সেই বাড়িটা এবং মশারী,, তবুও সুখী সুখী আমরা!!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৮/০১/২০১০ - ১০:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা একটা বাড়ি ভাড়া নিলে কেমন হবে? ধরো একটা উঠোন ওয়ালা টিনের চালের বাড়ি। ঐ যে আছেনা পাঁকা মেঝের,, আরে ঐ যে ধূসর রঙ্গের মেঝেগুলো, দেখলেই কেমন ঠান্ডা আর শান্তি শান্তি লাগে... দুই কামরার হলেও হবে। তবে একটা একচালা বারান্দা আমার চাইই চাই কিন্তু!!
সামনে থাকবে নিকোনো উঠোন,, একপাশে একটা টিউবয়েল,, ঐ যে হাতে চেপে পানি তোলে ওগুলোকে টিউবয়েলই তো বলে তাই না? আরে বলো না??

হুমম মানলাম তোমার কথা,, মেনে নিলাম যে এই মেগা সিটির পিংক সিটিতে বাড়ি চাই নে আমার। এই শহর থেকে দূরে ছোট্ট কোন শহর,, নাম না জানা কোথাও... কোলাহল নেই এমন কোথাও অবশ্যই। বাড়ির উঠোনটায় দাড়িয়ে নিজের চেনা ঘর মনে হলেই চলবে!!
যদি বল গ্যাস নেই আমি খুব একটা আহত হব ভেব না... হি হি,, একটু আৎকে উঠতে পারি বড়জোর। এই না না সামলে নেব কথা দিচ্ছি। হুঁ আর সূর্য ডোবার পর আলোও চলে যাবে সেটাও বলতে হবে না, আমি বুঝেছি....
তাতেও যে খুব একটা আপত্তি থাকবে আমার এমনটা নয়! পুরো বাড়ি অন্ধকার রেখেই,, উঠোনে একটা শীতল পাটি বিছিয়ে বসব নাহয় তোমার সাথে তারা গুনতে।
নাসার কাছ থেকে আমার নামে নক্ষত্ররাজী থেকে কিছু কিনে নাহয় নাই বা দিলে,, মাঝে মাঝে কালচে নীলের মাঝে জ্বলজ্বল করতে থাকা তারাগুলোকে আমায় চিনিয়ে দিলেই আমি খুশি থাকব সত্যি....
মাঝরাতে হঠাৎ তুমি বাজারের বড় মাছটা সস্তায় পেয়ে এনে ফেলবে আমার তকতকে বাড়ান্দাটায়,, আমি কিন্তু তোমাকে দিয়েই যায়গাটা পরিস্কার করাব বলে দিলাম!

আচ্ছা সকালে কি রুটি খেতে ভালোবাস তুমি? তেড়িমেরি রুটিই গিলতে হবে কিন্তু... তবে অত ভেবনা বুঝলে। দেখবে ঠিক অভ্যেস হয়ে গেছে!!
তবে এই আমি বলছি বৃষ্টির দিনে কখনই তোমাকে খিচুড়ী থেকে বঞ্চিত করব না ঠিক! ঝম ঝমে বাদলের দুপুরে খিচুড়ী আর গোশতের পর নাহয় তুলে রাখা সাপ লুডুটাই নামালাম এক আধবার....
ভাবছো ঐ ছোট্ট শহরে সব দিনে গোশত পাব কই? হুঁ তাও তো কথা!! যদি বলি বেশি পেঁয়াজের ঝাল ঝাল ডিম ভাজি আর... ও বাড়ির পেছনে নাহয় একটা বেগুনের চাড়া বুনে দিও। গোল গোল বেগুন ভাজিটা আমি ভালোই পারি কিনা!!

শুনেছি বৈশাখী মেলা হয় সব শহরেই। ওদেরও হবে তাই না? ওদিন একটু বেহিসেবি হলে কি বড্ড বেশি হয়ে যাবে বলতো? খুব যে বেশি কিছু তাও কি বলো? দু হাত ভর্তি করে লাল রেশমী চুড়ি আর... হুমম একটা চওড়া পাড়ের এক রঙা তাতের শাড়ি! খুব কি বেশি চাইলাম।
ওমা বললাম নাকি যে তোমায় কিছু দেব না! সবুজ, কালো ডোরা কেনা পাঞ্জাবীটার গলার কাছটায় যদি হাতে করে নকশী বুনে দি পছন্দ হবে না তোমার?
শোন, শোন আমার চুড়ির শব্দে মাতাল হবে তুমি সারাবেলা বুঝলে,, এই আমি বললাম দেখ, প্রতি বেলায় আমার কাজের ফাঁকে ভেঙ্গে পড়া চুড়ির টুকরোগুলোকে যদি সযতনে ঐ কাঁচের বয়ামটায় না জমিয়েছ তবে আর বলছি কি.....

একসময় ১৪ইঞ্চির একটা রঙ্গিন টিভিও কিনব আমরা। হয়ত দু একবার কথা কাটাকাটিও হবে রাতে মশারী টানানো নিয়ে। কিংবা আরেকটু সিরিয়াস কিছু নিয়েও হতে পারে,, আরে না না আমি তো বলছি না সবসময় তোমাকেই টানাতে হবে,, না মানে আমিও নাহয়,, হয়ত ,, এইতো মাঝে মাঝে... তা না হলে কোন না কোনদিন তো অবশ্যই.... আরে কি আশ্চর্য লোক তো তুমি!! এইটুকুনও পারবা না....

আচ্ছা বুঝছি থাক বাদ দাও তোমার আর কিছুই পারা লাগবে না....

আরে ধুর ধুর!! একটা মশারী টানাইতে পারো না আর তোমার সাথে কোথায় কোন গঞ্জে গিয়ে উঠব আমি কোন ভরসায়??

ফোনের ঐ পাশ থেকে, তো তুমি কি মশারী টানানোটাকেই সবচেয়ে ভরসার ব্যাপার মনে করলে!!!!!

না মানে যে এইটুকুন পারে না সে কিছুই পারে না....

ফোনের ঐ পাশ থেকে, ঠিকাছে তাহলে খুব ভালো মশারী টানাইতে পারে প্রথমে এমন কাউকে খুজে বের কর তারপর তার সাথে যেখানে খুশি সেখানে রওনা দাও... আমি এখন ঘুমাই!!!

এরপর ঐ পাশ থেকে খট করে ফোনটা রেখে দেয়ার শব্দ হল.... হায়রে মশারী!!!!!

ত্রেয়া।।।


মন্তব্য

লাবন্য [অতিথি] এর ছবি

স্বপ্নগুলো ভাল লাগল।
আর মশারী নিয়ে ঝগরা, সেত চিরকালের! বিয়ের আগে ভাই-বোনের সাথে মারামারি আর বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মান অভিমান ঃ)।

-লাবন্য-

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বপ্নগুলো দেখতে ভালো তো লাগেই তবে সেটা খুজে পাওয়া যে বড্ড কঠিন।। আর আমরা ঐ কঠিন কাজটি করতে পারি খুব কম সময়ই!!

হুমম,, অনেক ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আরে
এতো দেখি আমার বাড়ির বর্ণনা

০২

বেগুণের জায়গায় অন্য কিছু লাগাতে হবে। ওটা খেলে চুলকায়
পাঞ্জাবি পরি না। ফতুয়া দিতে হবে

০৩

মশারি টানাতে পারি খুব ভালো

০৪

বাকি সব মেনে নিলাম
শুধু মাছ বাজারে যেতে পারবো না

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে তাই!! তাহলে তো আপনার বাড়িটি দেখার লোভ হচ্ছে খুব।।
আপনার গুনগুলো শুনে ভালো লাগল। যাক আপনার গিন্নীর অন্তত কোন অভিযোগ থাকবে না এই ব্যাপারে নাকি বলেন!!

আর মাছ বাজারে যাওয়া যদি কোন মতে মানিয়ে ফেলতে পারেন, ব্যাস তাহলেই হয়ে গেল।। তারপর শুধুই সুখী সুখী আপনারা।

ত্রেয়া।।।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বাহ! *

[* মন্তব্য কিছুটা বাকি থাকল হাসি ]
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
আর বাকি মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম কিন্তু।

ত্রেয়া।।।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাড়ির চালটা টিনের ছিল
সেখানে বৃষ্টিও ছিল
বৃষ্টির দিনে খিচুড়ীও ছিল
শুধু টিনের চালে বৃষ্টির ঝুম ঝুম
শব্দগুলো ছিল না..........

খুব সুন্দর লেগেছে ভাই।শুভেচ্ছা রেখে গেলাম।

শেখ আমিনুল ইসলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

সুখটুকু ছিলো তো? তবেই চলবে......

আপনার ভালো লেগেছে জেনেই খুব ভালো লাগলো ভাই।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে।

ত্রেয়া।।।

ফকির লালন এর ছবি

সুন্দর।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

ত্রেয়া।।।

পুতুল এর ছবি

সেই বাড়িটায় যাইতে মঞ্চায়!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

ঐ বাড়িতেই যেতে হবে কেন? নিজেই কোন স্বপ্ন দেখুন আর তখন সেটা খুজে পাবার আনন্দই অন্য রকম হবে।

ভালো থাকবেন।

ত্রেয়া।।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

বিদেশে গেলে ঐ টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি কই পাবে!!
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে।

ত্রেয়া।।।

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রামের অধিকাংশ ঘর-বাড়িই মোটামুটি এই কিসিমের। কতদিন...... দেখিনা এইরকম বাড়ি, কতদিন...... দাড়াই না বাড়ির উঠোনে। আপনার লেখায় কল্পনা করছিলাম সেই ঘর-বাড়ি আর সেই সুখী সুখী পরিবেশ।
তবে আরেকটু যোগ করলেও পারতেন যেমন- ধূসর রঙ্গের পাঁকা মেঝেতে থাকবে চকি বা খাট আর বিছানায় ফোমের বদলে তোসক, এইসব আরকি।

- বুদ্ধু

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কিন্তু ঠিক গ্রাম বোঝাইনি!
নাম না জানা কোন ছোট মফস্বল শহর বুঝিয়েছিলাম।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে।

ত্রেয়া।।।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

কক্ষন মশারী টানাবো না...কক্ষনো না... দেঁতো হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

সেইত,,, কক্ষনোই টানাবো না হেহেহে!!

ধন্যবাদ।

ত্রেয়া।।।

কায়েস এর ছবি

এতো সুন্দর করে কেউ কোন সংসারের বর্ননা দিতে পারে জানতাম না। তোমার ইচ্ছাপূরন হোক, অপূর্ণতা গুলো ভিজে যাক ঝমঝম বৃষ্টিতে। এমনিতেই আজকে আমার মন ভালো না। তোমার লেখাটা পড়ে মনে হল, বেঁচে থাকা অনেক সুন্দর।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে তুমি পড়েছ তাহলে, আমি ভাবসি প্রথম পাতায় নেই আর তুমি পাওনিও বোধহয়!
সংসার ব্যাপারটা বোধহয় আসলে অতটা ভংকর না যতটা আমি বাস্তবে ভাবি বুঝলে!! হুমম আমিও চাই আমার ইচ্ছেপূরণ হোক!! কিন্তু চাইলেই যদি সব হত......

মন খারাপ ছিল কেন?
সত্যি জানো, আমি প্রতিটি মর্মে উপলব্ধি করি যে বেঁচে থাকা অনেক সুন্দর! আমি ভাবি যে আমি হয়ত চাইলেই সমস্ত ধূসরতা সরিয়ে সহজেই নিয়ে আসতে পারি আলো ঝলমলে একটা দিন,, অপেক্ষা করি শুধু কবে হবে এমন সাহস আমার!!
তোমারে অনেক থ্যাঙ্কস কষ্ট করে খুজে পড়ার জন্যে।

ত্রেয়া।।।

তিথীডোর এর ছবি

'ত্রেয়া'-- একদম আনকোরা নাম.. খুউব ভাল্লাগলো!

তবে মশারী টানানো?
কাভি নেহী!!

--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার নাম হাসি , ভালো লেগেছে জেনে খুশি খুশি লাগলো বেশ। হুমম একটু আনকরাই বটে!

হি হি হি,, হুমম মশারী টানানো কাভি ভি নেহি!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ তিথীডোর।

ত্রেয়া।।।

অস্পৃশ্যা এর ছবি

আহা! বড় ভাল একটা স্বপ্ন স্বপ্ন লেখা পড়লাম, এতো আমারই কথা, কতদিন লিখতে চেয়েছি, কিন্ত সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনি আর সেই ফাঁকে আপনি বলে গেলেন। তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে শুনিয়েছিও একজনকে:D।

ইস! খুব সুন্দর লেখা। টুকরো টুকরো এই সব আটপৌ্রে স্বপ্নগুলো সবার জীবনে সত্যি হয়ে আসুক।

ভাল থাকবেন।

বাই দ্য ওয়ে,আমি মশারী জিনিসটা একদমই ভাল পাই না।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম এমন করেই হয়ত আমরা সবাই ভেতরে ভেতরে এক টুকরো স্বপ্ন লালন করি যেখানে আদৌ কোন হিসেবের বালাই থাকে না.... শুধু স্বপ্নদের প্রকাশ ভঙ্গিতে আমাদের যত পার্থক্য!!

আপনি ভাগ্যবান বলতে হবে, অন্তত কাউকে শোনানোর খুজে ত পেয়েছেন হাসি এমন একজনকে পাওয়া যে কিনা মনযোগ দিয়ে আমার স্বপ্নগুলো শুনবে,, সে ত আসলেই ভাগ্যের লক্ষণ!
সেটাই সব আটপৌরে স্বপ্নই যা কিনা আমরা সযতনে লালন করি, সত্যি হয়ে উঠুক সবার জীবনে।
আপনাকে ধন্যবাদ।

ত্রেয়া।।।

অস্পৃশ্যা এর ছবি

আহা! বড় ভাল একটা স্বপ্ন স্বপ্ন লেখা পড়লাম, এতো আমারই কথা, কতদিন লিখতে চেয়েছি, কিন্ত সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনি আর সেই ফাঁকে আপনি বলে গেলেন। তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে শুনিয়েছিও একজনকে:D।

ইস! খুব সুন্দর লেখা। টুকরো টুকরো এই সব আটপৌ্রে স্বপ্নগুলো সবার জীবনে সত্যি হয়ে আসুক।

ভাল থাকবেন।

বাই দ্য ওয়ে,আমি মশারী জিনিসটা একদমই ভাল পাই না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।