তান সর্বকালের রেকর্ড ভাঙ্গিয়া ২০-২২% -এ ঠাঁই নিয়াছে। শ্রীলংকা আরেক ধাপ আগাইয়া ৩০% -এ উন্নীত হইয়াছে। আবার থাইল্যাণ্ড মূদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে ৭ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করিলেও সিঙ্গাপুর উন্নততর ম্যাক্রো ব্যবস্থাপনা চর্চা করিয়াও ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছে।

সুতরাং আমজনতার বলিবার কিছুই থাকে না। যদিও বলিয়া ফল হইবার কোন কারণ বর্তমানে উপস্থিত নাই। কারণ আমজনতা টি.এস.পি'র (রাসায়ণিক সার বিশেষ) গুণাগুণ বুঝিতে পারিলেও তাহাদের পি.এইচ.ডি নাই। অগ্রপশ্চাদ কিংবা সর্বাঙ্গ তন্নতন্ন করিয়া খুঁজিলেও একখানা ব্যাজও আবিস্কৃত হইবার কোনই সম্ভাবনা নাই। কাজেই আমজনতা জাতীয় বিষয়ে অধিক সময় ক্ষেপণ বৃথা।

তবে এই অধম আম জনতার মূর্খ অংশের অন্যতম প্রতিনিধি। পূর্বেই বলিয়া দিয়াছি বিদ্যা-বুদ্ধির জোর বলিয়া কিছুই নাই। স্ত্রী কর্তৃক চাল ক্রয় করিবার হুকুম জারি হইলেই হাত পা সমেত পুরা শরীর বিদ্যুত্-স্পৃষ্ট হইবার ন্যায় থরথর করিয়া কাঁপিয়া ওঠে। শুধুমাত্র চাল বলিয়া সে ক্ষান্ত হইয়া যাইবে এমন নহে। মধুর স্বরে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় ডাল, সব্জি, চিনি, বিস্কুট, নুন, তেল ইত্যকার নানা পদ মুখস্থ বলিয়া যাওয়া ছাড়া তাহারও কোন উপায় থাকে না। অধমের কাঁপুনি মৃগী রোগে রুপান্তরিত হইলেও স্ত্রীর ফর্দি ছোট হইবার কোন অবকাশ নাই। চিহ্নিত মুদ্রাস্ফীতি ১২% সকল পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইলেও ভরসার জায়গা থাকিত কিন্তু খাদ্য সামগ্রীতে উহা ৪০%-৪৫% -এ হাঁটিয়া বেড়াইতেছে বলাই বাহুল্য। কোন কোন ক্ষেত্রে তাহা ১০০-১৫০% -এ উন্নীত হইয়াছে ভূক্তভোগী মাত্রই উপলব্ধি করিয়া থাকিবেন।

এই মুহুর্তে আমাদের মহামাণ্য দূর্নীতিমুক্ত সরকারের দূর্নীতিযুক্ত সরকারগুলির সম আচরণ কোনভাবেই কাঙ্খিত নহে। বরং সঙ্গতকারণেই শিক্ষিত পাণ্ডিত্যপূর্ণ সুদুরপ্রসারী সরকারি সিন্ধান্ত পূর্বের কূপমণ্ডুক সরকারগুলির সঙ্গে একটি স্পষ্ট রেখা টানিয়া দিতে সমর্থ হইবে। কিন্তু মূর্খ আমজনতা চক্ষু গোলাকার করিয়া যাহা পর্যবেক্ষণ করিতেছে তাহা মোটেও সুখকর নহে। বিশেষতঃ খাদ্যশস্য উপাদনে খাস নজর প্রত্যাশিত ছিল বলিয়াই মূর্খ আমজনতার বিশ্বাস। কিন্তু বাস্তবে তাহার উল্টা কিছু ঘটিয়া চলিতেছে। আমন মৌসুমে কৃষককুল দিশেহারা হইবার যোগাড়। গত মৌসুমে যে ইউরিয়ার মূল্য ৩১০/- টাকা নির্ধারিত ছিল বর্তমানে তাহা বাড়িয়া ৬০০/- ছাড়িয়া গিয়াছে। ১৪০০/- টাকার টি.এস.পি সার কাহার ইঙ্গিতে ৩৫০০/- টাকায় ঠাঁই নিয়াছে তাহা ভাবিবার বিষয়। তিনমাসে কীভাবে সারের মূল্যে এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হইতে পারে মূর্খ আমজনতা কিছুতেই বুঝিয়া উঠিতে পারে না। কৃষি উপাদন নিরুতসাহিত করিবার এহেন প্রক্রিয়া স্মরনকালে কাহারও প্রত্য করিবার সুযোগ হইয়াছে বলিয়া অন্ততঃ এই অধমের মনে হইতেছে না। উপরন্তু নুতন এক পদ্ধতি যোগ হইয়া এদেশের কৃষি ধ্বংশের ব্যবস্থা পোক্ত হইয়াছে। কেহ বিশ্বাস করিতে না চাহিলেও ইহাই সত্য যে, বিঘাপ্রতি প্রতি ডোজে ১০-২০ কেজি সার প্রয়োগে কৃষক অভ্যস্ত থাকিলেও বর্তমানে তাহাকে বরাদ্দ দেওয়া হইতেছে ৩/৪ কেজি। ২০ কেজির স্থলে ৪ কেজির বরাদ্দ উতপাদন ব্যবস্থায় কী প্রভাব ফেলিতে পারে তাহা বিবেচনা করা মোটেই দুরুহ বিষয় নহে। অর্থাত্ খাদ্যশস্য উতপাদন ও এর মূল্য আগামিতে কোন অবস্থানে পৌঁছিবে তাহা সহজেই অনুমেয়। আর কৃষকের মেরুদণ্ড ভাঙ্গিয়া গেলে কোন মঙ্গলের সূচনা হইবে সেই অঙ্ক কষিবার সময় এখনই। দেরি হইয়া গেলে তি যে আমজনতার তাহা বলিবার অপক্ষা রাখে না।

সিনা চৌধুরী
১৯.০৮.০৮


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

চলিত ভাষায় অভ্যস্থতার কারনে আপনার লিখা পড়তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু লেখাটা ভাল লেগেছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সৌরভ এর ছবি

বড্ড ভালো লাগলো। নিয়মিত থাকুন।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ‌ নজমুল ও সৌরভ।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ভালো লাগলো। আরো লিখবেন আশাকরি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মনজুরাউল এর ছবি

ভাল বিষয়।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।