প্রসংগঃ ভেজাল বিরোধী অভিযান, কি লাভ হচ্ছে আসলে??

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৬/১১/২০০৯ - ৪:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইদানিং পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই এক ধরণের খবর প্রায়ই চোখে পরে, ভ্রাম্যমান আদালতের ভেজাল বিরোধী অভিযান। আর আমার মত অনেকেই হয়ত বেশ উৎসাহ নিয়ে এই খবরগুলো পড়েন এবং অন্য সবার সাথে বেশ মজা করে আলোচনা করেন। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই ভেজাল বিরোধী অভেযান থেকে আমাদের মত সাধারণ জনগনের কি লাভ হচ্ছে?
বর্তমান সরকার উচ্চাভিলাষী বাজেটের কারণে রাজস্ব আদায়ে বেশ বদ্ধপরিকর। আমারতো মনে হয়, সেই লক্ষ পূরণেই সরকারের সব বিভাগ এতো জোরেশোরে ভেজাল বিরোধী অভেযানে নেমেছে। যাইহোক, দেখা যাচ্ছে, খাদ্য উৎপাদনকারীরা মানব স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর যা কিছু আছে, সেটা যতই নিকৃষ্ট হোক না কেন, অবলীলায় মিশিয়ে যাচ্ছে। ভ্রাম্যমান আদালত তাদের জরিমানা করেন, অপরাধী হলফনামা দেয় আর কোনদিন সে এই অপরাধ করবে না। কিন্ত, দুমাস পরে আবার সেই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালালে দেখা যায় সেই একই চিত্র। ভ্রাম্যমান আদালত যথারীতি তাদের আবারও জরিমানা করে আসে। আপনারাই বলেন, দ্বিতীয়বার ও কি শুধু জেল-জরিমানাই এদের জন্য যথেষ্ট?
কদিন আগে দেখলাম, মহানগর ট্রাফিক বিভাগের তালিকা অনুযায়ী রাজউক ঢাকার যেসব ভবনে পার্কিং এর জায়গায় অবৈধ ভাবে দোকানপাট করা হয়েছে সেসব উচ্ছেদে গেল। কিছু কিছু বুদ্ধিমান ভবন মালিক আবার আগেই কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন, তাই সেসব ভবনে কোন অভিযান চালানো যাবে না। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার এই ব্যাপারটা ঠিক আমার মাথায় ধরে না। আমাদের বিচার বিভাগ কি অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য না তাদের রক্ষা করার জন্য? যাইহোক, উচ্ছেদের কয়দিন পর গিয়ে দেখবেন আবার তারা সেই সব স্থানে দোকান তুলেছে। সব আগের মতই। এই ব্যাপারটা দেখার জন্য কিন্তু কেউ নেই ! মানে যেই লাউ সেই কদু !!
আবার দেখবেন, অবৈধ ফুটপাত বা পাবলিক প্লেস দখলদারদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মেজিস্ট্রেট গিয়ে উচ্ছেদ করে এল। দুই দিন পর আবার সেইখানে একই ব্যক্তি দখল করে বসে আছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে লোকজন ফুটপাত দিয়ে হাটে, ফুটওভার ব্রিজ দিনে রাস্তা পার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কি সেই উপায় আছে? খুব উন্নত দেশেও আপনাকে যেতে হবে না, সাম্প্রতিক উন্নত মালয়শিয়া গিয়েই দেখুন। আমদের দেশে আপনি যদি কেনাকাটা করতে চান তাহলে শুধু ফুটপাত/ওভার ব্রিজে উঠুন। নইলে মেইন রোড দিয়ে হাটুন আর জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তা পার হউন। এই হল অবস্থা!
ফিরে আসি ভেজাল খাদ্য, প্রসাধন এর প্রসঙ্গে। বেকারি পন্যে দুনিয়ার ভেজাল। ফলে, মাছে ফরমালিন। সেদিন দেখলাম অপরিপক্ক টমেটো হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। গরুকে নিষিদ্ধ ঔষধ খাইয়ে মোটা করা হচ্ছে। সেগুলো নাকি মানব স্বাস্থের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর! আমরা তাহলে খাব কি? এখন আমার কথা হল, এভাবে ভ্রাম্যমান আদালত যদি ভেজালকারীদের প্রতিবার শুধু জেল-জরিমানা করে আসে, তাহলে এই অপরাধ কোনদিন বন্ধ হবে না। যেই ব্যক্তি একই অপরাধ বার বার করছে, আইন কেন তার সেই প্রতিষ্ঠানটিকে একেবারে বন্ধ করে দিতে পারছে না? মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে, তাদের শাস্তি তো আমি মনে করি মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত! এদের কারণে কত মানুষ দূরারোগ্য রোগে ভুগে ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে, সেটা তো মানুষ হত্যারই সামিল, নাকি? মানুষ কষ্টার্জিত পয়সা দিচ্ছে আর ওরা অখাদ্য দিচ্ছে। আর আমাদের রাষ্ট্র শুধু পয়সার বিনিময়ে ওদের বার বার সেই অপরাধ করে দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আমার মতে তো এইটাও একটা বড় অপরাধ।
রিড ফার্মার কথা তো সবারই জানা। নিষ্পাপ শিশু মরে, কিন্তু ওদের ঔষধ বাজারে ঠিকই বিক্রি হয় এবং সেটা খেয়ে আরও শিশুর মৃত্যু হয়। কি বিচিত্র এই দেশ!!
রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, এই ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। শুধু জেল জরিমানা করলে হবে না, বার বার অপরাধ সংঘটনকারীদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিন এবং তাদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করুন। নইলে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কপালে শুধুই অন্ধকার। অপরাধীদের এভাবে সুযোগ দিলে তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠবে যে এরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শেষপর্যন্ত “আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ” চলে আসলেও হয়ত আর অবাক হব না, যেখানে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ এবং মনুষ্যত্ববোধ বলতে আর কিছুই থাকবে না...

জহিরুল ইসলাম


মন্তব্য

তানবীরা এর ছবি

এই কথাগুলো যাদের কানে যাওয়া দরকার তাদের কানেই যায় না
**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়, ভয়ানক ক্রোধে মুখ খারাপ করতে ইচ্ছে হয়। টুটি চেপে ধরে শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা বলে থাবড়াইয়া মুখের মানচিত্র বদলায়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। যারা বারবার মানুষের জীবনকে ব্যবসার পণ্য বানাচ্ছে তাদের না, বরং এই বেঈমান ছাগলের বাচ্চাদেরকে যারা সুযোগটা করে দিচ্ছে তাদের।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।