ধারাবাহিক রহস্য গল্প: সাধারণ দূর্ভেদ্য? (পর্ব-১) {বাই-দলছুট)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৮/০৮/২০০৯ - ৩:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাহির ভক্সি নোয়া মাইক্রোবাসটা গায়ের ইটের উচু নীচু ভাংগা রাস্তায় ৩০ কিঃমি/ঘন্টা বেগে এগিয়ে যাচ্ছে মদনপুরের দিকে। ঢাকা থেকে মাত্র৪০ কিলোমিটার রাস্তা কিন্ত আসতে সময় লাগে প্রায় ২ঘন্টার বেশী। মদনপুরের শেষ মাথায় গাছ গাছালিতে ঘেরা এক আদর্শ গ্রাম্য আবহে চতুর দিকে দেয়ালে ঘেরা সিরাজুল হক সাহেবের বাড়ি। গ্রামের শান্ত শ্যামল ছায়া ঘেরা অপরুপা পরিবেশটা এই বাড়িতে সম্পূর্ন বিরাজমান। সিরাজুল হক সাহেব সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে জীবনের শেষ বয়সটা নিরিবিলি কাটানোর জন্য বাবা মায়ের ভিটে এই মদনপুরে চলে এসেছেন। মেয়ে দানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ এর ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী। দানা এক কথায় অপ্সরা। একটা মেয়েকে প্রথম দর্শনেভালো লাগার মত যাবতীয় উপাদান তার মাঝে বিদ্যমান। চালচলনে গ্রাম্য কোন লক্ষন তার মাঝে পরিলক্ষিত হয় না। খুবী মার্জিত এবং রুচীশিল আধুনিকা ও সচেতন মেয়ে। ছেলে ইরাম বউ বাচ্চা নিয়ে থাকেন কানাডা। ছেলের পাঠানো টাকা আর নিজের পেনশনের সাথে এই গ্রামের বাড়ীর থেকে যা আয় হয় তাতে তার জীবন খুব ভালো ভাবেই চলে যায়।

সিরাজুল হক সাহেব স্ত্রী শায়লাকে নিয়ে এই টিনশেডের বাড়ীতে থাকেন। গ্রামের মধ্যেও যতটুকু আধুনিক জীবন যাপন করা সম্ভব তার সবটুকুই বিদ্যমান। নিজে জেনারেটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত্তের সুব্যবস্থা করেছেন। রিসিভার কিনে ডিসের ব্যবস্থা রেখেছেন। ২ বিঘা জমির উপর নির্মিত বাড়ীটার দক্ষিন পাশে বড় একটা মাছের পুকুর, তার এক পাশে সুন্দর একটা বাংলো। বাড়ীতে মেহমান এলে সাধারনত ওখানেই থাকতে দেয়া হয়। উইন্টারের ছুটি কাটানোর জন্য দানা এখন মদনপুরে। বাড়ীতে সিরাজুল হক সাহেব তার স্ত্রীশায়লা আর ৪জন কাজের মানুষ আছে। মেয়ে শায়লা বিশ্ববিদ্যালয়েরছুটিতে বা কখনো যদি ছাত্র সংগঠন গুলো মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয় তাহলে বাবা মার কাছে ছুটে আসেন।

রাহির গাড়ী বিশাল বাড়ীর গেটে এসে থামলো। নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। কোন ড্রাইভারের ঝামেলায় যায়নি। কেননা একটা বিশেষ এসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছে এখানে। কোন বিশেষ কাজে রাহি যখন বের হয় তখন ড্রাইভারের ঝামেলায় যায় না। নিজে চালাতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। রাহি একটা প্রাইভেট ডিটেকটিভ ফার্মে কাজ করছে। ক্রাইম সাইডটা সোহেল আর সুবজের সাথে দেখে। বেশী ভাগ সময় রাহি অফিসিয়াল কাজ গুলোই বেশী করে, সরাসরি ফিল্ডে যায় না। ফিল্ডে সোহেল আর সবুজ বেশী যায়। সিরাজুল হক সাহেবের বন্ধু মানুষ হলো ফার্মের কর্ণদার বারেক সাহেব । বারেক সাহেবের বিশেষ অনুরোধে রাহির এই অজপারা গায়ে আসা। গাড়ীর শব্দ পেয়ে সিরাজুল হক সাহেব পকেট গেটের ফাক গলিয়ে বাইরে এলেন।

রাহি দেখেই বুঝতে পারলো এই ভদ্র লোকি সিরাজুল হক সাহেব। কারন আসার আগে বারেক সাহেব যে বর্ণনা দিয়েছিলেন তার সাথে হুবুহু মিলে যাচ্ছে। গাড়ী থেকে নেমে সালাম দিয়ে সিরাজুল হক সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন-“আমি রাহি, বারেক স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন।” সিরাজুল হক সাহেব সালামের উত্তরের সাথে হাত মিলালেন, বললেন -“আমি বুঝতে পেরেছি, বারেক আমাকে এই মাত্র ফোনে বলেছে। রাস্তায় আসতে অসুবিধা হয়নিতো?” আসার কষ্টের কথা শুনে চোখের সামনে বড় গর্তের কথা মনে পরে গেলো। কিন্ত মুখে বললোনা। সিরাজুল সাহেব জোরে কাজের ছেলেকে ডাকলেন-“সুশীল, এই দিকে আয় স্যারের ব্যাগটা নিয়ে যা। আর স্যারকে বাংলোতে নিয়ে বসা।” হক সাহেবের ডাক শেষ না হতে হতেই ১৮-১৯ বছরের একটা শান্ত শিষ্ট্য ডানপিটে ছেলে এসে হাজির। সুশীল কে দেখেই হক সাহেব বললেন-“যা ব্যাগটা আর স্যার কে নিয়ে থাকার জায়গাটা দেখিয়ে দে। রুম ঠিকঠাক মত গুছিয়েছিসতো?” ছেলেটা মাথা নেরে চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো যে সহ ঠিক। রাহি গাড়ীটা ভিতরে ঢুকিয়ে বাম দিকে পার্ক করলো।

রাহি বাড়ীর ভেতর ঢুকেই অবাক হলেন। এটাতো বাড়ী না যেনো স্বপ্নপুরী, যেনো কোন চিত্রশিল্পীআপন মনে সাত রংগা তুলি দিয়ে ইচ্ছে মত সাজিয়েছেন । গেট থেকে অনেক খানি ইট বিছানো পথ হাটার পর সিরাজুল হক সাহেবের আবাস স্থল, মেইন আবাস স্থলের ডান পাশ দিয়ে সোজা দক্ষিণ দিকে বাংলো। ঢুকতেই চোখ জুরিয়ে যায় সাজানো গোলাপ বাগান দেখে। সিরাজুল হক সাহেব যে গোলাপ পাগল তা রাহির বুঝতে অসুবিধা হলো না। বাড়ীর সামনটা জুরে আছে সাদা-লাল আর কালো গোলাপে ভরা। সাথে আছে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ। রাহি সবকয়টার নাম জানেনা।

বাড়ীর উত্তর দিকে আছে পেয়ারা আর আপেল কুলের বাগান। পূর্ব দিকে আছে সবেদা ফলের বাগান। আছে হরেক রকমের সজ্বির চাশাবাদ, রাহির বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এখান থেকে সিরাজুল হক সাহেবের বেশ আয় হয়। বাংলো আর আবাস স্থলের মাঝ খানে পূর্ব-পশ্চিমে মাছের পুকুর। পশ্চিম দিকটার দেয়াল ঘেসে বড় বড় দেবদারু গাছ। এটা বিকালের রোদ থেকে বাড়ীকে আড়াল করার চেষ্টা সেটা যে কেউ বুঝে নিবে সহজে। উত্তর দিকের পেয়ারা বাগানের পাশে উত্তর-পূর্ব কর্ণারে একটা টিনের ঘর যেখানে থাকে বাড়ীর দুই কাজের লোক সুশীল আর কামরান। কামরানের বয়স ৩৪-৩৫ হবে। চেহারা দেখে তেমনটা আচ করা যায়না। কর্মঠ শরীরে বয়স ধরে রাখায় যায় খুব সহজে। সুশীলের পেছন পেছন হেটে বাংলায় এসে বসলো। প্রথম দর্শনেই থাকার জায়গা পছন্দ হলো রাহি। দক্ষিন মুখী ঘর। চার দিকে দেয়াল উপরে টিনের ছাঁদ। দুই দিকেই খোলা বারান্দা। শোবার ঘরের সাথেই টয়লেট যেটা গ্রামের বাড়ী গুলাতে খুব কম দেখা যায়। সময় দুপুর ১টা ।

দক্ষিন খোলা বারান্দায় একটা চেয়ার নিয়ে বসলো রাহি। সুশীল ব্যাগ ঘরে রেখে এসে সামনে দাড়ালো। রাহি সুশীলের দিকে তাকাতেই বললো-“স্যার বাথরুমে পানি তুলা আছে হাত -মুখটা ধয়ে নিন।” রাহির ছেলেটার চটপট কথা শুনে ভালোই লাগলো। ছেলেটাকে বললো-“তোমার নামতো সুশীল, কতদিন ধরে এখানে আছো?” রাহির প্রশ্ন শুনে ছেলেটা কিছুক্ষন মাথা চুলকালো। তারপর বললো-“আমার বয়স যখন ১২ তখন থেইক্যা আছে, চাচা আমারে আদর করে, নিজের পোলার মত মহব্বত করে।” রাহি আবার প্রশ্ন ছুরে দিলো-“তোমার বাড়ী কোথায়?” ছেলেটা এবার ঝটপট উত্তর দিলো-“চাচীর বাবার দেশ যেখানে সেখানে আমাদের বাড়ী। চাচী আমার মার কাছ থেইকা আমাকে নিইয়া আইছে। গ্রামের নাম হুনছি সুখনগর। প্রথমে চাচাদের সাথে ঢাকা ছিলাম, ওখানে আমার ভালো লাগতো না। এখানে আমার অনেক ভালো লাগে। কত সুন্দর পরিবেশ, খোলা মাঠ, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া যায়, শহরে আমার ধম বন্ধ হইয়া আইতো।” একধমে অনেক কথা বলে ছেলেটা থামলো। রাহি একটু চিন্তা করে আরেক টা প্রশ্ন করলো-“ এই বাড়ীতে কে কে থাকে? সুশীল এবার মেঝেতে বসে পরলো। রাহির দিকে তাকিয়ে-“ চাচা -চাচী, দুইজন কাজের বুয়া, সখিনা খালা আর শেফালী আপা। আমরা দুইজন আমি আর কামরান। এখন আপা আছে, তবে আপা ঢাকা থাকে। লেহাপড়া করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছুটি পাইলেই আইয়া পরে।” বড় ভাইজান থাকে বিদেশ। দেশটার নাম অইলো কেনাডা। অনেক দিন আগে গেছে , ভাবীরে নিইয়া গেছে, একটা পোলাও আছে।” বলে কথার মেশিন থামলো। রাহি কথার ছলে মোটামুটি বাড়ীর সব খবর নিয়ে নিলো। বাকীটা সিরাজুল হক সাহেবের সাথে সারবে বলে স্থির করলো।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে রাহি একটা নির্ভেজাল ঘুম দিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। চেয়ার নিয়ে বারান্দায় বসলো। পরক্ষনেই উঠে গেলো। বাড়ীর চারিপাশটা দেখার ভাসনা জাগলো মনে। ভাবলো যে বিশেষ কাজ নিয়ে এখানে এসেছে সেটা তারাতারি শেষ করে ঢাকা ফিরতে হবে। তাই ফাইনাল গেইম খেলার আগে একটু ওয়ামার্প করতে হবে, জায়গাটা সম্পর্কে পুরোদোস্তর খোজ নিতে হবে। বাহির থেকে ভিতরে আসার সম্ভাব্য পথ গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নিলো, বের হবার মুখেই সিরাজুল হক সাহেব বাংলোতে এলেন। সাথে সুশীল আর কামরান। সুশীলকে তো আগেই দেখেছে, এখন নতুন করে পরিচিত হলো কামরানের সাথে। প্রথম দর্শনেই কামরানকে রাহির তেমন সুবিধার মনে হলো না। চেহারার মধ্যে একটা কটিল ভাব লক্ষ্য করলো। ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী তবে হাটা চলায় একটু অলসতা লক্ষ্য করলো রাহি। সুশীলিকে যেমন দেখলেই ডানপিটে মনে হয়, কামরানকে তেমন মনে হলো না। রুম পেরিয়ে সবাই বারান্দায় এলেন। সিরাজুল হক সাহেব রাহির দিকে তাকিয়ে বললেন-“বাবা তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? কোন সমস্যা হলে আমাকে আপন মনে করে বলবা।” রাহি এমন প্রশ্নের প্রত্যাশা করেনি, তাই কাচুমাচু হয়ে বললো-“ না না আঙ্কেল , আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না, অনেক সুন্দর জায়গা। আমি চারিপাশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ। অনেকদিন এরকম একয়া জায়গায় বেড়ানোর সখ ছিলো, সেটা পূরণ হয়ে গেলো। ছায়া ঘেরা কি সুন্দর শান্ত পরিবেশ। জানেন আঙ্কেল আমি অনেকদিন পর দিনে এতো আরাম করে ঘুমালাম।” কথা বলতে বলতে রাহি আর সিরাজুল হক সাহেব বাংলো থেকে বের হয়ে এলেন, তাদের পেছন পেছন কামরান আর সুশীল। পুকুর পার দিয়ে হাটতে হাটতে দানার সাথে দেখা। দানা জিন্স এর সাথে কালো কাপড়ের উপর সাধা সুতার কজ করা একটা ফতোয়া প্রেছে। ঘারের উপর ছড়ানো কালার করা চুল। হালকা লিপস্টিকের সাথে চোখে কাজল পরেছে। এমনি ফর্সা তার সাথে কাজল, অপূর্ব লাগছিলো দেখতে। সিরাজুল হক সাহেব দানার সাথে রাহির পরিচয় করিয়ে দিলেন। রাহি দানাকে চমকে দেয়ার জন্য বললো-“আপনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন? সম্ভবত বিবিএ?” দানা কিছুটা অবাক হলো, আড় চোখে রাহির দিকে তাকিয়ে-“এরি মধ্যে সব খবর নিয়ে নিয়েছেন, যে কাজের জন্য এসেছেন সেটা ভালো ভাবে করলেই আমরা বেশী খুশী হবো।” রাহি বুঝতে পারলো সুন্দরী হলে যা হয়, নিজের মাঝে অহংকার বোধ থাকে, সেটাই দানার কথায় বুঝা গেলো, কথায় পৃষ্ঠে কথা বলার জন্য বললো-“আমার প্রোফেশনটাই মানুষের আগাম খবর নেয়া, সেগূলো বিচার বিশ্লেষন করে আসল ঘটনার রহস্য উম্মোচন করা। আশা করি এখানেও আমি সফল হবো।”

তারা হেটে বাড়ি দেখছিলো, রাহি সিরাজুল হক সাহেব কে বললো-“আঙ্কেল আমি ওদের একজনকে নিয়ে একটু বাড়ীর বাহির সাইডটা দেখতে চাই।” ডিটেক্তিভের যেই ইচ্ছা সেইমোতাবেক সিরাজুল হক সাহেবের ব্যবস্থা। সুশীলকে ডেকে -“এই দিক আয়, স্যারকে নিয়ে বাড়ের চারিপাশটা ঘুরায় দেখায় আন।” সুশীল একটু দূরে ছিলো, কাছে এসে বললো-“চলেন স্যার।”

শেষ বিকালের নরম আলোয় প্রায় ৫০ মিনিট ধরে ঘুরে ঘুরে বাড়ীর চারিপাশ দেখলো। না দেয়ালে কোন প্রকার মানুষের হাত বা পায়ের ছাপ চোখে পরলো না। বাড়ীটা মূল জমি থেকে প্রায় ৪/৫ ফুট উচু তার পর ৬ফুট উচু দেয়াল সাথে ২ফুট উচু করে কাটা তারের বেরা। সব মিলিয়ে ১২ ফুট। বাহির থেকে কাউকে এই বাড়ীতে প্রবেশ করতে হলে এই ১২ফুট ডিঙ্গিয়ে আসতে হবে। যেটা রাতের বেলা গ্রামের সাধারন মানুষের জন্য অনেকটা দূর্সাধ্য ব্যাপার। সুশীলকে জিজ্ঞাস করলো-“সুশীল এই বাড়ীতে সাধারণত কারা বেশী আসে?” সুশীল শান্ত ছেলের মত নির্বিঘ্নভাবে বললো-“বেশী লোক আহে না, চাচার কাছে গ্রামের মাতাব্বর চাচা, মাঝে চ্যায়ারম্যান চাচা, আর মাঝে মাঝে গ্রামের মুরুব্বীরা আহে। অনেক দিন ঢাকা আছিলো তোতাই গ্রামের লোকদের সাথে কম উঠাবসা হয়। তবে চাচারে গ্রামের আচার বিচারে সবাই মান্য করে।” শেষের কথা রাহি নোট করে রাখলো। আচ্ছা আমাকে আর একটা কথা বললো-“কামরানের কাজটা কি? আঙ্কেলতদেখি টুকটাক সব কাজে তোমাকেই ডাকে?” নিজের কজের প্রশংসা শুনে সুশীল একটু পুলকিত হলো। একটু খুশী মনে বলল-“চাচা আমারে ভালা পায় বেশী, আমাকে চাচীও বেশী পছন্দ করে?” রাহি এখানেও প্রথম কথা নোট করে রাখলো। হাটতে হাটতে আরেকটা প্রশ্নকরলো-“বাড়ীর এই সব দেখা শুনাতো তোমরা দুজনেই করো?” সুশীল মাথা নেরে হ্যা সূচক জবাবা দিলো।

হাটতে হাটতে তারা বাড়ীর মেইন গেটের কাছাকাছি চলে এসেছে। রাহি একটু থামলো, তারপর সুশীলকে আবার প্রশ্ন করলো-“বাড়ীর বাজার সদাই কে করে?” সুশীল প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষন মাথা চুলকালো। কি বলবে ভেবে শুরু করলো-“খাবারের বাজার চাচাই বেশী করে, সাথে আমি থাহি। আর মাছের খাবার, সার, কীটনাশক এইগুলা বেশী কামরান ভাই কিনে।” রাহি কথা গুলো মনে মনে নোট করে নিলো।

বাড়ীর ভেতরে ঢুকতেই থেকে বাড়ীর সামনের লনে চা-নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছে পরিবারের অন্য সদস্যারা। রাহিকে প্রবেশ করতে দেখেই হক সাহেব উচ্চ স্বরে-“আরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, তারাতারি আসো, সব ঠান্ডা হয়ে গেলোতো।” রাহি দ্রুত পায়ে হেটে গিয়ে দানার পাশের চেয়ারে বসলো। দানা চা তুলে দিতে দিতে -“তা আপনার সারা বাড়ী পরিদর্শন করা শেষ হলো?” রাহি অপ্রস্তুত ভাবে হাত বাড়ীয়ে চা নিতে গিয়ে হাতে হাতে স্পর্শ অনুভব করলো। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে -“জি, সুন্দর নিরাপদ বেষ্টনী। বাহির থেকে কারো পক্ষে প্রবেশ করা দুরহ কাজ।” দানা কিছুটা বিস্বয় আর কৌতহল নিয়ে রাহির দিকে তাকালো,চায়ের কাপে চুমুক দিইয়ে বললো-“তা আপনার গোয়েন্দা শাস্রের মতে কি এই বুঝায় যে বাড়ীর ভেতরের লোকেরা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে পরপর দুই বছর ধরে? আজব।” শেষের কথাটা শ্লেষের শুরে বলে অন্যদিকে ঘুরে তাকালেন। রাহি চায়ের কাপটা টি-টেবিলের উপর রেখে -“গোয়েন্দাদের কাছে কেউ সন্দেহের উর্দ্ধে নয়। যেমন আপনিও আমার কাছে সন্দেহের বাইরের কেউ নন।” কথাটা বলে দানার দিকে তাকিয়ে ছিলো প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। দানা রাহির দিকে না তাকিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে-“কোথা থেকে কোন আনকোড়া গোয়েন্দা ধরে নিয়ে আসছো, দেখো কাজের কাজ কিছুই হবেনা, শেষে টাকা গুলো জলে যাবে।” সুন্দরীর হঠাত্ত অগ্নি স্ফুলঙ্গে রাহি খুব মিজা পেলো। সিরাজুল হকের দিকে তাকিয়ে-“আঙ্কেল এখনো সময় আছে, আমি ব্যাক করলে আপনাকে আর মোটা অংকের টাকা গুনতে হবেনা। আমি কি ফিরে যাবো?” কথাটা হক সাহেক কে বললেও তাকিয়ে আছে দানার দিকে। তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গের একটু ফুলিঙ্গ দেখার গোপন সখে। কিন্ত এবার শায়লা বেগম আর দানাকে কথা বলতে দিলো না, নিজেই বলে ফেললো-“বাবা তোমরা কি শুরু করলে, নাস্তা না করে ঝগড়া করবে।(দানার দিকে তাকিয়ে) বাহির মেহমানের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা বুঝি লেখা পড়া শিখে ভুলতে বসেছিস?” শায়লা বেগমের উপদেশ মূলক কথায় দানার মুখ বন্ধ হলো। সিরাজুল হক সাহেব রাহি কে বললো-“তোমার সাথেতো কোন কথায় হলো না, কেনো তোমাকে আনা হয়েছে, সেটাও তো বলা হলো না, চলো আমরা তোমার ঘরে গিয়ে আলাপ টা সেরে নেই।” রাহি পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে বললো-“আমি কিছুটা শুনে এসেছি, বাকীটা আপনার কাছ থেকে শুনবো, চলুন বাংলোতে বসে কথা গুলো সেরে নেই। (দানার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে) আপনার আর আমার কথার মাঝে তৃতীয় কোন ব্যক্তির অনুপ্রবেশ আমি সমর্থন করবো না।” দানা কথাটা শুনে অপমানিত বোধ করলেও কিছু বলার সুযোগ পেলো না।

সিরাজুল হক সাহেব আর রাহি উঠে বাংলোর দিকে হাটা দিলেন। দুজনে পুকুর পার দিয়ে গোধূলীর শেষ আলোরঝাপসা আলোত পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে। বেশখানি হাটার পর রাহির মনে হলো কেঊ যেনো তাদের অনুসরন করছে। আরেকটু হাটার পর রাহি হঠাত্ত করে পেছন দিকে তাকালো, দেখলো তাদের অনুসরন করে একটা ছায়া এগিয়ে আসছে। সিরাজিল হক সাহেব রাহির হঠাত্ত থেমে যাবার হেতু বুঝার আগেই রাহি এশারায় চুপ হতে বললেন। নিজের পকেটে রাখা ছোট অথচ পাওয়ারফুল টর্চটা মানূষটার উপর ধরলো, লাইটা পরতেই মানুষটা গাছের আড়ালে লুকাতে চাইলো। রাহি দ্রুত পায়ে হেটে গিয়ে দেখলো কামরান। রাহির পেছনে পেছনে সিরাজুল হক সাহেবও এসে হাজির। রাহি কামরানকে সামনে দাড় করালো জিজ্ঞেস করলো-“তুমি এখানে কেনো? আমাদের অনুসরন করতেছো কেনো?” কামরান প্রথমে ভয় পেয়ে গেলো, পরক্ষিণেই মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো, ঝটপট উত্তর দিলো-“ আপনি নতুন মানুষ, চাচার যেনো কোন বিপদ না হয় তাই খেয়াল রাখবার চাইছিলাম।” রাহি একটু হাসলো। সিরাজুল হক সাহেবের দিকে তাকালেন। পীর ভক্ত শিষ্যের মত মাথা নীচু করে ডাড়িয়ে আছে কামরান। সিরাজুল হক সাহেব কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বল্লেন-“হারাজাদা তোকে কি আমি আমার নিরাপত্তা দিতে কইছি, (সামনে এগিয়ে গিয়ে) দিমু এক থাপ্পর, যা নিজের কাজ কর।” কামরান কথা না বাড়িয়ে পেছন ফিরে হাটা শুরু করলো। মনে মনে রাহির চৌদ্দ গোষ্ঠে উদ্ধার করলো। লোকটার বুদ্ধির তারিফ করতে ভুল করলো না। নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য নিজেকে অপবাদ দিলো। ফিরে এলে নিজের আবাস স্থলে। নিজের প্রথম পরাজয়ে ব্যথিত বোধনে সন্ধ্যা বেলা রুমে এসে বসলো।

রাহি নিজেকে স্বাভাবিক করে -“আঙ্কেল আপনার ছেলে দুটো অনেক ভালো, আপনাকে অনেক কেয়ার করে, দেখেন আপনার নিরাপত্তার জন্য সে কতটা উদ্বিঘ্ন?” বলেই অন্ধকারের মধ্যেও সিরাজুল সাহেবের মুখটা দেখার জন্য তাকালো। সিরাজুল হক সাহেব গৃহভৃত্যের প্রশংসা শুনে খুশী হলেন, বললেন-“ওদের আমি ছাড়া এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই, আমিও ওদের উপর নির্ভরশীল, তাই মায়া মহব্বত একটু বেশী। আপনি কিন্ত ওর জন্য মনে কিছু করবেন। আমি ওর ব্যবহারের জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।” রাহি লজ্জাবনত হয়ে-“প্লিজ আঙ্কেল এটা বলবেন না, আমি আপনার ছেলের মত, আর আমি এই সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে এমন অনেক সিচুয়েশন ট্র্যাকল করেছি, এই নিয়ে প্লিজ আপনি আর ভাববেন না।”

কথা বলতে বলতে দুজনে বাংলোতে এসে পরলো, ভেতরে ঢুকেই তারা দক্ষিন দিকের বারান্দায় চলে এলো। চেয়ার নিয়ে বসতে বসতেই বিদ্যুত চলে গেলো। সিরাজুল হক সাবেহ বললেন-“বাবা বলোনা, নামে বিদ্যুত লাইন দিয়েছে, সারা দিনে বিদ্যুততো থাকেনা, সন্ধ্যায় একটু আসে, দশ-পনের মিনিট থেকেই চলে যায়, আবার আসে রাত ১২টার পর। এই বিদ্যুতের কোন মানে আছে? একটু অপেক্ষা করো এখুনি ওরা জেনেরেটর চালু দিবে।” কথা শেষ না করতে করতেই জেনারেটরের আওয়াজ পাওয়া গেলো ও সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো জ্বলে উঠলো। তারা মুখোমুখি চেয়ার নিয়ে বসলো- তাদের কথোপকথনঃ

সিরাজুল হকঃ বাবা চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পর পেনশন, গ্রাচুয়েটি, প্রোভিডেন্টফান্ডেটাকা আর ছেলের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে এই বাড়ীটা নিজের মত করে সাজাই। ৫বছর হলো এখানে এসেছি, তার আগে থেকেই আমি এখানে গাছ, পুকুর সহ যাবতীয় কাজ শুরু করেছিলাম। এখানে আসার পর প্রথম দুই বছর মাছ আর ফল, ফুল বিক্রি করে বেশ মোটা অংকের টাকা আয় করেছিলাম, কিন্ত শেষ দুই বছর যাবত্ত কোন সুবিধা করতে পারছিনা, মাছ ছারার ১মাসের মাথায় সব মাছ মরে যায়।
রাহিঃ আচ্ছা মাছের পোনা কোথা থেকে আনেন?
সিরাজুল হিকঃ থানা মত্ত অধিদপ্তর থেকে, ভিবিন্ন হ্যাচারী থেকে।
রাহিঃ পোনা কি ভালো?
সিরাজুল হকঃ আমি আর পুব পাড়ার জলিল সাহেব এক জায়গা থেকেই পোনা আনি, ওনি প্রতি বছর ভালো লাভ করছে, আমি পারছি না, মাছ সব মরে যায়।
রাহিঃ আপনার কি মনে হয়? মত্তস অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেনি?
সিরাজুল হকঃ করেছি, তারা এসে পরীক্ষা করে বলেছে পানি বিষ মিশানো হয়েছিলো যার ফলে এই হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরের বছর মাছ ছারলা, মাস খানি পর আবার একি অবস্থা। মাছ মরে ভেসে উঠতে লাগলো। তাই এর রহস্য উদঘাটনের জন্য আপনাকে আনলাম।
রাহিঃ আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
সিরাজুল হকঃ কাকে সন্দেহ করবো? আপরা ছাড়াতো এখানে আছেই কাজের লোক। বাহিরের লোক তো তেমন একটা আসে না।
রাহিঃ জলিল সাহেব কে? ওনিতো বেশী ব্যবসা করার লালসায় আপনার ক্ষতি করতে পারে? বা সামাজিক ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার হীন মনোবাসনায়?
সিরাজুল হকঃ আপনিতো আমার বাড়ীর চারিপাশ ঘুরে দেখেছেন, বাহির থেকে কি কেউ আসার মতো? (কিছুটা হতাশ হয়ে) আমি কিছু ভাবতে পারছিনা।
রাহিঃ আপনার সব কেনাকাটাতো কামরান করে?
সিরাজুল হকঃ হ্যা।
রাহিঃ ওর সাথে বাহিরের কার কার সাথে বেশী জানাশুনা?
সিরাজুল হকঃ সারাদিন তো থাকে বাড়ীর ভেতর গাছগাছলা পরিচর্যা করে, পুকুরে মাছের খাবার দেয়, বাহিরের লোকের সাথে আমি তেমন কারো সাথে মিশতে দেখিনা।
রাহিঃ আপনারা কয়টার মধ্যে ঘুমান?
সিরাজুল হকঃ গ্রামের রাত, একটু হলেই অনেক মনে হয়। তারপরও ১১টার আগে শুয়া হয় না।
রাহিঃ কামরান আর সুশীল কি এক সাথে থাকে? আই মিন এক বিছানায় শুয়?
সিরাজুল হকঃ না। ওদের ঘরে দুইটা রুম, একটাতে সুশীল আরেকটাতে কামরান থাকে?
রাহিঃ কামরান কি বিবাহিত?
সিরাজুল হকঃ করে ছিলো, বউটা বাচ্চা হওয়ার সময় মারা গেলো, পরবর্তীতে বাচ্চাটাও বাচে নি।
রাহিঃ ওহ, স্যাড। কামরানের বাড়ী কি এই গ্রামে?
সিরাজুল হকঃ না, পাশের গ্রামে, আমার এক আত্বীয়ের মাধ্যমে পেয়েছি। ভালো ছেলে, অনেক কর্মঠ। কোন কিছুতে না নাই।
রাহিঃ কামরানের বাবা কি করতো?
সিরাজুল হকঃ ওর বাবা তেমন কিছু করতো না, কাজ করে খেতো, একবার কি একটা মামলার জন্য যেনো কয়েক বছর জেল খেটেছিলো। ছেলে মেয়ে গুলোকে মানুষ করতে পারেনি।
রাহিঃ কামরানরা কয় ভাই-বোন?
সিরাজুল হকঃ ৩ভাই, দুই বোন।
রাহিঃ কে কি করে?
সিরাজুল হকঃ বাকী ভাই দুইটাও কাজ করে খায়। রিক্সা চালায়, সময় সময় দিনমজুর খাটে, মাঝে মাঝে আমার এখানেও দিনমজুর খাটে?
রাহিঃ এই পর্যন্ত কয় বার খেটেছে। যখনি আমার বাহিরের কাজের লোক দরকার হয় ওরা এসে কাজ করে যায়।
রাহিঃ সুশীলের ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু বলেন?
সিরাজুল হকঃ ও মা মরা ছেলে। আমার স্ত্রী ওকে নিয়ে এসেছিলো ওর যখন ১২ বছর তখন, সেই থেকে ও আমাদের সাথেই আছে, মাঝে মাঝে ওর বাবা আসে, কিছু টাকা পয়সা নিয়ে যায়, ওর দায়িত্ব সব আমার।
রাহিঃ ওর বাবা কি করে?
সিরাজুল হকঃ গ্রামে কামলা খাটে। আরেকটা বিয়া করেছে, ওখানেও পোলাপান আছে। কষ্টেই দিন কাটে। তবে অনেক ভালো মানুষ। তার নামে এলাকায় কোন বদনাম নাই। সব তাকে দিয়েই কাজ করায়।
রাহিঃ আঙ্কেলরাত অনেক হলো, আজ থাক। আশা করি আমি আপনার সমস্যা সমাধান করতে পারবো। পরে আরো কথা হবে।
সিরাজুল হকঃ ঠিক আছে বাবা। তুমি ফ্রেশ হয়ে চলে আসো। ডিনার করে তারপর শুয়ে পরো। ভয় পাবে না তো? ভয় পেলে বলো সুশীল কে তোমার এখানে থাকতে বলি।
রাহিঃ না তার আর দরকার হবেনা। আমাদের কাজটাই আঙ্কেলরহস্য নিয়ে, সেখানে ভয় পেলে চলবে?
সিরাজুল হক সাহেব উঠে চলে এলেন। রাহি নোট বুক নিয়ে কিছু পয়েন্ট নোট ডাউন করে রাখলো। নোট বুকটা বন্ধ করে, কাপড় ছারলো। টাওয়াল নিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য টয়লেটে প্রবেশ করলো। (চলবে)


মন্তব্য

মামুন হক এর ছবি

কঠিন গল্প!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ভাই, আপনিও জটিল লিখেন। আপনার লেখা আমি পড়ার চেষ্টা করি। ভালো থাকবেন আর দোয়া করবেন যেনো ভালো ভাবে শেষ করতে পারি।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

শেষ হোক। একেবারে পড়ব।

অতিথি লেখক এর ছবি

আজ রাতে দ্বিতীয় পর্ব পাবেন। ধন্যবাদ পুরোটার জন্য অপেক্ষায় করায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খুব অযত্ন নিয়ে লেখা। অত্যধিক বানান ভুল। বানান ভুল বলাটা উচিত না। অনেকগুলোই বেখেয়াল কাণ্ড। প্রথমে ভেবেছিলাম পড়বোই না। অজস্র বানান ভুলসমৃদ্ধ এতো বড় লেখা পড়াটা রীতিমতো অত্যাচার। তবু পড়লাম স্রেফ আপনি অতিথি লেখক বলেই। কোনো সচল লেখলে নগদে মাইনাস দিয়ে চলে যেতাম।

রহস্য গল্পের পাঠক নিজেও আসলে পড়তে পড়তে ডিটেকটিভের ভূমিকা নেন। নিজের মতো করে রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেন। এটাই একটা মজা। আমি আপনার লেখা পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গিয়েও জানতে পারলাম না আসলে রহস্যটা কোথায়? ডিটেকটিভ ভদ্রলোক কোন রহস্য সমাধানকল্পে এসেছেন?

অনেক দেরীতে যখন জানলাম, ততক্ষনে আমার রহস্য নিয়ে খেলার যাবতীয় ইচ্ছা শেষ। আর রহস্য গল্পে একটা পর্ব শেষ করার জন্য এমন একটা ক্লিফ হ্যাঙ্গার বেছে নেওয়া উচিত যে পরের পর্ব পড়ার জন্য ঘুম হারাম হয়ে যায়। কিন্তু ডিটেকটিভ ফ্রেস হওয়ার জন্য টয়লেটে গেলো। এই বাক্য আমারে পরের পর্বের প্রতি টানলো না।

খুব দুঃখিত অনেক সমালোচনা করে ফেলায়। আশা করি কিছু মনে করবেন না। পাঠক হিসেবে আমার কথাগুলো বললাম।

তবে সত্যি বলছি, দ্বিতীয় পর্বটাও পড়তেই চাই আমি। কিন্তু বানানের যদি এই হাল দেখি... দ্বিতীয়বার এই কষ্টটা করবো না।

ভালো থাকবেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মূলত পাঠক এর ছবি

বানান ভুল নিয়ে নজরুল সাহেবের বক্তব্যের সাথে সহমত। বাবামা প্রজেক্ট তো জলে গেলো।

প্রথম বাক্যটিক কথা ধরা যাক:
রাহির ভক্সি নোযা় মাইক্রোবাসটা গাযে়র ইটের উচু নীচু ভাংগা রাস্তায় ৩০ কিঃমি/ঘন্টা বেগে এগিযে় যাচ্ছে মদনপুরের দিকে।

গায়ের
উচু
নীচু
ভাংগা
কিঃমি
ঘন্টা

৬ খানা ভুল একটি বাক্যে? এই রকম হোঁচট খেতে খেতে ক'জন শেষ অবধি পড়বে সেটাই বড়ো প্রশ্ন, কাজেই সাহিত্যরসের সমালোচনা আর কদ্দূর হবে বলুন।

অতিথিদের যেহেতু এডিটের সুযোগ নেই, লেখা পোস্ট করার আগে তাই সযত্নে রিভিউ করাটা আরো বেশি দরকারি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য। আসলে টাইপিং এবং ফন্টের জন্য কিছু বানানের সমস্যা হয়েছে এটা পরবর্তীতে খেয়াল রাখা হবে। আশা করি পুরো গল্পটা পড়লে খারাপ লাগবে না।
আপনার মতামত এবং সাজেশন রক্ষা করার চেষ্টা করবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এটাকে আপনি কিছু বানানের সমস্যা বললেন? ঐ দেখুন মূলোদা একটা বাক্যেই ৬খানা ভুল ধরেছেন। আপনার পুরো লেখায় মোটামুটি আধাআধির কাছাকাছি ভুল বানান।

এই লেখা আমি কীভাবে পড়লাম সেটা ভেবে আমি নিজেই এখন অবাক হচ্ছি।

আশা করি পুরো গল্পটা পড়লে খারাপ লাগবে না।

আপনি কি আমার মন্তব্যটা পড়েননি? আমি যে পুরোটা পড়েছি তা কি আমি জানাতে পারিনি? এবং আমার যে খুব বেশি ভালো লাগেনি কিছু সমস্যার কারণে সেটাও কি জানাতে পারিনি!!

অনুরোধ, একটু যত্ন করে লিখুন। আপনি নিজে যত্ন না নিলে আপনার লেখা যত্ন নিয়ে পড়বে কেন পাঠক?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বড় লেখা, তায় গোয়েন্দা গল্প... আমিও নজরুল ভাইয়ের মত অনেকক্ষণ ধরে রহস্যটা খুঁজলাম।

বানানের দিকে একটু লক্ষ রাখবেন।
এতো বড় লেখা লিখেছেন, কাজেই যত্ন নিলে আরো আকর্ষণীয় ও হবে বটে।
পরের পর্ব আসুক।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

দময়ন্তী এর ছবি

বানানের জন্য আমি আর দ্বিতীয় প্যারার পর কিছুতেই পড়তে পারলাম না৷
পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, সেটাই জানিয়ে গেলাম৷
--------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পড়েই ফেললাম। মন্দ না। তবে রহস্য গল্পে রহস্যের খোঁজ পেতেই অনেকটা সময় চলে গেছে, যেটা একটা দুর্বল দিক। অবশ্য সবচেয়ে দুর্বল হলো বানান। প্রায় শ'তিনেক বানান ভুল আছে। এছাড়াও ভুল শব্দের প্রয়োগ, শব্দ বাদ পড়া জাতীয় সমস্যাও আছে। অনুগ্রহ করে এগুলোর দিকে একটু নজর দিবেন। নইলে যতো ভালোই লিখুন না কেন, পাঠক আগ্রহী হবে না পড়তে।

অনুসরণ করতে গিয়ে কামরানের ধরা পড়ে যাওয়ার পর যে বর্ণনাটুকু দিয়েছেন, তা অতিরিক্ত মনে হলো। এবং লেখার ধরন দেখে মনে হলো যেন কামরানকেই অপরাধী ঠিক করে রেখেছেন। যাই হোক, উপরের মন্তব্যগুলোকে পজিটিভলি নিন। আরো লিখুন। শুভকামনা থাকল।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার প্রেরণাদায়ক সুন্দর মতামতের জন্য। বানান ভুল না টাইপিং আর ফন্ট জনিত বিপত্তির কারনে ঝামেলা ? তবে আপনার মতামত মাথায় রেখে আজ ২য় পর্ব পোষ্ট দিলাম। আশা করি সব ঠিক পাবেন।
ধন্যবাদ আরেকবার কষ্ট করে পড়ার জন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।