ক্ষুদ্র ঋণ>ক্ষুদ্র মানুষ> একটি ক্ষুদ্র হত্যাকান্ড

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৬/১০/২০০৮ - ১১:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইউনুস শেখ(আসল নাম জানিনা) পেশায় রিক্সাচালক। মাস তিনেক আগে অনেক ঘোরাঘুরি করে নরসিংদির স্থানীয় ব্রাক অফিস থেকে ৬০০০ টাকা ক্ষুদ্রঋণ নেয়। ইউনুস শেখের কাছে এই ঋণের টাকাই মোটেই ক্ষুদ্র নয়। এই টাকা দিয়েই নতুন রিক্সা কিনেছে সে।সবসময় স্বপ্ন দেখে আসছে ঋণের টাকায় তার অভাবের সংসারে হাসি ফুটবে। দুইটা ফুটফুটে কন্যা আছে তার। বড় মেয়েটা ক্লাস থ্রীতে পড়ে, ছোটটা এখনো স্কুলে যায় নি।তবে ইউনুসের খুব ইচ্ছা, নিজের যতই কষ্ট হোক, মেয়ে দুইটাকে ঠিকই পড়ালেখা শিখাবে।

অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝরিয়ে রিক্সা চালায় ইউনুস। প্রতি সপ্তাহে ৪০০ টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হয় তার। এভাবেই গত ২ মাস টাকা পরিশোধ করছিল সে। কিন্তু হঠাৎ করেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে ইউনুস । গত ৮-১০ দিন ধরে তীব্র জ্বর।বিছানায় পড়ে আছে সে, শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নাই। ঔষুধের দোকানের ডাক্তার বলছে, ওর টাইফয়েড হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ টাকার ঔষুধ লাগছে তার। এদিকে রিক্সা চালানো বন্ধ। ঘরে সামান্য কিছু টাকা জমানো ছিলো তাও শেষ। দোকানে টাকা বাকি রেখে সদাই-পাতি কিনছে, বলেছে সুস্থ হলেই সবার টাকা পরিশোধ করে দিবে।

এদিকে গত ২ সপ্তাহ ব্রাকের ঋণের টাকার কিস্তি জমা দিতে পারে নি ইউনুস। রবিবার ব্রাকের লোক এসে টাকা চেয়ে গেছে, ও অনেক বুঝিয়ে বলেছে,আরএকটু সুস্থ হলেই আবার কিস্তির টাকা শোধ দিবে।পরপর ৩ সপ্তাহ কেটে যায় এভাবে। এখন একটু ভালো বোধ করছে সে।২-১ দিন পরেই আবার রিক্সা নিয়ে বেরুবে ইউনুস।

সকালবেলা ব্রাক থেকে লোক এসে ইউনুসকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের স্থানীয় অফিসে। ম্যানেজার ইউনুসকে দেখেই খুব গালাগালি করে। এরপর, দরজা জানালা আটকিয়ে চারজন লোক মিলে মারতে শুরু করে তাকে। ইউনুস যাতে চিৎকার করতে না পারে তাই মুখে কাপড় বেঁধে দেয় তার। প্রায় ২৫-৩০ মিনিট
বেদম মারধর করে ওরা। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ক্ষান্ত দেয় ওরা। কিন্তু ততোক্ষণে ইউনুস শেখ মারা পড়েছে। বেচারার সব স্বপ্ন ওখানেই শেষ। ওকে আর কষ্ট করে রিক্সাও টান্তে হবে না, কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে না।

মৃত্যুর পর...
ইউনুস শেখ যে এইটুকু প্রহারেই মারা যাবে তা ঐ মানেজ্যার বুঝতে পারেনি। আর ম্যানেজ্যারের তো কোন দোষ নাই!! হারামজাদা পরপর ৩ কিস্তির টাকা শোধ দেয়নি। তাড়াতাড়ি সব খবর উপরে পৌছে দেয় ম্যানেজার।
ওখান থেকে নির্দেশ মত দ্রুত থানায় গিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে দক্ষ ম্যানেজার। যদিও এতে করে হাজার পঞ্চাশেক টাকা খরচ করতে হয় । এরপর ইউনুসের লাশ পোস্টমর্টেম ছাড়াই দ্রুত দাফন করা হয়। কেন? আরে ইউনুস তো জ্বরে পড়ে মারা গেছে, তাকে তো আর কেউ খুন করেনি!

পুনশ্চঃ
এবারের ঈদের ঠিক দুই দিন আগেই নরসিংদিতে এই নির্মম ও বর্বোরচিত হত্যাকান্ডটি ঘটেছে। যদিও, এমন ঘটনা এর আগেও অনেক ঘটেছে এবং ঘটছে প্রতিনিয়ত। ও, আর কোন সংবাদপত্রেও আসেনি এই তুচ্ছ ঘটনার কন বিবরন। আচ্ছা,ব্রাক যেন ক্যদিন আগে ক্ষুদ্র ঋণ এর জন্য কি একটা আন্তর্জাতিক পুরুস্কার পেলো? এবার মনে হয় নোবেল প্রাইজটাও পাবে, আমার মন বলছে। আবার হাসবো আমরা নোবেল জয়ী হাসি। হাজারও দরীদ্র ইউনুসের খুনের রক্তে রঞ্জিত হাসি।

মুসাব্বির


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

খুবই দু:খজনক ঘটনা। পর্দার আড়ালে পশবিকতা, অপকর্ম লুকিয়ে রেখে বড় হওয়াটা তো আজকাল স্বাভাবিক হয়েই দাঁড়িয়েছে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

কিছুদিন আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।সেখানেও ভিকটিম ছিলো এক রিকশাওলা।ব্রাক আফিসের লাগোয়া গাছে সেই রিকশা চালক লাশ হয়ে ঝুলছিলো।
সারা দেশের আনাচে কানাচে মাইক্রোক্রেডিটের নামে গড়ে উঠছে মহাজনি সংস্থা।মানুষ এদের কাছে ক্রমেই জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।

---------------------------------------------------------

আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম............... এইসব ক্ষুদ্র ঋন প্রতিষ্ঠান গুলোর ভাল্ভাবে সার্ভে হওয়া উচিত । দেখা উচিত কতটা এরা গরীবের বন্ধু আর কতটা ব্যবসায়ী ।
নিবিড়

একজন [অতিথি] এর ছবি

ক্ষুদ্র ঋন প্রতিষ্ঠান গুলো সব বাংলাদেশী নীলকরের দল।

ছোটন [অতিথি] এর ছবি

একটা ইনডেক্স হওয়া উচিত.....যেখানে এরকম ঘটনাগুলোর একটা লগ থাকবে। এর ফলে জনগনের বন্ধু(?) এসব এনজিওগুলোর আসল চেহারা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

রণদীপম বসু এর ছবি

খুব সম্ভবত ইনকিলাবে সচিত্র খবরটা ছাপা হয়েছিলো। আমি দেখেছি। তবে পত্রিকার নামটা নিশ্চিত করতে পারছি না এ মুহূর্তে। ছবিটাই মারাত্মক। ব্রাক অফিসের পেছনে নারকেল গাছে লাশটা ঝুলিয়ে রাখা। ব্রাকের কর্মিরাই এ ঝুলানোর কাজটা করেছে বলে পত্রিকায় বলা হয়েছে।
কী নির্মম পাশবিকতা ! সামান্য টাকার কাছে মানুষের জীবন যে কতো তুচ্ছ, এভাবেই প্রতিনিয়ত আমরা শিখছি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।