বারবার ফেল করিলে একবার বড় পাশের গ্যারান্টি থাকে / শেখ নজরুল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০১/১২/২০০৯ - ৭:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কথাটি আমার নয়, এক বাল্যবন্ধুর। তার সাথে অষ্টম শ্রেনতে প্রথম দেখা। আমার চেয়ে তার বয়স ছিলো ৫ বছর বেশি। এই বেশির কারণটি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন! তবে বিষয়টি আমি নিজেই তখন বুঝিনি। অষ্টম শ্রেনীতেই মোটা গোঁফ; কিঞ্চিত কৌতুহলবশত তাকে প্রশ্ন করতেই একরকম গড়গড় করে বলেছিলো, পঞ্চম শ্রেণীতে দুই বার, আর সপ্তম শ্রেণীতে দুইবার ডাব্বুমেরে এখন এখানে।

কি ভয়ংকর রে বাবা! ডাব্বুমারার গল্প এতো হাশিখুশিভাবে বলা যায় এখনও মনে পড়লে অবাকই হই। হাসিও পায়। আমরা যে স্কুলে পড়তাম তার বেশ নামডাক ছিলো। এর মধ্যেই দু দুবার বোর্ডে ফাস্ট স্ট্যান্ড। অগনিত স্টার মার্ক নিয়ে ছাত্রদের উজ্জ্বল মুখ তখন স্কুলের বারান্দায় তারার মতো ঝরে পড়ছে। হেডস্যারের জোড়াবেত হাতে সারাক্ষণ পায়চারী, পড়া আর পড়া সে এক হূলুস্থূলু অবস্থা। যাইহোক আমরা সবাই অষ্টমশ্রেণী পাশ দিয়ে নবম শ্রেণীতে উঠলাম ব্যাতিক্রম শুধু সেই বন্ধু জগলুল। পাঁচ বিষয় ফেল আর পাঁচ বিষয় টেনেটুনে পাশ।

এখন কি করবি? জিজ্ঞেস করতেই জগলু বললো, তোরা নতুন ক্লাস শুরু কর, আমি পরের বছর আসছি। তার কথায় আমি আশ্চর্যিত হলেও জগলুর কথায় কোন দ্বিধা নেই। মনও বেশ ফুরফুরে। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। আমাদের সঙ্গে পড়া তিনজন মেয়ের একজন পালক-এর গোপন অশ্রু কিছুতেই থামে না। এর মধ্যেই সে জগলুকে ভালবাসতে শুরু করেছে এটি নিয়ে কানাঘুষা চললেও তখনও আমি বিশ্বাস করিনি। বরং বলেছি ওর মতো গাধাকে কে ভালোবাসবে? অথচ গাধাটাইপ ছেলেদের যে মেয়েরা বেশি পছন্দ করে তখনকার চেয়ে এখন আরো বেশি বিশ্বাস করি।

যাইহোক, জগলু থেকে গেলো; আমরা একের পর এক পাশ দিয়া যে বছর এসএসসি অতিক্রম করেছি সেই বছর সে টায়-টোয় হেডস্যারের দয়ায় অস্টমশ্রেনী অতিক্রম করলো।
আমি ভর্তি হলাম শহরের কলেজে। শহরেই থাকি। বহুদিন জগলুর খোঁজ নেই। রাখিও না পালক ভর্তি হলো মফস্বরের একটি কলেজে। যে যার মতো শুরু করলো পরবর্তী শিক্ষাজীবন। সেই স্কুলবন্ধুদের বেশিরভাগের খবর জানা নেই। শুধু জেনেছিলাম এইচএইচসি পাশের আগেই পালকের বিয়ে হয়ে গেছে। সে স্বামীর সঙ্গে চলে গেছে সৌদিআরবে।

বছর দুয়েক আগে আমার অফিসে দেখা করতে আসে আরেক স্কুলবন্ধু মানবেন্দ্র। প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানির বড়সড় চাকুরে। অনেকদিন পর দেখা অনেক ঘল্প। কে কোথায় আছে? মানবেন্দ্র মোটামুটি অনেকের খবর রাখে। কথায় কথায় আমি তার কাছে জগলুর খোঁজ জানতে চাই। মানবেন্দ্র যা বললো তাতে গাছথেকে পড়ার অবস্থা।
সে এখন এলাকার পরপর তিনবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান। এবার এমপি ইলেকশনের জন্য সেই যোগ্য প্রার্থী। কোন জোটেরই সাধ্য নেই তাকে ফেল করায়। আমারও কৌতুহল বেড়ে যায়। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবার গ্রামে গেলে তার সঙ্গে একবার দেখা করবো।

কিছুদিন পর গ্রামে গেলাম। জগলুর সঙ্গে দেখা হলো। কী এক অবাক সুথের অনন্ত বিষ্ময় তাকে ঘিরে আছে; দেখে হিংসে হচ্ছিল। মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে সে নিজেকে সরাসরি যুক্ত করেছে। চারপাশ ঘিরে শুধু মানুষ আর মানুষ। মুখে একটাই কথা আমাগো চেয়াম্যানের মতো মানুষই হয় না। আমি জগলুর বন্ধু জেনে তারা পারলে আমাকেও বুকে তুলে রাখে। আমি ভাবতে থাকি, এতো এতো পাশ দিয়ে কী বানালাম নিজেকে? মানুষের ভালোবাসা তো পেলাম না এতোটুকু। কোন কথাই তখন আর ভালো লাগছিলো না।

শুধু একফাঁকে জগলু কে জিজ্ঞেস করলাম, বন্ধু রহস্যটা কি? সে শুধু হাসিমুখে বললো, মনে নেই ওই যে বলেছিলাম, 'বারবার ফেল করিলে পাশ করিবার গ্যারিন্টি থাকে'।
[sknazrul@dhaka.net]


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কথা হলঃ জীবনের হিসাব সমানে সমান। যত বড় পাশ, ফেলের কলেবরও ততটাই বড়। জীবনশেষে সব শূন্য।

লেখাটা ভালো লাগলো।

বুনোহাঁস

অতিথি লেখক এর ছবি

মনস্তাতিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে আপনার কথাই সঠিক।
ধন্যবাদ আপনাকে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

ভালো "পাশুড়ে" ছাত্রদের অনেককেই দেখেছি জীবনের পরীক্ষায় ফেল। আর "ফেল্টুরা" ঠিকই টিঁকে থাকে। "ত্যাল্যাচোরা"র মত দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে যায়। দেঁতো হাসি

.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমারো তাই ধারণা। হাসি

...........................

কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক গবীরে আপনার এই বক্তব্যের সারাংশ। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো আপনার বিশ্লেষণ। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই, পোস্ট পাইয়া গেসি মনে হয়....
মধুবন্তি মেঘ

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন আছেন? বুঝেছি। ভালো লাগলো আপনাকে পেয়ে। ভালো থাকবেন। নিরাপদে অবশ্যই।

মাহফুজ [অতিথি] এর ছবি

বারবার ফেল করিলে পাশ করিবার গ্যারিন্টি থাকে

বড় একটি সূত্র পাওয়া গেল মনে হচ্ছে। তবে এটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার নিরিখে উত্তীর্ণ কিনা তা যাচাইয়ের বিষয়।

ভাল আছেন তো? এখনো কি ড. ই.-এর প্রতিষ্ঠানে?

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যিই তো এটি তো ভেবে দেখিনি। ভাবতে হচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ ওখানেই আছি। কী করবো বলুন? যে মেধা তাতে এদিক ওদিক নড়াচড়ার সুযোগ কই?
ভালো আছেন আপনি। সময় সুযোগ পেলে একবার আসবেন চায়ের আমন্ত্রণে।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

ফর্মুলাটা কি প্রেমের ক্ষেত্রেও খাটে? মন খারাপ

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রেমের ক্ষেত্রে গ্যারান্টি শতভাগ। প্রেমের পাশে তো আরও বেশি ফেল।
ধন্যবাদ আপনাকে।

ভ্রম এর ছবি

দেঁতো হাসি
... ভালো লাগলো

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা পেলাম, গ্রামটির নাম কি? কোন জেলায়?
-- শফকত মোর্শেদ। < >

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে
তালা, সাতক্ষীরা।

তমিজ উদদীন লোদী এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটি।
ধন্যবাদ আপনাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

selfconfidence আর চেষ্টা অনেক দূর নিয়ে যায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।