বন্ধু তোমার জন্য

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: শনি, ০৪/১০/২০০৮ - ১১:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(নিবিড়)

দিন টা কি বার ছিল বা কেমন ছিল সেই দিনের আকাশের অবস্থা ? কিছুই মনে নেই আমার । আরও অনেক দরকারহীন বিষয়ের মত স্মৃতির অজানা গলিতে হারিয়ে গেছে সেই দিনটার কথা । যদিও মনে রাখার উচিত ছিল দিন টা , যেই দিন প্রথম তোর সাথে আমার দেখা হয় বন্ধু । কিন্তু কি জানিস তো , পৃথিবী্তে যত প্রেমের উপন্যাস লেখা হয়েছে ঠিক ততটা লেখা হয়নি বন্ধুত্ব নিয়ে । তাই আমি হয়ত ভুলে গেছি তোর সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা , আমাদের বন্ধুত্বের শুরুর দিকের কথা ।

আমি সবসময় খুব চুপচাপ বলে কিংবা অতিসাধারন বলে অথবা বয়সের তুলনায় দেখতে ছোট বলে সব সময় সহপাঠীদের থেকে খুব একটা পাত্তা পায়নি কিন্তু ভার্সিটির প্রথম দিকে তোর আমাকে -আপনি- সম্বোধন প্রথম বারের মত আমাকে বুঝিয়ে দিল আমি শরীরে ছোট হলেও বয়সে আর ছোট নেই । আর হয়ত সেটাই তোর আমার বন্ধুত্বের প্রথম সূচনা । আর হয়তবা সাধারন আমার থেকে ততধিক সাধারন তোর আচার আচরণ আমাকে তোর বন্ধুত্ব পেতে আগ্রহী করে তুলে ।আসলে সত্য বলতে কি এরকম নানা জানা অজানা ছোট খাট প্রভাবক আমাদের বন্ধুত্বের বিক্রিয়া শুরু করেছিল ।

বন্ধু আমরা কত ছোট খাটা কারণে শুধু অভিযোগের তুবড়ি ছোটাই কিন্তু সেই সময় অভিযোগহীন তোমার নির্বিকার মুখ আমদের অনেক কে অবাক করেছিল । একদিন হলের ক্যান্টিন এ খাওয়ার সময় যখন আমরা ক্যান্টিন ম্যানেজার এর মা বাপ এর শাপ শাপান্ত করছিলাম তখন তুই শুধু নির্বিকার ভাবে বলেছিলি - না খেয়ে এক বেলা থাকা যে কি কষ্ট তা তোরা বুঝবি না , তাই খেয়ে না । আমরা তখন একে একটা উচ্চমার্গীয় দার্শনিক রসিকতা ভেবে হো হো করে হেসে উঠেছিলাম । কিন্তু যখন আমরা তোর এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে আচমকা জেনে ফেললাম তোর জীবনের ছোট ইতিহাস , জেনে ফেললাম গ্রাম থেকে উঠে আসা এক ছেলের দারিদ্রের সাথে যুদ্ধের ইতিহাস তখন আমরা কেও আর হো হো করে হেসে উঠি নি কারণ আমরা তখন বুঝে ফেলেছি তোর নির্বিকার মুখ আর উচ্চমার্গীয় দার্শনিক রসিকতার আসল রহস্য । আফসোস শুধু এতদিন পাশাপাশি থেকেও আমরা কেও জানতে পারিনি তোর পিছনের কথা । হয়ত তুই আমাদের এত এত ছোট অভিযোগের পাশে তোর আরেকটা অভিযোগ বাড়াতে চাস নি তাই । কিন্তু হায় আমরা আমাদের সমস্ত ছোট খাট অভিযোগ সমাধানে যে তোকেই আগে ডেকেছি ।

আমরা তোকে ভাবতাম এক রোবট যার আবেগ আছে কিনা জানা নেই , সারাদিন যে কিনা টিউশনীর পিছনে ছোটে । এনিয়ে তোকে আমরা কম খোচাই নি । কিন্তু যে দিন তোর স্বপ্নের বালিকা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল তোকে জানানোর যে তার আর তোর সাথে থাকা সম্ভব না , সেই দিন আমি বুঝে গেলাম , বুঝে গেলাম যে তুইও রক্ত মাংসের মানুষ কারণ সেইদিন তুই আমাদের সামনে থেকে তোর চোখের পানি আড়াল করতে হলের ছাদে চলে গিয়েছিলি । আমাদের কমরেড রোবটেরও যে আবেগ আছে এই আচমকা আবিষ্কারে আমরা সেইদিন কেও তোর মত হাহা করে হাসতে পারিনি । সত্যি বলছি আমরা সেইদিন তোকে প্রথম বারের মত হারতে দেখে বীরের হাসি হাসিনি । হয়ত তুই আমাদের বন্ধু বলে ।

হলে সেই যেই বার আমাদের সাথে আরেক গ্রুপের মারামারিতে কোন পলিটিক্স না করা তুই আমাদের মত পলিটিক্স করা দুই তিনটা বাজে ছেলের পাশে দাড়িয়ে বলেছিলি ওদের মারতে হলে আমাকেও মারতে হবে তখন আমরা বুঝেছিলাম তোর মত বুদ্ধিমান গ্রান্ডমাস্টারের এই বোকামি সাজে না । কারণ সবাই জানত আজ আমরা মার খাব তাই আর কেও এগিয়ে আসে নি । তবে ঐ বোকামির ফল তোকে পেতে হয়েছিল , আমাদের সাথে সাথে তোরও কপালে সিলাই পড়েছিল । কিন্তু সেই প্রথম আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের মত বাজে পলিটিক্যাল পোলাপাইনের জন্য অন্তত এক জন ভাল নন-পলিটিক্যাল ছেলের মায়া আছে । আর এরকম অনেক কিছুই তুই আমাদের প্রথম বুঝতে শিখিয়েছিস , শিখিয়েছিস তোর মত কখন কখন বোকা হতে । তাই আমরা কৃ্তজ্ঞ তোর প্রতি আর আমাদের বন্ধুত্বের প্রতি ।

এরিক মারিয়া রেমার্ক এর গল্প পড়ে আমি আগে গল্পের বন্ধুদের ছবি আকঁতে পারতাম না কারণ আমি এমন টা সামনা সামনি দেখি নি । কিন্তু এখন সেই গল্পের বন্ধুত্বের পোট্রেট আমি সহজেই আকঁত পারি কারন আমার সামনে আছিস তুই । তুই হছিস আমাদের কাছে ঠিক মানুষের পিছনে তার চলমান ছায়ার মত । ছায়া কে আমরা কখন পিছনে ফিরে দেখি না কিন্তু সে থাকে সব সময় আমাদের সাথে । আমরাও তোর কথা আমরা ভুলে যাই কিন্তু ভুলিস না শুধু তুই , ঠিক ছায়ার মত ।

বন্ধু , তোমাকে নিয়ে আমাদের গল্পের শেষ নেই । হয়ত শেষও হবে না কারণ দিন কে দিন তুই নতুন নতুন গল্পের স্রষ্টা হচ্ছিস এই আমাদের কাছে , তাইতো এই গল্পের শুরু । আমি জানি হয়ত তোর সুযোগ হবে না এই গল্প পড়ার , এরকম নানা “ হয়তবা” হয়ত তোর জীবনে সমস্যার পাহাড় দাড় করিয়ে রাখবে , কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি যতই আমার সামনে এই “হয়তাবা” এর পাহাড় আসুক তুই সব সময় আমার পিছনে থাকবি ছায়ার মত । তাই তোর জন্য এই লেখা বন্ধু ।

নিবিড়


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

এরিক মারিয়া রেমার্কের বন্ধুদের হিংসা করি। অসম্ভব...
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

হিংসা না করে কি উপায় বলুন , এমন বন্ধুতো দূর্লভ ।
নিবিড়

স্বপ্নাহত [অতিথি] এর ছবি

ভাল বন্ধুতা নিয়ে যে কোন কিছুই আমাকে ছুঁয়ে যায়। যেমন ছুঁয়ে গেল এই লেখাটা।

আপনারা দু জন ভাল থাকুন। ভাল থাকুক আপনাদের বন্ধুত্ব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ স্বপ্নাহত । তবে আপনি সচল থেকে অতিথি হলেন কি ভাবে বুঝলাম না ।
নিবিড়

স্বপ্নাহত এর ছবি

খাইসে! কেমনে কি? অ্যাঁ

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রাফি এর ছবি

দারুণ লেখা। আপনার যে কয়টা লেখা পড়েছি, মুগ্ধ হয়েছি।
আরো লিখবেন; অন্তত আমার জন্য হলেও।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।