ব্যক্তিগত অনুভূতির এক্টি অপ্রকাশিত খসড়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০২/২০০৯ - ৫:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(জানিনা, এই লেখাটি এখন সচলায়তনে পোষ্ট করা ঠিক হচ্ছে কিনা – মাঝে মাঝে পুরনো লিখা খুঁজতে গিয়ে, এমন সব অসমাপ্ত/অপ্রকাশিত লেখা পেয়ে যাই, ক্ষণিকের জন্যে হলেও থমকে দাঁড়াই । এই লেখাটিও তেমনি, লিখেছিলাম, জুবায়ের সাহেব প্রথম যখন হসপিটেলে যান, তখন –যদিও আর পোষ্ট করা হয়নি । জুবায়ের সাহেব চলে গেছেন, দিন থেমে থাকেনি, কারো জন্যই থেমে থাকেনা - তাঁর ছেলেমেয়েদের দিনও, যেকরেই হোক, চলে তো যাচ্ছেই ! আমার তখনকার ‘অনুভূতি’ সচলায়তনের পাঠকদের সাথে শেয়ার করার জন্য-ই আজ মন চাইলো লেখাটি পোষ্ট করি- অবশ্য, মডারেটররা না চাইলে এই লেখাটি পোষ্ট নাও করতে পারেন, ধন্যবাদ )
নন্দিনী

ব্যক্তিগত অনুভূতির এক্টি অপ্রকাশিত খসড়া ...

জুবায়ের সাহেব,
আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন ! সচলায়তনে বেশী ঢুকা হয়না – তারপরও যখনই সুযোগ পাই, ঢুকে, যাঁদের লেখা দেখলে কখন-ই মিস করিনা, তাদের মধ্যে আপনি একজন । আপনার লেখার আমি একজন ভক্ত অনেক আগে থেকেই – যখন থেকে আপনি ‘সাতরং’ এ লিখতে শুরু করলেন । তারপর, আপনি সামান্য এক্টি ভূল বোঝাবোঝি থেকে ‘সাতরং’ এ লেখা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন । এ ব্যাপারে আমার কিছুটা দুঃখ এখনও আছে বৈকি ! সচলায়তনে প্রথম এসে যখন লেখকের তালিকায় আপনার নাম দেখলাম , খুব, খুব খুশী হয়েছিলাম। সেই থেকে সচলায়তনে আপনি যাই লিখেন‌ চোখে পরলে পড়তে এতটুকু দেরী করিনা । সর্বশেষ আপনার মেয়েকে নিয়ে লেখা দু’টি পড়ে – মেয়ের সাফল্যে আনন্দের পাশাপাশি, মেয়ে বড় হয়ে গেছে দূরে চলে যাচ্ছে পড়তে, ইত্যাকার ব্যাপারগুলো নিয়ে আপনার অদ্ভুত এক অকারণ (অকারণ কী!) চিনচিনে বেদনা আমাকে স্পর্শ করেছিল খুব । নিজের অজান্তেই চোখে জল এসেছিল – কারণ একজন মা হিসেবে এই অনুভূতির সাথে আমি খুব খুব পরিচিত ! আমার মেয়েকেও এই লেখা আমি পড়ে শুনিয়েছিলাম । আপনার মত আমারও এক ছেলে, এক মেয়ে । মেয়ে যদিও বাসায় থেকেই পড়াশোনা করতে পারছে,তবে কদ্দিন আর থাকবে এই ভেবে এখনই ভয় লাগে ! কিসের যে ভয় জানিনা তো ! কেউ জিজ্ঞেস করলে গুছিয়ে বলতে পারবোনা । এখনই সে তোড়জোড় শুরু করেছে পড়াশোনার জন্য চলে যাবে ‘দূরে, কোথাও দূরে’.....। আমার ছেলেও আগামীকাল ভোরে চলে যাচ্ছে আরেক শহরে পড়তে । বলেছিলাম ছেলেকে, প্রথমদিন সাথে যাবো, সে হেসেই খুন ! বলে, মাকে সাথে নিয়ে গেছি শুনলে মানুষ কি ভাববে । মিনমিন করে বলেছিলাম, বাজান গো, আমি আসি তোমার সাথে ? একদিনই তো মাত্র ! ছেলেমেয়েদের জন্য বেশী আহ্লাদ উথলে উঠলে এই ভাষায় কথা বলি ! এইসকল মুহুর্ত্যে, নিজেকে বড় বেশী ক্ষেত মনে হয় ! অনেক সময়-ই ভূলে যাই কোথায় থামতে হবে ! অথচ বাইরে মানুষ আমাকে কত শক্ত ভাবে, ভাবে খুব কঠিন অহংকারী এক্টা মানুষ !!! হায়রে......
আমার ছেলের ফিল্ম নিয়ে আগ্রহের সীমা পরিসীমা নেই ! কথায় কথায় সে ফিল্ম নিয়ে রাজা-উজির মারে ! কুরুসাওয়া ওর প্রিয় পরিচালক । তার কল্যাণে কত যে ভালো ভালো মুভি দেখেছি, দেখছি ! তার স্বপ্ন সে কুরুসাওয়ার একজন যোগ্য উত্তরসূরী হবে !!! (সত্যজিতেও ওর অগাদ ভক্তি ) জুবায়ের সাহেব, এই প্রথম আমার ছেলেরও দূরে পড়তে যাওয়া – গত কাল রাতে আমারও প্রহরে প্রহরে ঘুম ভেঙ্গে গেছে, কেমন যেন অজানা অদ্ভুত এক কষ্ট বুকের ভিতর হানা দিয়েছে বার বার - আর চাইলেই প্রতিদিন ভোরবেলা জেগে ছেলেকে দেখবোনা, হবেনা রাতের তুমুল আড্ডা, তর্ক-বিতর্ক ...... আমার চারপাশের পরিবেশের কারণে - আমি আরো বেশী করে ঝিমিয়ে পড়বো......আমি আরো বেশী করে বিষন্ন বোধ করবো ......আরো বেশী করে...
মনে হয় এই তো যেন সেদিন, ছেলেমেয়েকে হাত ধরে নার্সারীতে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিলাম । আসলে, সন্তানেরা বড় তারাতারি বড় হয়ে যায়......এতো দ্রুত...ওদের যেনো এক্টুও সবুর নেই...তারপর সব একই নিয়মে অথবা অনিয়মে চলতে থাকে, চলে, চলবে...অন্ততকাল ধরে...।।
জুবায়ের সাহবে,
আপনার মেয়ে এই মাত্র দূরে গেলো - ওকে এখনই এরকম দুঃশ্চিন্তায় ফেলবেন না ! প্লীজ ! সামনে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত পরে আছে, আপনাকে থাকতে হবে মেয়ের পাশে পাহারের মত অটল হয়ে । তাদের বড় প্রয়োজন আপনাকে সামনের দিনগুলোতে ......
ভালো হোন, প্লীজ তারাতারি ভালো হয়ে উঠুন......

নন্দিনী


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

মন্তব্যের ভাষা নেই, কেবলই চোখের জলে স্মৃতিচারণ ছাড়া!

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।