আমার শীতপাচালি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০২/২০০৯ - ১১:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অধৈর্য্য হয়ে পড়ছি আজকাল। দ্রুত ভাবছি ; ভাবতে ভাবতে অর্থহীন করে ফেলছি মিলি সেকেন্ড আর পালাবদলের হাওয়া। শীতের কুয়াশা যত ঘনো হয়ে আসে তার চেয়ে বেশী ঘনত্বে চেপে বসছে নিস্ক্রিয় আকাংখা ।

বার বার বেড়ে যাচ্ছে অনুভূতির ব্যারোমিটার ; দ্রুত লয়ে নামছে না যতটা উঠে যাচ্ছে চুড়ায়। প্রতিবার মনে হচ্ছে এবার মনে হয় শেষ বার ; আর নয়। তবুও প্রতিবার যেন এই বার। ভাবনার বিচ্যূতি ঘটছে ; ক্ষনে ক্ষনে।

এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিল না ; অনেকটা বদলে গেল যেমনটা গত শীতের ক্ষনগুলো।

গত ডিসেম্বরে, অতিথি পাখিরা গুঞ্জন তুলেছিল আমার লাগোয়া উঠানজুড়ে। দূরের হাটুজলে নেমে থাকা সাদা বক হেঁটে চলা কিংবা আমার টিনে চালে রাতভরে লেপ্টে থাকা সুমিত শিশির টুপ করে পড়ে থাকতো চৌকাঠ জুড়ে।

পুরোটা বছরজুড়ে কথা ছিল আমরা আবার তুলে নেবো সাদা বকের পালক কিংবা ভেঁজাবো নিজেদের হাত মুক্তশিশির ছুঁয়ে।

কথা ছিল একজন পৌরাণিক মানুষের হাত ধরে পার করে দেবো সামনের সাঁকো কিংবা লঙ ওয়ে।

কথা ছিল টেরাকোটা দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করে নেবো স্বাধীন স্বত্ত্বা, চুম্বনে সিক্ত বেনীআসাহকলায় লেগে যাবে আমার নিশ্বাস। প্রসারিত হবে রং এবং তাহার বদল ।

কথা ছিল মলিন বেডশীট জুড়ে হেঁটে যাবো তাহার লাগিয়া ; তার লাগিয়া। আঁকবো অসীম মমতায় বন্য কিছু প্রাণ ; যাহার নিষ্প্রাণে আমি জুড়াই আমার স্থান।

কথা ছিল শীত ঘনালে - রাত পোহাবো আর রাত শেষে ........

কথা ছিল শীত ঘনালে - রাত পোহাবো আর রাত শেষে ........

রাত পোহাতেই হঠাৎ দেখি ঘন চাঁদরে ঢেকে আছে ডাইনিং স্পেস, রন্ধনশালা এবং অনেকগুল মিশ্রবাক।

অধৈর্য্য হবার এই পালাবদলে কেমন যেন বদলে গেল অনেক কিছু। এই যেমন ভালবাসার অনেকগুলি প্যাটার্ন ফিকে হয়ে আসায় আর দেখি না গোপন রুমের গোলাপী আভা। তেমন কোন সাড়া নিয়ে আমার মধ্যে রসবোধ লোপ পেতে বন্ধ হয়ে যায় সামনের খোলা জানালা।

জানো, আমি আজকাল সকাল - সন্ধ্যা তোমার ভালবাসা খুঁজি না । খুঁজি সন্তর্পনে - একটা বাসা, একটা ভালো বাসা আর অনেকগুলো কাঠামো। থরে থরে সাজানো বুকশেল্ফ হতে আমি খুঁজি পচনশীল কবিতার লাইন, আর সবুজ চায়ে মেশাই হরদম

আমি আজকাল খুঁজি না একটা বিশাল তথ্য ভান্ডার , নয়নাভিরাম নীল দাসপ্রথা আর ভেঁজা লন। খুঁজি সন্তর্পনে ভাংগা কাঁচ, উলঙ্গ কার্পাস আর গুটিকয়েক তেলাপোকা।

রাত ঘনালে, দূর আকাশে দেখি অনেকগুলো তারা এবং একটা কালো গহ্বর, সেখানেই আমি খুঁজি একমাত্রার কৃষ্ণপক্ষীয় কথকতা আর তাদের সঙ্গম ।

তোমাকে আমি এখনও - এই কুয়াশায় কিংবা খটখটে দুপুরের ঘামে কিংবা রাতের শুণ্যতায় বেশ ভালবাসি ; অথচ আমি আজকাল খুঁজি না অনুভূতি, খুঁজি না তেমন ব্যাপকতা এবঙ
তেমন কোন স্পর্শকাতরতা ।

কোনভাবেই আমি আজকাল তোমার ভালবাসা খুঁজি না উল্টানো পর্দার ভাঁজে ভাঁজে এমনকি খুঁজি না এক পশলা বৃষ্টি ; বৃষ্টিহীন শরৎ এবং কাশফুল ।

আদতে আমি কী খুঁজি ; এই প্রশ্নটা বাঁক নেয় আমার কষেরুকায় । সুড় সুড় করে উঠে যায় প্রতিটা নিউরনে । শিরাগুলো ব্যাপক হতে থাকে।

তখন খুঁজি হয়তবা বন্ধ বই আর আমার ভালবাসার স্থায়িত্ব ; তোমার স্মিত হাসি আর প্রবল ঘৃণা কিংবা আমি কিছুই খুঁজি না উচ্ছাসে ; প্রলোভনে -

হয়তঃ . . . .

এবারের শীত বেশ প্রলম্বিত মনে হচ্ছে, প্রতিদিন মনে হচ্ছে প্রহর বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে কাঁপুনি । ধ্ক্ ধক্ করছে । অথচ সব শুনসান। প্রতিদিন সকালের ক্ষন ক্রমশ একতরফা হচ্ছে আর বলছে - ওহে একটু শোন।

উষ্ণতা নাও ; উষ্ণতা বিলাও। ঘনো করে ফেলো অদৃশ্য কথাগুলো। তারপর এক পা, দু'পা করে এগুতে থাক। কোথাও না কোথাও থামবে হৃদপিন্ডের কম্পন এবং অন্যমাত্রায় সাজাবে আরেকটা ক্ষন।

হয়তো সেটা দুপুর হবে কিংবা পশমী কম্বলমোড়ানো রাত। প্রথাগত একটা ভাবনায় বলি, আমি - তুমি কিংবা তুমি - আমি। যাই হোক এবারের শীতটা যাক, দেখবে রাত আরো রাত মনে হবে না; কাপুঁনি আর বেড়ে গিয়ে মনাঘাত করবে এমনটা হবে না কোন সকালে।

মনে আছে কী তোমার, আমার বেশ লাগত বৃষ্টির শব্দ। ভরা শ্রাবনে বৃষ্টি টিনের চালে আর তোমার চুড়ির রিনিঝিনি দুটোই । বলো তো এসব কই পাই এই ধোঁয়াশে শীতে।

জানো, কুয়াশা আমার তেমন ভাল লাগে না। মনে হয় অপছায়া আর কুয়াশার ফাঁকে ফাঁকে শিশির বৃষ্টিতো আমাকে - তোমাকে একেবারে হেনস্থা করে ছাড়ে। দেখছো না, প্রতিদিন একটা একটা রিট ফাইল করছি আমরা, খুলছি প্রলম্বিত পিটিশনের অনেকগুলো ক্লজ এবং প্রত্যেকটি ক্লজশেষ বলছি - থেমে যাক সব আড়ষ্টতা এখানেই এবং জয় হোক ভালবাসার এবং ভালো বাসার।

আর যতবার ভাবি এসব ততবার মনে হয়, আমার জন্য গ্রীষ্ম দিও, তবুও শীত দিও না । অন্তত; এবারের মত দীর্ঘ শীত দিও না, যদি শীত দাও তবে সকাল দিও না। যদি সকাল দাও তো কুয়াশা দিও না। আর যদি সবি দাও তাহলে আমাকে রেখো না এসবের মায়াজালে. .

-নীল মানব


মন্তব্য

নিঝুম এর ছবি

একটি ভয়ানক ভালোলাগার মত লেখা । খুব চমতকার আর অসাধারণ আপনার লেখার হাত । লেখাটি সত্যিই চমতকার হয়েছে ।
--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

বকলম এর ছবি

কেমন যেন অর্থহীন দুঃখবোধ আপনার লেখায়! হৃদয় ছুঁয়ে গিয়ে সংক্রমিত করে আমাদেরও। লিখে যান।

রানা মেহের এর ছবি

চমতকার লাগলো পড়ে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রাফি এর ছবি

কিছু কিছু লেখা চাপাস্বরে তার নিজের উপস্থিতি জানান দেয়, মাথার চেয়ে হৃদয় দাবি করে বেশি।
তেমনই একটি লেখা পড়লাম বলে মনে হল।
অদ্ভুত সুন্দর লেখা।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

আপনার লেখার হাত চমতকার। খুব ভালো লাগলো লেখাটা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।