মিসিং লিঙ্ক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৩/২০০৯ - ৩:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'ওরে! সে তো অতি পুরাতন কথা!' কিচিমিচি করিয়া দাদু যখন তাহার বগল চুলকাইয়া আগাইয়া আসিলো, ভাবিলাম, 'হইল!
এই বুড়োকে কিছু প্রশ্ন করাই ঝামেলার ব্যাপার। কিছু হইলেই একদম কিষ্কিন্ধ্যা হইতে শুরু করিবে! যেন হনুমান সুগ্রীব কথা না বলিলেই নয়! তবে বুড়ো জানে অনেক, তা না হইলে এইরূপে গুল মারাও বোধ করি সম্ভব হয় না!

আমি শুধু জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, 'দাদু মিসিং লিঙ্ক কি?' দাদু যেইভাবে 'ওরে!' করিয়া উঠিল, বুঝিলাম ইহা হয়ত কিষ্কিন্ধ্যাপূর্বের ঘটনা। যাহাই হউক, দাদুর কথায় ফিরিয়া আসি..

- 'ওরে! সে তো অতি পুরাতন কথা! ... আমাদিগের আদি পিতারা দৌর্দন্ড প্রতাপে চারি হাতে পৃথিবীশ্রেষ্ঠ হইয়া বনে বাদাড়ে পাহাড়ে নদীতে ঘুরিত সেই সময়!'
আমি জিজ্ঞাসা করি,
- কিষ্কিন্ধ্যাপূর্বের কথা?
- তাতো অবশ্যই। তা এইরূপে চিড়িয়া হইয়া খাচায় বসিয়া মনুষ্য প্রদত্ত বাদাম চিবাইলে এইসব জানিবি কি করিয়া!
- তুমিও তো ইহাই কর, তুমি কিরূপে জানো?
- চুপ কর হতাভাগা! আমি কি জন্ম হইতেই খাচায় ছিলাম নাকি রে? মুখে মুখে তর্ক করিস?
দেখি বুড় দাঁত-দুত খিঁচিয়া তেড়িয়া মারতে আসে। আমি কিঞ্চিৎ ডিফেন্স খেলিলাম,
- নাঃ। তাতো নয়ই। ও আমারই দোষ। বাদাম খাইলে যাহা হয় আর কি। তুমি বলিতে থাকো।
বুড়ো একটু ঠান্ডা হইল, আড়ে আমাকে দেখিয়া চোখ ফিরিয়া সামনে তাকাইল, গজগজ করিয়া বলিল
- হু .. তোমরা হইয়াছ যতসব ডেপোর দল.. সারাদিন ঠান্ডাগুলি মারিবে আর গুরুজনের অশ্রদ্ধা করিবে।
- আহঃ হইল তো .. এখন গল্প বল!
- বেশী তাড়া করিবে না .. মনে করিতে দাও ..
মানে গপ্পো আঁটিতে দাও আর কি ..ভাবিলাম আমি। বুড়ো শুরু করিল ফের।
- শুন তবে। তখনো আমরা গাছেই ঝুলিতাম। (তাই তো ঝুলিব ইহা আর নতুন কি, বুড়োর যত বাড়তি কথা!) একদিন কতিপয় বানরের সহিত কতিপয়ের কাইজ্জা বাঁধিয়া গেল। কেন? .. না তারা গাছে ঝুলিয়া আমোদ করিতেছিল, অন্যরা তাহাতে বিরক্ত হইতেছিল। আমোদ পার্টি বলিল, 'কি-র‌্যা? তোরা ঝুলিবি না? দাঁত খিচাইস কেনে? বিরক্ত পার্টি বলিল 'না-র‌্যা। এইরূপ বেলেল্লাপানায় মজা হইতেছে, বরন তোগের দেখিয়া মারিতে ইচ্ছা হইতেছে। আমোদ পার্টি ভয় পাইয়া গেল, বলিল তাহা কেন? বিরক্ত পার্টি বলিল গাছে আর ঝুলিব না, অন্য কুথাউ যাইতে ইচ্ছা হইতেছে! সবাই বলিল, বলে কি! উহারা বলিল, হ্যাঁ! তারপর উহারা দল বাঁধিয়া কই জানি চলিয়া গেল। তাহাদের আর দেখা গেল না। এরপর হইতে বনে কিছু নতুন বানরের আগমন ঘটিল। সবাই দেখিল তারা কারো সহিত কথা বলে না। বলিলেও তাহার অর্ধেক বুঝা যায় না। পাগল পাগল চেহারা করিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। কাহারো সাহায্য করে না, নিজেরা ঝামেলা এড়াইয়া খালি বানরের মধ্যে কলহের সৃষ্টি করে .. এইরূপে তারা করিয়া খাইতে লাগিল।
- ইহারাই কি মনুষ্য হইয়াছিল ?
- তাহা বলিতে পারিব না, কারন ইহাদেরও আর দেখা যায় নাই..
আজ হইতে কোটি কোটি বৎসর পূর্বে ইহাদেরকে পরিত্যাগ করা হইয়াছিল। বাঁদর হইয়া বাঁদরামি করিত না বিধায় একদিন সবাই ধরিয়া ইহাদের ন্যাজ কাঁটিয়া ইহাদের সহিত যোগাযোগ বন্ধ করিয়া দিল। ইহারা মিসিং লিঙ্ক হইয়া গেল ..
গল্প শেষ করিয়া বুড়ো বেশ একখানা ভাব নিয়া জ্ঞানী হাসি মুখে মাখিয়া আমার দিকে তাকাইল।
আমি ভাবিলাম.. নাও! ..ইহা হইল?

চতুর্ভুজ

মিরপুর
(আমাদিগের ইমেইল এড্রেস, অনলাইন এক্সেস আছে বিধায় ভাবিবেন না আমিও মিসিং লিঙ্ক ইয়ে, মানে... )


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বুড়ার কথা শুনিয়া আমারো এইরূপই হইয়াছিল

অম্লান অভি এর ছবি

বুঝিলাম এই বেলা ক্যান্নে এমুন হয়! আমাদের প্রপিতা তাহাদের প্রপিতা এবং..........তাহারাই তবে মিসিং লিংক হইবে বৈকি? দাদুরে সালাম তিনি বিবর্তন বাদ মানেন এবং জানেনও। ইতিহাস পূর্ব আপনার ইমেইলের সন্ধান এই বেলা করিলাম না, কথায় আস্থা রাখা ভালো তবেই কথককে সম্মান দেয়া হয়। স্বাগতম এই সচলে এক জন অর্ধ সচলের পক্ষ থেকে।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ

-চতুর্ভুজ-

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মিসিং লিংকে আছি আম্মো, তয় কেউ কেউ এখনো লিংকে আছে বাঁদরেরা তাই সংখ্যা লঘু নহে.......চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

চোখ টিপি

-চতুর্ভুজ-

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ধূ-গো-দার সাথে সহমত ...!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

এই নিন বাদাম চিবুন

-চতুর্ভুজ-

লীনা ফেরদৌস এর ছবি

Lina Fardows

লাগল ভাল মিসিং লিঙ্ক ।

Lina Fardows

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হুম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা এই হুমখানা কি সচলীয় হুম ? অনেকবারই দেখিয়াছি, কিন্তু ইহার ব্যাপারখানা জানিবার সাধ হয় দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।